প্রকাশনা শিল্পে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র
তথ্য বাণিজ্য করে যে প্রচুর মুনাফা উপার্জন করা সম্ভব, তা ইহুদিদের পূর্বে অন্য কোনো জাতি বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারেনি। তারাই প্রথম জাতি, যারা তথ্য বাণিজ্যকে সাংবাদিকতায় রূপদান করেছে। খ্রিষ্টবছর গণনা শুরুর পর থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে কখন কী ঘটতে যাচ্ছে, সেই তথ্য তারা বহু আগেই পেয়ে যেত। তারপর এসব তথ্য নিউজলেটারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করত। কীভাবে ইহুদিরা ভবিষ্যতের সংবাদ আগেই পেয়ে যেত, তা বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আজ পর্যন্ত কখনো কি এমন কারও নাম শুনেছেন, যিনি একই সঙ্গে একাধিক দেশের সংসদ সদস্য ছিলেন? আদৌ কি কোনো ব্যক্তি একই সঙ্গে ইতালি ও জার্মানির সংসদ সদস্য হতে পারবে? ইতিহাসে এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব?
আশা করি আপনাদের সেনহাড্রিনের কথা মনে আছে। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা প্রতিনিধিগণ এই সভায় একত্রিত হতো। মজার বিষয়— তাদের বেশিরভাগ সদস্যই ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। যেমন : সংসদ সদস্য, সামরিক উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ইত্যাদি। ফলে তাদের নিকট নিজ নিজ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য মজুত থাকত। সেনহাড্রিনের অধিবেশন বসলে তারা সবাই নিজ নিজ এলাকার খবরাখবর সেখানে উপস্থাপন করত! যেমন : ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা ফ্রান্সের খবর এবং ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিরা ইংল্যান্ডের খবর ফাঁস করত। ইউরোপিয়ান রাজারা যত নতুন পরিকল্পনাই গ্রহণ করুক না কেন, সেনহাড্রিনের মাধ্যমে সেই সংবাদ অন্য সদস্যদের কানে চলে যেত। এবার তাদের রাজা উত্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে নতুন সব পরিকল্পনা তৈরি করতেন। ইউরোপিয়ান রাজারা হয়তো সেনহাড্রিনের বিষয়টি জানতেন না, তবে তথ্য পাচারের বিষয়টি অনুমান করতে পেরেছিলেন। তাই প্রায় সময় ইহুদিদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো। পুরো বিষয়টি আপনাদের কাছে গল্প বলে মনে হতে পারে।
অনেকেই হয়তো রথসচাইল্ড পরিবারের নাম শুনে থাকবেন। পরিবারটির প্রতিষ্ঠাতা Mayer Amschel Rothschild তার পাঁচ ছেলেকে ইউরোপের পাঁচটি দেশে পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবসায় সূচনা করেন।
ইহুদিদের কাছে তথ্যের কেন এত কদর ছিল, তা Nathan Rothschild- এর ছোট্ট একটি ঘটনা থেকে জানতে পারবেন। নেপোলিয়নকে যখন নির্বাসিত করে এলবা দ্বীপে পাঠানো হয়, তখন ইংল্যান্ড ভেবেছিল, হয়তো ইউরোপ থেকে এবার তার বিদায় হলো। তবে নেপোলিয়ান যে আবারও ইউরোপে ফিরে আসবেন, তা অনেকেই ভাবতে পারেনি; এমনকী Nathan নিজেও নয়। এরপর শুরু হয় সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ, যা ‘Battle of Waterloo’ নামে পরিচিত। সেখানে ইংল্যান্ডের কাছে ফ্রান্সের নেপোলিয়ন বাহিনী পরাজিত হয়।
আগেই বলে রাখি, Nathan ছিল অতি ভীরু ও কাপুরুষ প্রকৃতির মানুষ। সে নিজে কখনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করত না। রক্ত দেখলেই চুপসে যেত, তবে প্রতিটি যুদ্ধেই সে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করত। এই যুদ্ধে সে ইংল্যান্ড সেনাবাহিনীর পেছনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে। যুদ্ধ শুরু হওয়া মাত্র মাঠের কোথাও সে লুকিয়ে পড়ে এবং দেখতে থাকে, যুদ্ধের ফলাফল কোন দিকে যায়। পরাজয় নিশ্চিত জেনেও নেপোলিয়ন যখন তার সৈন্য বাহিনীকে শেষ আক্রমণের আদেশ দেয়, Nathan বুঝে যায়—যুদ্ধের ফলাফল কী হতে যাচ্ছে।
তখন সে দ্রুত ব্রাসেলসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে অনেকের সাথে দেখা হয়, কিন্তু যুদ্ধের ফলাফল সে কাউকে জানায় না। ব্রাসেলস থেকে অতি উচ্চমূল্যে একটি ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করে দ্রুত ওস্টেন্ডে পৌঁছায়। সেখান থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে ইংল্যান্ড। ঝড় শুরু হওয়ার দরুন কোনো জাহাজ যেতে রাজি হচ্ছিল না। আগেই বলেছি, Nathan ছিল ভীরু ও কাপুরুষ প্রকৃতির। কিন্তু তার চোখে যে ভাসছে লন্ডন শেয়ার বাজার; যা বর্তমানে অনায়াসে দখল করা সম্ভব! অনেক কষ্টে সে ২ হাজার ফ্রাঙ্ক (Francs) ভাড়া দিয়ে একটি জাহাজ পেল। অবশেষে ভাগ্যের কল্যাণে অর্ধমৃত অবস্থায় ইংল্যান্ডের উপকূলে পৌঁছাল।
সে সময় কোনো টেলিগ্রাম ছিল না। তাই যুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছে, তা কারও পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। ২০ জুন, ১৮১৫, Nathan নিজ অফিসে হাজির হয়। তার মনমরা চেহারা দেখে সবাই ঘাবড়ে যায়। চারদিকে জনরব ছড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ড যুদ্ধে হেরেছে। জনরব আরও ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যখন সে যুদ্ধে পরাজিত হওয়া নিয়ে একটি কলাম লিখে। কেউ বুঝতে পারেনি, Nathan কিছু একটা লুকিয়ে রাখছে। ফ্রান্সের সৈন্যরা ইংল্যান্ড আক্রমণ করতে পারে, এই ভেবে অনেকে তাদের শেয়ার বিক্রি করা শুরু করে। এই সুযোগে Nathan সাহেব পানির দামে সবগুলো শেয়ার কিনে নেয়।
পরপর দুই দিন (২০-২১ তারিখ) এই শেয়ার কেনা-বেচা চলল। দ্বিতীয় দিন শেয়ার বাজার বন্ধ হওয়ার আগে সে ১ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার-সিকিউরিটি ক্রয় করে। এর কিছুক্ষণ পর ইংল্যান্ডের বিজয়ী সেনাবাহিনী যুদ্ধ জয়ের খবর নিয়ে ওয়ালিংটনে হাজির হয়, কিন্তু ততক্ষণে জনসম্পত্তির এক বিশাল অংশ Nathan সাহেবের সিন্দুকে চলে যায়। এর পুরোটা সম্ভব হয়েছিল তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করে মিথ্যা খবর প্রচারের মাধ্যমে।
যেখানে নিরপেক্ষ গণমাধ্যমের কোনো অস্তিত্ব নেই, সেখানে সংখ্যালঘুরা খুব সহজেই ক্ষমতা দখল করতে পারে। ছোট্ট এই উদাহরণটি এর যথার্থতা প্রমাণ করে। একই ঘটনা ঘটেছে বলশেভিক ও ফরাসি বিপ্লবের সময়ও।
সে সময় রাশিয়া ও ফ্রান্সের সকল বড়ো বড়ো পত্রিকা ছিল সকল বড়ো বড়ো পত্রিকা ছিল ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে। তারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সংবাদ প্রকাশ করত। মূলত সমাজে সংবাদ মাধ্যমের গুরুত্ব কতটুকু, তা তখনকার মানুষ বুঝতে পারেনি। প্যারিসের মানুষ অনেক দিন পর্যন্ত জানতই না, তাদের দুর্গ (Bastille) ভেঙে পড়েছে এবং কয়েদিরা পালিয়ে গেছে। আর এখান থেকেই ফরাসি বিপ্লবের সূচনা।
সত্যি বলতে, সাধারণ মানুষ আজ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেছে। আমরা নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম এবং সুষ্ঠু যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে একতাবদ্ধ হতে পারছি না, যা আমাদের জাতীয় চেতনাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। যে যার মতো নিজের সাফাই গেয়ে যাচ্ছে এবং অন্যের জয়কে নিজের জয় বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
দ্বিতীয় প্রটোকলের দিকে লক্ষ করুন-
‘আধুনিক সরকারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হচ্ছে গণমাধ্যম, যা দ্বারা ইচ্ছামতো জনমত তৈরি করা সম্ভব। গণমাধ্যমের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনসাধারণের দৈনন্দিন খবরাখবর উপস্থাপন, সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা এবং এর সম্ভাব্য সমাধান জাতির সামনে তুলে ধরা। কিন্তু আমরা কোনো রাষ্ট্রকেই নিজেদের ইচ্ছামতো গণমাধ্যম ব্যবহার করার সুযোগ দেবো না। কারণ, ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমের লাগাম আমাদের হাতে চলে এসেছে। তবে এ জন্য আমাদের অনেক অশ্রু ও রক্ত ঝরাতে হয়ছে।’
গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ইত্যাদি যে আন্দোলনের কথাই বলি না কেন, সব আন্দোলন ইহুদিরাই শুরু করেছে। আর এ আন্দোলনের বীজ মানুষের মগজে গেঁথে দিতে তারা গণমাধ্যমকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এসব আন্দোলন কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতারই পরিবর্তন এনেছে, জনজীবনে কোনো পরিবর্তন আনেনি। এ প্রসঙ্গে তৃতীয় প্রটোকলে বলা হয়েছে—
‘রাষ্ট্রীয় সংবিধানে সম-অধিকারের ধারাগুলো মূলত কোনো অধিকারের মধ্যেই পড়ে না। এসব তথাকথিত জন-অধিকার শুধু মানুষের কল্পনাতেই থাকে; কখনো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। খাবার টেবিলে যে সামান্য কিছু রুটির টুকরো উচ্ছিষ্ট থেকে যায়, তা-ই প্রলেতারিয়েটদের অর্জন। কিন্তু কেবল উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়েই তাদের সব ভোট কিনে নেব। প্রজা নির্যাতন ও সামরিক অবরোধ দিয়ে রাজারা আর কতদিন জনমানুষকে আটকে রাখবে? আমরা চাইলে তাদের মাঝে আন্দোলনের জোয়ার বইয়ে দিতে পারি।’
ষষ্ঠ প্রটোকলের একটি অনুচ্ছেদ আবারও উপস্থাপন করছি—
‘আমরা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে জড়িয়ে দেবো। একই সঙ্গে বাজারে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেবো। আমরা বলব—কৃষি উৎপাদন কম হওয়ায় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের মাঝে সুকৌশলে অরাজকতা ছড়িয়ে দেবো এবং আত্মতৃপ্তির উপায় হিসেবে মদপানে আসক্ত করে রাখব। এভাবে তারা ধীরে ধীরে জ্ঞানশূন্য জাতিতে পরিণত হবে।’
এরপর উল্লেখ আছে-
‘এমতাবস্থায় রক্ষাকর্তা হিসেবে আমরা তাদের সামনে হাজির হব। সামাজিক অচলাবস্থা পরিবর্তনের লোভ দেখিয়ে তাদের সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, সাম্যবাদ (কমিউনিজম) ইত্যাদি আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান জানাব। আর এই আহ্বান তাদের বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস করে দেবে।
আমরা এমন আরও অনেক তত্ত্বের জন্ম দিয়েছি, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অনুশাসন হিসেবে গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে।’
একটি দেশের প্রশাসনকে কীভাবে ভেঙে দেওয়া যায়, তা নিয়ে তৃতীয় প্রটোকলে আলোচনা করা হয়েছে—
‘আমাদের সাহসী সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যক্তিকে নিয়ে প্রতিনিয়ত আক্রমণাত্মক কলাম লিখবে, যা জনসাধারণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে। একসময় তাদের এই সামষ্টিক প্রতিক্রিয়া গণ-আন্দোলনে রূপ নেবে, যা সরকারের পতন ঘটিয়ে ছাড়বে।’
বিশ্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নে গণমাধ্যম কতটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, তা নিয়ে সপ্তম প্রটোকলে বলা হয়েছে—
‘আমরা জ্যান্টাইল সরকারদের উসকে দেবো, যেন তারা প্রতিবাদী জনগণের বিরুদ্ধে পালটা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অর্থাৎ আমাদের কিছু প্রতিষ্ঠান সরকারের পক্ষে কাজ করবে। এর ফলে সরকার ও সাধারণ মানুষের সম্পর্ক দা-কুমড়ায় রূপ নেবে; এটা আমাদের জন্য খুব দরকারি।’
ইহুদিরা এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়েছে—যেখানে তাদের নিযুক্ত কর্মীরা জনসাধারণের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার অভিনয় করে থাকে। সাধারণ মানুষ ভাবে—হয়তো তারাই প্রকৃত সাংবাদিক এবং তাদের পক্ষেই কাজ করছে, কিন্তু এটা হলো গোপন ফাঁদ। যদি কখনো সাধারণ মানুষ তথ্যপূর্ণ রিপোর্ট নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে যায়, তবে আর রক্ষা নেই। কারণ, তথ্য-জ্ঞানসম্পন্ন এই লোকেদের পরিচয় সাথে সাথেই আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার হাতে চলে যাবে। ফলে গুম বা হত্যাকাণ্ডের মতো যেকোনো একটি করুণ পরিণতি তার কপালে লেখা হয়ে যাবে। তাই বলে তারা যে সাধারণ মানুষের কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করে না তা নয়। তবে কী প্রকাশ করবে, তা ইহুদিদের সাংগঠনিক স্বার্থের ওপর নির্ভর করে। গণমাধ্যম নিয়ে তাদের কিছু কৌশল নিচে উপস্থাপন করা হলো :
ক. সাধারণত বড়ো আকারের প্রবন্ধগুলো মানুষ এড়িয়ে যায়। মানুষ ছোটো আকারের প্রবন্ধগুলো পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই পৃষ্ঠা বাড়িয়ে কেউ যেন তা সাহিত্য-কর্ম বানিয়ে না ফেলে, এটাই সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চাওয়া। আবার বড়ো আকারের আর্টিকেলগুলোতে উৎপাদন খরচ বেশি হয় বলে অধিকাংশ পাঠক তা কিনতে চায় না। স্বাভাবিকভাবে এই লেখাগুলো কম পঠিত হয়। তাই প্রকাশনী শিল্পে তারা নতুন আইন জারি করে——৩০ পৃষ্ঠার কম প্রতিটি আর্টিকেলের জন্য দ্বিগুণ খরচ প্রদান করতে হবে।’ কিন্তু নিজেদের বেলায় কম মূল্যে আর্টিকেল প্রকাশ করব, যেন তা সর্বত্র অধিক পঠিত হয়। প্রয়োজনে আমরা ভর্তুকি দিতেও রাজি। ফলে পেশাদারি সুবিধার লক্ষ্যে অনেক জ্যান্টাইল লেখক আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করতে আসবে। তাদের মধ্যে অনেকে থাকবে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে লিখতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমাদের অর্থের কাছে তাদের এই দম্ভ হারিয়ে যাবে।
খ. সাংবাদিকতা শিল্পে ইহুদিদের তিনটি স্তর রয়েছে। পুরো পৃথিবী আজ এই কৌশলে ছেয়ে গেছে, কিন্তু কম বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হওয়ার দরুন আমরা তা প্রত্যক্ষ করতে পারছি না।
প্রথম স্তরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থাকবে, যারা সতর্কতার সাথে কেবল আমাদের (জায়োনিস্ট) পক্ষেই কথা বলবে। জাতীয় স্বার্থে আঘাত পায় তারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবে না; বরং বাজারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো পালটা জবাব দিয়ে তাদের থামিয়ে দেবে।
দ্বিতীয় স্তরেরগুলো হবে আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো। তারা আমাদের এবং সাধারণ জনগণ উভয়ের পক্ষেরই কাজ করবে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হবে নিরপেক্ষ শ্রেণির পাঠকদের আকৃষ্ট করা।
তৃতীয় স্তরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো স্পষ্টত আমাদের বিরোধিতা করবে। সমাজের যেসব মানুষ আমাদের বিপক্ষে কথা বলতে চায় এবং শত্রু বলে মনে করে, তারা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের দলভুক্ত বলে মনে করবে। কিন্তু এগুলোও যে আমাদেরই প্রতিষ্ঠান, তা তারা বুঝতেও পারবে না।
যেসব প্রতিষ্ঠান আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, সেগুলো আমাদের অর্থ দিয়েই পরিচালিত হবে। তবে তারা শুধু সেসব বিষয়ে কথা বলবে, যা আমাদের সংশোধন করা প্রয়োজন।
আমাদের পত্রিকাগুলো বিভিন্ন মতবাদ নিয়ে কথা বলবে। যেমন : শাসনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও নৈরাজ্যবাদ। বোকা জ্যান্টাইলরা এসব মতবাদকে আদর্শ ভেবে বুলি আওড়াবে। আসলে তারা সেভাবেই চিন্তা করবে, যেভাবে আমরা চাইব।
তৃতীয় স্তরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের নানা বিষয় নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেবে, তবে তারা কখনো আলোচনা গভীর পর্যন্ত নিয়ে যাবে না। ফলে সাধারণ জনগণ কখনোই বিতর্কের মূল শিকড় খুঁজে পাবে না। পরে আমাদের প্রথম স্তরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ বিবরণসহ সামনে হাজির হবে এবং উক্ত বিতর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। অর্থাৎ তৃতীয় স্তরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম স্তরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর রাস্তা সহজ করে দেবে।
এসব তথাকথিত বিতর্ক জনসাধারণকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী করে তুলবে। আর আমরাও তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেবো, কিন্তু আমাদের নির্দেশনা ভঙ্গ করে তারা কখনো কিছু প্রকাশ করতে পারবে না।
আবার কখনো যদি প্রয়োজন হয়, তবে তৃতীয় স্তরের গণমাধ্যম আমাদের বিরুদ্ধে যে বিতর্কের জন্ম দেবে, তা খণ্ডাতে দ্বিতীয় স্তরের গণমাধ্যম সামনে এগিয়ে আসবে।
‘আমাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করার দরুন জ্যান্টাইলরা আর নিজেদের পত্রিকা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রয়োজন বোধ করবে না। অর্থাৎ যুদ্ধ করার মতো কোনো অস্ত্রই তাদের থাকবে না। ফলে কোনো রকম বাধা-বিপত্তি ছাড়াই আমরা তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করব।’
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, আজ গণমাধ্যমের কোনো সংবাদ বিশ্বাস করতে চাইলে প্ৰথমে দেখতে হবে উক্ত সংবাদটি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তারপর দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক কে, তার আইনজীবী কে, কাদের সঙ্গে তার আঁতাত রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সম্পাদক কে, সমাজের সঙ্গে তার কেমন যোগাযোগ, কোন কোন প্রতিষ্ঠানগুলো এ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে এবং কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের নিয়মিত উঠাবসা রয়েছে।
Jewish Encyclopedia পড়লে আপনি এমন অনেক পত্রিকা প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে পারবেন, যেগুলো ইহুদিদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার পরপরই বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত তাদের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে সত্যের মতো আর কোনো বিষ নেই, যা এই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীটি এত ভয় পায়। তাদের গোপন পরিকল্পনার সামান্য কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ার অর্থই হলো—তাদের জন্য মারাত্মক হুমকি।
Baron Moses Montefiore ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত ইহুদি ব্যাংকার। পোল্যান্ডের বিখ্যাত শহর ক্রাকউতে থাকাকালে তিনি নিজের জ্ঞাতিগোষ্ঠীদের উল্লেখ
করে বলেন—
‘তোমরা কী সব ফালতু বিষয় নিয়ে কথা বলছ? যতদিন না গণমাধ্যমের
পুরো নিয়ন্ত্রণ আমাদের দখলে আসবে, ততদিন পর্যন্ত যা-ই করি না কেন, সব ব্যর্থতায় রূপ নেবে। তাই আমাদের উচিত বিশ্ব গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্ৰণ প্রতিষ্ঠা করা, যেন সাধারণ মানুষকে অন্ধ ও বোকা বানানো সম্ভব হয়।’
যে যুগে সাংবাদিকতাশিল্পে স্বাধীনতা ছিল
২৫ জুন, ১৯২১, নিউইয়র্কের Independent পত্রিকা থেকে ‘New York and the Real Jew’ শিরোনামে একটি কলাম প্রকাশ করা হয়। উক্ত কলামের লেখক ছিলেন Rollin Lynde Hartt। কলামটির ছোট্ট একটি অংশ এখানে তুলে ধরা হলো—
‘ইহুদিরা হলো আমেরিকার প্রথম শ্রেণির প্রাণীবিশেষ। তাদের নিয়ে কেউ কিছু লিখতে যেয়ো না। তুমি হয়তো সত্য উপস্থাপন করতে চাইছ, কিন্তু সেই লেখা যদি অনিচ্ছাবশত তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়, তবে তোমাকে নিয়ে চারদিকে সমালোচনার এমন ঝড় শুরু হবে, যা কখনো বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই তাদের প্রসঙ্গে সবার নীরব থাকাই উচিত।’
ধরুন, কোনো টুপি কোম্পানি তাদের নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা করল। এবার সেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে তারা চারদিকে প্রচার শুরু করবে যে, বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের চামড়া দিয়ে টুপি তৈরি করার কারণে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী হয়তো তার অনেক সন্তানকে হারাতে বসেছে। নিছক সৌখিনতার বশে যেসব প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণী হত্যা করছে, তাদের অবশ্যই সামাজিকভাবে বর্জন করা উচিত। তাদের জন্য প্রকৃতি ভারসাম্য হারাতে বসেছে।
এরপর টুপি কোম্পানিটির ইতিহাস এবং কীভাবে বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া দিয়ে টুপি তৈরি করছে, সেই গল্প খুব করুণ উপায়ে উপস্থাপন করবে, যেন সাধারণ মানুষ অবচেতন মনে তাদের বর্জন করতে বাধ্য হয়। তাদের এ জাতীয় আক্রমণের স্বীকার হয়েছে— এমন কয়েকটির প্রতিষ্ঠানের নাম হলো : Herald Newspaper, A. T. Stewart Company, Grand Union Hotel at Saratoga, G. P. Putnam’s Sons ইত্যাদি।
New York Herald দীর্ঘ নব্বই বছর সংবাদিকতা শিল্পে রাজত্ব করেছে। বহু চেষ্টা করেও প্রতিষ্ঠানটির মালিক James Gordon Bennett-কে তারা কাবু করতে পারেনি। এমন সাম্রাজ্যবাদী সমাজেও যে একটি প্রতিষ্ঠান এত দীর্ঘ সময় ধরে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছে, এটা চাট্টিখানি কথা নয়।
যেকোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট তারা ছিল বিজ্ঞাপন প্রচারের প্রথম ও প্রধান মাধ্যম। গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহের নিমিত্তে ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে তারা শাখা অফিস গড়ে তুলেছিল। ১৮৮০ সালের আগ পর্যন্ত ইহুদিরা মিডিয়া জগতে আজকের মতো দাপুটে অবস্থানে ছিল না। যখন তাদের কোনো স্ক্যান্ডাল নিয়ে চারদিকে গুঞ্জন শুরু হতো, তখন তারা দলবেঁধে বিভিন্ন পত্রিকা প্রতিষ্ঠানে হাজির হতো, যেন তাদের এই বিষয়গুলো প্রকাশ করা না হয়। অর্থের জোরে হোক আর অন্য উপায়ে হোক, পত্রিকা ও ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা নিজেদের করে নিত। তারা একসময় বুঝল—এভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পিছে দৌড়ে লাভ হবে না, যতদিন না নিজেরা এই শিল্পে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারছে।
তাদের কিছু ব্যাংকার Bennett সাহেবকে অনুরোধ করল, যেন প্রতিষ্ঠানটির অর্থ বিভাগের দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে সময় তাদের ব্যাংকারগণ মেক্সিকো সরকারকে বড়ো অঙ্কের বেশ কয়েকটি ঋণ দিয়েছিল, যার দ্বারা সেখানে প্রচুর শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো খুব গোপনে তাদেরই সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হতো, যা তখন পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারেনি। একসময় এ সবগুলো প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, যেন পুরো মেক্সিকো দেশটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা চায়নি এই গোপন ষড়যন্ত্রের খবর প্রচারিত হোক, কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও তারা Herald-এর একজন কর্মীকেও কাবু করতে পারেনি। যথা সময়ে এই সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
কিছু বিষয় আছে, যা পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনো প্রকাশ করে না। কারণ, এতে তারা নিজেরাই বিপদে পড়বে। সংবাদপত্র ক্রয় করতে আমরা যে টাকা দিই, তাতে কেবল কাগজের মূল্যই ওঠে। কলম, কালি, ছাপাখানা, বিদ্যুৎ খরচ এবং কর্মীদের মজুরি কোথা থেকে জোগাড় করে? তা ছাড়া এত এত জায়গা ঘুরে তাদের সাংবাদিকরা যে খবর জোগাড় করে, সেই খরচই-বা আসে কোত্থেকে? এখানেই তাদের দুর্বলতা। এতসব খরচ কাটিয়ে মুনাফা আসে বিজ্ঞাপনের হাত ধরে। আজ ইউরোপ-আমেরিকার সব বড়ো বড়ো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান তাদের দখলে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপনের উৎস তারাই। যত যা-ই হোক, পত্রিকাগুলোও তো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান; যে সংবাদ প্রকাশে আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে, তা তারা কখনোই প্রচার করবে না।
১৮৮০-এর দশকে ইহুদিরা নিজেদের মধ্য থেকে নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। সকল পত্রিকা প্রতিষ্ঠানের কাছে গোপন চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব করা হয়, তারা যেন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাদের প্রার্থীদের প্রচারণার কাজে অংশ নেয়। এত বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব পেয়ে সবাই যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। Bennett সাহেব তখন দেশের বাহিরে ছিলেন। Herald-এর একজন কর্মী টেলিগ্রামযোগে তাকে চিঠিটি পাঠায়। তিনি বলেন—’পুরো চিঠি আগামীকালের পত্রিকায় ছাপিয়ে দাও।
তিনি এও পরিষ্কার করে উল্লেখ করতে বলেন—’আমাদের উদ্দেশ্য সমাজের সেবা করা, কোনো রাজনীতিবিদের তোষামোদ করা নয়।’ তার একটি বিশেষ গুণ ছিল, তিনি ধর্ম পরিচয় উল্লেখ করে কোনো সংবাদ প্রকাশ করতেন না। কেবল কূটকর্মে জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করতেন।
সকালের প্রথম ঘণ্টায় পত্রিকা হাতে পেয়ে শুধু ইহুদিরাই নয়; জ্যান্টাইলরা পর্যন্ত অবাক হয়ে যায়। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষ এমন দুঃসাহসিক কাজের অভিবাদন জানাতে ভুল করে না। অন্যদিকে, ইহুদিরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে শুরু করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, এই পত্রিকায় আর কখনো কোনো বিজ্ঞাপন ছাপানো হবে না। এতে তাদের বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৬ লাখ ডলার। এমতাবস্থায় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আদৌ বেঁচে থাকতে পারত কি না সন্দেহ। সবাই ভেবেছিল, তিনি হয়তো এখানেই থেমে যাবেন। কিন্তু তিনি যে আরও বড়ো যুদ্ধে নামবেন, তা কেউ-ই অনুমান করতে পারেনি। সেকালে এটি ছিল নিউইয়র্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা প্রতিষ্ঠান। শহরের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই পত্রিকা পড়ত। পুরো ইউরোপ ও আমেরিকার অন্যান্য প্রদেশগুলোকে হিসাব করলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।
তার পত্রিকায় জ্যান্টাইলদের বিজ্ঞাপনও কম প্রকাশিত হতো না, তবে ইহুদিদের বিজ্ঞাপনগুলো পত্রিকার আকর্ষণীয় পৃষ্ঠাগুলোতে বড়ো আকারে ছাপানো হতো। কারণ, তারা খরচ বেশি দিত। অন্যদিকে জ্যান্টাইলদের বিজ্ঞাপনগুলো ছোটো করে পৃষ্ঠার বিভিন্ন কোনায় ছাপানো হতো। তিনি নতুন এক ফন্দি করলেন। যারা এতদিন আর্থিক সীমাবদ্ধতার দরুন পত্রিকায় বড়ো করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারত না, তাদের সবাইকে ডিসকাউন্ট মূল্যে আমন্ত্রণ জানালেন। সে সময় সাধারণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট এমন একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার ছিল কল্পনাতীত ব্যাপার। এমন অফার পেয়ে সবাই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ল। অবস্থা এমন দাঁড়াল—কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। ফলে তার প্রতিষ্ঠান আগের মতো লাভ না করলেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেল; বরং তার জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেল।
জ্যান্টাইল সমাজে এই পত্রিকার চাহিদা আরও বাড়তে শুরু করল। অপর দিকে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন ইহুদিদের পণ্য বিক্রয়ের পরিমাণও কমে যেতে শুরু করল। এমন নয় যে, শহরে আর কোনো পত্রিকা প্রতিষ্ঠান ছিল না, Herald-এর মান ছিল অন্য পর্যায়ের।
একসময় তারা পুনরায় এই প্রতিষ্ঠানটির নিকট ফিরে আসতে বাধ্য হলো। Bennett সাহেব কোনো প্রতিশোধ নিলেন না। তবে বললেন—’পত্রিকার বিভিন্ন কলাম-স্থান নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্যদের নিকট বিক্রি হয়ে গেছে। চুক্তির সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে দেওয়া যাবে না।’ এরপর পরিস্থিতি আরও নাটকীয় হয়ে উঠল। তিনি যে সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী নন—তা আগেই উল্লেখ করেছি, কিন্তু ইহুদিরা তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ছুড়ে মারল। তারা পত্র মারফত জিজ্ঞেস করল—’কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তিনি বিজ্ঞাপন প্রচারস্বত্ব জ্যান্টাইলদের নিকট বিক্রি করেছেন।’ তিনি এবারও পুরো চিঠি পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলেন। সেদিন যতজন পত্রিকাটি পড়েছে, তাদের কেউ যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিল না। যুদ্ধে আবার জিতলেও Bennett সাহেবকে এবার চরম মূল্য দিতে হলো। হতাশা ও অপমানে ইহুদিরা পুনরায় তাদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিল; যেমনটা করেছিল ১৮৮৭ সালে প্রথমবারের মতো। পত্রিকা জগতে এবার তারা নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করে। তারা বুঝতে পারে, তথ্যজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হাজার পরিকল্পনা করেও কোনো লাভ হবে না।
ক্ষমতার দাপট দিয়ে হোক আর অর্থের লোভ দেখিয়ে হোক, ধীরে ধীরে তারা সকল পত্রিকা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের করে নিতে শুরু করে। Bennett সাহেবও বার্ধক্যে পৌঁছে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, তার মৃত্যুর পর ইহুদিরা এই প্রতিষ্ঠান কিনে নিতে চাইবে। তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি উইল করে যান—একক কোনো উত্তরসূরির নিকট এই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কখনো অর্পিত হবে না। যারা এতদিন পর্যন্ত Herald-এর জন্য কাজ করেছে, তাদের সকলের মাঝে এর সম্পদ ও মুনাফা সমানভাবে বণ্টিত হবে। ১৯১৮ সালের মে মাসে তিনি পরলোক গমন করেন।
দিনটির জন্য ইহুদিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। ইতঃপূর্বে তারা কেবল বিজ্ঞাপনই বন্ধ করেনি; বরং প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় কমিয়ে দিতে এমন কিছু নেই যা করেনি। একসময় যে প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে একজন দক্ষ লোকের হাতে পরিচালিত হতো, মৃত্যুর পর তা একাধিক ব্যক্তির হাতে চলে যায়। ফলে ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এমন নয় যে তাদের কেউ এই শিল্পে দক্ষ ছিল না, কিন্তু পেছন থেকে একটি গোষ্ঠী বারবার তাদের ব্যবসায়িক পথ আটকে দাঁড়াচ্ছিল। এই বাধা তারা সহজভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। তা ছাড়া অহংকার আর বড়াই নিয়ে নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলও ছিল।
ইহুদিরা ভেবেছিল, যখন প্রতিষ্ঠানটি একেবারে মুনাফাশূন্য হয়ে পড়বে এবং পরিচালনা পর্ষদ অভ্যন্তরীণ সমস্যায় হ-য-ব-র-ল হয়ে পড়বে, তখন হয়তো ট্রাস্টি বোর্ড এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেবে; হলোও তা-ই। কিন্তু ইহুদিদের চেয়ে অধিক মূল্যের প্রস্তাব দিয়ে Frank A. Munsey পত্রিকাটি কিনে নেন। পুরোনো নাম মুছে নতুন নাম দেওয়া হয় New York Sun। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ সম্পদ ভাগাভাগি করে বিভিন্ন দেশে চলে যায়। আর এভাবেই আমেরিকায় স্বাধীন সাংবাদিকতা শিল্পের ইতি ঘটে।