প্যালেস থিয়েটার-রহস্য

প্যালেস থিয়েটার-রহস্য

শামসুদ্দীন নওয়াব

প্রথম প্রকাশ: ২০১৪

এক

‘পৌঁছে গেছি,’ বলল কিশোর। ‘প্যালেস থিয়েটারে।’ থিয়েটারের ওপাশের রাস্তায় পার্কিং স্পেসে ভ্যানটা নিয়ে গিয়ে থামাল ও।

‘খাইছে, সময় হলো,’ বলল মুসা।

‘কী ব্যাপার, মুসা?’ প্রশ্ন করল রবিন। ‘পিয়ানো কনসার্টের জন্যে তর সইছে না?’

‘না, খাবারের জন্যে তর সইছে না,’ জবাব দিল মুসা। ‘খাইছে, পেট জ্বলে যাচ্ছে।’

লেজ নাড়ল রাফিয়ান। সায় জানাল। ওরও খিদে পেয়েছে। হাতে ধরা টিকেটগুলোর দিকে চাইল কিশোর।

‘রেডিও স্টেশন থেকে জেতা টিকেটগুলো বলছে কনসার্ট শুরু হবে রিসেপশনের পরে।’

‘রিসেপশন শুরু হবে কখন?’ মুসার প্রশ্ন।

কিশোর চকিতে টিকেট ও হাতঘড়ি দেখে নিল।

‘এখুনি।’

‘তা হলে দাঁড়িয়ে আছি কেন?’ জিজ্ঞেস করল মুসা। ‘চলো রাস্তার ওপাশে গিয়ে কিছু খাই!’

গোটা দল ভ্যান থেকে বেরিয়ে হেঁটে রাস্তা পেরোল। থিয়েটারের বাইরে কয়েকজন টীন এজার সাইন দেখাচ্ছে। তাতে লেখা: সেভ দ্য প্যালেস।

‘কী হচ্ছে এসব?’ জিনা প্রশ্ন করল।

কিন্তু কেউ জবাব দেয়ার আগেই এক লিমুজিন এসে থেমে দাঁড়াল। টাক্সেডো পরা লম্বা এক লোক বেরিয়ে এলেন গাড়ি থেকে। জনতা দুয়োধ্বনি দিতে লাগল। ভদ্রলোক জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে দ্রুত ঢুকে পড়লেন থিয়েটারের ভিতরে।

‘লোকজন ওঁর ওপরে এত খেপা কেন?’ বলল রবিন।

‘নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে,’ যোগ করল জিনা।

‘এক্সকিউয মি,’ এক টীন এজারকে বলল কিশোর। ‘তোমরা সবাই ভদ্রলোককে দুয়ো দিলে কেন?’

‘লোকটা ভয়ানক লোভী,’ জবাব দিল টীন এজার। ‘ও আমাদের সবার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। টাকার জন্য।’

‘খাইছে, মানে?’ প্রশ্ন করল মুসা।

ছেলেটির পাশ থেকে এক টীন এজার মেয়ে ঘুরে দাঁড়াল।

‘টড, আমি বলছি,’ টীন এজার ছেলেটিকে বলে মুসা ও বন্ধুদের দিকে চাইল। ‘আমার নাম লিসা। আমরা এখানে জড় হয়েছি প্যালেস থিয়েটারকে বাঁচাতে। আমরা চাই না বাড়িটা ভেঙে ফেলা হোক।’

‘হ্যাঁ,’ বলল টড। ‘আর ওই লিমুজিনের লোকটা হচ্ছে স্টুয়ার্ট বানিয়ন।’

‘স্টুয়ার্ট বানিয়ন কে?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।

‘তোমরা সম্ভবত তাকে সুপ নামে চেনো,’ বলল লিসা।

‘খাইছে, সুপ বানিয়ন, রক স্টার?’ প্রশ্ন করল মুসা। ‘ওটা উনি? বাহ্! তারমানে কনসার্ট দারুণ জমধে! ‘

‘এক সেকেণ্ড,’ বলল জিনা। ‘আমি যদ্দূর জানি সুপ বানিয়ন ক’বছর আগেই পারফর্ম করা বন্ধ করে দিয়েছেন।’

‘ঠিক বলেছ,’ বলে চলল লিসা। ‘বড় স্টার হয়ে মোটা টাকা কামানোর পরই সে রিয়েল এস্টেটে ইনভেস্ট করা শুরু করে। এ ব্যবসায় এত টাকা কামায় যে রক অ্যাণ্ড রোল ছেড়ে দেয়।’

‘তো উনি এখানে কী করছেন?’ কিশোর জানতে চাইল।

‘সে পুরানো থিয়েটারগুলো কিনে নিয়ে মাল্টিপ্লেক্স মুভি থিয়েটার বানাচ্ছে,’ জানাল লিসা। ‘সে নাকি এরপর প্যালেস থিয়েটার ভাঙবে।’

‘ইস, খুব খারাপ হবে ব্যাপারটা,’ বলল জিনা।

‘বিশেষ করে সে রক স্টার হিসেবে এই থিয়েটারেই বড় ব্রেক পায়,’ বলল লিসা। ‘সেজন্যেই আমি আর আমার বন্ধুরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

‘এক্সকিউয মি,’ বাধা দিল মুসা, ‘কিন্তু সুপ বানিয়ন যদি আর পারফর্ম না করেন, তা হলে কনসার্ট করছে কে?’

‘একজন টোটালি বাটন্‌ড্-ডাউন, নাৰ্ডেড-আউট কনসার্ট পিয়ানিস্ট,’ টড বলল।

‘সে আবার কে?’ প্রশ্ন করল রবিন।

‘হুগো ফ্রেসানিনি, বিশ্ববিখ্যাত কনসার্ট পিয়ানিস্ট, বলল জিনা

‘শুনে বোরিং লাগছে,’ বলল মুসা। ‘তবে আমি আর রাফি যে কোনও ধরনের বাজনা হজম করতে পারি। তাই না রে, রাফি?’

লেজ নেড়ে সায় জানাল রাফি।

‘চল তবে,’ বলল মুসা। ‘খেতে যাই।’

খুশিতে ঘেউ করে উঠল রাফি।

দুই

গোটা দল হেঁটে প্যালেস থিয়েটারে ঢুকল।

‘খাইছে, লবিটার সাইয দেখো,’ বলল মুসা।

প্রকাণ্ড কামরাটার দেয়ালগুলোতে সারি দিয়ে পুরানো বিখ্যাত সব ছবি ও পারফর্মারদের পোস্টার লাগানো। লবির ঠিক মাঝখানে ঝুলছে বিশাল এক ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি। লবিটা লোকে লোকারণ্য। তারা ইতস্তত হাঁটাহাটি করছে, গল্প-গুজব করছে, অপেক্ষায় রয়েছে কনসার্ট শুরু হওয়ার।

‘এই যদি লবির আকার হয়ে থাকে,’ বলল কিশোর, ‘তা হলে থিয়েটারের সাইয কেমন হবে চিন্তাই করা যায় না।’

‘খাইছে, রাফি আর আমি ভোজের ব্যবস্থার সাইয কেমন হবে চিন্তা করতে পারছি না,’ যোগ করল মুসা। ‘বুফেটা কোনদিকে?’

লেজ নাড়ল রাফি। ও-ও জানতে চায়।

‘ওটা ওদিকে, ‘দ্য স্যাণ্ডস অভ কায়রো’ ছবির পোস্টারের নীচে, পিছন থেকে এক ভদ্রলোক বললেন। ঘুরে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা আর জিনা। ‘আমি মেলভিন সুরকেলমাচ,’ বললেন ভদ্রলোক। ‘এখানকার মালিক।’

‘আপনার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল, স্যর,’ বলল রবিন। ‘আমরা থিয়েটার লবিটার প্রশংসা করছিলাম। সব কিছু এত সুন্দর!’

‘ধন্যবাদ,’ বললেন মেলভিন। ‘হ্যাঁ, প্যালেসটা ভালভাবে মেইনটেইন করা হয়েছে। এটা স্টেটের সবচাইতে পুরানো আর বড় থিয়েটার। অবশ্য বড় কোনও প্রতিভা যদি খুঁজে না পাই, সব বৃথা যাবে। তখন বন্ধ করে বেচে দেয়া ছাড়া গতি থাকবে না।’ .

‘সুপ বানিয়নের কাছে?’ প্রশ্ন করল জিনা।

দুঃখিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালেন মেলভিন।

‘হ্যাঁ, সুপ বানিয়ন,’ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ‘আমি ওকে ব্রেক দিয়েছিলাম, অথচ ও কীভাবে আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে! থিয়েটারটা কিনে নিতে চায় এখানে যাতে মাল্টিপ্লেক্স বানাতে পারে।

‘উনি যদি থিয়েটারটা ভেঙে ফেলতে চান, ‘ রবিন বলল, ‘তা হলে এই কনসার্টে এলেন কেন? এটা তো থিয়েটারটা রক্ষা করার জন্য করা হচ্ছে।’

‘কারণ আমি হুগো ফ্রেসানিনির মস্ত বড় ভক্ত, পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠল।

সবাই ঘুরে দাঁড়াল। দেখতে পেল, লিমুজিনের সেই লম্বা ভদ্রলোককে।

‘খাইছে, জলজ্যান্ত সুপ বানিয়ন,’ বলল মুসা।

‘স্টুয়ার্ট বানিয়ন,’ বললেন ভদ্রলোক, ওকে শুধরে দিলেন। ‘অনেকদিন হলো সুপ নামটা ইউয করি না। রিয়েল এস্টেট জগতে মানায় না। যা বললাম, আমি এখানে এসেছি কারণ আমি হুগো ফ্রেসানিনির ফ্যান। আমার পরে এত বড় পারফর্মার আর এখানে আসেনি, মেলভিন।’ স্টুয়ার্ট বানিয়ন কামরার ওপ্রান্তে কার উদ্দেশে হাত নেড়ে সেদিকে এগিয়ে গেলেন।

‘ভদ্রলোকের কথা-বার্তা খুব একটা ভদ্র নয়,’ বলল রবিন।

‘ওর কথা ছাড়ো, বললেন মেলভিন। ‘আজকের রাতের কথা ভাবো।’

‘আজকের রাতের কথা যখন বললেনই, মিস্টার সাকলমোর্চ,’ শুরু করল মুসা, ‘খাবার কোথায় যেন রয়েছে বললেন?’

‘ওদিকে,’ বলে মুভি পোস্টারটার দিকে তর্জনী নির্দেশ করলেন মেলভিন। ‘খাবারের অভাব নেই। যত খুশি খাও। আর হ্যাঁ, আমার নাম সুরকেলমাচ।

‘সরি,’ বলল মুসা। ‘তোমাদের সাথে পরে দেখা হবে,’ বন্ধুদের উদ্দেশে বলল। খাবারের দিকে হাঁটা দিল মুসা আর রাফি।

‘কোনও ঝামেলায় জড়িয়ো না যেন,’ সাবধান করে দিল নথি।

‘আমরা শুধু স্ন্যাক খাব,’ জানাল মুসা। ‘ঝামেলা হবে কেন?’

‘জানি না,’ জবাবে বলল গোয়েন্দাপ্রধান। ‘আর জানতে চাইও না।’

তিন

মুসা আর রাফি লবি পেরিয়ে বুফের দিকে এগোল। দু’জনের জন্য দুটো থালা নিল মুসা।

‘মিস্টার সাচেনর্কল কী বলেছে জানিস তুই, রাফি?’ প্রশ্ন করল ও। ‘যত খুশি খাও।’

খুশিতে ঘেউ করে উঠল রাফি।

বুফে লাইন ধরে হেঁটে চলল ওরা। টেবিলে যা আছে সবই থালায় কিছু কিছু করে নিচ্ছে মুসা ওর আর রাফির জন্য। লাইনের শেষে পৌঁছনোর পর দেখা গেল থালায় এত খাবারের পাহাড় জমেছে যে বিড়াল ডিঙোতে পারবে না। পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছে না ওরা।

‘রাফি, তুই কোথায়?’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

ঘেউ করে সাড়া দিল রাফি। মুসার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ও।

‘এখন একটাই কাজ করার আছে,’ বলল মুসা। ‘খাওয়া!’

চোখের পলকে থালা চেটেপুটে সাফ করে ফেলল মুসা আর রাফি।

‘কীরে, রাফি,’ বলল মুসা। এখন রাফিকে দেখতে পাচ্ছে। ‘আরেক চোট হয়ে যাক, কী বলিস?’

খুশিতে ঘেউ করে উঠল রাফি। এবার দেখা গেল বুফে টেবিলে ছোট এক লাইন। সাদা দাগ, নম্বর আর নানান আকৃতিসহ নীল পোশাক পরা এক মহিলার পাশে দাঁড়াল মুসা।

‘অ্যাই, রাফি, ফিসফিস করে বলল মুসা, ‘ম্যাডাম নীল নকশাকে এক পলক দেখে নে, মনে হয় টাউন হাউসের প্ল্যান পরে এসেছে।’

বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলল মুসা। মহিলা ঘুরে দাঁড়ালেন।

‘এটা আসলে এই থিয়েটারের ব্লুপ্রিন্ট,’ বললেন। ‘আমার এক ডিজাইনার বন্ধু কাপড়ে ব্লুপ্রিন্ট কপি করে দিয়েছে।’

এ সময় কিশোর, রবিন আর জিনা হেঁটে এল বুফে লাইনের কাছে।

‘আপনার ড্রেসটা দারুণ,’ বলল জিনা। ‘ঘরের ওদিক থেকে চোখে পড়েছে।’

‘ধন্যবাদ,’ বললেন মহিলা। আমার নাম ওয়াণ্ডা ওয়েদার্স। আমি শহরের এক আর্কিটেক্ট। আমার ড্রেসটা চমৎকার এই প্রাচীন থিয়েটারের সম্মানে উৎসর্গ করেছি।’

‘তারমানে আপনি বাইরের প্রতিবাদকারীদের সাথে একমত?’ প্রশ্ন করল কিশোর

‘মোটেই না,’ বললেন ওয়াণ্ডা। ‘এটা পুরানো আমলের চমৎকার এক থিয়েটার, কিন্তু এটার আর প্রয়োজনীয়তা নেই।’

‘কী বলছেন?’ বলে উঠল রবিন। ‘লবিটা কী সুন্দর!’

‘সুন্দর কিন্তু সেকেলে,’ জবাব দিলেন ওয়াণ্ডা। ‘আর থিয়েটারটা? অর্ধেক সিট ভাঙাচোরা। হিটিং কাজ করে না। মেঝে কেতরে গেছে। এমনকী ছাদ থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে বলে ব্যালকনিটাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটার এখন ভেঙে ফেলার সময় হয়েছে।’

‘আপনি থিয়েটারটা সম্পর্কে এত কিছু জানেন কীভাবে?’ জিনার প্রশ্ন।

‘আমি একজন আর্কিটেক্ট, এবং ক’দিন আগে এই থিয়েটার নিয়ে একটা স্টাডি করেছি আমি,’ ওয়াণ্ডা বললেন। ‘কিছু মনে কোরো না, আমার এখন এক ক্লায়েন্টকে খুঁজতে যেতে হবে। উনি আশপাশেই আছেন।’

ওয়াণ্ডা চলে যেতেই মুসা আর রাফি লাইনের সামনে পৌঁছল। দু’জনের জন্য দুটো থালা তুলে নিল মুসা। ও যেই খাবার ডাঁই করবে অমনি জোরাল এক শব্দে কেঁপে উঠল কামরাটা।

রাফি কেঁউ করে উঠে বুফে টেবিলের নীচে ঝাঁপ দিল।

‘আয়, রাফি,’ ডাকল মুসা। ‘সামান্য একটা শব্দের জন্যে এত মজার বুফে ছাড়বি?’

আরেকটি জোরাল শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো কামরায়। সবাই কানে হাত চাপা দিল।

‘খাইছে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এক পাশে জড়সড় হয়ে দাঁড়াল।

‘শব্দটা কীসের?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘ইলেকট্রিক গিটারের মত লাগল,’ বলল কিশোর।

‘অ্যামপ্লিফাই করা হয়েছে খুব জোরালভাবে,’ যোগ করল জিনা।

‘কোত্থেকে আসছে?’ রবিনের প্রশ্ন।

‘জানি না, তবে মনে হচ্ছে মিস্টার স্নরকেলমাচ দেখতে যাচ্ছেন, লক্ষ করে বলল জিনা।

‘আমাদেরও যাওয়া উচিত, বলল কিশোর। ‘চলো যাই।’ ওরা তিনজন মেলভিনকে অনুসরণ করে লবির শেষ প্রান্তে চলে এল। ঢুকে পড়ল এক দরজা দিয়ে।

‘আমাদেরকেও নিয়ে যাও!’ টেবিলের পাশ থেকে চেঁচাল মুসা। রাফি মাথা বের করে চারদিকে নজর বুলাল। ‘ওরা কোথায় গেল? ওদেরকে খুঁজে পাব কীভাবে?’

রাফি এক মুহূর্ত ভেবে নিল। তারপর মাটিতে নাক ঠেকিয়ে চারপাশের গন্ধ শুঁকতে লাগল। একটা ঘ্রাণ আবিষ্কার করে লবির মাঝখানের পেল্লায় সিঁড়িটার দিকে অনুসরণ করে চলল। মুসা রইল ওর ঠিক পিছনে।

রাফির উপর ভরসা রাখে ও।

চার

মেলভিনকে লম্বা এক করিডর ধরে অনুসরণ করল কিশোর, রবিন আর জিনা। শেষ প্রান্তে গিয়ে, এক দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ল ওরা। পৌঁছে গেল ব্যাকস্টেজে। পর্দা নামানো, ফলে দর্শকদের আসনগুলো দেখতে পেল না ওরা। স্টেজে, বয়স্ক এক লোকের সঙ্গে মেলভিনকে কথা বলতে শুনল। লোকটির পরনে বাদামি প্যান্ট, ট্যান শার্ট আর বাদামি ভেস্ট। এক গ্র্যাণ্ড পিয়ানোর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরা।

‘গাম, তোমার কিছু একটা করতে হবে,’ মিনতি করে বললেন মেলভিন। ‘তুমি তো এই থিয়েটারের আগাপাস্তলা জানো। বাজনাটা কোত্থেকে আসছে বের করতে পারবে না?’

‘আমি এখানে পঁয়ত্রিশ বছর কাজ করেছি,’ গাম বললেন। ‘অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু এরকম কোনও কিছু কখনও দেখিনি। মনে হচ্ছে ভূতের কাজ।’

‘ভূত বলে কিছু নেই,’ জিনা বলল।

মেলভিন আর গাম ঘুরে দাঁড়ালেন। দেখতে পেলেন ও কিশোর আর রবিনের পাশে দাঁড়িয়ে।

‘হয়তো আছে, হয়তো নেই। ইয়াং লেডি,’ গাম বললেন। ‘আমি শুধু বলতে পারি গত ক’দিন ধরে এখানে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটছে।’

‘সত্যি?’ প্রশ্ন করল রবিন। ‘কীরকম?’

‘র‍্যাফটার থেকে একটা স্যাণ্ডব্যাগ খসে পড়ে স্টেজে গর্ত করে দিয়েছে,’ ব্যাখ্যা দিলেন গাম। তারপর পর্দাটা মাঝখানে আটকে গেল। নট নড়নচড়ন নট কিচ্ছু।’

‘ওসব ঘটনা ঘটেছে কারণ থিয়েটারটা অনেক পুরানো,’ বললেন মেলভিন। ‘এখানে কোনও ভূত-টুত নেই। শীঘ্রি কনসার্ট শুরু হবে। গাম, প্লিজ একটু দেখো কোনও কিছু পাওয়া যায় কি না। পর্দা তোলার জন্য সময়মত চলে এসো।’

‘ঠিক আছে, আমি দেখছি,’ বললেন গাম। কিন্তু আমি কোনও কথা দিচ্ছি না। আমি স্টেজ ম্যানেজার, ভূতের গোয়েন্দা নই।’ গাম ঘুরে দাঁড়িয়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলেন। আপন মনে বিড়বিড় করে কী সব আওড়াচ্ছেন।

‘আমি দেখি মিস্টার ফ্রেসানিনির কী খবর,’ বললেন মেলভিন। ‘তোমরা যার যার সিটে বসে পড়ো। দর্শকরা এখুনি এসে পড়বে।’ মেলভিন উল্টো ঘুরে ড্রেসিং রুমগুলোর দিকে হাঁটা ধরলেন।

‘অ্যাই, মুসা আর রাফি কই?’ বলল কিশোর।

‘আমি তো ভেবেছি ওরা আমাদের পিছনেই আছে,’ রবিন বলল।

‘এই যে এখানে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। গোটা থিয়েটারে প্রতিধ্বনি তুলল ওর কণ্ঠ।

সবাই চারধারে চোখ বুলাল মুসার কণ্ঠস্বর কোন্ দিক থেকে আসছে জানার জন্য।

‘মুসা?’ ডাকল জিনা। ‘রাফি? কোথায় তোমরা?’

কিশোর, রবিন আর জিনা পর্দার সামনে এসে দাঁড়াল।

ঘেউ করে উঠল রাফি। ওর ডাকও প্রতিধ্বনিত হলো পুরো থিয়েটার জুড়ে।

‘আমরা ব্যালকনিতে! চেঁচিয়ে বলল মুসা।

‘তোমরা ব্যালকনিতে কী করছ?’ পাল্টা চেঁচাল রবিন।

‘আমরা তোমাদেরকে খুঁজছিলাম,’ জবাবে বলল মুসা। ‘আমরা ভুল পথে এখানে এসে পড়েছি। এখুনি নেমে আসছি!’

‘আমরা সিটে যাচ্ছি,’ চেঁচিয়ে বলল কিশোর।

রাফির দিকে ঘুরে চাইল মুসা।

‘চল রে,’ বলল। এক্সিটের দিকে পা বাড়াল ও আর রাফি।

দোরগোড়া দিয়ে হেঁটে প্রকাণ্ড সিঁড়িটা ভেঙে নামতে লাগল।

অর্ধেকখানি নেমেছে, পিছন থেকে বাজনার শব্দ আসছে শুনতে পেল।

‘কীসের শব্দ? রেডিওর নাকি?’ বলল মুসা।

রাফি লেজ নাড়ল।

ধীরে-ধীরে ঘুরে দাঁড়াল ওরা এবং দেখতে পেল সিঁড়ির মাথায় একটা ভূত দাঁড়িয়ে! লম্বা ভূতটার চোখে সানগ্লাস। ইলেকট্রিক গিটার বাজাচ্ছে।

‘খাইছে! ভূত! ভূত!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

ঘেউ করে আর্তনাদ ছাড়ল রাফি।

‘পালা, রাফি! সিঁড়ি ভেঙে দুদ্দাড় করে নেমে গেল মুসা আর রাফি। লবিতে পৌঁছে দেখল সবাই কনসার্টের জন্য থিয়েটারে ঢুকে পড়েছে।

‘খাইছে, সবাই ভেতরে,’ বলল মুসা। ‘ওদেরকে বলতে হবে। ভয় হচ্ছে দেরি না হয়ে যায়।’

পাঁচ

থিয়েটার অডিটোরিয়ামের ভিতরে এখন পিয়ানো বাজনা শুরু হতে চলেছে। মুসা রাফিকে নিয়ে আলগোছে দরজা খুলে ভিতরে পা রাখল। চারধারে নজর বুলিয়ে কিশোর, রবিন আর জিনাকে খুঁজল ও।

‘সবার মাথার পিছন দিকটা একই রকম,’ বলল মুসা। ‘ওদেরকে খুঁজে পাব না।’

রাফি মাটিতে নাক ঠেকিয়ে শুঁকতে লাগল।

‘খাইছে, আর না,’ বলে উঠল মুসা। ‘এর আগেরবার তোর নাক ফলো করে ভূতের পাল্লায় পড়েছি। এবার আমার চোখ ব্যবহার করব। এখানে যথেষ্ট আলো আছে। ওদেরকে শীঘ্রি খুঁজে পাব।’

থিয়েটারের আলোগুলো নিভু-নিভু হয়ে এল।

‘যদি না ওরা বাতি নিভিয়ে দেয়,’ বলল মুসা।

মেলভিন সুরকেলমাচ হেঁটে স্টেজে উঠলেন। দর্শকরা হাততালি দিতে লাগল।

‘ধন্যবাদ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,’ বললেন মেলভিন। ‘আপনাদের সবাইকে প্যালেস থিয়েটারে স্বাগতম। পুরানো এই থিয়েটার খোলা রাখার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর কথা বাড়াতে চাই না। প্যালেস থিয়েটার আপনাদের সামনে এখন সগর্বে উপস্থাপন করছে বিশ্ববিখ্যাত পিয়ানিস্ট হুগো ফ্রেসানিনিকে!’

মেলভিন স্টেজ থেকে নেমে যেতেই পর্দা উঠল। জোর হাততালি দিল দর্শকরা। স্টেজে দেখা গেল খাটো এক লোক এক গ্র্যাণ্ড পিয়ানোর পাশে দাঁড়ানো। তাঁর পরনে টাক্সেডো। হুগো ফ্রেসানিনি বাউ করে কিবোর্ডের পিছনে বসলেন। পিয়ানোর চাবিগুলোর উপরে প্রজাপতির মত নেচে বেড়াতে লাগল তাঁর আঙুলগুলো। গোটা অডিটোরিয়ামে পিন পতন নিস্তব্ধতা। এমনকী মুসা আর রাফিও নিশ্চুপ। হুগো ফ্রেসানিনি এবার চাবিগুলোর উপর আঙুল নামিয়ে আনলেন।

হঠাৎই স্টেজ ভরে উঠল ধোঁয়ার এক বিস্ফোরণে। ধোঁয়া কেটে গেলে দেখা গেল, ভূতটা মঞ্চের উপরে, পিয়ানোর পাশে দাঁড়িয়ে।

‘খাইছে! সেই ভূতটা!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা।

ভূতটা হাত তুলে তার ইলেকট্রিক গিটারে একটা কর্ড বাজাল, গোটা থিয়েটারে প্রতিধ্বনিত হলো বাজনাটা। লবিতে সবাই এ শব্দটাই শুনেছিল। ভূতটা এবার একটা গানের সুর বাজাতে লাগল। বাজনাটা কানে তালা লাগিয়ে দেয়। বাজনা বাজাচ্ছে, ভূতটা বিচিত্র, প্রতিধ্বনি- তোলা কণ্ঠে গেয়ে উঠল:

ইউ অল মাস্ট লিভ!
দিস প্লেস মাস্ট ক্লোজ!
লিসেন টু হোয়াট আই সে :
আই উইল হণ্ট দ্য প্যালেস
উইথ মিউযিক অ্যাণ্ড ম্যালিস
ফরএভার অ্যাণ্ড এভার অ্যাণ্ড আ ডে।

‘খাইছে, সবাইকে চলে যেতে বলছে,’ বলল মুসা। ‘বন্ধ করে দিতে বলছে প্যালেস থিয়েটার। মন্দ গায় না। ভূত না হলে রক স্টার হতে পারত!’

ভূতটা গিটারে শেষ কর্ডটা তুলতেই, ধোঁয়ায় ভরে গেল মঞ্চ। ধোঁয়া কেটে গেলে দেখা গেল ভূতটা অদৃশ্য, এবং সেই সঙ্গে হুগো ফ্রেসানিনি।

দর্শকরা সবাই লাফিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়িমরি দরজার দিকে ছুটল।

‘এখন ওদের খুঁজে পাব কীভাবে?’ বলল মুসা। ‘রাফি, তুই আমার কাঁধে চড়ে দেখ তো ওদের দেখা যায় কি না।’

রাফিকে কাঁধে তুলে নিল মুসা।

মেলভিন দৌড়ে এলেন স্টেজে।

‘আপনারা শান্ত হোন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’ ঘুরে দাঁড়িয়ে অফ স্টেজে চিৎকার করলেন, ‘গাম, পর্দা নামাও!’ কোনও কাজ হলো না, অগত্যা মেলভিন নিজেই অফ স্টেজে দৌড়ে গেলেন পর্দা নামাতে।

কিশোর, রবিন আর জিনা নিজেদের আসন থেকে উঠে দাঁড়াল ব্যাকস্টেজে যাওয়ার জন্য। রাফি ওদেরকে উঠে দাঁড়াতে দেখল।

ঘেউ করে উঠল রাফি। মুসাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল ভিড় ভেদ করে এবং যোগ দিল কিশোর, রবিন আর জিনার সঙ্গে। ওরা সবাই ব্যাকস্টেজে গিয়ে দেখে, পর্দার রশির পাশে এক টুলে বসা মেলভিন।

‘আপনি ঠিক আছেন তো, মিস্টার স্নরকেলমাচ?’ জিজ্ঞেস করল রবিন।

উনি জবাব দিতে পারার আগেই কার যেন গোঙানির শব্দ পেল ওরা।

‘খাইছে, সেই ভূতটা আবার!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ‘আমাদের পিছু ছাড়ছে না!’

‘গিটারওয়ালা ভূতের শব্দ মনে হচ্ছে না, বলল জিনা। ‘মনে হচ্ছে মানুষ।’

সবাই চারধারে দৃষ্টি বুলাল।

‘এদিকে,’ ডাকল কিশোর। এক টুকরো সিনারির পাশে দাঁড়িয়ে ও। পিছনে হাত বাড়িয়ে গামকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করল। গাম মাথা চেপে ধরে আছেন।

‘তোমার কিছু হয়নি তো, গাম?’ বলে দৌড়ে এলেন মেলভিন। গামকে ধরে ধরে টুলে নিয়ে বসালেন।

‘হয়নি মানে!’ রাগতস্বরে বললেন গাম। ‘আমার মাথায় কীসে যেন বাড়ি দিয়েছে। আপনাকে হাজারবার বলেছি থিয়েটারটা ভেঙে পড়ছে, বেচে দিন। আপনি তো আমার কথা কানেই তোলেন না।’

‘এখন আর না তুলে উপায় কী,’ বললেন মেলভিন। ‘এখুনি বন্ধ করে দিতে পারি। ভূতটার কথা জানাজানি হলে আর হুগো ফ্রেসানিনির কী হয়েছে জানলে আমাকে বন্ধ করতে বাধ্য করা হবে।’

কিশোর বন্ধুদেরকে বলল ওর চারপাশে জড় হতে। এক মুহূর্ত নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে কথা বলে নিল ওরা।

‘মিস্টার স্নরকেলমাচ, ‘ বলল রহস্যটা ভেদ করার একটা সুযোগ দিন।’

‘জানি না…’ মেলভিন বললেন।

গোয়েন্দাপ্রধান। ‘আমাদেরকে

‘ভেবে দেখুন আপনার হারানোর কিছু নেই,’ বলল নথি।

এক মুহূর্ত ভেবে নিলেন মেলভিন।

‘ঠিক আছে। ব্যাপারটা গোপন রাখার জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি।’

‘ভাববেন না, মিস্টার স্নরকেলমাচ, বলল জিনা। ‘আমরা আপনাকে হতাশ করব না।’

‘তুমি আমার অফিসে চলো,’ গামকে বললেন মেলভিন। ‘শুয়ে থাকবে।’ তাঁকে নিয়ে চলে গেলেন।

তাঁরা বিদায় নিতেই বন্ধুদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল কিশোর।

‘এখন কাজে নামার সময়,’ বলল ও।

ছয়

‘ব্যালকনি সিঁড়িটা চেক করে দেখতে চাই,’ বলল গোয়েন্দাপ্রধান। ‘যেখানে মুসারা ভূত দেখেছিল।’

‘ঠিক বলেছ,’ বলল নথি। ‘আমিও তোমার সঙ্গে যাব।’

‘মুসা, রাফি আর আমি স্টেজের আশপাশটা দেখব,’ বলল জিনা। ‘কোনও না কোনও ক্লু খুঁজে পাবই পাব।’

‘কাজ হয়ে গেলেই এখানে দেখা করব আমরা,’ জবাবে বলল রবিন। ও আর কিশোর ব্যাকস্টেজ থেকে হাঁটা দিয়ে এগোল ব্যালকনি সিঁড়ির দিকে। জিনা মঞ্চের চারপাশে এক মুহূর্ত দৃষ্টি বুলিয়ে নিল।

‘স্টেজের ওপর কোনও ক্লু পাও কি না দেখো,’ মুসাকে বলল জিনা। ‘আমি দেখি গামকে যেখানে পাওয়া গেছিল সেখানে কোনও ক্লু পাই কি না।’ জিনা গিয়ে ব্যাকড্রপের পিছনে তল্লাশী করতে লাগল।

মুসা আর রাফি মঞ্চের চারধারে মিনিট খানেক চোখ বুলাল। ‘অ্যাই, রাফি,’ ফিসফিস করে বলল মুসা, ‘একটা আইডিয়া এসেছে। তুই গিয়ে পিয়ানোতে বস।’

লেজ নাড়ল রাফি। হেঁটে গিয়ে পিয়ানো বেঞ্চে বসল।

‘ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ,’ বলল মুসা, ‘আমি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি বিশ্বখ্যাত কনসার্ট পিয়ানিস্ট রাফিয়ানিনিকে।’ মুসা পর্দা তোলার দড়িটা টানল। এবার টেনে নামাল লকিং লিভার, যাতে পর্দা নেমে না যায়। ‘খাইছে, দেখে বোঝা যায় না এত ভারী,’ বলল।

রাফি ফাঁকা থিয়েটারে চোখ বুলিয়ে বাউ করল। এবার থাবা তুলে নামিয়ে আনল পিয়ানোর কিবোর্ডের উপরে। মুসা কানে হাত চাপা দিয়ে পিয়ানোটার কাছে হেঁটে এল।

‘রাফিয়ানিনি, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি সত্যিকারের মিউযিক কাকে বলে,’ বলল মুসা, রাফির পাশে বসল। মুসা ‘চপস্টিকস’ বাজাতে শুরু করল। শীঘ্রি রাফি যোগ দিল ওর সঙ্গে। এতটাই মশগুল ছিল ওরা, জিনা মঞ্চে ফিরে এসেছে টেরই পায়নি। মুসা আর রাফিকে বকা দিতে যাবে এ সময় মেঝেতে পড়ে-থাকা কিছু একটা দৃষ্টি কেড়ে নিল ওর।

‘অ্যাই, কী ওটা?’ বলে ঝুঁকে পড়ল। এক টুকরো কাগজ তুলে নিল জিনা।

মুসা আর রাফি পিয়ানো বাজাতে এতটাই মগ্ন, ওর কথা শোনেনি।

‘আল্লার ওয়াস্তে এসব বন্ধ করবে?’ বলল জিনা। ‘তোমাদের না ক্লু খোঁজার কথা?’

‘আরেকটা মাত্র নোট, জিনা,’ বলল মুসা। ‘ফিনিশের জন্যে রেডি, -রাফি?’

দু’জনে হাত আর থাবা তুলে শেষবারের মত নামিয়ে আনল কিবোর্ডের উপর। পরক্ষণে, ধোঁয়ার মেঘে ঢাকা পড়ল মঞ্চ এবং জিনার আর্তচিৎকার শুনতে পেল ওরা। ধোঁয়া কেটে গেলে দেখা গেল জিনা নেই।

‘খাইছে! আমাদের বাজনা মনে হয় ওকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে,’ বলল মুসা। ‘জিনা, জিনা, কোথায় গেলে তুমি?’ ডাকল ও।

ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল রাফি।

মুসা আর রাফি পিয়ানো বেঞ্চ থেকে লাফিয়ে নেমে চারধারে চাইতে লাগল।

‘খাইছে, কিশোরদের খবর দিতে হবে,’ বলল মুসা। ‘ভূতটা মনে হয় জিনাকে ধরেছে!’

তারস্বরে ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল ভয়ার্ত রাফি।

এক মুহূর্ত পরে কিশোর আর রবিন দৌড়ে এল মঞ্চে।

‘কী হয়েছে?’ গোয়েন্দাপ্রধান প্রশ্ন করল।

‘জিনা!’ মুসা বলল।

‘কী হয়েছে ওর?’ জবাব চাইল নথি।

‘ও নেই!’ জবাবে বলল মুসা।

‘কী? কীভাবে?’ কিশোরের জিজ্ঞাসা।

‘খাইছে, আমি আর রাফি পিয়ানো বাজাচ্ছিলাম। জিনা ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ করে ধোঁয়ার মেঘ উঠল, তারপর চেয়ে দেখি জিনা উধাও।’

‘ওর কোনও ক্ষতি না হলেই হয়,’ বলল নথি।

‘আমি ভাল আছি!’ চেঁচিয়ে উঠল জিনা। মনে হলো অনেক দূর থেকে শোনা গেল ওর কণ্ঠস্বর।

‘জিনা, কোথায় তুমি?’ পাল্টা চেঁচাল কিশোর।

‘এখানে, ব্যালকনিতে,’ জবাব দিল জিনা। ‘তোমরা দাঁড়াও। তোমাদেরকে ক’টা ক্লু দেখাব।’

সাত

ক’মুহূর্ত পরে, অন্যদের সঙ্গে মঞ্চের উপরে যোগ দিল জিনা।

‘খাইছে, জিনা, তুমি ঠিক আছ তো?’ মুসা প্রশ্ন করল।

‘হ্যাঁ, বলল জিনা।

‘কী হয়েছিল?’ কিশোর জানতে চাইল। ‘ব্যালকনিতে গেলে কীভাবে?’

‘আমি স্টেজে পিয়ানোটার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম,’ ব্যাখ্যা করল জিনা। ‘হঠাৎ টের পেলাম মেঝেটা সরে গেল। একগাদা বালিশের উপর ধপাস করে পড়লাম আমি। খানিকটা অন্ধকার ছিল, তাই দেয়ালে হাত রাখলাম। দেয়াল ধরে ধরে কয়েক ধাপ ফলো করতেই ব্যালকনিতে পৌঁছে গেলাম।’

‘তারমানে গোপন প্যাসেজ, রবিন বলল। ‘এবার অনেকখানি ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।’

‘ব্যাখ্যা আরও আছে,’ বলল কিশোর। ‘সিঁড়ির মাথায়, আমি আর রবিন লক্ষ করেছি কার্পেটিঙের নীচ দিয়ে কিছু তার বেরিয়েছে। ওগুলো স্টিরিও স্পিকার তার, এবং চলে গেছে একটা পোস্টারের পিছনের দেয়ালের ভিতরে।’

‘মানে ভূতটা তারের মাধ্যমে শব্দ করছে,’ বলল মুসা।

‘আরও আছে,’ কথার খেই ধরল জিনা। ‘ছোট্ট অভিযানটার আগে, স্টেজে এটা খুঁজে পাই আমি,’ কনসার্টের একটা টিকেট তুলে ধরল জিনা।

‘আমার মন বলছে আমাদের গিটার বাজানো ভূতটার পরিচয় শীঘ্রি জানা যাবে,’ বলল কিশোর।

‘আমারও তাই ধারণা,’ বলল জিনা।

‘একটা ফাঁদ পাততে হবে,’ নীচের ঠোঁটে চিমটি কেটে বলল কিশোর। ‘প্ল্যানটা এরকম। আমি ব্যাকড্রপের পিছনে লুকিয়ে থাকব। মুসা, তুমি পিয়ানোতে বসবে, ভান করবে তুমি আরেকজন কনসার্ট পিয়ানিস্ট। ভূতটা দেখা দিলে আমি পিয়ানোর কভারটা ওর ওপর ছুঁড়ে দেব।’

‘ভূতটা যে ফিরে আসবে তার নিশ্চয়তা কী?’ প্রশ্ন করল জিনা। ‘একদিনে হয়তো দুটো শো করে না ও।’

‘ও যদি আমাদের এই থিয়েটার থেকে সত্যি সত্যি তাড়াতে চায় তা হলে ঠিকই ফিরে আসবে,’ ব্যাখ্যা করল কিশোর। ‘বিশেষ করে যদি ভাবে হুগো ফ্রেসানিনির বদলে মুসা কনসার্ট দিচ্ছে।’

‘সবই তো বুঝলাম,’ বলল রবিন। ‘কিন্তু একটা ব্যাপার।’

‘কী?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

‘তোমার কথায় আমাদের কনসার্ট পিয়ানিস্টের মন খারাপ হয়ে গেছে,’ জবাবে বলল রবিন।

‘মুসা, তুমি আমাদের হেল্প করবে না?’ জিনা বলল।

মুসা মুখ ঘুরিয়ে রাখল। বেজার।

‘নাহ।’

‘যদি স্ন্যাক খাওয়াই, তবে?’ জিনার প্রশ্ন।

নড়ল না মুসা।

‘দুটো স্ন্যাক খাওয়ালে?’ প্রশ্ন করল কিশোর।

মাথা নাড়ল মুসা।

‘তিনটে বার্গার খাওয়ালে?’ বলল রবিন।

এবার খুশিতে হেসে ফেলল মুসা। পেটে হাত বুলাল। রাজি।

‘ধন্যবাদ, মুসা,’ বলল রবিন।

‘আমি গিয়ে মিস্টার স্নরকেলমাচকে নিয়ে আসি,’ বলল কিশোর। ‘তা হলে ব্যাপারটা বাস্তব মনে হবে। এই ফাঁকে, মুসা, তুমি অভিনয়ের জন্যে ড্রেস আপ করে ফেলো।’

‘মুসা ড্রেস আপ করুক,’ বলল জিনা, ‘আমি আর রবিন গোপন প্যাসেজটায় আরেকবার হানা দিই। আমার ধারণা ওখানে আরও কিছু আছে যা চোখে ধরা পড়ছে না।’

‘প্ল্যানটা পারফেক্ট মনে হচ্ছে,’ বলল কিশোর। ‘চলো যাওয়া যাক!’

আট

কিশোর মি. স্নরকেলমাচকে নিয়ে মঞ্চে ফিরে এল।

‘তোমাদের প্ল্যানে কাজ হবে তো?’ মেলভিন প্রশ্ন করলেন।

‘অবশ্যই হবে, বলল কিশোর। ভাল কথা, আপনার অফিসে

গামকে দেখলাম না। উনি এখন সুস্থ আছেন তো?’

‘হ্যাঁ,’ বললেন মেলভিন। ‘ও একটু আগে বাসায় চলে গেছে।’

‘আই সি, বলল কিশোর। ‘মুসা, কোথায় তুমি?’

‘একটু অপেক্ষা করো,’ বলল মুসা। ‘এখুনি আসছি।’ কিশোর প্রশ্ন করল, ‘আপনি রেডি তো, মিস্টার স্নরকেলমাচ?’

‘তোমরা রেডি হলেই রেডি,’ জবাবে বললেন তিনি।

‘তা হলে যার যার জায়গা নেয়া যাক,’ বলল কিশোর। ‘আয়, রাফি।’ কিশোর আর রাফি মঞ্চ থেকে হেঁটে চলে গেল সিনারির আড়ালে। পিয়ানোর মস্ত বড় আচ্ছাদনটা হাতে ধরে রইল কিশোর।

‘মিস্টার মুসাইয়ানি!’ ডাকলেন মেলভিন। ‘আপনি রেডি?’

মুসা হেঁটে এল মঞ্চে। পরনে কালো টাক্সেডো জ্যাকেট আর কালো বো টাই। মাথার চুল ব্যাক ব্রাশ করা।

‘এত অল্প সময়ের নোটিসে কনসার্টে রাজি হওয়াতে আপনাকে ধন্যবাদ,’ বললেন মেলভিন। ‘মিস্টার ফ্রেসানিনির ক্ষেত্রে যা ঘটল তা দুঃখজনক। তাঁর জায়গায় আপনি পারফর্ম করবেন বলে আমরা কৃতজ্ঞ।’

‘নো প্রবলেম,’ বলল মুসা।

‘প্লিজ বসুন এবং দেখে নিন পিয়ানোর স্ট্যাণ্ডার্ড ঠিক আছে কি না,’ মুসাকে বললেন মেলভিন।

‘আচ্ছা,’ বলল মুসা।

মুসা পিয়ানোতে বসল। দু’হাত তুলে আলতো করে নামিয়ে আনল। ‘চপস্টিকস’-এর একটা দ্রুত ভার্সন বাজাল ও। তারপর কিবোর্ডে ইচ্ছেমত আঙুল চালাতে লাগল। জোর এক কর্ড বাজাতেই ধোঁয়ার এক কুণ্ডলী উঠল। ধোঁয়া কেটে গেলে দেখা গেল ভূতটা মঞ্চে দাঁড়িয়ে।

ভূতটা মুসার পিছনে হেঁটে এসে ইলেকট্রিক গিটারে একটা কর্ড বাজাল। থিয়েটার হলে প্রতিধ্বনিত হলো বাজনাটা।

‘খাইছে!’ বলে লাফিয়ে উঠল মুসা।

‘এইবার!’ চেঁচাল কিশোর, ব্যাকড্রপের পিছন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল ও আর রাফি। পিয়ানোর আচ্ছাদনটা শূন্যে ছুঁড়ে দিল, কিন্তু ভূতটা গোত্তা খেয়ে সরে গেল। আচ্ছাদনটা নেমে এল মেলভিন স্নরকেলমাচের উপরে। ভূত ভেবে কিশোর মাটিতে পেড়ে ফেলল তাঁকে।

ওদিকে, ভূতটা ধাওয়া করল মুসাকে। মুসা পিয়ানোর চারধারে ছুটে বেড়াতে লাগল। ভূতটা হাত বাড়িয়ে মুসার জ্যাকেট চেপে ধরল। দৌড়তে না পেরে, জ্যাকেট থেকে বাহু দুটো খালাস করল মুসা, ফলে পিছনদিকে ছিটকে পড়ল ভূতটা। দড়াম করে বন্ধ হলো পিয়ানোর ঢাকনা। তার নীচে আটকা পড়ল ভূতটা। ঢাকনা পড়ার শব্দে ভয় পেয়ে মঞ্চ ছেড়ে পালাল মুসা। সোজা পর্দার দড়িটার কাছে দৌড়ে গেল ও। ওর ধাক্কা খেয়ে লকিং লিভার আলগা হয়ে গেল। পর্দাটা সশব্দে আছড়ে পড়ল আটকা-পড়া ভূতটার উপরে।

নয়

কিশোর পিয়ানোর আচ্ছাদনের তলা থেকে মেলভিনকে বের হতে সাহায্য করল।

‘সরি, মিস্টার স্নরকেলমাচ,’ বলল কিশোর। ‘আপনি ঠিক আছেন তো?’

‘আমি ঠিক আছি,’ বললেন মেলভিন। ‘ভূতটাকে ধরতে পেরেছ?’ পিয়ানোর দিকে চাইল ওরা। ঢাকনায় আটকা পড়ে রয়েছে ভূতটা।

‘অ্যাই, মুসা কোথায়?’ বলল কিশোর, চারধারে চোখ বুলাল। ‘বাঁচাও, কিশোর!’ চেঁচাল মুসা। ‘আমি এখানে! ‘

কিশোর, মেলভিন আর রাফি চোখ তুলে চেয়ে দেখে ছাদের পর্দার রশিটা ধরে ঝুলছে মুসা।

‘নেমে এসো, মুসা,’ বলল কিশোর। ‘ভূতটা ধরা পড়েছে।’

‘আমি ওকে নামতে সাহায্য করছি,’ মেলভিন বললেন। তিনি হেঁটে গিয়ে ধীরে-ধীরে পর্দাটা তুলে দিলেন। পর্দা যেই উঠে গেল, মুসা নেমে এল।

‘খাইছে, ধন্যবাদ!’ বলল মুসা।

কিশোর হেঁটে গেল পিয়ানোটার কাছে।

‘এবার সবাই দেখতে পাবে কে এই হালফ্যাশনের ভূত,’ বলল ও।

‘মিস্টার স্নরকেলমাচ, আপনি কাজটা করবেন দয়া করে?’

‘দাঁড়াও!’ চেঁচাল জিনা। ও আর রবিন মঞ্চে হেঁটে এল হুগো ফ্রেসানিনিকে নিয়ে।

‘মিস্টার ফ্রেসানিনি!’ চেঁচিয়ে উঠলেন মেলভিন। ‘আপনি ভাল আছেন তো?’

‘হ্যাঁ,’ পিয়ানিস্ট জবাব দিলেন। ‘এই ছেলে-মেয়ে দুটোকে ধন্যবাদ। ওরা জানত কোথায় আমাকে পাওয়া যাবে।’

‘উনি স্টেজের নীচে ছোট এক কুঠুরীতে ছিলেন, বলল জিনা। ‘আমি যে প্যাসেজওয়েটা খুঁজে পেয়েছিলাম তার ঠিক পাশেই।’

‘এখন দেখা যাক কে এতসবের পিছনে,’ বললেন মেলভিন। পিয়ানোর ঢাকনা খুলে ভূতের কাপড়টা টেনে সরালেন।

‘ওয়াণ্ডা ওয়েদার্স!’ সবিস্ময়ে বলে উঠলেন মেলভিন। ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!’

আমরা যা ভেবেছিলাম!’ বলল জিনা।

‘তোমরা জানলে কীভাবে?’ মেলভিন প্রশ্ন করলেন।

‘মিস্টার ফ্রেসানিনি আর ভূতটা উধাও হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে স্টেজে এই টিকেটটা পাই,’ ব্যাখ্যা করল জিনা। বুঝতে পারি এটা সত্যিকারের ভূত নয়। আসল ভূতের টিকেট লাগে না।’

‘সত্যিকারের ভূতের বাজনা অ্যামপ্লিফাই করতে স্পিকারের দরকার পড়ে না।’ কথায় খেই ধরল রবিন। ‘ব্যালকনিতে আমরা যে তারগুলো পাই সেগুলো জোড়া ছিল দেয়ালে লুকানো স্পিকারগুলোতে।

‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ভূতটা সুপ বানিয়ন,’ বলল কিশোর। ‘আমাদের কাছে অবাক লেগেছিল তিনি যে থিয়েটারটা ভেঙে ফেলতে চান সেখানে কেন এসেছেন,’ বলল রবিন।

‘কিন্তু আমরা টের পাই এই থিয়েটারের অলি-গলি ভূতটার নখদর্পণে,’ বলে চলল কিশোর।

‘বিশেষ করে স্টেজের নীচের সব গোপন প্যাসেজ,’ কথার সুতো ধরল জিনা। ‘এবং স্টেজের ট্র্যাপডোরের সাথে কীভাবে পিয়ানো কিগুলো ওয়্যার করা যায়।

‘কাজেই বাকি থাকল আর মাত্র দু’জন সাসপেক্ট: ওয়াণ্ডা ওয়েদার্স আর গাম,’ বলল রবিন।

‘এটা সত্যি কথা ভূতটা যখন দেখা দেয় তখন আশপাশে কখনওই গাম ছিলেন না,’ বলল গোয়েন্দাপ্রধান। ‘কিন্তু তাঁর মাথায় বাড়ি খাওয়ার ব্যাপারটা মিথ্যে নয়।’

‘আমরা ভেবেছি নিজেকে সন্দেহের আওতার বাইরে রাখতে উনি অমন কাজ করবেন না,’ যোগ করল নথি।

‘ফলে বাকি থাকলেন শুধু ওয়াণ্ডা,’ জিনা বলল।

‘কিন্তু কেন?’ মেলভিন প্রশ্ন করলেন। ঘুরে দাঁড়ালেন স্থপতির দিকে।

‘কারণ আর্কিটেকচার ব্যবসার জন্যে আমার বড় একটা ব্রেক দরকার ছিল,’ বললেন ওয়াণ্ডা। ‘আমি লোকজনকে ভয় দেখিয়ে এখান থেকে তাড়াতে চেয়েছিলাম যাতে আপনি এটা সুপের কাছে—মানে স্টুয়ার্টের কাছে বেচে দেন। আমি তা হলে তার কাছে আমার মাল্টিপ্লেক্সের প্ল্যান বেচার সুযোগ পেতাম।

‘তার দরকার পড়বে না,’ বললেন স্টুয়ার্ট বানিয়ন। তিনি থিয়েটারের আইল ধরে টড, লিসা আর এক পুলিশম্যানের সঙ্গে হেঁটে এলেন।

‘কী বলছ তুমি?’ মেলভিনের জিজ্ঞাসা।

‘থিয়েটারের বাইরে অনেক লোক জড় হয়েছে,’ স্টুয়ার্ট বানিয়ন বললেন। ‘এবং মনে হচ্ছে তারা টিকেট কিনতে চায়। ঠিক না, ছেলে- মেয়েরা?’

‘হ্যাঁ,’ বলল টড।

‘আমরা সবাই গিটার বাজানো ভূতের কথা শুনেছি,’ বলল লিসা ‘এবং আমরা তাকে দেখতে চাই।’

‘বাইরে দর্শকরা অপেক্ষা করছে ভেতরে ঢোকার জন্যে?’ মেলভিন প্রশ্ন করলেন।

‘হ্যাঁ,’ জানাল লিসা। ভূতের কথা ছড়িয়ে পড়ছে। এখন আরও বেশি দর্শক আসবে।’

‘খুব খারাপ কথা, কারণ ভূতটা-উম,’ মুসার মুখে হাতচাপা দিলেন মেলভিন।

‘ভূতটা এখুনি পারফর্ম করতে পারবে না,’ বললেন মেলভিন। ‘কিন্তু আমরা একটা রাস্তা বের করে ফেলব। আমরা হয়তো এক রাতে দুটো শো করব। দারুণ হবে ব্যাপারটা!’

‘দেখেশুনে মনে হচ্ছে, মিস্টার স্নরকেলমাচ, আপনি প্যালেস থিয়েটারকে সেভ করার পথ খুঁজে পেয়েছেন,’ বলল কিশোর।

‘সেজন্যে এই বিচ্ছুগুলোই দায়ী,’ আওড়ালেন ওয়াণ্ডা।

‘অফিসার, মিস ওয়েদার্সকে থানায় নিয়ে যান,’ বললেন মেলভিন। ‘আমি এখুনি নামব।’ পুলিশম্যান মঞ্চে উঠে ওয়াণ্ডা ওয়েদার্সকে গ্রেফতার করল।

‘তোমার জন্যে সুসংবাদ আর আমার জন্যে দুঃসংবাদ,’ বললেন স্টুয়ার্ট বানিয়ন। ‘এখানে চমৎকার এক মাল্টিপ্লেক্স করা যেত। গুডলাক, মেলভিন।’ স্টুয়ার্ট বানিয়ন উল্টো ঘুরে থিয়েটার ত্যাগ করলেন।

‘তোমাদের সাহায্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ,’ বললেন মেলভিন। ‘তোমরা না থাকলে এর সমাধান হত না।’

‘আচ্ছা, মুসা কোথায়?’ বলল জিনা।

‘ও মনে হয় ভূতটার কাছ থেকে কিছু জিনিস শিখেছে,’ বলল রবিন।

সবাই ঘুরে চাইল। দেখতে পেল মুসা ভূতটার সানগ্লাস পরেছে। গিটার বাজাচ্ছে ও। তালে-তালে নাচছে টড আর লিসা।

‘খাইছে, দ্য গ্রেট মুসাইয়ানি শো,’ চিৎকার ছাড়ল মুসা।

বাজনা চলছে, সবাই হেসে উঠল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *