পেট্রিফায়েড ফরেস্ট

পেট্রিফায়েড ফরেস্ট

অভিশাপে পাথর হয়ে যাবার ব্যাপার রূপকথার বই-এ পাওয়া যায়। ঐ যে দুষ্ট যাদুকর রাজকন্যাকে পাথর বানিয়ে ফেলল। বছরের পর বছর রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে রইল সেই পাথরের মূর্তি। তারপর এক শুভক্ষণে রাজপুত্র এসে তাকে অভিশাপমুক্ত করল। পাথরের মূর্তি প্রাণ ফিরে পেল। তারা দু’জন সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগল।

শৈশবের রূপকথার গল্পকে গুরুত্ব দেবার কোন কারণ নেই, কিন্তু যৌবনে আবার শৈশবের গল্প নতুন করে পড়লাম। উপন্যাসটির নাম “পেট্রিফায়েড ফরেস্ট” অর্থাৎ প্রস্তরীভূত অরণ্য। এই উপন্যাসের তরুণ নায়ক সন্ধ্যাবেলা বিষণ্ণ মুখে ‘পেট্রিফায়েড ফরেস্ট’-এ ঘুরে বেড়ায়। চারদিকে পাথরের গাছপালা। তার মাঝে পাথরের মত মুখ করে এ যুগের নায়ক বসে থাকে। আমার কাছে মনে হয়, এ কী ছেলেমানুষি! রূপকথার পাথরের অরণ্য এই যুগে কোত্থেকে আসবে? পাথরের অরণ্য থাকতে পারে না।

আমার অনেক ধারণার মত এই ধারণাও পরবর্তীতে ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। প্রস্তরীভূত অরণ্য দেখার দুর্লভ সৌভাগ্য হয়। সেই গল্প বলা যেতে পারে।

তখন থাকি আমেরিকার নর্থ ডাকোটায়। সংসার ছোট–আমি, আমার স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়ে নোভা। টিচিং অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে মাসে চারশ’ ডলারের মত পাই। দিনে আনি দিনে খাই অবস্থা। ঘুরে বেড়ানোর প্রচণ্ড শখ। শখ মেটানোর উপায় নেই। খুবই খরচান্ত ব্যাপার। আমেরিকা বিশাল দেশ। দেখার জিনিস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তখনো কিছুই দেখা হয়নি। ছ’শ ডলার দিয়ে লক্কড় মার্কা একটি ফোর্ড গাড়ি কিনেছি। সেই গাড়ি নিয়ে বেরুতে সাহস হয় না। ইঞ্জিন গরম হলেই এই গাড়ি মহিষের মত বিচিত্র শব্দ করে।

এই অবস্থায় বেড়াতে যাবার নিমন্ত্রণ পেলাম। আমার পাশের ফ্ল্যাটের মালয়েশিয়ান ছাত্র এক সকালে এসে বলল, আহমাদ, আমি গতকাল একটা নতুন গাড়ি কিনেছি–শেলেট। পাঁচ হাজার ডলার পড়ল।

আমি বললাম, বাহ, ভাল তো!

‘এখন ঠিক করেছি গাড়িটা লং রুটে টেস্ট করব। গাড়ি হচ্ছে স্ত্রীর মত। স্ত্রীকে যেমন পোষ মানাতে হয়, গাড়িকেও পোষ মানাতে হয়। আমি আজ সন্ধ্যায় রওনা হচ্ছি সাউথ ডাকোটায়।‘

‘খুব ভাল।‘

‘তুমিও আমার সঙ্গে যাচ্ছ। তোমার সঙ্গে যদিও আমার তেমন পরিচয় নেই, তবু তুমি আমার প্রতিবেশী। তুমি যেমন মুসলমান, আমিও মুসলমান। অবশ্য আমি খারাপ মুসলমান, নিয়মিত মদ খাই।‘

আমি মালয়েশিয়ান ছেলেটির কথাবার্তায় চমৎকৃত হলাম। সে বলল, আমি তোমার নাম জানি, কিন্তু তুমি আমার নাম জান না। দশ ডলার বাজি। বল দেখি

আমার নাম কি?

আমি বললাম, ‘আইজেক।‘

‘আইজেক হচ্ছে আমার ছেলের নাম। আমার নাম আবদাল। যাই হোক, তুমি তৈরি থেকো। ঠিক সন্ধ্যায় আমরা রওনা হব।

আমি বললাম, নতুন গাড়িতে যাচ্ছ, তোমার স্ত্রী এবং ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গেলেই তো ভাল হবে।

‘মোটেই ভাল হবে না। তুমি আমার স্ত্রীকে চেন না। ওকে আমি সহ্য করতে পারি না। তাছাড়া তোমাকে আগেই বলেছি, গাড়ি হচ্ছে স্ত্রীর মত। দু’জন স্ত্রীকে নিয়ে বের হওয়া কি ঠিক?’

আমি আবদালের লজিকে আবারো চমৎকৃত হলাম। তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার পক্ষে আমার স্ত্রী ও কন্যাকে ফেলে একা একা বেড়াতে যাওয়া সম্ভব হবে না। ওদের মন খারাপ হবে। আমারও ভাল লাগবে না।

আবদাল বিমর্ষ মুখে চলে গেল। আমার স্ত্রী গুলতেকিন বলল, ওর সঙ্গে যেতে রাজি না হয়ে খুব ভাল করেছ। পাগল ধরনের লোক। তবে ওর বউটা খুব ভাল। তার নাম ‘রোওজি’। এমন ভাল মেয়ে আমি কম দেখেছি। চেহারাও রাজকন্যাদের মত।

বিকেলে আবদাল আবার এল। তার মুখের বিমর্ষ ভাব দূর হয়েছে। সে হাসিমুখে বলল, ঠিক আছে, তুমি তোমার স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে নাও। আমি আমারটাকে নিচ্ছি। ঘুরে আসি।

আমি বললাম, এত মানুষ থাকতে তুমি আমাকে নিতে আগ্রহী কেন? আবদাল বলল, অনেকগুলি কারণ আছে–তুমি আমার প্রতিবেশী, তুমি মুসলমান এবং তুমি রোজ বিকেলে তোমার মেয়েকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াও। দেখতে বড় ভাল লাগে। আমারো ইচ্ছে করে আমার ছেলেটাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরতে। তবে আমার ছেলেটা হল মহাশয়তান। মা’র কাছ থেকে সব শয়তানি বুদ্ধি পেয়েছে। এইজন্যে ওকে কাঁধে নেই না। তাও একদিন নিয়েছিলাম। কাঁধে তোলামাত্র পিসাব করে দিল। প্রাকৃতিক কারণে করেছে তা না, ইচ্ছে করে করেছে।

‘রাতে রওনা হবার দরকার কি? আমরা বরং ভোরবেলা রওনা হই। দৃশ্য দেখতে দেখতে যাই।‘

‘আমেরিকায় দেখার মত কোন দৃশ্য নেই। মাইলের পর মাইল ধু-ধু মাঠ। ঐ মাঠগুলি গরুর পায়খানা করার জন্য অতি উত্তম। কাজেই রাতে যাচ্ছি। তাছাড়া স্ত্রীকে যেমন রাতে পোষ মানাতে হয়, গাড়িকেও তেমনি রাতে পোষ মানাতে হয়।

সন্ধ্যা মিলাবার পর আমরা রওনা হলাম। গ্যাস স্টেশনে গ্যাস নেবার জন্যে গাড়ি দাঁড়াল। আবদাল নেমে গেল, গ্যাস নিল, দু-একটা টুকিটাকি জিনিস কিনবে। আবদালের স্ত্রী রোজি আমার দিকে তাকিয়ে পরিষ্কার ইংরেজিতে বলল, ভাইজান, আমি কি আপনার সঙ্গে দুটা কথা বলার অনুমতি পেতে পারি? আমি মেয়েটির চমৎকার ইংরেজি শুনে যেমন মুগ্ধ হলাম, তেমনি মুগ্ধ হলাম তার রূপ দেখে। মালয়েশিয়ানদের চামড়া আমাদের মত শ্যামলা। এই মেয়েটির গায়ের রং দুধে আলতায় মেশানো। মিশরী মেয়েদের মত টানা টানা চোখ, লম্বা চুল। লাল টকটকে কমলার কোয়ার মত ঠোঁট।

আমি বললাম, বলুন কি বলবেন। আমি শুনছি।

‘আপনি যে আপনার স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া! আপনি থাকায় আমি খুব ভরসা পাচ্ছি–আমার স্বামী খুব দ্রুত গাড়ি চালায়। আপনি একটু লক্ষ রাখবেন।‘

‘অবশ্যই লক্ষ রাখব।‘

‘তার চেয়েও বড় সমস্যা, রাতের বেলা হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় সে প্রায়ই স্টিয়ারিং হুইল ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

‘সে কি!’

‘জি–অনেকবার বড় ধরনের অ্যাকসিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গেছি।‘

‘আরো কিছু বলার আছে?’

‘এখন বলব না। এখন বললে আপনি ভয় পাবেন। আল্লাহ আল্লাহ করে ট্রিপ শেষ করে ফিরে আসি, তারপর আপনাকে বলব।‘

সাউথ ডাকোটায় অনেক দেখার জিনিস আছে। টুরিস্টরা প্রথমে দেখে পাথরের গায়ে খোদাই করা চার প্রেসিডেন্টের মাথা। দল নিয়ে দেখতে গেলাম। আবদাল ভুরু কুঁচকে বলল, এর মধ্যে দেখার কি আছে বুঝলাম না। হাতুড়ি বাটাল দিয়ে পাহাড়গুলি নষ্ট করেছে। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয়?

রোওজি বলল, আমার কাছে তো খুব সুন্দর লাগছে।

আবদাল বলল, তোমার কাছে তো সুন্দর লাগবেই। তুমি হলে বুদ্ধিহীনা নারী। বুদ্ধিহীনা নারী যা দেখে তাতেই মুগ্ধ হয়।

আমি রোওজিকে অপমানের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য বললাম, আমি বুদ্ধিহীনা নারী নই কিন্তু আমার কাছেও ভাল লাগছে।

‘ভাল লাগলে ভাল। তোমরা থাক এখানে, আমি দেখি কোন পাবটাব পাওয়া যায় কিনা। কয়েকটা বিয়ার না খেলে চলছে না।‘

আবদাল বিয়ারের খোঁজে চলে গেল।

আমরা অনেক ছবি-টবি তুলোম। খাঁটি টুরিস্টের মত ঘুরলাম। তারপর আবদালের খোঁজে গিয়ে দেখি সে পাঁড় মাতাল। টেবিল থেকে মাথা তুলতে পারছে না এমন অবস্থা। আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলল, খবর সব ভাল?

আমি বললাম, ভাল! তোমার এ কী অবস্থা!

‘কোন চিন্তা করবে না। মাতাল অবস্থায় আমি সবচেয়ে ভাল গাড়ি চালাই। চল, রওনা হওয়া যাক।

এখনি রওনা হওয়া যাবে না। আরো অনেক কিছু দেখার আছে। তাছাড়া তোমারও মনে হয় বিশ্রাম দরকার।

‘আমার কোনই বিশ্রাম দরকার নেই এবং এখানে দেখারও কিছু নেই।‘

‘স্ফটিক গুহার খুব নাম শুনেছি। না দেখে গেলে আফসোস থাকবে।‘

আবদাল বলল, গুহা দেখার কোন দরকার নেই। গুহা জন্তু-জানোয়ারদের জন্যে। মানুষের জন্যে না।

তাকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে স্ফটিক গুহা দেখাতে নিয়ে গেলাম। সারা পৃথিবীতে সরটির মত স্ফটিক গুহা আছে। সেই সত্ত্বরটির মধ্যে ষাটটিই পড়েছে সাউথ ডাকোটায়।

পাঁচ ডলারের টিকিট কেটে আমরা স্ফটিক গুহায় ঢুকলাম। সে এক ভয়াবহ সৌন্দর্য! লক্ষ লক্ষ স্ফটিক ঝলমল করছে। প্রকৃতি যেন পাথরের ফুল ফুটিয়েছে। বিস্ময়ে হতবাক হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

রোওজি মুগ্ধকণ্ঠে বলল, আহ, কি সুন্দর!

আবদাল বলল, ন্যাকামি করবে না। তোমার ন্যাকামি অসহ্য! পাথর আগে দেখনি? পাথর দেখে ‘আহ কি সুন্দর’ বলে নেচে ওঠার কি আছে? ন্যাকামি না করলে ভাল লাগে না?

রোওজির মনটা খারাপ হল। আমারো মন খারাপ হল। এদের সঙ্গে না এলেই ভাল হত। কিছুক্ষণ পরপর একটি মেয়ে অকারণে অপমানিত হচ্ছে, এই দৃশ্য সহ্য করাও মুশকিল।

মেয়েটি মনে হচ্ছে স্বামীর ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। খানিকক্ষণ মন খারাপ করে থাকে। তারপর আবার আনন্দে ঝলমল করে ওঠে। গুহা থেকে বেরুবার পর গুহার কেয়ারটেকার বলল, কেমন দেখলে?

আমি বললাম, অপূর্ব!

আবদাল বলল, বোগাস! পাথর দেখিয়ে ডলার রোজগার। শাস্তি হওয়া উচিত।

কেয়ারটেকার বলল, স্ফটিক গুহা তোমাকে মুগ্ধ করতে পারেনি। এখান থেকে দশ কিলোমিটার দূরে আছে পেট্রিফায়েড ফরেস্ট। পুরো অরণ্য পাথর হয়ে গেছে। ঐটি দেখ।

আবদাল বলল, আমি আর দেখাদেখির মধ্যে নেই।

তাকে ছেড়ে গেলে সে আবার কোন একটা পাব-এ ঢুকে পড়বে। আমাদের আর বাড়ি ফেরা হবে না। কাজেই জোর করেই তাকে ধরে নিয়ে গেলাম। দেখলাম পেট্রিফায়েড ফরেস্ট। অবিশ্বাস্য ব্যাপার! গাছপালা, পোকামাকড় সবই পাথর হয়ে গেছে। এমন অস্বাভাবিক ব্যাপার যে প্রকৃতিতে ঘটতে পারে তাই আমার মাথায় ছিল না। আমি আবদালকে বললাম, কেমন দেখলে?

সে বলল, দূর, দূর।

পেট্রিফায়েড ফরেস্টে ছোট একটা দোকানের মত আছে। সেখানে স্যুভেনির বিক্রি হচ্ছে। পাথর হওয়া পোকা, পাথর হওয়া গাছের পাতা। কোনটার দাম কুড়ি ডলার, কোনটির পঁচিশ।

রোওজি ক্ষীণস্বরে তার স্বামীকে বলল, সে একটা পোকা কিনতে চায়। তার খুব শখ।

আবদাল চোখ লাল করে বলল, খবর্দার, এই কথা দ্বিতীয়বার বলবে না! পোকা কিনবে কুড়ি ডলার দিয়ে? ডলার খরচ করে কিনতে হবে পোকা?

‘পাথরের পোকা।‘

‘পাথরেরই হোক আর কাঠেরই হোক। পোকা হল পোকা। ভুলেও কেনার নাম মুখে আনবে না।‘

‘অদ্ভুত এই ব্যাপার কি তোমার কাছে মোটেও ভাল লাগছে না?’

‘ভাল লাগার কি আছে? আমার বমি করে ফেলার ইচ্ছা হচ্ছে। তোমরা ঘুরে বেড়াও। আমি সুভ্যেনির দোকানে গিয়ে বসি। ওদের কাছে বিয়ার পাওয়া যায় কিনা কে জানে।‘

আমরা ঘণ্টাখানিক ঘুরলাম। রোওজি বলল, চলুন ফেরা যাক। ও আবার দেরি হলে রেগে যাবে।

আবদাল রেগে টং হয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলল, কুৎসিত একটা জায়গা। বিয়ার পাওয়া যায় না। চল তো আমার সঙ্গে, একটা পাব খুঁজে বের করি। ওরা এখানে থাকুক। আমি বললাম, না খেলে হয় না? আবদাল অবাক হয়ে বলল, বিয়ার না খেলে বাঁচব কিভাবে?

আমি আবদালকে নিয়ে পাবের সন্ধানে বের হলাম। যাবার আগে সে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কয়েকটা হুংকার দিল, খবর্দার, কিছু কিনবে না। পোকা-মাকড় বাসায় নিয়ে গেলে খুনোখুনি হয়ে যাবে। চুলের মুঠি ধরে গেটআউট করে দেব।

.

পাবে দু’জন মুখোমুখি বসলাম।

আবদাল বলল, আমি তোমাকে আলাদা নিয়ে এসেছি একটা গোপন কথা বলার জন্যে।

‘গোপন কথাটা কি?’

‘রোওজির জন্যে কিছু পাথরের পোকা-মাকড় কিনেছি। আমি সেসব তাকে দিতে পারি না। তুমি দেবে। তুমি বলবে যে, তুমি কিনে উপহার দিচ্ছ।‘

আমি তাকিয়ে আছি। ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।

আবদাল বলল, আমি আমার স্ত্রীকে পাগলের মত ভালবাসি। কিন্তু ব্যাপারটা তাকে জানতে দিতে চাই না। জানলেই লাই পেয়ে যাবে। এই কারণেই তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি।

‘ও আচ্ছা।‘

‘মেয়েটা যে কত ভাল তা তুমি দূর থেকে বুঝতে পারবে না।‘

‘তুমি লোকটাও মন্দ না।‘

‘আমি অতি মন্দ। ইবলিশ শয়তানের কাছাকাছি। সেটা কোন ব্যাপার না। দুনিয়াতে ভাল-মন্দ দু’ধরনের মানুষই থাকে। থাকে না?’

‘হ্যাঁ, থাকে।‘

‘এখন তুমি কি আমার স্ত্রীকে এইসব পোকা-মাকড়গুলি উপহার হিসেবে দেবে?’

‘তুমি চাইলে অবশ্যই দেব। কিন্তু আমার ধারণা, তোমার স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলবে–এইসব উপহার আসলে তোমারই কেনা।‘

‘না, বুঝতে পারবে না। আমি আমার ভালবাসা সব সময় আড়াল করে রেখেছি। ওর ধারণা হয়ে গেছে, ওকে আমি দু’চক্ষে দেখতে পারি না।‘

‘এতে লাভটা কি হচ্ছে আমি কিন্তু বুঝতে পারছি না।‘

‘লাভটা বলি–কোন একদিন রোওজি হঠাৎ করে সবকিছু বুঝতে পারবে–বুঝতে পারবে আমার সবই ছিল ভান। তখন কি গভীর আনন্দই না পাবে! আমি সেই দিনটির জন্যে অপেক্ষা করছি।‘

আবদাল বিয়ারের অর্ডার দিয়েছে। দু’ জগ ভর্তি বিয়ার। নিমিষের মধ্যে একটা জগ শেষ করে সে বলল, জিনিসটা মন্দ না।

আমরা আবার পের্টিফায়েড ফরেস্টে ফিরে গেলাম। রোওজি ক্ষীণস্বরে তার স্বামীকে বলল, সে ছোট একটা গোবরে পোকা কিনতে চায়। কি সুন্দর জিনিস! আবদাল চোখ লাল করে বলল, আবার! আবার ন্যাকামি ধরনের কথা? আমরা প্রস্তরীভূত অরণ্য দেখে ফিরে যাচ্ছি। আবদাল ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে। মাতাল অবস্থায় সে আসলেই ভাল গাড়ি চালায়। পেছনের সীটে বিষণ্ণ মুখে রোওজি বসে আছে। কারণ গাড়িতে উঠার সময় সে আবদালের কাছ থেকে একটা কঠিন ধমক খেয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *