ক্রীতদাসপ্রথার শুরু থেকে ঘটনা ঘটছে। ক্রীতদাসরা যখন তুলো ক্ষেতে চাষের কাজ করত, দাসমালিকরা সেখানে প্রায়ই সশরীরে উপস্থিত হয়ে কিছু ক্রীতদাসীকে যৌনকর্মের জন্য তুলে নিয়ে যেত। ত্বক যাদের একটু কম কালো, সাধারণত তাদেরই পছন্দ করা হতো। মালিকরা যা চাইত, ক্রীতদাসীদের তাই করতে হতো। বাজারে নিয়ে মালিক তাদের চড়া দামে বিক্রি করে দিত, নয়ত যৌন ব্যবসার জন্য ভাড়া খাটাত, নয়ত সরাসরি পতিতালয়ে দরদাম করে নগদ টাকায় বিক্রি করত। আঠারো/উনিশ শতকে যে প্রথাটাকে বলা হতো ক্রীতদাসপ্রথা, বিংশ/একবিংশ শতকে সেই প্রথাকে বলা হচ্ছে পতিতাপ্রথা।
উনিশ শতকে ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তির সময় মানুষের ক্রয়—বিক্রয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বিরাট বিতর্ক। ক্রীতদাসদের মুক্তির প্রশ্ন উঠলে সমাজের অনেক সাদা ভদ্রলোক মন্তব্য করেছিল, ‘আফ্রিকার কালো মানুষগুলো আসলে ক্রীতদাস হিসেবেই ভালো আছে। স্বাধীনতা উপভোগ করার কোনো অধিকার বা যোগ্যতা তাদের নেই। সত্যি কথা বলতে কী, এই ক্রীতদাসগুলোর সঙ্গে যত না মানুষের মিল, তার চেয়ে বেশি জন্তু—জানোয়ারের মিল।’
শুধু সাদারা নয়, অনেক ক্রীতদাসীও তখন ছিল, যারা এই প্রথার বিলুপ্তি চায়নি, বিশেষ করে সেই ক্রীতদাসীরা, যারা মালিকদের বাড়িতে রান্নাবান্না বা বাচ্চা—কাচ্চা দেখাশোনা বা ঘরদোর পরিষ্কারের কাজ করত। তাদের অবস্থা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটা চাষের ক্ষেতের ক্রীতদাসীদের চেয়ে ভালো ছিল মালিকদের বাড়ির খাবার খেয়ে, যদিও উচ্ছিষ্ট, তৃপ্তই ছিল বাড়ির ক্রীতদাসীরা। আসলে, ক্রীতদাসীর জীবন ছাড়া অন্য কোনো জীবনের কথা তারা নিজেদের জন্য ঠিক কল্পনাও করতে পারত না। বাড়ির ক্রীতদাসীরা না চাইলেও ক্ষেতের ক্রীতদাসীরা কিন্তু ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তি চেয়েছিল।
আমরা আজ সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি করছি! পতিতাপ্রথার পক্ষে সাধারণত যারা মুখর, তারা নিজেরা কখনো পতিতা ছিল না বা যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল না, পতিতালয়ের বা পতিতা প্রথার নির্যাতন তাদের সইতে হয়নি। যৌন ব্যবসায় জড়িত এমন অনেক মেয়েও পতিতাপ্রথার পক্ষে কথা বলছে, তারা বলছে, ‘অন্য যে কোনো শ্রমের মতো পতিতাবৃত্তিও শ্রম।’ আগ বাড়িয়ে এও কেউ কেউ বলছে যে এই শ্রম নাকি সমাজে মেয়েদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করছে। ‘কলগার্ল’ হিসেবে যারা কাজ করে, ‘ম্যাডাম’—এর ভূমিকায় যারা, তাদের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে রাস্তার পতিতাদের চেয়ে ভিন্ন। তাই পতিতাদেরও উঁচু শ্রেণী, মাঝারি শ্রেণী, আর নিচু শ্রেণীতে ভাগ করার একটা প্রবণতা দেখা দেয়। এ কিন্তু অনেকটা সেই ক্রীতদাসীর শ্রেণীভাগের মতো। বাড়ির ক্রীতদাসীরা উঁচু শ্রেণীর ক্রীতদাসী, আর ক্ষেতে খাটা ক্রীতদাসী নিচু শ্রেণীর ক্রীতদাসী। তা ঠিক, তবে সবচেয়ে নিষ্ঠুর সত্য হলো তারা সবাই ক্রীতদাসী, এক মালিকের অধীনেই তাদের দাসত্ব করতে হয়েছে। দাসত্ব চকচক করলেই দাসত্বের সংজ্ঞা পাল্টে যায় না। যে মেয়েরা আজ পতিতাপ্রথার ভেতরে থেকে এই প্রথার পক্ষে বলছে, এই প্রথা থেকে তারা না বেরিয়ে এলে তাদের পক্ষেও বোঝা সম্ভব নয় প্রথাটি ঠিক কী। সুবিধে পাওয়া ওই ‘বাড়ির ক্রীতদাসী’দেরও ক্রীতদাসপ্রথার বাইরে এসে বুঝতে হয়েছে ক্রীতদাসপ্রথাটা সত্যি কী ছিল।
ক্রীতদাসপ্রথা আর পতিতাপ্রথার মূলে আছে খাঁটি দাসত্ব। শুধু পরিচয়টা দু’ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে হয়। পতিতাপ্রথার জন্য দরকার যৌন পরিচয়, আর ক্রীতদাসপ্রথার জন্য দরকার বর্ণপরিচয়। এই দুই প্রথা ও প্রতিষ্ঠান একই প্রকৃতির। একই প্রক্রিয়ায় মানুষের ওপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার চালানো হয়, মানুষকে অসম্মানিত, অপমানিত, নির্যাতিত, নিগৃহীত করা হয়।
এই পৃথিবীতে মেয়েদের বিরুদ্ধে একটা যৌনযুদ্ধ চলছে, দীর্ঘকাল এই যুদ্ধটা চলছে। এটাকে ‘পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা’ বলে লোককে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা হয় বটে, আসলে এটা কিন্তু মেয়েদের বিরুদ্ধে ‘পৃথিবীর প্রাচীনতম নির্যাতন।’ শুধু মেয়েদের বিরুদ্ধে বলাটা ঠিক নয়, শিশুদের বিরুদ্ধেও বটে। আজ বিশ্বের প্রায় সর্বত্র শিশুদের জোরজবরদস্তি করে, ভয় দেখিযে, ধর্ষণ করে, মেরে আধমরা করে যৌনক্রীতদাসী বানানো হচ্ছে। পুরুষের যৌনক্ষুধা মেটাতে, পুরুষের শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য পুলক দিতে লক্ষ কোটি অসহায় মেয়ে ও শিশুকে বেঁচে থাকার সর্বসুখ বিসর্জন দিতে হচ্ছে, মানুষ হয়েও মানুষের ন্যূনতম অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হতে বাধ্য হচ্ছে।
পতিতাপ্রথার সহজ সংজ্ঞা হলো, ‘মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষের যৌন নির্যাতন।’ আরও একটু খুলে বললে পতিতাপ্রথার মানে ‘মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষের যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন।
মেয়েদের মানবাধিকার লঙ্ঘন, মেয়েদের ওপর পুরুষের অবাধ আধিপত্য।’ এসব যদিও যে কোনো গণতন্ত্রে আইনত নিষিদ্ধ কিন্তু বহাল তবিয়তে চলছে। পুরুষের পক্ষে যতটা ঘৃণ্যতম, কুৎসিততম, জঘন্যতম, উৎকটতম, কদর্যতম, নিকৃষ্টতম ব্যবহার কোনো মেয়ের সঙ্গে করা সম্ভব, তা নির্দ্বিধায় তারা করে পতিতাদের সঙ্গে । যদিও এই ব্যবহার করলে আইনের চোখে তারা অপরাধী হতে বাধ্য, কিন্তু পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করলে এসব অপরাধ আপনাতেই বৈধ বলে মেনে নেয়া হয়।
ভারতে মোট দেড় কোটি পতিতা, পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। অভাবের তাড়নায় বাবারা বিক্রি করে দিয়েছে মেয়েকে। প্রতারক প্রেমিকরা বিক্রি করেছে, স্বামীরা জোর করে পতিতালয়ে পাঠিয়েছে যেন শরীর বেচে টাকা রোজগার করে স্বামীর মদের আর সংসারের খরচ চালায়। পতিতাবৃত্তির সঙ্গে নারী পাচার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এ দুটো একে অপরের পরিপূরক। যারা দাবি করে পতিতালয়ের সব মেয়েই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, স্বেচ্ছায় এই পেশায় নাম লিখিয়েছে, তারা মিথ্যে বলে। পতিতালয়ের মেয়েদের বেশিরভাগই শিশু, বেশির ভাগকেই জোর করে বা ভুলিয়ে—ভালিয়ে বা অপহরণ করে এনে বিক্রি করা হয়েছে। পতিতার জীবন সাধারণত মেয়েরা বারো—তেরো বছর বয়সে শুরু করে, ওই বয়সে কোনো স্বাধীনতা থাকে না নানা রকম বয়স্ক পুরুষের ধর্ষণ থেকে নিজেকে বাঁচানো। পতিতাবৃত্তি কোনো অর্থেই পেশা নয়। এটি শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এই পতিতাবৃত্তিতে মেয়েদের দারিদ্র্য ঘোচে না। কোটি কোটি টাকা যা আয় হচ্ছে যৌন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে, সেসব টাকা নির্যাতিত মেয়েদের হাতে পৌঁছে না। মেয়েদের প্রতিদিন নারী পাচারকারী, আর দালালের ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়। মেয়েরা এই যৌন নির্যাতন থেকে বেরোতে চায়, কিন্তু তাদের বেরুতে দেয়া হয় না। পছন্দমতো কোনো পেশা বেছে নেয়ার কোনো অধিকার তাদের নেই।
নারী নির্যাতনকে কোনো না কোনো যুক্তিতে যারা মেনে নেয়, তারা দিব্যি দাবি করে মেয়েরা স্বেচ্ছায় পতিতা হতে চায়। কিন্তু মেয়েরা স্বেচ্ছায় পতিতা হয় না। কোনো মেয়েই শখ করে, পছন্দ করে, ইচ্ছে করে, সংগ্রাম করে পতিতা হয় না। অন্য কোনো বৃত্তিতে যাওয়ার সংগ্রামে ব্যর্থ হয়েই পতিতা হয়। মেয়েরা স্বেচ্ছায় অসম্মানিত, অপমানিত আর অত্যাচারিত হতে চায় না। মেয়েরা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে না যৌন নির্যাতন! পতিতা বানাতে মেয়েদের বাধ্য করে পুরুষেরা। যদি চায় তারা পতিতা হতে, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো কারণে বাধ্য হয়ে চায়। বাধ্য হয়ে চাওয়া আর স্বেচ্ছায় চাওয়ার মধ্যে এক সমুদ্র ব্যবধান। কোনো মেয়ে শখ করে আগুনে ঝাঁপ দেয় না। সতীদাহের আগুনে মেয়েদের ছুড়ে দিয়ে বলা হতো মেয়েরা স্বেচ্ছায় ওই আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। যে বউরা স্বামীর মার খায়, সেই বউদেরও বলা হয় মার খেতে তাদের ভালো লাগে। যারা চায় বউরা স্বামীর মার খাক, তারাই এই রটনা রটায়। ক্রীতদাসরা যেমন চাইত ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তি, পতিতারাও পতিতাপ্রথার বিলুপ্তি চায়। যে ব্যবসায়ীরা মেয়েদের যৌনবস্তু বানিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে, তারা মেয়েদের মুখ দিয়ে বলাতে চায় যে তারা এই প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী। মেয়েদের মানবাধিকারের ব্যাপারটি গণনার মধ্যে যেন আনা হয়, তাই এই আয়োজন। আর তা ছাড়া, ক্রীতদাস হতে চাই বলে কেউ যদি চিৎকার করে, তাকে কি ক্রীতদাস হওয়ার সুযোগ করে দেবো! কেউ যদি বলে শেকলে বেঁধে তাকে প্রকাশ্যে পেটানো হোক। পেটাব? নিশ্চয়ই তাকে মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার ব্যবস্থা করব, আর যেসব কারণে অন্যায় আবদার সে করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে, সেই কারণগুলো দূর করব!
মানুষের ওপর ঘৃণ্য আর অমানবিক নির্যাতনের কারণে ক্রীতদাসপ্রথা আজ বিশ্বে নিষিদ্ধ। কিন্তু কী কারণে পতিতাপ্রথাকে আজো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না! গর্দভরা গালভরে উচ্চারণ করছে যে যুক্তিহীন কারণগুলো, সেগুলো কিন্তু সত্যিকার কারণ নয় যে ‘এই প্রথাটি টিকে ছিল, সুতরাং টিকে থাকবেই, অথবা বাজে চরিত্রের মেয়েরা এই পেশা চালিয়ে যাবেই।’ এই প্রথাটি মেয়েদের মন্দ চরিত্রের জন্য নয়, ক্ষমতাবান এবং বদ পুরুষরা এই প্রথাকে ছলেÑবলে কৌশলে টিকিয়ে রাখছে বলে টিকে আছে। টিকিয়ে না রাখলে এটি টিকে থাকত না। ক্রেতা আছে বলেই ব্যবসা টিকে আছে। আরো একটি ভুল সংশোধনের প্রয়োজন আছে। শরীর বিক্রি করা কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা নয়, শিকার করা, চাষ করা, হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতি বানানো ইত্যাদি ছিল মানুষের প্রাচীন পেশা। এক গোত্র আরেক গোত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিনিময়ের মাধ্যমে বাণিজ্য করত।
আজ পতিতাপ্রথা বা যৌন নির্যাতন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম তো বটেই, সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠা সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই কারখানার কাঁচামাল দুর্ভাগা, অনাথ শিশুদের শরীর দরিদ্র আর প্রতারিত মেয়েদের শরীর।
সভ্য দেশগুলো এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনই প্রথম নারী নির্যাতন ব্যবসাটিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। পতিতাপ্রথাকে সরকারিভাবে ‘নারীর ওপর পুরুষের জঘন্য যৌন নির্যাতন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সুইডেন। পতিতা ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। শরীর কেনা নিষিদ্ধ। যে পুরুষই শরীর কিনতে যায়, সেই অপরাধী হিসেবে গণ্য হয়। শরীর কেনার লোক না থাকলে, শরীরের বাজার—হাট আপনাতেই উঠে যায়। পুরুষের আনন্দ—ফুর্তির জন্য পুরুষরাই টিকিয়ে রেখেছে এই যৌন নির্যাতন ব্যবসা।
সুইডেনে শরীর বিক্রি কিন্তু নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ নয় বলে দুর্ভাগা দরিদ্র মেয়েরা যারা শরীর বিক্রি করার জন্য রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকে, বা এদিক—ওদিক খদ্দের খুঁজে বেড়ায়, তারা পুলিশি হেনস্থার শিকার হয় না। অপদস্থ করা তো দূরের কথা, তাদের স্পর্শ করাও অপরাধ। কিন্তু যেই না কোনো পুরুষ কোনো মেয়েকে কিনতে নেবে, অমনি ক্রেতা পুরুষের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়া হবে। নিরানব্বই সালে এই আইনটি জারি করার পর সুইডেনে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পতিতাবৃত্তি। এভাবেই রোধ করা যায় এই নারী নির্যাতন ব্যবসা। অনেকের ধারণা, প্রশ্ন করা হয়, পতিতারা শরীর বিক্রি ছাড়া অন্য কী কাজ করতে পারবে? প্রথমেই মনে রাখতে হবে পতিতাবৃত্তি কোনো পেশা নয়, পতিতাবৃত্তি নির্ভেজাল যৌন ক্রীতদাসীত্ব, যৌন নির্যাতন, যৌন হেনস্থা।
ভারতের আইনে পতিতালয়ের ভেতরে মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতন চললে অসুবিধা নেই। পতিতালয়ের সীমানা ডিঙোলে ভদ্র পরিবেশকে কলুষিত করার দায়ে পতিতাদের লাঞ্ছিত করা হয়। যারা মূল অপরাধী, যারা নির্যাতনকারী, তাদের শাস্তি না দিয়ে, মেয়েদের, নির্যাতিতদের দেয়া হয় শাস্তি। ভারতেও যদি আজ সুইডেনের আইনের মতো শরীর ক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়, তাহলে নারী নির্যাতনের ব্যবসা এত ফুলেফেঁপে উঠবে না। কলকাতা এবং ঢাকা শহরে নারী নির্যাতনের এই ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য কিছু সংগঠন এমনই বেপরোয়াভাবে অপরাধ করে চলেছে যে পতিতালয় ভরে ফেলেছে শিশু পতিতায়, মেয়ে পাচারকারীদের অবস্থা করেছে রমরমা, পতিতাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার এবং তাদের অবস্থার উন্নতি করার নামে কোটি কোটি ডলার—পাউন্ড বিদেশের সেবা সংস্থা থেকে কামিয়ে নিচ্ছে, শ্রমের মর্যাদা দিয়ে নারী নির্যাতনকে বৈধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, মানবাধিকার সংস্থা থেকে পতিতালয়ের অবস্থা কেউ সরেজমিনে তদন্ত করতে এলে তাকে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে, পতিতাপ্রথার নির্যাতিত মেয়েদের পুনর্বাসন এবং পছন্দসই কোনো পেশা বেছে নিতে বাধা দিচ্ছে অথচ সংগঠনের নেতাদের মিষ্টি মিষ্টি কথায় দেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ স্কুল শিক্ষকও এমন মজেছেন যে নারী নির্যাতন ব্যবসাকে ‘টিকে ছিল, টিকে থাকবে’ তত্ত্বে গ্রহণ তো করেইছেন, এই ব্যবসার বিস্তারের জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। পতিতাবৃত্তিকে সম্মানজনক পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন, এবং পতিতাদের পতিতা নামে ডেকে অসম্মান করার চেয়ে ‘যৌনশ্রমিক’ নামে ডেকে সম্মান জানানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
পতিতাপ্রথাকে বৈধ করা মানে নারী নির্যাতনকে বৈধ করা। যে রাষ্ট্রে পতিতাপ্রথা বৈধ, সেই রাষ্ট্র কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। গণতন্ত্র মানবাধিকার নিশ্চিত করে, নারী—পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করে। কোনো সভ্যতা বা কোনো গণতন্ত্র মানুষের ওপর নির্যাতনকে ছলছুতোয় মেনে নেয়ার চেষ্টা করে না। করতে পারে না। যদি করে, সেই গণতন্ত্রের নাম নিতান্তই পুরুষতন্ত্র, আর সেই সভ্যতার নাম বর্বরতা ছাড়া অন্যকিছু নয়।