পৃথিবীর ঈশ্বরেরা [দ্য আর্থ গডস]

পৃথিবীর ঈশ্বরেরা [দ্য আর্থ গডস] 

যখন হাজার বছরের স্মরণোৎসবের রাত্রি নেমে এল, 
এবং রাত্রিকালীন জোয়ার অর্থাৎ নীরবতা গিলে ফেলল
পাহাড়গুলিকে, তখন পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া তিন ঈশ্বর—জীবনের
শ্রেষ্ঠ তিন দানব, অবতীর্ণ হল সেই পাহাড়ের ওপর। 

নদীগুলো হল তাদের পায়ের ছোট্ট বাহন, কুয়াশা আড়াআড়িভাবে 
ভেসে থাকল তাদের বক্ষঃস্থলে এবং পৃথিবীর ওপর তাদের মস্তিষ্ক বেড়ে উঠল
রাজকীয় ক্ষমতার ভেতরে। 

তারপর তারা কথা বলল এবং দূরবর্তী বজ্রের মতো তাদের কণ্ঠস্বর গড়িয়ে গড়িয়ে চলল সমতলভূমির ওপর দিয়ে। 

প্রথম ঈশ্বর 

বহমান বাতাস চলেছে পূর্বদিকে, 
আমি আমার মুখ ঘুরিয়ে নেব দক্ষিণে, 
কারণ বাতাসের সঙ্গে ভেসে আসা মৃত জিনিসের গন্ধ আমার
নাসারন্ধ্রকে পীড়িত করে। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

এটা হচ্ছে পোড়া মাংসের ঘ্রাণ, মিষ্টি এবং যথেষ্ট, 
আমি এই গন্ধের ভেতরেই শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করব। 

প্রথম ঈশ্বর 

এটা হচ্ছে নৈতিকতার গন্ধ যা তার নিজস্ব দুর্বল শিখার ওপরেই
পুড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। 

অত্যন্ত ভারী অবস্থায় এটা বাতাসের ওপরে ঝুলে থাকে এবং নরকের পুঁতিগন্ধময় শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো আমার ইন্দ্রিয়কে কষ্ট দেয়, আমি আমার মুখ ঘুরিয়ে নেব গন্ধহীন উত্তরের দিকে। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

এটা হচ্ছে অণ্ডজ প্রাণীর জীবনের আবেগোদ্দীপ্ত সৌরভ, যার ভেতরে আমি শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করব এখন এবং চিরকাল। 
ঈশ্বরেরা বেঁচে থাকেন ত্যাগের ওপর, তাদের তৃষ্ণা নিবারিত হয় রক্ত দিয়ে, তাদের হৃদয় শান্ত হয় কমবয়সী আত্মারা উৎসর্গীত হলে, তাদের মাংসপেশিগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে সেইসব মানুষের অমর দীর্ঘশ্বাসে, যারা মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করে, প্রজন্মের ছাই-ভস্মের ওপর তৈরি হয় ঈশ্বরের সিংহাসন। 

প্রথম ঈশ্বর 

সেখানকার সবকিছু সম্পর্কেই আমার আত্মা ক্লান্ত, আমি আমার হাতকে চালিত করব না একটি পৃথিবী তৈরি করতে অথবা একটি পৃথিবীকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। 

আমি বাঁচব না কিন্তু আমি মরতে পারব, কারণ হাজার বছরের স্মরণোৎসবের ভার আমার ওপর এবং সমুদ্রের অন্তহীন আর্তনাদ আমার ঘুমানোর শক্তিকে নিঃশেষ করে ফেলে। 

কিন্তু আমি পারব আমার প্রধান উদ্দেশ্য থেকে সরে যেতে এবং অদৃশ্য হয়ে যেতে ক্ষয়িত সূর্যের মতো, আমি পারব আমার পরিকল্পনার ঈশ্বরকে হরণ করতে এবং মহাশূন্যের ভেতরে আমার অমরত্বকে প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করো এবং অতিরিক্ত কিছুতে পরিণত হয়ো না, কিন্তু আমি নিঃশেষিত হতে পারব এবং কোথাও না-থাকার যে শূন্যতা তার ভেতরে সময়ের স্মৃতিকথায় রূপান্তরিত হব। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

আমার ভায়েরা শোনো, আমার প্রাচীনকালের ভায়েরা, ওইখানে উপত্যকার ভেতরে একটি যৌবন রাত্রির কাছে গাইছে তার হৃদয়ের গান, তার বীণা হচ্ছে সোনা ও আবলুস কাঠ দিয়ে তৈরি, তার কণ্ঠস্বর থেকে ঝরে পড়ে রূপা এবং সোনা 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

সুতরাং আমি ব্যর্থ হব না যেমন আমি অতিরিক্ত কিছু হব না। কিন্তু আমি কঠিনতম পথ বেছে নিতে পারব না ঋতুগুলিকে অনুসরণ করতে এবং সমর্থন দিতে সারা বছর ধরে রাজকীয় ক্ষমতাকে, 
আমি পারব না, বীজ বুনতে এবং পর্যবেক্ষণ করতে এর তৃষ্ণা মাটির সাহায্যে, 
আমি কঠিনতম পথ বেছে নিতে পারব না পুষ্পগুচ্ছকে আহ্বান জানাতে এর গোপন জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং একে সামর্থ্য দান করতে নিজের জীবনকে জড়িয়ে ধরার জন্য এবং তারপর তাকে তুলে আনতে যখন ঝড় বনভূমির ভেতরে হেসে ওঠে, 
গোপন অন্ধকার থেকে মানুষকে তুলে আনতে পারব না যদিও তার শিকড়গুলি মাটির সঙ্গে সেঁটে থাকে, 
আমি কঠিনতম পথ বেছে নিতে পারব না জীবনের জন্য তাকে তৃষ্ণা দান করতে এবং মৃত্যুকে তৈরি করতে তার পাত্র বহনকারী, পারব না তাকে ভালোবাসা দিয়ে সমৃদ্ধ করতে যা যন্ত্রণায় পরিপূর্ণ, বাসনায় মহৎ, আকুল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বেড়ে ওঠে এবং প্রথম আলিঙ্গনে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, 
আমি কঠিনতম পথ বেছে নিতে পারব না তার রাত্রিগুলিকে প্রকাশ্য দিনের স্বপ্ন দিয়ে পরিবেষ্টিত করতে এবং পরিপূর্ণ করতে তার দিনগুলি স্বর্গসুখে ভরা রাত্রির দূরদৃষ্টি দিয়ে, যদিও তার দিন ও রাত্রিগুলি সীমাবদ্ধ তাদের অপরিবর্তনীয় সাদৃশ্যের কাছে, পারব না তাকে নয়নাভিরাম করে তুলতে পাহাড়ের ঈগল এবং তার চিন্তা মতো যেমন প্রচণ্ড ঝড় সমুদ্রকে বর্ণাঢ্য করে তোলে, যদিও তার দিকে ধীরে ধীরে হাত বাড়ানোই হল সিদ্ধান্ত এবং ভারী পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়াই হল বিচক্ষণতা, আমি কঠিনতম পথ বেছে নিতে পারব না তাকে আনন্দ দান করতে যা সে আমাদের সম্মুখে গাইতে পারে এবং পারব না দুঃখ দিতে যার জন্য সে আমাদেরকে আহ্বান জানাতে পারে এবং তারপর শুইয়ে দিতে পারে তাকে সাধারণ উচ্চতার চেয়েও নিচে, যখন পৃথিবী তার ক্ষুধার ভেতরে খাবারের জন্য নিঃশব্দে কাঁদে, পারব না তার আত্মাকে গ্রহ-নক্ষত্রেরও ওপরে তুলে নিতে এবং রক্ষা করতে পঙ্কিলতায় ডোবানো শরীরবীথিকাকে, যা সে তার গতকাল নাও ভুলে যেতে পারে। 
এইভাবে আমরা মানুষকে শাসন করব সময়ের শেষ পর্যন্ত, শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে যা শুরু হয়েছিল তার মায়ের আর্তনাদের সঙ্গে এবং এর সমাপ্তি ঘটে তার শিশুদের শোক প্রকাশের ভেতর দিয়ে। 

প্রথম ঈশ্বর 

আমার হৃদয় তৃষ্ণার্ত যদিও আমি দুর্বল প্রতিযোগিতার পরিশ্রান্ত রক্ত পান করব না, কারণ পাত্রটি ত্রুটিযুক্ত এবং তাতে সংরক্ষিত পুরোনো মদ আমার মুখে তিতো মনে হয়। 

তাই তোমার মতো আমি দলিত মথিত করেছি কাদা এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া যেতে পারে এরকম আদলে অলংকৃত করেছি তাকে যেন আমার ঝলসানো আঙুল থেকে নির্গত চর্বি নিঃশব্দে ছুটে চলে জলাভূমি ও পাহাড়ের দিকে। 

তোমার মতোই আমি জীবন শুরুর অন্ধকার গভীরতায় আগুন জ্বালিয়েছি এবং লক্ষ করেছি তা হামাগুড়ি দিয়ে চলে গুহা থেকে শৈলশিখরের উচ্চতায়। 

তোমার মতোই আমি বসন্তকে আহ্বান জানিয়েছি এবং তার থেকে আলাদা করে স্থাপন করেছি সৌন্দর্য, কারণ একটি প্রলোভন যা যৌবনকে দখল করে এবং বন্ধন তৈরি করে উৎপাদন ও বংশবৃদ্ধি করতে। 

আমি তোমার মতোই নেতৃত্ব দিয়েছি মানুষকে তীর্থস্থান থেকে তীর্থস্থানে ঘুরে বেড়াতে এবং অদৃশ্য জিনিস সম্পর্কে তার শব্দহীন ভয়ের গতিকে পরিবর্তন করেছি আমাদের ভেতরের দুর্বল বিশ্বাসের প্রতি, যা পরিদর্শন করা হয়নি এবং যা অচেনা।

তোমার মতোই আমি তার মাথার ওপর থেকে প্রচণ্ড বন্য ঝড়কে নিষ্কৃতি দিয়েছি যেন সে আমাদের সম্মুখে মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাতে পারে এবং নাড়া দিতে পারে তার নিচের পৃথিবীকে যতক্ষণ পর্যন্ত সে না কাঁদে এবং তোমার মতোই সমুদ্রকে নেতৃত্ব দিয়েছি তার পাখির নীড়সমৃদ্ধ ক্ষুদ্র দ্বীপের বিরুদ্ধে যতক্ষণ সে আমাদের ডেকে ডেকে মারা না যায়। 

আমি এই সবকিছু এবং তারও বেশিকিছু সম্পন্ন করেছি এবং যাকিছু আমি করেছি তার সবই শূন্য এবং ব্যর্থ 

ব্যর্থতা হচ্ছে জাগরণ এবং শূন্যতা হচ্ছে ঘুম এবং তিনগুণ শূন্যতা এবং ব্যর্থতা হচ্ছে স্বপ্ন। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভাইয়েরা, আমার শ্রদ্ধেয় ভাইয়েরা, 
চিরহরিৎ তরু বীথিকার তলে 
একটি বালিকা চন্দ্রালোকে নেচে চলেছে, 
নক্ষত্রের মতো অজস্র শিশিরকণা 
পড়ে আছে তার চুলে, 
তার পায়ের চারদিক ঘিরে আছে অজস্র পাখা। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

আমরা মানুষ রোপণ করেছি এবং কর্ষণ করেছি ভূমি প্রথম ভোরবেলার রক্তবর্ণ কুয়াশার ভেতরে, আমরা লক্ষ করেছি নিষ্ফলা শাখাগুলি ফলবন্ত হয়ে উঠেছে এবং ঋতুহীন সারা বছর ধরে আমরা পরিচর্যা করেছি নবজাত পত্রগুচ্ছকে। 

ক্রুদ্ধ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে আমরা রক্ষা করেছি মুকুলগুলি এবং ফুলগুলিকে পাহারা দিয়েছি সমস্ত অন্ধকার আত্মার অশুভ প্রভাব থেকে এবং আমাদের সেই ব্যর্থতা এখন প্রাকৃতিক রীতিতে উৎপাদন করেছে আঙুর, কিন্তু তোমরা এই আঙুর কোনো পেষণকারী যন্ত্রের কাছে নিয়ে যাবে না এবং পূর্ণ করে দেবে না পাত্রটি তোমাদের চেয়ে কার হাত অধিকতর পরাক্রমশীল যে ফল আহরণ করবে? এবং তোমাদের তৃষ্ণার চেয়ে অধিকতর মহৎ কোন্ সেই শেষপ্রান্ত যা মদের প্রতীক্ষায় রয়েছে? 

মানুষ হচ্ছে ঈশ্বরের জন্য খাদ্য, 

এবং যখন ঈশ্বরের পবিত্র ওষ্ঠ তার শ্বাসপ্রশ্বাস চুষে খায় তখনই মানুষের মহিমার শুরু, 

এই সবকিছুই হচ্ছে মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যদি তার ভেতরে মানবিক গুণাবলি না থাকে, 

শৈশবের পাপহীনতা এবং যৌবনের পরমানন্দের মধুরতা, কঠিন যৌবনের আবেগ এবং বৃদ্ধবয়সের প্রাজ্ঞতা, রাজার গৌরব এবং যোদ্ধার বিজয়োল্লাস, কবিদের খ্যাতি এবং স্বপ্নদ্রষ্টা ও সিদ্ধমানুষের মর্যাদা, এই সবকিছু এবং ঐগুলির ভেতরে রয়েছে ঈশ্বরের জন্য খাদ্য। 

এবং কোনোকিছুই না, এই খাবারই অরুচিকর হয়ে উঠবে যদি ঈশ্বর তাদের মুখে তা না তুলে দেন। 

এবং নীরব শস্যকণার মতো প্রেম পরিণত হয় সংগীতে যখন নাইটিংগেল তা গিলে ফেলে, সুতরাং ঈশ্বরের খাবার হিসেবে মানুষ ঈশ্বরের মস্তিষ্কের স্বাদ গ্রহণ করবেই। 

প্রথম ঈশ্বর 

হ্যাঁ মানুষ হচ্ছে ঈশ্বরের জন্য খাবারের মাংস! 

এবং তার সবটুকুই মানুষ, যা ঈশ্বরের চিরন্তন অহঙ্কারকে হঠাৎ আক্রমণ করবে!

সন্তানধারণের যন্ত্রণা এবং সন্তান প্রসবের মর্মবেদনা, নবজাতকের বিরতিহীন কান্না যা রাত্রির নগ্নতাকে ভেদ করে যায় এবং মাতার তীব্র মনোকষ্ট যা তার প্রচণ্ড কাঙ্ক্ষিত ঘুমের সঙ্গে মল্লযুদ্ধে রত, তার স্তন থেকে নিঃশেষিত হয়ে ঝরে পড়ে জীবন, নিদারুণ যন্ত্রণাবিদ্ধ যৌবনের জ্বলন্ত শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নিঃশেষিত হয়নি এরকম গুরুভার আবেগের ফোঁপানি, 

কঠিন যৌবনের ঝলসানো ভ্রূকুটি যখন কর্ষণ করে নিষ্ফলা ভূমি এবং মলিন বৃদ্ধ বয়সের অনুতাপ তখন জীবনকে জীবনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কবরের দিকে আহ্বান জানায়। 

লক্ষ করো, এই হল মানুষ। 

এমন একটি প্রাণী যে ক্ষুধার ওপর উৎপাদন করে এবং ক্ষুধার্ত ঈশ্বরের জন্য তৈরি করে খাদ্য। 

একটি দ্রাক্ষালতা যা মৃত্যুহীন মৃত্যুর পায়ের তলার ধুলোতে হামাগুড়ি দিয়ে চলে। রাত্রির অশুভ ছায়ার ভেতরে প্রস্ফুটিত হয় ফুল, শোকার্ত দিনগুলির আঙুর এবং আতঙ্ক ও লজ্জার দিনগুলি। 

এবং তোমরা আমাকে খাবে এবং পান করবে, যদিও তোমরা আমাকে আমন্ত্রণ জানাবে কাফনে ঢাকা মুখগুলির সঙ্গে বসতে এবং অনুভূতিহীন ওষ্ঠগুলি থেকে আমার জীবনকে সরিয়ে আনতে এবং বিবর্ণ হাতগুলি থেকে গ্রহণ করতে আমার পরকাল। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভাইয়েরা, আমার আতঙ্কিত ভাইয়েরা, 
তিনগুণ গভীরতা থেকে যৌবন গাইছে গান 
এবং তিনগুণেরও বেশি উচ্চতায় তার গান পৌঁছে যায়।
তার কণ্ঠস্বর নাড়া দেয় বনভূমি এবং ভেদ করে যায় আকাশমণ্ডলী
এবং ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয় সুখনিদ্রা এই পৃথিবীর 

দ্বিতীয় ঈশ্বর (সবসময়ই অশ্ৰুত থাকে) 

তোমাদের কর্ণকুহরে মৌমাছির কর্কশ গুঞ্জন 
এবং তোমাদের ওষ্ঠে অশ্লীলতাই হচ্ছে মধু।
অবশ্যই আমি তোমাদেরকে স্বস্তি দেব 
কিন্তু কীভাবে আমি তা দেব? 
শুধুমাত্র অতল গহ্বরই শুনতে পায় যখন ঈশ্বরেরা ঈশ্বরদের ডাকেন, কারণ পরিমাপহীনতাই হচ্ছে বিভাজন-রেখা যা ঈশ্বরত্ব এবং বাতাসহীন মহাশূন্যের মাঝখানে শুয়ে থাকে। 
যদিও আমি তোমাদের স্বস্তি দেব, 
আমি তোমাদের মেঘাচ্ছন্ন বায়ুমণ্ডলকে মেঘমুক্ত করে তুলব, যদিও ক্ষমতা ও রায় প্রকাশের প্রক্রিয়ায় আমরা সমতুল্য তবুও আমি তোমাদেরকে উপদেশ দেব।
যখন বিশৃঙ্খলার ভেতর থেকে পৃথিবী বেরিয়ে এল এবং আমরা, প্রারম্ভের পুত্ররা দ্যাখো, তৃষ্ণাহীন আলোর ভেতরে প্রত্যেকেই আমরা নীরবতাকে প্রথম শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলাম যার কম্পিত ধ্বনি ত্বরান্বিত করল নদী ও সমুদ্রের স্রোতপ্রবাহকে। তারপর আমরা ধূসর পৃথিবীর ওপর হাতে হাত ধরে হাঁটলাম এবং আমাদের প্রথম তন্দ্রাচ্ছন্ন পদক্ষেপের প্রতিধ্বনি থেকে জন্ম হল চতুর্থ স্বর্গীয় প্রাণী যে তার পা রাখল আমাদের পদচিহ্নের ওপর, ছায়া ফেলল আমাদের চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষায় এবং আমাদের চোখের মাধ্যমেই তারা দেখতে শুরু করল। 

পৃথিবীতে জীবন এল এবং জীবনে আত্মা এল যা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পাখাযুক্ত মধুর সংগীত এবং আমরা জীবন ও আত্মা শাসন করলাম, বছরগুলির পরিমাণ অথবা অস্পষ্ট স্বপ্নের বছরগুলির ওজন জানার প্রক্রিয়া থেকে কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারল না এবং এখন পর্যন্ত সপ্তম স্মরণোৎসবের মধ্যদিনে সূর্যের বিয়েতে আমরা সমুদ্রকে উপহার হিসেবে দান করলাম। 

এবং তাদের বিয়ের পরমানন্দের অন্তর্গত প্রকোষ্ঠ থেকে আমরা মানুষকে বের করে আনলাম, যে একটি প্রাণী, যদিও সে উৎপন্ন হয় এবং দুর্বল এবং বহন করে চিরকাল বংশপরিচয়ের চিহ্ন। 

মানুষের ভেতর দিয়ে কে নক্ষত্রের দিকে চোখ রেখে পৃথিবীতে হেঁটে বেড়ায়, মানুষ এবং পৃথিবীর দূরবর্তী অঞ্চলের পায়েচলা পথ আমরা খুঁজে পাই, অস্বচ্ছ জলের পাশে বেড়ে উঠছে বিনীত নলখাগড়া, আমরা তৈরি করি একটা বাঁশি যার ফাঁপা হৃদয়ের 

ভেতর দিয়ে আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর ঢেলে দিই নীরবতার বন্ধনে বাঁধা পৃথিবীর প্ৰতি। 

সূর্যহীন উত্তর থেকে দক্ষিণের সূর্যস্নাত বালির দিকে, যেখানে দিনগুলি জন্মগ্রহণ করে 

সেই পদ্মফুলে ঢাকা জলাভূমি থেকে বিপজ্জনক ক্ষুদ্র দীপগুলির দিকে যেখানে দিনগুলিকে হত্যা করা হয়, মানুষ হচ্ছে দুর্বল চিত্তের অধিকারী, তারা আমাদের প্রয়োজন মেটাতে দুঃসাহসী হয়ে ওঠে এবং বাদ্যযন্ত্র ও তরবারি নিয়েও তারা ঝুঁকি নেয়। 

আমাদের পক্ষ হয়ে মানুষ প্রকাশ্যে ঘোষণা করে আমাদেরই ইচ্ছাগুলি, প্রচার করে আমাদের সার্বভৌম ক্ষমতাকে, তার ভালোবাসা মাড়িয়ে যায় নদীর গতিপথ এবং সমুদ্রে প্রবহমান আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলি। 

উচ্চতারও ওপরে মানুষের ঘুমের ভেতরে আমরা আমাদের স্বপ্ন দেখি। 

আমরা তাদের দিনগুলিকে উদ্দীপ্ত করি গোধূলিবেলার উপত্যকা থেকে আলাদা হতে এবং অনুসন্ধান করি সেই দিনগুলির পরিপূর্ণতা পাহাড়ের ওপর 

আমাদের হাত প্রচণ্ড ঝড়কে পরিচালিত করে পৃথিবীকে ঝেঁটিয়ে পরিষ্কার করতে এবং মানুষকে আহ্বান জানাতে অকার্যকর শান্তি থেকে উর্বর শত্রুতার দিকে যেতে ও বিজয়োল্লাসের দিকে যেতে। আমাদের চোখের রয়েছে অন্তর্দৃষ্টি যা মানুষের আত্মাকে শিখায় পরিণত করে এবং তাকে নেতৃত্ব দেয় মর্যাদাসম্পন্ন একাকিত্ব এবং অসংযত ভবিষ্যৎবাণী এবং মৃত্যুর দিকে যেতে। 

মানুষ জন্মায় দাসত্ব করতে এবং এই দাসত্বের ভেতরেই রয়েছে তার সম্মান ও পুরস্কার। 

মানুষের ভেতরে আমরা অন্বেষণ করি একজন মুখপাত্র এবং তার জীবনের ভেতরে আমাদের সত্তার পরিপূর্ণতা। 

কার আত্মা আমাদের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি করবে যদি মানুষের আত্মা ধূলায় বধির হয়ে যায়? 

কে লক্ষ করবে আমাদের উজ্জ্বলতা যদি রাত্রি মানুষের চোখকে অন্ধ করে দেয়? এবং মানুষ নিয়ে তোমরা কী করবে, যারা আমাদেরই প্রারম্ভকালীন হৃদয়ের সন্তান এবং আমাদের নিজস্ব আত্মার প্রতিকৃতি? 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভাইয়েরা, আমার পরাক্রমশালী ভাইয়েরা
নর্তকীর পদযুগল গানে গানে মাতাল হয়েছে
তারা বাতাসকে প্রকম্পিত করে তুলছে
এবং ঘুঘু পাখির মতো নর্তকীদের হাত
উপরের দিকে উড়ে যায়। 

প্রথম ঈশ্বর 

ভরতপাখি ভরতপাখিকেই ডাকে, 
কিন্তু ঈগল পাখা না নাড়িয়ে আকাশের অনেক উঁচুতে ভেসে থাকে, 
গান শোনার মতো কোনো অন্ধকার নেই। 
তোমরা আমাকে শিক্ষা দেবে আত্মপ্রেম কীভাবে পূর্ণতা লাভ করে মানুষের উপাসনার ভেতরে এবং তৃপ্ত হয় মানুষের দাসত্ববন্ধনে, কিন্তু আমার আত্মপ্রেম হচ্ছে সীমাহীন ও পরিমাপহীন। আমি বেড়ে উঠব আমার জাগতিক বন্ধনে আবদ্ধ নশ্বরতার ওপরে এবং আমাকে রাজকীয় কর্তৃত্ব দাও স্বর্গের। 
আমার বাহুদুটি বেষ্টন করবে মহাশূন্যকে এবং আবৃত করবে এই ভূ-গোলককে।
আমি নক্ষত্রখচিত পথ বেছে নেব একটি ধনুকের ছিলার জন্য এবং তীরগুচ্ছের জন্য ধূমকেতু এবং আমি অনন্তকালকে সঙ্গে নিয়েই জয় করব অনন্তকাল। 

কিন্তু তোমরা এটা করবে না যদিও তা তোমাদের ক্ষমতার ভেতর ছিল। কারণ, মানুষ মানুষের দিকে যায়, 
যেমন ঈশ্বরেরা ঈশ্বরের দিকে। 
না, তোমরা আমার পরিশ্রান্ত হৃদয়ে বয়ে আনবে ঘটনাচক্রের স্মৃতিচিহ্ন যা ধোঁয়াশার ভেতরে হারিয়ে গেল, যখন আমার আত্মা নিজেকেই অন্বেষণ করল পাহাড়গুচ্ছের ভেতরে এবং ঘুমিয়ে থাকা জলের ভেতরে আমার চোখদুটি তাদের নিজস্ব প্রতিকৃতিকেই তাড়া করল, যদিও শিশুর জন্মকালীন সময়ে মারা গেল আমার গতকাল এবং শুধুমাত্র নীরবতা পরিদর্শন করে তার গর্ভাশয় এবং বাতাসের উড়িয়ে দেওয়া বালি সেঁটে থাকে তার স্তনে। 

হে গতকাল, প্রাণহীন গতকাল, 
আমার শৃঙ্খলিত ঈশ্বরত্বের মাতা, 
কোন্ মহা-ঈশ্বর তোমাকে উড্ডয়নের ভেতরে হস্তগত করে 
এবং তোমাকে উৎপাদন করে খাঁচার ভেতরে? 
কোন্ দৈত্যাকৃতির সূর্য তোমার বক্ষে উষ্ণতা দান করে 
আমাকে জন্ম দেওয়ার জন্য? 
আমি তোমাকে আশীর্বাদ দিই না, যদিও আমি তোমাকে 
অভিশাপ দেব না, 
কারণ, তুমি যেমন আমাকে জীবনের গুরুভার দান করেছ 
তেমনি মানুষকেও আমি ভারাক্রান্ত করে তুলেছি। 
কিন্তু আমি ততটা নিষ্ঠুর নই। 
আমি, অবিনশ্বর, মানুষকে তৈরি করেছি একটা ছায়া 
যা ক্রমশ বিলীন হয়ে যায়, 
এবং তুমি, মারা যাচ্ছ, আমাকে মৃত্যুহীন মনে করে। 
গতকাল, প্রাণহীন গতকাল, 
তুমি কি ফিরে আসবে দূরবর্তী আগামীকালের সঙ্গে
যা আমি তোমাকে এনে দিতে পারি বিচারদিনের জন্য?
এবং তুমি কি জীবনের দ্বিতীয় ভোরবেলার সঙ্গে জেগে উঠবে,
যা তোমার পৃথিবীর সঙ্গে সেঁটে থাকার স্মৃতি এবং যা আমি মুছে
ফেলতে পারি পৃথিবী থেকে 
প্রাচীনকালের সমস্ত মৃতদের সঙ্গে কি তুমি জেগে উঠতে পারবে
ভূমি কর্ষণ করে নিজস্ব তিক্ত ফলে পৃথিবী ভরে দিতে এবং
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে সবগুলি সমুদ্র হবে স্থির এবং দুর্দশার
ওপরে দুর্দশা নিঃশেষ করবে পৃথিবীর ব্যর্থ উর্বরতা। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভাইয়েরা, আমার ঐশ্বরিক ভাইয়েরা
বালিকাটি গান শুনেছে এবং এখন 
সে অন্বেষণ করে গায়ককে।
বিস্ময়ের আনন্দের ভেতরে একটা
হরিণশিশুর মতো সে লাফিয়ে পার হয়
পাহাড়, নদী এবং নিজেকে
মনোনিবেশ করায় উভয় দিকেই। 
আহ্ মরণশীল একাগ্রতার ভেতরে কী আনন্দ,
অর্ধজন্ম নিয়েছে উদ্দেশ্যের চোখদুটি, 
আর ঠোঁটের ওপরের হাসি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আনন্দের
পূর্বাস্বাদ গ্রহণ করতে করতে কেঁপে ওঠে! 
কোন্ ফুল ঝরে পড়েছে স্বর্গ থেকে, 
নরক থেকে বেড়ে উঠেছে কোন্ শিখা 
নীরবতার হৃদয়ে যা হঠাৎ করে চমকে ওঠে ভয়ে, 
শ্বাসরুদ্ধকর আনন্দ এবং ভীতির দিকে চলে যেতে যেতে? 
কোন্ স্বপ্ন আমরা দেখলাম উচ্চতারও ওপরে 
কোন্ চিন্তা দান করলাম আমরা বাতাসকে 
যা তন্দ্রাচ্ছন্ন উপত্যাকার ঘুম ভাঙাল 
এবং জাগিয়ে রাখল রাত্রিকে? 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

তোমাদের দেওয়া হয়েছে স্বর্গীয় তাঁত এবং কাপড় বয়নের শিল্পকলা, এই তাঁত এবং শিল্পকলা হবে চিরকালের জন্য তোমাদের এবং অন্ধকার যোগসূত্র ও আলো হবে তোমাদের এবং সোনা ও রক্তবর্ণও হবে তোমাদের। 

যদিও একটা পোশাক হিসেবে নিজেদেরকে মেনে নিতে তোমরা অনিচ্ছা প্রকাশ করবে, তোমাদের হাত সূতা কেটেছে মানুষের আত্মার জীবন্ত বাতাস এবং অগ্নি থেকে, যদিও এখন তোমরা যোগসূত্র ছিঁড়ে ফেলবে এবং একটি নিষ্ক্রিয় পরকালকে ধার দেবে তোমাদের অভিজ্ঞ আঙুলগুলি। 

প্রথম ঈশ্বর 

না, আদলহীন পরকালের প্রতি আমি আমার হাতদুটি বাড়িয়ে দেব এবং শস্যক্ষেত মাড়িয়ে যাবার জন্য নিয়োগ করব আমার পদযুগলকে। 
সেখানে কী আনন্দ গানের ভেতরে যা বহুবার শোনা গেল, বাতাসের ওপর কার সুর বন্দি করে স্মরণকালীন কর্ণকুহরকে শ্বাসপ্রশ্বাস উৎপন্ন হওয়ার আগে? 

আমার হৃদয় প্রতীক্ষা করে তার জন্য যা আমাদের হৃদয় ধারণ করে না এবং অপরিচিতের কাছে আমি আমার আত্মাকে জানাতে নির্দেশ দেব না কোথায় স্মৃতিরা বসবাস করে। 
তোমাদের অধিকৃত গৌরব দিয়ে আমাকে প্রলুব্ধ কোরো না এবং অন্বেষণ কোরো না তোমাদের অথবা আমার স্বপ্ন দিয়ে আয়েশ দেবার জন্য, কারণ ঐ সবকিছুই আমি এবং ঐ সবকিছুই হয়ে উঠবে কিন্তু আমার আত্মাকে আমন্ত্রণ জানাবে না। 

হে আমার আত্মা, 
তোমার মুখমণ্ডল নীরব, 
এবং তোমার চোখের ভেতরে ঘুমাচ্ছে রাত্রির ছায়া, 
কিন্তু তোমার নীরবতা ভয়াবহ, 
এবং ভয়াবহ তোমার শিল্পকলা। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভাইয়েরা, আমার ভাবগম্ভীর ভাইয়েরা, 
বালিকা গায়ককে খুঁজে পেয়েছে। 
সে এখন তার আনন্দিত মুখখানা দেখে। 
চিতার মতো সে সূক্ষ্ম পদক্ষেপে দ্রুত চলে যায় দ্রাক্ষালতা ও ফার্ন
গাছের মরমর শব্দের ভেতর দিয়ে এবং এমন আকুল কান্নার
ভেতরে গায়ক স্থিরদৃষ্টিতে বালিকার দিকে চেয়ে থাকে। 

হে আমার ভাইয়েরা, আমার অমনোযোগী ভাইয়েরা
তীব্র অনুভূতির ভেতরে এটা কি অন্যকোনো ঈশ্বর
যে উজ্জ্বলতা ও শুভ্রতার এই জাল বয়ন করেছে?
বিপথগামী হয়েছে কোন্ বল্গাহীন নক্ষত্র? 
কার গোপনীয়তা রাত্রিকে রক্ষা করবে ভোরবেলা থেকে?
এবং কার হাত রয়েছে আমাদের পৃথিবীর ওপর? 

প্রথম ঈশ্বর 

হে আমার আত্মা, আমার আত্মা 
তুমি পুড়িয়ে ফেলছ এই গোলাকার পৃথিবীকে
যা আমাকে বেষ্টন করে রাখে, 
কীভাবে আমি তোমার গতি পরিচালনা করব 
এবং কোন্ মহাশূন্যের দিকে পরিচালনা করব
তোমার আগ্রহ? 

হে আমার সঙ্গীহীন আত্মা, 
ক্ষুধার ভেতরে তোমার শিকার স্বয়ং তুমিই
এবং তোমার অধিকারভুক্ত নিজস্ব অশ্রুবিন্দু
নিবারণ করবে তোমার তৃষ্ণা, 
কারণ রাত্রি তোমার পাত্রে কোনো শিশির জমা করবে না
এবং কোনো ফল নয় দিনগুলি বয়ে আনবে তোমাকেই।
 হে আমার আত্মা, আমার আত্মা 
ভূপৃষ্ঠে পড়ে থাকা তোমার জাহাজ আকাঙ্ক্ষায় বোঝাই, কোথা
থেকে বাতাস আসবে তোমার পাল পূর্ণ করে দিতে এবং কোন্
প্রবল জোয়ার চালু করবে তোমার আটকে থাকা হাল?
তোমার অধিকারভুক্ত নোঙরের ওজন এবং তোমার পাখাগুলো
বিস্তৃত হবে কিন্তু আকাশসমূহ তোমারও ওপরে নীরব এবং স্থির
সমুদ্র উপহাস করবে তোমার স্থবিরতাকে। 

এবং সেখানে তোমার ও আমার কী প্রত্যাশা?
পৃথিবীর কোন্ বদল প্রক্রিয়া, কোন্ নতুন উদ্দেশ্য
রয়েছে স্বর্গে যা তোমাকে দাবি করবে?
কুমারী অনন্তকালের গর্ভ কি বহন
করবে তোমার অর্থাৎ ত্রাণকর্তার বীজ,
তোমার দূরদর্শিতার চেয়ে শক্তিশালী 
একজন যার হাত তোমাকে মুক্ত করবে
তোমার বন্দিদশা থেকে? 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

বন্ধ করো তোমার এই সনির্বন্ধ কান্না এবং তোমার 
জ্বলন্ত হৃদয়ের শ্বাসপ্রশ্বাস, 
কারণ বধিরেরা হচ্ছে অনন্তকালের কর্ণকুহর
এবং মনোযোগহীনতাই হল আকাশসমূহ। 
আমরা হলাম বিশেষ উচ্চতার চেয়েও ওপরের
এবং আমরা হলাম সর্বোচ্চ উচ্চতা এবং বন্ধনহীন 
অনন্তকাল ও আমাদের মাঝখানে আমাদের আকারহীন
আবেগ ও তার প্রেরণা নিরাপদ নয়। 

তুমি অপরিচিতের সাহায্য প্রার্থনা করো এবং তুষারাচ্ছাদিত
অচেনা পর্বতশিখর চলন্ত ধোঁয়াশার সঙ্গে তোমার নিজস্ব আত্মার 
ভেতরে বসবাস করে। 
হ্যাঁ, তোমার নিজস্ব আত্মার ভেতরে তোমার ত্রাণকর্তা ঘুমন্ত 
অবস্থায় শুয়ে আছেন এবং ঘুমের ভেতরে তিনি দেখতে পান যা
তোমাদের বিনিদ্র চোখ দেখতে পায় না। 
এবং সেটাই তোমার সত্তার গোপনীয়তা। 
কেটে আনা ফসল যা জড়ো করা হয়নি তা কি তুমি ফেলে চলে যাবে, নাকি পুনরায় বপন করবে তা স্বপ্নের হলরেখায়? 
এবং কী কারণে তোমার মেঘকে তুমি বিস্তৃত করো পদচিহ্নহীন মাঠে ও বিরানভূমিতে যখন তোমার নিজস্ব পশুর পাল তোমাকেই অন্বেষণ করছে এবং এখন কি আনন্দ জড়ো হবে তোমার ছায়ায়? ক্ষমা করো এবং তাকাও পৃথিবীর দিকে, লক্ষ করো তোমার ভালোবাসার শিশুদের যারা এখনও মায়ের দুধ পান করে। 
এই পৃথিবী হচ্ছে তোমার আবাস এবং এই পৃথিবীই তোমার সিংহাসন এবং মানুষের সবচেয়ে দূরবর্তী প্রত্যাশারও ওপরের উচ্চতায় তোমার হাত তার নিয়তিকে তুলে ধরবে। 
তুমি তাকে পরিত্যাগ করবে না যে আনন্দ ও বেদনার ভেতর দিয়ে তোমার কাছে পৌঁছায়, তার দৃষ্টির প্রয়োজন থেকে তুমি তোমার মুখ ফিরিয়ে নেবে না। 

প্রথম ঈশ্বর 

ভোরবেলা কি রাত্রির হৃদয়কে ধারণ করবে তার হৃদয়ে? 
অথবা সমুদ্র কি লক্ষ করবে তার জলে ভেসে আসা মৃতদেহগুলি? 
ভোরবেলার মতো আমার ভেতরে আমার আত্মা উদিত হয় নগ্ন এবং ভারমুক্ত। 
এবং ক্লান্তিহীন সমুদ্রের মতো আমার হৃদয় দূর করবে মানুষ ও পৃথিবীর পচে যাওয়া শৈবাল। 
আমি তার সঙ্গে সেঁটে থাকব না সে-ই জড়িয়ে রাখে আমাকে। 
কিন্তু তা বেড়ে ওঠে আমার নাগালের বাইরে যেখানে উত্থান হবে আমার। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভাইয়েরা, লক্ষ করো আমার ভাইয়েরা, 
তারা নক্ষত্রের বন্ধনে বাঁধা দুটি আত্মা আকাশে 
মুখোমুখি হয়। 
নীরবতার ভেতরে তারা একজনের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে 
থাকে অন্যের ওপর দিয়ে। 
পুরষটি একবারও গান গায় না, যদিও তার রৌদ্রদগ্ধ কণ্ঠনালি
গানের সঙ্গে সঙ্গে টিপটিপ শব্দ করে, 
এবং নারীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ভেতরে চলতে থাকে সুখের নৃত্য কিন্তু
তা ঘুমন্ত নয়। 

ভাইয়েরা আমার বিস্ময়কর ভাইয়েরা, 
এই রাত্রি মোমের মতোই পরিপূর্ণ গভীর
এবং অধিকতর উজ্জ্বল হল চাঁদ, 
এবং তৃণভূমি ও সমুদ্রের মাঝখানে উত্তেজনাপূর্ণ
আনন্দের ভেতরে একটি কণ্ঠস্বর তোমাকে 
ও আমাকে আহ্বান জানায়। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

জ্বলন্ত সূর্যের সম্মুখে হয়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা, দগ্ধ হওয়া, বেঁচে থাকা এবং জীবন্তের রাত্রিগুলি পাহারা দেওয়া, যেমন কালপুরুষ আমাদেরকে পাহারা দেয়! 

মুকুট পরিহিত ও উঁচু মস্তিষ্ক নিয়ে চারদিকের বাতাসকে মোকাবেলা করা এবং আমাদের জোয়ার-ভাটাহীন শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে মানুষের অসুস্থতাকে সারিয়ে তোলা! তাঁবু প্রস্তুতকারী বিষণ্নমুখে বসে থাকে তার তাঁতে এবং কুমোর উদাসীনভাবে ঘোরাতে থাকে তার চাকা, কিন্তু আমরা, যারা বিনিদ্র এবং প্রাজ্ঞ—ধারণা করা ও সুযোগ গ্রহণ করা থেকে আমরা মুক্ত। 

চিন্তা করার জন্য আমরা থামি না, এমনকি অপেক্ষাও করি না। আমরা সমস্ত ক্লান্তিহীন প্রশ্নেরও ওপরে থাকি। 

সুতরাং পরিতৃপ্ত হও এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দাও। 

নদীর মতোই আমাদের প্রবাহিত হতে দাও সমুদ্রের দিকে ধারালো পাথরের ঘায়ে আহত না হয়ে এবং আমরা তখনই একত্রিত হই যখন আমরা তার হৃদয়ে পৌঁছাই, আমরা কোনো কোলাহলমুখর বিতর্কের মুখোমুখি হব না, প্রয়োগ করব না কোনো বিচারবুদ্ধি আগামীকালের কারণ সম্পর্কে। 

প্রথম ঈশ্বর 

আহ্, অন্তহীন ঈশ্বরত্বের এই হল দীর্ঘস্থায়ী বেদনা, এটা হচ্ছে দিনকে গোধূলিবেলার দিকে এবং রাত্রিকে ভোরবেলার দিকে পরিচালিত করার জন্য রাত্রিজাগরণ; এই জোয়ার-ভাটা হচ্ছে চিরকালীন স্মরণ এবং চিরকালীন বিস্মৃতি; এসব হচ্ছে বপনকৃত ভাগ্য এবং কেটে তোলা ফসল কিন্তু প্রত্যাশাগুলি, 

ধুলো থেকে ধোঁয়াশায় আত্মার এই পরিবর্তনহীন উত্তোলন, 

শুধুমাত্র ধুলোর জন্য এই আকাঙ্ক্ষা এবং আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ধুলোতে পতন এবং এখনও পর্যন্ত বৃহত্তর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পুনরায় ধোঁয়াশার অনুসন্ধান এবং এই সময়হীনতাই হচ্ছে সময়ের পরিমাপ। 

অবশ্যই আমার আত্মার একটি সমুদ্র হওয়া প্রয়োজন যার স্রোত চিরকাল বিস্মিত করে একে অন্যকে। 

অথবা আকাশ, যেখানে যুদ্ধরত বাতাস পরিণত হয় প্রচণ্ড ঝড়ে? 

.

আমি ছিলাম মানুষ, একটি অন্ধ এবং অসম্পূর্ণ অংশ, আমি তার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম ধৈর্যের সঙ্গে। 

অথবা, আমি ছিলাম সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ঈশ্বরের মস্তিষ্ক, যিনি মানুষ এবং ঈশ্বরদের শূন্যতাকে পরিপূর্ণ করে তোলেন, আমি পরিপূর্ণ হয়ে উঠব। 

কিন্তু তুমি এবং আমি কেউই মানুষ নই, নই আমাদের ওপরের সর্বোচ্চ ক্ষমতা। কিন্তু আমরা হলাম গোধূলিবেলা যা দিগন্ত থেকে দিগন্তের ভেতরে চিরকালের জন্য উদিত হয় এবং চিরকালের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। 

কিন্তু, আমরা, ঈশ্বরেরা একটি পৃথিবীকে ধরে আছি এবং তা সম্ভব হয়েছে ভাগ্যের দ্বারা যা তূর্যধ্বনির মতো শব্দ তৈরি করে, যখন শ্বাসপ্রশ্বাস ও গান আসে সীমানার বাইরে থেকে। 

এবং আমি বিদ্রোহ করি। 

আমি নিজেকে নিঃশেষ করে ফেলব শূন্যতার দিকে যেতে যেতে, আমি তোমাদের দৃষ্টি এবং নিঃশব্দ যৌবনের স্মৃতি থেকে নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে নেব এবং আমার অনুজেরা, যারা আমাদের পাশে বসে আছ এই উপত্যকার ভেতরে, যদিও তাদের ঠোঁট নড়ে কিন্তু একটি শব্দও উচ্চারিত হয় না। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

আমি বলি, হে আমার অমনোযোগী ভাইয়েরা 
আমি সত্যিই বলি, 
কিন্তু তোমরা শুধু নিজের কথাই শুনতে পাও। 

আমি তোমাদেরকে আমন্ত্রণ জানাই তোমাদের ও আমার মহিমা দেখতে, কিন্তু 

তোমরা ঘুরে বসো, চোখ বন্ধ করো এবং দোলাও তোমাদের সিংহাসনগুলি। হ্যাঁ, যে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সে-ই শাসন করবে ওপরের ও নিচের পৃথিবী, আত্মদক্ষ ঈশ্বর, যার গতকাল চিরদিন তোমাদের আগামীকালকে ঈর্ষা করে, আত্মক্লান্ত, যে তার বাচনভঙ্গির সাহায্যে তোমাদের মানসিক অবস্থাকে মুক্ত করবে এবং বজ্রের সাহায্যে জোরে আঘাত করবে তোমাদের রাজদণ্ডে! 

কিন্তু তোমাদের দীর্ঘদিনের পারস্পরিক কলহ হচ্ছে প্রাচীন বীণার ঝংকার, যার তারগুলি অর্ধবিস্মৃত হয়েছে মহাঈশ্বরের আঙুলের স্পর্শে, যার বাদ্যযন্ত্র বাজানোর জন্য রয়েছে কালপুরুষ এবং মন্দিরা বাজানোর জন্য রয়েছে প্লেয়াডেস। 

এমনকি যখন তোমরা বিড়বিড় এবং গুড়গুড় আওয়াজ করো তখন তাঁর বাদ্যযন্ত্র বেজে ওঠে, ঝনঝন শব্দ করে তাঁর মন্দিরা এবং আমি মিনতি করছি তোমরা মহাঈশ্বরের গান শ্রবণ করো। 

লক্ষ করো, নারী ও পুরুষ, 
শুভ্র পরমানন্দের ভেতরে একটি শিখার প্রতি একটি শিখা। 
শিকড়েরা রক্তবর্ণ পৃথিবীর স্তন্য চুষে খায় আর শিখার পুষ্পগুচ্ছ ফুটে আছে আকাশের বক্ষঃস্থলে। 

এবং আমরা হলাম রক্তবর্ণ বক্ষদেশ এবং আমরাই হলাম স্থায়ী আকাশ। 

আমাদের আত্মা, এমনকি জীবনের আত্মা, তোমাদের ও আমার আত্মা এই রাতে বসবাস করে একটি কণ্ঠনালির ভেতরে যা প্রজ্বলিত এবং বারবার আঘাত করে এরকম ঢেউগুলি দিয়ে একটি বালিকার দেহে পোশাক পরাও 

তোমাদের রাজদণ্ড এই ভাগ্যকে তাড়িত করতে পারে না, কিন্তু তোমাদের ক্লান্তিই হচ্ছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা। 

এইসব এবং সবকিছু মুছে যায় একজন পুরুষ ও একজন নারীর তীব্র অনুভূতির ভেতরে। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

হ্যাঁ, নারী ও পুরুষের এই ভালোবাসা মূলত কী? 

দ্যাখো, কীভাবে পুবের বাতাস নৃত্য করে নারীর নৃত্যরত পায়ের পাতার সঙ্গে এবং পুরুষের সঙ্গে গান গাইতে গাইতে বেড়ে যায় পশ্চিমের বাতাস। 

দ্যাখো, আমাদের ঐশ্বরিক উদ্দেশ্য এখন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত, একটি আত্মা উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার ভেতরে তা একটি শরীরকে গান শোনায়, যে নেচে চলেছে। 

প্রথম ঈশ্বর 

আমি আমার চোখ নিচের দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর মাত্রাতিরিক্ত গর্বের দিকে ফেরাব না, তাকাব না তার তীব্র যন্ত্রণার ভেতরে থাকা শিশুদের প্রতি যাকে তোমরা ভালোবাসা বলো। 

এবং ভালোবাসা কি কেবলি কাপড়ে জড়ানো একটি ঢাক যা সুমধুর অনিশ্চয়তার দীর্ঘ মিছিলকে নেতৃত্ব দেয় ধীরগতিসম্পন্ন অন্য এক মর্মবেদনার প্রতি? 

আমি নিচের দিকে তাকাব না। 

সেখানে দেখার মতো কী আছে? একজন নারী ও একজন পুরুষকে রক্ষা করো বনভূমির ভেতরে যা বেড়ে উঠল তাদেরকে ফাঁদে ফেলতে এবং যা তারা আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করতে পারে নিজে এবং পূর্বপুরুষেরা আমাদের আগামীকালের জন্য, যার এখনও জন্ম হয়নি। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

হায়, জানাশোনার দুর্ভোগ, প্রার্থনা ও প্রশ্নের নক্ষত্রবিহীন আচ্ছাদন যা আমরা পৃথিবীর ওপর শুইয়ে দিয়েছি এবং মনুষ্য ধৈর্যশীলতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান জানোনো। আমরা শায়িত হব মোমতুল্য আকৃতির একটা পাথরের নিচে এবং বলব, এটা একটা কাদায় তৈরি জিনিস এবং কাদার ভেতরেই তাকে তার প্রান্তসীমা অন্বেষণ করতে দাও। 

আমরা আমাদের হাতে ধরে রাখব একটি শুভ্র শিখা এবং বলব, এটা হচ্ছে আমাদের হৃদয়ে আমাদের প্রত্যাবর্তনের একটি অসম্পূর্ণ অংশ, আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের একটি শ্বাসপ্রশ্বাস যা পালিয়ে গিয়েছিল এবং এখন অধিক সুগন্ধের জন্য ঘুরেফিরে মনে পড়ে হাত এবং ওষ্ঠকে। 

আমার ভাইয়েরা, পৃথিবীর ঈশ্বরেরা, 

উঁচু পাহাড়ের ওপরে আমরা এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর বন্ধনে বাঁধা, মানুষের ভেতর দিয়ে আমরা কামনা করছি মানুষের নিয়তির সোনালি সময়গুলি। 

আমাদের প্রাজ্ঞতা কি তার দুই চোখ থেকে সৌন্দর্যকে হরণ করবে? 

আমাদের পরিমাপ কি তার আবেগকে বশীভূত করবে স্থির না-হওয়া পর্যন্ত অথবা বশীভূত করবে আমাদের নিজস্ব আবেগ? 

.

তোমাদের এত সৈন্যসামন্ত নিয়োগের যুক্তি কী এবং ভালোবাসা তার নিমন্ত্রণকারীকে কোথায় তাঁবুতে বসবাস করায়? 

ভালোবাসা তাদেরকেই জয় করেছে এবং তাদের শরীরের ওপর দিয়েই ভালোবাসার রথ চলে যায় সমুদ্র থেকে পাহাড় পর্যন্ত, আবার পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত, এমনকি এখন সে দাঁড়িয়ে থাকে লজ্জামিশ্রিত অর্ধ-আলিঙ্গনের ভেতরে। 

পাপড়ি থেকে পাপড়িতে তারা প্রশ্বাসের সঙ্গে শুষে নেয় ঐশ্বরিক সৌরভ, 

আত্মা থেকে আত্মায় তারা অন্বেষণ করে জীবনের আত্মা এবং তাদের চোখের পাতায় 

শুয়ে থাকে একটি প্রার্থনা তোমার এবং আমার প্রতি। 

ভালোবাসা হচ্ছে একটি রাত্রি যা কুঞ্জবনের ওপর নুয়ে পড়ে, একটি আকাশ যা পরিণত হয় তৃণভূমিতে এবং সমস্ত নক্ষত্র পরিণত হয় জোনাকিতে। 

এটা সত্য যে, আমরা হলাম ধরাছোঁয়ার বাইরের উচ্চতা এবং আমরা হলাম সর্বোচ্চ উচ্চতা। 

কিন্তু ভালোবাসা হচ্ছে আমাদের প্রশ্নেরও উপরের উচ্চতা 
এবং ভালোবাসা আমাদের গানেরও ওপরে উঠে যায়। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

তোমরা অন্বেষণ করো একটি দূরবর্তী রাজদণ্ড, 

এবং এই নক্ষত্রকে সেই রাজদণ্ড হিসেবে গণ্য করবে না, তোমাদের পেশিশক্তিরা কোথায় রোপিত হয়েছে? 

মহাশূন্যে কোনো কেন্দ্র নেই তবুও রক্ষা করো যেখানে আত্মারা আত্মার সঙ্গে বিবাহিত এবং সৌন্দর্য হচ্ছে সেই বিয়ের সাক্ষী এবং যাজক। 

দ্যাখো এবং লক্ষ্য করো সৌন্দর্য আমাদের পায়ের চারদিকে ছড়ানো ছিটানো এবং সৌন্দর্য আমাদের হাত পূর্ণ করে দিচ্ছে আমাদের ওষ্ঠকে স্নান করিয়ে দিতে। সর্বাধিক দূরত্বই হল সবচেয়ে কাছের। 

এবং যেখানে সৌন্দর্য আছে, সেখানে সবকিছুই আছে। 

হে আমার অভিজাত ভাবুক ভাইয়েরা, 

সময়ের অস্পষ্ট সীমানা থেকে আমাদের কাছে প্রত্যাবর্তন কর। 

কোথাও এবং কখনও তোমার পদযুগ শক্ত বাঁধন থেকে মুক্ত নয় এবং এই নিরাপত্তার ভেতরে আমাদের সঙ্গে বসবাস করো, 

তোমাদের কোন হাত আমাদেরকে জড়িয়ে আছে যা তৈরি করেছে পাথরের ওপরে পাথর। 

পরিত্যাগ করো তোমাদের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ছদ্মবেশ এবং আমাদের বিশ্বস্ত সঙ্গীরা, অল্পবয়সী পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণকারী, তোমরা সবুজ এবং উষ্ণ 

প্রথম ঈশ্বর 

চিরন্তন বেদি! তুমি কি এই রাতের ঈশ্বর যে উৎসর্গীত হবে? 
তাহলে এখন আমি আসি এবং আমি আসছি, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করি আমার তীব্র অনুভূতি এবং যন্ত্রণা। 
দ্যাখো, সেখানে নৃত্যশিল্পী শরীরে মূর্ত করে তোলে আমাদের প্রাচীন আগ্রহ এবং 
গায়ক কেঁদে কেঁদে বাতাসকে শোনাচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংগীত। 
এবং সেই নাচ ও গানের সময় একজন 
ঈশ্বর খুন হয় আমার ভেতরে। 
মনুষ্যপাঁজরের ভেতরে আমার ঈশ্বর-আত্মা,
চিৎকার করে ডাকে আমার ঈশ্বর-আত্মাকে 
বাতাসের ভেতরে, 
মনুষ্যশরীরে গহ্বর, যা আমাকে 
ক্লান্ত করে তোলে ঈশ্বরকে আহ্বান জানাতে,
অথচ সৌন্দর্য, যা আমরা অন্বেষণ করেছি
ঈশ্বরত্বকে আহ্বান জানাতে সেই শুরু থেকে।
আমি মনোযোগ দিয়েছি এবং পরিমাপ করেছি
সেই আহ্বান এবং এখন আমি উৎপন্ন হই। 
সৌন্দর্য হল একটি পথ যা সত্তাকে নেতৃত্ব দেয় আত্মহত্যায়।
আমার ইচ্ছা হয় সেই পথে হেঁটে বেড়াই, 
এই পথ বিস্তৃত হয় অন্য এক চিরকালীন ভোরবেলা পর্যন্ত। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

ভালোবাসো বিজয়োল্লাস, 
একটি লেকের পাশে শুভ্র ও সবুজ ভালোবাসা,
এবং ভালোবাসায় গর্বিত রাজকীয় ক্ষমতা
উঁচু ভবন অথবা ব্যালকোনিতে, 
ভালোবাসা একটি উদ্যানে অথবা মরুভূমিতে
যা কখনও মাড়িয়ে যাওয়া হয়নি,
ভালোবাসা হচ্ছে আমাদের স্রষ্টা এবং প্ৰভু।
এটা নয় মাংসের স্বেচ্ছাচারী ভাঙন 
নয় আকাঙ্ক্ষা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়া
যখন আকাঙ্ক্ষা এবং সত্তা পরস্পর যুদ্ধরত,
এটা নয় মাংস যে আত্মার বিরুদ্ধে 
অস্ত্র তুলে নেয়। 
ভালোবাসা বিদ্রোহ করে না। 
এটা শুধুমাত্র প্রাচীন নিয়তির মাড়িয়ে যাওয়া
পথ পরিত্যাগ করে কুঞ্জবনের জন্য,
অনন্তকালের প্রতি নেচে ও গেয়ে প্রকাশ
করে এর গোপনীয়তা। 
ভগ্ন শৃঙ্খলসহ ভালোবাসা হচ্ছে যৌবন, 
পুরুষ তাকে মুক্ত করে ঘাসসহ মাটির উপরের
স্তর থেকে এবং নারী উষ্ণ হয়ে ওঠে 
শিখার সাহায্যে এবং আমাদের স্বর্গের চেয়ে গভীরতর স্বর্গের
আলোতে তা দীপ্তিময়। 
ভালোবাসা হচ্ছে আত্মার ভেতরে একটি দূরবর্তী হাস্যধ্বনি।
এটা হচ্ছে একটি বন্য আঘাত যা তোমাদেরকে শান্ত করে
তোমাদের জাগরণের দিকে যেতে। 
ভালোবাসা হচ্ছে পৃথিবীর ওপর একটা নতুন ভোরবেলা,
একটা দিন, যদিও তা অর্জিত হয় নি তোমাদের অথবা আমার 
চোখের ভেতরে কিন্তু ইতিমধ্যেই তা অর্জিত হয়েছে ভালোবাসার
বৃহত্তর হৃদয়ের মাঝখানে। 

ভাইয়েরা, হে আমার ভাইয়েরা, 
বিয়ের কনে আসছে ভোরের হৃদয় থেকে 
এবং সূর্যাস্তের হৃদয় থেকে আসছে বর। 
সেখানে এই উপত্যকায় একটি বিবাহ-উৎসব। 
এটি একটি খুবই দীর্ঘদিন এই উৎসব লিপিবদ্ধ করার জন্য। 

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

সুতরাং, প্রথমদিনের সেই ভোরবেলা থেকে 
পাহাড় ও উপত্যকার দায়িত্ব হতে সমতলভূমিকে
মুক্তি দেওয়া হয়েছে, 
এবং এটা কি এইভাবে স্থায়ী হবে শেষ সন্ধ্যা পর্যন্ত। 
উপত্যকার ভেতরে আমাদের শেকড়গুলি সামনে
নিয়ে এসেছে নৃত্যরত শাখাগুলিকে, 
আমরা হলাম সংগীত-সৌরভের ফোটা ফুল যা 
বেড়ে ওঠে উচ্চতা পর্যন্ত। 
নশ্বর এবং অবিনশ্বর হল যমজ নদী 
সমুদ্রকে আহ্বান জানাচ্ছে, 
দুটি আহ্বানের ভেতরে কোনো শূন্যতা নেই
শুধুমাত্র কর্ণকুহরে। 
সময় আমাদের জানাশোনাকে অধিক নিশ্চিত করে 
এবং দান করে অধিক আকাঙ্ক্ষা। 
নশ্বরতার ভেতরে শুধুমাত্র সন্দেহই
শব্দকে থামিয়ে দেয়। 
আমরা সন্দেহেরও উপরে উঠে গেছি।
মানুষ হচ্ছে আমাদের তরুণতর হৃদয়ের শিশু,
ধীরগতির উত্থানের ভেতরে মানুষ হচ্ছে ঈশ্বর
এবং তার আনন্দ ও বেদনার ভেতরে 
শায়িত আমাদের নিদ্রা এবং তাদের স্বপ্ন 

প্রথম ঈশ্বর 

গায়ককে কাঁদতে দাও এবং নর্তকীকে ঘোরাতে দাও তার পদযুগ 
এবং আমাকে পরিতৃপ্ত হতে দাও কিছুক্ষণের জন্য। 
এই রাতে শান্ত হতে দাও আমার আত্মাকে। 
দৈবাৎ আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারি এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে 
পড়ছি একটি উজ্জ্বলতর পৃথিবী এবং প্রাণীকুলকে লক্ষ্য করতে 
যারা আমার হৃদয়কে শান্ত করার জন্য অধিক নক্ষত্রে শোভিত হয়ে আছে। 

তৃতীয় ঈশ্বর 

এখন আমি বেড়ে উঠব এবং নিজেকে নগ্ন করব 
সময়ের শূন্যতার ভেতরে, 
এবং আমি নাচব সেই মাঠে যে মাঠ কেউ পায়ে মাড়ায়নি,
এবং নর্তকীদের পদযুগ আমার পায়ের সঙ্গে গতিশীল হয়ে উঠবে, 
আমি গান গাইব উচ্চতারও ওপরে যে বাতাস তার ভেতরে 
এবং একটি মনুষ্যকণ্ঠস্বর আমার কণ্ঠস্বরের ভেতরে টিপটিপ 
শব্দ করবে। 

আমরা গোধূলিবেলার সঙ্গী হব এবং দৈবাৎ
জেগে উঠব অন্য এক পৃথিবীর ভোরবেলায় 
কিন্তু ভালোবাসা থাকবে এবং তার আঙুলের ছাপ
কখনই মুছে যাবে না। 

আশীর্বাদকৃত গবাদিপশুর খাদ্য পুড়ে যায়, 
স্ফুলিঙ্গ বেড়ে ওঠে এবং প্রতিটি স্ফুলিঙ্গই একটি সূর্য।
এটা আমাদের ও জ্ঞানীর জন্য অধিকতর ভালো
একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন কোনা অন্বেষণ করা, ঘুমিয়ে যাওয়া
আমাদের পৃথিবীর ঈশ্বরত্বের ভেতরে, মানুষ ও নশ্বরতাকে
ভালোবাসা এবং আদেশ দেওয়া আগত দিনকে 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *