পৃথিবীতে চাষ হবে ফের
পৃথিবী অপেক্ষা করে অলৌকিক ঘটনার জন্য।
গাছ, মাছ, মানুষ, পাখি ও প্রকৃতির ভেতর একটা উষ্ণ অনুভূতি।
প্রাণীমাত্রই ম্যাজিক চায়। সবচেয়ে বেশি ম্যাজিকবিলাসী প্রাণীদের
মধ্যে মানুষের কম্পন আমিও নিজের মধ্যে অনুভব করি। একটি
অপার্থিব ঘটনার পুলক আমার হৃৎপিণ্ডকে এমনভাবে ঘটুক ঘটুক
বলে আছড়াতে থাকে যে আমি সকালের আকাশের দিকে
তাকিয়ে হাঁপাতে থাকি। আর ঠিক সেই সময় দোয়েলের
শিসের অজস্র আওয়াজ আজানের আহ্বানের সাথে মিশে গেলে
পূর্ব দিগন্তের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি।
মসজিদ শূন্য করে প্রার্থনাকারীরা যার যার আস্তানায় ফিরে
গেলে আমারও হাঁ-মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
ভাবি কিছুই বুঝি ঘটল না।
না, দিগন্তের সীমানা থেকে সূর্যকে লক্ষ লক্ষ তাগড়া মহিষ
বাঁকা শিংয়ে আমাদের পতাকার মতো আকাশে ঠেলে দিয়ে
ঐ তো আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
লক্ষ মোষের হাম্বা ডাকের মধ্যে অর্থবহ হয়ে উঠেছে যেন
এক ভবিষ্যৎ চাষের চাহিদা। পৃথিবীতে চাষ হবে ফের।
তেজস্ক্রিয় মাটির পরত অসংখ্য লাঙ্গলের ঘায়ে উপড়ে
ফেলে পৃথিবীতে চাষ হবে ফের। কিন্তু নেই প্রকৃত রাখাল।
কলকারখানার শব্দ থেমে গেছে। সভ্যতার উগড়ে দেওয়া
বর্জ্য ও উচ্ছিষ্টের ভাগাড় চাপা দিতে পৃথিবীতে চাষ হবে ফের।
জ্যোতির্ময় রৌদ্রের নীচে লক্ষ লক্ষ মহিষের ঘামে ভেজা
তেজস্ক্রিয় মাটির ভিতরে মিসরের মমির বাক্সে রেখে যাওয়া
বীজ এনে পৃথিবীতে চাষ হবে ফের।
পুঁজি ও সাম্রাজ্যের সমস্ত খিলানগুলো বিধ্বস্ত সভ্যতার
মতো লুপ্ত হয়ে মিশেছে সাগরে। যেমন আটলান্টিসের
গালগল্প সাগরের ঢেউয়ের উপরে মাঝে মধ্যে বুদবুদের
মতো ভাসে। তবে কি সমুদ্রেও চাষ হবে?
আমি কবি কালের রাখাল। তরঙ্গে রেখেছি এক পা,
অন্যটি ধেয়ে আসা মহিষের পিঠে। পৃথিবীতে চাষ হবে ফের।
১১-১২-২০০২