পৃথা – ১৪

১৪

[এ অধ্যায়ের প্রথম দুই পাতা মিসিং]

হয়ে, দাসীদের নির্দেশ দিলেন, শীতল জল এনে সেবনের দ্বারা পরিচর্যায় মহারানীর সেবা কর।

কুন্তী সংজ্ঞা লাভের পরেও দুই পুত্রকে যুদ্ধোদ্যত দেখে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু অর্জুন রাজপুত্র। সে সূতপুত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারে না। এ কথা শোনা মাত্রই, দুর্যোধন কৰ্ণকে অঙ্গরাজ্য, দান করে, তাঁকে রাজা বলে ঘোষণা করলেন। কর্ণের লজ্জা দূর হলো। আর কুন্তী মনে মনে গভীর আনন্দ পেলেন। কিন্ত অন্যান্য রাজপুরুষরা অল্পবয়স্ক দুর্যোধনের এই অধিকারবোধ দেখে অবাক হয়েছিলেন। পিতা বা ভীষ্ম বা বিদুর, কারোর সঙ্গে সেই আলোচনা না করে কর্ণকে অঙ্গরাজ্যের রাজা করলেন। আসলে এটি দুর্যোধনের দূরদর্শিতারই লক্ষণ। কর্ণের মতো বীরকে সে চিরকালের মতো বন্ধুত্ব-সূত্রে আবদ্ধ করে রাখলেন।

ইতিহাসের রথ চললো নানা বাঁকে বাঁকে। পাণ্ডবরা অস্ত্র নৈপুণ্যে যতোই পারদর্শী হয়ে উঠলো, দুর্যোধন ততোই অস্থির হতে লাগলো। অন্যদিকে ধৃতরাষ্ট্র কণিককে ডেকে তাঁর কাছ থেকে রাজনীতি ও কূটনীতির উপদেশ চাইলেন। কণিক উপদেশ দিলেন, পাণ্ডবদের বিনষ্টি ছাড়া, কুরু বংশ কখনও নিরাপদ হতে পারবে না। ধৃতরাষ্ট্রের উচিত এখনই পাণ্ডবদের নির্মূল করার পন্থা স্থির করা। বস্তুতপক্ষে এই কণিকই, ধৃতরাষ্ট্রকে কূট পরামর্শ দিয়েছিলেন, একমাত্র জতুগৃহ তৈরি করে, তার মধ্যে কুন্তীসহ পাণ্ডবদের বাস করার ব্যবস্থার দ্বারা, অগ্নি সংযোগে তাদের হত্যা করতে হবে। কণিক একজন নৃশংস কূটমন্ত্রী, বিছর তা জানতেন! তিনি দূরে, অলক্ষ্যে থেকে, কণিকের সমস্ত মন্ত্রণাই শুনলেন।

ধৃতরাষ্ট্র নানা ছলে, পাণ্ডবদের কুন্তীসহ বারণাবতে পাঠিয়ে দিলেন। বারণাবত এই সময়ে একটি সমৃদ্ধ নগরী ছিল। কিন্তু পাণ্ডবদের জন্য যে-জতুগৃহ নির্মাণ করা হয়েছিল, সে-কথা বিছরই যুধিষ্ঠিরকে সংকেত বাক্যে—অর্থাৎ ম্লেচ্ছ ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। জতুগৃহ থেকে কীভাবে কুন্তী ও পাণ্ডবরা প্রাণ রক্ষা করে পালিয়ে বেঁচেছিলেন, সে-কাহিনীর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। কেবল, ইতিবৃত্তিয় একটি বিষয় আমি দেখছি, যা আমাকে নানা নাম ও বিশেষণের কারণ বুঝতে সাহায্য করেছে। সে বিষয়টি হলো এই, যারা বৈদিক ধর্ম-কর্মাদির মহত্ত্ব, ব্রাহ্মণ জাতির শ্রেষ্ঠত্ব সর্বান্তঃকরণে নির্বিচারে স্বীকার করতো না, তারা সকলেই আর্য অনার্য নির্বিশেষে দৈত্য, দানব, অসুর, রাক্ষস, ভূত, প্রেত, পিশাচ, গোলাঙ্গুল, ভল্লক বানর, গরু, পক্ষী, নাগ, অহি, সর্প, ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত হতো। আসলে এরা মানুষই ছিল। এবং তাদের অনেকেরই যথেষ্ট রূপ ও গুণ ছিল।

চার্বাক দরিদ্র ঋষি ব্রাহ্মণ হয়েওনাস্তিক ছিলেন, এবং ব্রাহ্মণদের কাজ বিশেষকে তীব্র সমালোচনা করতেন, ভণ্ড ও চতুর বলতেন। এই গুরুতর অপরাধের জন্য, বৈদিক ধর্মাবলম্বীগণ তাঁকে ‘রাক্ষস’ আখ্যা দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন।

রাক্ষস হিড়ম্বও সেই রকমই একজন মানুষ। তবে তার চরিত্রের মধ্যে একটা পশুত্ব ছিল। হিড়িম্বা ভীমকে দেখে মুগ্ধ হয়ে, তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। ভীম যায় নি। সে হিড়িম্বাকে বধ করেছিল। আর হিড়িম্বাকে দেখে, কুন্তী মুগ্ধ বিস্ময়ে বলেছিলেন, *সুন্দরি, তুমি কে? হে বরবর্ণিনি! তুমি কার ভার্যা?… তুমি যদি এ বনের দেবতা বা অপ্সরা হও, তবে কেন এখানে অবস্থান করছো আমাকে বল।’

হিড়িম্বা নিজের পরিচয় দিয়েছিল, এবং সে যে ভীমের প্রতি আসক্ত তাও ব্যক্ত করেছিল। কুন্তী নিজে ভীমকে হিড়িম্বার পাণিগ্রহণের নির্দেশ দেন। কুন্তী নিজে জানতেন, একজন রমণী অপাপবিদ্ধা কেন ভীমের মতো বীরপুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।

একচক্রা নগরীতে কুন্তী পাঁচ পুত্রসহ এক ব্রাহ্মণের গৃহে বাস করতে গেলেন। নরমাংসভোজী বক রাক্ষসের কাহিনীর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন দেখি না। বক নরমাংসভোজী রাক্ষস হতে পারে। কিন্তু সে রোজ দুটো মহিষ, তণ্ডুলাদিসহ একটি মানুষকে খেয়ে ফেলতো, এটা অতিশয়োক্তি ও অবিশ্বাস্য। একচক্রা নগরীর কাছেই বেত্ৰকীয়গৃহ নামে স্থানের রাজার একচক্রা শাসন করার কথা। কিন্তু রাজাটি নির্বোধ, দুর্বল, প্রজারক্ষায় অক্ষম। এই সুযোগেই, বক প্রজাদের কাছ থেকে, প্রতিদিনই যা আদায় করতো, সবই তার সম্পত্তি ও ক্রীতদাস হতো। মহিষগুলোর মধ্যে হয়তো সে কখনও কখনও একটি বধ করে, সপরিবারে খেতো। তণ্ডুলাদি তো খাদ্যই ছিল। আর মানুষ হয়তো সে কালেভদ্রে ভোজন করতো। নরমাংসভোজী থাকাটা সেকালে কিছুই আশ্চর্যের ছিল না।

পাণ্ডবরা যে-ব্রাহ্মণের বাড়িতে বাস করতো, হঠাৎ একদিন তাদের পালা পড়লো,বক রাক্ষসের প্রাপ্য মেটাতে হবে। কুন্তী ও পাণ্ডবরাও সেখানে ব্রাহ্মণ বলেই পরিচিত ছিল। তবু কুন্তী ব্রাহ্মণকে কথা দিয়েছিলেন, তাঁকে বা তাঁর পুত্রকে বকের কাছে যেতে হবে না। তিনিই যা ব্যবস্থা করার করবেন।

কুন্তী বকের কাছে ভীমকে যাবার নির্দেশ দিলেন। যুধিষ্ঠিরের মনে হলো, মা এ কাজটি ঠিক করলেন না। নিজের পুত্রের জীবন বিসর্জন দিয়ে, অপরকে বাঁচানোর জন্যই কি তারা লুকিয়ে বেড়াচ্ছে? মা এ কথা বুঝলেন না?

কুন্তী বললেন, “আমি জানি, ভীমই বককে হত্যা করতে পারবে। আমাদের উচিত, আশ্রয়দাতার জীবন রক্ষা করা। আমি পাঁচ পুত্রের একজনকে পাঠাচ্ছি কিন্তু আমার মনে যথেষ্ট সাহস ও ভরসা আছে।”

কুন্তী যে আশ্রয়দাতার উপকারার্থেই শুধু সেই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নয়। বকের মতো একজন রাক্ষস ব্যক্তিকে হত্যা করা, জন- সমাজেরও প্রয়োজন। নিজের প্রিয় পুত্রের জীবন বিপন্ন বোধ করে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন নি।

দ্রৌপদী সম্পর্কে ভিক্ষালব্ধ পাঁচ ভাইয়ের যে-গল্প তৈরি হয়েছে, তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কুন্তী না জেনে, এমন কথা বলেন নি, ভিক্ষা করে যা পেয়েছো, পাঁচভাই তা সমান ভাগে ভাগ করে নাও। কারণ, দ্রুপদ গৃহে গিয়ে দ্রৌপদীকে লাভ করা ও পাঁচ ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ, এ সবই বেদব্যাস আগেই ব্যাখ্যাসহ কুন্তী ও পাণ্ডবদের কাছে বিবৃত করেছেন।

কুন্তী যে পাঁচ পুত্রের এক স্ত্রী গ্রহণ করাকে সমর্থন করেছিলেন, তার মধ্যে তাঁর দূরদৃষ্টিরই পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি পাঁচ পুত্রের মুখ দর্শনেই বুঝেছিলেন, সকলেই দ্রৌপদীর রূপে মুগ্ধ, ও তাঁর পাণিপ্রার্থী। যদি তিনি সেদিন ঘটনাটি সমর্থন না করতেন, তা হলে পাণ্ডব ভ্রাতৃগণের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হতো।

যুধিষ্ঠির অতি ধার্মিক ও সৎ হওয়া সত্ত্বেও, তার দ্যুতক্রীড়ায় আসক্তি কুন্তীকে মনে মনে কষ্ট দিতো। শেষ পর্যন্ত যখন দ্যুতক্রীড়ায় পরা – জিত হয়ে, আবার পাণ্ডবগণ দ্রৌপদীসহ বনবাসে গমন করলেন, তখন তিনিও সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন। বিছর যেতে দেন নি। কুন্তী বিছুরের গৃহে ছিলেন ও বনযাত্রাকালে কুন্তী দ্রৌপদীকে বিশেষ করে কেবল সহদেবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে বলেছিলেন। কারণ তিনি জানতেন, সহদেব সর্বকনিষ্ঠ, এবং কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা তার কম। এতে বোঝা যায়, কুন্তী কখনও তাঁর স্বাভাবিক ও ন্যায় বুদ্ধি মুহুর্তের জন্যও হারান নি।

কুন্তী কৃষ্ণকে তাঁর মনস্তাপের কথা এমন ভাবে ব্যক্ত করেছিলেন, কৃষ্ণ তখন থেকেই পাণ্ডবদের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কৃষ্ণ যখন শান্তির জন্য দুর্যোধনকে শেষ পর্যন্ত সম্মত করাতে পারেন নি, তখন কুন্তীকে এসে সে-কথা বলেছিলেন। এবং জানতে চেয়ে ছিলেন, এবার যুধিষ্ঠিরকে তিনি কী বলবেন?

কুন্তীর জবাবে বলেছিলেন, তুমি যুধিষ্ঠিরকে বলবে, তার ধর্ম ক্ষীণ হচ্ছে। আমি তার মা হয়ে পরগৃহবাসিনী। আমাকে ধিক্! তুমি ভীম অর্জুনকে বলবে, তাদের ক্ষত্রিয়ের পরীক্ষাকাল উপস্থিত হয়েছে। তারা যদি এ সময় বৃথা নষ্ট করে, তবে আমি তাদের মুখ দেখতে চাই না। প্রাণের ভয় না করে, তারা যেন প্রাণ দেওয়াটাই শ্রেয় বোধ করে। নকুল সহদেবকেও এ কথাই বলবে।

‘কৃষ্ণ, তুমি যুধিষ্ঠিরকে আরও বলবে, তারবুদ্ধি ক্ষত্রিয়োচিত নয়। ক্ষত্রিয় সন্তান বাহুবলে পৃথিবী জয় করবে, ধর্মপথে থেকে প্রজা পালন করবে। আমি জ্ঞানবুদ্ধদের মুখে শুনেছি, একসময় কুবের রাজর্ষি মুচুকুন্দকে সমগ্র পৃথিবী দান করতে চেয়েছিলেন, এবং তাই করেছিলেন। যুধিষ্ঠির যেন এসব কথা স্মরণ রেখে, পৈতৃক রাজ্য যুদ্ধের দ্বারা উদ্ধার করে,এই আমার আদেশ।

‘কৃষ্ণ। তোমাকে আমি এক ঐতিহাসিক ঘটনা জানাই। বিছলা নানে এক তেজস্বিনী ক্ষত্রিয়রমণী ছিলেন। সেই বিদুষী বুদ্ধিমতী মহিলার পুত্রের নাম ছিল সঞ্জয়। সঞ্জয় সিন্ধুরাজের নিকট পরাজিত হয়ে, কাপুরুষের মতে। উদ্যমহীন জীবন কাটাচ্ছিলেন। তখন বিদুলা পুত্রকে বলেছিলেন, তুমি শত্রু হাসিয়ে, ঘরে কী করছো। আমি কি তোমাকে গর্ভে ধারণ করি নি? তোমার পিতা কি ক্ষত্ৰিয় ছিলেন না? ওরে কাপুরুষ, ওঠ। পরাজয় নিয়ে শুয়ে থাকিস না। কাপুরুষই একমাত্র অল্পেতে তুষ্টথাকে। সাপের দাঁত তুলতে গিয়ে মরাও ভালো, তবু কুকুরের মতো বেঁচে থাকা উচিত নয়। গাব গাছের অঙ্গার যেমন হঠাৎ সামান্য ক্ষণ জ্বলেই নিভে যায়, তুই সেই রকম একটু সময় বীরত্ব দেখিয়ে নিহত হ। তুষের মতো ধোঁয়া বের করে বেঁচে থেকে লাভ কী? গাধার মতো নিস্তেজ পুত্র কি ক্ষত্রিয়ের বংশ-ধারা রক্ষা করতে পারে! যা, হয় বীরত্ব দেখা নয় মৃত্যু বরণ কর। “বিছুলার কথায় সঞ্জয়ের প্রাণে ক্ষাত্রধর্ম জেগে উঠেছিল, সে আবার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েছিল। কেশব! তুমি আমার পুত্রদের এ কাহিনী শুনিয়ে বলবে, ক্ষত্রিয় সন্তান কখনও যুদ্ধকে ভয় করে না। আমার ছেলেরা যেন দ্রৌপদীর লাঞ্ছনার কথা ভুলে না যায়।’

কৃষ্ণের মুখে কুন্তীর এসব কথা শুনে কেবল পাণ্ডবরা অবাক হয় নি। ভীষ্ম তখন দ্রোণ দুর্যোধনকে ডেকে বলেছিলেন, ‘মায়ের এই, অত্যুগ্র উপদেশ শুনে, পাণ্ডবরা তাদের রাজ্যাংশ না পেলে শান্ত হবে না।’

বিদুর দুর্যোধন ও ধৃতরাষ্ট্রের মনের কথা কুন্তীকে জানালেন, ‘যুদ্ধ অনিবার্য। কিন্তু ভীষ্ম বা দ্রোণ স্নেহবশতঃ পাণ্ডবদের বিশেষ ক্ষতি করবেন না। একমাত্র পাপমতি কর্ণ দুর্যোধনের সমর্থক। সে অতি বলবান। পাণ্ডবদের ক্ষতি করতে সে সক্ষম, এবং তাদের সে অতি মাত্রায় দ্বেষ করে।

কুন্তী তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন, এবং কর্ণের কাছে গমন করলেন। কর্ণকে তার জন্মবৃত্তান্ত সব শুনিয়ে বললেন, ‘তুমি পার্থ। তুমি দুর্যোধনকে ত্যাগ কর। নিজের ভাইদের সঙ্গে যোগ দাও।’ এ ইতিহাস সকলেরই জানা। কর্ণ কুন্তীকে নানা ভাষায় অভিযুক্ত করলেন। ধিক্কারও দিলেন, ‘তুমি আজ তোমার পুত্রদের জীবন রক্ষার্থেই আমার কাছে এসেছো। কিন্তু আমি দুর্যোধনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবো না। আমি অকৃতজ্ঞ নই। আমি কৌরব পক্ষে থেকে যুদ্ধ করবো। তবে তোমার অনুরোধ রক্ষা করার জন্য একটি প্রতিজ্ঞা করছি। অর্জুন ভিন্ন তোমার আর চারি পুত্রকে সুযোগ পেলেও হত্যা করবো না। কিন্তু অর্জুনকে রেহাই দেবো না। যদি অৰ্জুন নিহত হয়, তাহলেও তুমি পাঁচ

পুত্রের জননী থাকবে? আমি নিহত হলেও তুমি পাঁচ পুত্ররই জননী থাকবে।”

কর্ণের উচিত কথা শুনে, কুম্ভী কাঁপতে কাঁপতে পুত্রকে আলিঙ্গন করে বিদায় নিয়ে চলে এলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *