১২
এইখানে এসে, ইতিহাসের ধূলাচ্ছন্ন পাতায় আমাকে বিশেষভাবে নিরীক্ষণ করতে হচ্ছে। কুম্ভীর জীবনের এটা একটা বড় বেদনাদায়ক ঘটনা, কোনো সন্দেহ নেই। কন্যকাবস্থায় পুত্র জন্ম দিয়ে, তাকে ত্যাগ করতে হয়েছিল। আজ স্বামী বর্তমান থাকলেও, অন্য পুরুষের দ্বারা তাঁকে গর্ভধারণ করতে হবে। পুত্রের জন্ম দিতে হবে।
ইতিহাসের পাতায় নানা কথার সৃষ্টি করা হয়েছে। সে সব যে একান্তই সত্য, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। যেমন, কুম্ভী পাণ্ডুকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ দেবতাকে ডেকে তিনি গর্ভধারণ করবেন। কুন্তী পাণ্ডুকে ভালবাসেন, অথবা করুণা করেন, সেটা ভাববার বিষয়। তবে পাণ্ডুর অনুরোধ রক্ষার্থে, তিনি ক্ষেত্রজ পুত্রের জননী হতে স্বীকৃত হয়েছেন। কুন্তীর ব্যক্তিত্ব যে-ভাবে প্রকাশিত হয়েছে, বোঝা যায়, তিনি কোনো দেবতার সঙ্গে মিলিত হবেন, তা তাঁরই ইচ্ছাধীন। এবং আরও একটি বিষয় আমি দেখছি, কুন্তী যখনই কোনো পুরুষের সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হয়েছেন, সেখানে পাণ্ডুর উপস্থিতি নেই। পাণ্ডুর কোনো ভূমিকাও নেই। তাঁর একটিই মাত্র ভূমিকা। পুত্রটি হবে তাঁর ক্ষেত্রে। পরিচিত হবে তাঁরই সন্তান রূপে।
কর্ণকে বাদ দিলে, কুন্তী এবার দ্বিতীয় সন্তানের জননী হবে। এই সন্তানটি দেখছি, ধর্মের অংশে জন্মেছে। অর্থাৎ, কুন্তী ধর্মকে আহ্বান করে, স্বামীর ক্ষেত্রে, তাঁকে গর্ভবতী করতে অনুরোধ করছেন। কে এই ধৰ্ম?
ইতিহাসের পাতা থেকে ধুলার আস্তরণ সরালেই, এই ধর্মাত্মাকে আমি দেখতে পাই। যিনি এই ধর্মাত্মাকে জন্ম দিয়েছিলেন, তিনি সেই ধর্মাত্মার মায়ের গর্ভে তাঁকে উৎপাদন করে বলেছিলেন, “হে কল্যাণি! তোমার গর্ভে যে শ্রেষ্ঠ পুরুষ আসছেন, তিনি পৃথিবীতে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান ও ধর্মাত্ম হবেন।”
এ ধর্মাত্মা দাসীপুত্র হলেন তাঁর পিতা এক মহৎ ব্যক্তি। তিনি নিজেই তাঁর এই পুত্রের সম্পর্কে আরও বলেছেন, এ পুত্র ধর্মার্থ কুশল ধীমান, মেধাবী, মহামতি, সূক্ষ্মদর্শী, স্থিরমতি পুরুষ। এই ধর্মজ্ঞের সময়ে, তাঁর মতো ধর্মজ্ঞ কেউ ছিলেন না। তাঁকে কেউ কখনও অধর্ম আচরণ করতে দেখে নি। কুন্তী এ পুরুষটির প্রতি, একদিক থেকে মনে মনে আসক্ত ছিলেন।
ভীষ্ম এই যুবকের শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। ঠিক যেমন, ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুকে শিক্ষিত করেছিলেন। এই ধর্মাত্মা ধনুর্বেদ, গজ- শিক্ষা, নীতিশাস্ত্র এবং ইতিহাস পাঠ, সব বিষয়েই বিশেষ শিক্ষিত ছিলেন।
এই পুরুষের নাম বিদুর। ইনিই ধর্ম।
আমি জানি, ইতিবৃত্তের প্রচ্ছন্ন ধারাকে যারা বুঝতে অক্ষম, তাদের কাছে ধর্ম যে স্বয়ং বিছর, এ তত্ত্ব মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু বহু ঘটনার দ্বারাই এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কুম্ভীর এই দেবর, বিছুরকে তিনি ‘খণ্ডা’ বলে সম্বোধন করতেন। শূদ্রা জননীর গর্ভে, ব্রাহ্মণের ঔরসে জাত সন্তানকে বলা হয় ‘পারসব’। পারসব বলেই রাজ্যে বিদুরের কোনো অধিকার ছিল না। পারসব অর্থেই ‘খণ্ডা’ প্রয়োগ দেখা যায়।
কুম্ভীর বিছুরকে হস্তিনায় সংবাদ দিয়ে, শতশৃঙ্গ পর্বতে আহ্বানের ঘটনার পরে, যে-সকল ঘটনা ঘটেছিল, তার কিছু উল্লেখ করলেই সমস্ত বিষয়টির ঐতিহাসিক বাস্তবতা প্রমাণিত হবে। পাণ্ডবরা যখন দ্রৌপদীসহ দ্বিতীয়বার বনবাসে যায়, তখন কুন্তী বিছুরের গৃহে ছিলেন। যুধিষ্ঠির নিজেও তাই চেয়েছিলেন। বিধবা রানী কুন্তী সমস্ত বিষয়েই, বিদুরকেই একমাত্র সহায় বলে জানতেন। দুর্যোধন যখন ভীমকে বিষ পান করিয়ে গঙ্গায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন তখন কুম্ভীবিছুরকেই তাঁর অন্তরের ভয় ও সন্দেহের কথা বলেছিলেন। বিদুর কুম্ভীকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, এ বিষয়ে কুন্তী যেন কারোর সামনে মুখ না খোলেন। কুন্তী যেন মনে রাখেন, স্বয়ং ব্যাসদেব বলেছেন, পাণ্ডবগণ সকলেই দীর্ঘায়ু। ভীম অবশ্যই ফিরে আসবেন।
কুন্তী আপন দুঃখের ও মনের কথা, বিদুর ব্যতীত অন্য কারোকে জানাতে ভরসা পেতেন না।
জতুগৃহের ষড়যন্ত্রের কথা, বিছুরই সাংকেতিক ভাষায় যুধিষ্ঠিরকে আগে থেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। অন্যথায়, জতুগৃহে কুন্তীসহ পঞ্চপাণ্ডবকে পুড়ে মরতে হতো।
ইন্দ্রপ্রস্থে যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে প্রচুর ধনরত্ন ব্যয় হয়েছিল। যুধিষ্ঠির সর্বধর্মবিদ বিদুরকেই ব্যয় বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দুর্যোধনের দ্বারা দ্রৌপদী লাঞ্ছনায়, একমাত্র বিছর ব্যতীত আর সকলেই সেই কলঙ্কিত ঘটনার নীরব সাক্ষী ছিলেন। কুন্তী পরে নিজে এ ঘটনার কথা বলেছেন।
পাণ্ডবরা যখন দ্রৌপদীসহ দ্বিতীয়বার বনবাসে যায়,” তখন বিছুর যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন,”বৎস যুধিষ্ঠির, ধর্ম বিগর্হিত উপায়ে যদি কেউ বিজিত হয়, তবে, তার ব্যথিত হবার কোনো কারণ নেই। যুধিষ্ঠির, তোমার মঙ্গল হোক। তোমরা আবার ফিরে আসবে। আমি তোমা- দের সুখী দেখবো। তুমি ভূমি থেকে ক্ষমা, সূর্যমণ্ডল থেকে তেজ, বায়ু থেকে বল, ভূতসমূহ থেকে সম্পদ লাভ কর!”
পাণ্ডবরা বনগমনের পর ধৃতরাষ্ট্রের কপট কথায় ও আচরণে বিছর মনের কষ্টে, কাম্যকবনে পাণ্ডবদের কাছে চলে গিয়েছিলেন। অবশ্য পরে ধৃতরাষ্ট্র বুঝেছিলেন, বিদুরকে পাণ্ডবপক্ষে থাকতে দিলে, তাঁর ক্ষতি হবে। তাই ক্ষমা চেয়ে ডেকে এনেছিলেন।
বনবাস থেকে ফিরে পাণ্ডবরা যখন পাঁচটি গ্রাম চেয়ে সঞ্জয়কে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, “আপনি মহামতি বিদুরকে বলবেন, আমরা তাঁর কুশল জিঙ্গাসা করছি। বলবেন, যুধিষ্ঠির যুদ্ধ চায় না। তিনি যেন এই সংকটকালে ধৃতরাষ্ট্রকে সুপথে চলার উপদেশ দেন, শান্তির কথা শোনান।”
শাস্তির পরামর্শ দিতে সে-সময় কৃষ্ণ হস্তিনায় এসে বিদুরের অতিথি হয়েছিলেন।
কুন্তী নিজে কৃষ্ণকে বিদুর সম্পর্কে এক জায়গায় বলেছেন, “সেই দ্যূতক্রীড়ার সভায় উপস্থিত সকলের মধ্যে আমি একমাত্র বিদুরকে প্রশংসা করি ধর্ম বা বিদ্যার দ্বারা মানুষ আর্য হতে পারেনা। চরিত্রেই আর্যত্ব লাভ করা যায়। কৃষ্ণ! সেই মহাবুদ্ধি গম্ভীর মহাত্মা বিছুরের চরিত্রই অলঙ্কার। এবং তা ত্রিলোকে ব্যাপ্ত হয়ে আছে।”…
বিছুরের বহু গুণাবলীর বিষয় উল্লেখ করা যায়। কৃষ্ণ থেকে শুরু করে, যারা পাণ্ডবদের ঘোরতর শত্রু তাঁরাও সকলে বিদুরকে মহামতি ধর্মজ্ঞ বলে সম্মান করতেন। সে সব ইতিহাস উদ্ঘাটিত করতে গেলে, স্বয়ং বিছুরকে নিয়েই একটি ভারত কাহিনী সৃষ্টি হতে পারে।
কারণ যুদ্ধের পনরো বছর পরে গান্ধারী, কুন্তী, বিদুর, সঞ্জয়, ধৃতরাষ্ট্র বনে গমন করলেন। কার্তিকী পূর্ণিমার দিন ছিল তাঁদের যাত্রা। সকলেই কুরুক্ষেত্রে গিয়ে রাজর্ষি শতযুপের আশ্রমে বাস করেছিলেন। যে ধৃতরাষ্ট্রকে এক সময় বিছর অনেক উপদেশ দিয়েও তাঁকে সৎ পথে ফেরাতে না পেরে কটু কথা বলেছেন, তাঁর সেবায় ও তপস্যায় বল্কল ও চীরধারী বিছর অত্যন্ত কৃশ হয়ে গিয়েছিলেন। কিছুদিন পরে পাণ্ডবরা সপরিবারে ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রমে উপস্থিত হয়ে বিছুরকে না দেখে জানতে চাইলেন, তিনিকোথায়? ধৃতরাষ্ট্রবললেন “বিছর কুশলেই আছেন। তিনি এখন ঘোর তপস্যায় নিরত। আহার বস্ত্রাদি ত্যাগ করে, বায়ুমাত্র ভক্ষণ করে জীবনধারণ করছেন, তাঁর শরীর অতিমাত্রায় কৃশ ও অস্থিচর্মসার হয়েছে।”
যুধিষ্ঠির একা বিছুরের সন্ধানে বের হলেন। গভীর বনের মধ্যে গিয়ে তিনি বিদুরকে দেখতে পেলেন। বিদুর নগ্ন, মলিন এবং বনের ধূলিকণাতে তাঁর দেহ সমাচ্ছন্ন। তাঁকে কখনও দেখা যায়, কখনও দেখা যায় না। তখন যুধিষ্ঠির অরণ্য মধ্যে “আমি তোমার অতি আদরের রাজা যুধিষ্ঠির” চিৎকার করতে করতে বিদুরকে অনুসরণ করতে লাগলেন। তখন বিদুর এক গাছে হেলান দিয়ে যুধিষ্ঠিরের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইলেন।
বিদুর যুধিষ্ঠিরের দৃষ্টির সঙ্গে নিজের দৃষ্টি সংযুক্ত করে, যোগবলে যুধিষ্ঠিরের দেহে প্রবেশ করলেন। যুধিষ্ঠির দেখতে পেলেন গতায়ু বিছরের শরীর সেই গাছেই ঠেকে আছে। তাঁর দেহে বিদুরের অনুপ্রবেশে, যুধিষ্ঠির নিজেকে অধিকতর বলবান বলে অনুভব করলেন। তিনি বিছুরকে দাহ করবার ব্যবস্থায় রত হলে কে যেন বলে উঠলেন, “রাজা যুধিষ্ঠির, বিদুরের শরীর আগুনে দগ্ধ করো না। বিদুর মতিধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর দেহ অগ্নিসংস্কার হবে না। এর জন্য শোক করো না।”
যুধিষ্ঠির আশ্রমে ফিরে গিয়ে যখন সব ঘটনা বললেন, তখন সকলেই অত্যন্ত অবাক হলেন। ইতিহাসের এই মহান বৃত্তান্ত থেকে, আমি জানলাম বিছুরের এমন ভাবে তিরোভাবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এখানেই সেই তাৎপর্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুধিষ্ঠির ধর্মের পুত্র বলে খ্যাত। বিছরও ধর্মের অংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছিলেন। এখানে ধর্ম ধর্মে লীন হয়েছে বটে। আমি দেখছি, পিতা পুত্রের দেহের মধ্যে অনুপ্রবেশ করলেন।
অতঃপরেও কেউ কেউ কুন্তীর সঙ্গে বিদুরের মিলন, যুধিষ্ঠিরের জন্ম সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবে। ইতিহাসের প্রচ্ছশ্ন সংকেত যারা বুঝতে পারে না, তারা অলৌকিক কিছু ছাড়া জীবনকে ভাবতে পারে না। তারা জ্ঞানকে বিসর্জন দেয়। অজ্ঞতাকে ভক্তিবলে প্রতিষ্ঠা দিতে চায়!
স্বয়ং মহাভারতকার প্রকৃত ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন নি, এমন কথা আমি বলতে পারি না। কুন্তীর কন্যকাবস্থায় গর্ভধারণ যে তৎকালীন সমাজে কলঙ্কজনক, যার ফলে, কুম্ভীকে সন্তান পালনের গোপন ব্যবস্থা করতে হয়েছিল, সে-কথাও ঐতিহাসিক ব্যক্ত করেছেন। পরবর্তীকালে ইতিহাসের ওপর যাঁরা কলম চালিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের সমসাময়িক সমাজের কথা ভেবে, প্রকৃত ঘটনার মধ্যে কতগুলো অলৌকিক কাহিনী আরোপ করেছেন। তাঁরা ভয় পেয়েছেন। কুম্ভীর ক্ষেত্রজ পুত্রের কাহিনীর এমন একটা অলৌকিকতা দান করেছেন, যেন ওসব দেবদেবীর ব্যাপার। সাধারণত নরনারীর জীবনে ওসব ঘটতে পারে না।
এ কথা ঠিক, পাণ্ডু যখন কুম্ভীকে ক্ষেত্রজ পুত্র জন্ম দিতে বলেছিলেন সমাজে তখন সেই প্রথা রহিত হয়ে গিয়েছিল। কুন্তীর জীবনের বৈশিষ্ট্যই হলো সংহিতা যুগের নারীর জীবনে যা ঘটতো, তাঁর জীবনে তারই ‘পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল’। সেজন্য গোপনীয়তার প্রয়োজন হয়তো ছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক সব সময়েই সেই গোপনীয়তার মধ্যে সত্যের একটি সংকেতও দিয়ে রাখেন।
বস্তুতপক্ষে,দুর্বাসা কুন্তীকে অথর্ববেদ থেকে কী মন্ত্র দান করেছিলেন? যে-মন্ত্রের শক্তিতে কুন্তী যে-কোনো দেবতাকে আহ্বান করতে পারতেন, এবং দেবতা তাঁর অধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য থাকতেন? সেই মন্ত্রের মূল যদি কিছু থাকে, তবে তা হলো একটি দৃঢ়তাসূচক উপদেশ। অথবা কুন্তীকে আত্মসচেতন করে তোলাই ছিল দুর্বাসা উদ্দেশ্য। আমি আগেই দেখেছি, দেবতা কোনো আকাশচারী জীব নন। তাঁরাও মানুষ। তাঁরা দেবতা জাতির মানুষ। তাঁদের বাসস্থান স্বর্গরাজ্য অত্যন্ত সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর। তাঁরা সকলেই স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ ছিলেন। তেমনি ভারতের সমতল ভূমিতে, মানুষ জাতির মধ্যেও অনেক গুণযুক্ত স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ ছিলেন। দুর্বাসা কুন্তীকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তোমার রূপ, সততা, ব্যক্তিত্ব, যে-কোনো পুরুষকেই আকর্ষণ করতে সক্ষম। আমার কথা কখনও মিথ্যা হবার নয়।”
আমি দেখেছি, স্বয়ং দুর্বাসাব মতো তেজস্বী মহামতি ঋষিই কুম্ভীর প্রতি বিশেষভাবে প্রসন্ন, তখন তাঁর তুল্য আরও পুরুষরা কুম্ভীর প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে, এটা স্বাভাবিক। কুন্তীর স্বয়ংবর সভা তা প্রমাণ করেছিল। দেশের সমস্ত শ্রেষ্ঠ রাজন্যবৃন্দ তাঁর মালা পাবার জন্য এসেছিলেন। কুন্তীর জীবনে সেই দিনটি শুভ ছিল না। কুরুরাজ পাণ্ডুকে মাল্যদান করাটা যে ভুল হয়েছিল, পরে তা মর্মে মর্মে বুঝেছিলেন।
কুন্তী যে তাঁর পারসব দেবরটির প্রতি বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট ছিলেন, তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন, তাঁকে যথার্থ ‘ধর্ম’ বলে বিশ্বাস করতেন, সে- ঘটনা আমি দেখেছি। পাণ্ডু যখন কুন্তীকে ক্ষেত্রজপুত্র উৎপন্ন করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন,এবং কুন্তী সম্মত হয়েছিলেন, তখনই বিছর তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলেন। এবং শতশৃঙ্গ পর্বত থেকে, অনুচর দ্বারা তিনি বিদুরকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বিছুরকে তিনি সবই খুলে বলেছিলেন। পুত্রার্থিনী হয়ে তিনি বিছুরকে প্রার্থনা করেছিলেন?
বিদুরের মতো নীতিজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি,কুত্তীর দুঃখের কথা জানতেন। কুন্তীর প্রার্থনা মতো, তিনি তাঁর গর্ভসঞ্চার করেছিলেন। কিন্তু কুন্তী কি সুখী হতে পেরেছিলেন? কেমন করেই বা পারবেন? একবার দেহদান করাও যা, শতবার করাও তাই এবং বিদুরের প্রতি তাঁর যতো আকর্ষণই জন্মাক, সেই পারসব দেবরটিকে চিরকালের জন্য নিজের কাছে রাখা সম্ভব ছিল না। বিছর বিবাহিত ছিলেন। তা ছাড়া রাজকার্যে তাঁর বিশেষ অবদান ছিল। অতএব কুম্ভীর কাছ থেকে তিনি বিদায় নিয়েছিলেন।
শতশৃঙ্গের মুনি-ঋষিরা ধর্মজ্ঞ বিদুর সম্পর্কে জানতেন। তাঁরা ভবিষ্যৎ বাণী করলেন, “মহারাজা পাণ্ডুর ক্ষেত্রে, এ পুত্র হবে মহাধার্মিক ও সসাগরা ধরণীর শাসক।”