।।পূর্বকথা- রাত নেমে আসে আমার শরীরের ভেতর।।
শনিবার রাত।
রুহির ফ্ল্যাটে জয়িতা আর আসিফ এসেছে।
আসিফ সোফার পাশে গীটার দেখে বলল “আরিব্বাস রুহি, তুই গীটার বাজাস, বলিস নি তো একবারও?”
রুহি লজ্জা পেয়ে বলল “শিখব বলে কিনেছিলাম। এক ব্যান্ডের লীড গীটারিস্ট ক্রাশ ছিল”।
আসিফ বলল “হু, তারপর?”
রুহি হাসল “যা হয়, ক্রাশই থাকল। পরে দেখলাম সে ছেলে সবার প্রপোজালই মেনে নিচ্ছে। খুব রাগ টাগ হল”।
আসিফ গীটারের ব্যাগ থেকে গীটারটা বের করে বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠল “মনে পড়ে রুহি রায়, কবিতায় তোমাকে, একদিন কত করে ডেকেছি”।
জয়িতা হি হি করে হেসে বলল “ওই দেখ রুহি, আসিফ কী সুন্দর গীটার বাজায়। নে ক্রাশ খেয়ে যা”।
আসিফ রুহির দিকে তাকিয়ে হাসল। রুহি অন্যদিকে তাকাল।
জয়িতা অবাক হয়ে একবার আসিফ আরেকবার রুহির দিকে তাকিয়ে বলল “কী ব্যাপার? সামথিং ইজ কুকিং মনে হচ্ছে? আর আমি জানিও না!”
রুহি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল “ধুস, কী যে বলিস না তুই? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে?”
জয়িতা বলল “মাথা আমার খারাপ হয় নি, আমি যা বুঝছি মাথা তোরই খারাপ হয়েছে। তুই ব্যাপারটা লুকোতে গিয়ে যে ব্লাশ করে ফেলছিস সেটা বুঝতে পারছিস?”
রুহি বলল “তোরা বস আমি কফি করে আনি”।
জোর পায়ে রুহি রান্নাঘরে চলে গেল।
জয়িতা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল “কী ব্যাপার? তোদের লাভ স্টোরি কবে শুরু হল?”
আসিফ বলল “ধুস, কী যে বলিস। লাভ স্টোরি আবার কী? তেমন কিছুই না”।
জয়িতা চোখ বড় বড় করে বলল “জাস্ট গুড ফ্রেন্ডস,ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা এই সব বলবি তো? বুঝতে পারছি”।
আসিফ মাথা নাড়ল “সেসব কিছুই না ইয়ার। আর এখন যা সময় এসেছে তাতে এসব ব্যাপার নিয়ে ইয়ার্কি মারিস না প্লিজ। রুহির বাড়ির লোকজন ভীষণ গোঁড়া। ওরা জানলে আমার গর্দান যাবে”।
জয়িতা সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলল “ওহ এই ভয়? এটা কোন ভয় নাকি? নিজেরা কে কী করবি তাতে কেউ মাথা গলাবেই বা কেন? তাছাড়া আমাদের স্টেটে অত ভয়ও নেই”।
আসিফ হাত তুলল “বলছি তো সেসব কিছুই না। উই আর গুড ফ্রেন্ডস”।
জয়িতা বলল “সে তো আমরাও ফ্রেন্ডস। তুই আর রুহি যে শুধুই ফ্রেন্ডস তা তো বিশ্বাস করা যাচ্ছে না বাওয়া। আর তুই রাস্তায় যেভাবে আগে আগে হেঁটে এই ফ্ল্যাটে এলি, আমার তখনই সন্দেহ হচ্ছিল তোর ওপর। সত্যি করে বল তো, তুই আগেও এসেছিস না এই ফ্ল্যাটে?” জয়িতা চোখ ছোট ছোট করে আসিফের দিকে তাকাল।
আসিফ বলল “ওহ, সে তো অফিসে কোন কারণে বেশি রাত হলে গাড়ি চলে গেলে এক আধবার রুহিকে ছেড়ে দিতে এসেছিলাম। তাতে কী হয়? আর কী পুলিশের মত জেরা করছিস বল তো?”
জয়িতা মাথা নাড়ল, “তা ঠিক, তা ঠিক। আমিই বা কেন বেশি চাপ নিয়ে নিচ্ছি। যাক গে, এই লাভ স্টোরিটা একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু না। ইনফ্যাক্ট ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে গেলে আমিই খুশি হব। তোরা দুজনেই আমার খুব ভাল বন্ধু। দেখ, যদি সব ঠিক ঠাক হয় তবে আমাকে কিন্তু একটা বড় ট্রিট দিতে হবে”।
আফিস বলল “সব ঠিক ঠাক হলে তো সবার আগে তোর ট্রিট দেওয়া উচিত মা। অনীশ, দ্য গ্রেট শংকরবাবুর ছেলে, তোকে লাইন মারছে, কত বড় ধামাকা খবর এটা বলত?”
জয়িতার মুখ কালো হয়ে গেল “অনীশ একটা পারভারট শুয়োরের বাচ্চা। ওর নাম আমার সামনে বলবি না আসিফ। আগেও বলেছি, আবার বলছি”।
রুহি কফি নিয়ে চলে এসেছিল। টেবিলে ট্রে রেখে বলল “ও তোর বাড়াবাড়ি। অনীশ তো তোরই বয়সী। এই বয়সে আবার পারভারসন আসে নাকি? যদি হয়ও শংকরবাবুর কথা মাথায় রেখে তোর উচিত অনীশকে না রাগানো”।
জয়িতা ফুঁসে উঠল “কেন? ওকে অত তেল মারার কী আছে? তাছাড়া আমি এই চাকরিটাও করব না। অনীশের বাবার কোম্পানিতে চাকরি করার কোন ইচ্ছা আমার নেই”।
আসিফ বলল “চাকরি করবি না? তাহলে মাস গেলে এই যে থোক টাকাটা আসছে সেটা বন্ধ হয়ে গেলে কী করবি?”
জয়িতা বলল “এক্সপেরিয়েন্স গ্যাদার করছি। ক’দিন পরেই লাথ মারব চাকরিটাকে”।
রুহি জয়িতার হাত ধরে বলল “কেন সব সময়ে এত রেগে থাকিস অনীশের ওপরে। বল না!”
.
।।যেখানে দেখিবে ছাই।।
সেমিনার রুমটা ছোট, একদিকে ল্যাপটপ, প্রোজেক্টর রাখা।
কোন প্রেজেন্টেশন দেওয়ার থাকলে সেখানেই দেওয়া হয় বোঝা যাচ্ছে।
উপমন্যু রুহির দিকে তাকিয়ে বললেন “তোমাদের কাজ খুব হেকটিক তাই না?”
রুহি বলল “হ্যাঁ, তা একটু”।
উপমন্যু বললেন “বেশ। এই বয়সটা তো স্ট্রাগল করার জন্যই। যাই হোক, আমাদের তুমি একটু আলো দেখাও তো মা”।
রুহি অবাক গলায় বলল “বুঝলাম না স্যার কী বলতে চাইলেন”।
উপমন্যু বললেন “জয়িতার ব্যাপারে। আমরা কোথা থেকে তদন্ত শুরু করব এখনও পুরোটাই অন্ধকারে আছি। মেয়েটার মোবাইল পর্যন্ত রিসেট করা হয়েছে। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে পুরনো ডেটা বের করতে হবে”।
রুহি বলল “আপনি আমাকে প্রশ্ন করুন, আমি যতটুকু জানি, নিশ্চয়ই বলব”।
উপমন্যু বললেন “বেশ। আমার প্রশ্ন খুব বেশি নেই। প্রথমেই বল জয়িতা কেমন মেয়ে ছিল”?
রুহি একটুও না ভেবে বলল “ভাল মেয়ে ছিল। খুব হেল্পফুল ছিল”।
উপমন্যু বললেন “বাহ। কেমন হেল্পফুল ছিল একটু এক্সাম্পেল দিয়ে বললে ভাল হয়”।
রুহি বলল “ঠিক উদাহরণ দিয়ে তো বলা যাবে না স্যার তবে বলতে পারি আমার কোন টাকার দরকার পড়লে আমি চোখ বন্ধ করে জয়িতার কাছে চাইতাম”
উপমন্যু বললেন “বেশ। ফিনান্সিয়াল হেল্প করত তার মানে। দ্যাটস গুড। আর?”
রুহি বলল “আমি ওর সঙ্গে অনেক সিক্রেটস শেয়ার করতাম”।
উপমন্যু বললেন “আর জয়িতা? ও তোমার সঙ্গে কোন রকম সিক্রেটস শেয়ার করত না?”
রুহির মুখটা এক মুহূর্তের জন্য পাংশু হয়েই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। সে বলল “সেরকম কিছু না স্যার”।
উপমন্যু ঘরের চারদিকে তাকালেন। চারটে সিসিটিভি নজর রাখছে তাদের ওপর।
তিনি রুহির দিকে তাকালেন “আচ্ছা। আমার কার্ড দিয়ে যাব তোমাকে, কিছু বলার থাকলে বলতে পারো”।
রুহি মাথা নাড়ল।
উপমন্যু বললেন “বাড়িতে কে কে আছেন তোমার?”
রুহি বলল “বাবা মা”।
-বাবা কী করেন?
-ছোট ব্যবসা আছে।
-মা?
-হাউজ ওয়াইফ।
-তোমাকে কত টাকা বাড়িতে পাঠাতে হয়?
-অনেকটাই।
-তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?
রুহি কয়েক সেকেন্ড উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল, “সেরকম কেউ নেই স্যার”।
উপমন্যু বললেন “বেশ। অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন, উত্তর না দিলেও পারতে। এই অফিসের লোকেদের সঙ্গে জয়িতার কেমন সম্পর্ক ছিল?”
রুহি বলল “ঠিক ঠাক। আসলে এসেই ডেস্কে বসে কাজ স্টার্ট হয়ে যায় আমাদের, আর কারও সঙ্গে কোন রকম সম্পর্ক বজায় রাখার সময়ের যথেষ্ট অভাব”।
উপমন্যু বললেন “জয়িতার বাবা মার সঙ্গে তোমার আলাপ হয়েছিল?”
রুহি দুদিকে মাথা নাড়ল।
উপমন্যু বললেন “আসিফের ডিউটি কখন?”
রুহি একটু চমকেই সামলে নিয়ে বলল “নাইট শিফট আছে”।
উপমন্যু বললেন “শুনলাম জয়িতার সঙ্গে আসিফের খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল। তোমার সঙ্গে কেমন আসিফের সম্পর্ক?”
রুহি ঘাড় নাড়ল “ভাল স্যার”।
উপমন্যু বললেন “তোমরা থ্রি মাস্কেটিয়ার্স ছিলে?”
রুহি মাথা নাড়ল “হ্যাঁ”।
উপমন্যু বললেন “ভেরি স্যাড। ঘটনার দিন তুমি অফিস এসেছিলে?”
রুহি বলল “হ্যাঁ। আমি এসেছিলাম। অফিসেই ছিলাম”।
উপমন্যু বললেন “আসিফ?”
রুহি বলল “ওর নাইট ছিল”।
উপমন্যু বললেন “হু। তার মানে জয়িতাকে খুন করে আসিফ ইজিলি নাইট শিফটে ঢুকে পড়তে পারত তাই তো?”
রুহি চমকে উপমন্যুর দিকে তাকিয়ে বলল “এ আপনি কী বলছেন স্যার? আসিফ জয়িতার খুব ভাল বন্ধু। ও কেন জয়িতাকে খুন করতে যাবে?”
উপমন্যু হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গি করে বললেন “ধুস, কী যে বল। বন্ধুদের মধ্যেই তো এসব বেশি হয়। দেখো কোন কিছু হয়েছিল যেটা হয়ত তোমাকে লুকিয়ে চলছিল। তুমি জানতেই পারো নি”।
রুহি রাগী গলায় বলল “এসব কিছুই হয় নি স্যার। ও এসব করতেই পারে না। জয়িতা ওর শুধুই বন্ধু ছিল”।
উপমন্যু আগ্রহী গলায় বলল “তাই নাকি? তা তুমি কী করে জানলে? এক বন্ধু জানে আজকাল আরেক বন্ধু কী করছে?”
রুহি থমথমে মুখে বসে রইল।
.
।।যেখানে দেখিবে ছাই।।
উপমন্যুর বাড়িতে ফিরতে রাত সাড়ে দশটা হয়ে গেল।
গাড়ি ছেড়ে দিয়ে গেছিল বাড়িতে।
বেল বাজালে পিয়ালী দরজা খুলে দিলেন।
তাকে দেখে বললেন “এত দেরী হল আজ?”
উপমন্যু জুতো খুলতে খুলতে বললেন “আর দেরী! একটা বিচ্ছিরি কেস পেয়েছি”।
পিয়ালী শ্বাস ছেড়ে বললেন “কোন কেসটা ভাল আসে? সবক’টাই তো বিচ্ছিরি”।
উপমন্যু ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলেন “একটা মেয়ের মার্ডার করা হয়েছে। একুশ বাইশ বছর বয়স। কল সেন্টারে কাজ করত, পড়াশুনাও করত। বেশ কমপ্লিকেটেড লাগছে ব্যাপারটা। ফোনের ডেটা সযত্নে মুছে দেওয়া হয়েছে। তাতান কোথায়?”
পিয়ালী বললেন “ঘরে। আর কোথায়? সেই মোবাইল খুট খুট। আর ফাঁক পেলে কত পড়ে ওই জানে”।
উপমন্যু বললেন “খেয়েছে?”
পিয়ালী বললেন “হ্যাঁ। ডাকব?”
উপুমন্যু বললেন “থাক। আমাকে দিয়ে দাও। খেয়ে একটু রেকর্ডিংগুলো শুনি”।
পিয়ালী বললেন “পা তো ধুয়ে নাও অ্যাটলিস্ট। এভাবে খেতে বসে পড়বে নাকি?”
উপমন্যু বললেন “ওহ হ্যাঁ।তুমি খাবার দাও”।
উপমন্যু বাথরুম গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলেন।
পিয়ালী রুটি, তরকারি আর মাছ দিলেন। নিজেও খেতে বসলেন।
উপমন্যু বললেন “রিটায়ার করলে বাঁচি। এই এক কাদা ঘাটতে ঘাটতে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল”।
পিয়ালী বললেন “হু, তুমি নাকি বাঁচবে। তুমি রিটায়ারের পরে আবার যদি কনসালটেন্সী ফার্ম না খুলেছ তাহলে আমার নামে কুকুর পুষো”।
উপমন্যু হাসলেন “তাই নাকি? তা কী কুকুর পুষব? পাগ? না অ্যালসেশিয়ান? পিয়ালী নামের কুকুর। ভাবতেই কেমন একটা শিহরণ দিয়ে গেল মাইরি”।
পিয়ালীও হাসলেন, কপট রাগ দেখিয়ে বললেন “থাক, থাক। অনেক হয়েছে। এত রাত করে বাড়িতে এসে আর এভাবে খ্যাপাতে হবে না”।
তাতান ঘর থেকে বেরিয়ে উপমন্যুকে দেখে বলল “কী কেস? বাবা মার মধ্যে তুমুল প্রেম চলছে মনে হচ্ছে?”
পিয়ালী রাগী গলায় বললেন “আবার পাকা পাকা কথা তাতান?”
তাতান হেসে বলল “উফ, মা তুমি এত সিরিয়াস কেন সব সময়?”
উপমন্যু খেতে খেতে বললেন “তোর মার সিরিয়াস লগ্নে জন্ম জানিস না?”
পিয়ালী রাগী গলায় বললেন “আমার এসব ইয়ার্কি একদম ভাল লাগে না”।
উপমন্যু বললেন “মেয়ে বড় হলে তো মায়ের বন্ধু হয়ে যায়। তাতান তোমার বন্ধু তো এখন”।
তাতান এসে পিয়ালীর গালে আদর করে বলল “মা আমার সব সময় রেগে আছে”।
পিয়ালী বললেন “তা রাগ করব না? বার বার বলি মোবাইল রেখে পড়তে বস কিছুতেই পড়িস না। কী যে সারাক্ষণ মোবাইলে ঢুকে থাকিস তুইই জানিস”।
উপমন্যু খেতে খেতে থমকে গিয়ে বললেন “তাতান মোবাইলে কোন অ্যাপটা তুই সব চেয়ে বেশি ঘাটিস?”
তাতান একটু থতমত খেয়ে গেছিল।
পিয়ালী বললেন “কী অ্যাপ আবার? সারাক্ষণ তো কী সব গেম খেলে আর টাইপ করে যাচ্ছে। অত টাইপ করলে বই লিখে ফেলত”।
উপমন্যু পিয়ালীকে হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে তাতানের দিকে তাকিয়ে বললেন “বল না কোন অ্যাপ?”
তাতান বলল “হোয়াটস অ্যাপ। ফেসবুক। কেন?”
উপমন্যু বললেন “কেউ যদি ফোন রিসেট করে দেয় তাহলে সব ডেটা মুছে যাবে?”
তাতান বলল “হোয়াটস অ্যাপে ব্যাপ আপ নেওয়া থাকলে সব রিস্টোর করা যায়। ফেসবুকেও যদি সব চ্যাট মুছে না দেওয়া যায় তাহলে সব থাকার কথা। হোয়াটস অ্যাপ অবশ্য সিম দিয়ে আবার ভেরিফাই করাতে হয় রিসেট করার পরে, ফেসবুকে লগ ইন করলেই কার কার সঙ্গে চ্যাট করা হয়েছে সব দেখাবে”।
উপমন্যু বললেন “আর যদি কেউ ফেসবুকের চ্যাট ডিলিট করে দেয়?”
তাতান চশমার ফাঁক দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল “ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কেন বল তো?”
উপমন্যু চিন্তিত মুখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন “এক মেয়েকে খুন করে তার ফোন রিসেট করা হয়েছে। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে ফোনে এমন কিছু ছিল যেগুলো তাড়াহুড়ো করে সরাতে গিয়ে রিসেট করা হয়েছে”।
তাতান বলল “রিসেট করেছে? প্যাটার্ন লক বা ফিঙ্গার প্রিন্ট যাই থাক, রিসেট করতে হলে কিন্তু সেগুলো জানতে হবে। আর ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপ কেন, ফোনে ফটো থেকে শুরু করে অনেক কিছুই থাকে। রিসেট করার আগে কী ছিল তা জানতে ফোন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, তাও জানিনা উদ্ধার হবে নাকি। আর ফোন সিকিউরিটি চেক না করে ফরম্যাট করবে না”।
উপমন্যু বললেন “অথবা মেয়েটিকে না জানিয়ে ফোন আনলক করতে পেরেছিল খুনী।হু… চিন্তার ব্যাপার”।
তাতান বলল “কোন মডেল ফোনের?”
উপমন্যু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় পিয়ালী রাগী গলায় বললেন “সারাদিন অফিস করে খাওয়ার টেবিলেও এই শুরু করেছ? দয়া করে খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর প্লিজ। খেয়ে টেয়ে যা ইচ্ছা কর”।
উপমন্যু অন্যমনস্কমুখে খেয়ে যেতে লাগলেন।
.
রাত এগারোটা পনেরো। উপমন্যু নিজের ঘরে ল্যাপটপ খুলে বসেছেন তার ফোনটা বেজে উঠেই থেমে গেল।
উপমন্যু দেখলেন একটা মিসড কল।
কল ব্যাক করলেন নম্বরটাতে। একবার পুরোটা রিং হয়ে কেটে গেল।
উপমন্যু ভ্রু কুচকালেন। নাম্বারটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাবলেন একবার কার নাম্বার জানার জন্য রায়কে পাঠাবেন।
তার ফোনটা আবার বেজে উঠল। সেই নাম্বার থেকেই ফোনটা আসছে।
উপমন্যু ধরলেন “হ্যালো”।
“মিস্টার উপমন্যু বসু বলছেন?” ওপাশের পুরুষ গলাটা একটু সামান্য কাঁপছে।
উপমন্যু বললেন “বলছি। আপনি কে বলছেন?”
“স্যার আমি আসিফ বলছি। রুহি আপনাকে ফোন করতে বলল”।
উপমন্যু বললেন “ওহ, বুঝেছি। তুমি ফোন করে কেটে দিলে কেন? ভয় পাচ্ছিলে নাকি যে পুলিশ ছুলে আঠারো ঘা?”
ওপাশে একটু থেমে আসিফ বলল “সেরকমই খানিকটা। রুহি একটু ভয় পেয়েছে আসলে। আমাকে বার বার বলছিল আপনাকে ফোন করতে। আমি অফিসে এসে তাই একটু ব্রেক নিয়ে আপনাকে ফোন করছি”।
উপমন্যু হাসলেন “ঠিক আছে, তুমিও যে ঘাবড়েছ সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এখন নাইট শিফটে আছো, সারারাত তোমাকে জেগে থাকতে হবে, এখন আর বেশি টেনশন দেব না তোমায়। কাল তুমি কখন কীভাবে দেখা করতে পারবে জানাও”।
আসিফ একটু ভেবে বলল “স্যার আমি ফিরে একটু ঘুমাই। আপনি বললে তার পরের সময়টা দেখা করে নিতে পারি। সকাল দশটা নাগাদ”।
উপমন্যু বললেন “ওকে। তুমি কোথায় থাকো?”
আসিফ বলল “কসবায় স্যার”।
উপমন্যু বললেন “ঠিক আছে। তুমি ফিরে ঘুম থেকে উঠে আমাকে ফোন কোর। আমি কাছা কাছি কোন জায়গায় তোমার সঙ্গে দেখা করে নেব। গুড নাইট”।
আসিফ বলল “গুড নাইট”।
উপমন্যু ফোনটা কাটলেন। মাথায় হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তিত মুখে তাকিয়ে ফোন করলেন সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে। ওপাশ থেকে ফোন তুলতেই উপমন্যু বললেন “নায়েককে দাও তো। আমি বোস বলছি”।
একটু অপেক্ষা করতে হল। নায়েক ধরলেন “হ্যাঁ স্যার”।
উপমন্যু বললেন “ফোনটা থেকে কি কিছু পাওয়া গেল?”
নায়েক বললেন “হ্যাঁ স্যার। রিকোভারি করা হয়েছে”।
উপমন্যু বললেন “আমাকে জানালে না কেন?”
নায়েক বললেন “স্যার এই মিনিট পাঁচেক হল জাস্ট। আমি ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে…”
উপমন্যু ধমক দিলেন “কোন দুনিয়ায় আমি এত তাড়াতাড়ি ঘুমাই হে? রায় তোমাকে বলে নি যখনই ডেটা পাবে আমাকে জানিয়ে দেবে?”
উপমন্যুর ঝাড় খেয়ে নায়েক একটু সামলে নিয়ে বললেন “সরি স্যার”।
উপমন্যু বললেন “হু। বল কী কী উদ্ধার হল”।
নায়েক বললেন “ফোন মেমোরিতে রাখা বেশ কিছু গ্যালারির ফটো, মেসেজ, উদ্ধার করা গেছে। দুটো সিম ছিল ফোনে। কোনটায় হোয়াটস অ্যাপ ছিল বের করে হোয়াটস অ্যাপ ব্যাক আপ রিস্টোর করা হচ্ছে এখন”।
উপমন্যু নড়ে চড়ে বসলেন “কতক্ষণ লাগবে সেটা পেতে?”
নায়েক বললেন “হার্ডলি আর আধ ঘন্টা”।
উপমন্যু বললেন “ফেসবুক?”
নায়েক বললেন “পেয়ে যাবেন স্যার সকালের মধ্যে”।
উপমন্যু বললেন “তোমার প্ল্যান কী? সারারাত থাকছ আজ?”
নায়েক বললেন “হ্যাঁ স্যার। থেকে যাব আজ। কাল থেকে তিন দিন থাকব না। একটু মন্দারমণি যাব”।
উপমন্যু বললেন “একটু যাবে কেন? পুরোপুরি যাও, কিন্তু আমাকে অথৈ জলে ভাসিয়ে রেখে যেও না। সব কিছু উদ্ধার করে দিয়ে তবেই যেও”।
নায়েক বললেন “সে তো নিশ্চয়ই স্যার। ওসব চিন্তা করবেন না”।
উপমন্যু বললেন “চিন্তা আমি করি না। আমি জানি আমাদের ডিপার্টমেন্ট চাইলে সবই করতে পারে। সমস্যাটা হল ব্যাপারটা পুরোপুরি চাওয়ার ওপর নির্ভর করছে”।
নায়েক হেসে ফেললেন “কী যে বলেন স্যার। আগের মাসেই একটা বড় ডাকাতি কেস শুধু ফোন ট্রেস করে বের করে দিয়েছি আমরা। একটু সময় দিতে হবে তো। এই ফোনটা উদ্ধার করা এমন কিছুই কঠিন ছিল না। সময় লাগল এই যা”।
উপমন্যু বললেন “হোয়াটস অ্যাপ ডেটা, ফেসবুক ডেটা অ্যালং উইথ অল ইমেজ ফাইল আমাকে পাঠাবে। যত রাতই হোক। আর শোন, মন্দারমণিতে ফোন অফ করে রাখবে না। আমার আরও দরকার পড়তে পারে”।
নায়েক বললেন “শিওর স্যার”।
উপমন্যু ফোনটা রেখে ল্যাপটপে মন দিলেন।
.
১৯ সেপ্টেম্বর, রাত ১১টা ২৯ মিনিট