পূর্ণপ্রেম
ভিয়েনাতে সর্বপ্রচেষ্টায় পরিপূর্ণ নিষ্ফলতা অর্জন করে হিটলার দেশত্যাগ করে চলে গেলেন জর্মনির বাভারিয়া প্রদেশের প্রধান নগর মুনিকে। সেখানেও তিনি বেকার, এমন সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেলে তিনি স্বেচ্ছায় জর্মন সৈন্যবাহিনীতে জওয়ান রূপে প্রবেশ করলেন। যুদ্ধশেষে মনিকে ফিরে এসে জওয়ানদের কী যেন এক কালচারাল বা ওইজাতীয় অস্পষ্ট কী এক ট্রেনিং দেবার জন্য নিযুক্ত হলেন। এই সময়ে তিনি আবিষ্কার করলেন, সরস্বতী তাঁর রসনায় বিরাজ করেন তাকে একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বক্তারূপে জনসমাজের অভিনন্দন গ্রহণ করাবার জন্য। এই সময় মুনিক শহর রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাবাত্যায় বিক্ষুব্ধ। অসংখ্য রাজনৈতিক দল এবং রাস্তায় রাস্তায় গণবিক্ষোভের কোলাহল। হিটলার এরই একটার সদস্য হলেন। সে দলের সভ্যসংখ্যা দশ হয় কি না হয়। ১৯১৯ থেকেই তিনি এই দল (National Sozialictiche Deutsche Arbeitspartei এরই প্রথম শব্দের Na এবং দ্বিতীয় শব্দের Zi নিয়ে বিপক্ষ না নিরপেক্ষ দলের অজানা কে একজন Nazi–নাৎসি নামকরণ করে) গড়ে তুলতে আরম্ভ করলেন, অচিরে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করলেন, এবং বাভারিয়া প্রদেশের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক কমুনিস্টবৈরী রূপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে দুসরা জঙ্গিলাট, পয়লা নম্বর হিন্ডেনবুর্গের (ইনি পরবর্তী যুগে জর্মনির প্রেসিডেন্ট হন) সহকর্মী জেনারেল এরিষ লুডেনডর্ফের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিন-চার বছর যেতে না যেতে পার্টির সভ্যসংখ্যা আশাতীতরূপে বৃদ্ধি পাওয়ায় হিটলারের এতখানি শক্তিসঞ্চয় হল যে তিনি সবলে বাভারিয়া প্রদেশের তদানীন্তন রাষ্ট্রপ্রমুখদের অপসারণ করে প্রদেশের রাজ্যভার গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন–এই বিশ্বাস তার দৃঢ় হল। এই উদ্দেশ্যে লুডেনডর্ফকে পুরোভাগে নিয়ে এই ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে তিনি সদলবলে প্রধান রাজকার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হলেন। রক্ষীরা গুলি ছোঁড়াতে সমস্ত দল পালাল, স্বয়ং হিটলার কিঞ্চিৎ আহত হলেন (কিন্তু বন্দুকের গুলিতে নয়), কিছুদিন পর, রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছর জেল হল। কিন্তু ইতোমধ্যে এবং বিশেষ করে কারাবাসের সময় তিনি মুনিক তথা বাভারিয়া প্রদেশের সর্বত্র এমনই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন, (এবং তথাকার সরকার ইতোমধ্যে কম্যুনিস্টদের শশীকলার ন্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্তি দেখে, রীতিমতো শঙ্কিত হয়ে কণ্টক দ্বারা কন্টক উৎপাটনার্থে) হিটলারকে অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই, অর্থাৎ ১৯২৩ সালেরই ডিসেম্বর মাসে এবং শুভেচ্ছার প্রতীক রূপে বড়দিনের অল্প কয়েকদিন পূর্বে কারামুক্ত করে দিলেন।
হিটলার নবোদ্যমে ইতোমধ্যে নেতার অভাবে দ্বিখণ্ডিত পার্টিকে দিনে দিনে শক্তিশালী করে তুলতে লাগলেন।
রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে হিটলার সম্বন্ধে কোনও কিছু বললে সেটা যথেষ্ট বোধগম্য হয় না বলে সংক্ষেপে কয়েকটি বছরের বর্ণনা দেওয়া হল।
এখন প্রশ্ন, ইতোমধ্যে হিটলার আর কাউকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন কি না। ভিয়েনায় এসে হিটলার কিছুদিন তাঁর বন্ধুর মারফতে উৎকণ্ঠিত চিত্তে তাঁর প্রিয়ার (লেখক ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন স্তেফানি) খবর নিতেন। তার পর সেই বন্ধু, গুস্তাফও ভিয়েনায় এসে একই কামরায় বাসা বাঁধলেন। স্তেফানি হিটলারের তুলনায় বহু উচ্চবংশের কন্যা। পাত্র হিসেবে হিটলারের চেয়ে অযোগ্যতর পাত্র তখন বোধহয় লিনৎস শহর খুঁজলেও দ্বিতীয়টি পাওয়া যেত না। ম্যাট্রিক ক্লাসে ওঠার পূর্বেই সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে, জাতে প্রায় মজুর শ্রেণির, অর্থসম্বল প্রায় ধনুগুণ ভক্ষণের অবস্থা। হিটলার ভিয়েনা থাকাকালীন স্তেফানির বিয়ে হল সুযোগ্য বরের সঙ্গে। হিটলার সে খবর কখন পেয়েছিলেন– আদৌ পেয়েছিলেন কি না, কারণ বন্ধু গুস্তাফ তাঁর সঙ্গে তখন ভিয়েনাতে এবং ওদের দু-জনার পরিবারের কেউই স্তেফানিকে চিনতেন না– এ সম্বন্ধে সর্ব ঐতিহাসিকই নীরব।
কারণ তখন হিটলার বিরাট ভিয়েনা শহরের ঘূর্ণাবর্তে প্রায় বিলীন হবার উপক্রম।
কিন্তু এস্থলে তার স্থাপত্য শিক্ষালয়ে প্রবেশ করতে অক্ষম হওয়া, তাঁর নিদারুণ দৈন্য, পাবলিক লাইব্রেরি থেকে অবিচারে নানা জাতের বই এনে সেগুলো গোগ্রাসে ভক্ষণ–এর কোনওটাই আমাদের বিষয়বস্তু নয়। আমরা জানতে চাই, ওয়াইন-উইমিন-সং মদ্য-মৈথুন-সঙ্গীত– এই তিন বস্তুতে যে রাজসিক প্রিয়দর্শন ভিয়েনা নগর প্যারিসের সঙ্গে পাল্লা দিত, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তো বহু পূর্বে সে প্যারিসকে ছাড়িয়ে গিয়েই ছিল, সেই ভিয়েনাতে নারী সম্প্রদায়ের সঙ্গে হিটলারের কোনও সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল কি না।
গুস্তাফ দৃঢ়কণ্ঠে বলছেন, যতদিন হিটলার তার সঙ্গে বাস করেছেন ততদিন ওদিকে তার কণামাত্র উৎসাহও তিনি কখনও দেখেননি। বস্তুত দীনবেশে সজ্জিত হলেও কঠোর কৃসাধনরত সন্ন্যাসীর চোখেমুখে যে দীপ্তি পথিকজনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ভিয়েনার দ্র, দেমি মদেন, গণিকাদের চোখেও সেটা ধরা পড়ত হিটলারকে দেখে। এবং তরুণ হিটলারের দিকে কটাক্ষনয়নে তাকিয়ে বিশেষ ইঙ্গিতও দিত। সাদামাটা, কিঞ্চিৎ ঈর্ষান্বিত গুস্তাফ সেদিকে হিটলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, তিনি তার বাহু ধরে অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলতেন, চল, চল, গুল, বাড়ি চল।
পূর্বেই বলেছি তার পর তিনি উধাও হলেন।
সেই ১৯০৮ থেকে ১৯১৯-২০ পর্যন্ত যে যা-কিছু লেখেন তার পনেরো আনা কাল্পনিক। অবশ্য ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হিটলার যখন জওয়ানরূপে যুদ্ধক্ষেত্রে, তার সম্বন্ধে সে সময়কার খবর সরকারি কাগজপত্রে রয়েছে, কিন্তু সেগুলো আমাদের কাছে অবান্তর।
বস্তুত এ-কথা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, ১৯০৮ থেকে ১৯২৫-২৬ পর্যন্ত কোনও রমণী তার ওপর কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।(১) পরিচয় হয়েছিল তাঁর বহু রমণীর সঙ্গে– একে ভিয়েনায় তার যৌবনের বেশ কিছুকাল কেটেছে, যে-ভিয়েনার রমণী জাতিকে খাতির করতে তার সঙ্গে প্রেমে পড়ার জন্য সর্বক্ষণ সচেতন, কিংবা অচৈতন্যি দুটোই বলতে পারেন, এক কথায় ভিয়েনা গ্যালান্ট নগর– তদুপরি ১৯২২ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত তিনি মুনিকের রাজনৈতিক আকাশে অন্যতম জ্যোতিষ্মন গ্রহ, কম্যুনিস্টদের মোকাবেলা করতে পারেন একমাত্র তিনি, রাস্তাঘাটে নাৎসি আর কমুনিস্ট দলে আবার প্রতিদিন মারামারি হয় এবং উভয় পক্ষে কয়েকটা গুপ্ত এবং প্রকাশ্যে খুনও হয়ে গিয়েছে– এ সবার নেতা তো বীর্যবান না হয়ে যায় না। তদুপরি মহিলাদের প্রতি কী প্রকারের ব্যবহার করতে হয়, তাদের প্রতি ব্যবহার্য সর্ব আদব-কায়দা-এটিকেট-গ্যালানট্রি তিনি জানেন– ভিয়েনাতে অবশ্যই তার বেশিরভাগ তিনি দেখে শিখেছিলেন, কিন্তু হিটলারের মতো অসাধারণ জিনিয়াসের পক্ষে সেইটে যথেষ্টর চেয়েও ঢের বেশি। এবং সর্বশেষ কথা, তাঁর যে একটা ম্যাগনেটিক চার্ম চৌষিক আকর্ষণ শক্তি ছিল সেটা তো জর্মন ভাষায় সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ বহু বিদেশি রমণীও বলেছেন।
আমি পূর্বেই নিবেদন করেছি, হিটলার-জীবনে প্রেম হাফ প্লাস ওয়ান প্লাস হাফ।
স্তেফানির প্রতি তার প্রেম প্রথম হাফটা, শেষ হাফটা এফা ব্রাউন, যাকে তিনি শেষ মুহূর্তে বিয়ে করেন এবং সেই সূত্রে পৃথিবীর বহু লোক এ প্রেমের খবর পায়। কিন্তু আমরা এস্থলে যে দৃষ্টিবিন্দু– অর্থাৎ প্রেমের পরিপ্রেক্ষিতে হিটলারকে দেখছি, সেভাবে কেউ দেখেননি, লেখেননি। হয়তো সেই হাফটি এস্থলে আগে বর্ণনা করে মাঝখানে ফুল ওয়ানটিতে গেলে ভালো হত, পাঠক পুরো পার্সপেকটিভ পেতেন, কিন্তু শেষটায় অনেক চিন্তা করে দেখলুম বিশেষ কারণ না থাকলে এ ধারার কালানুক্রমিক অগ্রসর হওয়াই প্রশস্ত (সিনেমার ফ্লাশব্যাক কিংবা ফ্লাশ ফরওয়ার্ড টেকনিক অবশ্য আজকাল বড়ই জনপ্রিয়)। দ্বিতীয়, এফার সঙ্গে হিটলারের সর্বশেষ প্রেম ১৯৩৯-৪৫-এর যুদ্ধাদি দ্বারা এতই বিক্ষুব্ধ যে বহু অবান্তর নর-নারীকে সেখানে টেনে এনে প্রবন্ধের কলেবর বাড়াতে হয়। তৃতীয়ত, অনেকেই সে প্রেম সম্বন্ধে অল্পবিস্তর পড়েছেন বলে স্বল্প পরিসর প্রবন্ধে মূল ঘটনাগুলো শুধু আবার তারা শুনতে পাবেন মাত্র– অর্থাৎ, সে-প্রেম বর্ণাতে হলে পূর্ণ পুস্তকের প্রয়োজন।
এস্থলে নিবেদন করা কর্তব্য মনে করি, রমণীর প্রতি পুরুষের একনিষ্ঠ প্রেম এদেশের এবং ওদেশের বহু কাব্যকাহিনীতে আছে কিন্তু বাস্তবে যদ্যপি যে কোনও কারণেই হোক, (কুলীন প্রথার কথা তথা শ্রীকৃষ্ণ বা দশরথের কথা এস্থলে স্মরণে আনছিনে) আমরা আজ এদেশে একদারনিষ্ঠতাকে সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখি, ইয়োরোপে বহুকাল যাবৎ একই রমণীকে আজীবন পুজো করার বিশেষ মূল্য দেয়নি। অতএব পাঠক যেন স্তেফানির কথা স্মরণে এনে হিটলারের সর্মহৎ, সর্বগ্রাহী প্রেমকে তার যথোপযুক্ত সম্মান দিতে কুণ্ঠিত না হয়।
ঠিক কোন সালে যে প্রেমের সূত্রপাত হয় সে কথা তার অন্তরঙ্গতম ব্যক্তিও জানেন না– যদিও আমার সুদৃঢ় অচল বিশ্বাস, বয়সে পরিণত হওয়ার পর তিনি কারুর সঙ্গেই অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপন করে নি, ফোটোগ্রাফার হফম্যান ছিলেন তাঁর একমাত্র নিত্যালাপী বিদৃষক– তবে নিশ্চয়ই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের কিছু পূর্বে।
ইতোমধ্যে হিটলারের একটি বিশিষ্ট স্বভাবের উল্লেখ না করলে সে বলার যথার্থ তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করা অসম্ভব।
পূর্বেই নিবেদন করেছি মোটামুটি ১৯২৭, পাকাভাবে বলতে গেলে তার দু-তিন বছর আগে থেকেই হিটলার মুনিকাঞ্চলে এমনই প্রখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি যেখানে যেতেন সেখানেই তাঁর চতুর্দিকে ভিড় জমে যেত! দিনের পর দিন বিশাল জনতার সামনে তিনি ওজস্বিনী বক্তৃতা দ্বারা দেশের দুঃখ-দৈন্যের নিদারুণ বর্ণনা দিচ্ছেন, বিশেষ করে শিশু-পুত্রকন্যার জন্য আহার-বসন সংগ্রহার্থে মা-জননীদের কঠোর সংগ্রাম (মেয়েরা দু হাত দিয়ে মুখ চেপে কাঁদলেও তার সম্মিলিত ধ্বনি হিটলারকে কখনও কখনও পুরো দু-তিন মিনিট বক্তৃতা বন্ধ করতে বাধ্য করত), এবং সমসাময়িক রাষ্ট্রনায়কের ক্লৈব্য তথা পাপাচার (করাপশন) নিয়ে তাঁর সুতীক্ষ ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ এবং সর্বোপরি তার আত্মবিশ্বাস, তাঁর আশাবাদ যে তিনিই মেসায়া (কল্কি, যিনি পুনরায় পৃথিবীতে ধর্মস্থাপনা করবেন) তিনিই ভের্সাঈ ডিকটাট (ডিকটা = ডিটেশন থেকে, অর্থাৎ ক্রীতদাসদের প্রতি যে কোনও অন্যায় পশুবলপ্রযুক্ত অলঙ্ঘ্য আদেশ, যে আদেশ পালন না করলে আদিষ্ট ব্যক্তিকে সবংশে নির্বংশ করা হবে এবং জর্মন রাষ্ট্রকে সমূলে উৎপাটিত করা হবে) ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে জর্মনিকে পুনরায় সার্বভৌম এবং ধীরে ধীরে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নেশানরূপে পরিণত করবেন।(২)
ব্যক্তিগত জীবনেও হিটলার আর কাউকে আমল দিতেন না। প্রায় প্রতিদিনই তিনি তার প্রিয় তিনটে ক্যাফের একটাতে কয়েকজন বন্ধুসহ বসতেন। কিন্তু আমরা যাকে বলি আড়া মারা, কিংবা গালগল্প করা– সে কর্মে ভিয়েনা বাঙালির চেয়েও এক কাঠি সরেস এবং যে ভিয়েনায় হিটলার প্রথম যৌবন কাটান– সেটি হত না। হিটলার ভিয়েনাতে অনেক কিছু শিখেছিলেন, শুধু এই সমাজনন্দন আচরণটি রপ্ত করতে পারেননি। সর্বক্ষণ তিনিই কথা বলতেন, একমাত্র তিনিই।
এসব মণ্ডলীতে মহিলাদের নিরঙ্কুশ প্রবেশ-নিষেধ না হলেও তাদের মাত্র দু-একজন আহ্বান পেতেন অতিশয় কালেভদ্রে। হিটলার ভিয়েনার কায়দায় তাঁদের হস্তচুম্বন করতেন (যদিও জর্মনিতে তখন সেটা বিলকুল আউট অব ডেট), তাঁদের সুখ-সুবিধার প্রতি কড়া নজর রাখতেন, সামান্য হা, হুঁ কিংবা অতি সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করতে দিতেন, কিন্তু একটা দিকে তিনি কঠোর কঠিন দৃষ্টি রাখতেন, কোনও রমণী যেন ভ্যাচর ভ্যাচর করতে আরম্ভ না করে– তা তিনি যত বুদ্ধিমতীই হোন, মাদাম পম্পাডুর, ইজাবেলা ডানকান, মাদাম দ্য স্তাল যেই হোন না কেন।
———-
১. এমনকি পরবর্তীকালে এফা ব্রাউনও না।
এস্থলে আরেকটি বিষয়ের উল্লেখ করি। ১৯৪১-এর গ্রীষ্মকালে হিটলারের সেনাদল যখন বীরবিক্রমে জয়ের পর জয় লাভ করে মস্কো পানে এগিয়ে চলেছে তখন তিনি প্রতিদিন লাঞ্চ-ডিনারের পর ঘন্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন। ১৯৪২-৪৩-এর শীতে স্তালিনগ্রাদের পরাজয়ের পর জেনারেলদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি শুধু তার মহিলা সেক্রেটারি-স্টেনোদের সঙ্গে খেতেন। (এফার হেডকোয়ার্টার্সে আসার অনুমতি ছিল না। হিটলার সময় পেলে বেৰ্ষটেশগাডেনের বাড়ি বের্গহপে তাঁর সঙ্গে মিলিত হতেন) কিন্তু ওই ১৯৪১-৪২ এক বা দেড় বছর তিনি যে-সব গালগল্প করেছেন সেটি লিখে রাখা হয়েছিল স্টেনোদের দ্বারা। প্রকাশিত হয়েছে হিটলারস্ টেবল-টক শিরোনামায়। প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার কেতাব। এ পুস্তকের বহু স্থলে পাওয়া যায় রমণীজাতি সম্বন্ধে তার অভিমত। কিন্তু ভিয়েনা বাসকালীন কিংবা ১৯২৫-২৬ পর্যন্ত তিনি যে কোনও রমণীকে কাছের থেকে চিনতে পেরেছেন, এর কোনও ইঙ্গিত নেই। অবশ্য এ-দ্বারা কোনও কিছু নিঃসন্দেহে প্রমাণ করা যায় না।
২. হিটলারের বক্তৃতা দেবার ভঙ্গি ও বিষয়বস্তু নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ লেখা যায়– লেখক তার বহু বক্তৃতা শুনেছে। এ বাবদে একটি অত্যুত্তম– সর্বোৎকৃষ্ট বললেও অত্যুক্তি হয় না— পরিচ্ছেদ লিখেছেন জর্নালিস্ট মার্কিন মাউরার তাঁর জর্মনি পুটস দি ক্লক ব্যাক পুস্তিকায়।