পুরস্কার পাঁচ হাজার ডলার
সকালে আড্ডা দিতে নীচে প্রমথর অ্যাপার্টমেন্টে যেতেই একেনবাবু একগাল হেসে বললেন, “ভালোই হল স্যার, আপনি এসেছেন। মিস্টার রাজ সিং একটু আগে ফোন করেছিলেন, উনিও আসছেন।”
“রাজ সিং, মানে দ্য গ্রেট ডিটেকটিভ রাজ সিং?” আমি একটু ঠাট্টা করেই প্রশ্নটা করলাম।”
“হ্যাঁ স্যার। ওঁর হাতে নাকি একটা কমপ্লিকেটেড কেস এসেছে। আমাদের কাছে একটু পরামর্শ চান।”
‘আমাদের’ কথাটা অবশ্য একেনবাবু ব্যবহার করলেন সম্মানার্থে বহুবচন হিসেবে। কারণ, আমি এবং প্রমথ একেনবাবুর অ্যাসেট না লায়েবিলিটি, সে সম্পর্কে আমি এখনও খুব একটা শিওর নই! তবে এই ফাঁকে রাজ সিং সম্পর্কে একটু বলে নিই। উনি হলেন ম্যানহাটানের সবেধন নীলমণি ভারতীয় প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর। সবেধন নীলমণি বলছি এই জন্য যে, যদিও একেনবাবু পেশায় একজন ডিটেকটিভ, এবং আপাতত আমাদের সঙ্গে ম্যানহাটানেই থাকেন, কিন্তু উনি হচ্ছেন কলকাতা পুলিশের লোক। ছুটি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন ক্রিমিনোলজি নিয়ে রিসার্চ করতে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ মাঝেমধ্যে ওঁর সাহায্য নিলেও, ডিটেকটিভ এজেন্সি চালাবার লাইসেন্স ওঁর নেই। ম্যানহাটানে লাইসেন্সধারী ডিটেকটিভ বলতে একমাত্র রাজ সিং-ই।
পেশা এক হলেও চেহারা ও হাবেভাবে রাজ সিং হচ্ছেন একেনবাবুর কনট্রাস্ট। একেনবাবু হলেন পাতলা টিংটিঙে, বেঁটে দি গ্রেট। শুধু চেহারা নয়, ওঁর কথাবার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ সব কিছুই অত্যন্ত আন-ইম্প্রেসিভ! আর রাজ সিং স্যুট-বুট পরা ছ’ফুট লম্বা তাগড়াই জোয়ান — ড্যাশিয়েল হামেট-এর স্যাম স্পেড টাইপ… চওড়া কাঁধ, ফুরফুরে চুল— চোখে কালো চশমা। দেখলেই মনে হয়— হ্যাঁ, এই না হলে আর নিউ ইয়র্কের গোয়েন্দা!
এই রাজ সিংয়ের আবার একেনবাবুর ওপর অগাধ ভক্তি! গোলমেলে কোনো সমস্যা এলেই উপদেশ নিতে ছুটে আসেন। আমি আর প্রমথ মাঝে মাঝে একেনবাবুকে বোঝাবার চেষ্টা করি, অ্যাডভাইস শুড নট বি ফ্রি, ফেলো কড়ি মাখো তেল! কিন্তু কে কাকে বোঝায়! খুব চাপাচাপি করলে একেনবাবু বলেন, “কী করি স্যার, ইন্ডিয়ান ব্রাদার যে!”
আসলে রাজ সিংয়ের চেহারা আর বোলচালই সব। বাইরের গ্ল্যামারটা কেটে যেতেই ধরা পড়ে যে, হি ইজ নট ওভার-বার্ডনড উইথ ব্রেন— মস্তিষ্কে ঘিলু একটু কমই আছে। তবে করে তো খাচ্ছে। আর বোকাসোকা বলেই আমার ধারণা, একেনবাবু ওঁকে খানিকটা স্নেহ করেন।
.
রাজ সিংয়ের অফিস যদিও ম্যানহাটানে, উনি থাকেন নিউ ইয়র্কের পূর্ব প্রান্তে, লং আইল্যান্ডে। তাই এলেন প্রায় এক ঘণ্টা বাদে। মুখ দেখে বুঝলাম ভারি চিন্তিত। সঙ্গে একটা ভিডিয়ো টেপ এনেছিলেন। সেটা টেবিলের ওপর রেখে ঘোষণা করলেন, “লাইফ ইজ টাফ।”
প্রমথ যথারীতি ইয়ার্কি করল। বলল, “কী সিংজি, মনে হচ্ছে আপনি একটা গ্রেট ভিডিয়ো মিস্ট্রি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন?”
রাজ সিং প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর হলেও বড়ো কোনো ব্যাপারে ওঁর ডাক পড়ে না। যেসব কেস উনি পান, সেগুলো নিতান্তই সাদামাটা। যেমন, কারোর পিছু নিয়ে সে কী করছে না করছে তার রিপোর্ট দেওয়া, ডিভোর্স কেসে স্বামী বা স্ত্রীর কোনো পরকীয়া ব্যাপার আছে কিনা খোঁজখবর নেওয়া, ইন্সিয়োরেন্সের দাবিদাওয়া নিয়ে তদন্ত করা, এইসব। প্রমথর ‘গ্রেট ভিডিয়ো মিস্ট্রি’ কথাটার মধ্যে যে একটা খোঁচা ছিল, সেটা বলাই বাহুল্য। রাজ সিং কিন্তু কথাটা গায়ে মাখলেন না। একেনবাবুকে বললেন, “মিস্টার সেন, আই অ্যাম ইন ট্রাবল, মাই রেপুটেশন ইজ অ্যাট স্টেক।” প্রমথ ফিসফিসিয়ে বাংলায় আমাকে বলল, “শুনছিস, রেপুটেশন ইজ অ্যাট স্টেক! করিস তো দারোয়ানগিরি!”
“চুপ কর, ছোটোলোক!” আমি চাপা স্বরে প্রমথকে ধমক লাগালাম।
একেনবাবু এদিকে অমায়িকভাবে বললেন, “কী যে বলেন স্যার, কে আপনার রেপুটেশন কেড়ে নেবে!
“না, মিস্টার সেন। ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস। আই গট দ্য বিগেস্ট ব্রেক অফ মাই কেরিয়ার অ্যান্ড আই অ্যাম সিমপ্লি রুয়িনিং ইট! সিটি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক আমাকে বিরাট একটা ক্রাইম সলভ করতে ডেকেছে। ইট ইজ এ টু উইক কনট্রাক্ট— আউট অফ হুইচ ওয়ান উইক ইজ অলরেডি গন, অ্যান্ড আই অ্যাম নো হোয়্যার নিয়ার দ্য সলিউশন। দ্য ওয়ার্স্ট অফ অল, প্রত্যেক দিন আমার চোখের সামনে দ্য ক্রাইম ইজ গেটিং কমিটেড।”
“দাঁড়ান স্যার, দাঁড়ান। আগে এক কাপ চা খান।” টি পট থেকে চা ঢালতে ঢালতে একেনবাবু বললেন, “তারপর একটু গুছিয়ে সহজ করে ব্যাপারটা বলুন।”
রাজ সিংয়ের কাছ থেকে যেটা উদ্ধার করা গেল, সেটা হল- গত সপ্তাহে রাজ সিং হঠাৎ একটা ফোন কল পান সিটি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ফর্টি-সেকেন্ড স্ট্রিট ব্রাঞ্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিস্টার ক্লিফোর্ড জনসনের কাছ থেকে। মিস্টার জনসন ওঁকে বলেন যে, উনি সন্দেহ করছেন ওঁর অফিসের এক টেলার কোনো একটা লোকাল ক্রাইম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এ-ব্যাপারে উনি রাজ সিংয়ের সাহায্য চান। মিস্টার জনসন এর বেশি ফোনে কিছু বলতে চাননি। ঠিক হয় পরদিন ন’টার সময় রাজ সিং মিস্টার জনসনের অফিসে গিয়ে দেখা করবেন।
পরদিন ন’টার একটু আগে যখন রাজ সিং জনসনের অফিসে গিয়ে পৌঁছোন, তখন দেখেন মিস্টার জনসন ছাড়াও ব্যাঙ্কের সিকিউরিটির হেড জ্যাক সাইপ্রাস ওঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। বাইরেটা এক বার দেখে অফিসের দরজা বন্ধ করে মিস্টার জনসন বললেন, “ব্যাপারটা একটু সেন্সিটিভ। তাই ফোনে আপনাকে বিশেষ কিছু বলতে চাইনি। জ্যাক এটা নিয়ে প্রায় এক মাস হল ইনভেস্টিগেট করছে। কিন্তু ওর ওপর সিটি সেন্ট্রালের সবগুলো ব্রাঞ্চের সিকিউরিটির দায়িত্ব। ওর পক্ষে ফুল-টাইম এখানে এসে সময় দেওয়া সম্ভব নয়। ফর দিস রিজন, আই ওয়ান্ট ইউ টু টেক আপ দ্য ইনভেস্টিগেশন।”
রাজ সিং জিজ্ঞেস করলেন, “প্রবলেমটা কী?”
“প্রবলেম হল, মাস খানেক ধরে এই অঞ্চলে মাগিং খুব বেড়ে গেছে, আমাদের কাস্টমাররা অনেকেই মাড় হচ্ছে।” উত্তরটা দিলেন জ্যাক সাইপ্রাস।
‘মাগিং’ হচ্ছে আমাদের দেশের ‘ছিনতাই’। আচমকা আক্রমণ করে বা ভয় দেখিয়ে পয়সা ও দামি জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া। যাই হোক, জ্যাক সাইপ্রাসের কথার তাৎপর্য রাজ সিং ঠিক ধরতে পারলেন না। বললেন, “নিউ ইয়র্কের সব জায়গাতেই তো মাগিং বেড়েছে।”
“দ্যাটস ট্রু। কিন্তু এখানে সমস্যাটা একটু ভিন্ন। মাগিং-এর যেসব রিপোর্ট লোকাল পুলিশ পাচ্ছে, তার অনেকগুলোই আসছে আমাদের কাস্টমারদের কাছ থেকে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বেরোবার একটু পরেই ব্যাপারটা ঘটছে।”
এটা শুনেও রাজ সিং বিস্মিত হননি, কারণ মাগাররা ব্যাঙ্কের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেই দেখতে পাবে কারা ব্যাঙ্ক থেকে বেরোচ্ছে। যারা বেরোচ্ছে, তাদের সবার কাছে টাকা থাকার সম্ভাবনা, নইলে তারা ব্যাঙ্কে আসবে কেন! কিন্তু জ্যাকের পরের কথাটা শুনে উনি বুঝতে পারলেন সমস্যাটা কোথায়
“আমরা যখন তদন্ত শুরু করলাম, “ জ্যাক সাইপ্রাস বললেন, “তখন দেখলাম শুধু তারাই মাড় হচ্ছে যারা সেদিন অনেক টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকটি ভিক্টিমই টাকা তুলেছে মিস সিলভিয়া জোনস বলে এক জন টেলারের কাছ থেকে। সমস্যা হল, আমাদের কোনো ধারণাই নেই কেন এটা ঘটছে! বেশ কয়েক দিন ধরে আই পার্সোনালি অবজার্ভড হার, কিন্তু অস্বাভাবিক কিছুই দেখিনি।”
মিস্টার জনসন বললেন, “বাট উই আর শিওর যে সামহাউ সিলভিয়া মাগারগুলোকে জানাচ্ছে কে মোটা রকমের ক্যাশ তুলেছে। দ্যাটস দ্য ওনলি এক্সপ্ল্যানেশন। এখন আপনাকে মিস্টার সিং খুঁজে বের করতে হবে যে কী করে সিলভিয়া ওদের ইনফর্মেশনগুলো দিচ্ছে। হাউ ইজ শি কমিউনিকেটিং উইথ দেম? বাট ইউ মাস্ট হারি। কারণ একবার যদি খবরের কাগজের লোকেরা জানতে পারে যে আমাদের কাস্টমাররা মাগারদের টার্গেট, তা হলে আমাদের বিজনেসের কী অবস্থা হবে সেটা তো বুঝতেই পারছেন।”
“তা পারছি,” রাজ সিং উত্তর দিলেন, “কিন্তু কাজটা নেওয়ার আগে আমার একটা প্রশ্ন আছে।”
“কী প্রশ্ন?”
“নিউ ইয়র্কে এত প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর থাকা সত্ত্বেও আপনি আমাকে সিলেক্ট করলেন কেন?”
“ভেরি সিম্পল। যেহেতু আপনি একজন ইন্ডিয়ান, সিলভিয়া বা ওর গুন্ডা বন্ধুরা কল্পনাও করবে না যে আপনি ডিটেকটিভ! বিকজ ইট ইজ র্যাদার অ্যান আন-ইউজুয়াল প্রোফেশন ফর অ্যান ইন্ডিয়ান হিয়ার। দ্যাট আই বিলিভ উইল মেক ইয়োর জব সিম্পলার। তাই না?”
“মে বি,” রাজ সিং বললেন, “তবে আমার চার্জ কিন্তু দিনে পাঁচশো ডলার, প্লাস এক্সপেন্স। আর কাজটা করতে পুরো দু-সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।”
রাজ সিং নর্মালি এত চার্জ করেন না। কিন্তু শাঁসালো মক্কেল, ট্রাই করতে দোষ কি!
“দ্যাটস ফাইন উইথ আস।” ক্লিফোর্ড জনসন উত্তর দিলেন।
এই হল মোটামুটি ঘটনা।
রাজ সিং একেনবাবুকে বললেন, “এবার বুঝতে পারছেন তো আমার সমস্যাটা?”
“হ্যাঁ স্যার, মনে হচ্ছে পারছি। অর্থাৎ গত পাঁচ দিনে ইউ হ্যাভ ফাউন্ড নো ক্লু।”
“এক্স্যাক্টলি। আমি সিলভিয়াকে খুব ক্লোজলি ওয়াচ করেছি। ইন ফ্যাক্ট, যদি কখনো অন্যমনস্ক হয়ে কিছু মিস করে থাকি সেই জন্য জ্যাক সাইপ্রাসের কাছ থেকে ব্যাঙ্কের সিকিউরিটি ক্যামেরায় তোলা ভিডিয়োগুলোও স্টাডি করেছি।”
“সেটা কী স্যার?” একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
“কীসের কথা বলছেন, সিকিউরিটি ভিডিয়ো?”
“হ্যাঁ স্যার।”
“আপনি জানেন না বুঝি!” রাজ সিং একটু অবাক হলেন। “নিউ ইয়র্কে সব ব্যাঙ্কে ভিডিয়ো ক্যামেরা লাগানো থাকে। যারা টেলারদের কাছে গিয়ে টাকা নিচ্ছে, তাদের সবার ছবি ক্যামেরাতে ওঠে। এই জন্যেই ব্যাঙ্ক ডাকাতি আজকাল অনেক কমে গেছে।”
আপঙ্গত, যে সময়ের কথা লিখছি সেটা ২০০০ সাল- আমাদের দেশে তখনও ভিডিয়ো ক্যামরা তেমনভাবে চালু হয়নি।)
“অ্যামেজিং কান্ট্রি স্যার, ট্রলি অ্যামেজিং!” একেনবাবু মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন।
“এনিওয়ে,” রাজ সিং পুরোনো প্রসঙ্গে ফিরে এলেন। “আই জাস্ট ডোন্ট নো হোয়াট টু ডু নেক্সট।”
প্রমথ বলল, “এটাই বুঝি আপনার সেই সিকিউরিটি ভিডিয়ো?”
“রাইট, দেখবেন?” রাজ সিং একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন।
“কী জানি স্যার,” একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “ভিডিয়ো দেখে কি আর মিস্ট্রি সলভ করতে পারব!”
“তা বলে দেখতে ক্ষতি কী,” বলে প্রমথ টেবিল থেকে টেপটা তুলে ভিডিয়ো প্লেয়ারে ঢোকাল।
ছবির কোয়ালিটি বিশেষ ভালো নয়। তবে মোটামুটি চেহারাগুলো বোঝা যাচ্ছে। রাজ সিং এক্সপ্লেন করে বললেন, “অরিজিনালি অন্য ফরম্যাটে তোলা। ভিএইচএস-এ কনভার্ট করতে গিয়ে ডেফিনেশন একটু লুজ করেছে।”
একেনবাবু আবার এসব টেকনিক্যাল টার্মগুলো বোঝেন না। বললেন, “হোক না ডিফরমেশন, তবু দিব্যি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সিচুয়েশনটা আমায় একটু বুঝিয়ে দিন স্যার।”
“শিওরলি,” রাজ সিং বললেন। “টেলারদের দেখতে পাচ্ছেন তো, ওই যে চার জন, যারা কাউন্টারের উলটো দিকে পাশাপাশি বসে আছে?”
“হ্যাঁ স্যার, দেখতে পাচ্ছি।”
“বাঁ-দিক থেকে কাউন্ট করে থার্ড পার্সন হল সিলভিয়া জোনস।”
“আই সি স্যার,” টিভি স্ক্রিনের দিকে খুব মন দিয়ে তাকিয়ে একেনবাবু বললেন, “যার চুলগুলো লালমতো?”
“ইয়েস।”
“জায়গাটা এত ফাঁকা কেন স্যার, প্রত্যেক টেলারের সামনে মাত্র এক জন করে কাস্টমার?”
“ফাঁকা নয়, প্রচণ্ডই ভিড়, কিন্তু ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের জন্য ঠিক বোঝা যাচ্ছে না,” রাজ সিং উত্তর দিলেন। “নর্মালি কাস্টমাররা কাউন্টার থেকে একটু দূরে লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে। টেলারদের সঙ্গে একজন কাস্টমারের কাজ শেষ হলে লাইনের প্রথমে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে টেলারের কাছে যায়। ফলে টেলারদের সামনে ধাক্কাধাক্কি হয় না। কাস্টমারদের ওই লাইনটা ক্যামেরার অ্যাঙ্গেলের বাইরে পড়ে গেছে।”
“আপনি কোথায় ছিলেন স্যার?”
“কাস্টমারদের লাইনের অন্য সাইডে একটা পাটাতনের মতো আছে। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড ও কয়েক জন কর্মচারী বসে। প্রথম দু-দিন সেখানে একটা চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম। শেষ তিন দিন মিস জোনসের ঠিক পেছনে বুক কিপারদের একটা টেবিল আছে, সেখানে ছিলাম।”
“তার মানে স্যার, আপনি চার জন টেলারকেই ভালো করে দেখতে পারছিলেন।”
“অ্যাবসোলিউটলি! শুধু দেখা নয়, সবার কথাও শুনতে পারছিলাম।”
একেনবাবু বোধহয় আর একটা প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু প্রমথ বলে উঠল, “আরে, ওটা কী হল?”
আমিও ব্যাপারটা লক্ষ করছিলাম। একজন কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সিলভিয়া হঠাৎ কানে হাত দিলেন।
রাজ সিং বললেন, “কানে হাত দেওয়াটা তো? ওটা ওঁর মুদ্রাদোষ। আমারও প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু প্রতিদিন কত বার যে উনি কানে হাত দিয়ে দুল ঠিক করেন, তার ইয়ত্তা নেই।”
“দাঁড়ান, দাঁড়ান, অত সহজে ব্যাপারটা নাকচ করবেন না,” প্রমথ বলল। “দেয়ার মে বি সাম সিক্রেট কোড। ধরুন, গুন্ডাদের সঙ্গে ওঁর একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে যে প্রত্যেক বার নয়, শুধু তিন বারের বার কানে হাত দেওয়াই হল আসল সিগন্যাল। সেক্ষেত্রে যেই উনি থার্ড টাইম কানে হাত দেবেন, গুন্ডারা সঙ্গে সঙ্গে সেই কাস্টমারকে ফলো করবে।”
রাজ সিং এ নিয়ে বোধহয় খুব একটা চিন্তা করেননি। তাই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন, “না, না, জ্যাক সাইপ্রাসও বলেছিলেন যে দুল ঠিক করার সঙ্গে মাগিং ভিকটিমের কোনো সম্পর্ক নেই।”
একেনবাবু বললেন, “স্যার, মিস জোনস কি শুধু বাঁ-হাত দিয়েই কানের দুল ঠিক করেন, না মাঝে মাঝে ডান হাতও ব্যবহার করেন?”
রাজ সিং কয়েক মুহূর্ত ভেবে বললেন, “ইয়েস, দুটো হাতই ব্যবহার করতে দেখেছি।”
“দেন দেয়ার আর মোর কোডিং পসিবিলিটিস,” প্রমথ বলল। “যেমন ধরুন, যে মুহূর্তে উনি হাত চেঞ্জ করবেন, সেটাই হবে ইন্ডিকেশন। ফর এগজাম্পল, উনি বার বার বাঁ-হাত দিয়ে দুল ঠিক করছেন। এক বার হঠাৎ ডান হাত দিয়ে করলেন, সেটাই হবে গুন্ডাদের ক্লু।”
আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে এই পসিবিলিটিগুলো রাজ সিংয়ের মাথায় খেলেনি। কিন্তু নিজের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে বলে সেগুলো ঠিক স্বীকার করে নিতে পারছেন না! হাজার হোক, প্রমথর আর কীই-বা ক্রেডেনশিয়াল! ওদিকে উনি হচ্ছেন এক জন লাইসেন্সধারী ইনভেস্টিগেটর!
এমন সময় ভিডিয়োতে মোটাসোটা এক কাস্টমার সিলভিয়া জোনসের কাছে এসে দাঁড়াতেই রাজ সিং বলে উঠলেন, “এই যে লোকটাকে দেখছেন মিস্টার সেন, এ হচ্ছে একজন মাগিং ভিক্টিম।”
শোনামাত্র আমরা সবাই নিঃশব্দে মিস জোনসের মুভমেন্ট স্টাডি করতে শুরু করলাম। লেনদেন শেষ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই কাস্টমার চলে গেলেন। দেয়ার ইজ নাথিং, অ্যাবসোলিউটলি নাথিং, যেটা আমার মনে হল সাসপিশাস! সিলভিয়া কানের দুল ঠিক করলেন না, কোনো স্পেশাল মুভ লক্ষ করলাম না, এভরিথিং ইজ কমপ্লিটলি নর্মাল!
“দেয়ার গোজ ইয়োর কোডিং থিয়োরি,” আমি প্রমথকে খোঁচা দিলাম।
“নট সো ফাস্ট,” প্রমথ বলল, “হয়তো কানে হাত না দেওয়াটাই হল আসল সিগন্যাল।”
কিন্তু সেটাও সত্যি নয়। কারণ, ঠিক পরের জনের বেলাতেও সিলভিয়া ওয়াজ অ্যাজ নর্মাল অ্যাজ বিফোর!
“নাউ মাই থিয়োরি ইজ গন,” প্রমথ স্বীকার করল। “আনলেস দ্য কোড ইজ ভেরি কমপ্লিকেটেড।”
“আমি তো আগেই বলেছিলাম,” রাজ সিং বললেন।
“মুশকিল হল স্যার, ভিডিয়োটা টকি নয়, মানে নো সাউন্ড,” একেনবাবু বললেন।
“দ্যাটস ট্রু। কিন্তু বিশ্বাস করুন মিস্টার সেন, আই ডিড নট ফাইন্ড এনিথিং ইন হার ভয়েস হুইচ ইজ সাসপিশাস।”
“উনি কি স্যার নর্মাল ভাবেই সবার সঙ্গে কথা বলছিলেন?”
“ইয়েস। ইন ফ্যাক্ট শি সাউন্ডেড মোর নর্মাল দ্যান আদার্স।”
একেনবাবু মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললেন, “মোর নর্মাল মানে কী স্যার?”
“হোয়াট আই মেন্ট, কাস্টমার সামনে এসে দাঁড়ালে অন্যান্য টেলারের মতো উনিও বলছিলেন, ‘মে আই হেল্প ইউ’, এবং কাজ শেষ হওয়ার পর, ‘থ্যাংক ইউ অ্যান্ড হ্যাভ এ নাইস ডে।’ কিন্তু সেটা মোটেই আর সবার মতো যান্ত্রিকভাবে নয়। ওঁর কথার মধ্যে একটা ফ্রেন্ডলিনেস ছিল। এমনকী কাজের ফাঁকে ফাঁকে উনি হাসিমুখে কাস্টমারদের সঙ্গে গল্পও করছিলেন।”
“একটু ভাবুন স্যার, উনি কি কথার ফাঁকে এমন কিছু কাউকে বলেছিলেন যেটা অন্য কাউকে বলেননি? অনেকসময় যেগুলো আমাদের খেয়ালও হয় না স্যার, যেমন, সবাইকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে শুধু একজনকে ‘থ্যাংক ইউ স্যার’ বলা বা ওই জাতীয় কিছু?”
“নো। আই অ্যাম শিওর। আমি খুব মন দিয়ে ওঁর প্রত্যেকটা কথা শুনেছি। দেয়ার ইউ সি, অ্যানাদার ওয়ান!” রাজ সিং ভিডিয়ো দেখতে দেখতে বলে উঠলেন, “আর একজন মাগিং ভিকটিম!”
নাঃ, রাজ সিং অ্যাবসোলিউটলি রাইট, এটাতেও কোনো ক্লু নেই! আর তখনই আমার মাথায় সম্ভাবনাটা ঝিলিক দিল, হোয়াট অ্যাবাউট এ ট্রান্সমিটার? মেয়েটা যদি একটা সিম্পল রেডিয়ো ট্রান্সমিটার কোমরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে, আর তাতে একটা পুশ বাটন থাকে যেটা অতি সহজে টাকা গুনতে গুনতে কনুই দিয়ে প্রেস করা যায়! দ্যাটস অল হোয়াট ইজ নিডেড। গুন্ডাদের একজনের কাছে নিশ্চয়ই একটা হ্যান্ড- হেল্ড রিসিভার আছে! মেয়েটা পুশ বাটন টিপলেই রিসিভারের ইন্ডিকেটর লাইট ব্লিংক করবে আর সঙ্গে সঙ্গে গুন্ডাটা দেখতে পাবে কে বড়ো অঙ্কের ক্যাশ উইথড্র করছে!
আমার থিয়োরিটা বলতেই রাজ সিং বললেন, “সেটাই জ্যাক সাইপ্রাস প্রথমে ভেবেছিলেন। তাই উনি একটা ছুতো করে বেরোবার আগে টেলারদের একটা সারপ্রাইজ সিকিউরিটি সার্চ করেন। কিন্তু কারও কাছে কিছু পাওয়া যায়নি!”
প্রমথ আমায় খোঁচা দিল, “দেয়ার গোজ ইয়োর থিয়োরি, ডাউন দ্য ড্রেন! “মিস জোনস কতদিন হল কাজ করছেন স্যার?” একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
“মাস তিনেক। চার জনের মধ্যে মিস জোনস আর এক জন হলেন নতুন। বাকি দু-জন দু-বছর ধরে কাজ করছেন।”
“হাউ অ্যাবাউট দ্য আদার নিউ ওয়ান স্যার?”
“আই অ্যাম নট শিওর,” রাজ সিং উত্তর দিলেন।
একেনবাবু দেখলাম ঘন ঘন পা নাচাচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কী, কিছু বুঝলেন?”
“আই হ্যাভ এ সাসপিশান স্যার।”
“হোয়াট ইজ দ্যাট?” রাজ সিং খুব আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করলেন।
“আই সাসপেক্ট দ্যাট উই আর লুকিং অ্যাট দ্য রং পার্সন।”
“তার মানে?” আমি আর রাজ সিং প্রায় একসঙ্গে প্রশ্ন করলাম।
“ধরুন স্যার, একজন নয়, এই কনস্পিরেসিতে দু-জন টেলার জড়িত। এক জন হচ্ছেন মিস জোনস, আর দ্বিতীয় জন হলেন মিস জোনসের পাশে যে দু-জন বসেছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন। যখনই কেউ এসে অনেক টাকা তুলছে, মিস জোনস ওঁর পার্টনারকে হয় কাগজ পাস করে, নয় পায়ে একটা খোঁচা দিয়ে সেটা জানাচ্ছেন। দ্যাটস নট ডিফিকাল্ট, কারণ সবাই একেবারে পাশাপাশি বসে আছেন। কিন্তু ভেবে দেখুন স্যার, কী দারুণ স্ট্র্যাটেজি! আমরা সন্দেহবশত শুধু মিস জোনসকেই দেখছি। আর সেই ফাঁকে আর এক জন নিশ্চিন্ত মনে সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন।”
“মাই গড!” রাজ সিং ক্ষুব্ধ হয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে বললেন, “হোয়াট এ ক্লেভার প্ল্যান! তার মানে, উই শুড লুক অ্যাট আদার্স ফর শোয়িং সিগন্যালস!”
“আই থিংক সো, স্যার।”
“এক্সেলেন্ট, আই অ্যাম গোয়িং টু ডু দ্যাট।” রাজ সিং দারুণ খুশি হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। “আমি জানতাম আপনার কাছে এলে একটা হদিস হয়ে যাবে! ভালোকথা মিস্টার সেন, আপনাদের সকলকে একদিন লাঞ্চে নিয়ে যেতে চাই। ইউ আর অলওয়েজ সো কাইন্ড অ্যান্ড হেল্পফুল! “
একেনবাবু অ্যাজ ইউজুয়াল, “আরে, ছি-ছি না,” বলতে যাচ্ছিলেন। প্রমথ বলল, “ফাইন, হাউ অ্যাবাউট দিস মানডে।”
“বেশ তো, আসুন না। ফর্টি-সেকেন্ড স্ট্রিটে কয়েকটা ভালো খাবার জায়গা আছে, তার একটাতে যাওয়া যাবে ‘খন।” এই বলে রাজ সিং বিদায় নিলেন। চলে যাওয়ার পর খেয়াল হল, উনি ভিডিয়োটা ফেলে গেছেন। যাক, সোমবার নিয়ে গেলেই চলবে!
.
সোমবার দিন সকালে আমার ক্লাস ছিল। ক্লাসের পর অনেক সময়েই ছাত্রদের অনেক প্রশ্ন থাকে। সেটা শেষ করে সময়মতো আমি লাঞ্চে পৌঁছোতে পারব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। তাই স্কুলে যাওয়ার আগে একেনবাবুকে বলে গেলাম, আমার জন্য সাড়ে এগারোটা থেকে এগারোটা পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত পোর্ট-অথরিটি টার্মিনালের সামনে অপেক্ষা করতে। তার মধ্যে যদি না যাই তা হলে যেন আমাকে ছাড়াই ওঁরা লাঞ্চে যান। একেনবাবু অবশ্য একটু ঘ্যানঘ্যান করলেন, কিন্তু শেষমেশ মেনে নিলেন।
আগে থেকে ব্যাপারটা ঠিক করে রেখে ভালোই হয়েছিল, কারণ সেদিন পিলপিল করে ছেলেমেয়েগুলো ঘরে এল। সকলের হাজার গণ্ডা প্রশ্ন। ফ্রি লাঞ্চ তো মিস করলামই, সব কিছু চুকোতে চুকোতে প্রায় একটা। আমি বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরে প্রমথের কাছে শুনলাম রাজ সিং নাকি ভীষণ আপসেট, কারণ একেনবাবুর থিয়োরি টোটালি ফেল মেরেছে! পরে অবশ্য যোগ করল, রাজ সিংয়ের যা বিদ্যেবুদ্ধি ও অবজারভেশন পাওয়ার- সেটা সত্যি নাও হতে পারে। যাই হোক, একেনবাবু আসেননি। রাজ সিংকে অত্যন্ত বিচলিত ও আশাহত দেখে মরাল সাপোর্ট দিতে সিটি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে গেছেন।
.
একেনবাবু সন্ধে বেলা যখন ফিরলেন, তখন আমি আর প্রমথ নিউজ শুনতে বসেছি। সিকিউরিটি ভিডিয়োটা টেবিল থেকে তুলে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “স্যার, আপনার ভিডিয়ো প্লেয়ারটা একটু চালাব?”
“শিওর। কিন্তু কী ব্যাপার, নিউজ শুনবেন না?”
“শুনব স্যার, একটা জিনিস চেক করে এক্ষুনি আসছি,” বলে ওপরের তলায় আমার অ্যাপার্টমেন্টে চলে গেলেন। যখন নেমে এলেন, তখন লোকাল-ন্যাশনাল দুটো নিউজই শেষ, মানে প্রায় এক ঘণ্টা পরে!
প্রমথ জিজ্ঞেস করল, “কী মশাই, কী করছিলেন এতক্ষণ ধরে!”
“কিছু না স্যার, আসলে মিস্টার সিং এত ঝামেলায় পড়েছেন! তাই ভিডিয়োটা আবার একটু দেখছিলাম স্যার, যদি কোনো ক্লু বেরিয়ে যায়!”
“ধন্য আপনার বন্ধুপ্রীতি!” প্রমথ ধমকের সুরে বলল, “জানেন, আপনার এই রাজ সিং গত সপ্তাহে কম সে কম দু-হাজার ডলার পকেটে পুরেছে! ফর গডস সেক, লেট হিম আর্ন হিজ ওন মানি।”
“তা তো বটেই স্যার,” একেনবাবু অপরাধী মুখ করে বললেন।
আমি প্রমথকে বললাম, “কেন ওঁকে জ্বালাচ্ছিস! উনি হচ্ছেন কর্মযোগী! নিজের কর্ম উনি করে যাবেন নিরাসক্তভাবে, অর্থপ্রাপ্তি হোক বা না হোক। কী বলুন একেনবাবু, ঠিক কিনা?”
“কী যে বলেন স্যার। সামান্য একটু সাহায্য…”
“যাক ওসব কথা,” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মিস্ট্রি সলভ হয়েছে? শুনলাম আপনার থিয়োরিও নাকি ফেল?”
“হ্যাঁ স্যার, কালকেরটা ফেল তবে এবার আর একটা থিয়োরি ট্রাই করছি।”
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই রাজ সিংয়ের ফোন। একেনবাবুর খোঁজ করছেন। একেনবাবু ফোন ধরবার জন্য উঠতেই খেয়াল করলাম যে ওঁর চেয়ারে একটা কাগজ, আর তাতে ২০, ১০০, ৫৫, ১২০, ৪০, ১১০, ৫৩, ১৩০ ইত্যাদি অনেক সংখ্যা লেখা। তার মধ্যে আবার ৫৫ আর ৫৩-র চারদিকে একটা করে গোল আঁকা। কী হাবিজাবি লিখেছেন কে জানে! একেনবাবু ওদিকে ফোন তুলে বললেন, “আই গট দ্য টাইম স্যার ফ্রম ফিফটি সেকেন্ডস টু ওয়ান মিনিট। তবে সাউন্ড নেই বলে কিছুটা স্যার গেস ওয়ার্ক করেছি।”
রাজ সিং কী বললেন শুনতে পেলাম না, কিন্তু একেনবাবু উত্তরে বললেন, “দ্যাটস ইট স্যার, উই গট ইট! সিম্পল, বাট এ ক্লেভার প্ল্যান।”
রাজ সিং বোধহয় আবার কিছু একটা বললেন। উত্তরে একেনবাবু বললেন, “ইউ শুভ থ্যাংক, বাপিবাবু। উনি কথাটা না তুললে আমার ব্যাপারটা স্ট্রাইক করত না। ঠিক আছে স্যার, কাল বিকেলে তা হলে দেখা হবে। বাই স্যার।”
একেনবাবু ফোন নামিয়ে রাখতেই প্রমথ প্রশ্ন করল, “কী ব্যাপার বলুন তো? বাপিটা এত থ্যাংক ইউ পাচ্ছে কেন, হোয়াটস গোয়িং অন?”
“আমাদের থিয়োরিটা কনফার্মড হয়ে গেল স্যার!”
“ওয়েট এ মিনিট, আমাদের থিয়োরি বলতে কোনটা? কালকের থিয়োরিগুলো তো সব ফেল মেরেছে বললেন!” আমি বলে উঠলাম।
“বলছি স্যার, বলছি, একটু সবুর করুন। আপনিও একেবারে প্রমথবাবুর মতো অবুঝ হয়ে পড়ছেন।”
“খামোখা আমার নিন্দা করবেন না!” প্রমথ ধমক দিল।
“তুই চুপ কর তো! বলুন একেনবাবু, কী বলছিলেন।”
“মনে আছে স্যার, সকালে আপনি বলেছিলেন সাড়ে এগারোটা থেকে এগারোটা পঁয়ত্রিশের মধ্যে যদি আপনি না আসেন, তা হলে আমরা যেন চলে যাই।”
“তা বলেছিলাম।”
“সেটা শোনামাত্রই আমার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল। এখানে কোডিং হল টাইম স্যার, টাইম হচ্ছে সিম্পলেস্ট ওয়ে টু পাস ইনফর্মেশন। ওই যে আপনি বললেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে না এলে আমি আর আসব না। ইট ইজ এ পারফেক্ট মোড অফ কমিউনিকেশন, বিকজ উই অল হ্যাভ আওয়ার ওয়াচ। বুঝতে পারছেন তো স্যার?”
সত্যি কথা বলতে কী, এর সঙ্গে মাগিং-এর কী সম্পর্ক আমার কাছে তখনও ক্লিয়ার নয়।
একেনবাবু বলে চললেন, “এবার খেয়াল করুন স্যার, কাস্টমার এলে মিস জোনস বলছেন, মে আই হেল্প ইউ। তারপর কাজকর্ম শেষ হয়ে যাওয়ার পর বলছেন, থ্যাংক ইউ অ্যান্ড হ্যাভ এ নাইস ডে। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মে আই হেল্প ইউ’আর ‘থ্যাংক ইউ’ এর মধ্যে যে সময়টা, কুড দ্যাট বি ইউজড টু সেন্ড এ মেসেজ? আই ফাউন্ড দ্যাটস হোয়াট প্রিসাইসলি ওয়াজ ডান। টাইম গ্যাপটা যদি পঞ্চাশ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যে হয়, তা হলে কাস্টমার অনেক টাকা তুলেছে। সেটা না হলে জাস্ট ইগনোর দ্য কাস্টমার। বুঝতে পারছেন স্যার?”
“ও বুঝুক না বুঝুক, আমি বুঝেছি,” প্রমথ বলল।
“জলবৎ তরলম!” কাগজের নম্বরগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি
কি সেটাই ভিডিয়ো থেকে চেক করছিলেন নাকি?”
“ইয়েস স্যার, যে দুটো কেস মিস্টার সিং বলেছিলেন, সে দুটোই এক মিনিটের খুব কাছাকাছি। তবে শব্দ ছিল না বলে এক্স্যাক্ট টাইমটা বের করা অসম্ভব। কিন্তু অন্য কাস্টমারদের ক্ষেত্রে সময়গুলো বেশি বা কম। মিস্টার সিং বলেছিলেন না যে মিস জোনস কাস্টমারদের সঙ্গে মাঝে মাঝে গল্পগুজব করতেন? আমার ধারণা স্যার গল্পগুজব করেই উনি টাইমিংগুলো ঠিকঠাক রাখতেন। এনিওয়ে স্যার, আজকের মাগিং রিপোর্ট থেকে মিস্টার সিংও থিয়োরিটা কনফার্ম করলেন।”
পরদিন রাজ সিং এসে পুরো রিপোর্ট দিলেন। ছদ্মবেশী পুলিশ রাজ সিংয়ের কাছ থেকে ক্লু নিয়ে প্রসপেকটিভ মাগিং ভিকটিমদের ফলো করে দু-জন মাগারকে গ্রেফতার করেছে। তাদের স্বীকারোক্তি থেকে মিস জোনসকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ সিং আমাদের না বললেও পরে শুনেছি, ম্যানহাটানের মাগিং মিস্ট্রি সলভ করার জন্যে ক্লিফোর্ড জনসন নাকি রাজ সিংকে ওঁর প্রাপ্য টাকা ছাড়াও আরও পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার হিসেবে দিয়েছেন। একেনবাবু অবশ্য তার কানাকড়িও পাননি।