1 of 2

পুনার সেই হোটেলে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

পুনার সেই হোটেলে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

বোম্বে থেকে সকালে ট্রেনে চাপলে একখানা সুন্দর পাহাড়ি পথ বেয়ে চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পশ্চিমঘাটের ন্যাড়া পর্বতমালা দেখতে দেখতে (পুনা মারাঠি উচ্চারণে পুনে) পৌঁছে যাওয়া যায় দুপুরের মধ্যেই। মহারাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলতে পুনা। বোম্বাই যেমন ব্যবসা—বাণিজ্যের শহর, পুনা তেমনি সাহিত্য—শিল্প—সংস্কৃতির পীঠস্থান।

দুপুরবেলা। নিজের লটবহর নিজেই বহন করা আমার অভ্যাস। তাই ট্রেন থেকে নেমে ক্ষুধা—তৃষ্ণা এবং বোঝার ভারে কাতর অবস্থায় প্রথমেই যেটা চাই সেটা হল কাছাকাছি একটা হোটেল।

বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে হোটেলের জন্য অনেকবার বিপাকে পড়তে হয়েছে। এমন শহর অনেক আছে যেখানে স্টেশনের কাছে কোনো ভদ্রগোছের হোটেলই নেই, হয়তো বা স্টেশন থেকে শহরের দূরত্ব পাঁচ—ছ—মাইল। অচেনা বিদেশ বিভুঁয়ে গিয়ে যেমন তেমন হোটেলে উঠতে ভরসা হয় না। একবার কটকে এবং একবার মাদ্রাজে এরকম হোটেলে উঠে বিপাকে পড়তে হয়েছিল।

তবে হোটেলের দিক থেকে পুনা আদর্শ জায়গা। স্টেশন চত্বরের বাইরেই উলটোদিকে হোটেলের সারি। পথশ্রমে ক্লান্ত আমি এত কাছে হোটেল পেয়ে ভারী খুশি।

প্রথমে যে হোটেলটা সবচেয়ে ঝকমকে দেখলাম সেটাতেই হানা দিলাম। বিশাল পাঁচতলা হোটেল। একটা ঘর পাওয়া যাবেই।

কিন্তু ম্যানেজার বিরস মুখে মাথা নেড়ে বলল, একটা ঘরও খালি নেই।

অনেক ধরা করা করলাম তাকে, অবশেষে সে বলল, তোমাকে বড়োজোর একরাত্রি থাকতে দিতে পারি, কাল সকালেই ছেড়ে দিতে হবে ঘর।

আমি এ প্রস্তাবে রাজি হলাম না। কারণ যে কাজে এসেছি তাতে ক—দিন থাকতে হবে তা বলা মুশকিল। সুতরাং বেরিয়ে এসে পাশের আর একটা হোটেলে হানা দিলাম। সেখানেও ঘর নেই। সব ভরতি।

তৃতীয় হোটেলেও জায়গা না পেয়ে ভারী দমে গেলাম। এদিকে তেষ্টা বাড়ছে, খিদে পাচ্ছে, বিরক্তি বাড়ছে, গরমে ঘামে চিটচিট করছে শরীর। ক্লান্তও বটে। বিপন্ন দেখে দালালরা পিছনে লেগেছে। কিন্তু দালালদের দ্বারা আমি কখনো চালিত হই না, তারা বেশিরভাগই এমন সব হোটেলে নিয়ে তোলে যার সুনাম নেই।

সুতরাং নিজেই খুঁজতে খুঁজতে এগোতে লাগলাম।

একটু দূরে এসেই বাগান—ঘেরা চমৎকার একটা দোতলা পুরোনো বাড়ি নজরে পড়ল। দোতলার ওপরে ছাদ নয়, লাল টিনের ছাউনি। ব্রিটিশ আমলের বাংলো প্যাটার্ন বাড়ি। হোটেলটার নাম—না, আসল নাম বলব না, মানহানির মামলা হয়ে যেতে পারে। ধরা যাক হোটেলটার নাম এ বি সি।

ম্যানেজারের চেহারাটা দারুণ ভালো। সাহেবদের মতো ফর্সা, মোটা গোঁফ, পুরুষালি আকৃতি। ঘর চাইতেই বলল, ঘর আছে, তবে ফাইভ সিটেড রুম। তোমাকে ও ঘরে একাই থাকতে হবে, কারণ আর কোনো বোর্ডার নেই, পঞ্চাশ টাকা করে চাই।

আমি তৎক্ষণাৎ রাজি। জিনিসপত্রের বোঝা নামিয়ে স্নানটি করে কিছু মুখে দেওয়াই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।

চাবি দিয়ে দোতলার একটি ঘর খুলে আমার জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়ে বেয়ারা চলে গেল।

ঘরটা বেশ পছন্দ হল আমার। খুব উঁচুতে সিলিং। পুরোনো আমালের পাঁচটা সিঙ্গল খাট, বিছানা পাতা, আলমারি টেবিল চেয়ার সবই পুরোনো আমলের। ড্রেসিং টেবল আলনা সব আছে।

বেয়ারা চলে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে জুতো মোজা ছাড়ছি। হঠাৎ আলমারির একটা পাল্লা কোঁ—ওঁ—ওঁ শব্দ করে ধীরে ধীরে খুলে গেল। উঠে গিয়ে পাল্লাটা আবার চেপে দিয়ে জামাকাপড় বদলে নিলাম, স্নান করেই বেরোতে হবে কিছু খেয়ে নিতে, তারপর পরদিনে অনেক কাজ।

ফ্যানটা চালিয়ে যখন গায়ের ঘাম শুকিয়ে নিচ্ছি তখন ফেল আলমারির পাল্লাটা কোঁ—ওঁ—ওঁ করে খুলে গেল, আপনা থেকেই। কিছু মনে করার নেই। পুরোনো কাঠের আলমারি, কবজা হয়তো ঢিলে হয়ে গেছে। আবার পাল্লাটা ভেজিয়ে স্নান করতে চলে গেলাম।

বাথরুমটায় সেই ব্রিটিশ আমলের কমোড, বাথটাব, বেসিন সবই পুরোনো দাগি ফাটা বা স্বাস্থ্য দেখলেই বোঝা যায় এই হোটেলটা এক সময়ে বেশ অভিজাত ছিল, এখন নাভিশ্বাস ছাড়ছে।

স্নান সেরে এসে যখন আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছি তখন আলমারির পাল্লা তৃতীয়বার কোঁ—ওঁ—ওঁ আর্তনাদ করে খুলল। একটু বিরক্তি বোধ করলাম। আলমারির মধ্যে অনেক পুরোনো খবরের কাগজ পড়ে আছে। তা থেকেই খানিকটা ছিঁড়ে ভাঁজ করে পাল্লাটা নীচে গোঁজা দিয়ে খুব টাইট করে পাল্লাটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর দরজায় তালা দিয়ে বেরোলাম দুপুরের খাওয়া সেরে আসতে।

কাছাকাছি একটা হোটেলে খেয়ে ফিরে আসতে ঘণ্টাখানেকের বেশি লাগেনি। ইচ্ছে ছিল, একটু বিশ্রাম নিয়ে কাজে বেরোব, ঘরে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে একটা বিছানায় গা ঢেলে সদ্য চোখ বুজেছি। পথশ্রমের ক্লান্তি এবং ভরা পেটের শান্তিতে চোখ জুড়ে এল সঙ্গে সঙ্গে।

কোঁ—ওঁ—ওঁ

একটু চমকে চোখ চাইলাম। অবাক কাণ্ড। খুব শক্ত করে গোঁজা দেওয়া পাল্লাটা আবার খুলে গেছে। অনেকক্ষণ আলমারিটার দিকে চেয়ে রইলাম। ঘরে যখন আমি প্রথম ঢুকেছিলাম তখন পাল্লাটা বন্ধ ছিল। আমি ঘরে ঢুকবার পর থেকেই বারবার খুলে যাচ্ছিল। এখন শক্ত করে গোঁজা দেওয়া সত্ত্বেও সেই কাণ্ড। ব্যাপারটা কী?

ধীরে ধীরে উঠলাম। আলমারির পাল্লায় আরও পুরু করে গোঁজা দিয়ে ভীষণ এঁটে বন্ধ করে দিলাম।

খটখট করে একটা শব্দ হল বাথরুমের দরজায়, যেন কেউ ভিতরে আটকে পড়েছে। টোকা দিয়ে জানাচ্ছে, খুলে দাও।

নিশ্চয়ই মনেরই ভুল। গিয়ে ফের শুয়ে পড়লাম।

কিন্তু বাথরুমের দরজায় থেকে থেকে শব্দটা হতে থাকল। ধীরে ধীরে ঠোকার শব্দ জোরাল হয়ে উঠতে লাগল—খটখট—খটখট—দুম—দুম।

উঠতে হল। গিয়ে বাথরুমের দরজাটা হাট করে খুলে দিলাম। ভিতরে কেউ নেই, থাকার কথাও নয়।

বাথরুম থেকে মুখ ফেরাতেই পিছনে ফের আলমারির পাল্লাটা খুব ধীরে ধীরে খুলে যেতে লাগল।

কিছুক্ষণ হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। অলৌকিক ঘটনায় আমার বিশ্বাস আছে বটে, কিন্তু এরকম দিনদুপুরে বড়ো রাস্তার কাছাকাছি এরকম ঘটতে পারে বলে ধারণা ছিল না।

আমি অনুচ্চ স্বরে বললাম, এ ঘরে যে—ই থাক, আমাকে বিরক্ত করো না, আমিও তোমাকে বিরক্ত করব না।

সে কথা কেউ কানে তুলল বলে মনে হল না।

বিছানায় এসে যখন ফের শুয়েছি তখন যুগপৎ আলমারি এবং বাথরুমের দরজা বারবার বন্ধ হয়ে ফের খুলে যেতে লাগল দুমদাম শব্দে।

উঠে পড়লাম। বিশ্রাম হবে না। কাজও অনেক।

যখন বেরিয়ে আসছি তখন দেখলাম, পাশের ঘরটা ফাঁকা, কোনো লোক নেই, অবাক লাগল, কারণ কাছাকাছি কোনো হোটেলে ঘর খালি নেই, কিন্তু এই হোটেলে ফাঁকা ঘর অবহেলায় পড়ে আছে। একতলায় নামবার আগে ভালো করে ঘুরে দেখলাম, দোতলার মোট চারখানি ঘরের মধ্যে তিনখানাই ফাঁকা। একখানা ঘরে শুধু আমি।

এরপর আর অবশ্য ভূতুড়ে ব্যাপার নিয়ে ভাববার সময় ছিল না। অনেকগুলো জায়গায় যেতে হল। বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখা করতে হল। আর এইসব করতে করতে সন্ধে ছাড়িয়ে অন্ধকার নেমে এল চারদিকে।

যখন হোটেলে ফিরলাম তখন রাত আটটা, বাইরের একটা রেস্তোরাঁয় রাতের খাওয়া সেরে এসেছি। সুতরাং নিশ্চিন্ত।

ঘরের তালা খুলতে গিয়েই মনে পড়ে গেল, দুপুরের সব কাণ্ডমাণ্ড। একটু ধড়াস করে উঠল বুক। এই ঘরে আমাকে একটা রাত কাটাতে হবে। শুধু তাই নয়, দোতলায় আমি একদম একা।

কিন্তু ভয় পেলে আমার চলে না। কাজে বেরিয়ে নানা জায়গায় আমাকে একাই থাকতে হয়েছে। জঙ্গলে, পাহাড়ে, নদীর ধারে, ভয় পেলে চলবে না। বিদেশ বিভুঁয়ে ভয় হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো শত্রু।

ঘরে ঢুকে আলো জ্বাললাম এবং অনেকক্ষণ চুপচাপ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু আলমারির পাল্লা বা বাথরুমের দরজা কোনো বেয়াদবি করল না।

জামাকাপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। সারাদিন ধকল গেছে অনেক। ঘুম এল বলে, আমার ঘুমও খুব গাঢ়। সহজে ভাঙে না।

একটা সিগারেট ধরিয়ে শুয়ে শুয়ে আস্তে আস্তে টানছিলাম। বড়ো ক্লান্তি, সিগারেট শেষ করেই ঢলে পড়ব ঘুমে।

কখন সিগারেট শেষ হয়েছে, কখন ঘুমিয়ে পড়েছি তা বলতে পারব না। কিন্তু হঠাৎ ঘুম ভাঙল, আলো নেবাতে ভুলে গেছি। ঘরটা ঝক ঝক করছে আলোয়।

কিন্তু ঘুম ভাঙল কেন? এত ক্লান্ত হয়ে শুয়েছি যে, ভোরের আগে ঘুম ভাঙবার কথাই নয়।

একটা হাই তুলে উঠে বসলাম। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। উঁচু টিনের চালে চড়চড় শব্দ। একটু ঝোড়ো বাতাসও বইছে, সোঁ সোঁ আওয়াজ।

জলের গেলাসটার জন্য হাত বাড়িয়েই থেকে যেতে হল।

ও কী? আমার সামনে ছ—খানা টান টান করে পাতা বিছানা। তার মধ্যে ডান হাতের একদম কোণের দিকের বিছানাটার বালিশ খুব ধীরে ধীরে ডিগবাজি খাচ্ছে। সেই সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে চাদর।

চোখের সামনে দেখতে দেখতে দ্বিতীয় বিছানাটার চাদরও ডিগবাজি—খাওয়া বালিশে জড়িয়ে যেতে লাগল। তারপর তৃতীয় বিছানাতেও সেই একই কাণ্ড।

নড়তে পারছি না। চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই। বিকেলেই দেখে গিয়েছি চাকর বা বেয়ারাকে ডাকার জন্য যে কলিং বেল রয়েছে তা অকেজো। সুতরাং আমি বিচ্ছিন্ন, একা এবং অসহায়।

কিন্তু আমি একটা জিনিস মানি। ভয়ের চেয়ে বড়ো শত্রু নেই। খুব ছোটোবেলায়—বোধহয় ছয় কি সাত বছর বয়স থেকে দীর্ঘকাল নিশুত রাতে আমি একটা ভূতুড়ে পায়ের শব্দ শুনতাম। প্রথমে ভয় পেতাম, কিন্তু পরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। রোজ নয়, মাঝে মাঝে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে আমি সেই অমোঘ শব্দ শুনেছি। সেই কারণেই ভয় পেলেও, সেটা অস্বাভাবিক রকমের ভয় নয়। আমার হাত—পা কাঁপছে না, শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে না, শুধু বুকটা ধড়াস ধড়াস শব্দ করছে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছি।

বালিশগুলো ডিগবাজি খেয়ে খেয়ে আবার স্বস্থানে ফিরল।

সব শান্ত।

আমি একটু জল খেতে সিগারেট ধরালাম।

প্রায় দশ মিনিট ঘরে কোনো শব্দ নেই। ঘটনা ঘটছে না।

একটা শ্বাস ফেলে উঠলাম। বারান্দায় যাব বলে দরজাটা খুলবার জন্য ছিটকিনির দিকে হাত বাড়িয়েছি। ছিটকিনিটা আপনা থেকেই খটাস করে পড়ে গেল। হুড়ুম করে খুলে গেল দরজাটা। আর অদ্ভুত ব্যাপার যে, ঘরের ভিতর থেকে একটা বাতাসের ঝাপটা আমাকে ধাক্কা মেরে বারান্দায় বের করে দিল।

হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে উঠলাম। দরজাটার দিকে ফিরে বললাম, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে এরকম করলে কেন?

দরজার পাল্লা দুটো ঠাস করে বন্ধ হয়ে গেল।

ঠেলে দেখলাম। ছিটকিনি বন্ধ।

আমি চেঁচামেচি করলাম না। লোক ডাকতে ছুটলাম না। কেন যেন মনে হচ্ছিল, ওসব করে লাভ নেই, যা কিছু করার আমাকেই করতে হবে।

কিন্তু কী করব? কী আমার করার আছে?

রেলিং—এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিশুতি রাত্রির বৃষ্টি আর বাতাসের ঝাপটা খেলাম। তারপর চোখ বুজে হাত জোড় করে ঠাকুরের কাছে প্রাণভরে প্রার্থনা করলাম, ওর সুমতি দাও। ওর রাগ যন্ত্রণা ঘুচিয়ে দাও। ও শান্ত হোক। ও বুঝুক আমি ওর শত্রু নই।

প্রার্থনার সময় চোখে একটু জল এসেছিল আমার। ধ্যানে ঠাকুরের মুখশ্রী জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছিল আজ্ঞাচক্রে।

খুট করে একটা শব্দ।

চেয়ে দেখি দরজাটা খুলে গেল ধীরে ধীরে।

আমি এগিয়ে গেলাম। ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিই। আলমারি বন্ধ, বাথরুমের দরজা যথারীতি ভেজানো। বিছানাগুলো টানটান পাতা।

বাতি নিবিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘরে আর শব্দ নেই। ঘটনা নেই। অবশেষে তার সঙ্গে আমার ভাব—সাব হয়েছে বুঝতে পেরে নিশ্চিন্তে চোখ বুঝলাম আমি।

এক ঘুমে ভোর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *