আমি তো চাহি নি কিছু।
বনের আড়ালে দাঁড়ায়ে ছিলাম
নয়ন করিয়া নিচু।
তখনো ভোরের আলস‐অরুণ
আঁখিতে রয়েছে ঘোর।
তখনো বাতাসে জড়ানো রয়েছে
নিশির শিশিরলোর।
নূতন তৃণের উঠিছে গন্ধ
মন্দ প্রভাতবায়ে;
তুমি একাকিনী কুটিরবাহিরে
বসিয়া অশথছায়ে
নবীননবনীনিন্দিত করে
দোহন করিছে দুগ্ধ—
আমি তো কেবল বিধুর বিভোল
দাঁড়ায়ে ছিলাম মুগ্ধ।
আমি তো কহি নি কথা।
বকুলশাখায় জানি না কী পাখি
কী জানালো ব্যাকুলতা।
আম্রকাননে ধরেছে মুকুল,
ঝরিছে পথের পাশে;
গুঞ্জনস্বরে দুয়েকটি ক’রে
মৌমাছি উড়ে আসে।
সরোবরপারে খুলিছে দুয়ার
শিবমন্দির‐ঘরে;
সন্ন্যাসী গাহে ভোরের ভজন
শান্ত গভীর স্বরে।
ঘট লয়ে কোলে বসি তরুতলে
দোহন করিছ দুগ্ধ—
শূন্য পাত্র বহিয়া মাত্র
দাঁড়ায়ে ছিলাম লুব্ধ।
আমি তো যাই নি কাছে।
উতলা বাতাস অলকে তোমার
কী জানি কী করিয়াছে।
ঘণ্টা তখন বাজিছে দেউলে,
আকাশ উঠিছে জাগি,
ধরণী চাহিছে ঊর্ধ্বগগনে
দেবতা‐আশিস মাগি।
গ্রামপথ হতে প্রভাত‐আলোতে
উড়িছে গোখুরধূলি;
উছলিত ঘট বেড়ি কটিতটে
চলিয়াছে বধূগুলি।
তোমার কাঁকন বাজে ঘনঘন
ফেনায়ে উঠিছে দুগ্ধ—
পিয়াসী নয়নে ছিনু এক কোণে
পরান নীরবে ক্ষুব্ধ।
১৩০৪