পিশাচ
এক
বাড়িওয়ালা অত্যন্ত বিমর্ষভাবে বললে, ‘আজ্ঞে হ্যাঁ মশাই, এ বাড়িখানা নিয়ে আমি রীতিমতো বিপদে পড়ে গিয়েছি। খবরের কাগজে যা বেরিয়েছে তা মিথ্যে নয়। এ বাড়িতে গেল তিনমাসের মধ্যে তিনজন লোক মারা পড়েছে! আর সেই তিনটি মৃত্যুই রহস্যময়! এ বাড়িতে আর বোধ হয় নতুন ভাড়াটে আসতে রাজি হবে না।’
বিমল বললে, ‘ব্যাপারটা আমাদের একটু খুলে বলবেন কি?’
বাড়িওয়ালা বললে, ‘ব্যাপারটা এখন সবাই জানতে পেরেছে। সুতরাং আমার আপত্তি নেই।’
কুমার বললে, ‘এ-বাড়িতে যিনি শেষ ভাড়াটে ছিলেন, সেই রামময়বাবুর নাম আমরা শুনেছি। উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করে তিনি খুব নাম কিনেছেন।’
‘আজ্ঞে হ্যাঁ। তিনি আসবার আগে কিন্তু আমার বাড়ির কোনো দুর্নামই ছিল না। কলকাতার কাছেই যতটা সম্ভব নির্জনে বসে উদ্ভিদশাস্ত্র আলোচনা করবেন বলেই এই বাড়িখানা তিনি ভাড়া নিয়েছিলেন। বাড়ির পিছনকার বাগানে তিনি হরেকরকম দামি গাছগাছড়া আনিয়ে নানারকম পরীক্ষা করতেন। পাছে কোনো অভিজ্ঞ লোক তাঁর বাগানে গিয়ে গাছগাছড়ার ক্ষতি করে, সেই ভয়ে কারুকে তিনি সেখানে যেতে দিতেন না। এ বিষয়ে তাঁর নিষেধ ছিল খুব স্পষ্ট। কিন্তু মাসতিনেক আগে একদিন সকাল বেলায় দেখা গেল, রামময়বাবুর উড়ে বেয়ারাটার মৃতদেহ বাগানের ভিতরে পড়ে রয়েছে! তার সর্বাঙ্গে লম্বা লম্বা কালশিরা! তার দেহকে যেন অনেকগুলো দড়ি দিয়ে খুব শক্ত করে বেঁধে ফেলা হয়েছিল! তার গলাতেও ফাঁসির দাগ! কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য আর ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে, তার দেহের ভিতরে এক ফোঁটাও রক্ত বা রস ছিল না। কে যেন তার শরীরের সমস্ত রক্ত আর রস একেবারে নিংড়ে বার করে নিয়েছিল। পুলিশ এল। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারাই হয়নি। রামময়বাবু রটিয়ে দিলেন, তাঁর বাগানে ভূত আছে, কেউ যেন আর তার ত্রিসীমানায় না-যায়!’
বিমল বললে, ‘তারপর থেকে রামময়বাবুও কি আর বাগানের ভিতরে যেতেন না?’
বাড়িওয়ালা বললে, ‘যেতেন বই কী! বাগানের ভিতরেই তাঁর সারা বেলা কেটে যেত। তারপর শুনুন। মাস দেড়েক আগে আর এক সকালে বাগানের ভিতরে আর একটা অচেনা লোকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের তদন্তে প্রকাশ পায়, সে হচ্ছে একজন পুরোনো দাগী চোর। চুরি করবার মতলবেই এখানে এসে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছে। সে হতভাগ্যের গায়েও ছিল তেমনি লম্বা লম্বা কালশিরার ডোরা আর তার দেহের ভিতরেও একফাঁটা রক্ত বা রস ছিল না!’
বিমল খানিকক্ষণ ভেবে বললে, ‘তারপর রমময়বাবু কেমন করে খুন হলেন— সেই কথা বলুন।’
বাড়িওয়ালা বললে, ‘খুন? না, খুন নয়। হপ্তা খানেক আগে বাড়ির একটা ঘর থেকে রামময়বাবুর মৃতদেহ পাওয়া যায় বটে, কিন্তু ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেছেন, তাঁকে কেউ হত্যা করেনি; হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া হঠাৎ বন্ধ হওয়াতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’
কুমার শুধোলে, ‘তাঁর দেহেও কি কালশিরার দাগ ছিল? রক্ত আর রস কেউ শোষণ করেছিল?’
বাড়িওয়ালা মাথা নেড়ে বললে, ‘মোটেই না, মোটেই না! তাঁর মৃতদেহের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কিন্তু হুজুগে লোকেরা তা বিশ্বাস করবে কেন? রামময়বাবুর মৃত্যু নিয়েও তারা মহা হইচই লাগিয়ে দিয়েছে!’
বিমল বললে, ‘আপনার আর কিছু বলবার নেই?’
‘আছে, তবে সে বিশেষ কিছু নয়। রামময়বাবু মারা পড়বার আগেই, ওই বাগানের ভিতরে প্রায় ইঁদুর, ছুঁচো, প্যাঁচা, বাদুড় আর চামচিকের মরা দেহ পাওয়া যেত। তাদের দেহেও রক্ত কি রস থাকত না!’
বিমল উত্তেজিতভাবে বললে, ‘আপনি যে-সব জীবের নাম করলেন তারা সবাই নিশাচর। বাগানে কি মরা কাক, চিল বা চড়াই পাখি পাওয়া গেছে?’
‘না। ও বাগান সাংঘাতিক হয় রাত্রেই। সন্ধ্যার পর আজকাল ওর আশপাশ দিয়ে কেউ তাই হাঁটতে চায় না। সকলেরই বিশ্বাস, রাত্রে ওখানে পিশাচের আবির্ভাব হয়। রামময়বাবুর মৃত্যুর পর থেকেই বাড়িখানা খালি পড়ে আছে। ওখানে আর কেউ বাস করতে চাইবে বলে মনে হয় না।’
কুমার বললে, ‘কিন্তু আমরা যদি ওখানে কিছুদিন বাস করতে চাই?’
বাড়িওয়ালা অনেকক্ষণ বিস্মিত নেত্রে কুমার ও বিমলের মুখের পানে তাকিয়ে রইল। তারপর বললে, ‘তা হলে আমার আপত্তির কোনো কারণই নেই। কিন্তু মনে রাখবেন, সব কথা শোনবার পরেও ওখানে গিয়ে আপনারা যদি কোনো বিপদে পড়েন, সেজন্যে আমাকে পরে দায়ী করতে পারবেন না। আমি ভাড়া দিই অর্থলাভের জন্যে, নরহত্যার জন্যে নয়।’
বিমল বললে, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আমাদের রক্ত শোষণ করে, আজও বোধ হয় এমন পিশাচের সৃষ্টি হয়নি। তাহলে এই কথাই রইল। আজ বৈকালেই আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে উঠব।’
দুই
বিমল ও কুমার বৈকালের পরে সেই রহস্যময় বাড়িতে এসে উঠল। টালিগঞ্জ থেকে যে-পথটি রিজেন্ট পার্কের পাশ দিয়ে গড়িয়াহাটার দিকে চলে গিয়েছে, তারই একপাশে এই সঙ্গীহীন বাড়িখানা দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে ধূ-ধূ করছে মাঠ আর শস্যখেত, মাঝে মাঝে এক-একটা পোড়ো পুকুর বা জলাভূমি অস্তগামী সূর্যকিরণে চক চক করে উঠছে। জায়গাটা নির্জন বটে!
বাড়ির পিছনেই খানিকটা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এইটেই হচ্ছে রামময়বাবুর বাগান।
বাগানের ঠিক ওপরেই দোতলার একটা ঘরে গরম জলে চা মিশাতে মিশাতে বিমল বললে, ‘আচ্ছা কুমার, তুমি ভূত-পেতনি-পিশাচ বিশ্বাস করো?’
কুমার বললে, ‘সাধারণ লোকে যখন ভূতের গল্প বলে তখন আমি তা হেসে উড়িয়ে দিই। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতেরাও যখন ভূতপ্রেত নিয়ে মাথা ঘামান, তখন তা আর হেসে উড়িয়ে দিতে পারি না বটে, কিন্তু বিশ্বাসও করতে প্রবৃত্তি হয় না।’
বিমল বললে, ‘পিশাচরা নাকি মানুষের মতন দেহধারী হলেও মানুষ নয়। অনেক সময়ে প্রেতাত্মারা নাকি মানুষের মৃতদেহের ভিতরে এসে আশ্রয় নেয়। তখন সেই মড়া জ্যান্ত হয়ে জীবিত মানুষদের রক্ত চুষে খায়! লোকের কথা মানতে গেলে বলতে হয়, পাশের ওই বাগানে অমনি কোনো জ্যান্ত মড়া রোজ রাত্রে জীবজন্তুর রক্ত শোষণ করতে আসে!’
বিমল ও কুমার দুজনেই জানলা দিয়ে বাগানের দিকে দৃষ্টিপাত করল। কিন্তু তখন সন্ধ্যার অন্ধকারে বাগান আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।
বিমল চা ঢেলে একটা পিয়ালা কুমারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললে, ‘কিন্তু এই নির্বোধ পিশাচটা রক্তপানের জন্যে আর কি কোনো ভালো জায়গা খুঁজে পেলে না? ওই পাঁচিল ঘেরা বাগানটুকুর ভিতরে ক-টা জীবই বা আসতে পারে?’
সামনের টেবিলের ওপরে এক চাপড় বসিয়ে দিয়ে কুমার বলে উঠল, ‘ঠিক! বাগানের বাইরে এত বড়ো বড়ো জীব থাকতে সে এখানে বসে অপেক্ষা করবে কেন?’
বিমল হেসে বললে, ‘হ্যাঁ, তবে যদি বলো, এই পিশাচটি অত্যন্ত বিলাসী; কবির মতো, ফুলের গন্ধ শুঁকতে ভালোবাসে, তাহলে—’
কুমার বাধা দিয়ে বললে, ‘আমি ওসব কিছুই বলতে চাই না। আমার মত হচ্ছে, এখানে পিশাচ-টিশাচ কিছুই আসে না!’
বিমল মৌনমুখে চা পান করতে লাগল। কুমারও আর কিছু বললে না।
চারিদিকে সন্ধ্যার নীরবতা ক্রমেই বেশি ঘনিয়ে উঠছে…
আচম্বিতে পাশের ঘরে একটা শব্দ হল। কে যেন কী-একটা মাটির ওপরে ফেলে দিলে!
বিমল ও কুমার দুজনেই চমকে দাঁড়িয়ে উঠল। তারপর দ্রুতপদে পাশের ঘরে ছুটে গেল।
ঘরের মাঝখানে রয়েছে একটা মস্ত বিড়াল।
বিমল হাস্যমুখে গর্জন করে বললে, ‘তবে রে দুরাত্মা পিশাচ! এমন করে আমাদের ভয় দেখানো? রোস তো!’
বিড়ালটা প্রকাণ্ড এক লাফ মেরে জানলা-পথে অদৃশ্য হয়ে গেল।
কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ড পরেই বাগানের ভিতর থেকে একটা বিড়ালের অত্যন্ত তীক্ষ্ন ও অস্বাভাবিক আর্তনাদ জেগে উঠল— মাত্র একবার! তারপরেই সব চুপচাপ!
বিমল আশ্চর্য হয়ে বললে, ‘বাগানে গিয়ে বিড়ালটা অমন চেঁচিয়ে উঠল কেন?’
কুমার দরজার দিকে এগুতে এগুতে বললে, ‘দাঁড়াও, আমি দেখে আসছি!’
বিমল তাড়াতাড়ি বললে, ‘খবরদার! যা দেখবার, কাল সকালে দেখলেই চলবে। মনে রেখো, রাত্রে ও-বাগান বিপদজনক!’
‘কি বিমল, তুমি ভয় পেলে নাকি?’
‘না ভাই, একে ভয় বলে না। এ হচ্ছে সাবধানতা। সকালে আগে বাগানটা দেখি, তারপর ওখানে রাত্রিবাস করব।’
তিন
রামময়বাবুর বাগান সাধারণ লোকের কাছে বিশেষ উল্লেখযোগ্য বলে মনে হবে না। কারণ সকলে যেসব বিখ্যাত ফুলগাছকে আদর করে, তাদের কোনোটাই সেখানে নেই।
কিন্তু সেখানে যেসব গাছগাছড়া রয়েছে, তাদের অনেকেরই পরিচয় বিমল ও কুমার জানে না। ফার্ন, পাতাবাহার, ঝাউ, ক্যাকটাস ও পাম জাতীয় এমন অনেক গাছ সেখানে রয়েছে, বাংলাদেশে যাদের দেখা মেলে না।
একদিকে রয়েছে অনেকরকম অর্কিড।
বিমল বললে, ‘কুমার, তোমার-আমারও তো বাগানের শখ আছে, কিন্তু এরকম অর্কিড কখনো দেখেছ কি?’
কুমার বললে, ‘না। এগুলো বোধ হয় ভারতবর্ষের অর্কিড নয়।’
বিমল উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললে, ‘বাঃ, বাঃ, কী চমৎকার! দেখ কুমার, দেখ! আর সব অর্কিডের মাঝখানে, বাঁধানো বেদির ওপরে যে প্রকাণ্ড অর্কিডটা রয়েছে! অর্কিড যে অত বড়ো আর তার ফুল এমন অদ্ভুত হয়, না দেখলে আমি তা বিশ্বাস করতুম না। গাঢ় বেগুনি ফুল আর তার প্রত্যেক পাপড়ির মুখ থেকে যেন টকটকে রক্ত ঝরে পড়ছে! রক্তমুখো অর্কিড-ফুল!’
কুমার সেইদিকে এগিয়ে গিয়েই বলে উঠল, ‘বিমল, শিগগির এদিকে এসো!’
বিমল কয়েক পদ অগ্রসর হয়েই স্তম্ভিত নেত্রে দেখলে, কালকের সেই বিড়ালটার মৃতদেহ সেইখানে আড়ষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে!
দুজনে অবাক হয়ে অনেকক্ষণ সেইখানে দাঁড়িয়ে রইল।
তারপর বিমল ধীরে ধীরে বললে, ‘তাহলে কাল আমরা এই বিড়ালটারই মরণের কান্না শুনেছি! কে একে বধ করলে? কোন অজানা বিভীষিকা এই বাগানে বাস করে? আজ রাত্রে তা বোঝবার চেষ্টা করব!’
চার
পেট্রোলের একটা চারশো-বাতি লণ্ঠন ও দুটো বন্দুক নিয়ে বিমল ও কুমার সন্ধ্যার পর বাগানে এসে বসল।
খানিক আলোয় খানিক কালোয় বাগানের বিচিত্র গাছগুলোকে আরও অদ্ভুত দেখাতে লাগল।
বাড়িওয়ালা সত্য কথাই বলেছিল। সন্ধ্যার পরে ভয়ে কেউ এদিকে আসে না। কারণ দু-ঘণ্টা অপেক্ষা করবার পরেও আশপাশ থেকে তারা কোনো মানুষেরই সাড়া পেলে না। তাদের মনে হল— এ যেন সৃষ্টিছাড়া ঠাঁই, কেবল অভিশপ্তরাই এখানে বাস করতে পারে!
দু-তিনটে প্যাঁচা ও বাদুড় শূন্যকে শব্দিত করে কোথায় উড়ে গেল। বিমল ও কুমার দুজনেই তাদের উড়ন্ত দেহের দিকে মুখ তুলে দেখলে। হয়তো তারা আশা করেছিল যে, এখনি কোনো অজ্ঞাত শত্রু তাদের দেহ ধরে বাগানের জমিতে পেড়ে ফেলবে!
বিমল বললে, ‘কুমার, একটা চমৎকার মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছ কি?’
‘পাচ্ছি। কিন্তু এ বাগানে সকালে কোনো ফুলও দেখিনি, কোনো সুগন্ধও পাইনি!’
‘হয়তো এ ফুল রাত্রে ফোটে। আমার যেন মনে হচ্ছে, সুগন্ধ আসছে ওই অর্কিডগুলোর দিক থেকেই!’
‘আচ্ছা, আমি দেখে আসছি’— এই বলে কুমার উঠে পড়ল।
বিমল দেখলে, কুমার ধীরে ধীরে অর্কিডগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। তারপর সেই রক্তমুখো অর্কিড ফুলের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পরমুহূর্তেই এক আর্তনাদ এবং সঙ্গে-সঙ্গে কুমারের দেহ মাটির ওপরে লুটিয়ে পড়ে বিষম ছটফট করতে লাগল!
চোখের পলক ফেলবার আগেই বিমল সেখানে গিয়ে হাজির হল এবং কুমারের দিকে চেয়েই ব্যাপারটা বুঝতে তার বিলম্ব হল না। সে তখনি রিভলভার তুলে অর্কিড গাছটাকে লক্ষ করে উপরি-উপরি দুইবার গুলিবৃষ্টি করলে। তারপর মাটি থেকে কুমারের বন্দুকটা নিয়ে আরও দুইবার ছোড়বার পরেই রক্তমুখো ফুলসুদ্ধ অর্কিড-গাছটা দু-খানা হয়ে ভেঙে পড়ল!
কুমার তখন অজ্ঞান হয়ে গেছে। তার সারা দেহ জড়িয়ে অনেকগুলো লম্বা শুয়া বা দাঁড়া থরথর করে কাঁপছে! বিমল তাড়াতাড়ি ছুরি বার করে সেইগুলো কাটতে বসল।
পাঁচ
কুমারের জ্ঞান হয়েছে; কিন্তু তার সর্বাঙ্গ তখন ফোড়ার মতন টাটিয়ে রয়েছে।
পাশে দাঁড়িয়ে বিমল বললে, ‘আসল ব্যাপারটা এইবার বোঝা গেল। কেতাবে পড়েছিলুম, দক্ষিণ আমেরিকা ও আরও কোনো কোনো দেশে এমন কোনো কোনো জাতের অর্কিড পাওয়া যায়, যারা জীবজন্তুর রক্তশোষণ করতে পারে। উদ্ভিদশাস্ত্রে পণ্ডিত রামময়বাবু ওইরকম এক মারাত্মক অর্কিড এনে এখানে পালন করছিলেন। দিনে সে নিরাপদ ছিল, কিন্তু রাত্রে তার ফুলে গন্ধ জাগার সঙ্গে-সঙ্গেই সে রক্তপান করতে চাইত! তখন গন্ধ ছাড়িয়ে নানা জীবজন্তুকে কাছে আকর্ষণ করে এই পিশাচ অর্কিড অক্টোপাসের মতন শুয়া দিয়ে তাদের আক্রমণ করত!’