পিরামিড আর মমির রহস্য
মানুষের সভ্যতার কথা তোলা যাক। প্রথমে সবচেয়ে পুরোনো সভ্যতাগুলোর কথা, আর খুব পুরোনো সভ্যতার কথা বলতে গেলে প্রথম মনে পড়ে মিশরের কথা।
মিশর। প্রাচীন মিশর! নামটা শুনলেই মনের মধ্যে উকি দেয় কতো অজস্র কথা। কতো রহস্য! কী ঐশ্বৰ্য্য!
মানুষের হাতে গড়া কতো অপরূপ, আশ্চর্য কীর্তিা মরুভূমির মরা বালির বুকে আকাশ ছোঁয়া পিরামিড, গুহার গোপনে হীরে-জহরতের ঝালকানি, আর ছ-হাজার বছর আগে মরে যাওয়া মানুষের শরীর এখনো পর্যন্ত ফিতে জড়িয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে-ওগুলোর নাম বুঝি মমি, ফিতেগুলোকে বুঝি বলে প্যাপিরাস, ফিতেগুলোয় ছোটো ছোটো ছবি আঁকা,— ছবিগুলো নাকি ছবি নয়, আসলে লেখার হরফ।
কেমন করে গড়ে উঠলো এই সভ্যতা?
মিশরে একটা নদী আছে, তার নাম নীল নদী। গরম কালের কড়া রোদে দূর পাহাড়ের চুড়োয় বরফ গলে যায়, গলা বরফের জল বন্যা হয়ে নেমে আসে নীল নদ দিয়ে, ভেসে যায় কিনারার জমিগুলো। তারপর, বন্যার জল সরে গেলে দেখা যায় কিনারার জমিগুলোর ওপর পুরু পলি পড়েছে। বড়ো উর্বর এই সব পলিপড়া জমি, এখানে যেন না চাইতেই পাওয়া যায় অনেক ফসল। এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করলো প্রাচীন কালের নানারকম যাযাবর মানুষের দল, আর তাই তারা আস্তানা গাড়তে শুরু করলো নীল নদের কিনারায় কিনারায়। তারা কেউ-বা এসেছিলো আফ্রিকার দিক থেকে, কেউ-বা এসেছিলো আরব্য অঞ্চল থেকে, আবার এশিয়ার নানান জায়গা থেকে এসেছিলো নানান দল। একই জায়গায় আস্তানা গাড়বার পর এই সব নানান দলের মানুষের মধ্যে মিশেল হয়ে যেতে লাগলো। আর শেষ পর্যন্ত তাদের সবাইকার মিলে একটাই নাম হয়ে দাঁড়ালো। সে-নামটা হলো রেমি। রেমি মানে মানুষ।
চাষ-আবাদের জন্যে তারা জমিতে লাঙল দিতে শিখলো, শিখলো নদীতে বাঁধ দিয়ে জল আটকে রাখতে, শিখলো খাল কেটে কেটে নানান জমিতে এই জল সরবরাহ করতে। মানুষ শিখলে ভালো করে চাষ বাদ করতে। কিন্তু ভালো করে চাষবাস করবার জন্যে যেসব নতুন হাতিয়ার মানুষ তৈরি করলে সেগুলো দিয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে চাষ করা চলে না। তাই শুরু হলো জমিজমা ভাগ করে নেবার ব্যবস্থা। কিন্তু সব জমি তো সমান নয়; তাই কারুর ভাগে পড়লো ভালো জমি, কারুর ভাগে খারাপ জমি। তাছাড়া, সবাইকার সংসারে সমান লোক নয়, কারুর সংসারে বেশি, কারুর সংসারে কম। তাই যাদের জুটলো ভালো জমি আর যাদের সংসারে বেশি লোক তারা দিনের পর দিন দারুণ বড়োলোক হয়ে উঠতে লাগলো। আবার যাদের ভাগে পড়লো বাজে জমি আর যাদের সংসারে লোকবল কম। তারা নেহাতই গরিব লোক হয়ে পড়তে লাগলো। এ-হেন গরিব লোকদের ডাক দিয়ে বড়োলোকরা বললোঃ অতো মেহনত করে তো মরছে, কিন্তু দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে না; তার চেয়ে আমাদের জমিতে এসে গতির খাটাও, তোমাদের পেট ভরে খেতে দেবো। এ-ব্যবস্থায় বড়োলোকদের যে কতোখানি লাভ তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে। তাদের জমিগুলো ভালো জমি, সে-জমিতে গতির খাটিয়ে একজন লোক অনেকখানি বাড়তি জিনিস তৈরি করতে পারে, বাড়তি জিনিস মানে হলো নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্যে যতোটা দরকার তার চেয়ে বেশি। এই বাড়তি জিনিসটুকু বড়োলোকদের সম্পত্তি হয়ে যাবে; সেই তাদের লাভ। অবশ্য, নিজেদের দলের গরিব লোক ছাড়াও বড়োলোকেরা বাইরের থেকেও ক্রীতদাস জোগাড় করতে কসুর করতো না। এইভাবে বড়োলোকরা আস্তে আস্তে জমিদার হয়ে উঠতে লাগলো, জমিদারদের মধ্যে থেকে হোমরাও-চোমরাও মহারাজা-টহারাজা।
মিশরের যে-রাজা তার উপাধি হলো ফেয়ারাও। তার ঘরে সম্পত্তির পাহাড়-কতো, ঐশ্বৰ্য, কতো হীরে-জহরত তা ভাবতে আমাদের মুখ হাঁ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়। সারা জীবন অমন অতুল ঐশ্বৰ ভোগ করেও তাদের যেন আশ মেটে না। মরে যাবার পরও তাদের ফুর্তি চাই। তাই মরে যাবার পরও শরীরটাকে কেমন করে টিকিয়ে রাখা যায় তার একটা উপায় বের হলোঃ মৃতদেহটাকে কয়েক সপ্তাহ এক রকম আরকে ভিজিয়ে রেখে তার মধ্যে গলা ‘পিচ’ ভরে দেওয়া,-আজকালকার শহরে রাস্তাঘাট যে-রকম পিচ দিয়ে তৈরি হয় সেই রকম ‘পিচাই’। জিনিসটাকে ফরাসী ভাষায় বলে মমিয়াই তার থেকে ওই রকম মৃতদেহের নাম হয়েছে মমি। ওইভাবে পিচ ঢালবার পর মৃতদেহটার সারা গায়ে ফিতে জড়িয়ে একটা কাঠের বাকসর মধ্যে পুরে রাখা। অমনভাবে রাখলে সেটা আর গলেপচে নষ্ট হয়ে যায় না, টিকে থাকে। কয়েক হাজার বছর ধরে। শুধু তাই নয়। কবরখানার মধ্যেও হরেক রকম ফুর্তি আর তোয়াজের বন্দোকিস্ত। বড়োলোকদের জন্যে বিরাট বিরাট কবরখানা তৈরি হতো, সেই সব কবরগুলোরই নাম হলো পিরামিড। মরে যাবার পর থাকবার জন্যে ঘর। কিন্তু তার মধ্যে ষোলো আনা আয়োসের আয়োজন তো চাই! তা কবরখানাগুলোর মধ্যে থরে থরে নানান জিনিস সাজিয়ে রাখাঃ খাট-পালং, বাজনা-বান্দ্যি, বাসন-কোসন, গয়না-গাঁটি, সব কিছুই। এমন কি, চাকর-বাকর, ধোপা-নাপিত চাই। কিন্তু তাই বলে জ্যান্ত ধোপা-নাপিত বা চাকর-বোকর তো কবরের মধ্যে সত্যিই পুরে রাখা যায় না। মরে গিয়ে গলে পচে পাক হয়ে যাবে। রাজারাজড়ারা তাই কবরের মধ্যে রাখতো পাথরের তৈরি ছোটো ছোটো চাকর-বাকিরদের মূর্তি, আর তারা ভাবতো পাথরের তৈরি এই সব মূর্তিগুলো কবরের মধ্যেও তাদের তাঁবেদারি করবে।
অবশ্য, গরিব লোকদের বেলায় একেবারে অন্য কথা। তাদের মরা শরীরগুলোকে অমনভাবে টিকিয়ে রাখবার কথাই ওঠে না। পণ্ডিত আর পাণ্ডা-পুরুতের দল তাই তাদের সম্বন্ধে অন্য বিধান দিলো। বললো : মৃত্যুর পর মানুষকে পশ্চিম দিকের পাহাড় পেরিয়ে অনেক দূরে এক জায়গায় যেতে হবে, সেখানে দেবতা অসিরিস বিচারে আসীন। যে-মানুষ সারা জীবন ধরে শুধু মুখ বুজে খেটেছে, দেবতা অসিরিস খুশি হয়ে তাকে পোলাও-পায়েস খেতে দেবে; কিন্তু যে-লোক রুখে দাঁড়িয়েছে, মানে নি। রাজাকে, মানে নি পুরুত-পাণ্ডাকে, দেবতা অসিরিস তাকে দেবে দারুণ কঠিন শাস্তি। মানুষের উচিত তাই শুধু মুখ বুজে মেহনত করা আর সেই মেহনত দিয়ে গড়া জিনিস পৌঁছে দেওয়া রাজারাজড়া আর পুরুতপাণ্ডার ভাঁড়ারে।
দক্ষিণার পয়সা গুনে আর নৈবেদ্যর চাল-কলা জমিয়ে তখনকার দিনের পুরুতপাণ্ডারাও নেহাত কম বড়োলোক হতো না-কেউ কেউ রীতিমতো পাল্লা দিতে পারতো স্বয়ং মহারাজার সঙ্গে-এতো বড়োলোক!
প্রাচীন মিশরকে চিনতে চাও? সত্যিকারের চিনতে চাও? তাহলে ভেবে দেখো সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কথা যাদের মেহনত দিয়ে তৈরি হয়েছিলো অমন আশ্চর্য ঐশ্বর্য, অমন সব চোখ-ধাঁধানো কীর্তি। তাদের খবর পাওয়া যায়। ওদেশের খুব পুরোনো ছবিতে, এমন কি কিছু কিছু পুরোনো লেখাতেও। ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়। সেই সব লক্ষ লক্ষ মানুষঃ রুক্ষ মরুভূমি, ধু-ধু রোদ, তার মধ্যে দিয়ে ওরা বিরাট বিরাট পাথর টেনে নিয়ে চলেছে, সেই পাথর দিয়ে গড়া হয়েছে পিরামিড। ছবিতে দেখবে, ওই সব হাজার হাজার মানুষ চলেছে রাজার জন্যে ভৌগবিলাসের সম্ভার কাধে বয়ে, বোঝার ভারে তাদের পিঠাগুলো ধনুকের মতো বেঁকে গিয়েছে, পেট ভরে খেতে পায় না বলে তাদের শরীরে হাড় আর চামড়ার মাঝখানে বিশেষ কিছু নেই। প্রাচীন মিশর! কতো ঐশ্বর্য! এ-সব ঐশ্বর্য তাদেরই হাত দিয়ে গড়া! অথচ, তাদের নিজেদের কপালে জুটেছিলো শুধু সেপাইদের চাবুক, বরকন্দাজের বল্লম, আর তিলে তিলে ক্ষয়ে যাওয়া, মরে যাওয়া, শেষ হয়ে যাওয়া!
মমিদের গায়ে জড়ানো ওই যে ফিতেগুলো, ওগুলোতেও খুদে খুদে ছবির অক্ষরে অনেক কথা লেখা আছে; সেই লেখা থেকে খানিকটা বাংলা করে তুলে দিই, আন্দাজ করতে পারবে যারা মেহনত করতো তখন তাদেৱ দশটা কী রকম ছিলো। এক জায়গায় লেখা আছে :
–কামারকে দেখেছি কামারশালে কাজ করতে। আগুনের সুখে হাফর নিয়ে সে দিনরাত বসে রয়েছে, ওই রকম ভাবে দিনের পর দিন একটানা বসে থাকতে থাকতে তার গায়ে পচা আর আঁশটে গন্ধ হয়ে গিয়েছে।… খোদাইকর সমস্ত দিন ধরে কঠিন পাথর কেটে চলেছে, তারপর দিনের শেষে যখন আর তার হাত দুটো নেহাতই চলতে চায় না। তখন হয়তো সারা দিনের মজুরি বাবদ দুটুকরো রুটি জুটলো। কিন্তু পরের দিন সুর্য ওঠবার সঙ্গে সঙ্গে সে যদি আবার কাজে না লাগে তাহলে তার হাত দুটো পিঠের দিকে শক্ত করে বেঁধে…। রাজমিস্তরির কথা বলবো? পরনের কাপড় বলতে তার কোমরে শুধু এক টুকরো নেঙটি, কাজ করতে করতে তার আঙুলগুলো ক্ষয়ে গিয়েছে, কিন্তু তার যদি খিদে অসহ্য হয়ে ওঠে তাহলে নিজের আঙুলগুলো কামড়ানো ছাড়া তার আর কোনো গতি থাকে না। … হাঁটু দুটো বুকে দুমড়ে সমস্ত দিন তাঁত বুনছে তাত … কখনো যদি সূর্যের আলো দেখবার জন্যে তার প্রাণীটা ছটফট করে তাহলে দোরের পাহারাদারকে নিজের রুটির টুকরোটুকু ঘুষ দিতে হবে… । … মুচি যেন সমস্ত দিন ধরে কাতরাচ্ছে, পেটের জ্বালা যদি অসহ্য হয় তাহলে চামড়ায় দাঁত ফোটানো ছাড়া আর কোনো গতি নেই।…
নীল নদের ধারে মানুষের যে প্রথম সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো এই হলো তার ভেতর দিককার আসল চেহারা! এ-চেহারাটা বড়ো নোংরা, বড়ো বিশ্ৰী। মানুষ অতো সভ্য হলো, পৃথিবীকে অতোখানি জয় করতে শিখলো; কিন্তু তারই উল্টো পিঠে দেখা গেলো মানুষের এই চরম অপমান, এই হেরে যাওয়ার দিক।
কিন্তু তাই বলে কি ভাবতে হবে, মিশরের ওই যে সভ্যতা ওর আসলে কোনো দাম নেই? তাও নয়। গর্ডন চাইল্ড বলে সম্প্রতিকালের একজন শ্রেষ্ঠ বিদ্বান ব্যাপারটা খুব স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছেন। মানুষের গল্পটা যতো সরল হলে আমরা খুশি হতাম। আসলে তা সেরকম নয়। যদি একেবারে আদিম কালের সমানে-সমান অবস্থা থেকে-যাকে বলে আদিম সাম্যবাদ, তা থেকে-মানুষ একেবারে সোজা সড়ক ধরে আগামী কালের ঐশ্বর্য্যে ভরা সাম্যবাদ পর্যন্ত এগুতে পারতো তাহলে তো সত্যিই দারুণ খুশি হবার কথা হতো। কিন্তু মানুষের এগুবার গল্পটা আসলে অমনি সহজ সরল নয়। তার এগুবার পথটা খুবই জটিল।
প্রায়ই চোখে পড়ে আশ্চর্য কীর্তির ঠিক উল্টো পিঠে কুৎসিত শোষণ। প্রাচীন মিশরের কথাই আরো একটু খতিয়ে দেখা যাক। অনেকখানি এলাকা জুড়ে অনেক মানুষের উদ্বৃত্ত উৎপাদন যদি এক জায়গায় জড়ো করা সম্ভব না হতো তাহলে মানুষ সভ্যতার প্রথম ইমারতই গাঁথতে পারতো না। আর সভ্যতার ইমারত যদি একটা সময় শুরুই না-হতো। তাহলে মানুষ সভ্যতার পথে ধাপে ধাপে এগুতেই পারতো না। সেদিক থেকে দেখলে প্রাচীন মিশরের কীর্তি সত্যিই পরমাশ্চর্য ব্যাপার। কিন্তু তারই উল্টো পিঠটা তেমনি নোংরা, তেমনি ঘৃণ্য। অনেক মানুষকে মরতে হয়েছে, অনেক মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। তার মূল্য চোকাতে পেরেছে বলেই মানুষ সভ্যতার আঙিনায় প্রথম পৌঁছতে পারলো। নইলে আটকে থাকতে হতো অসভ্য অবস্থাতেই। অতোখানি মূল্য চোকাতে না হলে আমরা নিশ্চয়ই দারুণ খুশি হতাম। কিন্তু, পণ্ডিত ভাষায়-মানুষের অগ্ৰগতি দ্বন্দ্বমূলক। সোজা কথায় তার দুটো দিক আছে এবং এই দুটো দিকের মধ্যে প্রচণ্ড সংঘাত। এই সংঘাত বাদ দিয়ে মানুষের পক্ষে এগুবার খুব একটা সাদা-মাটা পথের কথা কবির কল্পনার মতো হতে পারতো! কিন্তু বৈজ্ঞানিক ইতিহাস হতে পারতো না। মানুষের সত্যিকারের গল্প যদি বুঝতে চাও তাহলে এই দুদিকের মধ্যে সংঘাতটা ভুললে চলবে না।
তাই মিশরের ওই সভ্যতা মানুষের ইতিহাসে যে-সব আশ্চর্য ঐশ্বর্য দিয়ে গিয়েছে তার কথাও ভোলা চলবে না। আর সে-ঐশ্বৰ্য বলতে শুধুই রাজা-রাজড়ার হীরে-জহরত নয়। কৃষিবিজ্ঞানের দিক থেকে-অর্থাৎ কি না, চাষবাস করবার কায়দাকানুনের ব্যাপারে-মিশরের সভ্যতা মানুষকে কী আশ্চর্যভাবেই না এগিয়ে নিয়ে গেলো! তাছাড়া, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যামিতি— আরো কতো রকম। ক্রীতদাসদের ওই বুকফাটা কান্নার কথা ভাবতে ভাবতে এই দিকগুলো সম্বন্ধে খেয়াল হারালেও চলবে না।
তবে ক্রীতদাসরা তো শুধুই কাঁদে নি। তাদের মেহনত নির্মমভাবে লুঠ করা হতো; কিন্তু তারা শুধুই মুখ বুজে তা সহ্য করে নি। শোষণের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, ওরাও দল বেঁধেছে, রুখে দাঁড়িয়েছে,— অনেক বার। আর তাদের এই বিদ্রোহে এমন কি ধুলো হয়ে গিয়েছে নানান রাজার রাজত্বও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের জিত অবশ্য হয় নি। পুরোনো শোষকদের ওরা মাঝে মাঝে হটিয়ে দিতে পারলেও তার জায়গা জুড়ে বসেছে নতুন শোষকের দল। শোষণের পালা একেবারে শেষ করে দেবার মতো অবস্থা তখন ছিলো না, সে-অবস্থা আজকের দিনে আজকের পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিত হয়নি বলে,-শোষণের পালা শেষ হয়নি বলে,—ক্রীতদাসদের ওই বিরোহকে তুচ্ছ করতে যাওয়াও চলবে না। কেননা, ওই বিদ্রোহের কাহিনী আমাদের মনে পড়িয়ে দেয় বঞ্চিত, লাঞ্ছিত মানুষের শক্তির কথা। তারা দল বেঁধে এক হয়ে রুখে দাঁড়াতে পারে, আর যখন রুখে দাঁড়ায় তখন দুর্বর হয়ে ওঠে তাদের শক্তি। সিপাই-শাস্ত্রী, পাইক-পেয়াদা কিছু দিয়েই তা আর রোখা যায় না। অন্তত সাময়িকভাবে তো নয়ই। কিন্তু প্ৰাচীন মিশরে এজাতীয় বিপ্লব সফল হয়নি; রাজার দাপটে শেষ পর্যন্ত হার মেনে যায় ।