পিজি/এলপিজি
রেডিয়ো স্টেশনটার নাম কী হচ্ছে তা হলে? কিংশুক সায়ন্তনকে জিজ্ঞেস করল।
‘ভৌ’ নামে তো রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যাবে না। ওই ১১১.৩ কিংবা ১১২.১ এরকম একটা নাম হবে, সায়ন্তন ওর ল্যাপটপে কিছু একটা টাইপ করতে করতে বলল।
অনিরুদ্ধ সিগারেটে বেশ জোরে দুটো টান দিয়ে বলল, ব্যাপারটার ইউএসপি কী হবে সেক্ষেত্রে?
সায়ন্তন মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি বলো।
অনিরুদ্ধ ঠোঁট কামড়ে বলল, অনেক লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে দেখেছি ওরা নিজেদের পছন্দসই নামটা না পেলে ওই নামটার ল্যাজা কিংবা মুড়োয় একটা শব্দ জুড়ে দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়।
যেমন? সায়ন্তন জিজ্ঞেস করল!
যেমন ধরো, ‘সমুদ্র’ নামটা আমার দরকার। এবার আমি সেই নামটা পাচ্ছি না। তখন ‘তবুও সমুদ্র’ নামটা চেয়ে অ্যাপ্লাই করলাম। পেয়েও গেলাম।
তোমার ওই লিটল ম্যাগের তত্ত্ব এখানে খাটবে না অনিরুদ্ধদা। ‘তবুও ভৌ’, ‘আবার ভৌ’ এরকম নাম একদম ঝুল হয়ে যাবে, কিংশুক বলল।
আমারও তাই ধারণা, সায়ন্তন বলল। তারপর যোগ করল, আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে।
কিংশুক চুপ করে গিয়ে অনিরুদ্ধর দিকে তাকাল। ওর মুখে একটা চাপা টেনশন খেলা করছে। স্বাভাবিক। ডুবতে ডুবতে মানুষ যখন একটা রাবারের চাকা ধরে ভেসে ওঠে, সেই চাকাটাই তখন তার কাছে তুলতুলে গদি। কিংশুকের নিজেরও মাথার মধ্যে একটা টুনি বাল্ব জ্বলছিল-নিভছিল, কী হবে, শেষ অবধি দাঁড়াবে কনসেপ্টটা, নাকি শেষ পর্যন্ত সেই একটার পর একটা লেখা কপি করেই যেতে হবে সারাজীবন? আবারও সায়ন্তনের দিকে তাকাল কিংশুক। অনিরুদ্ধ আর ওর বয়সের মাঝামাঝি বয়স ছেলেটার। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব! মনে হয় যেন একটা শাওয়ার। কেউ সামনে এসে দাঁড়ালেই স্নান করিয়ে দিচ্ছে। ওদিকে অনিরুদ্ধকে দ্যাখো। বালতি থেকে মগে করে জল তুলে বাচ্চাকে স্নান করানোর মতো কথার পর কথা বলেই চলেছে।
অনেকক্ষণ অনিরুদ্ধকে চুপ করে থাকতে দেখে অবশ্য সায়ন্তনই কথা বলল, শুধু নামটা নিয়ে না ভেবে আমরা আমাদের প্রোগ্রাম কনটেন্ট নিয়েও একটু ভাবনাচিন্তা শুরু করতে পারি।
কিংশুক কিছুটা ত্রস্ত হয়ে বলল, হ্যাঁ, সেটা তো করতেই হবে। কীরকম মেজাজ হবে চ্যানেলটার?
সেটা তো আপনারা ঠিক করবেন, সায়ন্তন হাসল।
না, মানে আমি বলছিলাম টার্গেট অডিয়েন্স কারা হবে? কিংশুক ওর কথাটা পরিষ্কার করে বোঝাতে চাইল।
অনিরুদ্ধ এতক্ষণে একটা মনমতো বিষয় পেয়েছে এভাবে একদম সিলিপয়েন্টে ক্যাচ করে নিল কথাটা, টার্গেট অডিয়েন্স আবার কী? পাঁচ থেকে পঁচাশি সবাই আমাদের টার্গেট অডিয়েন্স। শহর-মফস্সল, গ্রাম সবাই। একটা টিনএজার মেয়েকে যেমন আমাদের প্রোগ্রাম শোনাতে হবে, চণ্ডীমণ্ডপে হুঁকো হাতে বসে থাকা কোনও রিটায়ার্ড চাষিকেও আমাদের শ্রোতা করে তুলতে হবে।
হুঁকো এখনও এগজিস্ট করে? সায়ন্তন জিজ্ঞেস করল।
অনিরুদ্ধ একটু ফিউজ হয়ে গিয়ে বলল, করবে না কেন, নিশ্চয়ই করে… মানে তুমি রিসেন্টলি গ্রামের দিকে গিয়ে দেখেছ? সায়ন্তন ল্যাপটপ বন্ধ করল।
দেখেছি মানে, আগে তো দেখেইছি। এখন হুঁকো আছে না নেই, সেটা নিয়েই তো একটা প্রোগ্রাম খাড়া করা যেতে পারে! কী রে কিংশুক, তুই এটা নিয়ে একটা লিখে ফেলতে পারবি না?
আমরা বোধহয় একটু ভেগ হয়ে যাচ্ছি। যেরকম টাফ কম্পিটিশনের মধ্যে আমাদের কাজ করতে হবে, তাতে ভেগ হওয়ার মতো বিলাসিতা আমরা দেখাতে পারি না, সায়ন্তন গম্ভীর গলায় বলল।
সায়ন্তনের গলার টোন বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধ তাড়াতাড়ি ঝুঁকে পড়ে হাবিজাবি বোঝাতে শুরু করল সায়ন্তনকে। আর কিংশুকের মাথায় ঘুরতে লাগল ওই ‘ভেগ’ শব্দটা।
অনিরুদ্ধর সঙ্গে ও যখন আজ সায়ন্তনের ফ্ল্যাটের দিকে আসছে, তখন রাস্তার একাংশ আটকে অজস্র অটোরিকশা দাঁড়িয়ে ছিল। সেই ঘেরাটোপের একেবারে মধ্যিখানে একটা ছোট মঞ্চ, সেখানে হ্যান্ডমাইক হাতে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে একটা লোক—ভাইসব আমাদের যদি ডিজেল গাড়ি না চালাতে দেয়, পেট্রল গাড়ি না চালাতে দেয় তা হলে আমরাও ওদের চলাফেরা বন্ধ করে দেব। আপনারা জানেন আজ যারা আইনের অজুহাত দেখিয়ে পুরনো অটো বাতিল করে দেওয়ার কথা বলছে তারা একদিন এইসব অটোতেই চড়ত। চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে যেত। কিন্তু এখন তারা গাড়ি চড়ে, নার্সিং হোমে গিয়ে রেস্ট নেয়। কিন্তু আমরা ওইসব গ্যাসের অটো চালাতে পারব না, নার্সিং হোমে ভরতি হতে পারব না। আমাদের দাবি, আগে ভাল করে চালাও পিজি, পরে চালাবে এলপিজি।
লোকটার শেষ কথাগুলো শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল কিংশুক। অনিরুদ্ধ ওকে তাড়া দিয়ে বলল, চল-চল, সায়ন্তন অপেক্ষা করছে।
কিংশুক যেন শুনতে পায়নি এমনভাবে বলল, ওই লোকটা কী দারুণ মিলিয়ে দিল না, পিজি আর এলপিজি? কিন্তু অটোর সঙ্গে হাসপাতালের কী সম্পর্ক?
যে-কোনও প্রভাবশালী ইউনিয়ন লিডারের পনেরো-কুড়িটা হাসপাতালের সিট নিজের দখলে রাখতে হয়। কোনও অ্যাক্সিডেন্ট, কিংবা হঠাৎ অসুস্থতায় তোর কোনও চেলা যদি তোকে এসে ধরে, আর তুই তাকে হাসপাতালেই ভরতি না করিয়ে দিতে পারিস, তা হলে তুই কীসের নেতা? অনিরুদ্ধ ভুরু নাচাল।
ও, এটা তা হলে সমর্থকদের মধ্যে নিজের প্রভাব বাড়ানোর কৌশল?
এই তো বুঝেছ চাঁদু! এবার জলদি পা চালাও, অনিরুদ্ধ কিংশুকের গাল টিপে দিয়ে বলল।
একটা নরম নিচু গদিতে অর্ধেক মেঝে মোড়া, ওইপাশে একটা রট আয়রনের ছোট্ট খাট, মিষ্টি একটা শো-কেসের ভিতর দুটো বড় বড় বাঁকুড়ার ঘোড়া, ঘরটা যেখানে সরু প্যাসেজে মিশছে ঠিক সেখানেই দেওয়ালের গায়ে একটা আয়না, যে আয়নায় শোওয়ার ঘরে হেঁটে বেড়ানো কারও ছায়া দেখা দিয়েই অন্তর্হিত হল। কিংশুকের মনে হচ্ছিল এই ঘরটার সঙ্গে পিজি-র কোনও সম্পর্ক নেই, এটা একেবারে একশো শতাংশ এলপিজি। মৃদু, ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন। এমনকী উত্তাপও যেখানে নিয়মমতো চলে। পাইপ বেয়ে উঠে আসে, নব ঘুরিয়ে দিলেই নেমে যায়।
আচ্ছা, কুকুরের শরীরের উত্তাপ মানুষের শরীরের উত্তাপের থেকে অনেকটা বেশি তাই না? কিংশুক জোরে জোরে বলল।
কী বললেন আবার বলুন। সায়ন্তন একটু হতভম্ব হয়ে তাকাল ওর দিকে।
কিংশুক কিছু বলার আগেই একটু আগের আয়নার সেই ছায়াটা ঘরের মধ্যে এসে দাঁড়াল। কিংশুক আর অনিরুদ্ধর উপস্থিতি গ্রাহ্যের মধ্যে না এনে সায়ন্তনের দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে এবার বেরোতে হবে, সানি।
কিংশুক দেখল মেয়েটিকে। সায়ন্তনের ঘরের আবছা হলুদ আলোয় যতটা বোঝা যাচ্ছে তাতে সুন্দরীই বলতে হবে। সৌন্দর্যের চেয়েও পালিশটা বেশি। হালকা লাল একটা অফ-শোল্ডার টপ পরা। লালের ওপর সিকুইনের কাজ থাকায় ঝিকমিক করছে বেশ।
রূপমতী, বসুন একটু আমাদের সঙ্গে, অনিরুদ্ধ খুব বিনয়ী গলায় বলল।
আজ আমার একদম সময় হবে না। পরে কখনও… রূপমতী হাসল।
রূপমতীর হাসির বিদ্যুৎ ঘরের মধ্যে খেলে বেড়াতে বেড়াতে কোথায় যায়, কিংশুক সেটাই খেয়াল করছিল। কিন্তু সায়ন্তন ওর ধ্যানভঙ্গ করে বলল, আপনি কী যেন একটা বলছিলেন? বলেই রূপমতীর দিকে তাকিয়ে অল্প কিছুক্ষণ থাকার ইশারা করল। রূপমতী সায়ন্তনের পাশে বসে পড়ল।
আমি বলছিলাম যে, যেহেতু কুকুরের উত্তাপ মানুষের চাইতে বেশি, তাই হয়তো সে চেনা মানুষ দেখলেই ছুটে ছুটে আসে, লেজ নাড়ায়, পায়ে মুখ ঘষে, কিংশুক নিজেকে বিষয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এল।
একদম ঠিক, রূপমতী সায়ন্তনের কোলে ওর একটা হাত রাখল।
তো এই উত্তাপ ব্যাপারটাকে যদি কোনওভাবে ব্যবহার করা যায়।
কীভাবে? সায়ন্তন নির্লিপ্ত।
এই রেডিয়ো স্টেশনের নামের সঙ্গে উত্তাপ জুড়ে দিলে কেমন হয়? ধরুন, ‘ওয়ার্মথ ১১১.৩’?
রূপমতী তাকিয়াটা ফেলে দিল কোল থেকে। সোজা হয়ে বসে বলল, আমার মনে হচ্ছে আইডিয়াটা এক্সেলেন্ট। টেল মি সানি, তোমারও কি তাই মনে হচ্ছে না? কথাটা বলেই রূপমতী ওর হাত বাড়িয়ে দিল কিংশুকের দিকে। সেই হাতে সুড়সুড়ি দেওয়ার ইচ্ছেকে নিজের ভিতর গলা চেপে মেরে ফেলতে ফেলতে কিংশুক খেয়াল করল সায়ন্তন বদলে যাচ্ছে।
তুমি ঠিকই বলেছ রূপু, ‘ওয়ার্মথ’ নামটার মধ্যে একটা ম্যাজিক আছে, নামটা একইসঙ্গে সাদামাটা আবার ঝলমলে, যে-কোনও বয়সের যে-কোনও মানুষের মনে তোলপাড় তুলে দেবে নামটা। আমার মনে হয় স্পনসরদেরও ভাল লাগবে। কি, তাই না?
অনিরুদ্ধ আবার মঞ্চে নেমে পড়ল, ডেফিনিটলি লাগবে। নামে ‘ওয়ার্মথ’ আর কাজে ‘ভৌ’।
মানে? রূপমতী অনিরুদ্ধর দিকে তাকাল।
মানে যখন কেউ আমাদের রেডিয়ো স্টেশনে ফোন করবে, তখন আমরা “হাই’ বা ‘হ্যালো’ বলব না। আমরা বলব, ‘ভৌ’, যে-কোনও অনুষ্ঠান শুরুর আগে আমাদের অ্যাঙ্কররা, ছেলে হলে উদাত্ত গলায়, মেয়ে হলে মিষ্টি গলায় বলবে, ‘ভৌ’।
রূপমতী বলল, আর শেষ করার সময়?
ওই একই, ‘ভৌ’, ওয়ার্মথ ছড়িয়ে দিতে হবে না? অনিরুদ্ধ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল।
ওয়ার্মথ ব্যাপারটা অবশ্য শিগগিরই ছড়িয়ে গেল গোটা ঘরে। তাকিয়াগুলো এলোমেলো হয়ে গেল, মৃদু আলোগুলোর একটা নিভে গেল, সায়ন্তন আর রূপমতী আরও ঘন হয়ে বসল। যে-সায়ন্তন এতক্ষণ একটা দূরত্ব রেখে কথা বলছিল সে হঠাৎ করে ভীষণ আন্তরিক গলায় বলল, তোমরা কী খাবে বলো?
রূপমতী কিংশুকের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি না সন্ধেবেলা অ্যাপেল-পাই বানিয়েছিলাম। আপনারা ওয়াইনের সঙ্গে খাবেন?
অনিরুদ্ধ এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে কিংশুকের কোমরে পায়ের বুড়ো আঙুলটা দিয়ে একটা খোঁচা দিল, তারপর সায়ন্তনের দিকে তাকিয়ে বলল, খাওয়াদাওয়া চ্যানেল খুললে। আজ আসি, আজ আপনাদেরও তাড়া আছে।
রূপমতী ঘাড় বেঁকিয়ে বলল, এত ‘আপনি-আজ্ঞে’ কিন্তু আমার মোটেই ভাল লাগছে না। আমরা সবাই পরস্পরকে ‘তুমি’ বলতে পারি না?
সায়ন্তন বলল, অনিরুদ্ধ তো তুমিই বলে আমাকে, তোমাকে দেখে বোধহয় ভদ্রতা করছে। আর কিংশুক, আমার কিন্তু আপনার, সরি, তোমার সঙ্গে আলাপ করে খুব ভাল লাগল।
রূপমতী মুচকি হেসে বলল, আপনার দেওয়া নামটা কিন্তু সুপার্ব। আমার মনে হচ্ছে নামের জোরেই চ্যানেল হিট।
সায়ন্তন হঠাৎ গর্বিত হেডমাস্টারের গলায় বলে উঠল, এরা সবাই আমাদের সঙ্গে কাজ করবে রূপু, এরাই আমাদের অ্যাসেট।
আর আমি? রূপমতী দুষ্ট চোখে তাকাল।
ওহ্, ইউ উইল বি দ্য ক্রাউন। কী অনিরুদ্ধ? সায়ন্তন সমর্থন চাইল, রূপমতীকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে।
ও শিয়োর-শিয়োর, অনিরুদ্ধ বলতেই থাকল।
রাস্তায় বেরিয়ে কিংশুক বলল, তুমি বারবার শিয়ের-শিয়োর বলে যাচ্ছিলে কেন অনিরুদ্ধদা?
আমি একসঙ্গে দু’লাইন ইংরেজি কোনওদিন বলেছি? শুনেছিস?
তা হলে বলছিলে কেন তখন?
মনে হল ওই কথাটা লাগসই। শুনলে মেয়েটা খুশি হবে। আরে, ওই মেয়েটাই তো সব।
মেয়েটাই সব? সায়ন্তন নয়? কিংশুক অবাক।
সায়ন্তনের ব্রেন আছে, কিন্তু ক্যাপিটাল?
কেন, তুমি যে বললে সুনামির পরে ওর বিরাট পরিচয় হয়েছে?
হয়েছে রে বাবা, কিন্তু শুধু পরিচয়ের জোরে ক্যাপিটাল হয় না। তার জন্য রেফারেন্স লাগে।
ওই রূপুর রেফারেন্স?
অনিরুদ্ধ চোখ বড় করে বলল, কার মেয়ে জানিস?
কার?
নামটা শালা পেটে আসছে, মুখে আসছে না। বিরাট বড় আমলা রে, ইউরোপের অনেকগুলো দেশে তারপরে জাপানে না অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিল। ওই তোর ডেপুটি সেক্রেটারি না আন্ডার সেক্রেটারি কী একটা হয়ে রিটায়ার করেছে। এখন এনি মোমেন্ট কোথাও একটা রাজ্যপাল-ফাল হয়ে যাবে।
সেই ফিনান্স করছে নাকি তোমার ‘ভৌ’? কিংশুক হেসে ফেলল।
সে কেন করবে? তার রেফারেন্সে বড় বড় বিজনেসম্যানরা টাকা ঢালবে, অনিরুদ্ধ অসন্তুষ্ট গলায় বলল।
সেই টাকার হাড়-কাঁটা, ভুক্তাবশিষ্ট আমরা পাব তো গুরু? কিংশুক জিজ্ঞেস করল।
ডেফিনিটলি পাবি। আর তা ছাড়া তোকে ওদের পছন্দ হয়েছে। আজ একদিনেই ওরা বুঝে গেছে কীরকম ট্যালেন্টেড মাল অনিরুদ্ধ সাপ্লাই দিতে পারে।
আমার পারফরম্যান্স ঠিক আছে তো?
একদম। চল ধাবায় চল, আজ মদ আমি খাওয়াব। শালা, বলে কিনা, রাত দশটায় অ্যাপল পাই খেতে? রুটি-মাংসর অর্ডার তুই দিবি কিন্তু!
সায়ন্তনের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা আবার পিজি হাসপাতালের সামনে চলে এসেছিল। কিংশুক হাসপাতালের উলটোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, এই হাসপাতালে আমার জন্ম জানো তো অনিরুদ্ধদা!
অনিরুদ্ধ শুনেও না শুনে বলল, জন্ম তোক যথা-তথা কর্ম হোক ভাল। সায়ন্তনটায়ন্তনের সঙ্গে কথাবার্তার সময় যেদিকে ঢাল বুঝবি, সেদিকে নিজেকে গড়িয়ে দিবি, বুঝলি?
কিংশুক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, গড়িয়েই তো যাচ্ছি। কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল হয়ে গড়াতে গড়াতে পিজি থেকে আবার পিজিতেই ফিরে আসব। এলপিজি তো হতে পারব না।