পাষাণভার – মতি নন্দী
ধৰ্মতলার মোড়ের স্টপটা উঠে যাওয়ায় অনিলের মতো অনেকেই চলন্ত ট্রাম থেকে লাফিয়ে নামে। লাল আলো থাকলে অবশ্য ট্রামকে দাঁড়াতেই হয়, তখন লাফানোর দরকার হয় না। বহু দিনই অনিল ভেবেছে, দরকার কি এইভাবে নামার, মোড়টা পার হলেই তো টার্মিনাস। পঞ্চাশ-ষাট মিটার পথ বাঁচাবার জন্য নিজেকে মৃত্য সম্ভাবনার সম্মুখীন করা কেন। দু’চার দিন সে নামলও ধর্মতলা টার্মিনাসে ট্রাম থামার পর। কিন্তু অন্যান্যদের টপাটপ নামা দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারে না। শুধু মনে হয়, আবার এতটা পথ হেঁটে ফিরব! পঞ্চাশ-ষাট মিটার অর্থাৎ এক মিনিট দেরি করার ধৈর্যও অনিলের নেই।
সেদিন ট্রামটা ধর্মতলার মোড়ের কাছাকাছি, সবুজ আলো জ্বলছে। একটা লোক নামার অপেক্ষায়। লোকটাকে মাসে অন্তত বারো-তেরো দিন অনিল ট্রামে দেখে, কাছাকাছিই কোথাও চাকরি করে, ইলেকট্রিক বা ইনকাম ট্যাক্স বা এল আই সি অফিস। বা কোনও দোকান-টোকানে। তার পাশে আর একটা লোক, হাতে জীর্ণ একটা ফোলিয়ো, ট্রাউজার্সটা ঢলঢলে, গায়ে ঘেমো গন্ধ, নামার জন্য ইতিউতি পথের দু’ধারে তাকাচ্ছে। বোঝা যায় ভরসা পাচ্ছে না। অনিল বিরক্ত স্বরে বলল, “নামবেন যদি নামুন, নয়তো সরে দাঁড়ান।”
“হ্যাঁ নামি।” লোকটি ব্যস্ত হয়ে নামামাত্র রাস্তায় তালগোল পাকিয়ে গেল। পিছনেই একটা ডবল ডেকার বাস আসছে। ঘাড় ফিরিয়ে অনিল দেখল বাসের একটা চাকা লোকটার গায়ের উপর উঠছে।
“কী কথাই বললেন দাদা।”
অনিল চমকে দেখল তার সামনের লোকটি—যার সঙ্গে ট্রামে মাসে অন্তত বারো তেরো দিন দেখা হয়, কথাটা বলল। অনিল তৎক্ষণাৎ টুক করে চলন্ত ট্রাম থেকে নেমে ধর্মতলার ভিড়ে মিশে গেল।
সারাদিন অনিল কাজে মন বসাতে পারল না। লোকটি তার কথাতেই নেমে বাস চাপা পড়ল। হয়তো মরে গেছে। বাসের চাকায় কতটা ওজন থাকতে পারে তা-ই নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে বহুক্ষণ আলোচনা করল। বাসের নিজস্ব ওজন এবং অন্তত একশো যাত্রীর ওজনকে চার দিয়ে গুণ করে একজন জানালেন, কমকরে পঞ্চাশ মণ। অনিল নিশ্চিত হয়ে গেল, লোকটি আর বেঁচে নেই। এই মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে সেই যে দায়ী তা আর কেউ না জানলেও…অনিল ভাবতে ভাবতে থমকে গেল, আর সেই লোকটি জেনে গেছে। শুধুই কি জানা, অভিযোগ পর্যন্ত করেছে—‘কী কথাই বললেন দাদা!’
সুতরাং দুটি চিন্তায় অনিল কাতর হয়ে পড়ল। একটি মৃত্যু সে ঘটিয়েছে অতএব সে অপরাধী। মুশকিলের কথা, ব্যাপারটা সে মন থেকে মুছে ফেলতে পারছে না। যতই ভাবে ততই নিজেকে খুনি বলে মনে হচ্ছে। অন্যটি—তার এই অপরাধের একজন সাক্ষী রয়ে গেছে। হয়তো লোকটির সঙ্গে আর জীবনে সাক্ষাৎই হবে না, কারণ অনিল ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছে ধর্মতলা স্ট্রিটের কোনও ট্রামেই আর জীবনে উঠবে না। কিন্তু সব সময় মনে কি হবে না একটা লোক তাকে ফাঁস করে দিতে পারে? একটা পাষাণভার কি সর্বদা বুকের মধ্যে থেকে যাবে না?
এই দুটি চিন্তা এমনই জাঁকিয়ে বসল যে, সে ভেবে দেখল একমাত্র আত্মহত্যা ছাড়া রেহাইয়ের কোন পথ নেই। আর নয়তো অপরাধ কবুল করে শাস্তি নেওয়া। অনিল লেখাপড়া জানা বি এ পাশ। বয়স সাঁইত্রিশ, অবিবাহিত এবং বোধ হয় বিবাহ করবে না। বছর পনেরো আগে একটি মেয়েকে মনে মনে প্রেম দেওয়া এবং মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর চাকরির দরখাস্ত এবং ইন্টারভ্যু দেওয়া—এই দুটি কাজ ছাড়া এ পর্যন্ত উদ্যোগী হয়ে কিছু করেনি।
সমাধানের দুটি উপায় অর্থাৎ আত্মহত্যা নয়তো কবুল। এর প্রত্যেকটি অনিল যাচাই করল অফিস ছুটির পর গড়ের মাঠের ঘাসে চিত হয়ে শুয়ে। প্রথমে চিন্তা করল আত্মহত্যা প্রসঙ্গ—যদি মরে যাই তাহলে কেউ কি কোনও ভাবে উপকৃত হবে? লোকটি কি বেঁচে উঠবে? না। তার পরিবারবর্গ, নিশ্চয়ই বউ-ছেলেমেয়ে আছে, তারা কি উপকৃত হবে? হওয়ার কোনও কারণ অনিল খুঁজে পেল না। বরং দ্বিতীয় উপায়টাই ভাল ঠেকল তার কাছে। কবুল করলে পাষাণভারটা মন থেকে নেমে যাবে, আর যা শাস্তি দেবে তাইতে প্রায়শ্চিত্তও হয়ে যাবে।
সন্ধ্যা উতরে রাত অনেক এগিয়ে গেছে। অনিল দুর্ঘটনার স্থানটিতে হাজির হল। ভেবেছিল রাস্তায় রক্ত দেখবে। দেখল কিছুই নেই, শুকনো খটখটে। কলম সারাইওলাকে সে জিজ্ঞাসা করল, “সকালে এখানে একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল না?”
“কখন?”
“এই দশটা নাগাদ।”
“বাস চাপা?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। কী হল লোকটার?”
“সঙ্গে সঙ্গে মরে গেল। অ্যাম্বুলেন্স এল পুলিশ এল। ড্রাইভারটাকে পাবলিক খুব মারল সে-ও হাসপাতালে গেল।”
অনিলের আর শোনার স্পৃহা রইল না। অপরাধের বোঝা আরও বাড়ল। বাসের ড্রাইভারটা! বেচারার মার খাওয়ার, কতটা খেয়েছে কে জানে, মূল কারণ কেউ না জানলে কী হবে তাতে পাষাণভার যে আরও বেড়ে গেল, অনিল ক্রমশ অনুভব করছে।
“পুলিশ কী করল?”
“কী আর করবে। কয়েক জনকে জিজ্ঞাসা করল, আমাকেও। বললুম, চলন্ত ট্রাম থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গেল, বাসটা আসছিল, ব্রেক কষার আগেই চাপা গেল।”
“আপনি ওকে ট্রাম থেকে নামতে দেখেছিলেন?”
“আরে মশাই অতশত…” কথা শেষ না করে কলমসারাইওলা, আগন্তুক খদ্দেরে মন দিল।
অনিল ভাবল, একটি নিহত ও একটি আহত হওয়ার পিছনে আমারই অবিমৃশ্যকারিতা রয়েছে। এর জন্য শাস্তি না নিলে সারাজীবনই দগ্ধে মরতে হবে। কবুল করলে, সকাল দশটার আগে মনের যে ওজন ছিল তা ফিরে পাওয়া যাবে। সুতরাং এখুনি থানায় যাওয়া দরকার।
থানায় ঢুকেই সামনের টেবলে মোটা একটা খাতা নিয়ে যে লোকটি বসে অনিল তাকেই জিজ্ঞাসা করল, “সকালে ধর্মতলার মোড়ে যে লোকটি বাস চাপা পড়েছে সে কি মারা গেছে?”
“কেন?”
“আমি তার ঠিকানাটা চাই।”
“কেন?”
“দরকার, মানে ওর বাড়িতে যেতে চাই। কিছু বলার আছে।”
“তাহলে বাড়ির ঠিকানা কেন, স্বর্গের ঠিকানা দিতে হয়।”
“মারা গেছেন!” অনিল ব্যাপারটা পাকাপোক্ত ভাবে জেনে বিমর্ষ কণ্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলল, “ইস আমার জন্যই মারা গেলেন।”
শোনামাত্র পুলিশটি লাফিয়ে উঠে তার বড়বাবুর ঘরে অনিলকে নিয়ে গেল।
“স্যার আজ সকালের অ্যাকসিডেন্টটার জন্য ইনিই দায়ী।”
“কোনটে?”
“বাস চাপারটা।” চেয়ারটায় বসা উচিত হবে কি না অনিল তা ঠিক করতে না পেরে দাঁড়িয়েই বলল, “উনি ট্রাম থেকে নামার জন্য দাঁড়িয়ে, আমি তাড়া দিতেই ব্যস্ত হয়ে নামতে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটল। যদি তাড়া না দিতুম তাহলে উনি নামতেন না, মারাও যেতেন না।”
বড়বাবু কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে খুব বিরক্ত হয়েই বললেন, “এই আপনাদের দোষ। একটুও ধৈর্য ধরতে পারেন না। কেন, তাড়া দেবার কী ছিল, যদি এক মিনিট কি পাঁচ মিনিটও দেরি হয় তাতেই বা কী এমন ক্ষতি হত? একটা লোকের প্রাণ তাহলে বাঁচত। যান, আর কখনও এমন করবেন না। ধৈর্য ধরতে শিখুন।”
“কিন্তু স্যার, আমি এজন্য শাস্তি নিতে প্রস্তুত। আপনি আমায় জেলে দিন।”
“আমি কি জেল দেবার মালিক? হাকিম দেবে। সেজন্য মামলা তৈরি করতে হবে, সাক্ষী-সাবুদ প্রমাণ লাগবে, সে অনেক হ্যাঙ্গামা-ঝামেলা, বরং ওই যা বললুম, এবার থেকে ধৈর্য ধরে চলতে শিখুন, ভবিষ্যতে যেন আর কেউ আপনার জন্য না মরে, কেমন!”
অনিল বুঝল এ লোকটিকে ব্যাপারটির গুরুত্ব ঠিক বোঝান যাবে না। হয় এ ফাঁকিবাজ নয়তো তাকে বিকৃতমস্তিষ্ক ঠাউরেছে। তার পাষাণভার হাল্কা করতে এরা কোনও সাহায্যই করবে না। অবশ্য দোষও দেওয়া যায় না, অপরাধ কবুল করতে কেই বা এখানে আসে।
অনিল ভেবে দেখল বরং মৃত লোকটির বাড়িতে গিয়ে তার ছেলে-বউ বা নিকটস্থ আত্মীয়দের কাছে কবুল করাই ভাল। তারা উত্তেজিত হয়ে নিশ্চয়ই শাস্তির ব্যবস্থা করবে। মৃতের ঠিকানা চাইতেই পাওয়া গেল, অবশ্য অনিলের ঠিকানা এবং যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যও থানা লিখে রাখল।
হাঁটতে হাঁটতে অনিল ভাবল, বোধহয় বাড়াবাড়ি হচ্ছে। নামতে বললেই অমন বিপজ্জনকভাবে কি কেউ নামে! নিশ্চয় লোকটিরও দোষ ছিল। আমি শুধু নিমিত্তের ভাগী মাত্র। অন্য লোক হলে কি বলমাত্র নামত? নিশ্চয় না। অনিল নিজে যে নামত না, তাতে সে নিশ্চিত। এখন তার প্রধান ভাবনা—কেন যাচ্ছি এবং না গেলেই বা কী হয়।
অনিল তখন একটা সিনেমা বাড়ির সামনে এসে পড়েছে। শস্তার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে দেখে, চিন্তার হাত থেকে রেহাই পেতে ঢুকে পড়ল। ছবিতে একটা ব্যাপারে তার মজা লাগল, একই গায়ক তিনজনের বকলমে গান গাইছে। অন্তত তিনজন গায়ককে নিযুক্ত করা উচিত, এইটাই তার মনে হল।
ছবি দেখে বেরিয়ে মিনিট দশেক হাঁটার পর তার মনে হল মৃত লোকটির বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়েছে। পাষাণভারটা খুব বেশি আর ঠেকছে না, বোধহয় ছবি দেখার ফলেই নেমে গেছে! তবু এত কাছে যখন এসে গেছি বাড়িটার—সামনে দিয়ে একবার ঘুরেই যাই। আবার ভাবল, না গেলেই বা কী হয়। এই ধরনের টানাপোড়েন মিনিট চারেক তার মধ্যে চলল। শেষে ঠিক করল ব্যাপারটা আজকেই চুকিয়ে দেওয়া ভাল। পরে ঘটনাটা মনে পড়বেই তখন দগ্ধে মরতে হবে বরং কৃতকর্মের ফলাফলটা চাক্ষুষ দেখে রাখলে দগ্ধানির মাত্রা ঠিক থাকবে। হয়তো লোকটির এমন কেউ নেই যে বিপন্ন হয়ে পড়বে, হয়তো ভীষণ একটা পাজি লোক যার মৃত্যুতে অন্যে উপকৃতই হল, এ সব তথ্য জানা থাকলে অনুতাপ না-ও হতে পারে।
এই ধরণের যুক্তির বশবর্তী হয়ে অনিল মৃত লোকটির বাড়িতে উপস্থিত হল। কিছু লোক রাস্তার রকে গম্ভীর মুখে বসে। অনিল তাদের কাছে গিয়ে বলল, “এখনও আসেনি?”
“না, মর্গ থেকে ছাড়তে দেরি করছে।” একজন বলল। আর একজন বলল, “দেরি হবেই, তবে আর আধ ঘন্টার মধ্যেই বোধহয় এসে পড়বে।”
ভিতর থেকে ক্ষীণ কান্নার আওয়াজ আসছে। কণ্ঠস্বর যথোচিত বিষণ্ণ ও বিস্মিত করে অনিল বলল, “ইস জলজ্যান্ত মানুষটা আজ সকালেও দেখা হল অফিস যাবার পথে, প্রায় ব্যাপারটা ঘটার পাঁচ মিনিট আগেই।”
“নিয়তি আর কাকে বলে। কাল রাতেই আমায় বলল, দাদা গোটা পঞ্চাশেক টাকা ধার দাও। বললুম, আজ হাতে নেই কাল নিও। প্রায়ই নেয়, ঠিক শোধও দেয়। বড় সৎ লোক ছিল। প্রায় কুড়ি বছর ধরে দেখছি তো। আটটা ছেলেমেয়ের সংসার কুলোয় তো আর না। আজ সেই টাকাটা দিলুম ওর সৎকারের জন্য।”
কেউ মাথা হেঁট করল, কেউ চুকচুক শব্দ। অনিলের মনে হল এরা পাড়ার লোক।
“তবু কী বুদ্ধি ছিল, ইনশিয়োরের প্রিমিয়ামটা ঠিক দিত! বলত, যদি মরে যাই ছেলেমেয়েগুলো তো তবু কিছু টাকা পাবে। টো-টো করে ব্যাগ হাতে ঘুরি, কখন রাস্তায় মরব তার ঠিক কী। আর দেখ সেই রাস্তাতেই মরল।”
একজন ফিসফিস করে বলল, “ইদানীং তো সংসার আর চলছে না ইনশিয়োরের টাকাটা পেলে তবু কিছু কাল চলে যাবে।”
“বউটাও বেঁচে গেল। বাচ্চা হয়ে হয়ে শরীরের আর কিছু নেই।”
সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্য ঘাড় নামিয়েছে, অনিল সেই ফাঁকে হনহনিয়ে স্থান ত্যাগ করল। পরদিন সে অফিস যেতে ট্রামেই উঠল। ধর্মতলার মোড়ের কাছে ট্রামটা আসতে অনিল দরজায় এসে দাঁড়াল। এক ছোকরা নামবার জন্য ঠেলে ঠুলে এগোচ্ছে, বিরক্ত হয়ে সে অনিলকে বলল, “হয় নামুন নয় পথ দিন, এখানে পথ জুড়ে রয়েছেন কেন?”
অনিল একটুও নড়ল না। ছোকরা রেগে উঠল।
“আরে মশাই নামুন না।” ছোকরা অনিলকে বেশ জোরেই ঠেলা দিল। তাতে অনিল রেগে বলল, “কেন এটা কি ট্রাম স্টপ? নামি আর গাড়ি চাপা যাই।”
ছোকরা তখন অনিলের পা মাড়িয়ে নামতে গেল। ধাক্কা দিল অনিল। এতে ছোকরাটি ঘুঁষি মারল অনিলকে। ট্রাম ততক্ষণে ধর্মতলার মোড় পার হয়ে স্টপে দাঁড়িয়েছে। ভিড় জমে গেল। দোষটা কার, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল।
“কালকেই এখানে একজন ট্রাম থেকে নামতে গিয়ে বাস চাপা পড়ে মরেছে। আমি যে ওকে নামতে দিইনি সেটা কি খুব অন্যায় করেছি?” অনিল গলা চড়িয়ে বলল।
“আমি যদি চাপা যাই তো যাব, তাতে কার কী?” ছোকরাও গলা চড়াল।
“আপনি মরলে কি আমি দায়ী হতাম না?”
“কেন হবেন?”
“আপনার মৃত্যু হতে পারে জেনেও বাধা দিইনি বলে।”
জনতা অনিলকে তারিফ করে ‘নিশ্চয় নিশ্চয়’ বলে সমর্থন করতেই ছোকরা থতমত হল। “তা কেন, আপনি কেন দায়ী হবেন।”এই বলতে বলতে হাঁটা শুরু করছিল, অনিল হাত চেপে ধরল।
“জবাব দিন। আপনার যদি পাঁচটি ছেলেমেয়ে থাকে, আপনার রোজগারের উপরই যদি ভরসা করে থাকে সংসার, তাহলে আমি কি অপরাধী হতাম না?”
ছোকরা অধৈর্য হয়ে বলল, “না হতেন না, কারণ আমার বিয়েই হয়নি আর কেউ আমার রোজগারের ভরসায়ও নেই। তা ছাড়া ওরকম কোনও লোক বলামাত্র ট্রাম থেকে নামতে পারে না যদি না আত্মহত্যার মতলব থাকে।”
জনতা সায় দিয়ে মাথা নেড়ে, যে যার কাজে চলে গেল। তখন অনিল অফিস যেতে যেতে বোধ করল পাষাণভারটা একদমই নেই। তার মনে হল এজন্য ছোকরাটিকে কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত। তবে এটাও ঠিক, আমি মরলে ছোকরা সেটা আত্মহত্যা বলে নিশ্চয় চালাত, তাহলে সেটা খুবই অন্যায় হত।
০৫.০৬.১৯৬৬
লেখক পরিচিতি
মতি নন্দী : ১০ জুলাই ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্ম। ১৯৫৮ সালে শারদীয়া পরিচয় পত্রিকায় ‘বেহুলার ভেলা’ গল্প প্রকাশিত হলে খ্যাতি লাভ করেন। পেশায় ছিলেন সাংবাদিক। খেলা নিয়ে ভারতে গল্প উপন্যাস রচনার পথিকৃৎ। স্ট্রাইকার, স্টপার, কোনি প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৭৪-এ আনন্দ পুরস্কার। ১৯৯১-এ অকাদেমি পুরস্কার।