পারিবারিক কাহিনী

বাবা মিহির,
আমার ভালোবাসা জানিও, আশা করি ভালোই আছো
পর সমাচার এই যে
পৌরকর পরিশোধ করিবার পর পরই তোমার পত্রখানা
হস্তগত হইলো৷

কিছুদিন হইতেই মনটি ভালো নাই
রাঙ্গা এবং শ্যামার মধ্যে কথা কাটাকাটি
মুখ দেখা দেখি বন্ধ৷
তোমার দুই ভগিনীর ঝগড়ার বিষয়টিও খুবই তুচ্ছ
একটি মাত্র চেয়ার লইয়া
চেয়ারটি
কে আগে লইবে
ইহা লইয়াই সূত্রপাত৷

যাহা হউক,
দিন কয়েক আগে রাঢ়িখালের কবিরাজ মহাশয়
এই বাড়িতে আসিয়াছিলেন কয়েকটি বনজ গাছ
গাছড়ার সন্ধানে
কথা প্রসঙ্গে তিনি কহিলেন,
অতিসত্বর পৌরকর পরিশোধ না করিলে
বাড়িটি নিলাম হইয়া যাইবে৷
তোমার রাঙ্গাদিদির সানি্নপাতিক জ্বরের খবরটি
কেমন করিয়া যে সতীশ কবিরাজ সংগ্রহ করিলেন
একমাত্র ভগবান ছাড়া তাহা আর
কেহই জানে না৷

বাবা মিহির,
তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে মাত্র কয়েক বছর আগে
আমাদের এই গ্রামে বহুলোক দেহত্যাগ করিয়াছেন বায়ুরোগে,
বায়ুরোগ ছড়াইবার পূর্বেই কবিরাজ মহাশয় বলিয়াছিলেন
তিলের তৈল সংগ্রহ করিতে
তখন আমরা তাহার কথা শুনি নাই
যদি শুনিতাম
তাহা হইলে তোমার দুই দিদি
কখনোই কলহ করিত না
তোমার ঠাকুরদার
চেয়ারখানা লইয়া৷
কবিরাজ মহাশয় আরো বলিয়াছিলেন
বায়ুরোগের লক্ষণ হইলো
অগি্নমান্দ্য এবং দিবাস্বপ্ন, আর সানি্নপাতিক
জ্বরের লক্ষণ হইলো
শূন্যের দিকে তাকাইয়া থাকা
মাঝে মধ্যে অসম্ভব ক্ষিপ্ত হইয়া
ঘরের-কথা পরের নিকট বলিয়া দেওয়া৷

তবে, তোমার শ্যামাদির ইচ্ছা
তাহার ঠাকুরদার
চেয়ারটি তাহারই দখলে থাকুক৷
আবার তোমার রাঙ্গাদির ইচ্ছাটিও
অনুরূপ,
যাহাই হউক,
এই মুহূর্তে তোমার বাবার কাছে সেই চেয়ারটি নাই,
চেয়ারটি বিক্রি করিয়াই পৌরকর পরিশোধ করিয়াছেন
যদি তাহা
না করিতেন তাহা হইলে
বাড়িটি যে-কোনদিন নিলাম হইয়া যাইতো বলিয়া
আমার বিশ্বাস৷

বাবা,
এই পত্রখানা পাইবা মাত্র সাধনা ঔষধালয়ে গিয়া
মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা করিবার জন্য যদি তিলের তৈল
সংগ্রহ করিতে পারো তাহা হইলে
ডাকযোগে আজকেই পাঠাইয়া দিবা৷

ইতি
তোমার হতভাগিনী মা,
৭ই ভাদ্র, ১৪১৩

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *