পাখি

পাখি

বিষ্ণু এখনও বেঁচে আছেন। চুলে অল্প পাক ধরলেও বয়সের তুলনায় স্বাস্থ্য বেশ ভালোই। বরং বিষ্ণুর স্ত্রীর শরীর অনেক বেশি ভেঙেছে। দু-জনের বয়সের তফাত দশ থেকে পনেরো তো হবেই অথচ সুরবালাকে বেশ প্রবীণা বলেই মনে হতে পরে। বিষ্ণুর চোখ বেশ ভালো কাজ করছে। চশমা একটা আছে ব্যবহার করতে হয় না। ঝকঝকে দুপাটি দাঁত সারাজীবন নিম দাঁতনের কল্যাণে বিজ্ঞাপনের হাসি। ঋজু শরীরে অল্প মেদের ঢেউ। আরো দু-দশ বছর চাকরি করা যেত। নেহাত সরকারি অফিসের নিয়মেই অবসর নিতে হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ বিষ্ণু কিন্তু বৃদ্ধ নয়। নিজের ছেলের চেয়েও যেন যুবক। এক ছেলে এক মেয়ে। দু-জনেরই বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে কায়দা করে নিজের অফিসেই ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বিষ্ণু এখন ঠাকুর্দা এবং দাদু। ছেলে দিয়েছে নাতি, মেয়ে দিয়েছে নাতনি। বিষ্ণুর কোথাও যাবার জায়গা নেই, মেলামেশার বন্ধু নেই। সারাদিন বাড়িতে। কখনো নিজের ঘরে, কখনো ছাদে, কখনো দোতলার দক্ষিণের বারান্দায়। সুরবালা সারাদিনই সংসারের কাজে ব্যস্ত। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনি নিয়ে মশগুল। বিষ্ণু সময়ে চা পায়, খাবার পায়, স্নানের গরম জল পায়, হাতের কাছে পাট করা ধুতি পায়, কাচা গেঞ্জি পায়, ব্লাড প্রেসারের ওষুধ পায়, তৈরি বিছানা পায়, মশারি ফেলা পায়। সবই রুটিনে বাঁধা। বিষ্ণু অভিযোগ করতে পারবে না যে সে বুড়ো বয়সে নেগলেকটেড, কেউ তাকে দেখছে না। তবু বিষ্ণু নি:সঙ্গ। তার যখন ইচ্ছে হয় একটু গল্প করবে কী অতীত দিনের কথা বলবে তখন তার কাছে কেউ থাকে না। সুরবালা অনেক রাতে যখন ঘরে আসে তখন তার কাছে বিষ্ণু যেন একটা ফার্নিচারের মত, খাট কি সোফা কি আলমারির মত, বহুদিন আছে থাক, কাজে লাগুক না লাগুক। সারাদিনের খাটুনির পর সুরবালা আর একটুও বসতে পারে না। পুট করে আলো নিভিয়ে শুতে না শুতেই ঘুম। অল্প একটু নাক ডাকে। বিষ্ণু তাতে বিরক্ত হয় না। বরং ভালোই লাগে। আজকাল রাতে ঘুম আসে না। বিষ্ণু শুয়ে শুয়ে ছটফট করে সুরবালার ক্লান্ত মুখের দিকে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে, শ্বাসপ্রশ্বাসের দীর্ঘ হাপরের শব্দ শুনে নিজে ঘুমোবার চেষ্টা করে। এক সময় ঘুমিয়েও পড়ে। সকালে হঠাৎ জেগে উঠে দেখে রাতের সুরবালা দিনের সুরবালা হয়ে সংসারে জুড়ে গেছে। বিষ্ণু বুঝেছে বেঁচে থাকার অর্থ জীবন নয়। বেঁচে থেকেও মানুষ মরে যেতে পারে, ফুরিয়ে যাওয়া মানুষের মতো একপাশে পড়ে থাকতে পারে অসহায়ের মতো।

বিষ্ণুর ধর্মভাবও তেমন প্রবল নয়। জপ, তপ, ধ্যন, প্রাণায়াম, গুরু, তীর্থ এসব নিয়ে যে মেতে থাকবে তাও সম্ভব হয়নি। বিষ্ণু কিছু বই, খবরের কাগজ, টবে গোটাকতক গাছ আর খাঁচায় একটা পাখি নিয়ে দিন কাটায়। এর মাঝে নাতি হয়তো আসে তার খেয়ালে। ছটফটে স্বভাব। পৃথিবী তার কাছে নতুন। সবে সে চোখ খুলে দেখতে শিখেছে। তাকে এক জায়গায়, এক কাজে বেশিক্ষণ ধরে রাখা অসম্ভব। বিষ্ণুর ছেলে খরগোশ পুষেছে সারাদিন একটি শিশুতে ঘরগোশেতে মহা মাতামাতি। দু-জনেরই কালো মার্বেলের মতো চকচকে চোক। দু-জনে দু-জনের দিকে তাকিয়ে যখন থমকে থাকে বিষ্ণুর মনে হয় পৃথিবী যেন ওই মুহূর্তে নতুন করে জন্ম নিচ্ছে। আগামী সমস্ত দিনের প্রাণ যেন ওই মুহূর্তটিতে ধরা আছে।

সকাল বেলা দক্ষিণের বারান্দায় তারের খাঁচাটা ঝুলছে। দূরে ঝলসানো শরতের নীল আকাশ। বিষ্ণু ঘরের দরজার সামনে ইজিচেয়ারে বসে খাঁচাটার দিকে তাকিয়েছিল। আকাশের ঘননীলের খানিকটা যেন তারের ঘেরাটোপে থৈথৈ করছে তাতে অবগাহন করে আছে একটি হলুদ টিয়া। নীল আর হলুদ মিলেমিশে সবুজ। পাখিটা মাঝে মাঝে দাঁড়ে বসছে। মাঝে মাঝে নেমে পড়ছে। কখনো বাটি থেকে একটা ছোলা ধারালো ঠোঁটে কেটে কেটে নীচে ফেলে দিচ্ছে। ঘাড় কাত করে মুক্ত আকাশের মুক্ত পাখির ডাক শুনছে। এক নাগাড়ে পাখিটা চার বছর খাঁচার আকাশে বন্দি। আকাশে সাঁতার কাটার জোর নেই পাখিটার ডানায়। উড়িয়ে দিলেও উড়তে পারবে না।

বিষ্ণু পাখিটার দিকে যখনই তাকায় সুরবালার কথা মনে পড়ে। সুরবালার যৌবন, সুরবালার প্রৌড়ত্ব, বার্ধক্য। বিষ্ণুর সংসারের খাঁচায় সুরবালা বন্দী। সোনার শেকলে বাঁধা সুরবালা প্রথম প্রথম কত শিস দিত, গান গাইত, ডানা ঝাপটাত! এখন নীরব। পালকের আর সে জেল্লা নেই। গলায় আর সেরকম সুর নেই। খাঁচার আকাশ আর মুক্ত আকাশের তফাত পাখি বুঝতে পারে না। বিষ্ণু মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, পাখি তুমি সুখে আছ কি? পাখি কোনো উত্তর দেয় না। দিতে পারে না। পাখি জানে না সুখ কী?

সকালের রোদ লুটিয়ে পড়েছে বিষ্ণুর পায়ে। বেশ তাত লাগছে লাগুক। মাসখানেক হল পায়ের পাতা দুটো অল্প অল্প ফুলছে। শরীরে চিনি জমেছে। কিছু করবার নেই! একটা বয়েসের পর শরীরের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। হাত পা ছেড়ে দিয়ে দেখতে হয়, চুলে পাক ধরছে, দাঁত পড়ে যাচ্ছে, চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসছে। শরীরের সন্ধিতে সন্ধিতে জল জমছে। কোমর ভাঙতে অসুবিধা হচ্ছে। দেহের জীর্ণ পিঞ্জরে পাখি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে।

চেয়ারের হাতলে সুরবালা চায়ের কাপ নামিয়ে রাখল। বিষ্ণু আড়চোখে দেখল সুরবালার যৌবনের সেই গোল গোল হাত আর নেই। শির উঠেছে। শাঁখা, নোয়া, চুড়ি সব ঢলকো হয়ে গেছে। এক সময় যার গলা ছিল মরালগ্রীবা সেই গলা এখন শকুনের মতো অসুন্দর। কোথায় সেই চাঁদের মতো মুখ। গাল ভেঙে গেছে। চোখের সাদায় সমুদ্রের নীল চকচক করছে না। শরীরের পিত্ত হলুদের ছাপ ফেলেছে চোখ। চায়ের কাপ রেখে সুরবালা সোজা হয়ে দাঁড়াতেই বিষ্ণু খপ করে তার ডানহাতটা চেপে ধরল। সুরবালা সামনে একটু ঝুঁকে পড়ল। বিষ্ণু বললে, তুমি ভীষণ রোগা হয়ে যাচ্ছ সুরো, কেন এমন হচ্ছে বলো তো?

সুরবালা স্বামীর হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে বললে, বয়েস হচ্ছে না! কত বছর এসেছি বলো তো তোমার সংসারে! আমার তো মনে পড়ে না বাপু। শাড়ির আঁচল গুছিয়ে সুরবালা চলে যাচ্ছিল। বিষ্ণু বললে ‘বোসো না একটু। তোমার চা-টাও নিয়ে এসো না। একসঙ্গে খাই।’

সুরবালা হেসে ফেললে ‘খুব বলেছ! এখন বলে আমার মরবার সময় নেই। অফিসের ভাত টিফিন। বউমাও বেরোবে। আজ থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে। এখন আমার বসার সময় নেই গো।’ সুরবালা হাসিটাকে আর মধুর করে দ্রুত চলে গেল। বিষ্ণু কাপটা হাতে তুলে নিয়ে মনে মনে গাইল, লোহারই বাঁধনে বেঁধেছে সংসার। বিষ্ণু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো সুরবালা চলে যাচ্ছে কাপড় গোড়ালির কাছে উঁচু করে পরা। সেই মোমের মতো মসৃণ গোড়ালি আর নেই। খরায় ফাটা মাঠের মতো, কালচে কালচে দাগ। সুরবালা কি জানে তার যৌবন চলে গেছে! নিশ্চয়ই জানে তবে গ্রাহ্য করে না। জানে বলেই আর আগের মতো সাজে না। কপালে সিঁদূরের টিপ। প্রসাধন নয় এয়োতির চিহ্ন।

বিষ্ণুর হাতের কাছে সকালের কাগজ, একটা ফিলম ম্যাগাজিন একটা ছবির অ্যালবাম। অ্যালবামটা বইয়ের আলমারি থেকে আজ সকালেই বিষ্ণু নামিয়েছে। কত যুগের কত ছবি এর পাতায় পাতায় লেপটে আছে। বিষ্ণুর এখন কিছু করার নেই বলেই যা খুশী তাই করতে পারে। সকালের বাজার ছেলে করে। চা খাওয়া শেষ। দশটা নাগাদ সুরবালা একবাটি মুড়ি আর এককাপ চা দিয়ে যাবে। বারোটা নাগাদ বাথরুমে গরম জল পড়বে। বিষ্ণু যেন সময়ের রাজা, লর্ড। বারান্দায় বসে বসে সে দেখবে তার ছেলে একটু পরেই বাস রাস্তার দিকে ছুটছে। আজ থেকে বউমাও ছুটবে কলেজের দিকে। সামনের বাড়ির বারান্দায় একটি মেয়ে দ্রুত চুল আঁচড়ে চলেছে। কোমর অবধি এক মাথা লম্বা চুল নিয়ে রোজই মেয়েটি ভারি বিব্রত হয়। সম্ভবত কোনো বেসরকারি অফিসে চাকরি করে। সবে কয়েক মাস হল এ পাড়ায় ভাড়া এসেছে। এখনো আলাপ-পরিচয় হয়নি। একদিনমাত্র বিষ্ণুর সঙ্গে মেয়েটির সামান্য একটু হাসি বিনিময় হয়েছে। উপলক্ষটা ছিল হাসবার মতোই। চুলে আর চিরুনিতে জড়ামড়ি হয়ে চিরুনিটা ছিটকে সোজা রাস্তায় গিয়ে পড়েছিল। মেয়েটি প্রথমে বারান্দার রেলিং ধরে রাস্তার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল তারপর চোখ তুলতেই বিষ্ণুর চোখের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ। বিষ্ণু হাসার আগেই মেয়েটি হেসে ফেলেছিল। বিষ্ণু সেদিন অনেকদিন পরে হো হো করে প্রাণ-খোলা হাসি হেসেছিল দুটো কারণে, এক মেয়েটির অপ্রস্তুত অবস্থাটা হাসি দিয়ে সহনীয় করে তোলার জন্যে, দুই তার নিজের অফিস বেরোবার তাড়ার সময় নানা ঘটনার কথা ভেবে। সবচেয়ে মজা হত কাপড়ের কোঁচা নিয়ে। ঝড়ের বেগে কোঁচা কোঁচাতে কোঁচাতে ঠিক গোঁজার মুখে হাত ফসকে প্রায়ই ফরর করে মাটিতে খুলে পড়ে যেত তখন আবার বিগিন ফ্রম দি, বিগিনিং। আর সেই মুহূর্তে সুরবালা কিছু বলতে এলেই ধুম ঝগড়া বেধে যেত, যেন সুরবালার কথার জন্যেই কোঁচা ফসকে গেছে। সেই সব দিনের কথা ভেবে বিষ্ণু আপন মনে আর একবার হেসে উঠল। কাছা কোঁচা সামলাতে সামলাতেই জীবন শেষ হয়ে গেল। অকারণে কত মান অভিমান, কত প্রলয়কান্ড। রক্তে তখন জোয়ারের টান ছিল। এখন ভাঁটার টানে নৌকো চলেছে। সামনেই শান্তির পারাবার। এখন সে প্রগলভতা নেই, সে উদ্দামতা নেই। এখন প্রয়োজনে কথা অপ্রয়োজনে নীরবতা। অভিমানে উদাস। ক্রোধে গম্ভীর।

সামনের বারান্দায় মেয়েটির চুল বাঁধা শেষ। আলো পায় বলেই বোধ হয় আয়নাটা অমন জায়গায় ঝুলিয়েছে। সুরবালাও এক সময় অমনি করে চুল বাঁধত দু-হাতের তালুর চাপে কানের পাশের চুল ফাঁপিয়ে তুলত। তখনকার দিনের ওইটাই ছিল রেওয়াজ। সুরবালার চুলে এখন বোধ হয় তেলই পড়ে না। তেল পড়লেও চিরুনি পড়ে কি! ভালো করে একদিন লক্ষ করে দেখতে হবে। আজকাল কোনো কিছুই যেন তেমন মনোযোগ দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে না।

বিষ্ণু অন্যমনস্কভাবে অ্যালবামটা কোলের ওপর রেখে একটা পাতা খুলেছে প্রথমটা তার দৃষ্টি অ্যালবামের দিকে ছিল না, ছিল খাঁচার দিকে। খাঁচার আকাশে সাদা মেঘ। পাখিটা আর সবুজ নয় কালো। স্থির হয়ে বসেছে এতক্ষণে। বিষ্ণু চোখ নামাতেই যে ছবিটা দেখল, ছবিটি একটি যুবকের। স্বাস্থ্যবান, একমাথা কোঁকড়া চুল, ফর্সা, সুন্দর চেহারা। জ্বলজ্বলে উদার দু-টি চোখে বিষ্ণুর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে বিষ্ণুর মুখের আদল আসে।

ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল বিষ্ণু। সময় পেছোতে শুরু করেছে। এই বাড়ি এই বারান্দা। গৃহপ্রবেশের দিন। চাকরির প্রায় শেষাশেষি সময়ে বিষ্ণুর বাবা বাড়িটা তৈরি করেছিলেন। দুই ভাই বিষ্ণু আর নারায়ণ। এক বোন সুরমা। বারান্দার এ-থাম থেকে ও-থামে আমপাতা আর শোলার ফুলের মালা খাটাচ্ছে দু-ভাই বিষ্ণু আর নারায়ণ। নারায়ণ বড়ো, বিষ্ণু ছোটো। বয়সের ব্যবধান দু-বছরের। নারায়ণ চেয়ারে উঠে জাফরির একটা আঙটায় মালার একটা দিক বাঁধছে। আনন্দের দিন, দু-জনেই হাসছে, নানা কথা বলছে। আঙটাটা বেশ উঁচুতে। চেয়ারে উঠেও নারায়ণ হাত পাচ্ছে না। আঙুলে ভর দিয়ে শরীরটাকে একটু উঁচু করতে হয়েছে।

না, সেদিনের কথা বিষ্ণু ভাবতে পারছে না। মেয়েটির হাত থেকে সেদিন চিরুনিটা ছিটকে রাস্তায় পড়ায় বিষ্ণু প্রথমে হেসেছিল। তারপর উঠে গিয়ে কালো চিরুনিটা রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। নারায়ণ একদিন ওইভাবেই পড়েছিল, হাতে আমপাতা আর শোলার ফুলের মালার ছেঁড়া একটা অংশ। মেয়েটিও বারান্দার রেলিঙে হাত রেখে ঝুঁকে পড়ে চিরুনিটার দিকে তাকিয়ে ছিল। বিষ্ণু ভয়ের গলায় মেয়েটিকে বলেছিল, ঝুঁকো না ঝুঁকো না, পড়ে যাবে। বিষ্ণুর অহেতুক ভয় দেখে মেয়েটি হয়তো অবাক হয়েছিল। পরে বিষ্ণু ভেবেছিল অমন আকুলভাবে তার চিৎকার করা উচিত হয়নি।

বিষ্ণু বড়ো ভাইয়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে ক্রমশ যেন ছোটো হতে শুরু করল। বিষ্ণু কুঁচকে যাচ্ছে। সেই চিন্তাটা আবার, আবার তাকে হত্যা করতে আসছে। উপায় নেই বিষ্ণু না ভেবে পারছে না, নারায়ণ তুমি নেই তাই আমি আজ এত ভালো আছি। বাড়িটা দু-ভাগ হয়নি। তোমার সংসার আর আমার সংসার একসঙ্গে বিশাল একটা যৌথ কলরবে আমার অবসর জীবনের শান্তি কেড়ে নিতে পারেনি। তুমি নেই, আমি বেশ আছি।

বিষ্ণু এসব ভাবতে চায় না। ছি ছি এসব ভাবা উচিত নয়। বিষ্ণু, অ্যালবাম মুড়ে লাফিয়ে উঠল। ফুলগাছের টবের মাটি আলগা করে দেখুক মনটা অন্যদিকে যায় কিনা। ও বারান্দায় মেয়েটি নেই। শুধু আয়নাটা দেওয়ালে ঝুলছে। কোনো মুখ নেই সেখানে, নিরাকার আকাশ ঝলসে উঠছে। টিয়াটা ভোরের মতো সবুজ নেই। আকাশ যত উজ্জ্বল হচ্ছে টিয়াটা যেন কালো সিল্যুয়েট হয়ে যাচ্ছে।

বিষ্ণু টবের গাছের সামনে উবু হয়ে বসে চিৎকার করলেন, ‘কই আমার দাদু কই’! হুড়মুড় করে শব্দ হল ভেতরে। প্রথমে এল খরগোশ পেছনে এল ফুটফুটে একটি শিশু।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *