পাক সার জমিন সাদ বাদ
আমরা ইছলামে জিহাদে বিশ্বাস করি। সব মুসলমানের জন্য এটা ফরজ। আমরা বিশ্বাস করি যতদিন না পৃথিবীর সমস্ত কাফের ইসলামে ঈমান আনবে, ততোদিন আমাদের জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে; জিহাদ পরম রাহমানির রাহিম আল্লাহর নির্দেশ, তা আমরা হরফে হরফে পালন করবো; নিজেদের বুকের খুন দিয়ে, কাফেরদের বুকের খুন নিয়ে। আমরা কোন ভণ্ডামোতে বিশ্বাস করি না; ভণ্ডামো হচ্ছে নাছারদের, মালাউনদের ধর্ম ও কর্ম; তবে অনেক ভন্ড আছে, যারা মুছলমানের ছদ্মবেশে প’রে আছে, তারা মহান আল্লাহর বাণীর ব্যখ্যা দেয় শয়তানের মতো,- তারা শয়তান, তারা শয়তানের ছহবতে উৎপন্ন; তারা বলে, ইছলামে আর গণতোন্ত্রে কোন বিরোধ নাই। যারা একথা বলে, তারা কাফের, তারা মুরতাদ। ইছলাম হচ্ছে আল্লাহর, গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের নামে খানকিবৃত্তি হচ্ছে কাফেরদের, নাছারদের ইহুদীদের খ্রিষ্টানদের; কাফেরদের ধ্বংস করা হচ্ছে রাহমানির রাহিম আল্লাহতালার অকাট্য নির্দেশ। ধ্বংস করতে হবে নিরন্তর, নিদ্রাহীন, বিরামহীন জিহাদের মাধ্যমে।
আল্লা-রছুলের বাণী ঠিক বুঝিয়েছেন হজরত আবু আলা মওদুদি ও আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি, বেহেশতে তাঁরা শ্রেষ্ঠ স্থান পাবেন। এক সময় আমি সাম্যবাদ ও সর্বহারা করেছি- নাউজুবিল্লা,- মাক্স-এঙ্গেলস-লেলিন-ট্রটক্সি-স্ট্যালিন-মাওসেতুং নামের কতকগুলো ইবলিশ, শয়তান, ডেবিলের, মেফিস্তোর, বই পড়েছি; মনে করেছি শ্রেণীসংগ্রামই আসল কথা, সর্বহারার একনায়কত্ব স্থাপনই ইতিহাসের বিজ্ঞান-নাউজুবিল্লা; তারপর পাক ইছলামের পবিত্র কিতাবগুলো প’ড়ে বুঝতে পারি আমি কাফের হয়ে গিয়েছিলাম, বইগুলো পরা সহজ বুঝাও সহজ; কোন কচকচি নেই, আছে চরম সত্য, চরম নির্দেশ; আমি তওবা ক’রে ইছলামে ফিরে আসি, যেমন ফিরে এসেছেন আমার অনেক নেতা, প্রায় সব নেতা, যারা সাম্যবাদের জন্য নিজেদের কোরবানি করেছিলেন, এখন তাঁরা অন্য রকমে বলি হয়ে গেছেন। ওই কুফরি থেকে আমাকে উদ্ধার করে ‘জামঈ জিহাদে ইছলাম পার্টি। হজরত আবু আলা মাওদুদি ও আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনির কিতাব প’ড়ে আমি বুঝতে পারি খাঁটি ইছলামকে; আমরা দিল বদলে যায়, আমি পাক হয়ে উঠি, জিহাদি হয়ে উঠি।
আমার দিল বদলে যাচ্ছিল আগে থেকেই। আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনির লেখা প’ড়ে আমার দিল সৎ পথে ফিরে আসে; আমি জোশ বোধ করি, গোলগাল দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার ঘেন্না লাগে-আল্লাতালার দুনিয়ায় এখনো এত কাফের, এত নাছারা, এত মালাউন! অথচ আল্লাতালা চৌদ্দো শ বছর আগে নির্দেশ দিয়েছেন জিহাদের। আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, জিহাদ সমস্ত মুছলমানদের জন্য ফরজ, শুধু ল্যাংড়া আতুর কানা খোঁড়া ছাড়া; জিহাদ ক’রে সারা দুনিয়ায় ইছলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, যাতে সব দেশের সব মানুষ ইছলাম মেনে চলে। কেনো ইছলাম সারা দুনিয়া জয় করতে চায়? তা বুঝার জন্য ইছলামের কিতাব পড়তে হবে, দিলে সেগুলোকে স্থির ক’রে রাখতে হবে। জিহাদই ইছলামের মর্মবাণী; যারা ইছলামের কিছুই জানে না, তারাই বলে ইছলাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে; তাঁরা মূর্খ তাঁরা ভণ্ড, তাঁরা হারামখোর।
আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, ইছলাম বলে সব কাফেরদের কতল করো, যেমন তারা তোমাদের কতল করতে চায়। মুছলমানেরা কি ব’সে থাকবে? আর কাফেররা তাদের গিলে খাবে? ইহুদিরা তাদের গোস্ত খাবে? মালাউনরা তাদের মগজ খাবে? নাছারারা তাদের রক্ত খাবে? তা হতে পারে না। আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, ইছলাম বলে তাদের কতল করো, তাদের বুকে তলোয়ার ঢুকিয়ে দাও, তাদের ছিন্নভিন্ন করো। মানুষকে তলোয়ার ছাড়া বসে আনা যায় না, তাই তলোয়ার দরকার তলোয়ার হচ্ছে বেহেশতের চাবি। মহান আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেনি বলেছেন, যারা জিহাদ করতে চায় না, যারা ইছলামেরর যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়, তিনি তাদের মুখে থুথু দেন। আমি তাহেরির হোলি টেরর বইটি প’ড়ে, তাতে মহান আয়াতুল্লা রুহুল্লা খমেনির ব্যাখ্যা প’ড়ে আমি আমার ধর্মকে, পবিত্র ইছলামকে, বুঝতে পারি। জিহাদ হোলি টেরর, পবিত্র সন্ত্রাস- এটা এখন আমার জীবন।
ওই যে ডেবিল মাক্স-এঙ্গেলস-লেলিন- ট্রটক্সি-স্ট্যালিন–মাওসেতুংয়ের কিছু কাফেরি বই পড়েছিলাম, সেগুলি একদিকে আমাকে সাহায্য করেছিল। ওগুলোও টেররের বই, যদিও আনহোলি, নাপাক, অপবিত্র; তাই গণতন্ত্র নামের ধাপ্পায়, মানুষের অধিকার নামের খানকিবৃত্তিতে, বাকস্বাধীনতা নামের জেনায় আমি কখনো বিশ্বাস করি নি; তাই হোলি তেড়রে আমি খুব সস্তি বোধ করি, শান্তি পাই। আমার জীবনের একটি অংশ নষ্ট হতো না যদি আমার পশম গজানোর আগেই পেতাম আবু আলা মাওদুদি ও আয়াতুল্লার কিতাব। আমি তওবা করে আল্লাহর কাছে মাপ চাই; উদ্ধারের পথ খুঁজি। আমাকে পথ দেখায় জামাঈ জিহাদে ইছলাম পার্টি। এই পার্টি হচ্ছে অন্ধুকারের আলোকবর্তিকা, আমানিশার পর সোবে সাদেকের শামস।
আমাদের জামাঈ জিহাদে ইছলাম পার্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ, কৌশলগত ও অত্যন্ত গোপন বৈঠক বসেছে; মাঝেমাঝেই এমন বৈঠককে আমরা বসি, দুনিয়াকে নাছার মুক্ত করি, দেশকে পাক স্তান করি। এমন বৈঠক-এ-খাসে সব জিহাদি থাকে না, থাকেন প্রধান কয়েকজন নেতা এবং আমরা কজন,- আমরা কজন থাকবো সেটা ঠিক করার কাজ আমার, আমি এই স্তানের জিহাদিদের মধ্যে এক নাম্বার। দেশটাকে আমারা তন্ন তন্ন করে কয়েকটি স্তানে ভাগ ক’রে নিয়েছি, আমরা ভাগের স্থানের নাম ‘মদিনাতুন্নবি’, এইটিই প্রধান অঞ্চল; ইছলামে মক্কার থেকে যেমন বেশী গুরুত্বপূর্ণ উতরিব, যার নাম বদলে রাখা হয়েছিল মদিনাতুন্নবি। আমাদের পাক সার জমিনও শুরু হবে এই স্থান থেকেই।
আমরা পাক পবিত্র ইছলামি খুনে, আল্লাহর নামে খুনে, যার ফলে দেশ দখল করবো আমরা, তাতে বিশ্বাস করি; আমরা জানি খুন ছাড়া মহাসত্য কখনো প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমরা বিছমিল্লা ব’লে খুন করি, বলি, ‘হে আল্লা রাহমানের রাহিম আপনার নামে খুন করিতেছি, আমাদিগকে বেহেশতে নছিব করিবেন। আর যদি ভুল খুন করি, তাহলে আমাদিগকে মাফ করিয়া দিবেন।‘ খুনে, ধর্মে, ও একটি মহৎ কর্মে- যাকে নাছারা ‘দুর্নীতি’ বলে, তাতে আমরা এখন আমরা দুনিয়া এক নাম্বর আসন অধিকার ক’রে আছি। তবে আসল কথা হচ্ছে স্তানকে ফিরিয়ে আনতে হবে, শরিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
দেশ মুরতাদ ও ইহুদিতে ভ’রে গেছে, দেশ নাপাক হয়ে গেছে, একে আবার পাক করে তুলতে হবে। পাক পবিত্র স্তানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। স্থান নেই ব’লে আমাদের দিলে শান্তি নেই; আমরা সব সময় স্তানের স্বপ্ন দেখি; স্তান থেকে খেজুর, বাশমতি চাউল এনে খাই, তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলি, আমাদের লকলকে যুবতীগুলো তাদের দাড়িঅলা দাড়িছাড়া খেলোয়াড়দের চুমো খাওয়ার, দেহ দেয়ার জন্যে পাগল হয়, তাদের হোটলে গিয়ে চিৎ হয়। তাদের দুই চারটি মেজর-লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসে মাসে ছফরে না এলে আমরা দিলে সুখ পাই না। এভাবে আমরা একটু পাকের পরশ পাই। নাপাক ওয়াতানে বাস করা শুয়োরের গোস্ত খাওয়ার থেকেও হারাম। নাউজুবিল্লা।
আমরা একলা নই; আমাদের ভাইয়েরা আছে দুনিয়া জুড়ে, তাদের কাজ ক’রে চলেছে; কোথাও যদি কোন দালানের ওপর এরোপ্লেন ঝাঁপিয়ে পরে। যদি কোন গাড়ি হাসপাতালে হোটেলে ঢুকে সব কিছু চুরমাচুর ক’রে দেয়, যদি কোন প্রমোদকেন্দ্রে বোমায় ৩০০ জন মরে, তখন বুঝি সেটা আমাদের ভাইদের কাজ। এক অর্থে আমাদেরই কাজ। এটা জিহাদ। আমরা আমাদের কাজ ক’রে চলেছি; দেশ এক রকম দখলই করে ফেলেছি, পুরোপুরি করতে বাকি নেই। আমরা মেইন পার্টির সঙ্গে আছি, মেইন পার্টিতে আমাদের লোক আছে, মেইন পার্টিতে এখন আমাদের লোকই বেশী; তারা কাজ ক’রে যাচ্ছে; বেশী দিন নেই আমরা দেশটিকে আমাদের নিশানের নিচে, আমাদের পায়ের নিচে নিয়ে আসবো। আমাদের জিহাদ চলছে চলবে।