পল এলুয়ার

কাল সারা রাত ভোর করে দিলে তুমি।
মনে হচ্ছিল শিকড় নামছে সারা গায়ে, যেন ক্রমশ গভীর মাটি
টানছে আদরে, ওদিকে উপরে আকাশেরও মুখে জননীর মতো হাসি।
হাওয়া বিলোচ্ছে পাতায় পাতায় শিরমিরে সুখ, ফলে-ফুলে ভরে গেছি।
গাছ থেকে গাছ, প্রতি মূহুর্তে জন্ম এবং পূর্নতা আর বিসতৃত হতে থাকা
গাছ থেকে গাছ, হাজার গাছের বনরাজি যেন শোভাযাত্রায় হাঁটে
একটি যুবক হয়ে গেল যুব-উৎসব কাল কাঁপলো এমন ঝড়ে।

অক্ষর থেকে অদৃশ্য এক নারীর শরীর উঠে এল যেন কাছে।
আঙুর গুচ্ছে ভরেগেল হাত, বিছানা, বেদনা, সকল শূন্যস্থান।
যে-সব সুখের জন্যে মানুষ ছিড়েছ নিজের চামড়া, রক্ত-নাড়ী
সেই সুখ নিয়ে বন্দরে এল সাতশো জাহাজ গর্বিত হাসি হেসে।
যে সব ক্ষতের রক্ত কখনো শুকোবার নয় এমনই মর্মঘাতী
তাও মুছে গেল অবিশ্রান্ত ঝরনার সাদা জলে।
গায়ের যা কিছু পুরনো ময়লা নরম তোয়ালে ঘষে ঘষে তুলে দিল,
শব্দে বাজাল সোনার চুড়ির নিক্কণ সেই অক্ষরজাত নারী।

হঠাৎ ঘুরে যায় দৃশ্যপট
হঠাৎ বনে বাজে নদীর শাঁক
প্রেমিক হয়ে ওঠো তপস্বী
শোনাও স্বাধীনতা মন্ত্র পাঠ।

প্রেয়সী, যার চুলে আকাশ পাও
প্রেয়সী, যার চোখে তিন ভুবন
তাকেও ফেলে রেখে দূরত্বে
এগিয়ে চলে এলে প্রান্তরে।

তখন তুমি যেন অন্য লোক
বিষাদ আর গাঢ় প্রতিজ্ঞায়
দৃপ্ত দেহখানা দীর্ঘকায়
বৃষ্টিভারাতুর উচ্চারণ।

শিশুর জন্যে নরম তুলোর বিছানা
যদি কেঁদে ওঠে দুগালে চাঁদের চুমো,
নারীর জন্যে দীপাবলী জ্বালা রজনী
ঘরকন্নায় কম ছায়া বেশি আলো।
পুরুষ, যাদের কর্মঠ কাঁধ, সকলে
বৃক্ষের মতো ভরপুর হবে ফসলে।
সংক্ষেপে ছিল প্রতিশ্রুতিরা এইসব।
শত্রু ছুড়েছ কামান ও কালো ঁেধায়া।
যেখানে যা-কিছু আলোর শিল্পসজ্জা
যেখানেই খাঁকি সৈন্যের লাফালাফিতে
ঘনান্ধকার পিশাচের মতো হেসেছে।
প্রস্তুত হও, সকলে এবং তুমিও
প্রেয়সী আমার চুম্বনগুলো তোলা থাক
ধ্বংস পেরোনো নীল রাত্রির জন্যে।
কাল সারারাত এইভাবে ভোর হয়ে গেল তোমার সঙ্গে।
উৎপীড়ন এবং উজ্জীবনের মাঝামাঝি
প্রচণ্ড প্রেম এবং প্রবল ঘৃণার মাঝামাঝি
দূর নেপথ্য এভং নিকটবর্তী প্রত্যক্ষের মাঝামাঝি
সজ্জিত মঞ্চের সিড়ি ভেঙে ভেঙে ক্রমশ উপরে ওঠা।
ঝাউবনের সঙ্গে যে-ভাষায় কথা বলাবলি
বিপন্ন নৌকার সঙ্গে যে-ভাষায় জোয়ার জলের আলাপ-আলোচনা
সেই ভাষায়, মঞ্চের উপর থেকে, ুতমি বাড়িয়ে দিলে বন্ধুত্ব।
কীভাবে স্পন্দিত হতে হবে এখন আমি জেনে গেছি।

এখন আমার হাতে যে-কেউ একটা মরা পাখি তুলে দিক।
আমি প্রথমেই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবো বন্দনায়
দ্যাখো, দ্যাখো, প্রাচীন গ্রীওসর যাবতীয় সৌন্দর্য এর পালকে।
তার পরেই আমার গলায় ঝনঝন করে উঠবে আক্রমণ
হত্যাকারী! তুমি দেওয়ালের দিকে মুখ রেখে দাঁড়াও।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *