পঞ্চম পর্ব – মনোবল বদলে দেয় সব কিছু
একজন পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব হওয়ার উপায়
আমরা বইটির শেষ পর্যায়ে আছি। আপনি ফাইভ সেকেন্ড রুটির গল্প শুনেছেন, প্রাত্যহিক মনোবলের ধারণাটি বুঝেছেন এবং আচরণ ও মনোজগতে পরিবর্তন আনতে রুল-টির আরো অধিক কৌশলগত ব্যবহার শিখেছেন। আপনি এখন গভীর ও প্রাণবন্ত বিষয়গুলোতে প্রবেশ করতে প্রস্তুত যা আপনার আত্মসংযোগের উপর প্রভাব বিস্তার করবে।
প্রথমত– আপনি আত্মবিশ্বাস অন্বেষণ করবেন এবং কিভাবে প্রাত্যহিক মনোবলের কাজগুলোকে ব্যবহার করে একে নির্মাণ করা যায় তা শিখবেন। আপনি আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের মধ্যকার বিস্ময়কর সংযোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আপনি সেইসব মানুষদের সাক্ষাৎ পাবেন যারা তাদের আত্মবিশ্বাস বিনির্মাণের মাধ্যমে বিশাল সফলতা অর্জন করেছেন। এবং কিভাবে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটির (আপনি নিজে) সঙ্গে পুনঃসংযোগ স্থাপন করা যায় সেই সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অত্যন্ত সৎ কিছু পোস্ট সম্পর্কে জানতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত– আপনি শিখবেন কি করে প্রাত্যহিক মনোবল আপনার আবেগগুলোকে আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। আপনি সেইসব নারী পুরুষদের সাক্ষাৎ পাবেন যারা তাদের ভয়কে পরাজিত করতে এবং বুকের ভেতরে থাকা ভালোলাগাকে অনুসরণ করতে রুলটি ব্যবহার করেছেন। তাদের উদাহরণ আপনাকে একই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
তৃতীয়ত– আপনি আবিষ্কার করবেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে কে বা কারা গভীর ও অর্থপূর্ণ সংযোগ সৃষ্টি করে এবং মনোবল কেন তাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই অংশের আশ্চর্যজনক গল্পগুলো আপনাকে আপনার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটাতে এবং আপনার সম্পর্কগুলোকে গভীরতর করতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সহজ কাজগুলো করার উৎসাহ জোগাবে।
এটি আমার এই বইয়ের সবচেয়ে প্রিয় অংশ। আপনি যদি আপনার আত্মবিশ্বাস, আবেগ এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ সমৃদ্ধ করতে পারেন, আপনার জীবন এমনভাবে রূপান্তরিত হবে যা আপনি শুধু স্বপ্ন দেখেছেন।
আপনার মূল্য বুঝতে না পারার মতো কেউ না কেউ সবসময়ই থাকবে। আপনি এটা হতে দেবেন না।
*
(১৫) সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি
আপনার কাঙ্ক্ষিত গুপ্তধন পেতে হলে ভয়কে গর্তে ঢুকিয়ে দিন।
– জোসেফ ক্যাম্পবেল।
মানুষ এই ভেবে একটি বড় ভুল করে যে, আত্মবিশ্বাস হলো ব্যক্তিত্ব সংক্রান্ত একটি বিষয়। ঠিক নয়। আত্মবিশ্বাস মানে আপনার নিজের উপর, আপনার ধারণার উপর, এবং আপনার সক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা। যে কেউ আরো অধিক আত্মবিশ্বাসী হওয়া শিখতে পারেন। এটি কোন ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য নয়। এটি একটি দক্ষতা।
আপনার হয়তো একটি বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব রয়েছে এবং আপনি অনেক কথা বলেন কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি আত্মবিশ্বাসী। ঘরের ভেতর বেশি কথা বলা ব্যক্তিটি হয়তো আসলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অথবা কথা বলছে। এই ভেবে যে তাকে হয়তো ভালো দেখাচ্ছে। আমার মতোই। দীর্ঘ সময় ধরে আমি উচ্চকণ্ঠ ও কর্তৃত্বপরায়ণ ছিলাম। কিন্তু আমি আসলে নিজের উপর, আমার ধারণা ও সক্ষমতার উপর নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেছি।
আমার একটি অভিজ্ঞতা হয়েছিল যা আত্মবিশ্বাস, মনোবল ও ব্যক্তিত্বের মধ্যকার সংযোগকে ব্যাখ্যা করবে। এটা আপনাকে আরো দেখাবে যে, আরামদায়ক এলাকার বাইরে নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়ার সময় আপনি প্রকৃত গর্ব অনুভব করেন। সম্প্রতি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি ও সেবা সংস্থা সিসকোর সাথে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। কয়েক মাস পর আলোচনার জন্য আমি পুনরায় সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। এবারে একটি জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী দলের সঙ্গে।
আমি যখন সেই দ্বিতীয় আলোচনার জন্য পৌঁছলাম, অডিওভিজুয়াল দলের সঙ্গে কাজ করার সময় একজন লোক আমার কাছে এলো। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে উত্তেজিত ছিলেন এবং পুরনো বন্ধুর মতো আমাকে আলিঙ্গন করে অভিবাদন জানালেন। মধ্য-পশ্চিম অঞ্চল থেকে আসার কারণে আমি উষ্ণ আলিঙ্গনের চাইতে আর কিছু বেশি ভালোবাসি না। তিনি তার উত্তেজনা সংবরণ করতে পারছিলেন না আমাকে বলার জন্য যে, রুলটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তার বলার আছে।
কয়েক মাস আগে তিনি আমাকে সিসকোতে কথা বলতে দেখেছেন। সেই সময়, যেমনটি আমি প্রায়ই করে থাকি, শ্রোতাদেরকে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করার একটি অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলাম :
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে তিনজন অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করুন।
তারপর, কিভাবে অ্যাসাইনমেন্টটি করতে হবে তা ব্যাখ্যা করেছিলাম :
আপনি যাদের সবচেয়ে চুপচাপ জানেন তারাই হয়তো সবচেয়ে আত্মবিশ্বাসী। আপনার সবচেয়ে ভালো বন্ধু যে একজন অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ, হয়তো তিনি তার ধারণাগুলোর উপর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বস্ত কিন্তু কথা বলার ব্যাপারে ভীত কারণ কথা বলতে গেলে তার মুখ রক্তিম হয়ে ওঠে। তার ধারণাগুলোর উপর আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি নেই, শুধুমাত্র গোলাপি বিবেচিত হওয়ার ভয়ের ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে ধাক্কা দিতে তার হয়তো একটু মনোবল দরকার।
আপনার অনুভূতি এবং যে মুহূর্তটিতে আপনি কারো প্রতি টান অনুভব করবেন, তার প্রতি মনোযোগী হোন। এটাই ধাক্কা দেবার সময়। একে কড়ায়ত্ত করুন। ক্ষণ গণনা শুরু করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ঐ ব্যক্তিটির দিকে হাঁটা শুরু করুন, আপনার মন আপনাকে অন্যদিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার আগেই।
তারপর আমি শ্রোতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলাম, এই সহজ অ্যাসাইনমেন্টটি করবার সময় তারা কি আশা করতে পারেন। যেই মুহূর্তে তারা কারো সঙ্গে পরিচিত হতে চাইবেন, তাদের মন লক্ষ লক্ষ অজুহাতে ভরে উঠবে এই যুক্তিতে যে, কেন তাদের নিজেকে পরিচিত করানো উচিত নয়।
ওহ্… দাঁড়াও। তারা অন্য লোকদের সঙ্গে কথা বলছে আর আমি অভদ্র হতে চাই না; তাকে ব্যস্ত মনে হচ্ছে সুতরাং পরে দেখা যাবে; তিনি তার ফোনটির দিকে তাকিয়ে আছেন সুতরাং আমি ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না; হাতে খুব একটা সময় নেই তাই আমি এটা পরবর্তী বিরতিতে করব।
আর এই সবকিছু যা আপনি চিন্তা করছেন– সত্যি নয়। আসলে আপনার মন আপনাকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করছে।
এরপর আমার নতুন প্রকৌশলী বন্ধুটি আমার অ্যাসাইনমেন্টটির সারসংক্ষেপ দেওয়ার পর বর্ণনা করলেন তার সঙ্গে কি ঘটেছিল। সিসকো লাইভ-এ আমার বক্তৃতার পর হলরুম থেকে বাইরে যাবার পথে তার একটি ধাক্কা দেওয়ার মুহূর্ত এসেছিল। সিসকোর প্রধান নির্বাহী জন চ্যাম্বার্স জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের একটি দলের সঙ্গে হেঁটে আসছিলেন। এখন, আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, সিসকোতে জন চ্যাম্বার্স একজন কিংবদন্তি এবং সর্ববিবেচনায় তিনি এক মহান ব্যক্তিত্ব। জন চ্যাম্বার্স প্রধান নির্বাহী হিসেবে ২৫ বৎসর কাজ করেছেন এবং এর পরদিনই ঘোষণা করা হচ্ছে যে তিনি পদত্যাগ করছেন, চাক রবিন্স তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
সুতরাং, ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি নতুন করে শেখা আমার প্রকৌশলী বন্ধুটি হলওয়েতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি চ্যাম্বার্স ও তার প্রবৃত্তিকে জ্বলে উঠতে দেখলেন। নিজেকে পরিচিত করানোর তাৎক্ষণিক একটি ব্যাকুলতা তিনি দেখতে পেলেন এবং জন চ্যাম্বার্সকে ধন্যবাদ জানাতে চাইলেন, সাথে সাথে এটাও তাকে জানাতে চাইলেন যে সিসকোর একজন প্রকৌশলী হিসেবে তিনি কতটা গর্ববোধ করেন। তিনি আমাকে বললেন, তিনি জানতেন তার এটা করা উচিত এবং নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন কিন্তু বাস্তবে তিনি জমে গিয়েছিলেন।
তার বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি একজন অন্তর্মুখী ধরনের মানুষ আর এ ধরনের জিনিস তার স্বাভাবিকভাবে আসে না। মুহূর্তটি চলে যায়। তার নায়ক চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং বাকি দিনটি তিনি নিজেকে গালমন্দ করে কাটান ঠিক সময়ে নিজেকে পরিচিত না করানোর জন্য। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এটাই তার গল্পের শেষ নয়।
পরদিন ভোরে, আমার নতুন বন্ধুটি সান দিয়েগো শহর কেন্দ্রের এমবারকাঁদেরো পার্ক-এ জগিং করছিলেন। এই সুন্দর বাইসাইকেল চালানোর পথটি দৌড়বিদ, সাইকেল চালক ও পথচারীতে পরিপূর্ণ ছিল (স্বাভাবিকভাবেই)। তিনি ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনছিলেন এবং হঠাৎ করেই, ভাবতে পারেন কে ঐ পথে তার সামনে এসে পড়ল? ঠিক বলেছেন, জন চ্যাম্বার্স।
চ্যাম্বার্স একা ছিলেন, তার ইয়ারফোন কানে ছিল এবং তিনিও জগিং করছিলেন। আমার বন্ধুটি ভাবলেন, এটাই সময়। এখনই, না হয় কখনোই নয়। তিনি বলেন– আমি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম তার ব্যক্তিগত সময়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করব এবং এটা হবে খুবই অভদ্রতা। কিন্তু যখন দেখতে পেলাম আমি দ্বিধাগ্রস্ত, আমি ক্ষণ গণনা শুরু করলাম ৫-৪-৩-২-১।
তিনি চ্যাম্বার্স-এর দিকে এগিয়ে গেলেন, বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইলেন এবং ব্যাখ্যা করলেন সিসকোতে তার বিস্ময়কর পেশাজীবনের জন্য কেমন করে সবসময় ব্যক্তিগতভাবে তিনি ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছেন। তারা দুজনই জগিং থামিয়ে দিয়ে একসাথে এমবারকাঁদেরোর পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলেন।
আমার বন্ধুর ভাষ্য অনুযায়ী, চ্যাম্বার্স ছিলেন খোশমেজাজি ও আকর্ষণীয়। তারা সবধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন– কাজ, জীবন, এমনকি আমার বন্ধু যে প্রকল্পে কাজ করছিলেন সেই সম্পর্কিত একটি ধারণা বিষয়েও। আলাপের শেষ পর্যায়ে চ্যাম্বার্স তার সঙ্গে হাত মেলালেন, পরিচিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানালেন এবং সিসকোতে নতুনত্ব প্রবর্তন বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নাম বললেন যাতে করে তিনি চ্যাম্বার্স-এর নাম করে তার ধারণাটি শেয়ার করতে পারেন।
আমার নতুন বন্ধুটি আমাকে এই গল্পটি শোনানোর সময় যে ঘরে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম সেটিকে উজ্জ্বল করে তোলার মতো জ্বলজ্বল করছিলেন– এটা ছিল আমার পেশাজীবনের উজ্জ্বল মুহূর্ত। মেল, ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব হত না। জানিনা কি করে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব।
এবং তারপর যোগ করলেন– ওহ গড, বলতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি এখন চাকরির জন্য এক ব্যক্তির নিকট সাক্ষাৎকার দিচ্ছি যাকে চ্যাম্বার্স আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি কি চাকরিটি পেয়েছেন?
সত্যিই আমার কোনো ধারণা নেই। চাকরিটি এই গল্পের মূল বিষয় নয়। এটি হলো প্রাত্যহিক মনোবল এবং কিভাবে তা আত্মবিশ্বাস তৈরি করে সেই সংক্রান্ত গল্প। এই একক অভিজ্ঞতাটির মধ্যে একটি চাকরির চাইতে অনেক বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তিনি তার প্রবৃত্তির কথা শুনতে এবং অনুসরণ করতে রুলটি ক্রমাগতভাবে ব্যবহার করেন, এটি তার জীবনের জন্য সম্ভাব্য একটি ভালো অভিগমন পরিবর্তন হতে পারে।
প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে সাক্ষাতের উচ্ছ্বাস তার ভেতরে ছিল না, যদিও এটা ছিল অসাধারণ। কিন্তু আরো অনেক বেশি ছিল নিজের ইচ্ছাকে সম্মান প্রদর্শন, সেই মুহূর্তের ভালোলাগা এবং জীবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের অনুভূতি সংক্রান্ত বিষয়।
মনে রাখবেন, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় প্রাত্যহিক মনোবল দ্বারা। তিনি এই অভিজ্ঞতাই অর্জন করছিলেন– নিজের উপর নির্ভরতাকে জানার দীপ্তি। আমার প্রকৌশলী বন্ধুটি যতবেশি এই প্রাত্যহিক মনোবল কর্মটি অনুশীলন করবেন, ততবেশি নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন।
মনে রাখতে হবে, প্রতিটি একক দিনে আপনি যে ছোট ছোট কাজগুলো করেন, তার মাধ্যমেই নিজের উপর বিশ্বাস তৈরি হয়।
বিল নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে আমি একটি বার্তা পেয়েছিলাম যা এই পর্যায়ে নিজের উপর বিশ্বাস করতে শেখার বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করবে। বিল তার একটি সংগ্রামের বর্ণনা দিয়েছেন যা আমরা অনেকেই সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করে থাকি এবং যা খুবই প্রেরণাদায়ক।
সত্যিকারের আমি হয়ে ওঠার ব্যাপারে আমার একটি সমস্যা আছে
বাইরে থেকে বিল-এর জীবন দেখতে ছিল অসাধারণ। তিনি বিবাহিত, চার সন্তানের বাবা, একটি সফল কর্মজীবন এবং একটি পেশাদারী সংস্থার সভাপতি। চমৎকার জীবন, কি বলেন? তাইতো মনে হচ্ছে। কিন্তু এখানে কিছু একটা অনুপস্থিত আছে, এবং তার সঙ্গে এর একটি অর্থপূর্ণ সংযোগ রয়েছে।
বিল এটা স্বীকার করার মতো যথেষ্ট সাহসী যে, তিনি যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে বসবাস করছেন না। আর এটা (আমাদের অনেকের মতো) দ্বিধা, অতি চিন্তা, যা করা বা বলা উচিত তা কখনোই না করা বা বলার একটি অভ্যাস গড়ে তুলেছে। বিল অনুভব করছেন– মানুষের সঙ্গে বাস্তব সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি ভুলে যাচ্ছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন তিনি হারিয়ে ফেলেছেন সে হলো তিনি নিজে। আপনি যখন প্রকৃত আপনার সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যাবে এবং আপনার জীবন থেকে পরিপূর্ণতার স্বাদ চলে যাবে।
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্যে আপনি এটি ফিরে পাবেন। বিল তার নিজের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করার জন্য রুলটির ব্যবহার শুরু করেন। সম্পর্কের গভীর যেতে একটু একটু করে হাজারো ধাপ পেরোনোর যাত্রাপথে হাঁটা শুরু করেন। ছোট ছোট কাজগুলো করতে নিজেকে ধাক্কা দিতে থাকেন যা নীরবে নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখায়।
একটি সুন্দর জীবন ছোট ছোট পদক্ষেপ দ্বারা তৈরী হয়– কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, না বলতে সক্ষম হওয়া, এমনকি বিছানা ছেড়ে উঠে পোষা কুকুরগুলোকে বাইরে নিয়ে যাওয়া। এগুলো হয়তো নিজেকে বিশ্বাস করতে শেখার ছোট পদক্ষেপ মাত্র, কিন্তু খুবই আনন্দদায়ক যা আপনার আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করবে।
ট্রেসি, একজন ৪৮ বৎসর বয়সী গৃহিণী মা। যার মনে হয়েছিল তিনি একটি কঠিন অভ্যাসের মধ্যে আটকে পড়েছেন এবং যখন ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি তিনি আবিষ্কার করলেন, একটি আলো যেন তার জন্য জ্বলে উঠল। তিনি এমন কিছু করার জন্য রুলটি ব্যবহার করলেন যা বড় একটি প্রকল্পের ছোট কোনো অংশ কিন্তু এর অনুভূতি এবং উত্থান খুবই ব্যাপক– যেমন গির্জায় বক্তৃতা দেওয়া কিংবা অনলাইনে নিজের ছবি পোস্ট করা।
আমরা বিল-এর কাছ থেকে যা শিখেছি তা হলো– ছোট ব্যাপারগুলো মোটেই ছোট নয়। তারাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এবং তারা যোগ করে থাকে। ছোট বিষয়গুলোতে আপনার নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মাধ্যমে বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
বড় পরিকল্পনার বেশির ভাগ প্রয়োগ হয় ছোট কিন্তু এর অনুভূতি এবং উত্থান হয় ব্যাপক।
ট্রেসির লেখা চিঠি :
এখানে একটি তালিকা দেওয়া হলো যা আমি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্যে সম্পন্ন করেছি, অন্যথায় যা করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না–
আমি উঠে দাঁড়িয়েছিলাম এবং একটি গানের অনুষ্ঠানে নেচেছিলাম, আমি আমার পছন্দের একজন লেখকের সাথে ছবি তুলে অন্তুর্জালে পোস্ট করেছিলাম (যদিও আমি আমার নিজের ছবি তোলা পছন্দ করি না), গির্জার ধর্মসভায় আমি বক্তৃতা করেছিলাম, আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলাম যা আমাকে বিরক্ত করছিল, নিজেকে আমি এমন সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম যাদের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম, এবং আমি আমার বাড়িতে আরো অনেক কিছুই করেছি (জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া নয়)।
এগুলো হয়তো পৃথিবীকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা নয় কিন্তু মেল, ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির শক্তি পেছনে থাকায় আমি এসব করতে পেরেছি।
আমি এখন এই হাতিয়ারটি আমার বিবেচনায় আরো বড় এক যুদ্ধে ব্যবহার করতে চলেছি, যেমন ২৫ বৎসর যাবত আমি যে অতিরিক্ত শারীরিক ওজন বয়ে চলেছি তা কমানো এবং আমার হাইস্কুলের ৩০তম পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার মনোবল অর্জন।
আমি এমনকি আমার গল্প লিখতে এবং উপস্থাপন করতে রুলটি ব্যবহার করেছি। আমি ফাইফ সেকেন্ড রুল সংক্রান্ত বার্তাটি অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেছি এবং কিছু মানুষকে তাদের নিজেদের জন্য এটির অনুশীলন করতে শুনেছি ও দেখেছি। আমি জানি, আমি এই ক্ষমতায়নের ব্যবহার চালিয়ে যাব যা এখন পর্যন্ত জীবন বদলে দেয়ার একটি সহজ সূত্র।
দীর্ঘসময় পর প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে আমি অচলায়তন ভাঙতে এবং কঠিন অভ্যাস ছেড়ে উঠতে শুরু করেছি। এরপর কি ঘটে তা দেখার জন্য আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
ধন্যবাদ মেল,
– ট্রেসি।
আপনি যখন নিজস্ব ধারণা নিশ্চিত করার কাজগুলো করেন, তখন আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। বিশেষতঃ এমন কিছু যা হয়তো আপনি সাধারণত করেন না, যেমন– সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, ধর্মীয় বক্তৃতা করা অথবা সাইকেল চালানোর পথে সিসকোর প্রধান নির্বাহীর পিছু নেওয়া। এগুলো প্রাত্যহিক মনোবল সংক্রান্ত কাজ এবং এরাই আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।
ক্রিস্টাল, প্রকৌশলী হিসেবে ২০০৫ সালে সিসকোর সরাসরি (লাইভ) অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং ফাইভ সেকেন্ড রুলটি সম্পর্কে আমাকে লিখেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন গত ৮ বৎসর যাবত প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি দ্বিতীয় ধারণাটি গ্রহণ করেছেন।
আমার মনে হয়েছে কেউ না কেউ আকর্ষণীয় ছিল কিন্তু এক মুহূর্ত বাদে আমার মস্তিষ্ক তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা না করার দশ লক্ষ কারণ আমাকে দেখিয়েছে।
তিনি পাশে বসা মানুষদের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ রুলটির প্রয়োগ শুরু করেছিলেন। পরদিন যখন প্রশিক্ষক সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন কারো কোনো প্রশ্ন আছে কিনা, তিনি ভাবলেন তার প্রশ্ন আছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে বিব্রতবোধ করছিলেন। তারপর ভাবলেন এটা নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করলেই তিনি দাঁড়াতে পারেন।
ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে তিনি উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি আরো দুজন ভদ্রমহিলাকেও পুরুষ প্রকৌশলী দ্বারা পরিপূর্ণ ঘরটিতে উঠে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। পরবর্তীতে, তিনি ক্ষণ গণনা ৫-৪-৩২-১ করে একটি বাস্কেটবল খেলা দেখতে গিয়েছিলেন যখন এর জন্য তিনি অনুভব করছিলেন না এবং একটি বিজনেস কার্ড-এর জন্য জিজ্ঞেস করার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন। প্রাত্যহিক মনোবল সংক্রান্ত এই কাজগুলো করার কারণে তার মনোবল বেড়েছিল এবং তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল– একটি নতুন চাকরি, একটি নতুন পদবি এবং একটি নতুন বাড়ি।
নবুও, নির্বাহী পরিচালকের একটি ভূমিকা থেকে অব্যাহতি লাভ করার পর ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তিনি তার প্রেরণা হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং নিজেকে অসমর্থ মনে করছিলেন। রুলটি ব্যবহার করে প্রাত্যহিক মনোবল প্রক্রিয়াটি অল্প অল্প অনুশীলন করার মাধ্যমে নবুও ক্রিস্টাল এর মতোই খুঁজে পেয়েছিলেন, তার ভাষায়– আমার হৃদয়, মন ও শরীরে শক্তি ও উদ্যম ফিরে এসেছে। এটা ফিরে আসার কারণ তিনি নিজের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন– জীবনে পরিবর্তনের জন্য কিছু করার শক্তি তার মধ্যে রয়েছে।
ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে আর একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে চাই। মনে আছে প্রকৌশলী ভদ্রলোক কি বলেছিলেন যখন তিনি প্রথমবার মি. চ্যাম্বার্সকে হলওয়ে ধরে হেঁটে আসতে দেখে অসাড় হয়ে গিয়েছিলেন? তিনি তার ধরন সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন– আমি একজন অন্তর্মুখী ধরনের মানুষ এবং এই ধরনের ব্যাপারগুলো আমার খুব স্বাভাবিকভাবে আসে না।
কি হবে যদি আমি বলি আপনার জীবন অথবা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত কোনোকিছুই স্থায়ী নয় বা স্বাভাবিকভাবে আসে না? আপনি অনুশীলন না করা পর্যন্ত কোনোকিছুই স্বাভাবিকভাবে আসবে না। আর তাই আমি সবসময় বলি– আপনাকে অবশ্যই প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করতে হবে।
আপনার জীবনের প্রতিটি একক দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত, পরিবর্তন অথবা সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা আপনার রয়েছে– কাজের মাধ্যমে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যলয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রায়ান লিট একটি অসাধারণ টেড টক উপস্থাপন করেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল– সত্যিই আপনি কে? ব্যক্তিত্বের ধাঁধা। এতে তিনি অন্তর্মুখিতা ও বহির্মুখিতা নিয়ে কথা বলেন এবং যে বিষয়গুলো আমাদের আত্মপরিচয় তৈরি করে তা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর লিটল-এর মতে– এটা আমাদের কাজ, এটা ব্যক্তিগত প্রকল্প। তিনি বর্ণনা করেন কিভাবে আমাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য স্থায়ী ও স্বয়ংক্রিয় কিন্তু বেশীর ভাগই মুক্ত যা আমরা আমাদের জীবনের মৌলিক প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সমন্বয় করতে পারি।
লিটল্ ব্যাখ্যা করেছেন সিসকোর প্রকৌশলীদের মতো তিনিও অন্তর্মুখী স্বভাবের। যাই হোক, তার মৌলিক ব্যক্তিগত প্রকল্প হলো– অধ্যাপনা করা। তিনি শেখাতে ভালোবাসেন। সুতরাং, এমনকি অন্তর্মুখী হিসেবে তিনি যখন ক্লাসে ছাত্রদের সামনে সংযোগ স্থাপন করার জন্য দাঁড়ান, তাকে তার চরিত্রের বাইরে অভিনয় করতে হয়। এটা তিনি কেমন করে করেন? ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যমূলক কাজের মাধ্যমে। এটা করতে তার নিজেকে ধাক্কা দিতে হয়।
আমার প্রকৌশলী বন্ধুর ব্যক্তিগত প্রকল্প ছিল জন চ্যাম্বার্স-এর কাছে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এ কারণে তার প্রবৃত্তি ছিল চরিত্রের বাইরে কাজ করা। এটা করতে কিভাবে তিনি নিজেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন? দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্যে। উভয় ক্ষেত্রেই দুটি জিনিস উপস্থিত ছিল– (১) অর্থপূর্ণ কিছু করার ইচ্ছা (ছাত্র বা প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন) এবং (২) ইচ্ছাকৃত কাজ (চরিত্রের বাইরে কাজ করার জন্য একটি ধাক্কা)।
এটা কি একজন অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষের জন্য– প্রধান নির্বাহীর দিকে হেঁটে যাওয়া, ধর্মীয় বক্তৃতা দেওয়া অথবা ক্লাসে শিক্ষাদান করার মতো কাজ করার ক্ষেত্রে একজন বহির্মুখী স্বভাবের মানুষের চাইতে বেশী কঠিন বোধ হয়? হয়তো। হয়তো নয়। নির্ভর করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিটি কতটা আত্মবিশ্বাসী তার উপর। এবং আপনি জানেন, আত্মবিশ্বাস ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।
প্রফেসর লিট যেমনটি বলতে পছন্দ করেন– আপনি অন্যদের মতো এবং কারো মতোই না। আমি যা জানি তা হলো, প্রথমবার আপনি যখন কোনো কিছু করতে যাবেন, এটা একটু কঠিন মনে হতে পারে এবং হয়তো কিছুটা ভীতিকর। আপনার একটু সাহসের প্রয়োজন হবে। আমরা সকলেই। চরিত্রের বাইরে কাজ করতে সক্ষম, যখন তা বিশেষ একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উদ্দেশ্যটি আমি চিন্তা করতে পারি তা হলো আপনার জীবনকে এমনভাবে সমৃদ্ধ করা যা আপনাকে প্রাণবন্ত, সুখী ও পরিপূর্ণ করবে।
এই কাজটি করতে কিভাবে আপনি আপনার চরিত্রের বাইরে কাজ করবেন? মনে করুন– আপনি নিজেকে মূল্যায়ন করে ৫ সেকেন্ড রুলটি ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করেছেন। এটা হয়তো পৃথিবী ভেঙে পড়ার মতো কোনো ঘটনা নয়, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটাই আপনার আত্মসন্দেহ দূর করে দেবে।
আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মহত্ত্ব। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আমাদের নিজের বিশালত্ব দেখতে সাহায্য করে। অ্যামবার নিজের ব্যাপারে যেমনটি আবিষ্কার করেছিলেন।
এটি আমাদেরকে প্রারম্ভিক বিন্দুতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আপনি প্রাত্যহিক মনোবল যতবেশি করে অনুশীলন করবেন ততবেশি বিশ্বাস করবেন যে, আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই আছে এবং ফলাফলস্বরূপ আপনি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। এমনকি আপনি যখন মৃত্যুভয়ে ভীত হয়ে পড়বেন, রুলটি আপনাকে সাহসী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। মিশেল তার বিষাক্ত ও উদ্বেগ জর্জরিত কাজটি ছেড়ে দেওয়ার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন যদিও তার অজানার ভীতি ছিল। ঐ একটি প্রাত্যহিক মনোবলের কাজই তাকে আরো আত্মবিশ্বাসী ও সক্ষম করে তুলেছিল।
মিশেল আবিষ্কার করেছিলেন, যা করতে আপনি ভয় পান তা করার মাধ্যমে আপনি আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। আপনার যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাহস থেকে থাকে, আত্মবিশ্বাস তাকে অনুসরণ করবে। প্রতিবার আপনি যখন স্নায়বিক অবস্থায় কথা বলতে, ভীত অবস্থায় কাজ করতে অথবা অনিচ্ছাসত্ত্বেও জিমনেসিয়াম-এ যেতে নিজেকে ধাক্কা দেবেন, আপনি অনুধাবন করবেন যে, কোনো কিছু সম্পন্ন করার ব্যাপারে নিজের উপর আপনি নির্ভর করতে পারেন। নিজের সক্ষমতার উপর এই বিশ্বাস থেকে প্রবাহিত হয় আত্মবিশ্বাস।
জয়, টরেন্টোর একটি পারফর্মিং আর্টস হাইস্কুল-এ ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি কিছু করার জন্য বাইরে যেতে সবসময় স্নায়ুচাপে ভুগতেন। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে তিনি অনেকগুলো চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন, অনেক দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং প্রচুর আত্মবিশ্বাসও অর্জন করেছিলেন।
আপনি যত বেশি করে রুলটি ব্যবহার করবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস তত দ্রুত বাড়বে। স্টেসি প্রায় প্রতিদিন মনোবলের সহিত রুটি ব্যবহার করেন, মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলেন, ব্যবসার জন্য বাড়ি বাড়ি যান এবং ভয়ের কারণে কখনোই আর লুকিয়ে থাকেন না। প্রাত্যহিক মনোবলের সহিত রুলটির ব্যবহার তাকে এমনভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে যা আমি কখনোই সম্ভব বলে মনে করিনি। তিনি আত্মবিশ্বাস বপন করেছিলেন যেমনটি তিনি সবসময় চেয়েছিলেন। এর অনুভূতি অসাধারণ।
এই বইটি জুড়ে আপনি সেইসব মানুষের গল্প শুনেছেন যারা আপাতঃদৃষ্টিতে ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে গেছেন এবং তাদের জীবনের বহির্ভাগ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এই গল্পগুলো আলোচনা করা ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক কারণ এটা অভাবনীয় যে প্রতিদিন ভোরে ঠিক সময়ে উঠে পড়ার মাধ্যমে আপনি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেন যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে প্রভাবিত করে। যাই হোক, এটা এভাবেই করতে হয়। বড় জিনিসের উপর ফোকাস করা বন্ধ করুন। ছোট জিনিসগুলোর উপর গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং দেখতে পাবেন, এই মুহূর্তগুলো আসলে মোটেই ছোট নয়।
বিল যেমনটি বলেছিলেন, বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ার প্রাত্যহিক মনোবল, কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, না বলতে সক্ষম হওয়া, প্রাপ্ত প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার এবং অগ্রাধিকারগুলোর উপর মনোযোগ প্রদান একটি তরঙ্গ প্রভাব সৃষ্টি করে যা আপনার জীবনকে বদলে দেবে। এগুলো ছোট ছোট পদক্ষেপ কিন্তু এর প্রতিদানগুলো হলো তাই যা আপনি খুঁজছেন– আত্মবিশ্বাস, নিয়ন্ত্রণ এবং গর্বের একটি অসাধারণ অনুভূতি।
হৃদয় দিয়ে কথা বলুন, আপনার কণ্ঠস্বর যদি কাঁপে তবুও।
*
(১৬) প্রবল ভালোলাগার পেছনে ছোটা
কিছু স্বর আছে শব্দহীন, শোনো।
– জালালআদ্দিন মোহাম্মাদ রুমী
বছরব্যাপী আমি মানুষের কাছ থেকে ভালোলাগা ও উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়ার উপায় সংক্রান্ত প্রচুর প্রশ্ন পেয়েছি। একবারও কাউকে তাদের প্রবল ভালোলাগা বা আবেগ সম্পর্কে চিন্তা করার ব্যাপারে সাহায্যের জন্য আমাকে জিজ্ঞেস করতে দেখিনি। কারণ ভালোলাগা খুঁজে পাওয়া একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া আর আপনি দেখতে পাবেন ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি সুযোগের দরজা খুলে দেওয়ার একটি অবিশ্বাস্য হাতিয়ার। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে বের হয়ে এসে পদক্ষেপ গ্রহণ করার অপারগতা মানুষকে তাদের ভালোলাগা খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। আপনি যখন সুযোগের সন্ধান ও তার উপর নির্ভর করা শুরু করতে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে নিজেকে ধাক্কা দেবেন, আপনি দেখে বিস্মিত হবেন এটা আপনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
অন্বেষণ শুরু করুন
কিভাবে অন্বেষণ করবেন? সম্ভাব্য সেরা উপদেষ্টা ভাড়া করুন। আপনার কৌতূহলের বিষয় হবে– কিভাবে আপনার প্রবৃত্তি আপনাকে মনোযোগী করে তোলে যে ব্যাপারে আপনার হৃদয় সত্যিই যত্নবান, তা খোঁজা।
আপনি যদি কোনো ব্যাপারে চিন্তা করা বন্ধ করতে না পারেন তাহলে নতুন কোনো শাখা তৈরি করুন। ঈর্ষার প্রতিও মনোযোগী হোন। আপনি যদি কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে থাকেন, তবে সেই অনুভূতিটি অন্বেষণ করুন। তাদের জীবনের কোন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনি ঈর্ষান্বিত? এটা হয়তো নিজের জন্য আপনি যা চান সেই ব্যাপারে আপনাকে কোনো সূত্র দিতে পারে।
তারপর, সেই বিষয়টি অন্বেষণ করার সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নিজেকে ধাক্কা দিন, এ সম্পর্কে পড়াশোনা করুন, ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখুন, মানুষের সাথে কথা বলুন, একটি ক্লাসে অংশ নিন এবং একটি পরিকল্পনা খসড়া করুন। পরবর্তীতে যা ঘটবে, দেখে আপনি বিস্মিত হবেন।
আপনার ভালোলাগা হতে পারে আলোকচিত্রবিদ্যা। চার বৎসর আগে ক্রিস অডিটর প্রথম যখন ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি একটি ব্যাংকের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন (এখনও আছেন) এবং তিনি সবসময় আলোকচিত্রবিদ্য ভালোবাসতেন। তিনি তার ভালোলাগা অন্বেষণ করতে নিজের উপর জোর খাটানোর কাজে রুলটি ব্যবহার করেছিলেন। ফলাফলস্বরূপ দুটি ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ, একাধিক পুরস্কার এবং এখন তিনি একজন পেশাদার আলোকচিত্র শিল্পী।
আপনি হয়তো একটি ভালো মানের খাদ্য ব্যবসা চালু করতে ইচ্ছুক। এটা কোনো ব্যাপার না, আপনার যদি পূর্ব অভিজ্ঞত নাও থেকে থাকে। আজকের পৃথিবীতে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করার জন্য আপনার হাতের কাছেই আছে প্রচুর সম্পদ। উদাহরণ হিসেবে এরিককে নিতে পারেন। তিনি কম্বোডিয়ায় বসবাস করেন এবং একটি রপ্তানি ব্যবসা চালু করার পরিকল্পনা করছেন। ইউটিউব দেখে এবং বই পড়ে যা কিছু শেখা সম্ভব তা করতে তিনি এখন নিজেকে ধাক্কা দিচ্ছেন। আর এভাবে আপনিও আপনার ভালোলাগা আবিষ্কার করতে পারেন। ক্ষণ গণনা করুন ৫-৪-৩-২-১ এবং ঝাঁকুনি খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খুঁজে দেখুন।
গতিবেগ তৈরি করুন
এটি একটি প্রবৃত্তি হিসেবে শুরু হবে। যেমন সবসময় হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম আপনি একটি ক্লাস-এ অংশ নিন। একটি ক্লাস আপনাকে একটি সনদের দিকে নিয়ে যাবে। একটি সনদ আপনাকে কথোপকথনের দিকে নিয়ে যাবে। কথোপকথন আপনাকে সুযোগের দিকে নিয়ে যাবে। ছোট ছোট সুযোগ আপনাকে বড়গুলোর দিকে নিয়ে যাবে। আপনি হয়তো কর্মক্ষেত্রে মানুষের সাথে কাজ করতে গিয়ে যা শিখছেন তা ভাগ করে নিতে চান, আর তা করতে নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য আপনি রুলটি ব্যবহার করে থাকেন। এটাই সেই সময় যখন গতিবেগ তৈরি হয়।
আপনি হয়তো আমাকে অভিশাপ দেবেন যখন আসলেই ঘটনা ঘটতে শুরু করবে, কিন্তু আপনি আপনার হৃদয়কে বিশ্বাস করার মনোবল খুঁজে পাওয়ার জন্য নিজেকে ধন্যবাদ জানাবেন এবং যা দেখতে পাবেন তা খুবই চিত্তাকর্ষক। জো, লন্ডন শহরের একজন ব্যাংকার। কিভাবে ক্ষুদ্র কোনো কিছু যেমন একটি ক্লাস নেওয়া সম্পূর্ণ নতুন একটি কর্মজীবন সৃষ্টি করতে পারে, জো তার একটি চমৎকার উদাহরণ। গল্পটি তার মুখ থেকে শোনা যাক :
আমি ৮ জনের একটি ক্ষুদ্র দলকে সীমিত বিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্র বিষয়ের উপর পরিচিতিমূলক একটি উপস্থাপনা করেছিলাম। যদিও আমি স্নায়বিক ছিলাম, কিন্তু উপস্থাপনার শেষে আমার বোধ হেঁটে এসে আমাকে বলেছিল– এই কাজটিই তোমার করা উচিত, এটাকেই তুমি পেশা বানাতে পার। (সম্প্রতি আমি ব্যাংকার হিসেবে কাজ করছি। আমি সাহসের সাথে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিলাম এবং বৃটেনের একটি বৃহৎ মহিলা সংস্থাকে (লয়েডস্ ব্যাংকিং গ্রুপ পরিচালিত, যা আমার ব্যাংক) আমার সেবা পেশ করলাম। লম্বা গল্প, ছোট করে বলছি। তারা আমাকে তাদের স্কটল্যান্ড ডিভিশন-এ একটি উপস্থাপনা প্রদান করতে অনুরোধ করল। এটি এত ভালো হয়েছিল যে তারা আমাকে দ্বিতীয় উপস্থাপনার জন্য আমন্ত্রণ জানাল। এর সব কিছুই ঘটেছিল দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল এবং একটি ই-মেইল-এর কারণে।
জো
ব্যাংকার এবং কোচ (আমি মনে করি)।
আপনার অন্বেষণটি যখন গতি পাবে, আপনি পরবর্তী ধাপে চলে যাবেন। আসলে প্রবল ভালোলাগার পেছনে আপনি পূর্ণকালীন ছুটবেন। একসময়, আপনার খণ্ডকালীন ব্যবসা আলোকচিত্রবিদ্যা আসল ব্যবসা হয়ে দাঁড়াবে। ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড-এ আপনার উপস্থাপনা একটি পূর্ণউদ্যম বক্তৃতা পেশায় রূপান্তরিত হয়ে যাবে।
প্রতিজ্ঞা করার মনোবল
ঘোড়া টেনে ভালোলাগার কোনো প্রকল্পকে ভালোলাগা-চালিত পেশায় রূপান্তর করা অথবা জীবনের বড় কোনো পরিবর্তনের জাদুকরি সূত্র বলে কিছু নেই। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা এবং কিছু ধীরস্থির ও সুগভীর চিন্তা ভাবনা। আপনি যদি আমাদের বাকি সকলের মতো হয়ে থাকেন, আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনে দুপায়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত আপনি নিজের উপর নির্যাতন করতে থাকবেন।
মিশাল-এর প্রধান ভালোলাগার প্রকল্প ছিল একটি কোম্পানি চালু করা, যার জন্য তিনি বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন কিন্তু প্রকল্পটি তিনি আটকে রেখেছিলেন। নিজেকে ধাক্কা দিতে এবং নতুন ব্যবসার শুরু ঘোষণা করতে তিনি ৫-৪-৩-২-১ ক্ষণ গণনা করেছিলেন। এখন, ঘুমিয়ে পড় বোতামটি আর কখনোই না টেপার একটি কারণ তার কাছে রয়েছে।
আমরা সবাই উঠে দাঁড়ানোর জন্য উপযুক্ত এবং ঘুমিয়ে পড় বোতামটি আর কখনো টিপতে চাই না। মিশাল-এর মতোই। আপনি যদি তার মতো পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে থাকেন, নিশ্চিত করুন কি করে নিজেকে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আপনি আগ্রহী হবেন।
আপনার নিজেকে প্রথমে আন্তরিক প্রশ্ন করতে হবে– আমি কি এই ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ? প্রথম প্রশ্নটি অনুভব করার পরিবর্তে যদি প্রশ্ন করেন– আমি কি এই ব্যাপারে অঙ্গীকার করার জন্য প্রস্তুত? আপনি কখনোই প্রস্তুত বোধ করবেন না। যে মুহূর্তে আপনি আমি কি এই ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলবেন, নিজেকে চূড়ান্ত ধাক্কাটি দিতে আপনাকে ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করতে হবে।
এমনকি আপনি যখন প্রস্তুত, তারপরও কাজটি করার সময় আপনি হয়তো ভালোবোধ করবেন না। অস্ট্রেলিয়া থেকে টডকে জিজ্ঞেস করে দেখুন। দীর্ঘ সময় ধরে টড জানেন ঠিক কোন ব্যাপারে তিনি প্রচণ্ড আগ্রহী– শারীরিক শিক্ষা। তিনি এটি শেখানোর ব্যাপারে সবসময় স্বপ্ন দেখেছেন এবং তার নিজের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ ব্যবসাও রয়েছে। হাইস্কুল উত্তীর্ণ হিসেবে টড জানতেন যে তিনি একটি শারীরিক শিক্ষা সনদ অর্জন করতে চান কিন্তু তার বাবা-মা তাকে বলেছিল– ওহ…না, তুমি এটা করতে পারবে না… পরিবর্তে তারা তাকে একটি পেশাদার ডিগ্রি অর্জন করতে চাপ দিয়েছিল।
চার বৎসর পর টড আইন ও বাণিজ্যবিষয়ক একটি দ্বৈত কার্যক্রমের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হয়েছিলেন। তার মন কখনোই এর মধ্যে ছিল না। টড একটি ই-মেইল-এ যেমনটি বর্ণনা করেছিলেন– ছোট কণ্ঠস্বরটি নীরবে আমার মাথার পেছনে অনুরণিত হচ্ছিল। তবে কেন তিনি সেই মূলে অবস্থান করেছেন? সহজ উত্তর– তার অনুভূতি। তার বাবা-মাকে হতাশ করার ভাবনা তাকে আচ্ছন্ন করেছিল। প্রতিটি দিন তিনি তার কোর্স প্রত্যাহার করে ভিন্ন কোন কলেজে শারীরিক শিক্ষা অধ্যয়ন করার কথা ভেবেছেন, কিন্তু তারপরই তিনি অসাড় বোধ করেছেন। রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ করা সহজ, কিন্তু বাবা-মায়ের হতাশার মুখোমুখি হওয়া হৃদয়বিদারক।
প্রায় চার বৎসর ধরে টড তার কোর্স প্রত্যাহার করতে চেয়েছেন, কিন্তু তিনি জানতেন না কি করে ভয় বা অভিভাবকদের মুখোমুখি হবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্যে তা করেছিলেন। টড একটি অ্যাডভান্সড় ট্যাক্সেশন ল ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন যখন প্রথমবার তিনি অনুভব করেছিলেন যে তিনি প্রস্তুত। টড-এর ভাষ্য অনুযায়ী :
আমি আপনাকে প্রমাণ দিতে পারি যে এমন একটি প্রোগ্রাম আমার অপছন্দ ছিল। শুরু থেকেই আমি এটি প্রত্যাহার করতে চেয়েছি। কিন্তু এটা সম্ভবত এই বাস্তবতায় সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল যে, আমি শেষ পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থে নিজেকে এই কোর্সে অধ্যয়ন করার অনুমতি দিয়েছিলাম যে পর্যন্ত নিজের জীবনকে পরিপূর্ণরূপে আমি ঘৃণা না করছি।
টড ভবিষ্যৎ দেখতে পান :
আমি জানি আমার বাবা-মা আমাকে স্নাতকোত্তর করতে পাঠাবেন এবং আমিও যাব, জীবন-যাপন করতে…সবার জন্য…নিজে ছাড়া।
তিনি কাজ করার প্রবৃত্তি এবং ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্তটি বর্ণনা করেছেন যা এটি সম্ভব করেছিল।
শুরু করা যাক। আমাকে প্রত্যাহার করতে হবে। আমি বইগুলো জড়ো করলাম এবং ক্লাসের মাঝখানে উঠে দাঁড়ালাম এবং বেরিয়ে গেলাম।
এসময় তার শরীর কাঁপছিল, কিন্তু তিনি এগিয়ে গেলেন, সরাসরি রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে, যেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন। তারপর তিনি গাড়িতে চড়ে বসলেন এবং ব্রিসবেন শহরের দক্ষিণে কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির দিকে দুই ঘণ্টা গাড়ি চালালেন যেখানে তিনি তার স্বপ্নের ডিগ্রিটির জন্য আবেদন করেছেন।
ভাগ্যবান সেই মঙ্গলবার সকালটি ছিল দুই বৎসর আগের। টড এখন ২৪ বছর বয়স্ক এবং তার শিক্ষাবিষয়ক ডিগ্রিটির মাঝামাঝি অবস্থান করছেন আর তার জীবন এমন আনন্দময় কখনোই ছিল না। তার ভাষ্যমতে– পরের বৎসর সম্মান শিক্ষা প্রোগ্রামে আমি গৃহীত হয়েছিলাম।
আমি আমার উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি…আসলে এটাই আমার সবসময় করা উচিত ছিল।
তার বাবা-মা? হ্যাঁ, তিনি যখন প্রথম তাদের বলেছিলেন যে আইনজীবী হতে চান না, তারা হতাশ হয়েছিল। কিন্তু তারা এটা জেনে আরো বেশি হতাশ হয়েছিল যে টড দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে এই কথা বলতে ভয় পেয়েছে এবং নিজেকে অসুখী করেছে।
বিশ্বাস রাখুন
আমি বিশ্বাস করি আপনি যে কোনো কিছুই করতে সক্ষম যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার হৃদয়ের কথা শুনবেন, কাজটি করবেন এবং আপনার টাইমলাইন ছেড়ে দেবেন। দ্য আলকেমিস্ট আমার প্রিয় একটি বই। এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ, বহুল বিক্রিত এবং ৮০টি ভাষায় অনূদিত একটি বই। এক দশকের অধিক সময় ধরে আমি এই বইটি মানুষকে সুপারিশ করেছি। দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল বইটি লেখার সময় আমি এর একটি নতুন সংখ্যা কিনে এনেছিলাম নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখতে এবং স্মরণ করিয়ে দিতে যে– আপনার হৃদয়কে অনুসরণ করার সময় সমগ্র পৃথিবী আপনাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে।
দ্য আলকেমিস্ট সম্পর্কিত পাওলো কোয়েলহোর গল্প :
২৫ বৎসর আগে প্রথম যখন আমার আদিভূমি ব্রাজিলে দ্য আলকেমিস্ট বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, কেউ তখন তা লক্ষ্য করেনি। দেশের উত্তর-পূর্ব কোণের একজন বই বিক্রেতা আমাকে জানিয়েছিলেন, প্রকাশনার প্রথম সপ্তাহে মাত্র একটি বই বিক্রি হয়েছে। দ্বিতীয় বইটি বিক্রি করতে তার আরো ৬ মাস সময় লেগেছিল আর এটি কিনেছিল সেই প্রথম ব্যক্তিটি যিনি জানতেন তৃতীয় বইটি বিক্রি হতে কতটা সময় লাগবে।
বছরের শেষ নাগাদ সবাই বুঝে গিয়েছিল যে দ্য আলকেমিস্ট চলছে না। আমার মূল প্রকাশক আমাকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং আমাদের চুক্তিটি বাতিল করল। তারা প্রকল্পটি থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছিল এবং আমাকে বইটি নিয়ে যেতে দিল। আমি ৪১ বছর বয়স্ক এবং নাছোড়বান্দা ছিলাম।
কিন্তু বইটির উপর আমি কখনোই বিশ্বাস হারাইনি অথবা দৃষ্টি সরাইনি। কেন? কারণ সেখানে আমি ছিলাম, সম্পূর্ণ আমি, আমার হৃদয় এবং আত্মা। আমি আমার নিজস্বতায় বাস করছিলাম। একজন মানুষ যে তার যাত্রা শুরু করেছে, একটি সুন্দর বা জাদুকরি স্থানের স্বপ্ন দেখছে, কিছু অজানা সম্পদ লাভের চেষ্টা করছে। যাত্রার শেষ পর্যায়ে সে বুঝতে পারল সম্পদটি পুরোটা সময় জুড়ে তার সঙ্গেই ছিল।
৪১ এবং নাছোড়বান্দা? লাইনটি পড়ে আমার চমৎকার লেগেছিল। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি আবিষ্কার করার সময় এটা ছিল আমার বয়স এবং ঠিক এমনটিই আমি অনুভব করেছিলাম। আমি যা বুঝতে পেরেছিলাম তা হলো– নিজের শক্তি আবিষ্কার এবং প্রকাশ করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। কোয়েলহো যেমনটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন– নিজের উপর বিশ্বাস দিয়ে এর শুরু এবং এই বিশ্বাস নিজেকে ধাক্কা দেওয়ার মনোবলের মধ্যে নিহিত।
আমি আমার ব্যক্তিগত আখ্যান অনুসরণ করছিলাম আর আমার সম্পদ বলতে ছিল আমার লেখনির ক্ষমতা। এবং আমি এই সম্পদ পৃথিবীর সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিলাম। আমি অন্যান্য প্রকাশকদের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করলাম। একটি দরজা খুলল। নতুন প্রকাশক আমি এবং আমার বইটির উপর বিশ্বাস রাখলেন এবং দ্য আলকেমিস্ট বইটিকে একটি দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানালেন। ধীরে ধীরে, মানুষের মুখের কথার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত এটি বিক্রি হতে শুরু করল– তিন হাজার, ছয় হাজার, দশ হাজার, বইয়ের পর বই, পর্যায়ক্রমে সারা বৎসর ধরে।
বইটি একটি জৈব বিস্ময় হয়ে উঠেছিল এবং বাকিটা শুধুই ইতিহাস। এটি বিংশ শতাব্দীর দশটি শ্রেষ্ঠ বইয়ের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত। সাক্ষাৎকার গ্রহীতারা যখন কোয়েলহোকে জিজ্ঞেস করল– সফল হওয়া বা না হওয়ার ব্যাপারে তিনি জানতেন কিনা, তার উত্তর ছিল :
না। আমার কোনো ধারণা ছিল না। কেমন করে হবে? আমি যখন দ্য আলকেমিস্ট লিখতে বসেছিলাম, শুধু জানতাম যে আমি আমার আত্মা সম্পর্কে লিখতে চাই। আমি আমার সম্পদ খুঁজে বের করার অনুসন্ধান সম্পর্কে লিখতে চাই।
উত্তরগুলো আপনার ভেতরেই রয়েছে, যদি তা শোনার মনোবল আপনার থেকে থাকে। আপনি অন্যদের মতোই এবং কারো মতোই না। পৃথিবীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো আপনার কাছে অসাধারণ কিছু রয়েছে। এর শুরু আপনার নিজের ভেতরের কথা শোনার মাধ্যমে এবং শেষ হবে যেখানে এটি আপনাকে নিয়ে যায় সেখানে যাওয়ার মনোবল দ্বারা।
একে অনুসরণ করুন।
মানুষকে আপনার স্বপ্নের কথা বলবেন না। তাদেরকে দেখান।
*
(১৭) সম্পর্কোন্নয়ন
একটি সাহসী কাজ সবসময়ই একটি ভালোবাসার কাজ।
– পাওলো কোয়েলহো
যে কোনো সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আপনার প্রয়োজন শুধুমাত্র দুটি শব্দের একটি উপদেশ।
কথা বলুন
আমি ফ্লোরিডার একটি খুচরো দালালি প্রতিষ্ঠানে বক্তৃতা করার পর ডন নামে এক ব্যক্তি আমার কাছে আসেন। তিনি ৫০এর শেষ দিককার বয়সী, দাড়ি ছিল এবং মাদ্রাজ শার্টের উপর একটি স্পোর্ট কোট পরেছিলেন। তিনি আমাকে জানান, ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি সম্পর্কে তিনি কিছু একটা শেয়ার করতে চান।
তার কাছে রুলটির একটি নিজস্ব সংস্করণ রয়েছে যা তার জীবন বদলে দিয়েছিল। তিনি কয়েক বছর আগে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যার সারমর্ম হলো– কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।
তিনি নিজের প্রবৃত্তির উপর নির্ভর করে তার কন্যার সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে কিভাবে নিজের উপর জোর খাঁটিয়েছিলেন, সেই সম্পর্কিত একটি গল্প বললেন যা তাদের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছিল। কয়েক বছর ধরে তার কন্যা অ্যাম্বার ও তার স্বামীকে পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল যারা খুব কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। তারাও প্রতি সপ্তাহান্তে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু সেবা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
ডন তাদেরকে জানিয়েছিলেন যে তিনি তাদের প্রশংসা করছেন। তিনি প্রশংসা করছেন কারণ যেভাবে তারা জীবন-যাপন করেছে এবং পৃথিবীর জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা ছিল অনন্য। তিনি আরো যোগ করলেন যে, কন্যা অ্যাম্বার-এর পরিণত হয়ে ওঠায় তিনি ছিলেন গর্বিত। আর তারপর তিনি আমাকে বলেছিলেন– এটা বলার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে আমি খুব ভয়ে ছিলাম। চিন্তা করুন, আমি কিছু বলতে ভয় পেয়েছিলাম। কারণটি ছিল, আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিলাম।
তিনি বলেন, ঐ কথোপকথনের পর তার কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক আর কখনোই আগের মতো ছিল না। তারা এখন অনেক কাছাকাছি যা তিনি কখনো কল্পনা করেননি, আর এই অভিজ্ঞতা তাকে এই নিয়ম মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করেছে যে– কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।
ঘনিষ্ঠতার জন্যেও মনোবল প্রয়োজন। আবেগপ্রবণ হওয়ার ঝুঁকি অথবা কাউকে বিপর্যস্ত করা যাতে করে আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। এটা ভীতিকর কিন্তু এর ফলাফল জাদুকরী। গত শরতে আমার বাবার সাথে একটি সহজ আলাপচারিতার সময় আমি ঠিক একই ধরনের জাদুকরী অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমি মিয়ামিতে একটি বক্তৃতা শেষ করে বিমানবন্দরের পথে ছিলাম এবং আমার ফোনে এসময় বাবার একটি ক্ষুদে বার্তা দেখতে পেলাম– যতদ্রুত সম্ভব আমাকে ফোন কর।
আমি ভাবলাম, অদ্ভুত তো! আমি বাড়িতে ফোন করলাম এবং মা ফোনটি তুলল।
হ্যালো মা, আমি এইমাত্র বাবার কাছ থেকে ফোন করার জন্য একটি বার্তা পেয়েছি, সব ঠিক আছে তো?
তোমার তার সাথে কথা বলা উচিত, দাঁড়াও তাকে দিচ্ছি।
মা ফোনটি নামিয়ে রাখল যখন তাকে বলতে চাচ্ছিলাম– মা, শোনো, কি হচ্ছে ওখানে?
আমি রান্নাঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলাম কারণ মা দরজা খুলে বাবাকে চিৎকার করে বললেন– বব, মেল ফোন করেছে।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হতে চলেছে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম বিপদে পড়েছি। ক্যাবের পেছনের সিটে বসে আমার মনে হতে লাগল, আমি যেন ১০ বছরের এক বালিকা যে প্রায় বিধ্বস্ত হওয়ার পথে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, কিছু একটা সমস্যা হলে আপনার মস্তিষ্ক কত দ্রুতই না আপনাকে খরগোশের গর্তে ঢুকিয়ে দিতে পারে।
অনিশ্চয়তা আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাসকে জাগিয়ে তুলল এবং এই মুহূর্তে আমি কি-যদি চক্রতে অবস্থান করছি। দাদিমা কি মারা গেছেন? আমি কি কিছু ভুল করেছি? বাবা কি কোন আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন? এটা নিশ্চয় আমি, আমি কি করেছি?
আপনি কি ধরতে পেরেছেন কি ঘটছে? অনিশ্চয়তা আমার উদ্বিগ্ন হওয়ার অভ্যাসকে জাগিয়ে দিয়েছে। পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে আমি আমার নিজেকে বোঝালাম যে– দাদিমা মারা গেছেন, আমি গুরুতর কিছু ভুল করেছি, বাবা আমার উপর গম্ভীর হতাশ অথবা আমি বড় কোনো বিপদে পড়তে যাচ্ছি।
আমি শুনতে পেলাম পেছনের দরজা খুলে গেল এবং বাবা রান্নাঘরের দিকে হেঁটে আসছেন। তিনি ফোনটি তুলে নিলেন এবং নির্বিকার ভাবে বললেন– মেল, ফোন করার জন্য ধন্যবাদ, ঠিক এই মুহূর্তে তুমি কোথায় আছো?
আমি ফোনের অন্য প্রান্তে অস্থির হয়ে আছি। আমি বিমানবন্দরের পথে মিয়ামিতে আছি বাবা, তোমার ক্ষুদে বার্তা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। আমি কি কিছু ভুল করেছি?
তিনি হালকা হেসে বললেন– না, এটা তোমার ব্যাপার নয় মেল, এটা আমার ব্যাপার। আমি আসলে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে এবং তোমার ভাইকে বলতে চাইনি।
আমার হাত থেকে ফোনটি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। তুমি কি মারা যাচ্ছ? ওহ্ গড, তোমার কি ক্যান্সার ধরা পড়েছে?
তিনি আমাকে বাধা দিয়ে বললেন– তুমি কি আমাকে কথা বলতে দেবে? আমার ক্যান্সার হয়নি। আমার এ্যুরিজম (ধমনির দুর্বলতাজনিত কোনো কারণে এর একটি অংশ ফুলে ওঠা) আছে এবং এটা আমাকে মেরে ফেলার আগেই এটিকে অপসারণ করার জন্য একটি ওপেন ব্রেইন সার্জারি করতে হবে।
তিনি পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। তার মাথা ঘোরানো রোগ ছিল এবং গলফ খেলার সময় একদিন তিনি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে একটি এম-আর-আই করতে হলো। সেখান থেকেই এই এ্যুরিজম ধরা পড়ল। আর তারা এটি ভুলক্রমে পেয়ে গিয়েছিল। সপ্তাহান্তে তিনি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারিটি করাবেন বলে ঠিক করেছেন।
ফোনের অন্য প্রান্তে আমি জমে গিয়েছিলাম। আমার শ্বশুর খাদ্যনালির ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। বাবার গল্পটি শোনার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি আমার শ্বশুরের অস্ত্রোপচার করার দিনটির কথা মনে করেছিলাম। এটি ছিল একটি মুহূর্তের বিষয়। ম্যানহাটন-এর মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং এ নার্স যখন অস্ত্রোপচার করার জন্য তাকে ট্রলি করে নিয়ে যাচ্ছিল, জোড়া দরজা ঠেলে ভেতরে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তিনি আমাদের দিকে ফিরে তাকালেন।
তিনি হাসলেন এবং মৃদু হাত নাড়লেন। আমরা সবাই প্রতি উত্তরে হেসে তার দিকে হাত নাড়ালাম। এবং আমার মনে আছে আমি তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নীরবে জানিয়েছিলাম যে সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে আছে ঐ মুহূর্তে ভয়ের একটি আকস্মিক যন্ত্রণা আমি অনুভব করেছিলাম। অতঃপর তিনি দোল খাওয়া দরজার ভেতর দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে তার অস্ত্রোপচার এতটা খারাপ হতে যাচ্ছে এবং এর জটিলতাগুলো শেষ পর্যন্ত তাকে মেরে ফেলবে।
আমি বর্তমানে ফিরে এসে ক্যাব-এর পেছনের সিটে বসে বাবার কথা শুনেছিলাম। আমি কল্পনা করতে পারি বাবা হাসপাতালের বারান্দাপথে বিদায়সূচক হাত নাড়ছেন আর আমি ভীত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। জানিনা কেন, কিন্তু আমি জানতে চেয়েছিলাম বাবাও ভয় পেয়েছেন কিনা। তাকে একথা জিজ্ঞেস করার একটি প্রবৃত্তি আমার ভেতরে ছিল কিন্তু অবিলম্বে আমি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। নিজেকে বলতে শুরু করেছিলাম—
এটা জিজ্ঞেস করো না, এটা তাকে অস্থির করে তুলবে। সে অবশ্যই ভীত, তুমি বুঝতে পারছো না? বিষয়টি হালকা ও ইতিবাচক রাখ। তাকে চাপ দিও না, এ্যুরিজমটি বিস্ফোরিত হতে পারে।
এটাই ছিল ধাক্কা দেবার মুহূর্ত। কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।
৫-৪-৩-২-১
বাবা তুমি কি ভীত?
অন্য প্রান্তে নীরবতা। আমি প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করার জন্য অনুতাপ বোধ করা শুরু করলাম। তার পরের কথাটি শুনব বলে আশা করিনি।
আমি ভীত নই। আমি কিছুটা স্নায়বিক উত্তেজিত কিন্তু চিকিৎসকদের উপর আমার সত্যিই আস্থা রয়েছে। জানো মেল, আমি আসলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
ভাগ্যবান?
হ্যাঁ, আমাকে মেরে ফেলার আগেই এটাকে ঠিক করার একটি সুযোগ আমি পেয়েছি। এবং দিনের শেষে যদি কিছু হয়েই যায়, আমার কোনো দুঃখ নেই। আমার বাবার স্ট্রোক করার পর মাকে তার যে যত্ন নিতে দেখেছি তা ছিল ভয়ঙ্কর। আমার কাছে জীবনের গুণগত মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার জীবনমান যা আমি আশা করেছিলাম তার চাইতেও বেশি। ছোট বয়সে আমি সবসময় ডাক্তার হতে চেয়েছি এবং আমি হয়েছি। তোমার মা এবং আমি একসাথে একটি চমৎকার জীবন কাটিয়েছি। তুমি এবং তোমার ভাই বড় হয়েছ। আমি মূলতঃ আমার জীবনের সঙ্গে যা করতে চেয়েছিলাম তাই করেছি। আর এটাই হলো– যা তুমি চাইতে পার…জীবনকে উপভোগ করার জন্য আরো কিছুটা সময়।
এটা ছিল বাবার সাথে শেয়ার করা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহত, আর ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সাহায্য ছাড়া আমি হয়তো ঐ প্রশ্নটি করার মনোবল খুঁজে পেতাম না। তারপর তিনি যোগ করলেন :
আসলে আমি আরো একটি জিনিস করতে চাই। আমি আফ্রিকা দেখতে চাই এবং যদি ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলে প্লেন থেকে লাফিয়ে পড়তে চাই, জর্জ এইচ বুশ তার ৯০তম জন্মদিনে যেমনটি করেছেন।
আমি হেসে বলি– বাবা তুমি করবে, তুমি করবে।
বাবার সাথে আমার সেই কথোপকথন আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করিয়ে দিয়েছিল। সম্পর্কের বাস্তবতা পেতে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করা একটি বোকাদের বার্তা। কথোপকথনের কোনো সঠিক সময় নেই, কঠিন প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করে ফেলুন, বলুন– আমি তোমাকে ভালোবাসি অথবা সত্যি শোনার জন্য সময় নিন।
কখনো কখনো এটি শুধুমাত্র একটি কঠিন প্রশ্ন নয় যা আপনি জিজ্ঞেস করতে চান। এটা আসলে দুজনের মাঝে বিরাজমান যে নীরবতা, তার সমাপ্তি টানা। অনেক বছর হল কোর্টনি তার বাবার সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টেনেছেন, কিন্তু তিনি তা সংশোধন করতে চান। তিনি এটা ছেড়ে দেননি কিংবা এটা নিয়ে অতি-চিন্তাও করেননি, যেমনটি তিনি আগে করতেন। তার পরিবর্তে তিনি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে নিজের প্রবৃত্তির উপর বিশ্বাস রেখে ফোনটি হাতে তুলে নিয়েছিলেন এবং বাবাকে ফোন করেছিলেন। তিনি শুধু ৫ ৪-৩-২-১ গণনা করে কল বাটনটি চেপে দিয়েছিলেন। লক্ষ্য করুন, আপনার জীবন বদলে দিতে শুধুমাত্র ৫ সেকেন্ড সময় দরকার।
মাইক তার নিজের বিয়েতে হওয়া ঘটনা লুকিয়ে রেখেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজের সঙ্গে সৎ হওয়ার মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন।
আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে আবারো সেইসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি যা আমি উপেক্ষা করেছিলাম (এই জন্য না যে আমার মাথা বলিতে গুঁজে থাকার কারণে সেগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল), আর আমি নিজের সঙ্গে আরো অধিক সৎ হয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সেটা আমার ভালো লেগেছে। আমি হয়তো নিখুঁত হতে পারব না, কিন্তু আমি যোগ্য। আমি আশ্চর্য হচ্ছি এটা দেখে যে, যোগ্য হওয়ার জন্য এই অনুভূতি কতটাই না অসাধারণ।
– মাইক।
মাইক এইমাত্র তার একটি শক্তিশালী গোপনীয়তা ভাগাভাগি করল। যোগ্য অনুভব করতে হলে প্রথমে আপনার মনোযোগ ও প্রচেষ্টার সাথে আপনার নিজের প্রবৃত্তিকে যোগ করতে হবে। এন্থনি এটা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন যে, খুব সাধারণ কিছুর মধ্যে রয়েছে স্বভাবতঃ তিনি যে সব ব্যাপারে নির্ভর করতে কুণ্ঠিতবোধ করতেন সেই মনোবল যা তার বিবাহের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন সৃষ্টি করতে, তার স্ত্রীর কাছাকাছি হতে এবং তার চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
ঐ সহজ কিছুই বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। সেটা দেখা ছিল বিস্ময়কর। আমি আশা করতাম মানুষ আমার চাহিদা সম্পর্কে জানবে। যখন সেটা পূরণ হতো না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর সঙ্গে, তখন আমি অসন্তুষ্ট হতাম। আমি ভেবেছিলাম সব স্ত্রীরাই মন বুঝতে পারে, বিস্ময়বোধ করতে পারে।
যেসব ব্যাপারে নির্ভর করতে সাধারণতঃ আমি কুণ্ঠবোধ করে থাকি, রুটি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমি আমার জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেইসব ব্যাপারে বিশাল অগ্রগতি সাধন করেছি। এটা যখন আমি লিখছি, সে সময় হাসছিলাম। আমি আমার স্ত্রীর কাছাকাছি হতে পেরেছি এবং আমার চাহিদাগুলো পূরণ হতে শুরু করেছে। আমার কোনো ধারণা ছিল না যে, নীরবতাই ছিল আমার প্রধান সমস্যা।
– এন্থনি।
এন্থনি যেমনটি বলেছেন– আমার কোনো ধারণা ছিল না যে নীরবতাই ছিল আমার বড় সমস্যা। নীরবতা সবসময়ই একটি সমস্যা। আপনি নিজে যা অনুভব করেন তা না বলার সিদ্ধান্ত দ্বারা তৈরি হয়, গবেষকরা যাকে বলেন– জ্ঞানীয় অসঙ্গতি, আপনি হৃদয় থেকে যা সত্যি বিশ্বাস করেন এবং যা আসলে এই মুহূর্তে আপনি করছেন– এই দুইয়ের মধ্যকার পার্থক্য। এই সমস্যাগুলো জমা হতে থাকে এবং একটা সময় এগুলো আপনার সম্পর্কের মাঝে ভাঙন ধরায়।
এস্টেলার ক্ষেত্রে ঠিক এটাই ঘটেছিল, যাকে তিনি বর্ণনা করেছেন– একটি সাধারণ মুহূর্ত হিসেবে। তার স্বামীর সঙ্গে একটি আপাতঃ অর্থহীন যুক্তিতর্ক এবং ফলশ্রুতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে– চূড়ান্ত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বলা। ঘটনাটি তিনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন :
আমার মস্তিষ্ক হঠাৎ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল এবং এটা বলার জন্য আমি ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করেছিলাম। এটা ছিল কাজটি করার ব্যাপারে আমার পছন্দ অথবা জরুরি ব্রেক টানার ব্যাপারে আমার মস্তিষ্ককে অনুমতি দান। ঐ মুহূর্তটিতে আমি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বলেছিলাম। অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাই ঐ সিদ্ধান্তটি আমার জীবনকে সেই পথে ছুঁড়ে দিয়েছিল, আমি যেইদিকে যেতে চেয়েছি, কিন্তু নিজেকে আমি সবসময় ধরে রেখেছিলাম।
এটা সহজ ছিল বলা যাবে না। এটা একেবারেই সহজ ছিল না, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমার এক মুহূর্তের জন্যও সন্দেহ হয়নি। কাজটি করার ঐ খাঁটি মুহূর্তটিতে, যা সঠিক বলে আমি জানতাম এবং যা সত্যিকারের আমি, নিজেকে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম। এখানে কিছু অন্ধকার ও নিঃসঙ্গ মুহূর্ত ছিল, কিন্তু যা আমাকে বিস্মিত করেছিল তা হলো– ঐ মুহূর্তগুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আমার কখনোই আফসোস হয়নি।
কাজ অথবা পছন্দ করার দিনটি জুড়ে আমাদের সকলেরই মুহূর্ত রয়েছে। কখনো কখনো আমরা নিজেদেরকে পেছনে টেনে ধরে রাখি। আমরা সাবধানী হতে পছন্দ করি এবং ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং ঐ মুহূর্তগুলোতে আমি সবচেয়ে প্রাণবন্ত অনুভব করি, নিজের আদর্শ জীবন খুঁজে পাই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ– সত্যিকারের নিজেকে খুঁজে পাই।
– এস্টেলা।
শুরু থেকেই আমি বলে আসছি যে রুলটি খুব সহজ। কিন্তু কখনোই বলিনি যে এটা বলা খুব সহজ। সত্য হলো দুটি মানুষের মধ্যকার সংক্ষিপ্ততম দূরত্ব এবং এটা খুব ভালোভাবে আপনার সম্পর্ককে রক্ষা করে। নীরবতা দূরত্ব সৃষ্টি করে, সত্য বাস্তব সংযোগ তৈরি করে। নাতাশা যেমনটি আবিষ্কার করেছিলেন।
হঠাৎ করে মা মারা যাওয়ার পর নাতাশা তার জীবন নিয়ে খুব বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। তার আশাবাদ উবে গিয়েছিল এবং নিকট ভবিষ্যতে তিনি আরো নেতিবাচকতা দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি তার প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং নিজের অনুভূতি সম্পর্কে হৃদয় থেকে কথা বলার জন্য রুলটি ৫-৪-৩-২-১ ব্যবহার করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তাদের সম্পর্ক ছিল নড়বড়ে। তিনি তার সত্যিকারের অনুভূতি নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং এর ফলাফল ছিল আশ্চর্যজনক। তাদের সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার পরিবর্তে সত্য তাদেরকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। তারা এখন গভীর সম্পর্কে জড়িত।
সময়ের সাথে সাথে আমরা আমাদের সম্পর্কের ক্ষুদ্রতম মুহূর্তগুলোর অন্তর্গত গভীর শক্তির প্রশংসা করতে প্রায়শঃই ব্যর্থ হই। সম্প্রতি আমার সাথে এমন কিছু একটা ঘটেছিল যা মনে করিয়ে দিয়েছে– মন্থর হয়ে পড়া, উপস্থিত থাকা এবং হৃদয় যখন সাড়া দেয় তখন তার সঙ্গে সুর মেলানো কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আমার একটি বক্তৃতা শোনার পর এক ব্যক্তি ফেসবুক-এ আমাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে বলেছিল জশ উডরাফ নামক তার এক পারিবারিক বন্ধুর স্মারক পৃষ্ঠাটি দেখার জন্য। তার মতে জশ ছিলেন এমন এক ব্যক্তির উদাহরণ যিনি তার জীবনকে পুরোপুরি যাপন করেছিলেন এবং ফাইভ সেকেন্ড রুল-টির সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিলেন।
আমার প্রবৃত্তিকে অনুসরণ করে স্মারক পৃষ্ঠার লিঙ্কটির উপর আমি ক্লিক করলাম। প্রথম যে জিনিসটি আমি দেখতে পেলাম তা হলো মেরী নামক একজন মহিলার একটি পোস্ট। এটি ছিল ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্কযুক্ততা, যা আমরা আমাদের সকলের জীবনে চাই এবং কেমন করে অযৌক্তিক কারণে আমরা তা থেকে নিজেদেরকে টেনে ধরে রাখি তার উপর চমৎকার একটি পোস্ট। নিউ অর্লিপ্স-এ একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পূর্বে মেরী একটি মুদি দোকানে তাকে দেখেছিলেন কিন্তু এগিয়ে গিয়ে কোনো কথা বলেননি। আসুন, তার কাছে থেকে গল্পটি শুনিঃ
২য় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে জশ এবং আমার ছেলে জার্ড ভালো বন্ধু। মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে আমি জশকে মুদির দোকানে দুবার দেখেছিলাম। প্রথমবার যখন তাকে আমি দেখি, সে ছিল অনেকটা দূরে আর আমি ভেবেছিলাম সে নিশ্চয়ই বড়দিন উপলক্ষে বাড়ি এসেছে। আমি তার সাথে কথা বলিনি কারণ সেখানে চিৎকার করে তাকে আমি ডাকতে চাইনি। ঐ একই সপ্তাহে তাকে আমি আবারো দেখেছিলাম, উলের টুপি মাথায় কারো সঙ্গে কথা বলা অবস্থায়। এবারে সে আরো কাছাকাছি ছিল কিন্তু তারপরও আমি তার সাথে কথা বলিনি কারণ আমি ব্যস্ত ছিলাম, মেকাপ ছাড়া, উদ্ভট কাপড় পরিহিত এবং আশা করছিলাম জানাশোনা কারো সঙ্গে যেন দেখা না হয়। একই সপ্তাহে দুবার তাকে দেখতে পাওয়াটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছিল, সুতরাং আমি তার পরিবার ও তাদের বড়দিনের ছুটির জন্য মনে মনে প্রার্থনা করলাম।
আমি যখন তার মৃত্যু সংবাদ শুনলাম, তার সঙ্গে কথা না বলার জন্য খুব খারাপ লাগল। আমি জানতাম না যে সেটাই হবে তাকে আমার শেষবারের মতো দেখা। গত সপ্তাহে আমি টার্গেট বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম যেখানে জেনী নামের আমার এক বন্ধুকে অনেকটা দূরে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই। আমি দরজার বাইরের দিকে হাঁটা শুরু করেছিলাম যখন আমার জশ-এর কথা মনে পড়েছিল। আমার তাড়া ছিল এবং থেমে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে কথা বলার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি, তারপর আবারো আমার জশ-এর কথা মনে পড়ল। আমি ঘুরে আইল পথ ধরে তীব্র চিৎকার করে ডাকলাম– হেই জেনী…
মেরীর এই পোস্টটি ছিল আমাদের সকলের জন্য একটি অসাধারণ অনুস্মারক। কখনো কখনো পরবর্তী সময় বলে কিছু থাকে না। আপনার হৃদয় যখন কথা বলবে, সুর মেলান। আমি জশ-এর মা কারেন-এর সঙ্গে দেখা করেছিলাম এবং তিনি আমার সঙ্গে জশকে নিয়ে একটি গল্প শেয়ার করেছেন :
জশ অন্য কারো আবেগের ব্যাপারে কখনো ভীত ছিল না। সে যখন কিশোর, আমার মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ল। আমি জানতাম তাকে আমরা হারাতে চলেছি। একদিন, একা একা চিন্তা করতে এবং কাঁদতে, আমি আমার নিজের ঘরে বসে ছিলাম। জশ ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে এবং তারপর আমার চোখে চোখ রাখল। সে চোখ ঘুরিয়ে নিল না কিংবা অস্থিরতা দেখাল না। সে শুধু বসে বসে আমার কথা শুনল। ঐ দিন থেকে আমরা মা ছেলের সম্পর্ক থেকে বন্ধু-বন্ধুর সম্পর্ক শুরু করেছিলাম কারণ সে একজন মানুষ হিসেবে আমার কথা সময় নিয়ে শুনত।
আমি দুঃখিত যে জশ-এর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ আমি কখনো পাইনি। মনে হয় সে খুব অসাধারণ ছিল। কারেন তাকে যেমনটি বর্ণনা করেছেন :
জশ ছিল কোনো কাজের উদাহরণস্বরূপ। সে তার ইচ্ছাশক্তি সাথে নিয়ে কাজ করত। তার মৃত্যুর পর আমরা বলেছি যে, সে কোনোরকম দ্বিধা ছাড়াই জীবন-যাপন করেছে।
তিনি আমার কাছে তার ই-মেইলটি শেষ করেছেন জশ-এর একটি বার্তা সংযুক্ত করার মাধ্যমে যা মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জশ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে এবং তার স্বামীকে পাঠিয়েছিল। কারেন যেমনটি বলেছেন– সে এটা ভেবেছিল এবং সে এটা পাঠিয়েছিল। আমরা এটা আমাদের বাকি জীবনের জন্য সম্পদ হিসেবে রেখে দেব।
রাত শুরু হওয়ার আগে আমি শুধু বলতে চাই– শুভ নববর্ষ, আর আমি তোমার জন্য অসম্ভব কৃতজ্ঞ! ২০১৬-তে আমাদের জন্য কি আছে দেখার জন্য খুবই উদ্গ্রীব!– জশ।
শুভ নববর্ষ!! আমরা তোমার জন্য এবং যে জীবন তুমি আমাদেরকে ও আমাদের পরিবারকে উপহার দিয়েছ, তার জন্য ভীষণ কৃতজ্ঞ। আজ রাতে নিরাপদে থেকো। (আমি বলতে চাই যে, আমি তোমার মা!!)
কোন কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়।
৫-৪-৩-২-১ এগিয়ে যান এবং বলে ফেলুন।
“আমাদের সব স্বপ্নই সত্যি হতে পারে যদি তাদের পেছনে তাড়া করার মনোবল আমাদের থেকে থাকে।“
—ওয়াল্ট ডিজনি
*
আত্মশক্তি
তোমার শক্তি সবসময়ই ছিল মাই ডিয়ার, শুধু তোমার নিজের জন্য তা জানার প্রয়োজন ছিল।
– গ্লিন্দা, দ্য উইজার্ড অব অজু
আজ, অবিশ্বাস্য কিছু হতে চলেছে।
একজন ভদ্রমহিলা তার চাকরি ছেড়ে দেবেন কারণ তিনি সত্যিই তা ঘৃণা করেন। তিনি ভয় পাচ্ছেন কিন্তু কাজটি তিনি অবশ্যই করবেন। একজন ভদ্রলোক, মানুষ তাকে ঘৃণা করবে জানা সত্ত্বেও তার বিয়ে ভেঙে দিতে চান। ৫৬ বছর বয়সী একজন পশু-চিকিৎসক তার প্রথম ব্যবসা শুরু করবেন, একজন অ্যাপ ডেভেলপার তার প্রথম পণ্যটি প্রকাশ করবেন এবং একজন ১৫ বছর বয়সী তার প্রথম রান্নার বইটি লিখতে শুরু করবেন।
একজন ব্যাংকার নির্বাহী পদের জন্য আবেদন করবেন যা তিনি সবসময় চেয়েছেন। তিনি ১০০ ভাগ যোগ্য বোধ করছেন না বটে তবে তা তাকে থামাতে পারবে না। এবং গুঁড়িখানায় একজন লোক তার বন্ধুদের কথা ভুলে একজন আকর্ষণীয় মহিলার দিকে হাঁটা শুরু করবেন। প্রাথমিকভাবে, তার মনে হবে ভেতরে ভেতরে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু এটা তার প্রত্যাশার চাইতে অনেক ভালো কিছুর দিকে মোড় নিতে পারে।
তারা সবাই জানেন যে তারা ব্যর্থ হতে পারেন অথবা তাদের মুখ ভোতা হয়ে যেতে পারে, কিন্তু যেভাবেই হোক তারা সেটা করবেন। তারা নিজেদের সামনে ঠেলে দিয়েছেন ভেতরের না বোধগুলো চিৎকার করা সত্ত্বেও। তারা ভয় পাচ্ছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছেন।
প্রশ্ন হলো, কেন? উত্তরটি খুব সহজ। তারা মহত্ত্বের গোপনীয়তা জানেন। তারা জানেন বিকল্প কি এবং কতটা ভয়ঙ্কর। যখন আপনার হৃদয় কথা বলে, তাকে সম্মান করুন, ৫-৪-৩-২-১ গণনা করুন এবং সামনে এগিয়ে যান।
এই সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার মানে দাঁড়াবে– স্বয়ংক্রিয় চালকের ভরসায় থাকা এবং সকল যাদু, সুযোগ ও আনন্দ যা আপনার জীবন আপনার কাছে পেশ করেছে তা সাঁতরে পার হয়ে চলে যাওয়া। এবং সবচেয়ে বড় ঝুঁকি? নিজেকে বাঁচার জন্য এগিয়ে দেওয়ার আগেই মারা যাওয়া।
ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করা ড্যান এটা হতে দেবেন না। তিনি মাত্রই ফাইন্যান্স-এর গ্রীষ্মকালীন ক্লাস করার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। ৪৪ বছর বয়সী একজন প্রবীণ মানুষের ভীতিপ্রদর্শন করার কথা, কিন্তু যে কোনোভাবেই হোক তিনি এটা করবেন, কারণ মহৎ হওয়ার মানে হল– কখনোই বুড়িয়ে না যাওয়া।
হনলুলুতে শার্লি তার স্বামীকে হারানোর পর আবারও জীবন শুরু করতে নিজের উপর চাপ দিচ্ছেন। গত ৪ বৎসরে তিনি অনেক বেশি বার পাঁচ সেকেন্ডের জানালাটিকে অপচয় হতে দিয়েছেন। এখন তিনি প্রাত্যহিক মনোবল অনুশীলন করছেন। তিনি ছোট করে শুরু করেছেন– নতুন করে আবারও হাঁটা শুরু করতে। ঐ একটি পরিবর্তন বছরব্যাপী বন্ধ হয়ে থাকা অনেকগুলো দরজা তার জন্য খুলে দিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তামনিকাতে জুলি তার নিজেকে ধাক্কা দিয়ে কিছু ফোন কল করেছিলেন যা তাকে স্নায়বিক করে তুলেছিল, তবে তিনি দুটি জিনিস অর্জন করেছিলেন : প্রচুর আত্মবিশ্বাস আর ক্ষতিকারক ক্যান্সার নিরাময়ের সাহায্যস্বরূপ ৫,০০০ ডলার।
ভারতে, নতুন দিল্লির পুলকিত ফাইভ সেকেন্ড রুলটি ব্যবহার করে অনেকগুলো ঝুঁকি নিয়েছেন যা আশ্চর্যজনক উপায়ে তার উন্নতিতে সাহায্য করছে। সে এখন তার সব কাজে তার সেরাটি দিচ্ছেন। ধন্যবাদ দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল। আমাদের ৪৪ বছর বয়সী ব্যক্তি ড্যান এর জন্য একটি উপদেশ হলো– ধাক্কা দিতে থাকুন। পুলকিত জানে তার সদ্য স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার কারণ হলো প্রাত্যহিক মনোবল শক্তি।
কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত একটি সপ্তাহ পার করার পর ক্যাথলিন চেয়েছিলেন ঘরে ফিরে গিয়ে একটি কাঙ্ক্ষিত পানীয় নিয়ে বসতে কিন্তু তা না করে তিনি পরিচিত গাড়িগুলোকে পেছনে ফেলে শুড়িখানায় পৌঁছেছিলেন। এটি ছিল তার বাড়ি না ফেরার রাগের কারণে দেখানো উত্তেজনা, কিন্তু ঐ মুহূর্তে তিনি জিতে গিয়েছিলেন। ক্যাথলিন যেমনটি বলেছেন– ড্রাইভটি যতই ছোট হোক না কেন, এটি ছিল একটি বিজয় অনুভূতির মতো। এবং এটা সত্যি তাই ছিল।
মিন্নেসোটাতে কেলী অনেক বছর ধরে স্বপ্ন দেখার পর হৃদয় থেকে একটি পাঁচ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি ফ্রান্স চলে যাচ্ছেন। এখন তার সিদ্ধান্ত হলো, রোসা পার্কস যেমনটি বলেছিলেন– তার ভয় চলে গিয়েছে এবং নিজেকে পেছনে টেনে ধরে রাখার অনুমতি দেওয়ার পরিবর্তে বিস্তারিত খুঁটিয়ে দেখার কাজে তিনি তার মস্তিষ্ক ব্যবহার করবেন।
মেল,
ফাইভ সেকেন্ড রুলটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আমি এখন ফ্রান্স চলে যাচ্ছি।
– কেলী।
ইংল্যান্ড-এর লন্ডন শহরে স্টিভ দুর্ঘটনা পরবর্তী বৈকল্য রোগে ভুগছিলেন এবং একটি ফেরি পারাপারের সময় নিজের জীবন নিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিলেন। তার প্রবৃত্তি তাকে বলছিল কারো সাহায্য নেওয়া উচিত আর এসময় ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়। তিনি রেলিং থেকে দূরে সরে আসেন এবং ফেরির একজন যাত্রীসেবা কর্মচারীর দিকে হাঁটতে শুরু করেন। তিনি কতটা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন তা বোঝার জন্য এটা ছিল তার জীবনের সর্বনিম্ন মুহূর্ত, কিন্তু পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ে তিনি জীবন বাঁচানোর মনোবল খুঁজে পেয়েছিলেন।
এবং সবশেষে, জেমস্…
স্টিভ-এর গল্পটি জেমস্কে ছুঁয়ে গেছে। তার ভাষায়– এটা ছিল আমার হৃদয়ের কাছাকাছি। মাত্র এক বৎসর আগে জেমস্ আত্মহত্যা করে মারা যাওয়া তার ছোট ভাইকে হারিয়েছেন। জেমস্ আমাকে যেমনটি লিখেছিলেন– আমার ভাইটি যদি ৫ সেকেন্ড সময় নিত! আমি কখনোই সেটা বদলাতে পারব না, কিন্তু আমি নিজেকে বদলাতে পারি। ফাইভ সেকেন্ড রুল-টি ব্যবহার করে তিনি জেগে ওঠা এবং আবারো জীবন শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় মনোবল খুঁজে পেয়েছেন। এটা আমার তীব্র আবেগের কাছে ফিরে যাবার সময়, আমার দৌড়ানোর কাছে ফেরা। জেমস্ একটি ৫ সেকেন্ড সময়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তার ছোট ভাই প্যাট্রিক-এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১০০ মাইলের একটি দৌড় শুরু করেছেন। ৫-৪-৩-২-১।
হ্যাঁ, আপনি পাহাড়ও নাড়াতে সক্ষম। এই মুহূর্তে যা কিছু ঘটছে, তাই সব। এটাই আপনার জীবন। আর এটা নতুন করে আবার শুরু হবে না। আপনি অতীত বদলাতে পারবেন না, কিন্তু পাঁচ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারেন।
এটাই হলো প্রাত্যহিক মনোবল শক্তি। আপনার হৃদয় যখন কথা বলে, তাকে সম্মান করুন, ৫-৪-৩-২-১ গণনা করুন এবং এগিয়ে যান। এক মুহূর্তের মনোবল আপনার দিনটি বদলে দিতে পারে। আর আপনার জীবন বদলে দিতে পারে গোটা পৃথিবী।
আপনার ভেতরে আছে মহত্ত্ব। এটা প্রকাশ করার এখনই মোক্ষম সময়।
৫-৪-৩২-১, এগিয়ে চলুন।
*
=========দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল=========
যে মুহূর্তে একটি লক্ষ্যের উপর কাজ করার প্রবৃত্তি তৈরি হবে, আপনাকে অবশ্যই ক্ষণ গণনা করতে হবে–
৫– ৪– ৩– ২– ১
এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় হতে হবে, তা না হলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে থামিয়ে দেবে।
Tnk u