প্রথম খণ্ড (শ্রদ্ধেয় ফণিভূষণ আচার্যকে)
1 of 2

পরের কথা নিজের কানে

পরের কথা নিজের কানে

‘বিধুবাবুর বড় মেয়েটিকে কেমন সুন্দর দেখতে হয়েছে দেখেছ।

মা দুর্গার মতো টানাটানা চোখ। বাঁশির মতো টিকালো নাক। দুধে-আলতা রং। আহা, যেন প্রতিমা।’

‘অ, ওই মেয়েটার কথা বলছ। ওই যে মাঝে-মাঝে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। দেখেছি বটে। তোমার খুব সুন্দর মনে হচ্ছে! চোখ দুটো বড়-বড় ঠিকই, তবে মা দুর্গার মতো নয়। গরুর চোখও তো বড়-বড় হয়, তা বলে গরু কি সুন্দরী! আর বাঁশির মতো নাক বলছ? তুমি বাঁশিও দ্যাখোনি। মেয়েছেলের অত উঁচু নাক ভালো নয়।’

‘যাই বলো, তাকালে চোখ ফেরানো যায় না।’

‘তা হয়ত যায় না। তবে জেনে রাখো, যা দিনকাল পড়েছে, ওই মেয়েকে সামলানো মুশকিল হবে।’

চিনিজনিত মাথা ঝিমঝিম কমে গেল। বালিশ থেকে মাথা তুলে বললেন—কে বলেছে ধার্মিক ছিলেন। বকধার্মিক। ভেকধারী শয়তান। আমার কাছে খাপ খুলতে এসো না। আমি নাড়ীনক্ষত্র সব জানি। রেস খেলে-খেলে সংসারটাকে পথে বসিয়েছিল। অমন ধার্মিকেই আমাদের ধর্মটাকে খেলে।

আর একজন বললেন—ছোট মেয়েটা তো তিরিশেই তিনটে স্বামী পালটালে।

গিন্নি ফাইন্যাল জাজমেন্ট দিলেন—অমন মেয়ের মুখে ঝাড়ু।

সঙ্গে-সঙ্গে আর এক মহিলা বললেন—অমন মেয়ে জন্মাবার সঙ্গে-সঙ্গে মুখে নুন দিয়ে গলা টিপে মেয়ে ফেলা উচিত।

একজন সংশয় প্রকাশ করলেন—জন্মাবার সঙ্গে-সঙ্গেই কি বোঝা যায় বড় হয়ে কে কেমন হবে!

কর্তা এবার সটান উঠে বসলেন—বুঝলে, ইংরেজিতে বলে এগ-জাম্পল ইজ বেট্যার দেন প্রিসেপ্ট। আজকাল সব বাপ হয়। বাপ হওয়ার যোগ্যতা ক’জনের আছে! আমার মেজো ভাইকে আমি তাই বলি, দু-হাতে পয়সা কামাচ্ছিস কামা। ছেলেমেয়ে দুটোকে আদর দিয়ে বাঁদর করিসনি।

গিন্নি বললেন— মেজো ঠাকুরপোকে কিছু বলে লাভ নেই। বউয়ের কথায় ওঠ-বোস করে। ছেলে তো এই বয়সেই প্যাকেট-প্যাকেট সিগারেট ওড়াচ্ছে। কাঁচা পয়সা হাতে এলে যা হয়।

কর্তা বললেন—মেজটা চিরকালই একটু মেনিমুখো। বউটাকে আস্কারা দিয়ে-দিয়ে মাথায় তুলেছে। এখন আর নামাতে পারছে না। শেষ জীবনে কষ্ট পাবে।

গিন্নি বললেন—মেয়ে তো এরই মধ্যে প্রেম করতে শুরু করেছে।

পরচর্চা আর পরনিন্দা যেন শক্তিরস সালসা। দুর্বলকে সবল করে। অসুস্থকে সাময়িক সুস্থ করে তোলে। যাঁরা জ্ঞানী, যাঁরা ঈশ্বরকোটির মানব, তাঁরা বলেন, অপরের দোষ না দেখে তার গুণটা দেখার চেষ্টা করো, তোমার মঙ্গল হবে। এই প্রসঙ্গে স্যার ওয়াল্টার র‌্যালের একটা বাসনার কথা মনে পড়ছে।

I wish I loved the Human Race
I wish I loved its silly face
I wish I liked the way it walks
I wish I liked the way it talks
And when I am introduced to one
I wish I thought what jolly fun!
সমগ্র মানবজাতিকে আমার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। বোকা-বোকা মুখ, সে-ও আমার ভালোবাসার। যে যে-পথেই হাঁটুক, আমি যেন ভালোবাসতে পারি। যে যে-ভাবেই কথা বলুক, আমি যেন ভালোবাসতে পারি—কারুর সঙ্গে পরিচয় হলে।

কারুর সুন্দরী মেয়ে থাকলে প্রতিবেশীর ভীষণ দুর্ভাবনা, মেয়ে ঘরে থাকবে কি না! আবার অসুন্দরী মেয়ে থাকলেও ভীষণ দুশ্চিন্তা, বিয়ে হবে কী করে। এই দুটো চিন্তারই এক উৎস—কারুর ভালো যেন না হয়! মন্দ হলে, যে সহানুভূতি, সেটা আসলে আনন্দেরই একটা দিক।

বিপুলবাবুর ছেলে হঠাৎ বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেল সংসার ফেলে। পড়ে রইল বুড়োবুড়ি, অবিবাহিতা বোন। জনে-জনে আসে আর খুঁচিয়ে ঘা করে দিয়ে যায়—অ্যাঁ, এর নাম শিক্ষা? লেখাপড়া শিখিয়ে হলটা কী! এর চেয়ে টাকাটা ব্যাঙ্কে ফিকসড করে রাখলে এই বৃদ্ধবয়সে দেখত। কি সব্বনেশে কথা গো, তুই একটা শিক্ষিত ছেলে, বড়লোক শ্বশুর দেখে ঢলে পড়লি! এর চেয়ে আমার অশিক্ষিত ছেলেই ভালো ছিল।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, রেলিশ করা। খাওয়া এক জিনিস আর তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করা আর এক জিনিস। পরচর্চা আর পরনিন্দার মতো রেলিশিং আর কিছুই নেই। অনেকটা চেটে চেটে চাটনি খাওয়ার মতো। কোনও মানুষ যদি বিনয়ী হয়, লোকে বলবে ন্যাকামি। উলটোটা হলে বলবে, অহঙ্কারে একেবারে মটমট করছে।

আমি একজনকে চিনতাম, তিনি মহিলা। খুব অসুস্থ। প্রায় ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা। তাঁর কানের কাছে যদি বলা যেত—বকুলদি, সিনেমার টিকিট কেটে এনেছি। তিনি ককাতে-ককাতে বলতেন। এনেছিস! ওরে বাবারে মরে যাব রে! বলতে-বলতে উঠে বসলেন; তারপর খাট থেকে নেমে দাঁড়ালেন—চল তাহলে।

আমি পাশাপাশি আর একটা ব্যাপারও দেখেছি—কর্তা খুব অসুস্থ। বিছানায় ফ্ল্যাট। চোখ বুজিয়ে পড়ে আছেন। ঘরভরতি আত্নীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব। নানা কথা। কে একজন বললে—সন্তোষের বড় ছেলেটা একেবারে বখে গেল। ফিনিশ। কর্তা চোখ না খুলে বললেন—যেমন বাপ, তার তেমনি ছেলেই হবে তো।

কর্তার মাথার কাছে বসেছিলেন তাঁর বিমর্ষ স্ত্রী। মাঝে-মাঝে কপালে হাত বুলোচ্ছিলেন। একটু আগে স্বামীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন। হার্ট বড় হয়ে গেছে। রক্তে চিনি। লিভারে ঝামেলা। তিনি বললেন, শুধু বাপ কেন, মা-টিও তো সুবিধের নয়। তিন ছেলের মায়ের সাজপোশাক দেখছ।

সঙ্গে-সঙ্গে কর্তা কথাটা লুফে নিলেন। চোখ খুলে কড়ি কাঠের দিকে তাকিয়ে বললেন—কোন-ঘরের মেয়ে দেখতে হবে তো। বাপ তো নর্দমায় গড়াগড়ি যেত। তিনটে মেয়ে তিনদিকে ছিটকে গেল। সব ক-টাই ছেলেধরা।

একজন শ্রোতা প্রতিবাদ করলেন—কথাটা ঠিক নয়। ওর শ্বশুর খুব ধার্মিক ছিলেন। আমি দেখেছি।

কর্তা সঙ্গে-সঙ্গে বিছানায় আড়কাত হলেন। হৃদয়ের ধুকপুকি সেরে গেল! আমি যেন বলতে পারি—আহা, কী আনন্দের!

ইচ্ছে তো আমাদের করে; কিন্তু স্বভাব না যায় মলে। আমাদের প্রবাদেই আছে—চালুনি করে ছুঁচের বিচার। কেউ বাড়িতে ঘনঘন খবরাখবর নিতে এলে আমরা ভাবতে বসে যাই—কী ব্যাপার বলো তো, এত ঘনঘন আসার কারণটা কী? সঙ্গে-সঙ্গে সিদ্ধান্ত, দেখবে নিশ্চয় স্বার্থ আছে। বিনা স্বার্থে আজকাল কেউ আসে! সে-যুগ আর কি আছে। আবার কেউ যদি খোঁজ খবর নিতে না আসে, তা আমরা বলব, যুগটাই পড়েছে এই রকম, কেউ কারুর খবর রাখে না। যে যার সে তার। আমরা এক অদ্ভুত শাঁখের করাত, যেতেও কাটি আসতেও কাটি। কেউ জোরে কথা বললে বলব ব্যাটা যেন ষাঁড়। আস্তে আস্তে মৃদু মোলায়েম কথা বললে, পরে সমালোচনা করবে ব্যাটা মিনমিনে। একই সারিতে সবাই খেতে বসেছে। একজন কিন্তু আর একজনের দিকে ঠিক নজর রেখেছে। সব শেষে উৎসব বাড়ির বাইরে এসে, পান চিবোতে চিবোতে স্ত্রী স্বামীকে বলেছেন—নতুন বউকে দেখলে? স্বামী বললেন—ওই এক ঝলক। কত বড় হাঁ দেখলে? যেন বোয়াল মাছে রাজভোগ গিলছে।

স্বামী বলতে পারতেন—তুমিও তো সেই থেকে চ্যাকোর চ্যাকোর পান চিবচ্ছ। এটাও তো অসভ্যতা। আসলে প্রাণের লোককে কিছু বলা যায় না। তার সাত খুন মাপ। আবার যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। আমার ছেলে, আর বউ খুব ভালো। তোমার ছেলে তোমার বউ পয়মাল।

সন্ধানী দৃষ্টি কত দিকে যে যায়! কী ব্যাপার বলো তো, সুভাষ অফিস যাচ্ছে না! মাসের পর মাস বাড়িতে বসে আছে।

পাওনা ছিল! ছুটি নিয়েছে বোধ হয়।

ছুটি নেওয়ার ছেলে! কোথায় কাজ করে জানো! মোটর ভেহিকেলসে। ডেলি বাঁ হাতের কামাই হাজার দেড় হাজার। সে তোমার এমনি এমনি ছুটি নিয়ে বসে থাকার ছেলে! বসিয়ে দিয়েছে। সাসপেন্ড করিয়ে দিয়েছে।

দুটো জিনিসে মানুষের পরমানন্দ। করুণা আর হিংসা। পরচর্চা আর পরনিন্দা। এই দুটো ভাব, এই দুটো জলাভূমি থেকে উঠে আসে। করুণা থেকে যা আসে তাতে থাকে নিজের অহঙ্কার। রজোগুণ। আ:, আমি ভালো আছি। তুমি কারে পড়েছ। এইটি ভাবামাত্রই মনে আনন্দের মধুক্ষরণ। বেশ হয়েছে। ঠিক হয়েছে। একসময় ঠোঁটে তোমার ফাইভ ফিফটি ফাইভ নাচত। বাড়িতে অতিথি অভ্যাগতদের হইহই লেগেই থাকত। তখনই ভেবেছিলুম—অতি বাড় বেড়ো না। ঝড়ে পড়ে যাবে।

আর হিংসামিশ্রিত পরচর্চা হল তমোগুণী। কেউ বড় একটি মাছ ঝুলিয়ে বাড়ি ঢুকছে, কী ঝোলাঠাসা বাজার, সঙ্গে-সঙ্গে প্রতিবেশীর মন্তব্য— ব্যাটা পয়সার গরম দেখাচ্ছে। নিজের অক্ষমতা থেকেই এমন কথা উঠছে। আমি পারছি না, তুমি পারবে কেন? দেখা যায় সংসারে যখন গৃহিণীর পেটের গোলযোগ তখনই যত প্যান্তাখ্যাচাং ঝোল, গলা ভাত। প্রশ্ন—রাতে কিছু খাবে নাকি? খিদে নেই, নিজের খিদে নেই তো ফ্যামিলির খিদে নেই, এই রকম একটা মনে হওয়া। অন্য সময়, পাতলা ঝোল ভাত করো না, বললে তেড়ে মারতে আসবে। ও দিয়ে গেলা যায়!

যখন দেখা যায় প্রতিবেশী একটি শীর্ণ কুমড়োর ফালি আর একটা শাকের আঁটি নিয়ে বাড়ি ঢুকছেন, ছেঁড়া স্লিপার টানতে-টানতে তখন স্ত্রীকে ডেকে বলি, আহা, বিধুটার কী অবস্থা হল গো। একসময় কী ছিল, আজ কী হয়েছে। এই করুণামিশ্রিত উক্তিতে করুণার চেয়ে নিজস্ব একটা তৃপ্তি আছে। বিধু, তোমার চেয়ে আমি অনেক ভালো আছি। তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি কোনওদিন দু-হাত উদার করে এগিয়ে যাব না। আমি আমার জানালায় বসে দেখব, তারিয়ে-তারিয়ে উপভোগ করব।

আমার মনে আছে—আমাদের পাড়ার এক বড়লোক, বিশ-তিরিশটা বাড়ি আর ব্যবসার মালিক, বড় কৃপন ছিলেন। ওয়ান পাইস ফাদার-মাদার। হাত দিয়ে জল গলত না। কর্তার শরীর খারাপ বলে স্ত্রী একদিন রাতে গোটাদশেক লুচি গাওয়া ঘিয়ে ভেজে কর্তাকে দিয়েছিলেন। সেই লুচি দেখে কর্তার শরীর আরও খারাপ হল। এ তুমি কি করছ, তুমি কী আমাকে দেউলে করে ছাড়বে। গাওয়া ঘিয়ে ভাজা ময়দার লুচি! সে প্রায় স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। স্ত্রীর তো মাথায় হাত। লুচি খাওয়াতে গিয়ে বিধবা না হতে হয়? তা সেই ধনকুবেরটি আটহাতি একটা খেঁটে ধুতি পরে চলাফেরা করতেন। ঊর্ধ্বাঙ্গে একটি ফতুয়া। সবাই বলত—আহা, কী সাদাসিধে নিরহঙ্কারী মানুষ, কোনও চালচলন নেই, কোনও ডাঁট নেই, বাবুগিরি নেই। এই হল মজা! আমরা একটা সামান্য কলার ফাটা জামা পরে রাস্তায় বেরোলে হাজার কথা হবে। লোকটার এমন পয়সা নেই, যে একটা জামা কেনে। সারা জীবন কী করলে!

বাড়িতে এসে কেউ চলে যাওয়ার পর, সঙ্গে-সঙ্গে সব বসে যাবে তার খুঁত ধরতে। কী ভাবে বসেছিল দেখেছ! কার্পেটটাকে কী করে দিয়ে গেছে! হাতের কাছে অ্যাসট্রে তবু ছাই ঝেড়েছে ডিভানের চাদরে। চা খেতেও জানে না। ডিশে ফেলে,সেন্টার টেবিলে ফেলে নরক বানিয়ে গেছে। আর একজন বললে—এত বকে। বকে-বকে মাথা একেবারে খারাপ করে দিয়ে গেল। এই দ্যাখো, ম্যাগাজিনের পাতায় বিস্কুট আর সন্দেশের গুঁড়ো।

রসগোল্লার রস মাখিয়েছে চারপাশে। এরকম লোক এলে দোর গোড়া থেকে বিদায় করে দিও।

খবর এল বাথরুম থেকে—লোকটা বুঝি ওখানেও গিয়েছিল। ঢোকা যাচ্ছে না, জল ঢালেনি।

শেষ সংবাদ—যেখানে জুতো ছিল, সেখানে কাদা। মানে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও জানে না।

কিন্তু যখন জানা গেল, লোকটার খুব ক্ষমতা। স্কুলে ছেলে ঢোকাতে পারে। ফ্ল্যাট জোগাড় করে দিতে পারে, মেয়ের জন্যে ভালো পাত্র এনে দিতে পারে, রাতারাতি টেলিফোন লাগিয়ে দিতে পারে, তখন আর তিনি লোক নন, ভদ্রলোক। তখন তাঁর সবই প্রশংসার। তখন তিনি খেয়ালি। তাই চা ছলকায়, কার্পেট গুটিয়ে যায়। বাথরুমে জল ঢালতে ভুল হয়ে যায়। একটু অন্যমনস্ক। বেশি বকাটা তখন গুণ। দিলখোলা কিনা! তাই হলহলে।

হিসেব নিলে দেখা যাবে, জীবনে এমন একটা মানুষের সঙ্গে দেখা হল না, যে সমালোচনার ঊর্ধ্বে, যার কিছু নিন্দনীয় নয়। সেই ঘটনাটা মনে পড়ছে। পরনিন্দা-চক্রে এক জন প্রায় ফুলমার্ক নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন হঠাৎ একজন বললে—সবই ভালো। কেবল একটাই দোষ—কথা বলার সময় বড় থুতু ছিটকোয়।

একজন বিশ্বনিন্দুক, বিপর্যয় সমালোচককে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। সকলেই খুব সাবধান। সমস্ত রকম যত্ন দিয়ে রান্নাবান্না করা হয়েছে। কোনও ভাবেই খুঁত ধরার উপায় নেই। তিনি খেলেন। খাওয়া শেষ হওয়ার পর জিগ্যেস করা হল—কি সব ঠিকঠাক আছে তো। তিনি রুমালে হাত মুখ মুছতে-মুছতে পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললেন—হ্যাঁ, হয়েছে; তবে কী জানেন, মাংসের ঝোলটায় আর একটু নুন হলেই সব মাটি হয়ে যেত।

পৃথিবীতে কতগুলো সত্য আছে, তার মধ্যে কিছু স্বত:সিদ্ধ, যা হবে—হতে বাধ্য। যেমন, স্ত্রী স্বামীর নিন্দা করবেন, স্বামী স্ত্রীর নিন্দা করবেন, লেখক লেখকের, শিল্পী শিল্পীর, ডাক্তার ডাক্তারের, ছেলে বাপের, এক মিস্ত্রি আর এক মিস্ত্রির, এক ফটোগ্রাফার আর এক ফটোগ্রাফারের। রুগি ডাক্তারের। যে লন্ড্রিতে কাপড় জামা কাচানো হয় তার নিন্দে না করে তো জলগ্রহণ করাই উচিত নয়। যে সেলুনে চুল কাটা হয় সেই সেলুনের মুদির, স্টেশনারি দোকানের। কর্মচারী নিন্দা করবেন ওপরওলার, জনগণ করবেন সরকারের। রাজ্য সরকার করবেন কেন্দ্রের। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা করবেন যুগের। সমালোচক করবেন—সাহিত্যের, শিল্প, সংস্কৃতির। আর সবার ওপরে মানুষ সত্যের মতো—সেই খোদা, স্বয়ং ঈশ্বর, তাঁর চর্চা এমন এক পরচর্চা, যে চর্চায় লাভ বই লোকসান নেই।

1 Comment
Collapse Comments

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *