পরিশ্রম-অধিকার
আমরা চারি দিকে যে সকল বস্তু দেখিতে পাই ঐ সকল বস্তু অবশ্যই কোন না কোন লোকের হইবেক। যে বস্তু যাহার সে ব্যক্তি পরিশ্রম করিয়া উহা উপাৰ্জ্জন করিয়াছে। বিনা পরিশ্রমে কেহ কোন বস্তু লাভ করিতে পারে না। ভিক্ষা করিলে পরিশ্রম ব্যতিরেকে লাভ হইতে পারে; কিন্তু ভিক্ষ করা ভদ্র লোকের কর্ম্ম নয়। যে ভিক্ষা করে সে অত্যন্ত মিস্তেজঃ ও নীচাশয়। তাহাকে সকলে ঘৃণা করে।
যদি কোন ব্যক্তি কথন পরিশ্রম না করিত, তাহা হইলে গৃহনির্ম্মাণ ও কৃষিকর্ম্ম নির্ব্বাহ হইত না। আহার সামগ্রী, পরিধান বস্ত্র, ও পড়িবার পুস্তক, কিছুই পাওয়া যাইত না। সকল সংসার দুঃখে কাল যাপন করিত। পৃথিবী যে রূপ সুখের স্থান হইয়াছে এরূপ কদাচ হইত না। পরিশ্রম না করিলে কেহ কথন ধনবান্ হইতে পারে না। কেহ কেহ পৈতৃক বিষয় পাইয়া ধনবান্ হয় যথার্থ বটে; কিন্তু তাহারা পরিশ্রম না করুক, তাহাদের পূর্ব্বপুরুষের অর্থাৎ পিতা অথবা পিতামহ পরিশ্রম করিয়া ঐ ধন উপার্জ্জন করিয়া গিয়াছিলেন, সন্দেহ নাই। কিন্তু এরূপ অনায়াসে ধনলাভ হওয়া অল্প লোকের ঘটে। সুতরাং সেই কয়েক জন ভিন্ন সকল লোককেই পরিশ্রম করিতে হইবেক।
লোকে পরিশ্রম করিয়া অর্থোপাৰ্জ্জন করে। অর্থ না হইলে সংসার যাত্রা নির্ব্বাহ হয় না। অন্ন, বস্ত্র, গৃহ, ও অন্য অন্য সমুদায় বস্তু অর্থসাধ্য। যদি অতঃপর আর কেহ পরিশ্রম না করে, তবে যে সকল আহারসামগ্রী প্রস্তুত আছে, অল্প কালের মধ্যেই তাহা ফুরাইয়া যাইবেক; সমুদায় বস্ত্র ক্রমে ক্রমে ছিন্ন হইবেক; এবং আর আর ষে সকল বস্তু আছে সমস্তই কালক্রমে লোপ হইবেক। তাহা হইলেই সমুদায় লোককে অনাহারে নানা কষ্ট পাইয়া প্রাণত্যাগ করতে হইবেক। বালকের পরিশ্রম করিয়া জীবিকা নির্ব্বাহ করিতে সমর্থ নহে। তাহারা যভ দিন কর্ম্মক্ষম না হয়, পিতা মাতা তাহাদিগের প্রতিপালন করেন। অতএব পিতা মাতা যখন বৃদ্ধ হইয়া কর্ম্ম করিতে অক্ষম হন তখন তাঁহদের প্রতিপালন করা পুত্ত্রদিগের আবশ্য কর্ত্তব্য কর্ম্ম; না করিলে ঘোরতর অধর্ম্ম হয়।
বালকগণের উচিত বাল্য কাল অবধি পরিশ্রম করিতে অভ্যাস করে। তাহা হইলে বড় হইয়া অনায়াসে কর্ম্ম কাজ করিতে পরিবেক। স্বয়ং অন্ন বস্ত্রের ক্লেশ পাইবেক না ও বৃদ্ধ পিতা মাতার প্রতিপালন করিতেও সমর্থ হইবেক। কোন কোন বালক এমত হতভাগ্য যে সর্ব্বদা অলস হইয়া সময় নষ্ট করিতে ভাল বাসে। পরিশ্রম করিতে হইলেই সর্ব্বনাশ উপস্থিত হয়। তাহার বাল্য কালে বিদ্যাভ্যাস ও বড় হইয়া ধনোপোর্জ্জন কিছুই করিতে পারে না। সুতরাং যাবৎ জীবন ক্লেশ পায় এবং চিরকাল পরের গলগ্রহ হইয়া থাকে।
কোন ব্যক্তি পরিশ্রম করিয়া যাহা উপার্জ্জন করে অথবা অন্যের দত্ত যাহা প্রাপ্ত হয় সে বস্তু তাহার। সে ভিন্ন অন্যের তাহা লইবার অধিকার নাই। যে বস্তু যাহার তাহা তাহারই থাকা উচিত। কারণ লোকে জানে, আমি পরিশ্রম করিয়া যাহা উপাৰ্জ্জন করিব তাহা আমারই থাকিবেক, অন্যে লইতে পরিবেক না। এই জন্যই তাহার পরিশ্রম করিতে প্রবৃত্তি হয়। কিন্তু যদি জানিত আমার পরিশ্রমের ধন অন্যে লইবেক, তাহ। হইলে সে কখন পরিশ্রম করিত না।
যদি কেহ অন্যের বস্তু লইতে বাঞ্ছা করে, ঐ বস্তু তাহার নিকট চাহিয়া অথবা কিনিয়া লওয়া উচিত; অজ্ঞাতসারে, অথবা বলপূর্বক, কিম্বা প্রতারণা করিয়া লওয়া অনুচিত। এরূপ করিয়া লইলে অপহরণ করা হয়। সকল শাস্ত্রেই চুরি করিতে নিষেধ আছে। চুরি করা বড় পাপ। দেখ ধরা পড়িলে চোরকে কত নিগ্রহ ভোগ করিতে হয়। তাহার কত অপমান; সকলেই তাহাকে ঘৃণা করে; চোর বলিয়া কেহ তাহাকে বিশ্বাস করে না; কেহ তাহার সহিত আলাপ করিতেও চাহে না। অতএব প্রাণান্তেও পরের দ্রব্য স্পর্শ করা উচিত নহে। যদি কাহারও কোন দ্রব্য হারায় তাহা পাইলে তৎক্ষণাৎ তাহাকে দেওয়া উচিত। আপনার হইল মনে করিয়া লুকাইয়া রাখিলে চুরি করা হয়।
কতক গুলি সাধারণ বস্তু আছে তাহতে সকল লোকেরই সমান অধিকার; সকলেই বিনা পরিশ্রমে পাইয়া থাকে। বায়ু, সূর্য্যের আলোক, বৃষ্টি, নদীর জল এই সমস্ত ও এই রূপ আর আর বস্তু সকলেই সমান ভোগ করে। ইহা ভিন্ন আর কোন বস্তু লাভ করিবার বাঞ্ছা করিলে অবশ্যই পরিশ্রম করিতে হইবেক। বিনা পরিশ্রমে তাহা পাইবার কোন সম্ভাবনা নাই।