পরিশিষ্ট-৩ লাগামছাড়া সত্যি কথাগুলো বলার সাহস বাঙালির কোথায়?
এন্ট্রির , ২৫ মার্চ ১৯৭৪
‘রোজিটার সঙ্গে প্রথম নগ্ন রাত্রিবাসের সময় বারবার বলছিলুম but nothing is happening—nothing happens… বাবার শ্রাদ্ধের বাৎসরিক দিন যাব। বউ মেয়ে ভোরেই চলে গেছে। বেলের শব্দে জেগে উঠে বারান্দা থেকে দেখি বেথুন কলেজের ৩য় বার্ষিক শ্রেণির মেয়েটি— প্রতিমা। বুঝি, যাওয়া হল না। … পনের মিনিটের মধ্যে তাকে ঘনিষ্ঠতায় নিয়ে আসি— রোজিটা অন্ধকারে কী করছিল দেখিনি।’
এন্ট্রির, ২৬ মার্চ ১৯৭৪
‘আজ হুশ করে চলে গেলুম রমার কাছে। আগে এ-ভাবেই যেতুম বেশ্যাদের কাছে। প্রায়ই যেতুম এমন একজনের নামও ছিল রমা। সেই রমার সঙ্গে বিয়ের পরে পরেই দমদম বাজারে দেখা। ‘শান্তিবাবুর কাছে শুনেছি বিয়ে করেছ। যাক, কোনও অসুবিধে-টিধে হচ্ছে না তো!’ … অর্থাৎ যৌন। সাদরে বলেছিল। বেশ্যা বলে তখন কিছু হতও। কিন্তু আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে সে-সব অসুবিধা হবে কেন! পোকা ধরা কাঁচা মাংস খেতে অসুবিধা হত, কিন্তু পোটিবুর্জোয়া চিলি শস দিয়ে সুপাচ্য রান্না-মাংস খেতে অসুবিধা কী!’
—আনকাট, আনএডিটেড বিস্ফোরক ডায়েরি। ১৯৭১ থেকে ২০০৫ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় লিখে গিয়েছিলেন এই চুড়ান্ত ইনহিবিশনলেস, আনপ্রেডিবেল দিনলিপি। জীবদ্দশায় এর কিছু অংশ ছাপিয়েছিলেন বটে, তবে বিপুল কাটাছাঁট, এডিটিং-সহ। মৃত্যুর চার বছর পর প্রকাশিত এই আনসেন্সরড ডায়েরির তীব্র উচ্চারণ আমাদের কাছে রীতিমতো শকিং এবং অস্বস্তিকর। কারণ, বাঙালির কনফেশন প্রায় কখনই পুরো সত্য বলে না। বরং অর্ধসত্যের আড়াল খোঁজে। বিষয় হতে পারে যৌনতা, অবৈধ সম্পর্ক, পরিচিত বন্ধুজন বা ক্ষমতাবান সম্পর্কে আদত মনোভাব, সবই বলা হয় রেখেঢেকে, সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে এক ধরনের সামঞ্জস্য রক্ষা করে। উনিশ শতকে ইউরোপের সংস্পর্শে এসেই যেহেতু আমাদের ‘আধুনিকতা’র জন্ম, তাই বাঙালির কনফেশনের সুলুকসন্ধান খানিকটা মিলবে পাশ্চাত্য কনফেশনের ইতিহাসে।
৬ষ্ঠ শতকে, সন্ত বেনেডিকটের নির্দেশবলি থেকে খ্রিস্টিয় কনফেশনের মূল ধাঁচা গড়ে ওঠে। ১৩ শতক থেকেই কনফেশন প্রক্রিয়া যুক্ত হয়ে পড়ে রাষ্ট্র এবং সামাজিক ক্ষমতার সঙ্গে। ব্যক্তির চরিত্র গঠন পদ্ধতির সঙ্গে এর পুরোদস্তুর যোগ তৈরি হয়। ১২১৫ সালে, ‘ল্যাটেরান কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘কনফেশন’ এক ধরনের সর্বজনীন সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। অপরাধীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং তার নিজেকে দিয়েই নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করিয়ে নেবার প্রক্রিয়া চালু হয় এবং এর কেন্দ্রে থেকে ‘কনফেশন’-এর বাধ্যবাধকতা। একে বলা যায় ‘ইনডিভিজুয়ালাইজেশন অফ পাওয়ার’। কেবল রতিক্রিয়া নয়, বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা, পারিবারিক জীবন, প্রেমসম্পর্ক— প্রতি দিনের তুচ্ছ জীবনযাপনের ভিতরেও ঢুকে পড়ে ‘কনফেশন’। এই ধারণাই বদ্ধমূল হয় যে, ‘কনফেশন’ হল ‘সত্য’ উৎপাদনের একমাত্র হাতিয়ার। ইউরোপীয় ব্যক্তি পরিণত হয় ‘কনফেশন অ্যানিম্যাল’-এ। রূপবদল ঘটে এর প্রকাশভঙ্গিতেও। প্রশাসনিক জিজ্ঞাসাবাদ, ডাক্তারি পরামর্শ, আত্মজীবনীর বয়ান, চিঠিপত্রের ভাষা, নথিপত্র রচনা— সব কিছুর ভিতরেই ‘কনফেশন’-এর কৌশল প্রযুক্ত হতে শুরু করে। এর ফলে ‘কনফেশন’ হয়ে ওঠে ব্যক্তির ‘আত্ম’ বা ‘সেলফ’-কে প্রকাশ করার এক নতুনতর মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির কামনা-বাসনা, অবসেশন, সুখবোধ— সব কিছুই পুননির্মিত হয়। এ ই পুননির্মাণের প্রক্রিয়াটিই ‘আধুনিক’ সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘কনফেশন’ আর কেবল নিজের ভিতরের অন্ধকারের স্বীকারোক্তিই রইল না। এটা হয়ে উঠল আর এক ধরনের ‘সেলফ রেগুলেশন’, যার ভিতর দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্র-পরিবার, অর্থাৎ ক্ষমতার প্রত্যেকটি একক তার মান্য ডিসিপ্লিনারি ‘কোড’ গুলোকে আরও একবার নতুন করে বৈধতা দেয়। উনিশ শতক থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ অবধি বাঙালির ”আত্মকথা’, ‘গুপ্তকথা’ ও ডায়েরিধর্মী রচনাগুলি পড়লেও পাশ্চাত্য ‘স্বীকারোক্তির বিজ্ঞান’-এর দেশীয় রূপ চোখে পড়ে। নিজেদের নৈতিক চ্যুতিকে লেখকেরা কোনও ‘সাবভার্সন’ হিসেবে দেখাতে চাননি, বরং নৈতিক বিচ্যুতি যে সামাজিক স্থিতাবস্থার পক্ষে হানিকর, এ কথা বুঝিয়েই তারা সামাজিক ক্ষমতাকে পুনরায় মান্যতা দিয়েছেন, লাগু করতে চেয়েছেন।
‘সদ্ভাবশতক’-এর কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের আত্মকথা ‘ইতিবৃত্ত বা রাঃসের ইতিবৃত্ত’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৮ সালে, ঢাকা থেকে। এই বইতে নিজের বাল্যজীবনের কথা বলতে গিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর প্রথম যৌবনের অসংযমী চিত্তবৃত্তি, ইন্দ্রিয়পরতা ও শারীরিক সম্ভোগবাসনার বিবরণ দিয়েছেন। সেইে সঙ্গে বাসনা নিবারণে ব্যর্থ হবার ফলে উদ্ভুত পাপবোধের খোলাখুলি বর্ণনাও রয়েছে এখানে:
‘ঈশ্বর তাঁহার শরীরে এই স্বভাব করিয়া দিয়াছিলেন। তিনি কোনও স্ত্রীলোকের চক্ষে ২ চাহিতে ও তাঁহাদিগের সম্মুখ দিয়া হাঁটিয়া যাইতে পারিতেন না। বন্ধুগণের সহিত চলিতে ২ যেখানে স্ত্রীলোকালয় দেখিতেন, সেখানে শব্দ ও স্বরে উৎকর্ষ ও উচ্চৈস্থতা বিধানে সযত্ন হইতেন। … গ্রীষ্মকালে কখন ২ রাত্রিতে ছাদের উপর বিষয় বৈরাগোৎপাদক ও পরমেশ্বরের ভক্তিভাব প্রস্ফোটক সংগীত করিতেন। কিন্তু নিকটবর্তী বেশ্যালয়ের প্রশংসাবাক্যে তাহার মনঃসংযোগ থাকিত।… স্মৃতিতে কত কত স্ত্রীমূর্তি অভ্যুদিত করিয়া লইয়া কি অপবিত্র সুখই উপভোগ করিতেন। … কিন্তু মোহের আক্রমণ নিবারণের উপায় সুস্থির করিয়া স্বাধীনমনা হইতেন না।… তখন পাপ করিতে প্রতিজ্ঞা করিতেন। কয়েক রাত্রি সুরাপান করিয়া বেশ্যালয় হইতে আমোদ-প্রমোদ করিয়া আসিলেন। প্রভাতে এক অননুভূত অনুতাপের উদয় হইল। একখানি পুস্তক পাঠ করিয়া তাহার পবিত্র ভাবে অনেক শান্তি পাইলেন।
জৈব বাসনা এবং বাসনামুক্তির আকাঙ্ক্ষার এই দ্বন্দ্ব এক তীব্র যৌন উৎকণ্ঠার জন্ম দিচ্ছে। দৈহিক বাসনা যদি হয় সহজাত প্রবৃত্তি, তবে তাকে অতিক্রম করে নিজেকে এক উত্তীর্ণ নৈতিকতার স্তরে স্থাপন করার প্রয়াসের ভিতরেই রয়েছে ‘আধুনিক’ ব্যক্তিমানুষের ‘টেকনোলজি অফ সেলফ’ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে প্রকাশিত ‘শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত’ এবং পরবর্তী দশকে ওই বইয়ের জবাবে লেখা ‘রমেশদার আত্মকথা’— বাস্তবকাহিনি নির্ভর এই কনফেশন বা স্বীকারোক্তি দুটিও শেষ অবধি সামাজিক নৈতিকতার কোড ও প্রতিষ্ঠিত সামাজিক অবদমনের পক্ষেই মত প্রকাশ করে। এঁদের দু’জনের আত্মকথাই বহুলাংশে খ্রিস্টীয় কনফেশনের মতোই পাপ/পুণ্যের চেনা সীমানাকেই মজবুত করেছে। কলকাতার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে মানদা প্রবৃত্তির তাড়নায় জনৈক রমেশদার সঙ্গে ঘর ছাড়েন, অবশেষে রামবাগান ও হাড়কাটার বেশ্যাপট্টিতে আশ্রয় নেন— ‘যদি রূপ যৌবন বেচতে হয়, তবে লুকিয়ে চোরের মতো কেন, একেবারে বাজারে নেমে দর যাচাই করে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রয় করব’— কিন্তু এই প্রতিস্পর্ধী উচ্চারণ এই বইয়ের মূল সুর নয়। মানদা নিজেকে বার বার ‘ঘৃণ্য’ ও ‘পতিত’ বিশেষণে অবনমিত করেন, তীব্র অনুশোচনা, ‘বিবাহ’ নামক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানদার পক্ষপাত অত্যন্ত তীব্র, নাট্যপ্রযোজনায় মেয়েদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছেন বলে রবীন্দ্রনাথকেও এক হাত নিতে ছাড়েননি তিনি, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানদার নিশ্চল আনুগত্যের কারণেই অমৃতবাজার পত্রিকা লিখেছিল ‘The book may have a moral effect of the readers’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মানদা দেবীর যাবতীয় অভিযোগের জবাব দেন ‘রমেশদার আত্মকথা’য়। সমগ্র বইটি রমেশচন্দ্রের জীবনের বিচিত্র লাম্পট্য ও সম্ভোগের বৃত্তান্ত, সমকাম, পরিচারিকাগমন, অভিজাত বংশীয় লীলাদেবী, ঊষা, কৃষ্ণভাবিনী, সরযু, মানদাদেবীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বর্ণনা দিলেও, রমেশচন্দ্রের কণ্ঠস্বর আদৌ সাবভার্সিভ নয়: ‘যাঁহারা সমাজের হিতাকাঙ্ক্ষী এবং সংস্কারপ্রয়াসী, তাঁহারা বুঝিতে পারিবেন যে, বাল্যকাল হইতে আরম্ভ করিয়া কোন কোন ছিদ্রপথে কেমন করিয়া পাপ প্রবেশ করিবার সুযোগ পায়… আমার জীবনকথা যদি তাহাদিগকে সেই রন্ধ্রগুলি দেখাইয়া দেয়… তাহা হইলে আমার জীবনব্যাপী পাপের কতকটা প্রায়শ্চিত্ত হইবে।’
হেমেন্দ্রকুমার রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ‘মেঘনাদ গুপ্ত’ ছদ্মনামে লেখেন একটি বই: ‘রাতের কলকাতা’। বিশ শতকের গোড়ায় কলকাতার নাইটলাইফ এবং আন্ডারগ্রাউন্ড জীবনের নিখুঁত বর্ণনা। অপরাধ, যৌনতা, নেশা, সমাজ-বহির্ভূতকার্যকলাপের বিশ্বস্ত বিরবণ দেওয়া সত্ত্বেও লেখকের স্বীকারোক্তি: ‘ছেলে-মেয়ের বাপরা বুঝবেন, আসল বিপদ কী এবং কোনখানে। তাঁদেরই অসাবধানতায় কুসংসর্গে পড়ে অপ্রাপ্তবয়স্করা নরকে যাওয়া-আসা করবার সুযোগ পায়। তবু আমি সম্পূর্ণ ছবি দিইনি… কিন্তু সে সম্পূর্ণতা এমন কল্পনাতীত ভাবে ভয়ানক, যে আঁকতে প্রবৃত্তি হল না।’— এ হল এমন একটা সময়ের কলকাতা, বিশ শতকের প্রথম দুই দশক, যখন ঘরে ঘরে ব্রহ্মচর্য পালনের উদাত্ত আহ্বনে বাঙালি যুবকের দেরাজে থাকত একটি করে ‘পাপের খাতা’— হস্তমৈথুন, রূপমোহ-র মতো মামুলি কাজও ছিল- ‘পাপ’— নীরদ সি চৌধুরী এই বিবরণ রেখে গেছেন। উনিশ শতকের শেষার্ধে, ইংল্যান্ডে জনৈক অজ্ঞাতনামা লেখকের একটি সুদীর্ঘ কনফেশনধর্মী আত্মকথা ছাপা হয়— ‘My Secret Life’. এই লিবারটাইন চরিত্রটি জীবনের পুরোটাই ব্যয় করেছিলেন বিচিত্র যৌন অ্যাডভেঞ্চারে। তথাপি মিশেল ফুকো এই বইটিকে কোনও সাবভার্সন হিসেবে না দেখে উনিশ শতকীয় ইউরোপের যৌনতাবিষয়ক ‘অ্যানলিটিক্যাল ডিসকোর্স’-এর অংশ হিসেবেই পড়তে চেয়েছিলেন।
লেখার শুরুতে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক ডায়েরির কথা বলেছিলাম। সে রকমই একটি বিস্ফোরক আত্মকথা শিল্পী প্রকাশ কর্মকার রচিত ‘আমি’। বিচিত্র অবৈধ যৌনসম্ভোগের খোলাখুলি বিবরণ এতে রয়েছে। কিন্তু সন্দীপন, প্রকাশ কর্মকার বা কৃষ্ণগোপাল মল্লিকের আত্মকথাগুলি বাংলা লেখালেখির জগতে ব্যতিক্রম। মধ্য উনিশ শতক থেকে শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোক ভিক্টোরীয় নৈতিকতার আদলে সাজিয়ে নিয়েছে নিজের অন্তরমহল। তাই তার কনফেশন সত্যকে ম্যানিপুলেট করে। বরং বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সুনীল-হাংরি প্রজন্ম হয়ে অতি সাম্প্রতিক কবিতা-গল্প-কথাসাহিত্যই আসলে ধরে রেখেছে বাঙালির প্রকৃত কনফেশন। ‘বিষবৃক্ষ’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘চোখের বালি’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘যোগাযোগ’, ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ বা ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘নষ্ট আত্মার টেলিভিশন’, ‘ডোমকাক ও বহ্নিশিখা’ থেকে ‘আমার শ্যামশ্রী ইচ্ছে, আমার স্বাগতা ইচ্ছেগুলি’ কাব্যগ্রন্থের ভিতরেই খুঁজতে হবে বাঙালির কনফেশনের প্রকৃত ইতিহাস। যে আত্মজীবনী বাঙালি সরাসরি উচ্চারণে লিখে যেতে পারেনি, এক ধরনের খড়ির গণ্ডির ভিতরে বিচরণ করতে বাধ্য হয়েছে, তার সেই যাবতীয় না-বলতে-পারা কথা সে লিখে গেছে সাহিত্যে। নিজেকে ফিকশনালাইজ করেছে। পূর্বোক্ত লিবারটাইন চরিত্রের নিষিদ্ধ জীবনযাপনের অনুপুঙ্খ বিবরণ আছে। My Secret Life -এর পাতায় পাতায় তবু এই বইয়ের লেখকও মনে করতেন, হস্তমৈথুন এবং অতিরিক্ত যৌনাচার চরিত্র এবং স্বাস্থ্য দুটোকেই নষ্ট করে। অর্থাৎ একদিকে বেড়া ভাঙার গল্প, অন্য দিকে সেই অন্তর্ঘাতকেও চেনা লিমিটের ভিতর আটকে রাখার চেষ্টা— কনফেশনের এটাই চরিত্র। সমরেশ বসু তাঁর ‘বিবর’ উপন্যাসের ভূমিকা-পংক্তিতে লিখেছিলেন: ‘আচ্ছা, আমরা যদি সবাই, সত্যি কথা বলতে পারতাম’— এই বাক্যের অন্তর্গত দীর্ঘশ্বাস ও অপূর্ণতাই বাঙালির আত্ম-স্বীকারোক্তির চরিত্র, তাঁর সত্যি না বলতে পারার ইতিহাস।