প্ৰথম পৰ্ব - ইসলামের আবির্ভাবের পটভূমি
দ্বিতীয় পৰ্ব - হযরত মুহাম্মদের (স) মক্কা জীবন
তৃতীয় পৰ্ব - হযরত মুহাম্মদের (স) মদিনা জীবন
চতুর্থ পর্ব - খোলাফায়ে রাশেদূন (৬৩২-৬৬৩ খ্রি.)
পঞ্চম পর্ব - উমাইয়া রাজবংশ (৬৬১-৭৫০ খ্রি.)
ষষ্ঠ পর্ব - আব্বাসীয় সাম্রাজ্য (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.)
পরিশিষ্ট

পরিশিষ্ট-২ : হযরত মুহাম্মদ (স) প্রসঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতামত

পরিশিষ্ট-২ – হযরত মুহাম্মদ (স) প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মতামত 

এডওয়ার্ড গীবন ( Rise ard Fall of the Roman Empior ) 

“এটি (ইসলাম) এমন একটি স্মরণীয় বিপ্লব যা পৃথিবীর সমস্ত জাতিসমূহের উপর একটি নতুন এবং চিরস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করেছে।” 

“হযরত মুহাম্মদের (স) ধর্ম সন্দেহাতীতভাবে সত্য এবং কুরআন আল্লাহর একত্বের গৌরবমণ্ডিত দলিল।” 

“মহানবী ধর্মীয় নেতা রাজনীতিজ্ঞ এবং প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেন। উপরন্তু খোদার উপর প্রগাঢ় আস্থা এবং বিশ্বাস ব্যতীত মানবজাতির ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অলিখিত থেকে যেত।* 

পি. কে. হিট্টি (History of the Arabs ) 

“আরবদেশের ইতিহাসে রক্তের পরিবর্তে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে সমাজ গঠনের এটিই প্রথম প্রচেষ্টা।” 

“তাঁর সংক্ষিপ্ত নশ্বরজীবনে হযরত মুহাম্মদ (স) সম্ভাবনাহীন উপাদান থেকে এক জাতির উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন যা আগে কখনই ঐক্যবদ্ধ ছিল না। আর তাদের মাধ্যমে এমন এক দেশের সৃষ্টি করেছিলেন যা আগে কেবলমাত্র একটি ভৌগোলিক সীমারেখাকেই বোঝাত, কিন্তু তার জাতীয় চরিত্র বলতে কিছু ছিল না।” 

ডাব্লউ. মান্টাগোমারী ওয়ার্ট (Muhammad at Mecca, Muhammad at Medina) 

“রাসূলুল্লাহ তিনটি বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী যা তৎকালীন সময়ে খুবই বিরল ছিল; যথা- ধর্ম প্রবর্তক হিসেবে তাঁর মেধা রাষ্ট্র নামক হিসেবে তাঁর বুদ্ধিমত্তা এবং প্রশাসক হিসেবে তাঁর অসামান্য নৈপূণ্য।” 

“ইসলাম যাযাবর বেদুঈন নৈতিকতাকে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য উপযোগী করে তুলে এর সাফল্যের কৃতিত্ব পরিচয় বহন করে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা যা দিয়ে তিনি আরব সমাজে বিবর্তন আনেন। 

“বিশ্বের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মতো অপর কোন ব্যক্তিকে এমন ঘৃণ্যভাবে অপবাদ দেয়া হয় নি। এর কারণ সহজেই বোঝা যায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ইসলাম খ্রিস্টান জগতের মহাশত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কারণ রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর খ্রিস্টান বায়জানটাইন সাম্রাজ্য শক্তিশালী এবং বিরাজমান ইসলামী রাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়। তবে ঈর্ষাবশে এমন কি মুহাম্মদকে ‘মহাউল্ড’ বা ‘অন্ধকার জগতের রাজকুমার’ বলেছেন।”

থমাস কার্লাইল (Heroes and Hero Worship) 

“আরব জাতির জন্য এটি (ইসলামের আবির্ভাব) অন্ধকারে আলোর সমতুল্য এবং এর আলোকে আরব দেশ উদ্ভাসিত হয়েছিল।” 

সৈয়দ আমীর আলী ( History of the Saracens ) 

“একটি মহান কাজ চমৎকার এবং বিশ্বস্ততার সাথে সুসম্পন্ন করার শ্রেষ্ঠ প্রমাণই হচ্ছে তার (পুত-পবিত্র) জীবন। 

স্টানলী লেনপুল 

“তিনি [হযরত মুহাম্মদ (স)] বহুবছর প্রচণ্ড বাধা-বিঘ্নের বিরুদ্ধে একাই নিৰ্ভীকভাবে সাহসিকতার সাথে তাঁর শত্রুর মোকাবেলা করেন। তাঁর গোত্রের শত ঘৃণা তাকে নিরুৎসাহ করেনি। তাঁর সৌজন্যবোধ এরূপ ছিল যে, তিনি মুসাবিদা (হাতে হাত মিলান) করার সময় কখনই প্রথমে তাঁর হাত ছাড়েননি। তিনি কোমলমত শিশুদের খুব ভালবাসতেন এবং যখন তাঁর সামনে দিয়ে তারা চলে যেত তখন তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে স্মীত হাসতেন। তাঁর শুভ ও পবিত্র কাজে এরূপ উৎসাহ ও উদ্দীপনা এমন ছিল যে তার কোন কমতি ছিল না এবং মহান কাজে তাঁর এরূপ উদ্দীপনা যেন সমগ্র বিশ্বকে প্রজ্বলিত করে দিত। তিনি ছিলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ এবং সত্য (একেশ্বরবাদ) প্রচারকে তিনি তাঁর জীবনের ব্রতই মনে করেন নি, তার জীবনী শক্তিতে (life spring) পরিণত হয়েছিল।” 

উইল 

“হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর উম্মতদের জন্য একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর চরিত্র ছিল পুতঃপবিত্র এবং তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁর পোষাক ও খাদ্য ছিল খুবই সাদামাটা। তিনি এমনই স্বাবলম্বী ছিলেন যে তিনি নিজের হাতে কাপড় সেলাই করতেন, বাজারে গিয়ে খাদ্য দ্রব্য কিনে আনতেন, ছাগলের দুধ দোহন করতেন। তিনি নিজে যে কাজ করতে পারতেন তা তাঁর দাসদের দিয়ে করাতেন না। তার কোন অহঙ্কার ছিল না এবং যে কোন লোক যে কোন সময়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারতেন। তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে যেতেন। তাঁর বদান্যতা ছিল সীমাহীন। 

মার্মাডিউক পিকথাল 

“অন্যান্য পয়গম্বরদের তুলনায়, যাদের অধিকাংশই রহস্যাবৃত, হযরত মুহাম্মদ (স) নিঃসন্দেহ এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, যার কর্মকাণ্ড, চারিত্রিক বৈশিষ্ট সমসাময়িক লেখকদের লেখনীতে উদ্ভাসিত।” 

খাজা কামালউদ্দীন (The Ideal Prophet ) 

“হযরত মুহাম্মদ (স) এমন একজন ধর্মপ্রবর্তক ছিলেন যিনি ধর্মকে বিজ্ঞানের সহায়ক বলে মনে করতেন। তিনি খ্রিস্টধর্মের মত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে বিশেষ প্রাধান্য দিতেন না এবং যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তাঁর প্রচারিত ধর্মে এমন কোন অনুশীলনী ছিল না যা জ্ঞান-বিচার-বুদ্ধির পরিপন্থী অথবা বুদ্ধি বিচার ও তর্কবির্তকের প্রয়োজন মিটাতে পারে না। জ্ঞানচর্চাকে তিনি উপাসনার উর্ধ্বে স্থান দেন। তাঁর বিচার বুদ্ধিতে মানুষের মঙ্গলার্থে প্রকৃতির (Nature) রহস্য উদ্ঘাটন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনার সমতুল্য। শিক্ষাকে তিনি যথেষ্ট মূল্য দিতেন। তিনি বলেন, ‘শহীদের রক্তের চেয়ে জ্ঞানীর কালি অধিকতর পবিত্র।” তিনি আরও বলেন ‘জ্ঞানান্বেষনে যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে আল্লাহর পথের পথিক।” 

“হযরত মুহাম্মদ (স)-ই একমাত্র পয়গম্বর, যিনি তাঁর জীবদ্দশায় তার ধর্ম প্রচারের সফলতা দেখে যান।” 

“হযরত মুহাম্মদ (স)-এর চারিত্রিক বিশ্লেষণ করতে হবে তার প্রচারিত ধর্মীয় অনুশীলনীর মাধ্যমে নয়, বরঞ্চ তার কাজের সফলতার।” 

“পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ (স) খুবই মহানুভব ছিলেন এবং তিনি তাঁর চিরশত্রুদের ক্ষমা করে দেন। নম্রতা ও বিনয় তাঁর অসাধারণ গুণ ছিল। তিনি পরোপকারী ছিলেন। তাঁর প্রিয় সঙ্গী খাব্বার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি তার উট দোহন করেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকে ভীষণ ঘৃণা করতেন। তিনি এক ভিক্ষুককে বন-জঙ্গর থেকে খড় কুটো কিনে তা বিক্রি করে কুঠার করতে বলেন এবং তা দিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করে জীবনযাপন করতে বলেন।” 

“নবী করিম খুবই অতিথিপরায়ণ ছিলেন। তার আতিথেয়তায় মুসলিম ও অমুসলিম সকলেই উপকৃত হয়। নবী করিম দাসত্ব প্রথা ঘৃণা করতেন। তিনি তাঁর শেষ বাণীতে দাসত্ব প্রথা উচ্ছেদের কথা বলেন। তিনি তাঁর উম্মতদের দাসদের মুক্ত করে দিতে বলেন।” 

এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা 

“বিশ্বের সমস্ত ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (স) সর্বাপেক্ষা কৃতী বা সার্থক ছিলেন।” 

“রাসূলুল্লাহর শিক্ষার প্রধান তাৎপর্য ছিল গোত্রপ্রধান বিলুপ্তি এবং ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রতিষ্ঠা। 

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট 

“মুসা (আ) তাঁর গোত্রের কাছে যীশুখ্রিস্ট (আ) রোমীয় জগতে কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স) প্রাচীন বিশ্বে একেশ্বরবাদের মর্মবাণী প্রচার করেন।” 

পবিত্র কুরআন 

“আমরা তোমাকে কোন একটি বিশেষ গোত্রে (কাবিলা যেমন আমরা হুদ, সোয়াইব, সালেহ, মুসা) পাঠায়নি, বরঞ্চ সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে পাঠিয়েছি সত্যের মহান বাণী প্রচারের জন্য এবং সে সাথে সতর্ক সংকেত দিয়েছি।” (৩৪ : ২৮) 

“আমি (মহান আল্লাহ) তোমার (মুহাম্মদ) জন্য তোমার ধর্মকে পূর্ণাঙ্গরূপ দান করেছি এবং তোমার উপর আর্শীবাদ বর্ষন করেছি।” (৫ : ৩) 

এইচ জি ওয়েলস ( The Outline of History ) 

“ইসলাম একটি সাধারণ বা সাদামাটা ধর্ম নয়; ইসলাম একটি ঈশ্বর প্রদত্ত বহুল প্রচারিত একেশ্বরবাদ। ইসলামে বহু পণ্ডিত ব্যক্তি, ধর্মবেত্তা ও প্রচারক রয়েছে কিন্তু অন্যান্য ধর্মের (খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু) মতো কোন পৌরহিত্যের অবকাশ নেয় মুসলমানগণ হযরত মুহাম্মদকে (স) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বা পয়গম্বর হিসেবে গ্রহণ করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (স) যে আল্লাহর কথা বলেছেন তা মুসলমানগণ স্বজ্ঞানে এবং আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। কোন প্রকার অলীক ও অবাস্তব প্রতীকী (symbolism) ছাড়া, কোন প্রকার বেদী বা পুরোহিতের মন্ত্র ছাড়া, হযরত মুহাম্মদ (স) এমন এক ধর্ম প্রচার করেন যে সত্য, ন্যায় ও সার্বজনীনতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং যা তার অনুসারীরা সানন্দে গ্রহণ করেছে। 

ল্যা মার্টিন (History of The Turks) 

দার্শনিক, বাগ্মী পয়গম্বর, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা বিজেতা ধর্মীয় বিশ্বাসের (একেশ্বরবাদ) প্রবর্তক, মূর্তিবিহীন আচার-অনুষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, বিশটি রাজ্যের এবং একটি আধ্যাত্মিক জগতের প্রতিভূ এক নাম হযরত মুহাম্মদ (স)। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের মানদন্ড বিচার বিশ্লেষণে আমরা কি বলতে পারি না – “মুহাম্মদের চেয়ে অন্য কোন শ্রেষ্ঠ মানব আছেন কি?” 

জুলেম মেসারম্যান ( Where are the leaders? Times 15th only, 1994 ) 

“সকল দেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (স)।” 

বানার্ড শ’ 

“হযরত মুহাম্মদ (স) লাখে একজন ছিলেন।” 

জন ডেভেনপোর্ট 

“তিনি [হযরত মুহাম্মদ (স)] ইতিহাসের সেরা ব্যক্তি ছিলেন।”

মহাত্মা গান্ধী 

“তিনি সকল ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে সফলতম ছিলেন।” 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *