পরিশিষ্ট-১ : পাঠকের যত প্রশ্নের উত্তর

পরিশিষ্ট ১ : পাঠকের যত প্রশ্নের উত্তর

আমি প্রথম খণ্ড ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ লেখার পর, বইয়ের শেষে পাঠকদেরকে প্রশ্ন করার জন্য ঠিকানা দিয়েছিলাম। এরপর আমার নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও গুগল ডক লিংক শেয়ার করি, যেখানে সবাইকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিই।

যে সাড়া পেয়েছিলাম, তা অভাবনীয়। শত শত প্রশ্নের ভীড়ে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দেব, সেটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। একই প্রশ্ন অনেকবার এসেছে অবশ্য। এতসব প্রশ্নের মধ্য থেকে আমি কিছু প্রশ্ন এখানে তুলে দিলাম, এবং আমার মতো করে উত্তর দেবার চেষ্টা করলাম। বইয়ের মূল লেখায় উঠে না আসা অনেক কিছু এখানে উঠে আসবে পাঠকদের জিজ্ঞাসা মেটাতে গিয়ে, তাই প্রতিটি উত্তরই ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ থাকলো।

প্রশ্ন : গোলান মালভূমির আন্তঃ ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে লিখবেন! এবং কেন সিরিয়া এটি পুনরুদ্ধারে এখনো সচেষ্ট হতে পারছে না, এই অপারগতাও তুলে ধরবেন!

উত্তর : গোলান মালভূমি আগে পুরোটাই সিরিয়ার অধিকারে ছিল, এখন এর অধিকাংশটা ইসরাইলের অধিকারে। এই জায়গার আরবি নাম জাওলান হলেও হিব্রু নাম রামাৎ হা-গোলান, তবে এগুলো থেকে গোলান হাইটস (Golan Heights) নামটাই বেশি পরিচিত, বাংলাতেও তাই। প্রায় ১,৮০০ বর্গকিলোমিটার এ জায়গাটির প্রায় ১,২০০ বর্গকিলোমিটার এখন ইসরাইলের অধীনে, বাকিটুকু সিরিয়ার। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল সিরিয়ার কাছ থেকে জায়গাটি দখল করে নেয়। ১৯৮১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইসরাইলি সংসদ কেনেসেতে পাশ হয় গোলান মালভূমি আইন। এর মাধ্যমে ইসরাইল সরকারিভাবে এই দখলের বৈধতা দেয়। ২০১৮ সালে তৎকালীন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গোলান মালভূমি চিরদিন ইসরাইলের থাকবে।”

এই অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বটা কী? বাইবেল বলে, গোলান মালভূমি এলাকা আজীবন ইসরাইলের রাজাদের সাথে দামেস্কের আরামিয়ান রাজাদের দ্বৈরথের বিষয় ছিল। আসিরীয় ও ব্যবিলনীয়দের রাজত্বের পর এ অঞ্চলটি পারস্যের অধীনে আসে, এরপর পারস্য থেকে নির্বাসন শেষে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ফিরে আসে ইহুদীরা। ষোড়শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্য জিতে নেয় গোলান। আর যখন ম্যান্ডেটের সময় এলো (এ বইতে ম্যান্ডেট নিয়ে আলাপ করা হয়েছে) তখন গোলান পড়লো সিরিয়ার ফ্রেঞ্চ ম্যান্ডেটের অধীনে। ১৯৪৬ সালে ম্যান্ডেট বিলুপ্ত হবার পর সিরিয়ার অধিকারে চলে আসে গোলান মালভূমি। আর ১৯৬৭ সালে ইসরাইল অতর্কিত আক্রমণের করার পর গোলানের ৬৬% হাতছাড়া হয়ে যায় সিরিয়ার। ১৯৮১ সালে আইন পাশের পর সেখানে ইসরাইলি সেটেলমেন্ট বানানো শুরু হয়, তবে সেই আইন জাতিসংঘ কর্তৃক নিন্দিত হয়। ২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের অংশ বলে স্বীকৃতি দেয়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্য স্বীকৃতি দেয়নি।

ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিজএনগেজমেন্ট অবজারভার ফোর্স (UNDOF) নিরাপত্তার জন্য ২৬৬ বর্গকিলোমিটারের একটি বাফার জোন রাখার ব্যবস্থা করে গোলানের ইসরাইলি ও সিরীয় অঞ্চলের মাঝে।

কেন সিরিয়া সরকার পারছে না গোলান মালভূমি ফেরত নিতে? এটার সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে আমার মতে দুটো কারণ। এক, ইসরাইলের সেনাবাহিনী সিরিয়ার বাহিনীর চেয়ে ঢের শক্তিশালী। আর দুই, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যেমন ধরুন, ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় গোলান মালভূমির যে ৬০০ বর্গকিলোমিটারের ক্ষমতা সিরিয়ার হাতে রয়েছে, তা নিয়েই কোন্দল শুরু হয়ে যায়, ক্ষমতা ভাগ হয়ে যায় সিরিয়া সরকার এবং তার বিরোধী দলগুলোর মাঝে। বিদ্রোহী দলগুলোকে দমন করতে গিয়েই সিরিয়া সরকার কুলিয়ে উঠতে পারছে না, আর আল-নুসরা ফ্রন্ট এবং আইএস (ইসলামিক স্টেটের)-এর উপস্থিতি তো আছেই। এসবের পরে কি আর শক্তিশালী ইসরাইলের কাছ থেকে জমি উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে পারবে সিরিয়া? পূর্ব গোলান মালভূমির পুরো ক্ষমতা অবশ্য সিরিয়া সরকার নিজ হাতে নিতে পেরেছে ২০১৮ সালে, অর্থাৎ প্রায় ৬ বছর ঝামেলার পর। [ইরান অবশ্য ইসরাইলি গোলান মালভূমিতে আক্রমণ চালিয়েছে অতীতে (২০১৮), তবে কোনো লাভ হয়নি। ]

কেন গোলান মালভূমি চায় ইসরাইল? ইসরাইলের প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য আসলে দুটো— দেশের আয়তন বাড়ানো, আর সিরিয়ার মূলভূমির সাথে বাফার জোনের মাধ্যমে দূরত্ব বাড়ানো এবং নিজের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সিরিয়ার হাত থেকে।

প্রশ্ন : আমেরিকা অন্ধভাবে কেন ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, এর সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : এ বইতেই আলোচনা করেছি লবিং নিয়ে; প্রো-ইসরাইল গ্রুপগুলো এর জন্য ভালো ফান্ডিং করে, ডোনেশন করে, স্পন্সর করে। এর ফলে বিজয় লাভের পর আসলে তাদের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না বা চান না নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা ব্যক্তিরা। কেবল ২০১৮ সালের মার্কিন নির্বাচনেই ইসরাইল-পন্থী ইহুদী লবিস্ট গ্রুপ ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে, স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের কথা হিসেবে আনলে সেই অংকটা ছাড়িয়ে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এত টাকা দিয়ে ক্যাম্পেইন করে জেতার পর লবিস্টদের বিরুদ্ধে চলার ইচ্ছা রাখা যায় কি?

প্রশ্ন : আরব রাজারা ফিলিস্তিন নিয়ে নিরুৎসাহিত কেন?

উত্তর : ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরব দেশগুলোর সমর্থন একদম হারিয়ে গেছে, তা নয়। কিন্তু অনেকাংশেই ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে, সত্য। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত রন ডার্মার বলেছিলেন, “আরব দেশগুলো এখন আর ফিলিস্তিনের সুরে নাচছে না।”

মিসরের সিসি থেকে শুরু করে জর্ডানের আব্দুল্লাহই বলুন কিংবা সৌদি আরবের সালমান- তারা সবসময়ই টু স্টেট সমাধানের কথা বলে এসেছেন, যার ভিত্তি ২০০২ সালের অ্যারাব পিস ইনিশিয়েটিভ। তারা চান পূর্ব জেরুজালেম হোক ফিলিস্তিনের রাজধানী। এমন না যে তারা একদম হাত ধুয়ে ফেলেছেন ফিলিস্তিন ইস্যুতে। মিসর এখনও চেষ্টা করে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সাথে ইসরাইলের পিস টক করাবার, চেষ্টা করে ফাতাহ-হামাসের মাঝে মিল মহব্বত তৈরি করার; গাজা উপত্যকায় সবচেয়ে বেশি ডোনেশন করে থাকে যে দেশটি, সেটি হলো কাতার; আমেরিকায় যে দেশটি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ওকালতি করে, সেটি হলো জর্ডান, দেশটি প্রত্যক্ষভাবে জেরুজালেমের নানা বিষয়ে জড়িত, আল- আকসা কম্পাউন্ড তো রীতিমত জর্ডানই চালায়। যদিও সৌদি আরবের ব্যাপারে ইসরাইলের সাথে দহরমের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, তারপরও এটা স্বীকার করতে হয় যে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে বড় অংকের সাহায্যই সৌদি করেছে, এবং করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যেবার সৌদি আরবের রিয়াদ সামিট গেলেন, সেখানেও তাকে চেপে ধরেন ১২ আরব নেতা ফিলিস্তিনের ইস্যুতে, অবশ্য ট্রাম্পের তাতে কিছু যায় আসেনি।

তবে টাকা পয়সা দান খয়রাত করে দেয়াই শেষ কথা নয়। রাজনৈতিক সমর্থন আছে কি না, সেটিও বিবেচ্য বিষয়। এখানেই এসে বাঁধে গণ্ডগোল। অনেকে মনে করেন, আরবরা ফিলিস্তিন ইস্যুতে ক্লান্ত। অনেকে আবার ফিলিস্তিনের ওপর রেগেও আছে। যেমন, তারা কেন সাদ্দাম হোসেনের সাথে যোগ দিয়েছিল কুয়েত ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে? হামাসের মুসলিম ব্রাদারহুড কেন মিসরকে ছোট করে, কেন জর্ডানে সরকার পতন ঘটানোর চেষ্টা করেছিল ফিলিস্তিনিরা, লেবাননের গৃহযুদ্ধের জন্যও অনেকে দায়ী করে ফিলিস্তিনকে- এরকম নানা অভিযোগ রয়েছে অনেকের।

এ বই লেখার সময় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি পিএলও -র চেয়ারম্যান, ফাতাহর সদস্য। ২০১৯ সালে এক কেবিনেট মিটিংয়ে তিনি জানান, বিভিন্ন আরব দেশ তাদেরকে সাহায্য ও ঋণ দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও একটি টাকাও আসেনি। “অনেক বেশি চাইনি, ইনশাআল্লাহ, কিছু না কিছু হয়ে যাবে। আমরা মাসে মাত্র একশো মিলিয়ন ডলার করে চেয়েছি। বলেছি যে, ঋণ হিসেবে দিন, আমরা পরে পরিশোধ করে দেব। কিন্তু ঋণের প্রশ্নে আজও কোনো উত্তরই পেলাম না আমরা।”

ইতিহাসে এর আগেও আরবরা জোটবদ্ধ হয়ে ইসরাইলকে আক্রমণ করেছে বটে, তাতে অবশ্য ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়নি। আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো তাই ঘুরছে অন্য দিকে, ফিলিস্তিন ইস্যু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে যেদিকে তাদের নিজেদের উন্নতি, সে পথেই হাঁটছে তারা।

প্রশ্ন : সাধারণ ফিলিস্তিনদের জীবন যাপনে আয়ের উৎস কী? তাদের কি বহির্বিশ্বের সাথে চাকরি-ব্যবসার সম্পর্ক আছে?

উত্তর : আমি ধরে নিচ্ছি ফিলিস্তিন বলতে আপনি ইসরাইল বলতে যে সীমানা বোঝায় এখন, সেখানকার মুসলিমদের বোঝাচ্ছেন না, বরং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে অনেক দেশ যে সীমানাকে স্বীকৃতি দেয়, তার নাগরিকদের ব্যাপারে জানতে চাইছেন।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বর্তমানে পিএলও শাসিত; তারা পশ্চিম তীর ও গাজার অধিকার রাখে, যদিও গাজায় এখন হামাস শাসন চলছে। পশ্চিম তীর এখন ১৬৫টি ছোট ছোট ফিলিস্তিনি অংশে বিভক্ত, আর সেই সাথে আছে ২৩০টি ইসরাইলি সেটলার বা দখলি অঞ্চল, যেখানে ইসরাইলের আইন চলে। অন্যদিকে ২০০৭ সাল থেকে গাজা বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইল।

আলজেরিয়ায় প্যালেস্টাইনিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিলের নির্বাসিত সেশনে ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় ফিলিস্তিনের। পিএলও-র উদ্দেশ্যই হলো ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে। করোনা মহামারি শুরু হবার আগে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মাঝে ৭১.৫% অর্থাৎ ১৩৮টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যে দেশগুলো এখনও স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইত্যাদি।

ইউএনডিপি-র হিসেব মতে, ফিলিস্তিনের সাক্ষরতার হার ৯৬%-এরও বেশি। পূর্ব জেরুজালেমের টুরিজম থেকে ফিলিস্তিনের একটা বড় আয় হয়। প্রায় ২০-৫০ লাখ মানুষ ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ঘুরতে আসে বছরে, যার মাঝে ৪০% ইউরোপীয় এবং ৯% উত্তর আমেরিকান। করোনা মহামারির ঠিক আগের হিসেব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের ৯৭% ঘরেই অন্তত একটি মোবাইল ফোন আছে, আর অন্তত একটি স্মার্টফোন আছে অন্তত ৮৬% ঘরে (পশ্চিম তীরে ৯১% কিন্তু গাজা উপত্যকায় ৭৮%)। ৮০% ফিলিস্তিনি আবাসে রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ, অন্তত ৩৩% ঘরে রয়েছে কম্পিউটার। ফিলিস্তিনি ফুটবল টিম বিশ্বনন্দিত, ফুটবলের সাথে সাথে রাগবিও বেশ জনপ্রিয় সেখানে, তথ্যটা একটু থমকে দেবার মতো অবশ্য।

ফিলিস্তিনিরা কী করে অর্থ উপার্জন করে? দেশটির ১৩.৪% লোক কৃষিকাজ করে সরাসরি, কিন্তু পরোক্ষভাবে ৯০% মানুষই এর সাথে জড়িত। দেশটির ১,৮৩,০০০ হেক্টর জমিতে কৃষিকাজ হয়, যার অর্ধেকই জলপাই উৎপাদন করে।

বর্তমানে দেশটি বেকার সমস্যায় ভুগছে, এজন্য অনেকে ইসরাইলে যায় চাকরি করতে। কৃষিকাজের পাশাপাশি নির্মাণকাজ, পণ্য উৎপাদন এবং অন্যান্য ব্যবসাও করে লোকে। কুটির শিল্প ফিলিস্তিনিদের আয়ের একটি ভালো উৎস। আর এমনিতে পরিবহন ব্যবসা তো আছেই। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন করে ফিলিস্তিনি টেক স্টার্টআপগুলো দেশটির অর্থনীতির জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।

ইসরাইলে বসবাসকারী মুসলিমদের অবশ্য চাকরি-বাকরি নিয়ে অতটা সমস্যা নেই। এ কারণে অনেকে অবৈধভাবে ফিলিস্তিন থেকে ইসরাইলে কাজ করতে চলে যায় পেটের দায়ে।

পশ্চিম তীরের চাইতে ইসরাইলি অঞ্চলে গড় দৈনিক বেতন ২.২ গুণ, আর গাজার তুলনায় সেটি ৪ গুণ। ২০২২ সালের হিসেবে, ফিলিস্তিনে মাসিক ন্যূনতম আয় ১,৪৫০ শেকেল (৩৯,০০০ টাকা) যেখানে ইসরাইলে সেটি ন্যূনতম ৫,৩০০ শেকেল (১,৫৩,০০০ টাকা)। ইসরাইলি মুদ্রা এক শেকেল বাংলাদেশে ২৭টাকা (২০২২ সালের জানুয়ারির হিসেব)।

প্রশ্ন : মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এত ইসলামি-অনৈসলামি সশস্ত্র বাহিনী আছে, ইসরাইলের গায়ে হাত দেয়ার সাহস কেউ-ই পায় না কেন? পদাতিক সেনাদের জন্য কি ইসরাইল দুর্ভেদ্য?

উত্তর : আপনার প্রশ্নের উত্তর মূলত লুকিয়ে আছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী কতোটা শক্তিশালী, সেটি জানার মাঝে।

ইসরাইলের সম্মিলিত বাহিনীর নাম ‘আইডিএফ’ বা ‘ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স’ যাকে হিব্রুতে সংক্ষেপে ‘ৎসাহাল’ ডাকা হয়। এর তিনটি শাখা : সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী। এর প্রধান চিফ অফ জেনারেল স্টাফ, যিনি রিপোর্ট করেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে। তাদের মূলনীতি- “কোনো যুদ্ধে কোনোদিন হারা যাবে না।” নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যতিক্রম ব্যতীত সকল ইসরাইলি নাগরিককে একটি নির্দিষ্ট সময় বাহিনীতে কাজ করতে হয়। তবে ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি পাওয়া যাবে, এবং প্রায় ৩৩% ইসরাইলি মেয়ে এ কারণ দেখায়। আর, আরব মুসলিমরা চাইলে যোগদান না করতে পারে।

বাহিনীর পেছনে খরচের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোর মাঝে একদম ওপরের দিকের তালিকায় থাকবে ইসরাইল।

২০২২ সালের হিসেবে, বিশ্বের ১৪০টি দেশের বাহিনীর শক্তিমত্তার হিসেবে ইসরাইলের অবস্থান ১৮।

আইডিএফ

উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর শক্তিমত্তার ক্রমিক দেয়া হলো-

১ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

২ – রাশিয়া

৩ – চীন

৪ – ভারত

৫ – জাপান

৬ – দক্ষিণ কোরিয়া

৭ – ফ্রান্স

৮ – যুক্তরাজ্য

৯ – পাকিস্তান

১০- ব্রাজিল

১১ – ইতালি

১২ – মিসর

১৩ – তুরস্ক

১৪ – ইরান

১৫ – ইন্দোনেশিয়া

১৬ – জার্মানি

১৭ – অস্ট্রেলিয়া

১৮ – ইসরাইল

১৯ – স্পেন

২০ – সৌদি আরব

২১ – তাইওয়ান

২২ – ইউক্রেন

২৩ – কানাডা

৩৪ – ইরাক

৩৬ – সংযুক্ত আরব আমিরাত

৪২ – সিঙ্গাপুর

৪৩ – মেক্সিকো

৪৬ – বাংলাদেশ

৪৭ – সিরিয়া

৪৯ – পর্তুগাল

৫৫ – মরক্কো

৬১ – সার্বিয়া

৭১ – কুয়েত

৭২ – লিবিয়া

৭৩ – সুদান

৭৫ – জর্ডান

৭৭ – কাতার

৭৮ – ওমান

৭৯ – শ্রীলংকা

৮০ – ইয়েমেন

৮১ – কেনিয়া

৯২ – উগান্ডা

৯৮ – বাহরাইন

১০৩ – দক্ষিণ সুদান

১১৪ – লেবানন

১১৮ – আফগানিস্তান

অর্থাৎ মিসর আর ইরান ছাড়া অন্য কোনো আরব দেশের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তিমত্তা ইসরাইলের ওপরে নয়। তুরস্ক ওপরে আছে, তবে সেটি আরব দেশ নয়। মিসরের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ইরান অবশ্য ইসরাইলের শত্রুই।

আশা করি, কেন আরব দেশগুলো কিছু করে না, তার উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে যে আরব দেশ কয়েকটি জোটবদ্ধ হয়ে কিছু চেষ্টা করেনি তা নয়, কিন্তু ব্যর্থই হয়েছে।

প্রশ্ন : আপাতদৃষ্টিতে আমরা দেখি যে, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের শক্তির বিশাল তারতম্য, আর মুসলিম (1) রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন থেকে তাদের হাত ধুয়ে ফেলেছে, পুরা পৃথিবী ইনিয়ে বিনিয়ে ইসরাইলকেই সাপোর্ট দেয় (জায়োনিস্টদের প্রভাব হোক আর যাই হোক), তাহলে তো ইসরাইল একটা ফুল স্কেল যুদ্ধ করে সবটা একবারেই দখল করতে পারে, তাদের হাতে সব থাকা সত্ত্বেও ফুল স্কেল যুদ্ধ করে না কেন? তারা কি কিছুর অপেক্ষায় আছে?

উত্তর : ইসরাইল একটি দেশকে আক্রমণ করলে যুদ্ধে হয়তো জিততেও পারে, কিন্তু আশপাশের সব দেশ অধিকার করে নেয়া কোনো বাস্তবিক পরিকল্পনা নয়। এত বড় সেনাবাহিনীও নেই দেশটির। আর সত্যি বলতে ইসরাইলের এমন পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই, যেখানে তার সব দখল করতে হবে। তাদের আদি এবং আসল উদ্দেশ্য সবসময়ই পবিত্র ভূমির অধিকার নেয়া, যেমনটা তারা প্রাচীন ফিলিস্তিনিদেরকে পরাজিত করে জয় করে নিয়েছিল। সেই সীমানা কেমন? ইহুদীদের বর্তমান তাওরাত অনুযায়ী পবিত্র প্রতিশ্রুত ভূমির সীমানা অনেকটা এমন, “আর লোহিত সাগর হতে ফিলিস্তিনিদের সমুদ্র পর্যন্ত এবং মরুভূমি হতে ফোরাত নদী পর্যন্ত তোমার সীমা নিরূপণ করবো; কেননা আমি সেই দেশবাসীদেরকে তোমার হাতে তুলে দেব এবং তুমি তোমার সম্মুখ থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে দেবে। তাদের সঙ্গে কিংবা তাদের দেবতাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি স্থাপন করবে না। তারা তোমার দেশে বাস করবে না, অন্যথায় তারা আমার বিরুদ্ধে তোমাকে গুনাহ করাবে।” [হিজরত, ২৩:৩১-৩২]

এই সীমা যদি দখল করতে হয়, তাহলে বর্তমান ইসরাইলি সীমানার বাইরেও মিসর, জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার কিছু অংশ দখল করে নিতে হবে। তাহলে উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে বলতে পারবে। সারা বিশ্ব জয় করে নেয়া ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থের কোনো ধার্য করা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নয়।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আগে ভাবতাম তারা ইসলাম সম্পর্কে তেমন সচেতন না, এখন (২০২১) মনে হচ্ছে ভালোই সচেতন। হামাসের নেতৃত্বে যারা আছে, তারা কি ইসলামি ভাবধারার নাকি সেকুলার?

উত্তর : আশপাশের সিরিয়া, লেবানন, জর্ডানের তুলনায় ফিলিস্তিনি মুসলিমেরা অপেক্ষাকৃত বেশি ধার্মিক; মিসরের চাইতে তো অতি অবশ্যই ধার্মিক। তবে শহুরে এলাকার চাইতে গ্রামাঞ্চলে ধার্মিকতা বেশি, এবং কম বয়সীদের তুলনায় বয়স্কদের মাঝে ধর্মপালনের প্রবণতা বেশি গাজা এবং পশ্চিম তীরে। তবে বেশ অনেক বছর ধরে গাজায় ড্রাগ সমস্যাকে অনৈসলামিক বলে চিহ্নিত করেছেন অনেকে। হাজার হাজার তরুণ ট্র্যামাডল নামের এক ধরনের ব্যথানাশক ড্রাগ নেয় আনন্দদায়ক অনুভূতির জন্য। কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা গাজার ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধাবস্থার কথা বলে। কালো-বাজারে এই ট্র্যামাডলের চাইতেও বেশি নেশাদায়ক ট্র্যামাল পাওয়া যায় এখন সেখানে। বছর দশক আগেও গাজার নিচের সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্র্যামাডল পাচারের কথা জানা যেত। সমাজের উচ্চ পদস্থ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের মাঝেও এ ড্রাগ ছড়িয়ে পড়ে বাজেভাবে।

হামাস সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করে দেয় এবং ড্রাগ বিরোধী কার্যক্রম শুরু করে, এর ফলে ড্রাগটির দামও বেড়ে যায়। আর যারা ড্রাগ ব্যবহারকারী ছিলেন, তাদের জন্য স্বল্প খরচের রিহ্যাব নেই গাজায়।

হামাস ইসলামিক কি না তার উত্তরে বলতে হয়, হ্যাঁ।

“ফিলিস্তিনের সংগ্রাম কেবল ভূমি আদায়ের সংগ্রাম নয়, এর সাথে জড়িত ঈমান।” এটিই ছিল হামাসের বিবৃতি। উল্লেখ্য, ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট, যা আরবিতে হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া (dal 1 Engliall iss) নামে পরিচিত, এরই আদ্যোক্ষর দিয়ে গঠিত সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ‘হামাস’।

গাজার হামাসের তুলনায় পশ্চিম তীরের ফাতাহ অপেক্ষাকৃত মডারেট এবং সেকুলার বটে। ফিলিস্তিনি লিবারেশন মুভমেন্ট (Gik alill i ball .~~~ i is >) আরবি নামের আদ্যোক্ষরগুলো উল্টো করে সাজালে পাওয়া যায় ‘ফাতহ’ যার অর্থ ‘বিজয়’, সেই থেকেই নাম ‘ফাতাহ’। উদ্দেশ্য ছিল ইসরাইল রাষ্ট্রের পতন ঘটানো। ইয়াসির আরাফাত বলেছিলেন, “আমাদের কোনো আদর্শ নেই সেরকম, আমাদের লক্ষ্য কেবল একটিই— আমাদের মাতৃভূমিকে যেকোনোভাবেই হোক স্বাধীন করতে হবে। আমাদের সেনারাই আমাদের ভবিষ্যৎ।”

বইয়ের অধ্যায়েও অল্প করে হামাস ও ফাতাহ নিয়ে আলাপ হয়েছে, সুতরাং তাদের নিয়ে প্রাথমিক ধারণা ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন : ইসরাইলের এত ক্ষমতা থাকার পরেও তারা পুরো ফিলিস্তিন দখল করে কেন নিচ্ছে না যেখানে পুরো বিশ্বই এক কথায় তাদের সমর্থন দিচ্ছে? আরব বিশ্বের/মধ্যপ্রাচ্যের অন্য সব দেশ ফিলিস্তিন ইস্যুতে চুপ এবং অনেক দেশ ইতিমধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করছে ইসরাইলের সাথে। এতে তারা ঠিক কীভাবে লাভবান হবে? যদি সুসম্পর্ক না থাকত তাহলে কি তাদের আক্রমণ করতে পারবে ইসরাইল? পুরো বিশ্বের এত আন্দোলন কি আসলেই কোনো সুফল বয়ে আনবে ফিলিস্তিনের জন্য? জায়োনিজমকে পশ্চিমা বিশ্ব এতটা সমর্থন কেন করছে?

উত্তর : আমার ব্যক্তিগত মত হলো, ইসরাইল চাইলে অবশ্যই পুরো ফিলিস্তিন নিয়ে নিতে পারে, কিন্তু হয়তো কিছুটা চক্ষুলজ্জার জন্য করেনি, তবে ধীরে ধীরে পশ্চিম তীরে সেটলাররা অবস্থান নিয়ে নিচ্ছে, অর্থাৎ ইসরাইলি জমি বাড়ছে; ব্যাপারটা অনেকটাই ছিটমহলের মতো। হয়তো ভবিষ্যতে আরও দখল নেবে। আপনি মানচিত্র খেয়াল করলে দেখতে পাবেন কীভাবে ইসরাইলি ছোপ ছোপ জমিগুলোকে ঘিরে রেখেছে ইসরাইলি সেটেলমেন্ট, এক জমি থেকে আরেক জমিতে যাবার জন্য সরাসরি রাস্তা পাওয়াও দুষ্কর। বারাক ওবামা এ মানচিত্র দেখে অবাক হয়েছেন বলে রিপোর্ট এসেছিল।

আরব বিশ্ব বর্তমানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছুটা চুপ তা সত্য, কারণ ইসরাইলকে এখান থেকে সরাবার কোনো উপায় এ মুহূর্তে নেই তাদের কাছে, করতে গেলে সেটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দেবে, কারণ ইসরাইলের মিত্র সবাই শক্তিশালী। ইসরাইল নিজেও শক্তিশালী দেশ বর্তমানে, এর ফলে তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা কোনো দেশের জন্য ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণে লাভজনক, যদিও ফিলিস্তিন-দখল এবং ধর্মীয় আবেগের জায়গা থেকে নীতিগতভাবে সেটি সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু এগুলো গোণায় না ধরলে যেকোনো দেশই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হবে, ঠিক যেমনটি আরব আমিরাত করেছে। আমার মনে হয় না, পুরো বিশ্বের বিবৃতি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হ্যাশট্যাগ যুদ্ধ ফিলিস্তিনের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে। হয়তো কিছু সাহায্য পৌঁছাবে, কিন্তু এর বেশি কিছু হবার সম্ভাবনা আমি দেখি না।

প্রশ্ন : What’s the best interest of the USA to support Zionism? How do the Israelis defend and justifz their actions? (জায়োনিজমকে সমর্থন করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য কী? ইসরাইলিরা কীভাবে তাদের কাজকে ন্যায্য বলে দাবি করে?)

উত্তর : এর উত্তর আগেও দিয়েছি, আসলে জায়োনিজম সমর্থন করে কোনো দেশেরই লাভ নেই, তবে যারা ইসরাইলের মিত্র রাষ্ট্র, তারা মিত্রের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। সারা বিশ্বে আপনি খেয়াল করে দেখবেন, মাইনরিটিকে সমর্থন দেয়াকে একটি মহৎ কর্ম হিসেবে দেখা হয়; ধর্ম হিসেবে ইহুদী ধর্ম এবং এর অনুসরণকারীরা নিঃসন্দেহে অন্যান্য বড় ধর্মের তুলনায় মাইনরিটি, সংখ্যালঘু। তাদেরকে এই দৃষ্টি থেকে সমর্থন দেয়াকে অনেকটা ‘নৈতিক দায়িত্ব’ মনে করে নেয় নানা দেশ। তাদেরকে জায়গা করে দেয়া, দেশ করে দেয়া- এগুলো তাদের অধিকার মনে করে। কোন দেশে জায়গা দেয়া হবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে একদা তারা যে দেশে বসবাস করতো, সেই জায়োন পাহাড়ের কোলের জমিকেই বেছে নেয়া হয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিতদের জন্য লবিস্টদের প্রতি বাধ্যবাধকতার ব্যাপার তো আগেই ব্যাখ্যা করেছি, তাই আবার বললাম না।

ইসরাইল নিজেদের কার্যক্রমকে ডিফেন্ড করে পুরো প্রতিশ্রুত ভূমির সীমানা ও বাপদাদার জমি ফেরত নেয়ার অজুহাতে। এজন্য সেখানকার ফিলিস্তিনিদের থেকে ভূমির অধিকার নিয়ে নিতে চায় তারা।

প্রশ্ন : ইয়াসির আরাফাত এই দেশটির কতটুকু উপকার করতে পেরেছেন? নাকি পুরোটাই লোক দেখানো? হামাসের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। হামাস কি আসলেই ইসরাইলের তৈরি ছিল ফাতাহকে দমন করার জন্য?

উত্তর : ইয়াসির আরাফাতের প্রসঙ্গ যখন এলোই, তার ব্যাপারে সংক্ষেপে একটু বলে নেয়া যাক।

তার পুরো নাম মুহাম্মাদ ইয়াসির আব্দেল রাহমান আব্দেল রাউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসাইনি কিন্তু সংক্ষেপে তিনি হয় ‘ইয়াসির আরাফাত’ কিংবা ‘আৰু আম্মার’ নামে পরিচিত ছিলেন। ফিলিস্তিনি বাবা-মার ঘরে তার জন্ম মিসরের কায়রোতে ১৯২৯ সালে। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি আরব জাতীয়বাদকে বরণ করে নেন এবং ইসরাইল-প্রতিষ্ঠা বিরোধী ছিলেন। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের হয়ে লড়াই করেন। ১৯৫০ এর দশকে তিনি ফাতাহ সহ-প্রতিষ্ঠা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইসরাইল রাষ্ট্রের অপসারণ। কয়েকটি আরব দেশ থেকে ফাতাহ কার্যক্রম পরিচালনা করত এবং ইসরাইলি টার্গেটে আক্রমণ করত। ১৯৬৭ সালে তিনি পিএলও-তে (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশনে) যোগদান করেন এবং ১৯৬৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি পিএলও-র হয়ে ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ কনফারেন্স, ১৯৯৩ সালের অসলো অ্যাকর্ডস এবং ২০০০ সালের ক্যাম ডেভিড সামিটে অংশ নেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইছহাক রাবিন এবং শিমোন পেরেজের সাথে যুগ্মভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু সে সময় থেকে হামাসের উত্থানের কারণে ফাতাহর সমর্থন কমতে শুরু করে। দুই বছর রামাল্লায় গৃহবন্দী থাকার পর ২০০৪ সালের শেষ দিকে তিনি কোমায় চলে যান এবং ৭৫ বছর বয়সে ১১ নভেম্বর ফ্রান্সে মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ বিষয়ে পরে আসছি।

আরাফাত শুরুতে অবশ্যই স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিলেন, কাজ করেছেন ইসরাইলের অপসারণের জন্য, কিন্তু এরপর তিনি অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের নেতাদের মতোই আচরণ করেন বলে মনে হয় আপাতদৃষ্টিতে। যেমন, ১৯৮৮ সালে তিনি মেনে নেন যে ইসরাইলের দেশ হিসেবে থাকার অধিকার রয়েছে। তিনি তখন থেকে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের দিকে এগিয়ে যান, অর্থাৎ ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের পাশাপাশি অবস্থান। মৃত্যুর পরও আরাফাত ছিলেন বিতর্কিত। সাধারণ ফিলিস্তিনিরা তাকে ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ের পথে শহীদ মনে করে, কিন্তু তার ফিলিস্তিনি প্রতিপক্ষরা বিশেষ করে যারা কড়া ইসলামিক এবং কতিপয় বামপন্থী পিএলও সদস্য তাকে দুর্নীতিবাজ এবং ইসরাইলের প্রতি মাথা নতকারী হিসেবে প্রতীয়মান করে। ইসরাইল অবশ্য তাকে সন্ত্রাসী মনে করত বেশ অনেকটা সময়।

আপনি যদি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ২০০৯ সালে দেয়া ইসরাইলি এক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার পড়েন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে যদিও ইসরাইল প্রত্যক্ষভাবে হামাসকে তৈরি করেনি, তবুও হামাস ও তৎকালীন অন্যান্য সশস্ত্র সংঘের জন্ম ইসরাইলের জন্য সুখকর ছিল বলেই তারা মনে করে। কারণ আশির দশকে যেখানে ইসরাইল বারবার সেকুলার ফাতাহর গেরিলা আক্রমণে জর্জরিত হচ্ছে, তখন আসলেই ফাতাহর বিপরীতে দাঁড়ানো কোনো সশস্ত্র সংঘের খুব দরকার ছিল তাদের। এক্ষেত্রে ইসরাইল চাক বা না চাক, হামাস বেশ সাহায্য করে। ফাতাহর দৃষ্টি তখন হামাসের দিকেও দিতে হয়। আমি অবশ্যই এমন কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বে সমর্থন দেব না যে ইসরাইল সজ্ঞানে হামাসকে বানায় (যারা কিনা মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে অ্যালাইন্ড ছিল), কিন্তু এটা অস্বীকার করব না যে ইয়াসির আরাফাতের পিএলও-র বিরুদ্ধে কড়া ইসলামি চিন্তাধারার হামাস ইসরাইলের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত আশীর্বাদের মতো ছিল, অন্তত যতদিন ফাতাহর ক্ষমতা বেশি ছিল। এরপর অবশ্য হামাসই তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রথম ইন্তিফাদার সময় তুঙ্গে ওঠা হামাসকে পরবর্তীতে ইসরাইল সন্ত্রাসী সংঘ বলে ঘোষণা করে।

যাক গে, ফিরে আসি ইয়াসির আরাফাতের বিষয়ে। ২০০২ সালের মার্চে ইসরাইলিদের পাসওভার বা ঈদুল ফিসাখের সময় হামাস আক্রমণ চালিয়ে ২৯ জনকে হত্যা করে। এর উত্তরে ইসরাইল পশ্চিম তীরে অপারেশন শুরু করে। গাজায় হামাসের এক নেতার ২০১০ সালের বিবৃতির বরাতে জানা যায়, সেই আক্রমণের আদেশ নাকি এসেছিল ইয়াসির আরাফাতের কাছ থেকে, যখন আরাফাত বুঝতে পেরেছিলেন যে ইসরাইলের সাথে নেগোশিয়েশন করে আর লাভ নেই। ২০০২ সালে ইসরাইলি সরকার কর্তৃক জব্দ করা কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী, ফাতাহর উপদল আল-আকসা ব্রিগেডের ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা ইয়াসির আরাফাতই করতেন। এগুলোর সত্য মিথ্যা আমরা জানি না।

তিনি বিয়ে করেছিলেন জেরুজালেমে জন্ম নেয়া রোমান ক্যাথোলিক মেয়ে সুহা-কে, যিনি তাদের বিয়ের সময় সুন্নি ইসলামে ধর্ম পরিবর্তন করেন। তবে অনেক ফিলিস্তিনি বিশ্বাস করে না যে সুহা ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর সময় ‘ক্লোজ কন্টাক্ট’ ছিলেন তার স্ত্রী সুহা-ই। ১৯৯০ সালে তাদের বিয়ের সময় আরাফাতের বয়স ছিল ৬১ বছর এবং সুহা-র বয়স ২৭ বছর।

২০০৪ সালের অক্টোবরে ইয়াসির আরাফাত যখন অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন তাকে ফ্রান্সে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং প্যারিসের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ডায়রিয়া, বমি, তলপেটে ব্যথা, ইত্যাদি সমস্যা ছিল। ৩ নভেম্বর তিনি কোমায় চলে যান।

ফরাসি আইন অনুযায়ী, ডাক্তার কেবল রোগীর ক্লোজ কন্টাক্টকে তথ্য জানাতে পারেন। সুহা আরাফাত সেই তথ্য পেয়ে সবাইকে সব কিছু জানাচ্ছিলেন না বলে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন।

১১ নভেম্বর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মৃত্যুর সঠিক কারণ পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি। আরাফাতের ১৮ বছরের পারিবারিক ডাক্তার আল-কুর্দিকে সুহা আরাফাত ধারে কাছেও আসতে দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি লাশের কাছেও নয়। সুহা আরাফাত ময়নাতদন্ত করতেও দেননি। গুজব ছিল, তারা নাকি আলাদা থাকছিলেন, যদিও সুহা সেটা অস্বীকার করেন। অবশ্য, প্যারিসে থাকা সত্ত্বেও ‘নাকি’ তিনি আরাফাতের কাছে আসেননি।

কেউ বললেন, আরাফাতের এইডস হয়েছিল, কোনো রিপোর্ট জানায় তিনি গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিসে মারা গিয়েছেন। কেউ বলেছেন প্লাটিলেট (আসল উচ্চারণ ‘প্লেটলেট’) কাউন্ট এলোমেলো হওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়। কেউ বা ধারণা করেন, তার মৃত্যু হয়েছে খাবারে রাইসিন বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে। আরাফাতের প্রাক্তন উপদেষ্টা বাসাম আবু শরিফ বললেন, মোসাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে থ্যালিয়াম ডোজ দিয়ে।

তবে সবচেয়ে তোলপাড় করা অভিযোগ নিয়ে আসেন ফিলিস্তিনি প্রাক্তন ইন্টেলিজেন্স অফিসার অ্যাটর্নি ফাহমি শাবানা; তিনি জানালেন, ইয়াসির আরাফাতের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা নাকি তাকে তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম দিয়ে হত্যা করেছে। আল-জাজিরা লুফে নিলো এই রিপোর্ট। ২০১২ সালে নয় মাসের তদন্ত শেষে আল-জাজিরা রিপোর্ট প্রকাশ করে, যেখানে তাদের দাবি আরাফাতের দেহে উচ্চ পরিমাণে পোলোনিয়াম পাওয়া গিয়েছে, এবং যেনতেন প্রাকৃতিক পোলোনিয়াম নয়, একদম নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর থেকে আসার মতো পোলোনিয়াম } এর পক্ষে যেসব তথ্য প্রমাণ হাজির করা হয়, তা উড়িয়ে দেয়া যায়নি। সুহা আরাফাত নতুন করে তদন্ত করার জন্য আরাফাতের লাশ ওঠানোর কথা বললেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একমত হলেন।

২০১২ সালের ৮ আগস্ট, মৃত্যুর আট বছর পর ইয়াসির আরাফাতের লাশ উঠিয়ে পরীক্ষা করা হলো। পরীক্ষার ফলাফল দেয়া পেছানো হলো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে, এতে নাকি শান্তি আলোচনায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।

২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর আল জাজিরা জানায়, সুইস ফরেনসিক টিম আরাফাতের পাঁজর ও শ্রোণীতে স্বাভাবিকের চাইতে ১৮ গুণ বেশি পোলোনিয়াম পেয়েছে। এক থেকে ছয়ের মাঝে যদি নাম্বারিং করতে হয়, তাহলে তার বিষক্রিয়ায় মারা যাবার সম্ভাবনা হয়ে ৫। সুহা দাবি করলেন, এটি রাজনৈতিক হত্যা।

রুশ একটি দল স্যাম্পল পাওয়ার পর মতামত দিলো, না, পোলোনিয়ামের কারণে আরাফাত মারা যাননি।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ফরাসি দলও রিপোর্ট প্রকাশ করে- আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়নি, করা হলেও সেটি তাদের ল্যাবের জানা তালিকার কোনো বিষ নয়।

সুহা আরাফাত এবং তার মেয়ে জাওরা আরাফাত প্যারিসে খুনের তদন্তের দাবি করেন। ২০১৫ সালের মার্চে ফ্রান্স জানায়, আরাফাতের মৃত্যু স্বাভাবিক কারণেই হয়েছে। পোলোনিয়াম এবং সীসা নাকি কবরে ভুলক্রমে পাওয়া গিয়েছে।

ইসরাইল বরাবরের মতোই আরাফাতের মৃত্যুতে তাদের কোনো হাত নেই বলে দাবি করে। অ্যারিয়েল শ্যারন যদিও আরাফাতের প্রস্থান চাইতেন, তারপরও ইসরাইলি সাংবাদিক ইয়োসি মেলম্যান রিপোর্ট করেন যে, ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স আরাফাতকে সরিয়ে দিতে চাইলেও শ্যারন নাকি তাতে ভেটো দেন। আরাফাত নাকি তাদের কাছে এখন অপ্রয়োজনীয় এক চরিত্র।

২০১৭ সালে সুহা ও জাওরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে যান, তাদের অভিযোগ- ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে ন্যায়বিচার করেনি। ২০২১ সালে এই কোর্ট তাদের দাবিকে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রত্যাখ্যান করে।

প্রশ্ন : ইহুদীরা বলে যে এটা ‘প্রমিসিং ল্যান্ড’, বিষয়টি আসলে কী?

উত্তর : ‘প্রমিসিং’ নয়, ‘প্রমিজড’। হিব্রুতে বলা হয় ‘হারেৎস হা-মুভতাখাত’ আর আরবিতে ‘আরদ আল-মি’আদ’। ইহুদীদের তাওরাত অনুযায়ী, আল্লাহ ইব্রাহিম (আ) এর সন্তানদের জন্য পবিত্র ভূমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “সেদিন মাবুদ ইব্রা(হি)মের সঙ্গে নিয়ম স্থির করে বললেন, আমি মিসরের নদী থেকে মহানদী ফোরাত পর্যন্ত এই দেশ তোমার বংশকে দিলাম; কেনীয়, কনিষীয়, কদমোনীয়, হিট্টিয়, পরিষীয়, রফায়ীয়, আমোরীয়, কেনানীয়, গিগাশীয় ও যিষীয় লোকদের দেশ দিলাম।” (পয়দায়েশ, ১৫:১৮-২১) সে সময় ইব্রাহিম (আ)-এর নাম ইব্রাম ছিল। তিনি পরবর্তীতে ইব্রাহিম (আ)-এর ছেলে ইসহাক (আ) এবং পরবর্তীতে ইসহাক (আ)-এর ছেলে ইয়াকুব (আ)-কেও একই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করেন (পয়দায়েশ ২৬:৩ এবং পয়দায়েশ ২৮:১৩)। ইহুদী ও খ্রিস্টান ব্যাখ্যাকারীগণ এ প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ইসমাইল (আ) ও তার বংশধরদের মনে করেন না।

ইসলামেও অর্থাৎ কুরআনেও মূসা (আ)-এর বরাতে আল্লাহ এ কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে মূসা (আ) বনী ইসরাইলকে বলছিলেন, “হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি লিখে দিয়েছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।” (কুরআন সুরা মায়িদা ৫:২১ )

এই হলো ইহুদীদের সেই ‘প্রতিশ্রুত পবিত্র ভূমি’ বা প্রমিজড হোলি ল্যান্ড। প্রশ্ন : বাংলাদেশে মাদখালি গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র মানুষের সামনে তুলে আনতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?

উত্তর : মদিনা ইসলামি ইউনিভার্সিটির সুন্নাহ স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সালাফি ধর্মতত্ত্ববিদ রাবী’ বিন হাদী ‘উমাইর আল-মাদখালী (১৯৩১-) হলেন মাদখালি আন্দোলনের প্রবক্তা, যা মূলত মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে। অবশ্য সৌদি আরবে এর সমর্থন এখন ক্ষীয়মাণ। মাদখালিরা সেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা সমর্থন করে থাকে। তাদের মাঝে সৌদি আরবের প্রতি ভক্তি লক্ষণীয় ।

তাদের ‘ষড়যন্ত্র’ আছে কি না, থাকলেও তা নিয়ে আলাপ করা এ বইয়ের বিষয়ের সাথে যায় না।

প্রশ্ন : ইয়াসির আরাফাতের পিএলও জনপ্রিয়তা হারানোর কারণ কী?

উত্তর : আমার ধারণা হামাসের সমসাময়িক উত্থান এবং ইয়াসির আরাফাতের ইসরাইলের দাবিদাওয়া অনেকটাই মেনে নিয়ে চুপসে যাওয়া হলো প্রধান কারণ। হয়তো ফিলিস্তিনিরা আশা করেনি, ইয়াসির আরাফাত ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নেবেন।

প্রশ্ন : হামাস এবং ফাতাহ-এর সংঘাত এর ভবিষ্যৎ কী? বা, আরও স্পষ্ট করে বললে এ দুদলের মাঝে সত্যিকারের সমোঝোতা কি সম্ভব নয়?

উত্তর : আমি সমঝোতার লক্ষণ দেখছি না, হয়তো কথাটা খুব নৈরাশ্যবাদী শোনাচ্ছে। একদিকে হামাস পুরোপুরিই অস্বীকার করে ইসরাইলের অস্তিত্ব, সেকুলারিজমের ধারেকাছেও নেই। অন্যদিকে সেকুলার ফাতাহ তো মেনেই নিয়েছে ইসরাইলকে, এখন ফিলিস্তিন শাসন করছে কাগজে কলমে। দুপ্রান্তে থাকা দল দুটো একে অন্যকে মেনে নেয়ার কোনো নিশানাই নেই। ২০১৭ সালে অবশ্য তারা ১০ বছরের সশস্ত্র সংঘর্ষের ইতি টানে নিজেদের মধ্যে।

প্রশ্ন : এ সংঘাত-পরবর্তী গাল্ফ কান্ট্রিগুলোর পিঠ বাঁচানোমূলক পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে?

উত্তর : আপনি হয়তো ২০২১ সালের সংঘাতের কথা বলছেন। গালফ দেশগুলোর পিঠ বাঁচাবার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে হবেই বা কেন? তাদেরকে কেউ আদৌ কোনো জবাবদিহিতার মুখোমুখি করবে বলে মনে হয় না। ফিলিস্তিন ইসরাইল অঞ্চলের যাবতীয় ঘটনা ইন্টারনেট দুনিয়া আর মিডিয়ায় ঝড় তুললেও আসল ব্যাপার কেবল ওই অঞ্চলেই টের পাওয়া যাবে, এর বাইরে কারও টনক নড়বে না।

প্রশ্ন : এবারের (২০২১ সালের) সংঘাতে হিজবুল্লাহর সরাসরি কোনো পদক্ষেপ না দেখার কারণ কী?

উত্তর : হিজবুল্লাহ (ail pis) অর্থ ‘আল্লাহর দল’, এটি লেবাননের শিয়া সশস্ত্র একটি দল। ১৯৮৫ সালে সায়েদ আব্বাস আল-মুসাওয়ি কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশই হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, তবে রাশিয়া দলটিকে বৈধজ্ঞান করে। হিজবুল্লাহর বিখ্যাত স্লোগান- “আমরা জেরুজালেমে নামাজ পড়বো।”

২০২১ সালের গাজা সংঘাতের সময় কেন হামাসকে হিজবুল্লাহ সহযোগিতা করেনি, সেজন্য অনেকেই হিজবুল্লাহকে ভণ্ড ডেকেছেন, তাদের উদ্দেশ্য ইরানের ইচ্ছেপূরণ ছাড়া কিছুই নয়—এমনটাই তাদের মন্তব্য। হিজবুল্লাহর ফোর্স লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, তাই তারা হামাসের সাথে যোগ দেয়নি, এমনটাই অনেকের দাবি।

প্রশ্ন : ইসরাইল কি পরবর্তীতে এমন কোনো যুদ্ধের সৃষ্টি করতে পারে যা ইসরাইলকে গ্রেটার ইসরাইলে রূপান্তর করবে?

উত্তর : আপনি যদি গ্রেটার ইসরাইল বলতে বুঝিয়ে থাকেন প্রতিশ্রুত ভূমির পূর্ণ মানচিত্রের সমান সীমানা করা, তাহলে সেটি হতেই পারে। যদি এর বাইরে কোনো দেশকে এমনিই অধিকৃত করতে চাওয়া বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে আমার ধারণা এমনটা ইসরাইলের করার কথা না, কারণ সেটিকে জাস্টিফাই করার মতো তাওরাতীয় আদেশ বা পূর্বপুরুষের অধিকার- কোনোটিই ইসরাইল দেখাতে পারবে না। ‘জায়োন’-এর সাথে অন্য ভূমি যায় না।

প্রশ্ন : রাশিয়ার কোনো হস্তক্ষেপ এ সংঘাতে এখনো না দেখার কারণ কী, যেখানে তুরস্কের সাথে সম্পর্কের জের ধরে তারা চাইলেই আসতে পারত ময়দানে?

উত্তর : রাশিয়ার সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক ভালো, ইসরাইল চায় না এ সম্পর্ক বিঘ্নিত হোক। প্রায় ১ লাখ ইসরাইলি বসবাস করে রাশিয়াতে, যার মধ্যে ৮০,০০০ থাকে মস্কোতে। ইসরাইলে প্রায় ১৫ লাখ রুশ ভাষায় কথা বলা ইসরাইলি নাগরিক থাকে। রাশিয়ার প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন তৈরিতে সাহায্য করে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান হাদাসসা। পুতিনের সরকারের সাথে ইসরাইলের সুসম্পর্ক, এমনকি ২০২২ সালে ইউক্রেন আয়রন ডোম কিনতে চাইলেও ইসরাইল বিক্রি করেনি, কারণ তারা রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না। তাই আমার মনে হয় না এরকম ক্ষেত্রে রাশিয়া আদৌ ইসরাইলের কোনো সংঘাতে হস্তক্ষেপ করবে, যদিও স্নায়ুযুদ্ধের সময় রাশিয়ার বিরোধী ছিল একসময় ইসরাইল।

প্রশ্ন : মার্কিন সিনেটে ফিলিস্তিনের পক্ষে ডাক ওঠাকে কীভাবে দেখছেন?

উত্তর : চমৎকার ব্যাপার। মনে হচ্ছে পরিবর্তন আসছে, কেবল ইসরাইলের পক্ষেই ক্রমাগত বলে যাওয়ার বদলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলা স্বরও উঠে আসছে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাও যে ফিলিস্তিনের পক্ষে লিখেছে, সেটিকে স্বাগত জানাই।

প্রশ্ন : আরবদের কি আসলেই সেই সক্ষমতা নেই যে এরা গোলামি থেকে বের হয়ে একটু ইনসাফের এহলান করুক?

উত্তর : সক্ষমতা হয়তো আছে, ইচ্ছেটা নেই সেভাবে। তারা ব্যবহারিক লাভ দেখতে চায়, যেটা হয়তো ইসরাইলের সাথে শত্রুতার মাঝে তাদের জন্য নিহিত নেই।

প্রশ্ন : ইসরাইল কেন ফিলিস্থিনিদের সাথে এক রাষ্ট্র গঠন করেনি?

উত্তর : টেকনিকালি ইসরাইল এক রাষ্ট্রই চেয়েছে। যে রাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিরা নাগরিক থাকবে- ইসরাইলি নাগরিক, আর ক্ষমতায় থাকবে ইহুদীরা। এ মুহূর্তে কিন্তু ইসরাইলের রাষ্ট্র ভাষা হিব্রুর পাশাপাশি আরবিও। কেবল রাষ্ট্রধর্ম একটিই— ইহুদী ধর্ম।

প্রশ্ন : ইসরাইল কি শুধু রাষ্ট্রের জন্যই এত সব করছে নাকি তাদের ধর্মের জন্য? তাদের মূল কনফ্লিক্ট কি শুধু মুসলিমদের সাথে নাকি অন্য ধর্মের সাথে?

উত্তর : ইসরাইলের ক্ষমতায় থাকা কর্তৃপক্ষ মূলত জায়োনিস্ট। অর্থাৎ তারা পবিত্র ভূমিতে ইহুদীদের ফিরে আসা চায়। ‘পবিত্র ভূমি’ ব্যাপারটি কেবলই ধর্মীয় আবেগ। অর্থাৎ তারা এমনটি ধর্মের জন্যই করছে, তাদের রাষ্ট্রধর্মও যেহেতু ইহুদী। কিন্তু আমার মতে, ধর্মটাকে তারা কাজে লাগালেও আসলে অনেকেই আছে যারা ধর্মীয় কারণে কাজগুলো করছে না, তারা কেবল এই ভূমিটা চায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনেক ধর্মপ্রাণ সাধারণ ইসরাইলি ইহুদীও জায়োনিজমের বিরুদ্ধে! ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা ইসরাইলিদের কাছে একই রকম ব্যবহার পায়, অর্থাৎ ফিলিস্তিনি মুসলিমদের থেকে বিশেষ আলাদা নয়। ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা একে ইহুদী বনাম মুসলিম সংঘর্ষ মানতে নারাজ, বরং এটা তাদের কাছে জাতীয়বাদের সংঘর্ষ।

এ ব্যাপারে একটা জিনিস বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমেরিকান অনেক খ্রিস্টান এই যুক্তিতে জায়োনিজমকে সমর্থন দেন যে, ইহুদীরা ফিলিস্তিনে ফিরে গেলে এবং সেখানে থার্ড টেম্পল প্রতিষ্ঠা করলে যীশু খ্রিস্ট ফেরত আসবেন। এর পর যা হবার দেখা যাবে।

প্রশ্ন : আইখম্যান সম্পর্কে জানা যায়, তিনি নাকি ফাঁসির আগে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন এজন্য যে, মৃত্যুর আগে আরেকজন ইহুদীর মৃত্যু দেখে যেতে চেয়েছেন। এটি কি সত্যি?

উত্তর : আমি এমন কিছু জানি না। ১৯৬১ সালে অ্যাডলফ আইখম্যানের শুনানি হয়। তিনি ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চান, বলেন, “আমি যোগ্য নেতা ছিলাম না, তাই আমি দোষী নই।” অর্থাৎ তিনি নাকি কেবল আদেশ পালন করছিলেন, ইহুদী গণহত্যা তার সিদ্ধান্ত ছিল না। ক্ষমা চাওয়ার সাথে তার ইহুদী হতে চাওয়ার ইচ্ছার কোনো মিল পাচ্ছি না, তাই অসত্যই মনে হচ্ছে আমার কাছে। এমন বক্তব্য প্রদানের দুদিন পর রামলার জেলখানায় তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

প্রশ্ন : জাতিসংঘ তো স্বীকার করে যে ইসরাইল দখলদারি করছে। তবে কেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? ডিটেইলস বলবেন। ভেটো দেয়ার পিছনে প্রতিবার রিজন কী দাঁড় করায় আমেরিকা? কেন ভেটো সিস্টেম বাদ দেয়া যায় না?

উত্তর : ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইল প্রশ্নে ৫৩ বার ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের প্রতিবারের যুক্তি থাকে “ইসরাইলের অধিকার রয়েছে নিজেকে প্রতিরক্ষার” এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললে বলা হয় “এটি একপক্ষীয় বিবৃতি”। এসবের কারণে জাতিসংঘ চাইলেও অনেক সময় কিছু করতে পারে না।

ভেটো সিস্টেম ওঠানো যাবে না কারণ এতে করে কয়েকটি দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে।

প্রশ্ন : তুরস্ক কেন ১ম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল?

উত্তর : এর উত্তর অন্য কোনো বই বা মাধ্যমে দেব ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন : ইহুদীরা এত ধনী কীভাবে হলো?

উত্তর : এখানে একটা ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক ধনী ইহুদী আছে মানে এই না যে সকল ইহুদীই ধনী এবং সফল। অনেক দরিদ্র অসচ্ছল ইহুদী আছে পৃথিবীতে। কিন্তু তাদের ধনাঢ্যতা বেশি চোখে পড়ে, কারণ শতাংশ হিসেব করলে অ-ইহুদীদের তুলনায় ইহুদীদের মাঝে সফলতা ও ধনী বনে যাওয়ার অংশটা বেশি। ইহুদীদেরকে যদি আমরা একটি এথনিক গ্রুপ ধরি, মুসলিমদের যদি ধরি (আসলে ধরা যায় না), খ্রিস্টানদেরকে ধরি (এটিও ধরা যায় না) এবং হিন্দুদেরকে ধরি, তাহলে পার ক্যাপিটা (জনপ্রতি) আয় দেখা যাবে ইহুদীদের এথনিক গ্রুপে বেশি।

এর পেছনে কিছু কারণ আছে। ঠিক কেন তা বলা না গেলেও, ইহুদীদের মাঝে আইকিউ টেস্ট করলে গড়ে তা অন্যান্য এথনিক গ্রুপের চাইতে বেশি আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরিপেই তা পাওয়া যাবে। ইহুদীদেরকে খুব ছোটবেলা থেকে কঠোরভাবে পড়ালেখা করানো হয়, যেমনটা অন্যান্য এথনিক গ্রুপে পরিলক্ষিত হয় না। তাদেরকে সফল হতে হবেই- এমন একটি ধারণা গেঁথে দেয়া হয় ধর্মপ্রাণ ইহুদী পরিবারগুলোতে, এর সাথে উচ্চ আইকিউ যোগ হয়ে সফলতার হার বেশিই থাকে। এখন আপনি যদি বিশ্বজুড়ে সকল ব্যাংক ইহুদীরাই নিয়ন্ত্রণ করে কি করে না- এরকম তত্ত্বের ব্যাপারে জানতে চান, সেক্ষেত্রে অবশ্য এ উত্তর খাটে কি না, বলতে পারছি না।

প্রশ্ন : ইহুদীরা কীভাবে আমেরিকার পলিটিক্স নিয়ন্ত্রণ করে?

উত্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইসরাইল লবি’ বা ‘জায়োনিস্ট লবি’ নামে যে লবি রয়েছে জায়োনিস্টদের, তার মধ্য দিয়েই আসলে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হয়। এটি আসলে গোপন কিছুও নয় যে লুকিয়ে লুকিয়ে হয়। আমি তোমার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে টাকা দেব, তুমি জিতলে আমাকে এই এই ফেভার করবে- এটিই এই লবির কার্যপ্রণালী। এখন লবি যদি লাল বনাম নীল দুই দলেই টাকা দেয়, তাহলে কোনো না কোনো দল তো জিতবেই, আর রিটার্ন আসবেই। টাকা দেয়া দল জেতা মানে পরের বছরগুলো লবির ইন্টারেস্ট অনুযায়ী কিছু কাজ হবে। এই হলো নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি।

সবচেয়ে বড় প্রো-ইসরাইল মার্কিং লবিং গ্রুপ হলো ক্রিশ্চিয়ানস ইউনাইটেড ফর ইসরাইল। আর দ্বিতীয়টি হলো আইপ্যাক (আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ারস কমিটি)। উল্লেখ্য, সদস্যরা সবাই ইহুদী তা কিন্তু নয়, খ্রিস্টান জায়োনিস্ট হতেই পারে। উনিশ শতক থেকেই এই লবিং চলে আসছে। আইপ্যাক সরাসরি প্রার্থীকে ডোনেট করে না, বরং ডোনেশন ম্যানেজ করে দেয়।

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক সংস্থা জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিদের বলে স্বীকার করে কেন? যেহেতু যুদ্ধে ইসরাইলের জয় হয়েছে। কোন আইন বলে এটা আসলে?

উত্তর : জেরুজালেম শহরের পূর্ব জেরুজালেম নিয়েই যত কোন্দল, যার মাঝে ওল্ড জেরুজালেম অন্তর্গত, সেখানেই তিন সেমেটিক ধর্মের যাবতীয় পবিত্র স্থাপনা। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইসরাইল এই পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়, এবং ফিলিস্তিন এখনও ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে জেরুজালেমকে। ইসরাইল বর্তমানে ‘অবিভক্ত’ জেরুজালেম শহরকে তাদের রাজধানী হিসেবে শনাক্ত করে, মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এতে সমর্থন দিয়েছে। তবে এর বাইরে খুব বেশি দেশ এর সমর্থনে নেই। জাতিসংঘের মতে ইসরাইলের পূর্ব জেরুজালেম দখল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে, কারণ আসলে এই জায়গায় ইসরাইলিরা ছিল না আগে থেকে। আইনটি হলো UN Security Council Resolution 478 ।

প্রশ্ন : জাতিসংঘ কীভাবে ৫৫:৪৫ এর ভিত্তিতে প্যালেস্টাইন ইসরাইল ভাগ করলো? ইহুদী তখন বেশি ছিল না।

উত্তর : ৫৫%-৪৫% কি না, নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, তবে জাতিসংঘ তিনভাগে ভাগ করতে চেয়েছিল দেশটিকে- আরব রাষ্ট্র, ইহুদী রাষ্ট্র এবং জেরুজালেম শহর। ইহুদীদের জন্য রাখা হয়েছিলো উর্বর পূর্ব গালিলি, তীরবর্তী সমভূমি এবং নেগেভ মরুর বেশিরভাগ। অবশ্য এতে ইহুদীরা সন্তুষ্ট ছিল না, আরবরাও না। ইহুদীদের অংশে সেসব এলাকা রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল, যেখানে ইহুদী কমিউনিটি একটু বেশি, যদিওবা ওই একই এলাকায় প্রচুর মুসলিম আছে। তার মানে ইসরাইল রাষ্ট্রে বেশিরভাগ ইহুদী কমিউনিটিকে রাখার মাধ্যমে একটি বড় মুসলিম জনগোষ্ঠী ঢুকে যাবে।

প্রশ্ন : ডোম অফ রকের নিচে কি টেম্পল আছে? ৩৯০০ বছর আগের ইতিহাস পুরোটা জানতে চাই।

উত্তর : না, সেখানে টেম্পল নেই। ওয়েল অফ সোলস আছে। পুরো ইতিহাস জানতে ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ ও ‘ইসরাইলের উত্থান-পতন’ পড়তে হবে। প্রশ্ন : ইসরাইল বর্তমান প্যালেস্টাইনিদের নিয়ে কী ভাবে? এত এত রিফিউজি বাইরে আছে তাদের নিয়ে তাদের মতবাদ কী? এতগুলা মানুষ কী করবে?

উত্তর : কিছু ভাবে বলে তো মনে হয় না। ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে ফিলিস্তিনিরা পরবর্তীতে ভ্যাক্সিন পেয়েছে, আগে বা একই সময়ে নয়।

প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইসরাইলকে এত পরিমাণ সাহায্য করার বিল পাশ করে? কেন করে?

উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর আমার মনে হয় বিভিন্ন রূপে দিয়ে ফেলেছি ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : হামাসের ইতিহাস, ইয়াসির আরাফাতের রাজনৈতিক দর্শন জানতে চাই।

উত্তর : হামাস এবং ইয়াসির আরাফাত নিয়ে আলোচনা হয়ে গিয়েছে আগেই।

প্রশ্ন : যারা টু স্টেট সল্যুশনের পক্ষপাতী, আমি তাদেরকে ফিলিস্তিনিদের জায়গায় নিজেদের কল্পনা করতে বলবো না। ইমাজিন করতে বলবো- ধরুন উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো দেশ না, পাশের দেশ মায়ানমারই এসে আপনার ভূমি কেড়ে নিল, ৫০ বছর আপনার ওপর তাণ্ডব চালালো, আপনাকে ভালো খাবার খেতে দেয় না, চাকরি/ব্যবসা/বাণিজ্য কিছু করতে দেয় না, হসপিটাল চালাতে দেয় না, মসজিদে যেতে দেয় না, আপনি প্র্যাক্টিসিং মুসলিম না বাট দে ডোন্ট কেয়ার, আপনার মুসলমান নামের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো কি আপনি নিজে টু স্টেট সল্যুশন চান বা আরেকজনের টু স্টেট সলুশন মেনে নেবেন? কেন নেবেন? যুক্তি কী? যারা বিশ্বাস করেন হামাসের রকেট মারার কাজ ঠিক না- কারণ এটা অন্যায়, তাহলে কী করবে তারা বলেন। পশ্চিম তীর তো অস্ত্র ছেড়ে দিয়ে স্লেভ লাইফ যাপন করছে। কারণ এই করে আরো ইসরাইল গাজায় বেশি আক্রমণ করবে, বেশি মানুষ মারবে। একই কথা। আপনার পরামর্শ কী? সলুশন কী?

উত্তর : আমার তো মনে হয় না এটা এখন উভয় পক্ষ মেনে নেবে, এমন মধ্যমপন্থী কোনো সমাধান আছে। দিতে পারলে আমিই নোবেল শান্তি পুরস্কারটা পেয়ে যেতাম। এখন হলো, হয় এস্পার নয় ওস্পার পরিস্থিতি।

প্রশ্ন : i) If American Israelis aren’t mostly Zionist then how come Israel relentlessly get assistance from American tech giant like Facebook, Twitter, Google & so on? (যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলিদের বেশিরভাগ জায়োনিস্ট না হলে ইসরাইল কীভাবে প্রতিনিয়ত মার্কিন টেক কোম্পানি ফেসবুক, টুইটার, গুগল ইত্যাদি থেকে নিয়মিত সাহায্য পাচ্ছে?

ii) Being a Jew, Noam Chomsky & Norman Finkelstein show support & often pave the way for Palestinian with information and opinion. But why are they not targeted and silenced yet by Israeli Secret Service? (ইহুদী হয়েও নোম চমস্কি ও নরম্যান ফিঙ্কেলস্টাইন অনেক সময়ই ফিলিস্তিনের সমর্থনে কথা বলেন, তাদের পথ বাতলে দেন। মোসাদ কেন তাদের টার্গেট করে খুন করছে না?)

উত্তর : ফেসবুক, টুইটার, গুগল কী সাহায্য করে জানি না, তবে তারা ইসরাইলের প্রতি আগ্রহী কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেক হাবগুলোর একটি হবার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

নোম চমস্কি কিংবা ফিঙ্কেলস্টাইনের মতো হাজার হাজার মহারথী রয়েছেন যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলে, খোদ ইসরাইলেই এরকম অ্যান্টি-জায়োনিজম ইহুদী আছেন, র‍্যাবাইও আছেন। কিন্তু ইসরাইলি সিক্রেট সার্ভিস তাদের কাউকে চুপ করিয়ে দেয় না। যতক্ষণ না দেশটির বাস্তবিক ক্ষতি করছে কেউ, তাদের কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। বাস্তবিক বলতে, দেশটির বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলা, কিংবা ওই দেশের ক্রীড়াবীদদের হত্যা করা, কিংবা হলোকস্ট করা, বা দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো, ইত্যাদি সমমানের কাজ বুঝালাম।

প্রশ্ন : অনেক সময় শুনি যে ইহুদী বা ইসরাইলি বা জায়োনিস্টরা পুরো পৃথিবীর অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে; এটার ভিত্তি কী?

উত্তর : অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে, এটার কারণ হিসেবে হয়তো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোতে ইহুদী মালিকানা থাকাকে দেখানো হয়। আমি কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রমাণ ছাড়া বলতে চাই না, তাই এটি নিয়ে বেশি দূর এখানে লিখলাম না।

আর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ পুরোই লবিংয়ের মাধ্যমে, এটি গোপন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, অন্যান্য দেশকেও প্রভাবিত করাই যায়।

প্রশ্ন : ইহুদী আর খ্রিস্টানরা তো জাতিগতভাবে এক না, আগেও উভয় পক্ষ বিরোধী ছিল একে অপরের, তাহলে এখন খ্রিস্টানরা কেন ওদের সমর্থন দিচ্ছে?

উত্তর : রাজনৈতিক সমর্থন কেন দিচ্ছে, তা তো বললামই আগে। কিন্তু আগে তারা একে অপরের শত্রু থাকলেও, এখন অনেক খ্রিস্টান যীশুর দ্বিতীয় আগমনকে ত্বরান্বিত করতে ইহুদীদের জেরুজালেম অধিকারকে সমর্থন করে।

প্রশ্ন : এই সংঘাত কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নাকি ধর্মীয়ও? ইহুদীরা কি আসলেই দাজ্জালের জন্য অপেক্ষা করছে? তাহলে খ্রিস্টানদের লাভ কী?

উত্তর : ধার্মিক ইহুদীরা তাদের মাসিহের জন্য অবশ্যই অপেক্ষমান, এ বিষয়ে কোনো লুকোছাপা নেই। সেটি দাজ্জাল কি না, তা ইসলামি ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী। ইহুদী বিশ্বাস নয়। খ্রিস্টানদের লাভ তো সেই যীশুর দ্বিতীয় আগমন!

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনিদের আন্দোলন কি শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নাকি ইসলামি আন্দোলনও? ইরান, তুরস্ক, কাতার কেন ওদের সাহায্য করছে? রাজনৈতিক নাকি ধর্মীয় কারণে?

উত্তর : অনেক ফিলিস্তিনি লড়ে ধর্মের জন্য, অনেকে লড়ে আরব জাতীয়তাবাদের জন্য, অনেকে লড়ে আমার জায়গা জমি ছাড়া আমি যাব না, এটা আমার অধিকার— এজন্য। সারা বিশ্বের মুসলিমদের মাঝে বেশিরভাগই ধর্মীয় ও মানবিক কারণে একে সমর্থন দেয়, আর অনেকে দেয় কেবলই নৈতিক কারণে। আমি একটা বইতে পড়েছিলাম, একজন ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামে যোগদান করেছিলেন ধর্মপ্রাণ হিসেবে, কিন্তু সেখানকার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের একটি ছোট দলের কেবল জাতীয়বাদী উচ্ছ্বাস দেখে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন, কারণ তার ধারণা ছিল এখানে সবাই বুঝি ইসলামের কারণেই যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ কেউ যে নিজের মাতৃভূমির জন্যও লড়তে পারেন, এমনটি তার মাথাতে আসেনি। এটা বুঝতে হবে যে ফিলিস্তিনি মিলেনিয়ালদের মাঝে ধর্মের আবেগ আর আট দশটি দেশের তরুণদের মতোই।

কোনো কোনো দেশ ধর্মীয় কারণে সাহায্য করে, কেউ বা করে শুধুই রাজনৈতিক কারণে; যারা সাহায্য থামিয়ে দেয়, তারা রাজনৈতিক কারণেই করত সাহায্য।

প্রশ্ন : ইসরাইলকে শায়েস্তা করার জন্য সব আরব দেশ ৭০ বছরেও এক হতে পারলো না কেন?

উত্তর : আরবদের মাঝে এ বিষয়ে ঐক্য লাভ হয়নি আর কি। হয়তো রাজনৈতিক ফায়দা নেই।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিন বিভিন্ন সময়ে কার অধীন ছিল? মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)- এর পর থেকে।

উত্তর : এ ইতিহাস আপনি এ বইতেই পেয়ে গিয়েছেন।

প্রশ্ন : শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুতে কেন বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে না?

উত্তর : ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : ইহুদীদের মেসিয়াহর (Messiah) ধারণাটা কী রকম? মুসলিমরা দাজ্জালের যেসব বৈশিষ্ট্য বলে হাদিস থেকে, সে বৈশিষ্ট্যগুলো কি ইহুদীদের মেসিয়াহর সাথে মিলে যায়? তারা কীভাবে বুঝবে যে তাদের মেসিয়াহ আসার সময় হয়ে গিয়েছে?

উত্তর : বাইতুল মুকাদ্দাসের পুনর্নির্মাণকে তারা লক্ষণ হিসেবে ধরে নেয়। মাসিহ নিয়ে আলোচনা আমি মূল বইতেই করেছি। আশা করি উত্তর পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন : জেরুজালেম কি কেবল ধর্মীয় কারণেই গুরুত্বপূর্ণ? নাকি এর কোনো অর্থনৈতিক বা ভূতাত্ত্বিক গুরত্ব আছে?

উত্তর : এর বিশেষ কোনো আলাদা অর্থনৈতিক বা ভূ-তাত্ত্বিক গুরুত্ব নেই। এর যদি কোনো ধর্মীয় গুরুত্ব না থাকত, তাহলে কোনো যুদ্ধই হতো না

প্রশ্ন : আরব দেশগুলো কি আদৌ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিত? কবে এবং কেন তাদের মতের পরিবর্তন হয়? ইসরাইল কবে পর্যন্ত আরবদের স্বীকৃতির জন্য লালায়িত ছিল? কবের কোন ঘটনার পর থেকে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং এখনের মত ড্যাম কেয়ার আচরণ করতে শুরু করে? ইসরাইল ফিলিস্তিন ইস্যুর সুষ্ঠু সমাধান কী বলে জনাব আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ মনে করেন? ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ কি নিজস্ব মতাদর্শের দ্বারা কিঞ্চিৎ হলেও প্রভাবিত এই সমাধানে? আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের লেখকসত্তা কী বলে? টু স্টেট সল্যুশন কি এখন আর সম্ভব? বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের কী করণীয়? ইসরাইলের জুতোয় দাঁড়িয়ে দেখলে বিষয়টা কেমন দেখায়?

উত্তর : আরব দেশগুলো একটি পর্যায়ে বেশিরভাগই স্বীকৃতি দিয়ে দেবে ইসরাইলকে, অবস্থাদৃষ্টে এমনটিই মনে হচ্ছে। আরবদের স্বীকৃতি অর্জন মানে ইসরাইলকে কম ঝামেলা পোহাতে হবে, এদিক থেকে এর চাহিদা আছে ইসরাইলের। আমার মতে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধটি ছিল ইসরাইলের জন্য বড় টার্নিং পয়েন্ট, তখন থেকেই পরোয়া না করা আচরণ তাদের।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে চাওয়া হলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা, কিন্তু আমাকে যদি ব্যবহারিক বাস্তবসম্মত সমাধানের কথা বলতে বলা হয়, তাহলে আমি বলব ওয়ান স্টেট সমাধানের কথা। যে যত কিছুই বলুক, এই ভূমিতে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান, ফিলিস্তিনি মুসলমানের পাশাপাশি খাঁটি ফিলিস্তিনি ইহুদীদের সত্যিকার অর্থেই বসবাস ছিল, এদের সবারই এখানে থাকার অধিকার রয়েছে— তাদের কথা বলছি, যারা যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করে এসেছে, যারা হাজার হাজার বছর আগে পালিয়ে গিয়েছে অন্য কোথাও তাদের কথা নয়, হয়তো লতায় পাতায় তারা একে অন্যের সাথে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ, কিন্তু অন্তত কয়েকশ বছর ধরে অবিরতভাবে বসবাস করা সাধারণ ইহুদীদেরও এখানে থাকবার অধিকার অস্বীকার করা যায় না। পবিত্র ভূমি তিন ধর্মের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে টু স্টেট সমাধান খাটবে না। যে ওয়ান স্টেটের কথা বলছি, সেখানে অখণ্ড রাষ্ট্রে তিন ধর্মের লোকেরই (বা যেকোনো ধর্ম) বসবাস থাকবে, এবং সরকার পর্যায়েও যেকোনো ধর্মের লোকের নিয়োগ থাকবে। রাষ্ট্রধর্ম কেবল ইহুদী ধর্ম নয়, তিনটি ধর্মই থাকতে পারে, যেহেতু এখানে তিন ধর্মের লোকেরই বাস। পালাক্রমে দুবছর পর পর ইহুদী ও মুসলিম দলের হাতে ক্ষমতা দেয়া যেতে পারে এবং সেভাবেই সংবিধান তৈরি করতে হবে। এতে করে টানা এক ধর্মের লোক বিশেষ সুবিধা পেতে থাকবে না। জেরুজালেম অখণ্ড রাষ্ট্রটির রাজধানী হতে পারবে। এমনটি করলে এই রক্তপাতের ইতি হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রশ্ন : এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের মানুষদের জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক ও বাস্তবমুখী সমাধান কী হতে পারে? ঠিক কী করলে তারা নিজেদের ভূখণ্ডে মানুষের মত বাঁচতে পারবে?

উত্তর : আগের উত্তরে যা বললাম, হয়তো সেটিই এখন একটি বাস্তবিক সমাধান হতে পারে, যদিও সেটি ধর্মীয়ভাবে বিশ্বব্যাপী মুসলিমের কাছে সাদরে গৃহীত হবার সম্ভাবনা কম

প্রশ্ন : অনেকেই দাবি করে থাকেন এই সংঘাত ‘দাজ্জাল’ আসার আলামত, এই সবকিছু হাদিসে বর্ণিত আছে, এই দাবির কতটুকু সত্য? সব কিছু কি হাদিসে বর্ণিত ভবিষ্যৎবাণী অনুসারেই হচ্ছে?

উত্তর : মূল ধারার ইসলাম অনুযায়ী, হাদিসে সরাসরি উল্লেখ নেই যে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে। অবশ্য বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে ‘শেষ সময়’ নিয়ে, তবে সেগুলো নিয়ে ভিন্ন কোথাও আলোচনা করতে হবে।

প্রশ্ন : হলোকাস্টে ইহুদীদের যে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, এখন তারা নিজেদের জন্য লড়াই করছে। স্যাপিয়েন্সরা যেমন নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরেক্টাস- সহ আরও এমন অনেক প্রজাতির সাথে লড়াই করে এখন কেবল টিকেই আছে না বরং পৃথিবী রাজত্ব করছে। ন্যায়বিচার তো শুরু থেকেই নেই, ইসরাইলিদের বাঁচতে হলে ফিলিস্তিনিদেরকে তো মারতেই হবে… আমরা ইহুদীদের দিক থেকে এ যুদ্ধ/লড়াইকে কীভাবে দেখবো? কেন জানি মনে হয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থে ইহুদীদের রাজত্ব দাজ্জাল বা ইমাম মাহদীকে নিয়ে যা লেখা আছে, তা দিয়ে আমাদের ব্রেইন ওয়াশ করানো হয়েছে, যেমন হিটলার নাকি কিছু ইহুদীদের মুক্ত করে বলেছিল পৃথিবীর মানুষ জানবে কেন আমি এত ইহুদীদের হত্যায় নেমেছিলাম। হিটলার এটা জানতোই বা কীভাবে, পবিত্র ধর্মগ্রন্থে ছিল বলে না! আমার তো এটাও মনে হয়, মানুষ দাজ্জাল ও ইমাম মাহদীর আগমন নিয়ে যেসব জানে তা অনুকরণ করে কোনো একসময় নিজেরাই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে। (মনের কথা কেন জানি গুছিয়ে লিখতে পারি না) তারা যে বলে আল্লাহ কথা দিয়েছিল পবিত্র ভূমিতে তাদের আবাসস্থল ফিরিয়ে দেয়ার, সেটা কি তাওরাতে আছে বা কোথায় আছে? আমরা কি সেটা জানতে বা দেখতে পারি? ওপরে প্রশ্ন, এটা প্রশ্ন না। আপনার তথ্যবহুল লেখা খুব ভালো লাগে, আমাকে আপনার একজন ভক্ত বলতে পারেন। তাওরাতের কি কোনো বাংলা কপি পাওয়া কোনোভাবে সম্ভব?

উত্তর : আপনার হিটলার সংক্রান্ত ধারণাটি ভুল, তার এমন কোনো বক্তব্য নেই। দাজ্জাল বা মাহদি নিয়ে হাদিসগুলোও বিশুদ্ধ, যদি আপনি মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জিজ্ঞেস করে থাকেন।

এটা সত্য যে অনেকে ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবায়িত করার জন্য নিজেরাই অনেক কিছু করে ফেলে। যেমন, অনেক খ্রিস্টান জায়োনিজম সমর্থন করেন যীশুর আগমন ত্বরান্বিত করতে; ১৯৭৯ সালে ইমাম মাহদির আগমন করানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, ইত্যাদি।

এবার বলি পবিত্র ভূমিতে আল্লাহ ইহুদীদের ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন কি না। এমন কথা বর্তমান বাইবেলে আছে, “তোমার আল্লাহ মাবুদ তোমার তোমার দুর্দশা ফিরাবেন তোমার প্রতি করুণা করবেন ও যেসব জাতির মধ্যে তোমার আল্লাহ্ মাবুদ তোমাকে ছিন্নভিন্ন করেছিলেন সেখান থেকে আবার তোমাকে সংগ্রহ করবেন। যদিও তোমরা কেউ দূরীকৃত হয়ে আসমানের প্রান্তে থাক, তবুও তোমার আল্লাহ্ মাবুদ সেখান থেকে তোমাকে সংগ্রহ করবেন, ঐ স্থান থেকে নিয়ে আসবেন। আর তোমার পূর্বপুরুষেরা যে দেশ অধিকার করেছিল, তোমার আল্লাহ্ মাবুদ সেই দেশে তোমাকে আনবেন ও তুমি তা অধিকার করবে এবং তিনি তোমার মঙ্গল করবেন ও তোমার পূর্বপুরুষদের চেয়েও তোমার সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন।” (ডিউটেরনমি ৩০:৩-৫)

উল্লেখ্য, এটি ওল্ড টেস্টামেন্টে আল্লাহ মূসা (আ)-কে বলছেন, অর্থাৎ এটি ব্যবিলনেরও নির্বাসনের আগের কথা। যখন তারা নির্বাসিত হয় আবার, তখন এই আয়াতের ওপর তারা বিশ্বাস রাখত, এবং আবার জেরুজালেমে পারস্য থেকে ফিরে আসার আশা করত।

এরপরের বার যে প্রতিশ্রুতির কথা ওল্ড টেস্টামেন্টে আছে সেটি হলো, “আর সেদিন যখন আসবে তখন প্রভু তাঁর নিজস্ব লোকদের অবশিষ্টাংশকে মুক্ত করে আনবার জন্য দ্বিতীয়বার হস্তক্ষেপ করবেন, অর্থাৎ আসেরিয়া, মিসর, পথ্রোষ, ইথিওপিয়া, ইলাম, শিনিয়র, হমাৎ ও সমুদ্রের উপকূলগুলো থেকে অবশিষ্ট লোকদেরকে আনবেন। আর তিনি জাতিদের জন্য নিশান তুলবেন, ইসরাইলের বিতাড়িত লোকদের একত্র করবেন ও দুনিয়ার চার কোণ থেকে এহুদার ছিন্নভিন্ন লোকদেরকে সংগ্রহ করবেন।” (ইশাইয়া 11:11-1২)

“আর আমি তোমাদেরকে আমার উদ্দেশ পেতে দেব, মাবুদ এই কথা বলেন; এবং আমি তোমাদের বন্দীদশা ফিরাব এবং যেসব জাতির মধ্যে ও যেসব স্থানে তোমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছি, সেসব স্থান থেকে তোমাদেরকে সংগ্রহ করবো, মাবুদ এই কথা বলেন; এবং যে স্থান থেকে তোমাদেরকে বন্দী করে এনেছি, সেই স্থানে তোমাদেরকে পুনর্বার নিয়ে যাব।” (ইয়ারমিয়া ২৯:১৪)

“যখন জাতিদের মধ্য থেকে তোমাদের আনবো এবং যেসব দেশে তোমরা ছিন্নভিন্ন হয়ে রয়েছ, সেসব দেশ থেকে তোমাদের একত্র করবো, তখন আমি খোশবু ধূপের মতো তোমাদেরকে গ্রাহ্য করবো; আর তোমাদের দ্বারা জাতিদের সাক্ষাতে পবিত্র বলে মান্য হবো। আর আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের যে দেশ দেব বলে শপথ করেছিলাম, সেই ইসরাইল দেশে যখন তোমাদেরকে আনবো, তখন তোমরা জানবে যে, আমিই মাবুদ।” (হিজকীল ২০:৪১-৪২ )

ফিলিস্তিনিদের আবার জড়ো হওয়াকে হিব্রুতে ‘কিব্বুস গালুয়োত’ বলা হয়।

অনেকে না বুঝেই কুরআন থেকে ইসরাইলের ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী দেখিয়ে থাকে, “এরপর আমি বনী ইসরাইলকে বললাম, তোমরা এই দেশে বসবাস কর। অতঃপর যখন শেষ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তখন তোমাদের সকলকেই আমি একত্রিত করে উপস্থিত করব।” (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:১০৪) এই প্রতিশ্রুতি আসলে ছিল মূসা (আ)-এর কওমকে দেয়া, যারা প্রতিশ্রুত ভূমিতে বসবাস করতে যাচ্ছিলো, তাদের শর্ত ছিল সৎ কাজ করতে থাকা। কিন্তু তারা সেটি করতে পারেনি। তাদেরকে আল্লাহ ফিরিয়ে এনেছিলেন বটে পারস্য থেকে, কিন্তু আবারও তারা কিতাবের বিরুদ্ধে যায়। কুরআন সেই শেষ বা পরবর্তী প্রতিশ্রুতি পূরণের কথাও বলে-

‘তোমরা সৎ কাজ করলে তা নিজেদেরই জন্য করবে এবং মন্দ কাজ করলে তাও করবে নিজেদের জন্য। অতঃপর পরবর্তী প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় উপস্থিত হলে আমি আমার দাসদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল, তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করার জন্য।” (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৭) এখানে প্রথমবার হলো বাদশাহ নেবুকাদনেজার এবং দ্বিতীয়বার হলো রোমান সম্রাট টাইটাসের জেরুজালেম আক্রমণ।

আপনার শেষ প্রশ্নে আসি, তাওরাতের বাংলা কপি আপনি বাইবেল সোসাইটির ‘কিতাবুল মোকাদ্দাস’ নামে পেতে পারেন, লালচে বা সবুজাভ রঙের কভারে বিক্রি করে থাকে। তবে এটি মূলত ওল্ড টেস্টামেন্টের ইসলামি পারিভাষিক অনুবাদ, বর্তমান বাইবেল আরকি। ইসলামের দৃষ্টিতে সেটি অবিকৃত তাওরাত নয়, এটি আমি ডিসক্লেইমার দিয়ে দিলাম। যদি আপনি ধর্মপ্রাণ হয়ে থাকুন, তবে যথেষ্ট ইসলামি জ্ঞান অর্জনপূর্বক সেটি পড়তে পারেন যদি তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আপনার আগ্রহ থাকে, অন্যথা ইসলামি ফতোয়া অনুযায়ী একে নিরুৎসাহিত করা হয়।

প্রশ্ন : ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ছাড়া একজন সাধারণ মানুষের কাছে কীভাবে প্রমাণ করা যায় যে জেরুজালেমের প্রকৃত মালিক ফিলিস্তিনের অধিবাসীরা?

উত্তর : এই পবিত্র ভূমির আদি নাম ছিল কানানদের ভূমি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলে, ব্রোঞ্জ যুগের শেষ দিকেই (খ্রিস্টপূর্ব চতুর্দশ শতক) এখানে লোকালয় ছিল নানা জাতির। কানানের দক্ষিণ দিকে খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০৪ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা এখানে বসবাস করেছে। এরপর তারা নব্য-আসিরীয় সাম্রাজ্যের অধীন থেকে নব্য-ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় নেবুকাদনেজারের হাতে ধ্বংস হয় বড় আকারে। এরপর তারা পারস্যের অধীনে চলে আসে।

অবশ্য এর দ্বারা জেরুজালেমের ওপর ফিলিস্তিনের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে কেউ, সেটি ভিন্ন আলোচনা।

প্রশ্ন : হামাসের কার্যক্রম, তাদের আয়ের উৎস, আয় ব্যয় ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাই।

উত্তর : হামাস নিয়ে আগেও আলোচনা করেছি, তবে ফান্ডিং আর রকেট নিয়ে আলাপ করা যায় এখানে।

হামাসের সবচেয়ে বড় ফান্ডিং আসে মিত্র কাতার থেকে, অন্তত তা-ই শোনা যায়। ২০১২ সালে কাতারের আমির শেইখ হামাদ বিন খালিফা আল-সানি প্ৰথম বিশ্বনেতা হিসেবে হামাস সরকারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য দিয়েছে তারা হামাসকে। অবশ্য ইসরাইল চায় কাতার যোগ দিক আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে, যা ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট ইসরাইল, আমেরিকা ও আরব আমিরাত উত্থাপন করে। বাহরাইনও আছে সাথে। এ অ্যাকর্ডস মূলত আরব দেশগুলোর সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক সহজায়নের চেষ্টা করতে চায়। কিন্তু কাতার কি যোগ দেবে? (কাতারের ফান্ড গাজার ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যে আসে।)

হামাসের আরেক বড় সমর্থক দেশ হলো তুরস্ক। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান হামাসকে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছেন। জার্মানি থেকেও কিছু দল হামাসকে ফান্ডিং করে।

প্রশ্ন : গাজা আর পশ্চিম তীরের মধ্যকার পলিটিক্স ও পার্থক্যটা কেমন? পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ডোনেশন এই দুই জায়গায় কীভাবে যায় আর কার মাধ্যমে কতটুকু বাধা পেরিয়ে আদৌ কতটুকু পৌঁছাতে পারে? মুসলিমদের পাশাপাশি ইহুদী, আরব, অনারবদের মধ্যে কারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনকে সাপোর্ট দিচ্ছে? কেন ও কীভাবে দিচ্ছে? ইসরাইলের অল্প সময়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠার কারণ কী? এর পেছনে কাদের কী স্বার্থ? এর ভবিষ্যৎ কী?

উত্তর : গাজা চালায় হামাস আর পশ্চিম তীর চালায় ফাতাহ, এদের রাজনীতি নিয়ে ইতোমধ্যে আলাপ হয়েছে। বিভিন্ন দেশের অবস্থান নিয়েও আলাপ করেছি।

ইসরাইলের স্বল্প সময়ে উন্নত হওয়ার পেছনে বড় কারণ হলো তাদের ‘টিকে থাকা লাগবেই” এই বোধটুকু। তারা প্রচণ্ড রকমের লেগে থাকা জাতি, ছোট থেকেই পড়ালেখা তাদের জন্য খুব বেশি বাধ্যতামূলক যেটি অন্য কোনো ধর্মভিত্তিক জাতি করতে পারেনি। আর সবচেয়ে বড় কথা তাদের ধনী মিত্র রয়েছে।

এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনি সরকারকে সরাসরি দান না করে জাতিসংঘের মাধ্যমে দান করে নানা দেশ। ফিলিস্তিনিদের কাছে ডোনেশন পৌঁছানোর কাজ সঞ্চালন করে থাকে মূলত এএইচএলসি (অ্যাড হক লিয়াজোঁ কমিটি), যা ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত।

প্রশ্ন : আপনার মতে ফিলিস্তিনিদের এখন প্রধান লক্ষ্য কী হওয়া উচিৎ?

উত্তর : এ জায়গায় এসে কবি নীরব। সাধারণ ফিলিস্তিনিদের এ মুহূর্তে এমন কিছুই করার নেই, যেটি তাদেরকে নিরীহ প্রাণ বিসর্জন থেকে রক্ষা করতে পারে, তাই মনে হচ্ছে।

প্রশ্ন : জাতিসংঘ কি ফিলিস্তিনের জন্য কোনো ভূমিকা রেখেছে নাকি ইসরাইলের স্বার্থে পেছন থেকে কাজ করে গিয়েছে?

উত্তর : জাতিসংঘ চেষ্টা করেছে কাজ করতে, কিন্তু সবসময় পারেনি ভেটোর কারণে। বিভিন্ন ডোনেশনের ব্যাপারে অবশ্য জাতিসংঘ সাহায্য করে থাকে।

প্রশ্ন : কয়েকদিন আগে শুনেছিলাম, বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে ইসরাইলে, সম্প্রতি নির্বাচনে অর্ধেক অর্ধেক ভোট পাওয়ায় আড়াই বছর চুক্তি করেছে তারা উভয় দল। বর্তমানে এই সংঘাত চাঙ্গা করার পেছনে কি ইসরাইলের কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ আছে?

উত্তর : কোনো স্বার্থ নেই, এটি অনেকদিন ধরে চলে আসছিলো, এবং এ বই লেখার সময় নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে অপসারিত, এবং নাফতালি বেনেট ইসরাইলের প্রধানমন্ত্ৰী।

প্রশ্ন : এই ভূমি কি আসলে ইহুদীদের প্রমিজড ল্যান্ড? সেই ১৯২০ সাল থেকেই ইসরাইল ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে আর্কিওলজিক্যাল গবেষণা করে তেমন কিছুই নাকি পায়নি, এটা কতটা সত্য?

উত্তর : ধর্মীয়ভাবে এ ভূমি আসলেই ইহুদীদের প্রতিশ্রুত ভূমি। এ ব্যাপারে কুরআন ও বাইবেল একমত। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা সেরকম ধর্মীয় কিছু খুঁজে পাবার কথা না।

প্রশ্ন : Kamal Salibi I Bernard Leman-এর মতে ইহুদীদের আদি নিবাস হচ্ছে ইয়েমেনের দিকে, এ সম্পর্কে কিছু লিখবেন কি?

উত্তর : লেবাননের বৈরুতে এক প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম নেয়া কামাল সুলাইমান সালিবি (১৯২৯-২০১১) যে তত্ত্বগুলো দিয়েছেন, তা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তার মতে ইহুদীরা আসলে আগে আরব ছিল, তারা আরবে বসবাস করতো, দাউদ (আ)-এর রাজত্বও আরবেই ছিল। পরবর্তীতে তারা এই জায়গাগুলোর নাম মনে রেখে ফিলিস্তিনে মাইগ্রেট করে এবং একই নামগুলো দেয় সেখানকার বিভিন্ন স্থানের। এই তত্ত্বে অনেক বেশি ভুল রয়েছে, তালিকা করে শেষ করা যাবে না। এটি একই সাথে কুরআন ও বাইবেল বিরোধীও বটে।

প্রশ্ন : আমেরিকা কেন ইসরাইলকে সমর্থন করে? আমেরিকার রাজনীতিতে ইহুদীদের ভূমিকা কী?

উত্তর : ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : মিডিয়াতে ইহুদীদের প্রভাব কী?

উত্তর : এটি সত্য যে মুভি ইন্ডাস্ট্রি এবং নিউজ মিডিয়ায় অনেক ইহুদী রয়েছে, তবে তারচেয়ে বেশি খ্রিস্টানও রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে আমরা একে খ্রিস্টান-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াও বলতে পারি। ইহুদীরা মিডিয়া ‘নিয়ন্ত্রণ’ করে এ বক্তব্য প্রথম ‘দ্য প্রোটোকলস অফ দ্য এন্ডারস অফ জায়োন’ বইতে পাওয়া যায়। হ্যাঁ, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো প্রভাবশালী পত্রিকার মালিকপক্ষ ইহুদী; ওয়ার্নার ব্রাদার্স, প্যারামাউন্ট, এনবিসি, সিবিএস ইত্যাদির মালিকপক্ষও ইহুদী (মালিকপক্ষ ইহুদী বলতে সবাই ইহুদী নয়, ইহুদী সদস্য রয়েছে আরকি)। ডিজনি, সিএনএন-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইহুদীদেরকে সুযোগ সুবিধা ভালো দিয়ে এসেছে। নোরা এফ্রন, স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো ইহুদী ব্যক্তিবর্গের ছবি সাদরে গৃহীত হয়েছে। টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা চলেছে বিখ্যাত ইহুদী সাংবাদিকদের দ্বারা। এসমস্ত কারণে মূলত মিডিয়া ইহুদীরা নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কথা ওঠে। এসব মিডিয়াতে ইহুদীদের খারাপভাবে পোর্ট্রে করা হয় না, এবং ইহুদীদের প্রতি সহানুভূতি জাগ্রত করা হয়—এমন অভিযোগ দেখা যায়।

প্রশ্ন : বিশ্ব রাজনীতিতে ইহুদীদের ভূমিকা কী?

উত্তর : আলোচনা করেছি ইতোমধ্যে।

প্রশ্নঃ ইসরাইলের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলো কীভাবে? বিশ্বের অর্থনীতিতে ইহুদীদের কী প্রভাব রয়েছে? ইহুদীরা এত ক্ষমতা ও সম্পদের মালিক হলো কীভাবে?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : ইহুদীদের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

উত্তর : গড়ে একজন ইহুদী ১৩.৪ বছর পড়াশোনা করে, এবং অন্যান্য যেকোনো ধর্মীয় জাতির তুলনায় তাদের উচ্চশিক্ষার হার ঢের বেশি। সনাতন ধর্মী ও মুসলিমদের ক্ষেত্রে গড় পড়াশোনার সময় ৫.৬ বছর। খ্রিস্টানদের জন্য সেটি ৯.৩ বছর এবং বৌদ্ধদের জন্য ৭.৯ বছর। অবাক করা বিষয় হলেও সত্য, ইহুদীদের মাঝে মেয়েদের ৬৯% উচ্চশিক্ষায় যায়, আর ছেলেদের মাঝে সেটি ৫৭%। জরিপটি করে ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি রিসার্চ সেন্টার।

ইহুদীদের, বিশেষ করে ছেলেদের ছোট থেকেই তাওরাত পাঠ বাধ্যতামূলক ছিল

প্রশ্ন: সমস্যাটার সমাধান কীভাবে করা যাবে বা সমাধান কি আদৌ সম্ভব?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : যেসব আরব দেশ এখনও নিউট্রাল পজিশনে আছে, তারা কেন ফিলিস্তিনের ব্যাপারে কিছু বলছে না বা ইসরাইলের সাথে তাদের দহরম মহরম সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? (সেটা কি গ্রেটার ইসরাইলের মতো কোনো কিছুতে রূপ নিয়ে নিতে পারে?)

উত্তর : গ্রেটার ইসরাইল বলতে মূলত প্রতিশ্রুত ভূমির সীমানা বোঝায়, ফিলিস্তিনিদের জায়গা নিয়ে নিতে পারলেই প্রায় বেশিরভাগ পূরণ হয়ে যাবে সেই সীমানার। যেসব আরব দেশ নিউট্রাল পজিশনে আছে, আমার ধারণা তারা সামনেই আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলবে।

প্রশ্ন : প্রশ্নটা করা ঠিক হবে কি না জানি না, তবে করেই ফেলছি। ইসরাইলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারী সৈনিক (চোখে পড়ল আরকি) থাকার কি বিশেষ কোনো কারণ আছে?

উত্তর : ইসরাইল মেয়েদের জন্যও বাধ্যতামূলক করেছে আর্মিতে যোগ দেয়া, যা অনেক দেশই করেনি। এজন্যই আমরা বেশি মেয়ে দেখতে পাই তাদের আর্মিতে। ১৯৪৮ সাল থেকেই তারা এমনটি করে আসছে।

প্রশ্ন : এতোগুলো আরব দেশের সাথে যুদ্ধে ইসরাইল জিতলো কীভাবে?

উত্তর : ইসরাইলের মিত্রশক্তি ভালো, সমর্থন ভালো, তাদের আর্মির ক্ষমতাও বেশি, আগেই আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : নব্য-নাৎসিবাদীরা ইসরাইল-ফিলিস্তিনের চলমান সংকটকে কীভাবে দেখছে? কাদের পক্ষে কথা বলছে তারা? তারা কি জায়োনবাদকে সমর্থন দিচ্ছে? তাদের আদর্শিক মতবাদ এক্ষেত্রে কী বলে?

উত্তর : নব্য নাৎসিরা সাদা বর্ণবাদে বিশ্বাসী, তারা ফ্যাসিবাদী একটি রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। তারা এমন এক ফোর্থ রাইখ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে অ্যাডলফ হিটলারের আদর্শ লালিত হবে। তারা হলোকাস্ট অস্বীকার করে। কিছু ইউরোপীয় দেশে নব্য নাৎসি কিছু প্রদর্শন করাই নিষিদ্ধ। তারা স্বস্তিকা চিহ্নটি ব্যবহার করে। তাদের মতে, সম্ভ্রান্ত নিখুঁততা আর সৌন্দর্যের বিপরীত যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তা হলো ইহুদী জাতি।

প্রশ্ন : ভাইয়া, ফিলিস্তিনি সরকার ফিলিস্তিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও গাজা নাকি শুধু হামাস নিয়ন্ত্রণ করে। ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে কে বেশি জনপ্রিয়, হামাস নাকি ফিলিস্তিনি গভমেন্ট? গাজায় বলে হামাসের অনুমতি ব্যতীত ফিলিস্তিন সরকারের কর্তৃত্ব চলে না, বিষয়টা কি ঠিক?

উত্তর : নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যা শুনেছেন তা সত্য।

আর জনপ্রিয়তার ব্যাপারে যদি বলি, ২০২১ সালের রক্তপাতের পর জরিপ বলছে, ৫৩% ফিলিস্তিনি এখন হামাসের পক্ষে, আর ১৪% মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহর পক্ষে। আরও জানা যায়, ৭৭% ফিলিস্তিনি মনে করে ২০২১ সালের যুদ্ধে হামাস জয়ী হয়েছে।

প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার কর্তৃক ইহুদী নিধনের কারণটা কী?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে (রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়) ইসরাইল/প্যালেস্টাইনের প্রতি এবং জেরুজালেমের প্রতি কাদের অধিকার তুলনামূলকভাবে বেশি? মুসলিমদের নাকি ইহুদীদের?

উত্তর : ইসলামে মুসলিমদের প্রথম কিবলা ছিল বাইতুল মুকাদ্দাস, এবং যে তিনটি তীর্থস্থানে সোয়াবের উদ্দেশ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয়েছে ইসলামে, তার মাঝে একটি হলো বাইতুল মুকাদ্দাস অর্থাৎ জেরুজালেম। সুতরাং এর ওপর মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার রয়েছে। তবে পবিত্র ভূমির তুলনায় মুসলিমদের জন্য অনেক বেশি স্মৃতি ও ধর্মীয় গুরুত্ব ছড়িয়ে আছে মক্কা ও মদিনায়। কিন্তু ইহুদীদের পবিত্র সমস্ত স্থাপনা ও তীর্থস্থান কেবলই পবিত্র ভূমিতে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বছর ধরে যে পরিবারগুলো (ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলিম) পবিত্র ভূমিতে বসবাস করে আসছে, তাদের সবারই অধিকার রয়েছে জেরুজালেমের ওপর, যারা পরে এসে জুড়ে বসেছে তাদের থেকে বেশি অধিকার।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনের সামরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনি সরকার হলো পিএলও-র সরকার। তাদের মিলিটারি হলো প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মি। তবে সেটি কেবল নামেই আছে, মূলত সেটি বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত, বিশেষ করে সিরিয়া। বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনে নয়, বরং সিরিয়ায় চালু আছে, তারা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের রিক্রুট করে। ফিলিস্তিন থেকে প্রতিরোধ এ মুহূর্তে যারা করে, সেটি হামাস, তবে তাদের সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায় না। তাদের মিসাইল ২০২১ সালের যুদ্ধে আয়রন ডোম ঠেকিয়ে দিয়েছে বেশিরভাগ।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা স্বরূপ যে ওষুধ এবং অর্থ পাঠানো হয়, তার যথাযথ ব্যবহারের নিশ্চয়তা কতটা?

উত্তর : এটির উত্তর আমি দিতে পারছি না। তবে আমি যতদূর জানি, যে সাহায্যগুলো এএইচএলসি কর্তৃক পাঠানো হয়, সেগুলো ঠিকঠাক পৌঁছে।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনকে যদি সত্যিই সাহায্য করতে চায় তবে বাংলাদেশ কি সামরিক সুবিধা দিতে পারবে?

উত্তর : এটি বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত।

প্রশ্ন : যেহেতু লম্বা সময় ধরে এই সংঘর্ষ চলছে, তাহলে ফিলিস্তিন নেতাদের এখানে কীরূপ ভূমিকা ছিল বা এখন আছে? ধন্যবাদ। আল্লাহ সহায়।

উত্তর : ইয়াসির আরাফাত আর মাহমুদ আব্বাসকে নিয়ে এ বইতে আলোচনা হয়েছে।

প্রশ্ন: ইসরাইলকে সহায়তা করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য এসব দেশের কী কী স্বার্থ আছে?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : ইসরাইলের বিপক্ষে লড়াই করতে হলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্বকে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে?

উত্তর : মুসলিম বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ মুহূর্তে লড়াই করবে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন : ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ধর্মীয় নাকি রাজনৈতিক, কোন বিষয়টি মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে?

উত্তর : মূল প্রভাবক ধর্মীয়, কারণ জায়োনিস্ট প্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা এসেছে ওল্ড টেস্টামেন্ট থেকে। ফিলিস্তিনিদের দিক থেকে সেটি নিজের ভূমি রক্ষা কিংবা ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ এবং একই সাথে একটি বড় অংশের জন্য সেটি ধর্মযুদ্ধ, ইসলামের বিরুদ্ধে অন্যায়ের যুদ্ধ। কেউ যদি বলে থাকে সমস্ত ফিলিস্তিনি এটি কেবল ধর্মীয় অবস্থান থেকে করছে, তবে সেটি ভুল। কারণ অনেক ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানও রয়েছে, যারা স্বাধীন ফিলিস্তিন চায়।

প্রশ্নঃ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যাটা এত দিন ধরে কেন চলমান? ইসরাইল এক সময় মিসরের জায়গা দখল করেছে, কিন্তু গাজা এত দিনেও কেন পারে না?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে। তবুও বলি, গাজা ও পশ্চিম তীর ইসরাইল চায় বটে। হয়তো একদিন অধিকার করেও নেবে।

প্রশ্ন: যেসব রাষ্ট্র ইসরাইলকে সাপোর্ট করছে, তারা তা কেন করছে?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : ‘আর্ক অভ দ্যা কোভ্যানেন্ট কিয়ামতের আগে আবারও দেখা যাবে বলে ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ বইতে লিখিত রয়েছে। কিন্তু এটা কখন/কীভাবে/কার দ্বারাই বা উন্মোচিত হবে? আর এটা প্রকাশিত হওয়ার উদ্দেশ্যই বা কী হবে?

উত্তর : খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সালের পর থেকে আর্ক অফ দ্য কোভেন্যান্টের হদিস কারও জানা নেই। ইসলামি কিংবদন্তিতে বলা হয়ে থাকে, ইমাম মাহদি এসে সেটিকে শেষ সময়ে উদ্ধার করবেন। কারও কারও ধারণা, রোমানরা এটি রোমে নিয়ে গিয়েছিল জেরুজালেম ধ্বংসের সময়। ইহুদীদের বিশ্বাস মাসিহের আগমনের পর আর্ক পুনরুদ্ধার হবে। ইহুদীদের থেকে অবশ্য খ্রিস্টানরাই বেশি খুঁজেছে আর্ক বা ‘তাবুতে সাকিনা’, যার কথা কুরআনেও উল্লেখ আছে (সুরা বাকারা ২:২৪৮)। বলা হয়ে থাকে, গালিলি সাগর বা টাইবেরিয়াস হ্রদের কাছ থেকে মাহদি আর্ক উদ্ধার করবেন। কেউ বলেন জর্ডানের কোনো গুহা থেকে। কেউ বলেছেন মক্কা, কেউ বা জেরুজালেম, কেউ বা অ্যান্টিয়ক, আবার বাদ যায়নি ইস্তাম্বুলও! শিয়া উৎসে আর্ক উদ্ধার নিয়ে বেশি লেখনি রয়েছে।

প্রশ্ন : এই প্রশ্নটি এখানে করা ঠিক কী না জানিনা। তবুও যেহেতু সুযোগ পেয়েছি, তাই করছি। মিশর, গ্রিস নিয়ে যেমন ১,৩০০ টাকার ‘মিথোলোজি’ এর বই আছে, তেমনি কী ‘ব্যবিলনীয় সভ্যতা’ নিয়ে কোনো আলাদা বই আছে? আমি কোথাও এমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ জানার জন্যে কাতর হয়ে আছি। আপনি যদি এমন কোনো বই এর সন্ধান দেন, তাহলে কৃতজ্ঞ হবো। আর যদি এমন বই না থাকে, তাহলে শীঘ্রই আপনি লিখবেন বলে আশা করছি।

উত্তর : আমি লিখবার আশা রাখি মিথোলজি সিরিজ। ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্নঃ ইসরাইলের পতাকায় যে চিহ্নটি, যেটি আপনার বইয়ের কাভারেও দেখা যায়, এই চিহ্নের আসল রহস্য কী? বা আদৌ কোনো আলাদা রহস্য আছে কী না? বিভিন্ন মুভি/টিভি শো তে দেখেছি এই চিহ্ন এঁকে কালো জাদু করার দৃশ্য রয়েছে।

উত্তর :

সীল অফ সলোমন, পরবর্তীতে স্টার অফ ডেভিড

এ চিহ্নকে বলা হয় ‘স্টার অফ ডেভিড’। হিব্রুতে একে বলা হয় ‘মেগেন ডেভিড’ অর্থাৎ দাউদের বর্ম। এটি একটি হেক্সাগ্রাম, দুটো সমবাহু ত্রিভুজের সমন্বয়ে গঠিত। তবে আগে এর নাম ছিল ‘সলোমনের সীল’। মুসলিম ও ইহুদী উভয়েই এ চিহ্ন ব্যবহার করত তাবিজের উদ্দেশ্যে। তবে ১৭শ শতকে এসে ইহুদীদের আশার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার শুরু হয় এ চিহ্নটির। ১৮৯৭ সালের প্রথম জায়োনিস্ট কংগ্রেসে এ চিহ্নকে পতাকায় বসানোর প্রতীক হিসেবে ধার্য করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ইহুদীদের কবরের ফলকে এ চিহ্ন এঁকে দেয়া হতো। বর্তমানে ইসরাইলের পতাকায় এর অবস্থান।

স্যাটানিজমের ক্ষেত্রে আপনি যেটি দেখেছেন, সেটি হেক্সাগ্রাম নয়, পেন্টাগ্রাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখুন-

পেন্টাগ্রাম
পেন্টাগ্রাম

ইহুদীরা ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পেন্টাগ্রাম ব্যবহার করত জেরুজালেমের স্ট্যাম্প হিসেবে। এর অর্থ তাদের কাছে ছিল ন্যায়বিচার, ক্ষমা ও মহাজ্ঞান। মরক্কো ও ইথিওপিয়ার পতাকায় পেন্টাগ্রাম দেখতে পাওয়া যায়।

প্রশ্ন : (এটা এই প্রসঙ্গ ব্যতীত এবং প্রশ্নের বদলে বরং একটা অনুরোধ) দয়া করে একেবারে সৃষ্টির শুরু থেকে সকল ইবাদাতকারী জীবের ইতিহাস নিয়ে লিখুন। একদম সবকিছু। ‘কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী’ নামে এক বই আছে। ওটার মধ্যে এতো বেশি বানান ভুল, আর বানানের ভুলগুলোও রুচিহীন এবং বারবার একই ভুল দেখা যায়। যেমন : ‘মাথা’ কে লিখেছে ‘মাতা’, সমাধানকে লিখেছে ‘সমাদান’ ইত্যাদি। এগুলো দেখলেই বইয়ের তথ্যের ওপর বিশ্বাস রাখা কঠিন হয়ে যায়। তাই আপনার অপেক্ষায় থাকলাম। আশা করি শীঘ্রই আপনি সবকিছুর ইতিহাস লিখে আমাদেরকে উপকৃত করবেন। পরিশেষে, অসংখ্য ধন্যবাদ।

উত্তর : মাথায় থাকলো।

প্রশ্ন : আপনি এই সংঘাতকে ধর্মীয় না ভূ-রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত বলে মনে করেন?

উত্তর : ধর্মীয়ভাবে শুরু, পরবর্তীতে ইসরাইলের রাজনৈতিক আগ্রাসনে পরিণত হয়েছে বলে মনে করি।

প্রশ্ন : ভাই, অনেক আগ্রহ নিয়ে ১৭টা লেখা পড়লাম, পরে অসমাপ্ত রয়ে গেলো, ইহুদীদের উত্থান পর্বটার পরে কী হয়েছিল জানার খুব ইচ্ছে।

উত্তর : আপনি তার মানে অনলাইনে ফ্রি অংশগুলো পড়েছিলেন। বই বেরিয়েছে দুটো। ‘ইহুদী জাতির ইতিহাস’ এবং এটি— ‘ইসরাইলের উত্থান পতন’। প্রশ্ন : Can I support Hamas? Bangla answer please. (আমি কি হামাসকে সমর্থন করতে পারি? বাংলায় উত্তর দেবেন দয়া করে।)

উত্তর : এ তো সম্পূর্ণ আপনার বিষয়। হামাস ফাতাহ সবার সম্পর্কেই এ বইতে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন : I have questions related to the Jewish nation. 1 ) Many nations have their own land, these Jews came first to this land- Israel led by Prophet Musa and later they were banished and they returned again, While I’m a Muslim by practice and while I don’t support the killing nature of Israel towards innocent Palestinian citizens but this is also true that these Jews were oppressed since long (well, we know they got punishment for their own sins in the past) but at the same time these Jews got nowhere to go and comparatively they may seek a land of their own (may be not Israel land though) but as per their own religious belief they too are attached to Israel itself. Palestine and Israel could live side by side as humans but instead they fight with each other and here the most miserable deaths happened in Palestine by the cruel Israel itself. My question is who is playing from behind for the clash between these two nations? Why is Israel so cruel to Palestine? While Israel has friend like America and Europe but it’s also true that Israel has all enemies (as per their religious conflicts) in its surroundings and they are always in a tension all through. Where should they go if they don’t have a place to live for their own religious stake? I’m asking this from humanitarian ground and nothing else. Why are all the Muslim countries not protesting the cruelty of Israel? Why don’t they fight together?

উত্তর : আমার মনে হয় আপনার প্রশ্নের উত্তরগুলো ইতোমধ্যে দিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন : ব্যালফোর চুক্তির আগে কেমন ছিল এই এলাকা? আমি জানি এটা অটোমানদের অধীনে ছিল, কিন্তু সেটা কি ফিলিস্তিন নামেই ছিল? নাকি অন্য কোনো নামে? চুক্তির ফলশ্রুতিতে ১৯২০-১৯৪৮ সময়ে ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ কেমন হয়েছিল? ইহুদী মিলিশিয়াদের সাথে কেন ব্রিটিশদের সংঘাত ছিল? অভিবাসীদের প্রতি তখনকার বাসিন্দাদের মনোভাব কেমন ছিল? চুক্তির আগের, চুক্তির পর থেকে ১৯৪৮, আর ৪৮-৬৭ পর্যন্ত টাইমলাইনের গাজা, পশ্চীম তীর, রামাল্লা, তেল আবিব, ইসরাইলের অন্য বড় শহর, জেরুজালেম, আল আকসা কম্পাউন্ডের ছবি চাই। ফিলিস্তিনিরা কেন নিজেদের ফিলিস্তিনি বলে পরিচয় দেয়? এটা কি বাইবেল/রোমান আমলের সূত্র ধরে? ৬০-৭০ দশকের আরব জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক সেকুলার সংগ্রামের রূপটি কীভাবে বিশ্বে ইসলামাইজড লেবেলে প্রচারিত হল? কবে থেকে? কেন?

উত্তর : ফিলিস্তিনিরা নিজেদেরকে সেই আদি ফিলিস্তিনি আমল থেকেই ফিলিস্তিনি নামে পরিচয় দেয়। আর সেটিকে পাকাপোক্ত করেছে রোমান নামকরণ।

ইহুদী মিলিশিয়াগুলো ব্রিটিশ ট্রুপদের আক্রমণ করত, কারণ ব্রিটেন ইহুদী অভিবাসনের বিরুদ্ধে আইন করেছিল। ইহুদীদেরকে এখানে জনসংখ্যা বাড়াতে দিচ্ছিলো না।

আপনার বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর বোধ করি ইতোমধ্যে দিয়ে ফেলেছি।

প্রশ্ন : ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিবেন?

উত্তর : ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়। ৮০- ৪০০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ইসরাইল জমা করে রেখেছে বলে ধারণা। অবশ্য ইসরাইল কখনও প্রকাশ্যে এমন কিছু স্বীকার করেনি। তাদের বক্তব্য, “মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা প্রথম দেশ ইসরাইল হবে না।” দেশটি “পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ চুক্তি” স্বাক্ষরেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রপক্ষের সংখ্যা ১৮৯। তার মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্র পরমাণু শক্তিধর এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন।

ফিলিস্তিনের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই।

প্রশ্ন : বিশ্বব্যাপী এই দুই পক্ষের মধ্যে কাদের সমর্থন বেশি?

উত্তর : বিশ্বের ৮৩% দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। প্রায় প্রতিটি আরব দেশই দেয়। তবে গাজা আক্রমণের প্রশ্নে এবং ফিলিস্তিনে রক্তপাতের বিষয়ে বিশ্বের সাধারণ জনগণের রায় ফিলিস্তিনের দিকেই। উল্লেখ্য, আমি রাজনৈতিক সমর্থন বলিনি।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনের ওপর অযাচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর : এই হত্যাকাণ্ড আগেও হয়েছে, এরপর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ২০২১ সালের যুদ্ধের পরেও হবে না।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনিদের শিক্ষার অবস্থা ও ব্যবস্থা কেমন? আর যদি শিক্ষার অবস্থা খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির কতটুকু উন্নতি হবে?

উত্তর : ফিলিস্তিনে পড়ালেখার কদর ভালোই। ৯৫.৪% শিশু মৌলিক শিক্ষা পায়, তবে ঝরে পড়ে অনেক। ১৫ বছরের আগে ২৫% ছেলে ও ৭% মেয়ে স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। পশ্চিম তীরে ৪০% তরুণ বেকার, আর গাজার বেকার ৬২% তরুণ। জাতীয় সাক্ষরতার হার ৯১.১%। পড়াশোনার নিয়ম কানুন বাংলাদেশ থেকে তেমন ভিন্ন কিছু না। পশ্চিম তীর এবং গাজায় ২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩টি ইউনিভার্সিটি কলেজ এবং ১৯টি সাধারণ কলেজ রয়েছে। এরপর পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। সমাজবিজ্ঞান এবং কলায় বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে যায় কম শিক্ষার্থী।

কেবল শিক্ষা আসলে ইসরাইলি দখলদারিত্ব দমনে সাহায্য করতে পারে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন : আমেরিকা অন্ধভাবে কেন ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে? এর সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : আরব দেশগুলো কেন আগের মতো এক হচ্ছে না ইসরাইল ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনের মুক্তি আসলেই কি সম্ভব? যেখানে সবারই দায়-ছাড়া ভাব!

উত্তর : সম্ভবপর মনে হচ্ছে না। আশা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রশ্ন: হিটলার আর ইসরায়েল নিয়ে প্রচলিত যত মিথ বা কথাবার্তা হয় তা কতটা যুক্তিযুক্ত। আসলেই কি হিটলার ‘অর্ধেক’ ইহুদী মেরেছিলেন?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে এ বইতেই।

প্রশ্ন : সূরা মায়িদা ২১, বনী ইসরাইল ১০৪ আয়াত অনুসারে ফিলিস্তিনের ভূমি কার? সংঘাতটি জাতিগত নাকি ধর্মীয়?

উত্তর : আয়াত দুটি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আরেকটি আয়াত বলি, প্রতিশ্রুতি পালন করা আমার কর্তব্য, আমি (আল্লাহ) এটি পালন করবই।” [সুরা আম্বিয়া ২১:১০৪]

ইসরাইল তাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে দুবার ফেরত গিয়েছিল। এক, মিসর থেকে, আরেকবার ব্যবিলন থেকে। প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছিল। আর এখন তারা এসেছে তৃতীয়বার।

সংঘাতটি কীরূপ, তা আমি ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।

প্রশ্ন : আমার প্রশ্নটা একটু ভিন্ন। উদাহরণের জন্য বাংলাদেশের বিষয় টানবো। যখন ফিলিস্তিনে ৮০/৯০ ভাগ মুসলিম ছিল এবং ইংল্যান্ড শাসনামল ছাড়ল ইহুদী এবং মুসলিমদের কোনো দেশ স্বীকৃতি না দিয়ে, তখন ইহুদীরা বা তাদের নেতারা ঠিকই নিজেদের দখল নেয়া জায়গায় রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দিল। অন্যদিকে অনেক বড় সংখ্যায় মুসলিমরা সেই জায়গায় থাকার পরেও কেন তারা রাষ্ট্র গঠন করলো না? তারাও কি আমাদের নেতাদের মতো পূর্ব এবং পশ্চিম মিলিয়ে অন্য মুসলিম দেশের সাথে থাকতে চেয়েছিল?

উত্তর : ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ছাড়ামাত্রই ইসরাইল রাষ্ট্রের ঘোষণা হয়, সেখানে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষণার কোনো প্ল্যান প্রোগ্রামই হয়নি। এমনটা তারা আদৌ ভাবেননি।

প্রশ্ন : ইসরাইল বিশ্বরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের ঠিক কোন পর্যায়ে আছে? আর কী কী কাজ বাকি আছে সেটি সম্পন্ন করতে?

উত্তর : প্রশ্নটি অনেকটা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতো। তবে লবিংয়ের মাধ্যমে যতটুকু করা যায়, তারা করছে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলে সেটা যৌক্তিক বা তথ্যনির্ভর হবে না।

প্রশ্ন : বিশ্ব-রাজনীতিতে ইসরাইলের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। ফেসবুক, অ্যাপল, গুগলের মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ইসরাইলের সাথে কী সম্পর্ক?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্ন : ইসমাইল (আ) আর ইসহাক (আ)-কে নিয়ে করা চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেন। এই দুই জন থেকে দুটি জাতি।

উত্তর : যে চুক্তি নিয়ে এ বইতে বেশি আলোচিত হয়েছে সেটি ইহুদীরা ইসহাক (আ)-এর সাথে চুক্তি বলে অভিহিত করে। আর ইসমাইল (আ)-এর ব্যাপারে চুক্তি ছিল, “আর ইসমাইলের বিষয়েও তোমার (ইব্রাহিম) মুনাজাত শুনলাম; দেখ, আমি তাকে দোয়া করলাম এবং তাকে ফলবান করে তার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করবো; তা থেকে বারো জন বাদশাহ উৎপন্ন হবে ও আমি তাকে (তার বংশধরদের) বড় জাতি করবো।” (পয়দায়েশ ১৭:২০ )

প্রশ্ন : ইসরাইলের ইহুদীরা কী চায়?

উত্তর : পবিত্র ভূমির পূর্ণ অধিকার।

প্রশ্ন : ইহুদীদেরকে পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলো সাহায্য করার কারণ কী?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : The Jews believe that God had made covenant with Abraham about the blessings on his descendants as well as giving the right over the promised land now known as Israel. But we know that the Muslims are also descendants of Abraham. Then according to the covenant don’t the Muslims also have the right over the promised land? Or the Jews do not accept the fact that Muslims are also the descendants of Abraham? (ইহুদীরা বিশ্বাস করে, স্রষ্টা কোভেন্যান্ট বানিয়ে ইব্রাহিম (আ) এর পুত্রদের আশীর্বাদ করেছেন ও তাদের বংশধরদের পবিত্র ভূমির অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু আমরা জানি, মুসলিমরাও ইব্রাহিম (আ) এর বংশধর। তাহলে, কোভেন্যান্ট (অর্থাৎ অঙ্গীকার) অনুযায়ী মুসলিমদেরও তো পবিত্র ভূমির ওপরে অধিকার আছে, তাই না? নাকি ইহুদীরা মুসলিমদের ইব্রাহিম (আ) এর বংশধর বলে স্বীকার করে না?)

উত্তর : এটা সত্য যে তাওরাতে করা আল্লাহর সেই অঙ্গীকার ইব্রাহিম (আ)- এর পুত্রদের জন্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ইসহাক (আ)-কে আলাদা করে বলাতে ইহুদীরা এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করে যে, এতে ইসমাইল (আ)-এরও অধিকার ছিল। তাই তারা ইসমাইল (আ) এর বংশধরদের এই পবিত্র ভূমিতে অধিকার আছে বলে মনে করে না।

অবশ্য ইংরেজিতে একে চিরস্থায়ী অঙ্গীকার বলা হলেও, হিব্রু শব্দ ‘ওলাম’ বলতে চিরস্থায়ী নয় বরং দীর্ঘকাল বোঝায়। অর্থাৎ তা ছিল দীর্ঘকালের অঙ্গীকার। এ প্রসঙ্গে কুরআনের কেবল একটি আয়াত উল্লেখ করা যেতে পারে- “এবং যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহিমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি (আল্লাহ) বলেছিলেন- নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানবমণ্ডলীর নেতা করব। সে (ইব্রাহিম) বলেছিল, আমার বংশধরগণ হতেও। তিনি (আল্লাহ) বলেছিলেন- আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।” (সুরা বাকারা ২:১২৪ )

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?

উত্তর : কঠোর সত্য কথা হলো, বাস্তবিকভাবে পশ্চিম তীর তো বটেই, গাজাও ইসরাইল নিয়ে নিতে পারে, অন্তত তাই তো তাদের ইচ্ছে। হয়তো স্বল্প একটি অংশ বাকি থাকবে। যদি না অলৌকিক কোনো সমাধানের দেখা মেলে।

প্রশ্ন : বর্তমান ইসরাইল যারা শাসন করছে তারা কারা?

উত্তর : জায়োনবাদী ইহুদী।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ আর বামপন্থী আন্দোলন কি আলাদা?

উত্তর : ফিলিস্তিনি বামপন্থী আন্দোলন আর ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ আলাদা। বামপন্থী আন্দোলন এখন ম্রিয়মাণ।

প্রশ্ন : হামাস ফাতাহ দ্বন্দ্ব কতটা চরমে?

উত্তর : তাদের মাঝে মারামারি কাটাকাটি এ মুহূর্তে ততটা না থাকলেও তারা একে অন্যের বন্ধু পর্যায়ে যেতে পারেনি এখনও।

প্রশ্ন : ইয়াসির আরাফাতকে কি আসলেই ইহুদীরা বশে এনে ফেলেছিলো?

উত্তর : এটা তো আমাদের বলতে পারার মতো অবস্থা নেই। কথাটা খানিকটা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতো শোনায় যদিও। তবে তিনি ইসরাইলের অস্তিত্বকে শেষমেশ মেনে নিয়েছিলেন আরকি। ফাতাহ যেমন মানে।

প্রশ্ন : হামাসের সাথে ফাতাহর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই। ফাতাহর বিরুদ্ধে করাপশন, হামাসকে অসহযোগিতা, ক্ষমতা দখল, ইসরাইলের সাথে নমনীয় আচরণ— এই অভিযোগগুলোর সত্যতা কতটুকু? ব্যাখ্যা চাই।

উত্তর : ফাতাহ এবং হামাস তো একে অন্যের সাথে অসহযোগিতাই করে। দুর্নীতির অভিযোগ আছে বটে। ক্ষমতা দখল বলতে কী বোঝাচ্ছেন, তা জানা দরকার। তবে ইসরাইলের সাথে তারা এখন নমনীয় বটে, হামাস অনমনীয়

প্রশ্ন : ইরান চোরাই পথে কীভাবে হামাসকে অস্ত্রের যোগান দেয়? যেখানে মিশরের সাথে অল্প বর্ডার ছাড়া পুরোটাই ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে!

উত্তর : বহু বছর ইরানের যোগান দেয়া রকেটের ওপর ভরসা করে থেকেছে হামাস। ধারণা করা হয় প্রায় ৮ হাজার রকেট তাদের মজুদে রয়েছে। প্রথাগতভাবে সুদানে শিপিং করার পর মিসরের বিশাল মরু পেরিয়ে ভূগর্ভস্থ গোপন সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে রকেটগুলো আনা হয় গাজায়।

প্রশ্ন : ফিলিস্তিন সরকারকে হামাসের মতো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না কেন?

উত্তর : ফিলিস্তিনের ফাতাহ সরকার কাগজে কলমে অসাম্প্রদায়িক বা সেকুলার।

প্রশ্ন : বর্তমান (২০২১ ) যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব কতদিন হতে পারে? হামাস কি এভাবে যুদ্ধ করতে থাকলে মুসলিম বিশ্বের একতা ছাড়া নিজেরা ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে পারবে? বা, এভাবে কেবলমাত্র হামাস দ্বারা ফিলিস্তিন মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি?

উত্তর : স্থায়িত্ব কতদিন তা বলা মুশকিল, তবে ফিলিস্তিন এভাবে মুক্ত হবার সম্ভাবনা দেখি না।

প্রশ্ন : ইব্রাহিম (আ) এর দুই ছেলে ইসহাক আর ইসমাইল (আ)-কে নিয়ে করা কোভেন্যান্টের (চুক্তির) ব্যাপারে বলুন। ইহুদী আর মুসলিম জাতির শিকড় নিয়ে জানুক। এটা একটি মিরাকুলাস ব্যাপার।

উত্তর : আলোচিত হয়েছে ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : ইসরাইল কি ফিলিস্তিনের সাথে তাদের সংঘাতকে বিবলিকাল মনে করে?

উত্তর : এ মুহূর্তে তারা বিবলিকাল মনে করে না। কেবল নিজের পূর্বপুরুষের অবস্থানে থাকা যে কাউকে তারা সরাতে রাজি, বা তাদের কাছ থেকে অধিকার নিয়ে নিতে রাজি। কিন্তু তাদের এ অধিকার তাদের বিবলিকাল বিশ্বাস থেকেই এসেছে।

প্রশ্ন : ইসরাইল কি পশ্চিম তীরের দখল নিয়ে নেবে? এরপর দাজ্জাল আসবে? হাদিস মতে তো কিয়ামতের আগে সব জাতি মুসলিমদের শত্রু হবে। মুসলিমরা সংখ্যায় অনেক হবে তাও কিছু করতে পারবে না। যেমন এখন দুই বিলিয়ন মুসলিম তাও ইসরাইলকে কিছু করতে পারে না… তার মানে প্রফেসি অনুযায়ী কিয়ামতের আগে কী কী হবে তা বলাই আছে। তাহলে প্যালেস্টাইন যে দখল হবে এটা তো অনেকটা নিশ্চিতই। সব তো লেখাই আছে। সরি এভাবে লিখার জন্য।

উত্তর : ইসরাইলি সেটেলমেন্ট পশ্চিম তীরে যেভাবে বাড়ছে এক পর্যায়ে পুরোটা নিয়ে নেয়া অবাক করা ব্যাপার হবে না।

প্রশ্ন : আপনার মতে প্যালেস্টাইন আর কত বছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে?

উত্তর : অর্ধ-শতাব্দী, হয়তো।

প্রশ্ন : আসসালামু আলাইকুম। সর্বশেষবার ইহুদীদের অভিশপ্ত হওয়ার কারণ কী ছিল? যীশু খ্রিস্টকে নবী হিসেবে অস্বীকার করা? আর ইহুদীদের প্রতিশ্রুতি ভূমির প্রতিশ্রুতি কি কোনো শর্তসাপেক্ষ প্রতিশ্রুতি ছিলো? সেই প্রতিশ্রুতি কি এখন নেই বা কোনো একসময় কেড়ে নেয়া হয়েছিলো? (বরাবরের মতোই ইহুদী, ইসলাম, খ্রিস্টান তিন ধর্মের ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে উত্তর দিবেন আশা করি)

উত্তর : ওয়ালাইকুম সালাম।

ইহুদীদের দেয়া প্রতিশ্রুতির শর্ত ছিল অন্যায় বা জুলুম করা যাবে না। তবে এটা কুরআনে উল্লেখিত, বাইবেলে নয়। “আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।” (সুরা বাকারা ২:১২৪ )

অনেকের ধারণা সেই প্রতিশ্রুতি চিরস্থায়ী নয়, বরং হিব্রু ‘ওলাম’ (গ্রাম) শব্দ অনুযায়ী ‘দীর্ঘকালের’ জন্য ছিল। তাওরাতে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো এ বইতেই অন্যত্র উল্লেখিত হয়েছে।

সর্বশেষবার ইহুদীদের অভিশপ্ত হওয়ার কারণ বলা হয় কিতাব পরিবর্তন, এবং কিতাবকেন্দ্রিক না হয়ে যা বাইকেন্দ্রিক ধর্ম হয়ে যাওয়া। সম্রাট টাইটাস কর্তৃক তখনের শাস্তির কথা কুরআনে এভাবে এসেছে- “তোমরা সৎ কাজ করলে তা নিজেদেরই জন্য করবে এবং মন্দ কাজ করলে তাও করবে নিজেদের জন্য। অতঃপর পরবর্তী প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় উপস্থিত হলে আমি আমার দাসদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করার জন্য।” (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৭ )

প্রশ্ন : বর্তমান জায়োনিস্ট, এর সমর্থক ইহুদী এবং অর্থডক্স বা প্রোটেস্ট্যান্ট ইহুদীদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের কি পার্থক্য আছে? থাকলে কীরকম?

উত্তর : জায়োনিস্ট ইহুদী এবং সাধারণ ইহুদীদের মাঝে একমাত্র পার্থক্য হলো, জায়োনিস্টরা ইসরাইল রাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণ চায়। প্রোটেস্ট্যান্টরা খ্রিস্টান, ইহুদী নয়।

প্রশ্ন : যেহেতু ইহুদীরা প্যালেস্টাইনে বা ইসরাইলে একত্রিত হবে, জেরুজালেমে থার্ড টেম্পল নির্মাণ করলেই দাজ্জালের আগমন ঘটবে (ইসলাম ধর্মমতেও সম্ভবত একই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে), তাহলে কি ইহুদীরা আল্টিমেটলি জেরুজালেম এবং মসজিদুল আল আকসা এরিয়া দখল নিবেই? আটকানো যাবে না? আরেকটা বিষয়, যদিও কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক, দাজ্জালের অরিজিন সম্পর্কে কিছু জানাবেন দয়া করে, যদি এবিষয়ে আপনার পড়াশোনা বা জ্ঞান থেকে থাকে আর কি। ধন্যবাদ।

উত্তর : আপনি যেভাবে বলছেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভবিষ্যদ্বাণী এভাবেই আসলে ঘটে যায়। অমোঘ বাণী যাকে বলে, এক সময় না এক সময় হবেই। তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না বললে, দুই জাতির কোনো কমন সমাধানে রাজি হওয়াই ঠেকাতে পারে যত সংঘাত।

দাজ্জালের অরিজিনের আলোচনা এ বইতে নয়। অন্য কোনো বইতে করা যাবে।

প্রশ্ন : ইহুদী ও ইসলামের মাঝে ‘সৃষ্টিকর্তার ধারণাগত পার্থক্য’ কোন জায়গায়? আর কোনো পার্থক্য যদি নাই থাকে, তবে আমাদের নবীকে মেনে নিতে তাদের সমস্যা কোথায়?

উত্তর : সৃষ্টিকর্তা নিয়ে দুই ধর্মের মাঝে কোনো ধারণাগত পার্থক্য নেই।

“হযরত মুহাম্মাদ (সা) ইসমাইলি নবী হতে পারেন”, ইহুদীদের অনেকের মতে। অনেকে তাকে নবী মনেও করেন, কিন্তু অনুসরণ করেন না। ইহুদীরা জেন্টাইল (অ-ইহুদী) কোনো নবীর অনুসরণ করে না। আমি এটুকু জানতে পেরেছি একজন র্যা বাইকে জিজ্ঞাসা করে।

প্রশ্ন : ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজরা ফিলিস্তিনিদের জমি কীভাবে ইহুদীদের দিয়ে দেয়? আর এখানে আমেরিকার ভূমিকাটা কী ছিল? কবে থেকে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করা শুরু করে ও যুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি হয়?

উত্তর : আলোচনা করা হয়েছে এ বইতে।

প্রশ্ন : মহানবী (সা) নিয়ে ইহুদীর মনোভাব কেমন? ধর্মীয় ভাবে তাকে তারা কীভাবে দেখে? যেহেতু মহানবী (সা) ইব্রাহিম (আ)-এর বংশধর।

উত্তর : এ বিষয় নিয়ে আগের বইতে (“ইহুদী জাতির ইতিহাস”) আলোচনা হয়েছে।

প্রশ্ন : এই যুদ্ধবিরতিটিকে (২০২১-) হামাসের বিজয় বলা চলে কি?

উত্তর : ৭৭% ফিলিস্তিনি তা-ই মনে করে।

প্রশ্ন : ইউ নো হু-র ভবিষ্যৎ আসলে কী?

উত্তর : যেভাবে চলছে চলতে থাকা একই হারে, যদি না কোনো অবাক করা সমাধান এসে হাজির হয়।

প্রশ্ন : ইসরাইল যদি গাজার চারিদিকে ঘেরাও করে রাখে, তাহলে হামাসের অস্ত্র বা রকেটগুলো কীভাবে আসে? যদি নিজেরা তৈরি করে তাহলে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসই ঠিকমত পাওয়া যায় না সেখানে এগুলো কিভাবে তৈরি করে? আর যদি মাটির নিচে সুড়ঙ্গ দিয়ে আনে তাহলে ইসরাইলের কাছে কি এমন টেকনোলজি নেই, যার দ্বারা বর্ডার এরিয়ার মাটির নিচের গতিবিধি ট্র্যাহক করে এগুলো ধরতে পারে?

উত্তর : মনে হচ্ছে তেমন প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করছে না আপাতত।

প্রশ্ন : ইসরাইল/ ইহুদী/ জায়োনিস্টরা কি ইলুমিনাতি অথবা ঘড়ঙ এর সাথে সম্পর্কিত?

উত্তর : ইলুমিনাতি বা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে। এগুলো ছাড়াই ইসরাইলপন্থী লবিগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী।

প্রশ্ন : আমেরিকা ঠিক কোন ঘটনার পর অথবা কী কারণে সবসময় ইসরাইল- ফিলিস্তিন সংঘাতে একচোখা নীতি অবলম্বন করে আসছে? তাদের নীতির ফলে “আমেরিকা ইহুদীরা নিয়ন্ত্রণ করে” এই ভাষ্যটাকে কি সত্যায়িত করে না?

উত্তর : আলোচিত হয়েছে লবিং বিষয়ে।

প্রশ্ন : পিএলও কি শুধুমাত্র ইসরাইলের বেসিক নাগরিক সুবিধা পাওয়ার জন্যই সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরে এসেছে? বা কী জন্য পশ্চিম তীরে কোন কার্যকর প্রতিরোধ নেই প্যালেস্টাইনিদের? পিএলও-র চুক্তির পর প্যালেস্টাইনে এর প্রতিক্রিয়া কী ছিলো? মাহমুদ আব্বাস কি পশ্চিমা মদদপুষ্ট?

উত্তর : আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হলো ফাতাহর সেকুলারিজম, এবং ইসরাইলের অস্তিত্ব মেনে নেয়া। একটি মেনে নেয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কী আক্রমণ চালানো হবে?

প্রশ্ন : প্যালেস্টাইনিদের ভবিষ্যৎ কী? এখন তো তাদের বসবাস গাজা আর পশ্চিম তীরে। তাদের দুই রাজনৈতিক দল হামাস আর পিএলও ভিন্ন মতাদর্শের কারণেই কি ইসরাইল বার বার হামলার সুযোগ পাচ্ছে? এইবারের (২০২১) হামলার শিকার বেশি গাজাবাসী। এই এলাকা তো ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে নেই। ভবিষ্যতে কি গাজা কেন্দ্র প্যালেস্টাইন দেশ হবে? বর্তমানে জাতিগত নিধনের শিকার হওয়া গোষ্ঠীগুলোর ভবিষ্যৎ কী? আর রোহিঙ্গারা আগামীতে আমাদের জন্য থ্রেট কিনা?

উত্তর : গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ইতোমধ্যে।

রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা এ বইয়ের বিষয় নয়।

প্রশ্ন: আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা সবসময় প্যালেস্টাইন-ইসরাইল ইস্যুতে ইসরাইলের পক্ষ নেয়। এটা কি শুধু টাকার জন্য না আমেরিকার ফরেন পলিসির অন্য কোন স্বার্থ?

উত্তর : আলোচনা হয়েছে ইতোমধ্যে।

প্রশ্ন : “দি লিডারশিপ অফ মুহাম্মাদ (সা)” বইয়ের যে বাংলা অনুবাদ বাজারে পাওয়া যায়, তা বাজে। আপনি কি পুনরায় অনুবাদ করতে পারেন না? Leadership Lessons from the life of Rasulullah (S) by Mirza Yawar Beg বইটির বাংলা অনুবাদ চাই।

উত্তর : বইটি পড়িনি, মাথায় রাখলাম।

প্রশ্ন : ইহুদীদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ইসরাইল কেন ফিলিস্তিনের বুকেই করতে হলো? ফিলিস্তিন ব্যতিরেকে শুধু ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রেক্ষিত আন্তর্জাতিক আইন, সর্বজনীন মানবাধিকার ইত্যাদির সাথে কতটুকু জাস্টিফাইযোগ্য, জাতিসংঘ বা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে সেই প্রশ্নের অবতারণা করা যায় কিনা? হামাস এই প্রতিরোধ আর কতবছর অব্যাহত রাখতে পারবে, বিশেষ করে মিশর সীমান্তে দেয়াল তুলে দেওয়ার পর?

উত্তর : ইসরাইলের বুকে করতে হলো, কারণ এক সময় তারা এখানে বসবাস করত, এবং তাদের কাছে জেরুজালেম ধর্মীয়ভাবে পবিত্র। এজন্য এ ভূমি তাদের দাবি ছিল। জাতিসংঘ চেয়েছিল টু স্টেট করে দিতে, জেরুজালেমকে আলাদা রেখে, তা তো আর হয়নি। আইন ভঙ্গ নিয়ে আলাদা প্রশ্নে আলোচনা হয়েছে।

হামাস ভবিষ্যতে পারবে কি না, তা দেখবার বিষয়। হয়ত পারবে না, যেহেতু ইসরাইল আরও উন্নত হয়ে চলেছে।

প্রশ্ন : বহির্বিশ্বের সাহায্য-সহযোগিতা বিশেষত অস্ত্রের যোগান কীভাবে গাজায় পৌঁছে?

উত্তর : উত্তর দেয়া হয়েছে অস্ত্র এবং ডোনেশন দুটোর ব্যাপারেই।

প্রশ্ন : হলোকাস্টে কি সত্যিই ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছে?

উত্তর : আনুমানিক ৬০ লক্ষ, তবে কম বেশি হতেই পারে। একটি বড় অংকের ইহুদী নিধন হয়েছিল, এটি ঐতিহাসিক সত্য।

প্রশ্ন : Will the donations given to Palestinian Embassy reach Gaza? (ফিলিস্তিন দূতাবাসে যেসব সাহায্য দেয়া হয়, সেগুলো কি গাজায় পৌঁছায়?)

উত্তর : এটা বলা মুশকিল। আমি প্রশ্নোত্তরে লিখেছি আগে কাদের মাধ্যমে ডিল হয় এটি।

প্রশ্ন: Let me know in details regarding Israieli Messiah (Dajjal ), the Third Temple and Gog Magog war/buried on Jerusalem.

উত্তর : আলোচনা হয়েছে বইতে।

প্রশ্ন : যুদ্ধটা কারা করছে? শুধুই কি হামাস নাকি সাধারণ ফিলিস্তিন জনগণও অংশ নিয়েছে?

উত্তর : হামাস করেছে। সাধারণ জনগণ তো ইট পাটকেল ছোড়ার চাইতে বেশি দূর তেমন যেতে পারবে না, তাদের তো মিসাইল নেই।

প্রশ্ন: ইসরাইলিরা বারবার বলে ফিলিস্তিন হচ্ছে তাদেরকে আল্লাহ কর্তৃক দেয়া প্রমিজড ল্যান্ড। তাই যদি হয় সেক্ষেত্রে আমাদের হাতে তো কিছু নাই, কারণ স্বয়ং আল্লাহ তাদের কথা দিয়েছেন, ইসলাম এক্ষেত্রে কী বলে? আপনার লেখা পড়ে যদ্দূর জেনেছি ইয়াকুব (আ) এর বংশধরেরাই ইহুদী। সুতরাং কেউ ধর্ম বিশ্বাস না করলেও সে ইহুদী হতে পারে। অনেক ইহুদীই আছে আমার জানামতে যারা ধর্মে বিশ্বাসী নয়, আবার একদল বলছে ফিলিস্তিন তাদের গডস প্রমিজড ল্যান্ড, বিষয় দুটো পরস্পরবিরোধী হয়ে গেলো না?

উত্তর : যারা ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তারা অনেক আগের পূর্বপুরুষদের ভূমি হিসেবে দাবি করে। আল্লাহ কথা দিয়েছেন বটে, তবে তা শর্তসাপেক্ষে, যা আগে আলোচনা করেছি।

প্রশ্ন : ইহুদীদের কি শেষ নবী বা এমন কিছুতে বিশ্বাস আছে? তাদের নবীর ধারা কি এখনও চলমান?

উত্তর : তাদের শেষ নবী নিয়ে বিশ্বাস নেই, তবে মাসিহ নিয়ে আছে। তারা নবী নয়, মাসিহের অপেক্ষায় আছে। আলোচনা হয়েছে এ নিয়ে বিস্তারিত।

প্রশ্ন : মুসলমানদের কাছে আল আকসা মসজিদ নাকি কুব্বাতুস সাখরা, কোনটার গুরুত্ব বেশি? আর কুব্বাতুস সাখরার পাথরের গুরুত্ব ইহুদীদের কাছে কেমন আর মুসলমানদের কাছে কেমন?

উত্তর : কুব্বাতুস সাখরার সেই পাথরটি একসময় কিবলা ছিল মুসলিমদের, ইহুদীদের কাছেও মহাপবিত্র। সে হিসেবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে, এখন আর ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই। আল-আকসা পুরো কম্পাউন্ডের কথাই কুরআনে উল্লেখিত আছে, তাই এটির গুরুত্বই বেশি, এটি একটি পবিত্র মসজিদ। এ কম্পাউন্ডে সুলাইমান (আ)-এর বাইতুল মুকাদ্দাস ছিল।

প্রশ্ন : মাঝে মাঝে শুনি যে আল আকসা মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলা হবে কোনো ষড়যন্ত্র দ্বারা, সেক্ষেত্রে সেই পাথরেরও তো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ইহুদীরা কি টেম্পল তৈরির জন্য এতো বড় রিস্ক নেবে?

উত্তর : ইহুদীরা এ পাথরকে হোলি অফ দ্য হোলিজ ধরে নিয়ে এর ওপরে টেম্পল বানাতে চায়, একে ধ্বংস করে নয়। এর ওপরের স্থাপনার অবশ্য গুরুত্ব নেই ইহুদীদের কাছে।

প্রশ্ন : আর্ক অফ দ্য কোভ্যানেন্ট কি ঈসা (আ) বা ইসলামের আসার আগেই হারিয়ে গিয়েছিল? যদি তাই হয় তাহলে ইসলাম কী বলে এই ব্যাপারে? এটা কি কেউ আবার ফিরে পাবে এমন কোনো প্রফেসি আছে ইসলামে বা ইহুদী ধর্মে বা ক্রিশ্চিয়ান ফেইথে?

উত্তর : ইহুদী ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে তাদের মাসিহ আসার পর আর্ক অফ দ্য কোভেন্যান্ট ফিরে পাওয়া যাবে। এটি নেবুকাদনেজার কর্তৃক জেরুজালেম আক্রমণের সময়ই হারিয়ে গিয়েছিল, আড়াই হাজার বছরেরও বেশি আগে।

[বি.দ্র. সকল প্রশ্ন বাছাই করা হয়নি বইয়ের জন্য।]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *