১১. পরিবার
হযরত মোহাম্মদ (দঃ) বলেছেন, যিনি আপন পরিবারের মধ্যে উত্তম, তিনি আল্লাহর কাছে উত্তম। যথেচ্ছাচারী রাজার মতো পরিবারের যথেচ্ছাচারী কর্তা মনুষ্য জীবনকে বিষময় করে তোলে। তার প্রতাপে গৃহের সমস্ত মানুষ অন্তরে দগ্ধ হতে থাকে, ফলে তার বিপদে, দুঃখে পরিবারের কারো কোনো আন্তরিক সহানুভূতি থাকে না।
বাইরে মানব-সমাজে, মুক পশুর কাছে, প্রেমের যেমন প্রভাব, অধীনস্থ আত্মীয়দের উপরেও প্রেম তেমনি কাজ করে। বালক-বালিকা আশ্রিতদের দুঃখের সহানুভূতি, তাদের প্রতি সহৃদয় ব্যবহার পরিবারের সবাইকে যেমন গভীর প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করে, তেমনি গৃহের সুখ শতগুণে বর্ধিত করে দেয়। প্রেমের নামে, মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী আত্মীয়ের নামে মানুষ দুর্বল, শক্তিহীন। মুখাপেক্ষী অধীনস্থদের প্রতি যে অত্যাচার করে, তার তুলনা নাই।
লোকে শিক্ষার নামে কোমলমতি বালক-বালিকাঁদের অত্যাচারীর (কহরটর্ভ) মতো দণ্ড দেয়। প্রেমের অভাবেই এমন হয়! মনুষ্য সন্তানকে মনুষ্য আল্লাহর আর্শীবাদ মনে করে না–যেন বিপন্ন হয়েই পুত্র বলতে বাধ্য হয় ঘটনাক্রমে পিতা মনুষ্য দুর্ব্যবহারের দ্বারা নিজেদের জীবনে অনুতাপ প্রকাশ করে।
সন্তান আল্লাহর কাজ করবে, এই উদ্দেশ্যে পুত্র কামনা কর, তা হলে পুত্রের মুখ দেখে। যে আনন্দ হবে সে আনন্দ স্বর্গীয় হবে। পাপ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যে, নিজের দুরাশার ইন্ধনরূপে মানব সন্তানকে ব্যবহার করতে যেও না। শিশু ভূমিষ্ট হওয়া মাত্র বল, আল্লাহ আকবার আল্লাহ শ্রেষ্ঠ সত্যের জয়’–’প্রেম ও সত্যের জয়। মানব শিশুর জন্য ইহাই প্রথম মন্ত্র। সমস্ত জীবন তার সত্য প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হোক। জীবন তার মহত্বে-মানব কল্যাণে যাহা কিছু সুন্দর, পবিত্র, তাতেই উৎকৃষ্ট হোক। নিষ্ঠুর কঠিন মুখ শয়তানের। প্রেম ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা কখনও নিষ্ঠুর বাক্যে হবে না। হয়েছে বলে যা মনে হবে–তা হয় নাই। কঠিন ব্যবহারের রূঢ়তায় মানবাত্মার অধঃপতন হয়। সাফল্য কিছু লাভ হলেও আত্মা যে দরিদ্র হতে থাকে সুযোগ পেলেই সে আপন পশু স্বভাবের পরিচয় দেয়।
ইসলাম মানে শুধু উপাসনা নয়। বাইরে, রাস্তায়, ঘরে, বিপণীতে দিনের সমস্ত কাজে সে সর্বাঙ্গ সুন্দর হবে। যে পরিবারে কর্তা ছোটদের সঙ্গে কদর্য ব্যবহার করে, সে পরিবারের প্রত্যেকের স্বভাব অতিশয় মন্দ হতে থাকে। শিশুর জন্য এ একটা নিষ্ঠুর কথা, একটা মায়াহীন ব্যবহার–তার মনুষ্যত্বকে অনেকখানি করে কমাতে থাকে। অতএব শিশুকে নিষ্ঠুর কথা বলে, তার সঙ্গে প্রেমহীন ব্যবহার করে, তার সর্বনাশ করো না। একটা মধুর ব্যবহার অনেকখানি রক্তের মতো শিশুর মনুষ্যত্বকে সঞ্জীবিত করে। পরিবারের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক উন্নতির জন্যে সকলেরই চেষ্টা করা উচিত। ইহাই পরিবারের প্রতি প্রেম। নিজের সমস্ত কাজই চলেছে, কিন্তু পরিবারের লোকগুলি যে ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তার উদ্ধারের কোনো আয়োজন নেই। আত্মাকে জীবনের পথে আলোকের পথে নিতে হলে তাকে যা দিতে হবে–পরিবারের কল্যাণেচ্ছুদের ইহাই শ্রেষ্ঠ কাজ। শুধু বোধহীন আবৃত্তিতে আত্মা সচেতন, জাগ্রত, ব্যাকুল এবং সত্যের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে না। আল্লাহর কালাম অনুভব করা চাই, নইলে বিশেষ কোনো ফল হবে না।
অর্থ লোভে দিবারাত্র ছেলেদের দিয়ে বই মুখস্থ করান বড় কথা নহে–পরিবারের ছেলেদের ভিতর যাতে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়, তার চেষ্টা করা উচিত। পশু জাতীয় বড় লোক বা স্বার্থপর বা আত্মসুখ সর্বস্ব শিক্ষিত পণ্ডিত হয়ে লাভ কি? পরিবারের সবাই যাতে উদার হৃদয় সত্যবান মানুষ হয়ে ওঠে, তার চেষ্টা কর।
নির্ভরশীলদের বিশ্বাস কর, তাদের মনুষ্যত্বের আত্মমর্যাদাজ্ঞান জাগ্রত হবে। তাদের অবিশ্বাস করো না, তাদের আত্মমর্যাদাজ্ঞানে আঘাত দিও না, তাদের লজ্জা দিও না–তাদের মনের কোণে গোপনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ জাগবে। যদি বিশ্বাস করে প্রতারিত হও, তবুও বিশ্বাস কর।
ছোট হোক বড় হোক পরিবারের কাউকে কখনোও খারাপ কথায় আঘাত দিও না। এতে মানুষের মন অতিশয় ব্যথিত হয়; সে পীড়া দাতাকে ঘৃণা করে; মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাস ব্যতীত মানুষকে লাভ করা যায় না।
বিশ্বাস কর, অন্তর্নিহিত সুবুদ্ধির কাছে নিবেদন কর, ভক্তি, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করবে। পরিবারের প্রতি সহানুভূতিই পরিবারের প্রাণ। এই ভাবটি যাতে বেড়ে ওঠে, তার চেষ্টা চাই। যে পরিবারে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি নেই, সে পরিবারে কোনো উন্নতি সম্ভব নয়।
.
১২. প্রেম
খ্রিষ্টান ধর্ম আজ এত সমুজ্জ্বল হয়ে দেখা দিয়েছে ইসলাম ধর্মের প্রভাবের ফলে। আল্লাহর মঙ্গলবাণী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) বজ্রগম্ভীর কণ্ঠে প্রচার করেছিলেন, তারপর ইঞ্জিল কেতাবের দীপ্তি ইউরোপবাসীর চোখে সমুজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত হয়েছে।
আতুর, কয়েদি, পাগল, দাস, কুষ্ঠরোগীকে ইউরোপ কুকুরের মতো, বন্য পশুর মতো ঘৃণা করতো। পিসা (টে) শহরে জীবন্ত মানুষের শরীরে এনাটমি শিখবার জন্যে ডাক্তারেরা স্কালপোল (ছুরি) ব্যবহার করতো। মানুষের উপরে এই অত্যাচারের কাহিনী পড়ে আমরা ভীত হই। আত্মা ব্যাকুল হয়ে উঠে।
মানব জাতির জন্যে আর্শীবাদ হয়েই ইসলাম যথাসময়ে পৃথিবীতে এসে ছিল। ছোট নাই, বড় নাই, ধনী নাই, দরিদ্র নাই, পীড়িত, লাঞ্ছিত, দাস গোলাম, রোগী সবই ভাই’!৩
ইসলামে দান খেয়ালী বিষয় নহে; তা আল্লাহর অপরিহার্য আদেশ। জলেম ও জুলুম’কে ইসলাম আল্লাহর অভিশাপ দেয়–আন্তরিক ঘৃণা করে। মজলুম’কে সমস্ত ত্রাণ দিয়ে রক্ষা কর–এই তাঁর বাণী।
ইসলাম তস্করের হাত কাটতে, ব্যভিচারীকে পাথর মারতে বলেছে; কিন্তু সে ক্ষমার কথাও বলেছে। মুসলমান সাধু চোরকে রিক্ত হস্তে ফিরতে দেখে ব্যথিতচিত্তে আপন একমাত্র সম্বল কম্বলটি চোরের যাওয়ার পথে রেখে গিয়েছেন। সাধু ফকিরদের জীবন কাহিনী কত সুন্দর, জগতে কোথাও তার তুলনা নাই।
ইসলামে মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম–অপর জাতির প্রতি প্রেম নিন্মলিখিত সত্য ঘটনায় সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। প্রেমে আপন-পর নাই, জাতি-বিচার নাই। মিশরে এক। সময়ে একটি মসজিদ ভস্মীভূত হয়। কতকগুলি লোক সন্দেহ করল খ্রিস্টানদের এ কাজ। তারা সন্দেহ করে খ্রিস্টানদের ঘর জ্বালিয়ে দিল। খলিফা কিন্তু অপরাধীদের নিজের জাত বলে ক্ষমা করলেন না। বিচারক কতকগুলি কাগজে মৃত্যুদণ্ড, কতকগুলিতে বেত্রাঘাতের দণ্ড লিখে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে বললেন–”যার যেখানা ইচ্ছা তুলে নাও।” কোনো কাগজে কী শাস্তি লেখা আছে, তা তাদের জানতে দেওয়া হল না। খলিফার কঠিন শাস্তি অপরাধী মুসলমানদের গ্রহণ করতে হলো। খলিফার কঠিন শাস্তি লেখা আছে, তা তাদের জানতে দেওয়া হল না। খলিফার কঠিন শাস্তি অপরাধী মুসলমানদের গ্রহণ করতে হল। ইহাই ইসলামের কঠিন আদর্শ, ইহাই প্রেমের আদর্শ।
সেই অপরাধী জনসংঘের মাঝে দুই ব্যক্তি পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিল। তাদের একজনের ভাগ্যে ঘটেছিল মৃত্যুদণ্ড, অপরের বেত্রাঘাত। প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি বললেন–”আমার মরণের ভয় নাই, কিন্তু আমার নিঃসহায়া মা আছেন, তারই জন্য দুঃখ হচ্ছে। কে তাঁর সেবা করবে?” পাশের ব্যক্তি তার হাতে নিজের শাস্তি পত্রখানি দিয়ে বললে–”আমার মা নেই, আমার মরণে কারো ক্ষতি হবে না।”
যার মরণের কথা ছিল, সে মুক্তি পেল, যার বাচবার কথা ছিল আনন্দে মৃত্যুবরণ করলো।
এই লোকটির সংবাদ জগৎ রাখে নাই। কিন্তু তার জীবনে মহা আদর্শ মনুষ্যকে শিক্ষা দিয়েছে–প্রেম কাকে বলে।
অনেককাল আগে একবার আমি চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। গাড়ির মধ্যে একজন দুর্বলকায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোক এসে প্রবেশ করলো। গাড়িতে জায়গা ছিল অনেক। কয়েকজন কাবুলি উপাসনার ভান করে তাদের দীর্ঘ দেহ এবং উপাসনার আসন দিয়ে সমস্ত জায়গা জুড়ে রাখলো। আমি বিধর্মীকে দয়াপরবশ হয়ে একটু স্থান দিতে সবাইকে অনুরোধ করলাম। গাড়ির সবাই রেগে উঠলো। শেষকালে আমি অতি কষ্টে কোনোরকমে সেই ক্লান্ত অতিথিটিকে একটু স্থান দিলাম। আমার এই অন্যায় (?) ব্যবহারে কাবুলি ভাইরা এবং অন্যান্য সবাই চটে গেল। শেষরাত্রে দ্ৰিাকাতর হয়ে যেই একটু শোবার জন্য একটু কাৎ হয়েছি, অমনি কতকগুলি হাত আমার কান নিয়ে টানাটানি আরম্ভ করলো। কান যে মলে দেয় নাই, এটাই সৌভাগ্যের বিষয়। ইসলামের প্রতি আত্মার প্রেম লোকগুলি এভাবেই সার্থক করলো। বস্তুত এ ইসলামের কাজ নয়। ইসলামের প্রেমে জাতি বিচার নাই। সর্বত্রই সে ন্যায়নিষ্ঠ এবং মহাজন।
এমার্সন বলেছেন–”কোমল, পেলব ব্যাঙের ছাতাগুলি মৃদু আঘাতে কঠিন মাটির ছাপড়া ভেঙ্গে দেয়। কার কাজ কেমন শান্ত অথচ অব্যর্থ। প্রেম ও দয়া মান-চিত্তকে জয় করে। মনুষ্য হৃদয়কে আসন পাতবার, আকর্ষণ করবার, দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। হৃদয়হীন শাসনের ফল দ্রুত; কিন্তু ক্ষণস্থায়ী, প্রেমের শাসনই, চিরস্থায়ী।”
জন উলমান John Woolman) বলেছেন–”মানুষের আর্তনাদ আমাদের কানে পৌঁছে না। ব্যথা, পিতৃহীনের করুণ নয়ন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না! কত শত নয়ন পতিত হয়েছে, কত মুখ শোকদুঃখভারে বিবর্ণ হয়েছে, আমরা তা দেখি নাই। আমাদের হাসি, উল্লাস, উৎসব, গান থামে নাই। মানব-দুঃখ আমাদের জাগায় নাই। মানুষের পাপে আমাদের শরীর শিউরে ওঠে নাই।”
রোগীর কী যাতনা, তার দুঃখের দুঃসহ জ্বালা, সুস্থ মানুষ অনুভব করতে পারে না। দুঃখীর দুঃখ যিনি যতটুকু অনুভব করেন, তিনি তত বড় মানুষ। হাসি-খেলার দিনমান শেষ। হয়, কিন্তু যাতনাদগ্ধ নর-নারীর আর্তনাদ দিনের প্রতি মুহূর্তে কঠিন প্রতিধ্বনি জানাচ্ছে কে তা চিন্তা করে? কে ব্যথিতের বেদনার কথা ভেবে জীবনের সুখকে বিষাদ-মলিন করে। তুলবে? যে মুখ মানব-দুঃখে উদাসীন, সে মুখ পশুর, সে মুখ মানুষের যোগ্য নয়।
শীতকালে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্রের মাতা একখানি বস্ত্র গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন। তা দেখে ঈশ্বরচন্দ্র বললেন–”মা, আমি তো আপনাকে তুলা দিয়ে নরম লেপ তৈরি করে দিয়েছি, এই শীতে আপনি এই সামান্য বস্ত্রে রাত্রি কাটাবেন?”
মা বললেন–”বাবা, এই গ্রামের অনেক হতভাগিনী আছে, যাদের গায়ে দেবার বস্ত্র নেই, তাদের কথা চিন্তা করে আমি গায়ে গরম কাপড় দিতে পারছি না।” কী সুন্দর মহানুভবতা, কী স্বর্গীয় সহৃদয়তা–দরিদ্রের প্রতি তার আশ্চর্য প্রেম।
সুইডেনের রাজকুমারী ইউজীন পীড়িতের কথা চিন্তা করে তার সাধের রত্ন অলঙ্কারগুলি কণ্টক বলে বিবেচনা করেছিলেন। তিনি সেইগুলিকে বিক্রি করে দুঃখীদের জন্যে এক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। একদা হাসপাতাল পরিদর্শনকালে জনৈক রোগী তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “মা, আপনার এই হাসপাতালে আশ্রয় না পেলে আমি রাস্তায় প্রাণত্যাগ করতাম”। এই বলে লোকটি নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগল। রাজকুমারী তা দেখে বললেন, “এই অশ্রুধারাই আমার শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার, আজ আমি মুক্তার হার ধারণ করলাম।”
আমরা কি সত্যই উন্নতির পথে চলেছি? –তা হলে দেখতে হবে, আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হচ্ছে কিনা। সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সভ্যতা, সকল ধার্মিকতার প্রাণ-প্রেম। প্রেম ব্যতীত জাতির সাধনা ব্যর্থ। প্রেম মনুষ্যত্বকে ত্যাগী করে, তাকে দুঃখ বরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষের এবং জাতির জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। প্রেম কখনও মানুষকে অবিবেচক, নিষ্ঠুর, আত্মসর্বস্ব, অবিনয়ী, পরস্বার্থহারী, দাম্ভিক করে না।
দেখতে হবে, আমরা দেশের মানুষকে ভালোবাসি কিনা। দেশের মানুষের জন্যে ত্যাগ স্বীকার করতে শিখেছি কিনা? তা হলে বুঝবো জাতির সত্যই উন্নতি শুরু হয়েছে।
আমরা কি প্রতিবেশীকে আঘাত করি?–আমরা কি কারও দাবি নষ্ট করি?–জাতির দুঃখে কি আমাদের কোনো সহানুভূতি নাই?–পরস্পরে কি আমরা মিথ্যা ব্যবহার করি? তা হলে বুঝবো কিছুই হয় নাই।
মনুষ্য যতই অপরাধ ও মূঢ় হোক না কেন, তাকে আঘাত করে মানুষের মনে যখন। আনন্দ হয়, তখন বুঝতে হবে, শয়তান আত্মতৃপ্তি লাভ করেছে। সে আঘাত মানুষের নয়। মনুষ্যকে শাস্তি দাও–আঘাত কর কর্তব্যের খাতিরে–পশুর আনন্দ নয়।
.
১৩. সেবা
যে দুঃখী পীড়িতের ব্যথা মর্মে অনুভব করে সেবার কাজে আত্মদান করে, সে মানুষের গৌরব। কোনো কোনো ভ্রাতা বলে থাকেন, “খ্রিস্টান ও হিন্দুরা সেবার দ্বারা মানুষের চিত্ত জয় করে, তাদের প্রতারণা-জাল থেকে সাবধান।”
সেবা ও প্রেমকে অশ্রদ্ধা করা মুমিনের কাজ নয়। যারা সেবা-ধর্মে নিজেদের জীবনকে ধন্য করেছে, তারা বিধর্মী হলেও উদার মুসলমান শ্রদ্ধা করেছে, ভালোবেসেছে।
বিধর্মী ম্রাট নওশেরোয়া বিচার ও ন্যায়নিষ্ঠায় চিরদিন মুসলমানদের শ্রদ্ধা-পুস্পাঞ্জলি পেয়েছেন। যিনি প্রেমিক এবং সেবক, তিনি ন্যায়-বিচারক ও দুঃখীর বন্ধু।
যখন বিধর্মী তায়ী সম্প্রদায় বন্দি হয়ে হযরতের সম্মুখে নীত হল, তখন বন্দিদের মধ্য হতে একজন মহিলা বললেন–”মহানুভব, আমি হাতেমের বংশধর।” হযরত বললেন”এদের মুক্ত করে দাও। বিধর্মী হলেও সেবাধর্মে হাতেম আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন। তার কন্যাকে আঘাত করা হবে না, সবাইকে মুক্ত কর।”
হযরত মহিউদ্দীন জিলানী যখন সামান্য ছাত্র, তখন একদিন রাস্তার ধারে পতিত এক পীড়িতকে বুকে করে আপন শয্যায় আশ্রয় দিলেন। তার সেবায় রোগীর রোগমুক্ত হল। সে মহিউদ্দীনকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলো। সেইদিন রাত্রে তিনি স্বপ্নে শুনলেন–”তোমার জীবনের এই প্রেম সার্থক হবে। মানব-কল্যাণের সাধনায় তোমার জীবন ধন্য হবে। আল্লাহ তোমায় মহৎ স্থান দান করেছেন।”
সৈনিক সবুক্তগীন যেদিন হরিণ-মাতার মুখের দিকে চেয়ে করুণা বিগলিত চিত্তে মৃগ শিশুকে ছেড়ে দিলেন, সেইদিন আল্লাহ তাঁকে লোকপালনভার দিয়ে তাঁর প্রেমকে পুরস্কৃত করলেন। প্রেমের পুরস্কার হবেই প্রেমে আল্লাহর আরশ জোরে নড়ে। প্রেম, দয়া ও সেবা ইসলামের অঙ্গ। দুঃখীর জন্য দান (জাকাত) ইসলামে অপরিহার্য বিধান। ইসলামের জাকাতের টাকা থেকে অনেক হাসপাতাল, অনেক সেবা-সঙ্গ চলতে পারে।
জল-প্লাবনে, রোগে, দুর্ভিক্ষে বিভিন্ন দেশে সেবা-সঙ্গের ভিতর দিয়ে মানুষ অর্থ ও অন্নবস্ত্র দান করেছে–যারা জীবন দিয়ে তার সেবা করেছেন, সেবার দুঃখ সয়েছেন–তারা প্রেমিক। মানুষের শ্রদ্ধা সংবাদপত্রের নাম তাঁরা চান নি; বিবেক, মনুষ্যত্ব ও আত্মার ধর্মকে তারা সার্থক করেছেন জগৎ এদের পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে। এদের প্রেম ও অশ্রুর মূল্য রাজার রাজতখতও নয়। মানুষের দুঃখে অশ্রু যারা ফেলেছেন, মানব দুঃখের জন্য যারা সেবাকার্যে অগ্রসর হয়েছেন, তাঁরা আল্লাহর আর্শীবাদ পেয়েছেন। জীবন শেষ হবেই কিন্তু ধন্য হবার এই-ই পথ।
পণ্ডিত হয়ে লাভ কী, যদি না প্রেমে পাণ্ডিত্যকে সার্থক করি? বড়লোক হয়ে লাভ কী, যদি না আপন বিত্ত মহিমা প্রেমে সার্থক করি? অফুরন্ত উপাসনায় আল্লাহর কী প্রয়োজন, যদি না উপাসনা প্রেমে সার্থক হয়। বস্তুত প্রেমহীন জীবন, জ্ঞান এবং ধার্মিকতা কিছু নয়। মানবের সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত সাধনা প্রেম-সাধনায় সার্থক হয়।
পর সেবায় আমরা অনেকে হয়তো জীবন দান করতে পারি কিন্তু যারা আপন প্রাণ সেবার কার্যে উৎসর্গ করেছেন–অর্থ দিয়ে তাদের কাজে সাহায্য কি আমরা করতে পারি না? পীড়িতের জন্যে সাহায্য কিছু দান করাও কি কষ্টকর হবে? কে ব্যাধি দেখে নির্ভয়ে চলেছে? কে শঙ্কা, সন্দেহ, মরণকে উপহাস করে আল্লাহ্ বলে ছুটছে? মুসলিম। কার প্রাণে ভয় নাই? সে মুসলমান। মরণাপন্ন পীড়িতের শয্যাপার্শ্বে মুসলিম যুবককে দেখি না কেন? বিপদ ও মরণ-বিজয়ী মুসলিম তোমাকে তো কোনোদিন কাপুরুষ দেখি নাই? পরকালের পুরস্কারের আশায় হে বিশ্বাসী! তোমাকে দেখেছি তোমার মহাযাত্রাকে সার্থক করতে। মৃত্যুকে তুমি কি ভয় কর? প্রেম ও ত্যাগই যে জীবন।
প্রায় তিন শত বৎসর পূর্বে মীলানে (Milan) প্লেগের আবির্ভাব হয়। প্লেগ অতিশয় ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধি। মনুষ্য প্লেগের ভয়ে দিশাহারা হয়ে পলায়ন করে। অনাহারে, বিনা চিকিৎসায়, মানুষ পথে পড়ে মরে। আত্মীয় আত্মীয়কে ত্যাগ করে, বন্ধু বন্ধুকে ফলে যায়। এই পাপপূর্ণ দুঃখের সংসারে অনেক মানব দেবতাও বাস করেন। তাঁদের স্পর্শ কী শক্তিপূর্ণ। তাদের বাক্য কী প্রেম-মধুর। আল্লাহর ছায়ারূপে পৃথিবীর দুঃখ-দগ্ধ মানবসন্তানকে সান্ত্বনা দিয়ে তারা সংসারকে মধুর করেন।
মীলানে ভয়াবহ প্লেগ আরম্ভ হয়েছে, বরোমী (Barromes) নামে এক জন সাধু বললেন—”আমাকে এইখানে যেতে হবে।” বন্ধুরা শঙ্কিত হয়ে বললেন, “আপনি কি প্রাণ দিতে যাচ্ছেন? আপনি কি মরণকে ভয় করেন না?” বরোমী বললেন–”আমার জীবনের চাইতে দুঃখীর ব্যথার মূল্য বেশি। আমাকে যেতেই হবে। সাধু ও মারফতপন্থী বুজর্গ বললে আমরা বুঝি তিনি দিবারাত্র ঘরের মধ্যে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন। দোয়া পড়ে রোগীকে রোগমুক্ত করেন। বুজর্গের ইহাই ভাব নয়। ইহা ধর্মহীন লোকের চালাকি। বুজর্গ ও সাধুর প্রধান ধর্ম সেবা, প্রেম এবং ত্যাগ, দুঃখীর প্রতি অফুরন্ত সহানুভূতি, জীবন দিয়ে সয়ে আল্লাহর এবাদত করা; আরামে কম্বলের মধ্যে বসে পরের পয়সায় উদরপুষ্ট করা নয়। সাধু মৃত্যুকে ভয় করেন না–তিনি ফুঁ দিয়ে কাজ করেন না। তিনি পীড়িতের মধ্যে যান, দরিদ্রের সেবা করেন, দুঃখীদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন এবং হযরত মোহাম্মদের ন্যায় আপন হস্তে মলমূত্র পরিষ্কার করেন। সেবক শুধু দরূদ পড়েন না, সেবাকার্যের প্রয়োজন হলে প্রাণ দেন। সেবায় তাঁর কোনো অহঙ্কার নাই।
মীলান শহরের প্লেগ চার মাস কাল থাকে। সাধু বরোমী ঔষুধ ও পথ্য হস্তে সর্বত্র যেতেন, দুঃখীর সংবাদ নিতেন, ওষুধ বিতরণ করতেন। রাত্রিকালে দুঃখীর জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন, মরণোন্মুখ রোগীর পার্শ্বে বসে বন্ধুর মতো, মায়ের মতো তাকে আল্লাহর অনন্ত প্রেমের কথা শুনাতেন। এই সাধু সেবা ও প্রেমকে অনুসরণ করে আরও অনেক গুণমুগ্ধ ব্যক্তি তাকে অনুসরণ করলেন এবং যতদিন না ব্যাধি সম্পূর্ণভাবে শেষ হল, তাবৎ তারা ভয়ে সেবার ক্ষেত্র ত্যাগ করলেন না।
বরোমী কিছুদিন পর দেখলেন, তাঁর নগরের নৈতিক অধঃপতন, অপবিত্র পাপীজীবন; মনুষ্য পশুর মতো পাপাচারে উল্লাস করে, অভিশপ্ত, ঘৃণিত, জীবনের গৌরবে মত্ত থাকে। তিনি সর্বত্র লোক শিক্ষার জন্যে প্রাইমারি স্কুল স্থাপন করতে লাগলেন, সাধারণের মাঝে প্রচার করতে লাগলেন। এর ফল কী হল, সাধু নামধারী কতকগুলি ভণ্ড বললেন,–বরোমী কাফের। একে খুন করো। যে কথা সেই কাজ। বলরামী একদিন যখন ইতর লোকদের মাঝে আল্লাহর বাণী প্রচার করছিলেন, সেই সময় এক ভাড়াটে নরহন্তা তাকে লক্ষ্য করে। গুলী ছোঁড়ে। ভক্তের প্রতি আল্লাহর কী দয়া। তিনি আপন ভক্তকে, সাগরবক্ষ; অগ্নিসমুদ্র, ঝড়ঝঞ্ঝা হতে আশ্চর্যভাবে রক্ষা করেন। গুলী বলরামীর বস্ত্র ভেদ করে তার শরীরে প্রবেশ করতে পারল না। তিনি হাস্যমুখে তার শত্রুদের আশীর্বাদ করলেন, তাদের জন্যে আল্লাহর দয়া ভিক্ষা করলেন। এই কাজ,–এই সেবা এবং সাহস, আর এই অপরিসীম প্রেম ও শত্রুর প্রতি স্নেহভাবই সাধু জীবনের পুণ্য সত্য চিত্র এবং সে চিত্র স্বর্গীয়, মহৎ, পবিত্র পাপীর পথ-প্রদর্শক। চন্দ্রে কলঙ্ক আছে, এ স্বর্গীয় চিত্তে কলঙ্ক নাই।
.
১৪. এবাদত
মানব-জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ এ যাবৎ যত প্রকার বিশ্লেষণ করেছে, তার মধ্যে মানুষ সর্বতোভাবে নিজেকে খোদার এবাদতে নিযুক্ত করবে, ইহাই মানব-জীবনের মূল উদ্দেশ্য। খোদা বলেছেন, “নিশ্চয়, আমি জ্বীন ও মানবকে কেবলমাত্র আমার এবাতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছি।” মানুষ খোদার এই এবাদতের অর্থ বুঝতে অনেক সময় ভুল করেছে, যতদিন কোনো মানব খোদার এই এবাদতের অর্থ ঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করতেন না পারে, ততদিন তার জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণতায় পরিণত হবে না। এবাদতের অর্থ ঠিক বুঝতে না পেরে কেহ-বা ধর্মের কতিপয় বিধির ব্যবস্থাকে মৌখিক স্বীকার করে নেওয়াকে এবাদতের সারমর্ম মনে করেছে। কোরান শরীফে এবাদতের বিশদ ব্যাখ্যা না থাকলেও যে বর্ণনা দেওয়া আছে তাতেই এবাদতের অর্থ স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। কোরানের এই আলোকের সাহায্যে মানুষকে এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, এবং সেইভাবে জীবনের উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে, তা নাহলে এ সুন্দর মানব-জীবন বিফলে যাবে। এ জীবন-যৌবন একবার গেলে আর ফিরে আসবে না। যে দিন বিতাড়িত শয়তান খোদাকে বলেছিল, “নিশ্চয় তুমি খুব কম লোকই দেখতে পাবে, তোমার প্রশংসাকারী, যেহেতু তাদের বেশিরভাগকেই আমি পথভ্রষ্ট করতে থাকবো।” শয়তানের কথায় উত্তরে খোদা জোর দিয়েই বলেছিলেন, “আমার আবেদের উপর তোমার কোনোই আধিপত্য চলবে না।” (সুরা হিজর, আঃ ৪২)। আরবিতে এবাদতকারীকেই আবেদ (সেবক) বলা হয়। তাই এর দ্বারা এই প্রমাণিত হচ্ছে যে, খোদার এবাদতই মানব জীবনের প্রকৃত পথ। যে পথের উপর দণ্ডায়মান থাকলে শয়তান ভয়ে কম্পিত হবে, হতাশায় দূরে সরে যাবে। আবার অন্য স্থানে খোদা তার আবেদের সম্বন্ধে বলেছেন, “এবং তাহারই সেই রহমানের আবেদ (সেবকবৃন্দ) যাহারা পৃথিবীর উপর বিনীতভাবে চলাফেরা। করে এবং যখন সাধারণ অজ্ঞ লোকেরা তাহাদিগকে সম্বোধন করে, তখন তাহারা বলে–শান্তি এবং তাহারা স্বীয় প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সেজদায়ও দাঁড়ান অবস্থায় অতিবাহিত করে এবং তাহারাই বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের হইতে দোজখের শাস্তি নিবারণ কর। নিশ্চয় উহার শাস্তি অনিবার্য। নিশ্চয় উহা নিকৃষ্টতর বিশ্রামাগার ও বাসস্থান এবং যখন তাহারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় অথবা কার্পণ্য করে না এবং উহার অন্তর্গত মধ্যপথ অবলম্বন করে। তাহারা আল্লাহর সহিত অন্য উপাস্য গ্রহণ করে না, ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যতীত এইরূপ করে, সে পাপের প্রতিফল পাবে। উত্থান দিবসে তাহার জন্য শাস্তি দ্বিগুণ হইবে এবং তম্মধ্যে সে ঘৃণিত অবস্থায় পড়িয়া থাকিবে কিন্তু যে অনুতাপ করে ও বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকার্য করে, তবে আল্লাহ্ উহাদের অকল্যাণ কল্যাণে পরিবর্তন করিয়ে দেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়, যে অনুতাপ করে ও সৎকার্য করে, তবে নিশ্চয় সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবতিত হয়।
এবং যাহারা মিথ্যা বহন করে না এবং যখন অসত্যের নিকট দিয়া অতিক্রম করে তখন ভাবেই অতিক্রম করিয়া থাকে।
“যখন তাহাদিগকে তাহাদের নির্দেশনাবলী হৃদয়সঙ্গ করান হয়, তখন উহারা বধির ও অন্ধভাবে তাহাকে গ্রহণ করে না।” (সূরা ফোরকান, আঃ ৬৩-৭৩)।
কোরান মজিদের উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা শুধু তসবীহ ও সেজদার মধ্যে আবেদের এবাদতকে সীমাবদ্ধ করা হয় না। বরং বিশেষভাবে ৭২ নম্বর আয়াতের দ্বারা স্পষ্ট প্রতিপন্ন হচ্ছে যে, মানুষের মুখের দ্বারা যে কথাই উচ্চারণ হউক না কেন, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা
যে কাজই সম্পন্ন হউক না কেন, এবং তার মস্তিষ্কের দ্বারা সে যাহাই চিন্তা করুক না কেন, তাতে অন্যায়ের লেশ থাকবে না, এমনকি তাতে অন্যায়ের গন্ধও থাকবে না। যদি সে খোদার প্রকৃত আবেদ বলে নিজেকে পরিচয় দিতে চায়–যদি সে তা মানব-জীবনকে ধন্য করতে চায়। তাই বলে শুধু লেবাস, আবৃত্তি তসবিহ ও সামাজিক অনুন কোনো কাজ হবে না। মানব জীবনের উদ্দেশ্য খোদার দেওয়া জীবন ব্যবস্থা (দীন)-কে পূর্ণভাবে পালন। করে খোদার প্রকৃত আবেদ হওয়া–শয়তানের গোলাম হওয়া নহে।
আর এই জন্যেই খোদা আবার বলেছেন, (বল, আমরা গ্রহণ করিয়াছি। খোদার রং এবং রং-এ আল্লাহর চেয়ে ভালো কে আছে। এবং খোদার এবাদতকারী।