পরিবাগাসন
এইরকম একবার করে দেখালে হয়। পরিবারের সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়ে গেল, রোজ যেমন হয়।
তারপর? প্রতিশোদ নেওয়ার জন্য শোওয়ার ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিলাম, ঠিক সূর্যোদয়ের আগে গলায় দড়ি না দিয়ে, পায়ে দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়লাম। তারপর কী হল! দুমদাম দরজায় ধাক্কা। বাইরে হইচই। দরজা খুলছে না কেন? ধাক্কা মার, ধাক্কা। ধাক্কার পর ধাক্কা।
অবশেষে দরজা ভেঙে পড়ে গেল।
প্রথমে সব কলরব বন্ধ। সবাই একটু থমকে যাবেন। চোখের সামনে ঝুলছে জ্বলজ্যান্ত লাশ। প্রথমেই হাঁউমাঁউ করে উঠবেন আমার পরিবার।
‘ও গো! তুমি এ কি করলে গো! আমার সর্বনাশ করে চলে গেলে গো। তুমি ছাড়া আমাকে দেখার আর কে আছে গো।’
জ্বলজ্যান্ত ঝুলছি আমি। কারোরই লক্ষ্য হচ্ছে না—কী ভাবে ঝুলছে। সবাই তো শোকার্ত। গলায় দড়ি দিয়েছে। পরিবারের অত্যাচার। ঘর খালি। সব জটলা বাইরে, দূরে। গলায় দড়ি দেওয়া লাশকে মানুষ ভয় পায়! ভূত ভেবে।
পুলিশ এসে গেল। অফিসার ঘরে ঢুকবেন। সঙ্গে দু-তিনজন। তাঁর আর দু:খ কীসের! এমন কত কেসই তিনি হান্ডল করেন! তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পড়াং পড়াং প্রশ্ন।
হঠাৎ তাঁর খেয়াল হল। সামান্য সন্দেহ। সহকারীকে জিগ্যেস করলেন, ‘অ্যায়! গলায় দড়ি কোনখানে দেয় রে?’
‘কেন স্যার, গলায় দড়ি যখন, গলাতেই দেবে।’
‘অ্যায়! এর মাথা তো নীচের দিকে। এ তো পায়ে দড়ি দিয়েছে।’
আমার কাছাকাছি এসে মুখের দিকে তাকালেন ড্যাবাড্যাবা চোখে। আমিও তাকিয়ে। চোখ পিটপিট করছি। ফিসফিস করে জিগ্যেস করলুম, ‘কেমন আছেন স্যার।’
‘নামা নামা। খুলে নামা।’ আমাকে নামানো হল। আত্মহত্যার চেষ্টা করা অপরাধ। অফিসার কিন্তু আমার কিছুই করতে পারলেন না!’
কারণ, আমি তো সাধনা করছিলুম।
সেকালে কোনও-কোনও ঋষি গাছের ডালে এইভাবে ঝুলে থাকতেন।
সেকালে বলত সাধনা। একালে, আমরা বলব, পরিবারকে বাগে আনার—পরিবাগাসন।