পরিণতি – মৃন্ময় চ্যাটার্জী
তখন দুপুরবেলা, নিজের ঘরে বসে একা আনমনে কি যেন এক গভীর চিন্তা করছিল পল্টু…..হঠাৎ দুম করে বাইরে বেরিয়ে এসে, “মাআআআ ও মা” বলে ডাক দিল সে। যেন এক বিশাল অনুসন্ধিৎসা তার মনে জাগরিত হয়েছে। সে অতি উৎসুক কণ্ঠে মা কে জিজ্ঞাসা করলো, “মা তুমি ভুত দেখেছো?”….
শালিনী দেবী অর্থাৎ পল্টুর মা, দুপুরের অসহ্য গরমের মধ্যে রান্না ঘরে রান্না করছিলেন। একে গরম তার উপর জ্বলন্ত গ্যাস ওভেনের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে এমনিতেই হাঁসফাঁস অবস্থা তার। এর উপর ছেলের উদঘট প্রশ্নবাণে বিরক্ত হয়ে বললেন, “পৃথিবীর সবথেকে বড় ভুত তো এই বাড়িতেই আছে, রোজ দেখছি তো তাকে….”। মায়ের এরকম উত্তর শুনে পল্টুর বুঝতে আর বাকি রইলনা যে মা কতটা রেগে আছে। তাই নিঃশব্দে গুটি গুটি পায়ে সে পুনরায় সস্থানে গমন করলো।
পল্টু ছোট্ট পুচকে এখন। ক্লাস 3 তে পরে। পল্টুর মা শালিনী দেবী নিপাট গৃহবধূ। পল্টুর বাবা, সৈকত চ্যাটার্জী এক বড় সরকারি আমলা। বদলির চাকরি হওয়ার কারণে সৈকত বাবু কে বহু জায়গাতেই যেতে হয়। পল্টুর তিন বছর বয়সে তিনি বদলি হয়ে এসেছিলেন মালদা জেলায়। সৈকত বাবুর কাজের চাপ বেশি হওয়ায় পল্টু বাবা কে সেভাবে না পেলেও মা তার কাছে সবকিছু। তার যত প্রশ্ন, যত জিজ্ঞাসা সব মায়ের কাছে। বকা যতই খাক না কেন প্রশ্ন শেষ হয়না ওর। শালিনী দেবীও পল্টু অন্ত প্রাণ, কিন্তু ওই যে ওর নিরন্তর প্রশ্নবাণের জবাব দিতে ক্রমাগত বিধ্বস্ত হতে হয় তাকে। তবুও দিনশেষে পল্টুই তার সব, তার নয়নের মণি। পল্টু ডাক নাম হলেও ওর একটা বেশ সুন্দর মিষ্টি পোশাকি নাম আছে….. অগ্নিশ্বর চ্যাটার্জী।
ছোট্ট পল্টুর একটাই স্বপ্ন ভুত দেখবে সে। কিভাবে দেখা যাবে, কেমন দেখতে হয় ওদের এসব নিয়ে ওর উৎসুকতার অন্ত নেই। কোনো এক সময় দিদুন এর কাছে সে ভুত এর গল্প শোনে। তখনই দিদুন কে সে জিজ্ঞাসা করে…. “আচ্ছা দিদুন ভুত কেমন হয়…ওরা দেখা দেয় সবাইকে?”। ছোট্ট পল্টুর প্রশ্নের উত্তরে হাঁসিমুখে তার দিদুন বলে, “না সোনা, ভুতেরা সবসময় সবাই কে দেখা দেয় না, ভাগ্যে থাকলে তবেই দেখা যায় তেনাদের”। পল্টু তার শিশুসুলভ সরল মনে পুনরায় প্রশ্ন করে, “আমাকে দেখা দেবে? আমি দেখতে পাবো ওদের? আমার ভাগ্যে আছে ওদের দেখা পাওয়া?”। দিদুন একগাল হাঁসি নিয়ে বলে, “তেনাদের ইচ্ছা হলে নিশ্চই দেখা দেবে”। এর পর থেকেই ভুত নিয়ে, তাদের দেখা পাওয়া নিয়ে খুব উৎসুকতা পল্টুর।
ছোট্ট পল্টু পড়াশোনার সাথে সাথে ভুতের চিন্তা নিয়েই বড় হতে থাকে একটু একটু করে। ঠাকুমার ঝুলি, চাঁদের বুড়ি আরও বিভিন্ন কার্টুন গল্প সমগ্র
টিভি দেখে জানতে থাকে সে। একদিন সে টিভিতে এক শাঁকচূন্নী আর তান্ত্রিকের গল্প দেখছিল। হঠাৎ তান্ত্রিকের একটা মন্ত্র তার খুব ভালো লেগে গেলো। সে ভাবলো এই মন্ত্র লিখে রাখলে ভালোই হবে, ভুত বা পেত্নী এলে বেশি ভয় যদি পাই তখন এই মন্ত্র বলে ওদের তাড়িয়ে দেওয়া যাবে। শিশু মনে কখন যে কি ইচ্ছা জাগরিত হয় সেটা কেই বা বুঝতে পারে। সে পেন খাতা নিয়ে মন্ত্র লিখতে লাগলো……তান্ত্রিক বলে আর পল্টু লেখে। মন্ত্রটা হলো এইরকম – “লাং ডুম ডাং, কিরিমিরি করাৎ। ভুত পেত্নী শাঁকচূন্নীর ঘাড় মটকে দেব মরাৎ।”
“ফুরুং ফারাং ফস, ভুত পেত্নী দত্তি দানব সবাই আমার বশ।”
“হলুদ পোড়া সরষে, মারবো ঝাঁটা জোরসে।”
পল্টু যেন এবার আরও বেশি সাহসী হয়ে উঠেছে, সে ভুত তাড়ানোর মন্ত্রও শিখে নিয়েছে আজ। মা কে সে বললো, “মা আমি ভুত তাড়ানোর মন্ত্র শিখে নিয়েছি, তোমার আর ভয় নেই”। ছেলের কথা শুনে হাঁসতে থাকে শালিনী দেবী।
দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর অতিক্রান্ত। আদরের ছোট্ট সেই পল্টু আজ অগ্নিশ্বর চ্যাটার্জী হয়ে উঠেছে। এক সুপুরুষ সুদর্শন যুবক। সে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সাইকোলজি নিয়ে স্নাতক। অনেক বন্ধুবান্ধব তার। পল্টুর অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব এবং বিনয়ী স্বভাবের কারণে সে সবার খুব প্রিয়।
কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করার সুবাদে সে এখন অনেক আধুনিক মনস্ক হয়ে উঠলেও তার ছোট্ট বেলার সেই সরল মনের ভৌতিক অনুসন্ধানে কোনো ভাটা পড়েনি আজও।
তার প্রিয় বন্ধু সাগ্নিক। সে জলপাইগুড়ির এক ছোট্ট গ্রামের থেকে কলকাতায় পড়তে আসে, সেখানেই আলাপ দুজনের। সাগ্নিক কিন্তু পল্টুর ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। তবুও দুজনে দুজনের প্রাণ। বিজ্ঞানের ভাষায় বলে না, যে চুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে….অনেকটা ঠিক সেরকম। পল্টু যতটা ভূতান্বেষী স্বভাবের, সাগ্নিক ততটাই ভুতের অস্তিত্বকে পদে পদে নস্যাৎ করে। পল্টুর খারাপ লাগে, তবুও কিছু বলেনা সে সাগ্নিককে। ভুতের ব্যাপার টা এড়িয়ে চলে সাগ্নিকের থেকে।
একবার বর্ষার সময় হঠাৎ করে সাগ্নিক পল্টুকে তার বাড়ি অর্থাৎ জলপাইগুড়ি যেতে অনুরোধ করলো। পরীক্ষাও শেষ তার উপর এরকম বর্ষায় জলপাইগুড়ির গাছপালায় ভরা প্রাকৃতিক দৃশ্য, চা বাগান এবং সর্বোপরি গরুমারা অভয়ারণ্য দেখার নির্ভেজাল আনন্দের লোভ পল্টু ছাড়তে রাজি ছিল না। তাই এককথায় রাজিও হয়ে গেল সে।
হাওড়া থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস এ চেপে বসলো ওরা দুজনে। রাত্রের খাবার খেয়ে নিয়েছিল ওরা।
কিন্তু রাস্তায় খাবে বলে কিছু স্ন্যাকস আর জলের বোতল নিয়ে নেয়। ট্রেন হাওড়া ছেড়ে বেরিয়ে গেলে পল্টু বলে, “তুই এত সুন্দর প্রপোজাল দিয়ে যে কি আনন্দ দিলি না আমাকে, বলে বোঝাতে পারব না রে”। সাগ্নিক বলে, “চল তো আগে, তোর সব ইচ্ছা পূরণ করবো”। পল্টু সাগ্নিক কে বলে, “সব ইচ্ছা মানে?”। সাগ্নিক বলে, “গেলেই জানতে পারবি”। কথাটা বলার সাথে সাথেই সাগ্নিকের চোখে যেন একটা কপট হাঁসি খেলে গেল। পল্টু আর কথা না বাড়িয়ে জানলার পাশে নিচের বার্থ এ বসে থাকলো, আর সাগ্নিক উপরের বার্থ এ উঠে শুয়ে পড়লো। জানলার ধারে বসে ফুরফুরে হওয়া খেতে খেতে কখন যেন পল্টুও ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন এলে ওরা নেমে পড়লো। ওখান থেকে একটা টাটা সুমো ভাড়া করে ওরা দুজন সাগ্নিকের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো। সাগ্নিকের বাড়ি পৌঁছতে প্রায় সকাল ১০.৩০ বেজে গেল। বাড়িতে পৌঁছেই ওরা দুজনে ভালো ভাবে স্নান করে নিলো। সারা রাত্রি ট্রেন ভ্রমণের ধকল অনেকটা লাঘব হলো ঠান্ডা জলে স্নান করে। এর পর দুপুরের খাবার খেয়ে দুজনে টানা একটা ঘুম দিলো। যখন ঘুম থেকে উঠলো দুজনে তখন বৈকাল ৫টা। সেদিনটা সাগ্নিক দের গ্রাম পায়ে হেঁটে সাগ্নিকের সাথেই ঘুরে দেখলো পল্টু। খুব সুন্দর সবুজে মোড়া নির্মল প্রকৃতির কোলে একখানা ছোট্ট গ্রাম। কত গাছপালা, কত মাটির বাড়ি, মাঝে মধ্যে কিছু পাকা বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা এক অজানা আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠলো পল্টুর। এসব তো আর কলকাতায় নেই। শুধু কংক্রিটের জঙ্গল সেখানে।
পরের দিন গরুমারা অভয়ারণ্য দেখাতে পল্টুকে নিয়ে গেল সাগ্নিক। পল্টু সেখানে চিতা বাঘ, বাইসন, ময়ূর অনেক কিছু দেখলো। অনেকটা সময় তারা ওই অভয়ারণ্যে কাটায়। তারপর সাগ্নিক পল্টুকে নিয়ে একটি চা বাগানে গেল। পল্টু দেখলো….চা বাগানের ঢালু জমি যেন উঁচু থেকে নিচু হয়ে নেমে গেছে, চা গাছ গুলো ওই ঢালু জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। “কি অপরূপ সৌন্দর্য্য” বলে ওঠে পল্টু। সাগ্নিক বললো, “এতদিন তো ছবিতে, টিভিতে চা বাগান দেখেছিস এবার সচক্ষে দেখ”। পল্টু অপলক দৃষ্টিতে প্রকৃতির সবুজ সৌন্দর্য যেন প্রাণ ভরে উপভোগ করতে থাকে। তার মনে হলো, এখানেই থেকে যাবে সে….. আর ফিরবে না। এমন সময় সাগ্নিক বলে ওঠে, “অনেক্ষণ হলো রে, এবার চল বাড়ি ফিরতে হবে”। পল্টুর স্থির চিত্তে সাগ্নিকের কথা যেন অতর্কিতে আঘাত করলো। পল্টু বলে ওঠে,
“ও হ্যাঁ চল চল”। দুজনে ফিরে আসলো সেদিনের মতো।
রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পর বাড়ির দাওয়ায় বসে বসে গল্প করছিল দুজনে। এমন সময় সাগ্নিক বলে ওঠলো, “ভুত দেখতে চাস?”….হঠাৎ সাগ্নিকের মুখে এরকম কথা শুনে প্রথমটায় ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও উৎসুক কণ্ঠে পল্টু বলে উঠলো, “কে দেখাবে তুই?”। সাগ্নিক হালকা হাঁসি ঠোঁটের কোণে এনে বললো, “হুম হুম”। পল্টুর সারা শরীর যেন রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠলো ছেলেবেলার স্বপ্ন পূরণের আশায়। তবুও সাগ্নিকের মতো ভুত অবিশ্বাসী ছেলের হঠাৎ তাকে ভুত দেখানোর কথায় কেমন একটা খটকাও লাগলো পল্টুর মনে। তবুও এতদিনের স্বপ্ন পূরণ যদি সাগ্নিকের দ্বারাই সম্ভব হয় তাতে ক্ষতি কি? হোক না ও অবিশ্বাসী, আমার ভুত দেখা নিয়ে তো কথা…ভাবতে থাকে পল্টু। “কবে দেখাবি, কিভাবেই বা দেখাবি?” প্রশ্ন করলো পল্টু। সাগ্নিক উত্তর দিলো, “কাল অমাবস্যা, কালই দেখাবো। কিভাবে সেটা সময়ে জানতে পারবি”। পল্টু আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
পরের দিন সকালে সাগ্নিক বাইরে যাবার আগে পল্টু কে বলে গেল, “তোর ইছাপুরণের ব্যাবস্থা করতে চললাম। তুই ততক্ষণ আমার ভাইয়ের সাথে গল্প কর।” সাগ্নিকের ভাই, নাম তার দেবদত্ত। ভালোবেসে দেবু বলে ডাকে সবাই ওকে। ও এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শরীরচর্চা ওর শখ। সুঠাম শক্তিশালী শরীরের অধিকারী সে। খুব ভালো ফুটবলও খেলে। যাইহোক সাগ্নিক ফেরার আগে ওর ভাইয়ের সাথে খুব ভালো একটা সময় কাটালো পল্টু। পল্টুর কেমন একটা মায়া পরে গেল সাগ্নিকের ভাইয়ের প্রতি, খুব ভালো ছেলেটা।
দুপুর ঠিক ১২টায় ফিরে এলো সাগ্নিক। এসেই বললো, “ব্যাবস্থা হয়ে গেছে”। সাগ্নিকের কথা শুনে পল্টু রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো ভুত দেখার উৎসুকতায়।
সন্ধ্যার সময় পল্টুকে নিয়ে সাগ্নিক বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। গ্রাম থেকে অনেক দূরে একটা ভাঙা বাড়ির নিকট পৌঁছলো তারা। তখন রাত্রি প্রায় ৮টা। অমাবস্যার নিকষ অন্ধকারের মধ্যে একটা আলোর ক্ষীণ জ্যোতি চোখে এলো পল্টুর। আলো টা ওই বাড়ির বাইরে জ্বলন্ত কোনো বস্তু থেকেই আসছিলো। অন্ধকারের আলোয় দূর থেকে বাড়িটিকে দেখে মনে হল, যেন এক বিভীষিকা তার অনিবার্য পরিণতির অপেক্ষায় অপেক্ষমান। ভূতান্বেষী পল্টুর বুকটা আজ কেমন যেন ছেঁৎ করে উঠলো প্রথমবারের জন্য। সে সাগ্নিককে বললো, “সত্যি কি ভুত আছে ওখানে, নাকি মজা করছিস?”। সাগ্নিক বললো, “কেন তুই ভয় পাচ্ছিস নাকি? তুই তো ভুত দেখতে চাইতিস, ভয় পেয়ে গেলি এর মধ্যে?”। পল্টু সাগ্নিকের এরকম শ্লেষপূর্ণ কথায় কিছুটা লজ্জিত বোধ করলো।
পল্টু বললো, “আরে ধুর ভয় কেন পাবো। তুই তো সবসময় এসব নিয়ে মজা করিস তাই বিশ্বাস হচ্ছে না”। সাগ্নিক বললো, “চল মজা সত্যি হবে আজ”।
পল্টু আর কিছু না বলে সাগ্নিকের পিছু পিছু চলতে থাকে। চলতে চলতে পল্টু লক্ষ্য করে আকাশ যেন এক ঘন মেঘে আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে।
ভাঙা বাড়িতে পৌঁছে তারা দেখলো কয়েকজন মাঝবয়সী লোক বসে আছে, আর তাদের সামনে খড়, কাঠ, পাতা একত্রিত করে আগুন জ্বালানো। সেই আলোই হয়তো পল্টু দেখেছিল দূর থেকে। সাগ্নিক ওদের মধ্যে একজন কে উদ্দেশ্য করে বললো, “হরেন আমরা এসেছি, তুই ব্যাবস্থা করে রেখেছিস তো?”। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো লোকটি। তারপর আমাদের কে নিয়ে ওই বাড়ির একটা ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ঘরের দরজা খুলতেই ক্যাঁচ কুঁচ শব্দে ভরে উঠলো চারিদিক। যেন কোনো রকমে দরজা খানা তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিল নিজের জীর্ণ বিদীর্ণ আওয়াজের মাধ্যমে। পল্টুর মনে হলো, কে যেন তাকে ফিস ফিস করে বলছে, এক চরম পরিণতি আসন্ন…চলে যা…. চলে যা….। পল্টু একটু থমকে যায়। সাগ্নিক বলে ওঠে, “দাঁড়ালি কেন? ভিতরে আয়”। পল্টু যেন যেতে চাইছিলো না, কিন্তু পাছে সাগ্নিক আবার তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে সেই ভয়ে চুপচাপ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো সে। ঘরের মধ্যে একটা গুমোট অন্ধকার। ঘরে ঢুকতেই কেমন একটা সোঁদা গন্ধ নাকে এলো পল্টুর, গা টা কেমন যেন করে ওঠলো তার। হঠাৎ একটা দেশলাই কাঠি জ্বালার আওয়াজ হলো তক্ষুনি। পল্টু ফিরে তাকিয়ে দেখলো যে, লোকটা দেশলাই এর জ্বলন্ত কাঠিটা নিয়ে ঘরের মধ্যিখানে বসানো একটা মোমবাতির সলতে তে আগুন টা ছোঁয়াতেই ঘরের গুমোট আঁধার কেটে চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠলো। সেই আলোয় পল্টু দেখলো, ঘরের মধ্যিখানে একটা ছোট্ট টেবিলের মতো জিনিস রাখা আছে, তার উপর বড় একটা মোমবাতি বসানো, আর তার চারি পাশে একটু দূরে দূরে চারদিকে চারটি আসন পাতা। সাগ্নিক পল্টুকে সামনের আসনে বসতে বলে এবং নিজে তার পাশের পাতা আসনে বসলো। টেবিলের কাছে ফাঁকা জায়গাটাতেও একটা আসন পাতা। এসব আয়োজন দেখে পল্টু বললো, “সাগ্নিক তুই কি প্লানচেট করতে চাইছিস?”।
“হ্যাঁ” উত্তর করলো সাগ্নিক।
পল্টু বললো, “কিন্তু কাকে ডাকবি তুই, মৃত্যু হয়েছে এমন কাউকেই তো ডাকার নিয়ম”।
সাগ্নিক বললো, “হ্যাঁ তেমন কাউকেই ডাকবো নাহয়”।
ততক্ষনে বাইরে থেকে আরো দুজন ঘরের ভিতর ঢুকেছে। একজন মাঝবয়সী লোক আর একজন একটু অল্প বয়সী ছেলে। ঢুকেই তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। ঘরের ভিতর আগেই প্রবেশ করে থাকা হরেন ও ততক্ষনে একটা আসনে বসে পড়েছে। বাকি থাকা আসন টায় ওই মাঝবয়সী লোকটি বসে এবং অল্পবয়সী ছেলেটি টেবিলের সন্নিকটে থাকা আসন টায় বসে পড়লো। ওই ছেলেটাই মিডিয়াম এর কাজ করবে, ভাবে পল্টু। হরেন বললো, “যদি তোমাদের পরিচিত কোনো ব্যক্তি মারা গিয়ে থাকেন তার নাম বলো, যাকে তোমরা দুজনেই চেনো”।
পল্টু আস্তে করে সাগ্নিককে জিজ্ঞাসা করলো,
“কার নাম বলবো রে?”।
সাগ্নিক বললো, “ষষ্ঠীচরণ বাবু, আমাদের প্রফেসর। যিনি আগের বছর মারা গেলেন”। পল্টু সম্মতি জানায়। তখন হরেন বলে, “তোমরা মনে মনে ওনাকে, ওনার ছবিটা স্মরণ করতে থাকো”। তারপর ওরা সবাই চোখ বন্ধ করে নিল এবং একে অপরের হাতে হাত রাখলো। পল্টু আর সাগ্নিক ও চোখ বন্ধ করে এক মনে ষষ্ঠীচরণ বাবুর মুখটা কল্পনা করতে থাকলো।
হঠাৎ মিনিট পাঁচেক পর, টেবিলের কাছে বসে থাকা ছেলেটি কেমন যেন গোঙাতে শুরু করলো। ততক্ষনে বাইরেও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গোঙানির শব্দে চোখ খোলে পল্টু। সে ভুত বিশ্বাসী, ভুত দেখার অমোঘ আকর্ষণ ও আছে তার। কিন্তু প্লানচেট বিষয় টা তার ঠিক অজানা না হলেও সে স্বশরীরে কখনোই প্লানচেট বিষয় টার সাক্ষী থাকেনি। তাই সে ভেবে নিলো, হয়তো ষষ্ঠীচরণ বাবুর আত্মা ওই ছেলেটির উপর ভর করেছে। পল্টু আস্তে করে সাগ্নিককে ডাকলো। সাগ্নিক চোখ খুলে ছেলেটার গোঙানি দেখে পল্টু কে বললো, “মনে হয় প্লানচেট successful”।
সেই সময়েই হরেন মোমবাতির শিখার অপর প্রান্ত থেকে ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠলো, “কে তুই?”…..ছেলেটি গোঙানি ভরা কণ্ঠে জবাব দিলো, “আমি ষষ্ঠীচরণ। আমাকে তোরা কেন ডাকলিইইই….”।
তখন হরেন সাগ্নিককে উদেশ্য করে বললো, “তোমাদের কিছু জানার থাকলে প্রশ্ন করতে পারো ওনাকে”। তখন সাগ্নিক ওই আত্মা ধারী ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলো, “স্যার আপনি কোন কলেজে পড়াতেন? কিভাবে মারা গেলেন?”।
উত্তর এলো, “আমি সেন্ট জেভিয়ার্স এ পড়াতাম। হঠাৎ করে হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাই আমি”।
সাগ্নিক আবার বললো, “স্যার আপনার প্রিয় কোনো ছাত্র ছিল যাকে খুব ভালোবাসতেন?”।
উত্তর এলো, “হুম….অগ্নি”। পল্টু যতটা রোমাঞ্চিত ছিল তার থেকেও বেশি আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়লো তার প্রিয় স্যার এর থেকে তার নাম শুনে। পল্টু ভাবতে লাগলো, মৃত্যুর পরও তাহলে কেউ ভোলেনা ইহজগতের কথা। সাগ্নিক পল্টুর দিকে তাকিয়ে ফিস ফিস করে বললো, “দেখ এবার বিশ্বাস হলো তো এটা স্যার”। পল্টু মাথাটা হালকা নাড়িয়ে সম্মতি প্রদান করেই ছেলেটাকে প্রশ্ন করে উঠলো, “স্যার আমার জন্মদিনে আমাকে আপনি শেষ কি উপহার দিয়েছিলেন বলুন তো?”।
আত্মাধারী ছেলেটি এরকম অকস্মাৎ অজানা প্রশ্নে গোঙানি বাদ দিয়ে চোখ খুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সাগ্নিকের দিকে তাকালো। পল্টু প্রশ্ন করতেই ছেলেটির ভৌতিক চরিত্রের নিমেষে এতটা পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণ অনুধাবন করতে না পেরে সাগ্নিকের দিকে সেও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। সাগ্নিক ও এহেন পরিস্থিতির কল্পনা করেনি সম্ভবত। সাগ্নিক বুজতে পারলো, তার আরো একটু দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল। সত্যি তো, পল্টুর ও তো প্রশ্ন থাকতে পারে, এটা সে একেবারেই ভুলে গেছিল। সাগ্নিকের অভিব্যক্তি দেখে পল্টুর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, পুরো ঘটনাটাই সাগ্নিকের সাজানো।
পল্টুর শৈশবের ইচ্ছার এত বড় অপমান সে সহ্য করতে না পেরে উঠে গেল আসন থেকে, আর তীক্ষ্ণ গলায় সাগ্নিককে বললো, “মজা করছিলি আমার আবেগ নিয়ে?” বন্ধুত্বের এত বড় দাম দিলি তুই?….ছিঃ সাগ্নিক ছিঃ….”।
অতর্কিতে পল্টুর দিক থেকে ধেয়ে আসা তীক্ষ্ণ ঘৃণা ভরা বাক্যবাণে বিচলিত হয়ে আসন থেকে উঠে পরেই তার হাত দুটো চেপে ধরলো সাগ্নিক। বন্ধুত্বের অপমান সে করতে চাইনি, শুধু পল্টু ভুত দেখতে চায় বলে একটু ভয় দেখিয়ে ভুতের পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল মাত্র। কিন্তু সেটা যে এভাবে পরিণতি পাবে ভাবতেই পারেনি সাগ্নিক, তাহলে হয়তো এসব কিছুই করতো না সে। সাগ্নিক পল্টু কে বুঝিয়ে বলতে গেল সবটা, কিন্তু পল্টু আর এসব সহ্য করতে পারছিল না। সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাইরে তখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। সাগ্নিক তার এহেন কাজের পরিণতিতে তীব্র লজ্জাবোধ নিয়ে পল্টু কে গিয়ে বললো, “বন্ধু আমি একটা ভুল করে ফেলেছি, আর একটা সুযোগ দিবি সত্যি সত্যিই কিছু করার?”।
সাগ্নিক খুব ভালো বন্ধু পল্টুর, তাই পল্টুও নিজের তাৎক্ষণিক উগ্র ব্যাবহারে ভীষণভাবে কষ্ট পেয়েছিল। ওভাবে সাগ্নিককে কথা গুলো বলা ঠিক
হয়নি তার। সেটা অনুমান করেই পল্টু বললো, “বেশ এটাই শেষ সুযোগ কিন্তু”। সাগ্নিক এই সুযোগ টা পেয়ে যেন খুব খুশি হয়ে উঠলো। কিন্তু এই শেষ সুযোগ যে কত বড় পরিণতির প্রমাদ গুনছিলো সেটা সম্পর্কে হয়তো ওরা দুজনেই অবগত ছিল না।
ওরা দুজন আবার ঘরের ভিতরে এলো। ততক্ষনে বৃষ্টি অনেকটাই ধরে এসেছে, আর বৃষ্টির পর একটা মৃদু ঠান্ডা হওয়া বইতে লেগেছে বাইরে। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো সাগ্নিক। জানলা দুটি প্রথম থেকেই বন্ধ ছিল। সাগ্নিক হরেন কে উদেশ্য করে বললো, “আমার সম্মানের প্রশ্ন হরেন, এবার যা হবে সত্যি সত্যিই হবে”।
হরেন চমকে গিয়ে বললো, “সত্যি সত্যি মানে?”।
“মানে আবার কি, সত্যি আত্মা কে ডাকবো আমরা”
বলে উঠলো সাগ্নিক।
যেন সম্মান রক্ষার তাগিদে সে পাগল হয়ে গেছে। হরেন বা বাকি সদস্যরা কেও কিছু বলার সাহস পেলোনা। তারা যে রীতিমত পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছে সাগ্নিকের থেকে এই সব কিছু সাজানোর জন্যে।
পল্টু বলে উঠলো, “সাগ্নিক কোনো ক্ষতি হবেনা তো?”।
“না বন্ধু কিচ্ছু হবে না” আস্বস্ত কণ্ঠে বললো সাগ্নিক।
ওরা কেউই কোনোদিন প্লানচেট করেনি। সবটাই করছিল নিছক মজার চলে। কিন্তু হঠাৎ সত্যি করে করতে হবে জেনে ওরাও একটু হতভম্ভ হয়ে গেল। কিন্তু অগত্যা না তো করতে পারবে না, তাই রাজি হতেই হলো।
সবাই আবার আগের মতো করে বসে পড়লো মোমবাতির সামনে। ওই ছেলেটিও সস্থানে বসে পড়লো আবার।
“কাকে ডাকবে বাবু?” বিস্ময়ের সুরে হরেন প্রশ্ন করলো সাগ্নিককে।
“দেবদত্ত”, বলে উঠলো সাগ্নিক। চমকে উঠলো পল্টু। “কি…. দেবু….?” পল্টু বিস্ময় ভরা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠলো।
“হ্যাঁ… দেবু” গম্ভীর গলায় উত্তর এলো সাগ্নিকের থেকে। সাগ্নিকের দৃঢ গলার উত্তর শুনে নির্বাক হয়ে গেল পল্টু। সে যে বারণ করবে সে ক্ষমতা টুকুও যেন আর নেই তার।
তবুও পল্টু বললো, “দেবু তোর ভাই সাগ্নিক, ও তো জীবিত। তুই শুধু নিজেকে ঠিক প্রমান করবি বলে এতবড় ভুল কিভাবে করতে পারিস? আর তাছাড়া জীবিত কোনো মানুষকে প্লানচেটে আহবান করা যায় না। আমার আর এসব ভুত টুত দেখার কোনো ইচ্ছা নেই।”
সাগ্নিক বলে উঠলো, “আমার দেওয়া কথা আমি রাখবো ব্যাস। কিভাবে রাখবো সেটা আমাকে বুঝতে দে। তুইও দেবু কে চিনিস আমিও চিনি, নিশ্চই অসুবিধা হবে না তোর ওকে মনে করতে।” চুপ করে গেল পল্টু, বুঝতে পারলো তার রাগের মাথায় বলা কথাগুলো খুব সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নিয়েছে সাগ্নিক। একরোখা ছেলে ও, বললেও আর শুনবে না।
সবাই চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু পল্টু যেন এটা মেনে নিতে পারছিল না কিছুতেই। দেবু……সে তো জীবিত তাহলে সাগ্নিক হঠাৎ তার নাম করলো কেন।
পল্টু সাগ্নিককে শেষ বারের মতো আস্তে করে ডেকে বিষন্ন কণ্ঠে বললো, “দেবু কেনো রে? অন্য কাউকে তো ডাকতে পারি আমরা।”
সাগ্নিক বললো, “অন্য কাউকে তারা দুজন একসাথে চেনে না, কিন্তু দেবু কে পল্টুও চেনে”।
সাগ্নিক যেন পাগল হয়ে গেছে, পল্টু অগত্যা একটা
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিলো। ডাকতে লাগলো তারা এক মনে……
দেবু……দেবু……….অনেক্ষন যেন এক স্থির নিস্তব্ধতা। হঠাৎ বাইরের হওয়া যেন তার মিষ্টি মৃদুমন্দতা পরিত্যাগ করে বিকট শোঁ শোঁ শব্দে বইতে শুরু করেছে। হাওয়ার বেগে জানালা, দরজা সব দুম দাম আওয়াজ করে খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে। পল্টুর চোখ খুলে গেল, এসব কি হচ্ছে ভেবে চমকে উঠলো পল্টু। হঠাৎ মোমবাতির শিখা দমকা হাওয়ায় দপ করে নিভে যেতেই যেন এক সর্বগ্রাসী ঘন অন্ধকারে ভরে গেল চারিদিক। আর তখনই গুমোট অন্ধকারের ভিতর থেকে এক বিকট আওয়াজে কে যেন বলে উঠলো, “হুঁউউউ হুঁউউউউ….. আমাকে কেন ডাকলি….কেন ডাকলি তোরা??? তোদের কি ক্ষতি করেছিলাম আমি…..হুঁউউউ…”।
মোমবাতির কাছে বসে থাকা ছেলেটির মধ্যে যেন কোনো এক পৈশাচিক শক্তি ভর করেছে। তাকে হরেনরা দুজন মিলে ধরেও যেন সামলে রাখতে পারছে না কিছুতেই। এত ক্ষমতা ওই ছোট ছেলেটার কিভাবে হতে পারে ভেবে তারা যেন হকচকিয়ে গিয়েছে।
সাগ্নিক এসব দৃশ্য চাক্ষুস করে এবার যেন খুব ভয় পেয়ে গেলো। সে ভেবেছিল আবার কিছু একটা মজা করবে। কিন্তু এরকম কিছু হতে পারে কল্পনাও করেনি সে। সেই পৈশাচিক শক্তি যেন এক তীক্ষ্ণ যন্ত্রনা আর হিংসা ভরা দৃষ্টিতে সাগ্নিকের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, “মেরে দিলি আমায় তুই…. মেরে দিলি….”।
বলার সঙ্গে সঙ্গেই অজ্ঞান হয়ে গেল ছেলেটি। তখনই এক দমকা হাওয়া কোথা থেকে এসে ঘরের চারিদিকে যেন এক বরফ শীতল নিস্তব্ধতা তৈরি করলো। সাগ্নিক চুপ করে বসে আছে, সে যেন ভয়ে পাথর হয়ে গেছে। হরেন সঙ্গে সঙ্গে জল ছেটা দিলো ছেলেটির মুখে চোখে। একটু পর জ্ঞান ফেরে ওর। ছেলেটির শরীরে উঠে দাঁড়ানোর তখন আর ক্ষমতা নেই। হরেন বললো, “বাবু আপনারা বাড়ি যান, যা হলো ঠিক হলো না বাবু”।
পল্টুর মন ও এতে সায় দেয়নি প্রথম থেকেই। যাইহোক সে সাগ্নিককে নিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ির পথে রওনা দিলো। বাড়ি পৌঁছেই পল্টু প্রথমে দেবুর শোবার ঘরে যায়, গিয়ে দেখে দেবু ঘুমিয়ে আছে। কাছে যেতেই চমকে ওঠে পল্টু, দেখে… তার চোখ দুটো বিস্ফারিত, নিঃশ্বাস বন্ধ হলে যেমন হয় ঠিক তেমন। শরীর টাও যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে । দেবু আর নেই, বুঝতে বাকি থাকলোনা পল্টুর। সাগ্নিক ও ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। পল্টু সাগ্নিকের কাছে দৌড়ে যায়, কিন্তু এ কি?…..সাগ্নিকের গায়ে হাত দিতেই ওর শরীর টা অসাড় ভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
“সাগ্নিকককক……” বলে চিৎকার করে ওঠে পল্টু। সাগ্নিক আর নেই। পল্টুর চোখ দুটো জলে ভরে গেল। ততক্ষনে পল্টুর চিৎকার শুনে সাগ্নিকের বাড়ির সবাই ছুটে আসে…..তারাও এরকম অতর্কিত দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়।
তারপর সাগ্নিক আর দেবুর সমস্ত ক্রিয়া কর্ম শেষ হলে পল্টু তাদের পরিবারের থেকে বিদায় নিয়ে কলকাতা ফিরে আসে।
পল্টু ফিরে এসে কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল। সেদিন রাত্রে একা একা ফ্লাট এর বেলকনিতে বসে রাত্রের নক্ষত্র খচিত আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে ভাবতে থাকে, ভুত অণ্বেষনের ইচ্ছা নিশ্চই ছিল তার….কিন্তু সেটা পূরণ করার এক অনিবার্য জেদ যে এত বড় এক মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনবে তার প্রিয় বন্ধু আর তার ভাইয়ের জীবনে তা সে কোনোদিন কল্পনাও করেনি।