পদাবলী : কাম ও প্রেম
০১.
তত্ত্ববিদের চোখে যা-ই হোক, সাধারণের অনুভবে কামে ও প্রেমে পার্থক্য সামান্য ও বিজ্ঞানীর চোখে দু-ই নিরেট জৈবিক বৃত্তি। কৈশোর থেকে প্রৌঢ় বয়স অবধি মানুষ মাত্রেরই হৃদয়ে কাম প্রেমের লঘু-গুরু লীলা চালু থাকে। কাজেই কাম মানুষের প্রবলতম প্রবৃত্তি। সে-বৃত্তি অভিব্যক্তি পায় প্রেমরূপে এবং কখনো কখনো স্নেহ, প্রীতি ও ভক্তিরূপে। সবার চেতনায় প্রেমের প্রভাব থাকলেও সবার জীবনে প্রেম প্রকাশ ও বিকাশ পায় না। অবদমিত ও অবচেতন বাঞ্ছ তখন পরোক্ষ উপায় খোঁজে উপভোগের। শৃঙ্গার তথা রতিরস তাই কর্ম ও কলার মুখ্য অবলম্বন হয়েছে। এ কারণেই আদি মানুষের সমাজে Art ও Ritual ছিল অভিন্ন। অন্ন ও আনন্দ প্রয়াস, কর্ম ও ধর্ম সাধনা এক ধারায় ছিল একাকার। রাগ-বিরাগের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় গতি পেয়েছে জীবন।
আদি কৃষিজীবী সমাজে মৈথুন ছিল ফসল উৎপাদনের প্রতীক ও সহায়। পৃথিবীর বিভিন্ন অনুন্নত সমাজে আজো তা অবিলুপ্ত। এদেশে ধর্মগ্রন্থেই রয়েছে এ তত্ত্ব–বাজসনেয়ি সংহিতায়, ব্রাহ্মণে, বৃহদারণ্যকে, মহাভারতে ও ছান্দোগ্যে। এ তত্ত্বের ক্রমবিকাশে পাই সাংখ্য, যোগ ও তন্ত্র এবং সহজিয়া, বাউল, শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, গাণপত্য, লিঙ্গায়েত প্রভৃতি ধর্মসম্প্রদায়। অতএব দেবতত্ত্বের ও মানবমনের বিকাশ ধারায় রূপ ও রতিবোধের দান গভীর ও ব্যাপক।
.
০২.
শিল্প-সাহিত্যের সব শাখাই রূপ ও রতিভিত্তিক। অন্যকথায় রূপ ও রতি একাধারে কারণ ও কার্য এবং বীজ ও ফল। এ দৃষ্টিতে রূপ ও রতির অনুধ্যানেরই প্রসূন মানুষের সংস্কৃতি ও সভ্যতা।
চিত্র ও মূর্তিশিল্প, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যশিল্প, নাচ ও গান, কবিতা ও গাথা, ধর্ম ও দর্শন, রূপকথা ও উপন্যাস সবকিছুই ক্রমবিকাশ লাভ করেছে রূপ-রতি ভিত্তি করেই। বলতে গেলে মানুষের জীবনধারায় থাকে কাম ও প্রেমেরই বিচিত্র বিকাশ। এর প্রকাশ প্রতিবেশ-নির্ভর। সেজন্যে এর অভিব্যক্তি ও বিকাশ সরল ও একরঙা হয়নি। জীবন প্রবাহ ঝর্ণাধারার মতোই উপল ও বাঁক মেনে চলে। তাই জীবনে আসে বৈচিত্র্য, বিকৃতি ও বক্রতা।
জগতের শ্রেষ্ঠ চিত্র, মূর্তি, সাহিত্য, নৃত্য ও সঙ্গীত তাই প্রেম-প্রতীক। এক কী বহু ধর্ম আর দর্শনও প্রেমবাদী। পৃথিবীব্যাপী আদি সমাজে মানুষের মনে ও মননে, কর্মে ও ধর্মে শৃঙ্গারই পেয়েছে প্রধান্য। শৃঙ্গারের নামই তাই আদিরস। সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক বিশেষ স্তরে জীবনের ক্ষেত্রে এ আদিরসের বিচিত্র ও বহুধা প্রভাব স্বীকার করে ধন্য হয়েছে মানুষ, ধন্য করেছে দেবতাদের। গ্রীক ও হিন্দু পুরাণ তার সাক্ষ্য।
.
০৩.
পরকীয়াতেই প্রেমের স্ফুর্তি। তবু সমাজ-বিকাশের বিশেষ স্তরে সমাজে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে, দাম্পত্য প্রেমকেই আদর্শ ও মহিমান্বিত করবার প্রয়াস চলল। এই নৈতিক চেতনার যুগেই আমাদের দেশে হর-গৌরী, ইন্দ্র-সচী, রাম-সীতা, বিষ্ণু-লক্ষ্মী প্রভৃতি দাম্পত্য প্রেমের মহিমা কীর্তনচ্ছলে নিজেদের প্রণয়াকুতি প্রকাশ করেছে মানুষ। এই কৃত্রিম প্রয়াসে মানুষের তৃষ্ণা মেটেনি, ভরে উঠেনি তার বুক। তাই আবার পরকীয়া রসে সিক্ত হয়েই প্রস্ফুটিত হল তার চিত্ত-উৎপল। এই রসেই তার হৃৎকমলে সঞ্চিত হল মধু, সৃষ্টি হল মহিমান্বিত। মানুষের অবদমিত ও অবেচতন বাঞ্ছা-অপূর্ণতার আকুতি গানে, গাথায়, গল্পে, কবিতায়, উপন্যাসে, চিত্রে, নৃত্যে, প্রতিমায়, অধ্যাত্ম জিজ্ঞাসায় আজো অভিব্যক্তি পাচ্ছে বিচিত্র ও বর্ণালী হয়ে।
ইউসুফ-জোলেখা, লায়লী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, কৃষ্ণ-নিপ্পিনাই বা রাধা-কৃষ্ণ–এ প্রেম প্রকাশের আদর্শ ও বিকাশের অবলম্বন হয়ে প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে মানুষের মনের আকুতি মিটিয়েছে। সমাজ-কলেবর বৃদ্ধির সাথে সাথে নৈতিক চেতনা যতই প্রবল হয়েছে, ততই সূক্ষ্ম অনুভবের স্তরে উন্নীত হয়েছে স্থূল প্রয়োজন, বাস্তব চাহিদা পেয়েছে মানসোপভোগে চরিতার্থতা। তাই বাস্তব জীবনে যা পাপ (sin), যা নৈতিক দোষ (vice) ও সামাজিক অপরাধ (crime) এবং সেহেতু ঘৃণ্য ও পরিহার্য; ভাবলোকে তা-ই আত্মার উল্লাস জাগায়। এ জীবনে কেবল আনন্দানুভবের উৎস হয়ে থাকেনি, পারিত্রিক সুখ-স্বপ্নেরও আধার হয়েছে।
দেহে রূপ, রূপে কাম, কামে প্রেম আর প্রেমেই আত্মার মুক্তি। সূফী-বৈষ্ণবের এ ধারণা একদিনে গড়ে উঠেনি। মানুষ অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছে চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে ব্যবধান থাকে বিস্তর, বাধা থাকে দুর্লঙ্ঘ। বাঞ্ছিত বস্তুমাত্রেই দুর্লভ ও দুঃসাধ্য। অথবা দুর্লভ না হলে কিছু বাঞ্ছনীয় হয় না। কাজেই তার জন্যে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও প্রয়াস প্রয়োজন। ধৈর্য ও অধ্যবসায়ই এ সাধনার সম্বল। হৃদয়ে দাহ ও চোখে অশ্রু প্রেমিকের নিয়তি। আর মিলনাকাঙ্ক্ষা তথা বিরহবোধই তার প্রেরণা ও সামর্থ্যের উৎস। এইজন্যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য বিরহী আত্মার কান্নায় করুণ।
.
০৪.
এই রূপ ও রতি, কাম ও প্রেমবাঞ্ছা অভিব্যক্তি পেয়েছে রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলীতে। চৈতন্য-পূর্ব যুগে এগুলোতে অধ্যাত্মতত্ত্ব ছিল না। এ দৈহিক প্রেম ঐহিক জীবনে আনন্দিত স্বপ্ন জাগানোতেই ছিল সীমিত। চৈতন্যের প্রেম-ধর্ম প্রচারিত হওয়ার পরে এ সংগীত পারত্রিক ত্রাণের অবলম্বন হল। তখন অপ্রাকৃত হৃৎ-বৃন্দাবনে জীবাত্মা রূপিণী রাধার ও পরমাত্মারূপী কৃষ্ণের প্রণয়লীলার অনুধ্যান ও আস্বাদনই এর অপার্থিব মহৎ ও পরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল। এভাবে প্রেমকে তত্ত্বের অনুগত করে রাধাকৃষ্ণের অবৈধ প্রেমকে করা হল মহিমান্বিত ও অনন্য। চৈতন্য-পূর্ব যুগে গোটা ভারতব্যাপী যা ছিল শৃঙ্গার-রস উপভোগের বাহন, চৈতন্যোত্তরকালে তা-ই হল অধ্যাত্মরসের আকর।
জয়দেব, বিদ্যাপতি ও বড়চণ্ডীদাসের পদাবলী ছিল শারীর প্রেমের আকুতিমুখর। বৈষ্ণব ভক্তের চোখে পদকারেরা হলেন মহাজন ও গোস্বামী; আর পদাবলী হল সাধন-শাস্ত্র ও ভজন গীতি। তার পরে চৈতন্যোত্তর যুগের রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক প্রায় সব সঙ্গীতই আধ্যাত্মরসাশ্রিত।
যদিও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতবাসীরা রাধা-কৃষ্ণ, রাম-সীতা কিংবা হর-গৌরী বিষয়ক পদ অভিন্ন লক্ষ্যে রচনা ও আস্বাদন করেছেন, তবু তত্ত্বগত পার্থক্য যে ছিল না, তা নয়। কেবল দ্বৈতাদ্বৈতবাদে নয়, ভক্তি আর প্রেম তত্ত্বেও ছিল তফাৎ। দ্বিজ চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, দীনচণ্ডীদাস, মীরাবাই, তুলসীদাস, আবদুর রহীম খান খানান, দাদু, এয়ারী, দরিয়া, রজব, তাজবেগম, আহমদ, রসখান কিংবা চাঁদ কাজী সৈয়দ সুলতান, আলাউল, সৈয়দ মর্তুজা, আলিরজা, মীর ফয়জুল্লাহ্ প্রভৃতি পদের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তাই অভিন্ন নয়।
আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়, চৈতন্যদেব বাঙালির এবং ষোলো শতকের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক গণ-নেতা। হয়তো বাঙলাদেশে থাকেননি বলেই বাঙলায় বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তার আশানুরূপ হয়নি। কিন্তু তাঁর প্রেমবাদ, তাঁর সাম্য, প্রীতি ও করুণার বাণী, তাঁর উদার মানবতাবোধ বাঙালিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। গৌতম বুদ্ধের ও ইসলামের বাণীর ঐতিহ্য তার মাধ্যমে নতুন করে পেয়ে বাঙালি-চিত্ত সঞ্জীবিত হল। এজন্যে ষোলো শতক বাঙালির চিপ্রকর্ষের কাল–রেনেসাঁসের যুগ। আশ্চর্য, তবু ষোলো-সতেরো শতকে পদাবলী রচয়িতা বাঙলা দেশের সর্বত্র মিলে না। এই সময়কার প্রায় সব বৈষ্ণব কবিই পশ্চিমবঙ্গের তথা প্রেসিডেন্সী ও বর্ধমান বিভাগের।
কিন্তু একরকম আকস্মিকভাবে আমরা ষোলো শতকের শেষ পাদে আরাকান রাজ্যভুক্ত চট্টগ্রামে এবং সতেরো শতকের শেষার্ধে ও আঠারো শতকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত চট্টগ্রামে হিন্দু মুসলিম বহু পদকার পাচ্ছি। এই স্থানিক জনপ্রিয়তার ঋজু কারণ দুর্লক্ষ্য। এ কী চৈতন্য পার্ষদ চট্টগ্রামবাসী পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি, মুকুন্দ ও বাসুদেব দত্তের প্রভাবের ফল!
.
০৫.
আমরা দেখছি, রাষ্ট্রিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বাংলা দেশের তথা উত্তরভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগ রক্ষা করে চলেছিল। মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যে মুসলমানের রচনা বলতে প্রায় সবটাই তো চট্টগ্রামেরই দান। এমনকি বাঙলা দেশের যে-কোনো অঞ্চলের হিন্দুর চাইতে চট্টগ্রামের হিন্দুর দানও কম নয়। হয়তো আন্তর্জাতিক বন্দর এলাকার লোক বলেই সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুগের আহ্বানে তারা সহজেই সাড়া দিতে পেরেছিল।
মধ্যযুগের চট্টগ্রামী হিন্দু কবিদের মধ্যে ষোলো শতকে পাচ্ছি কবীন্দ্র পরমেশ্বর ও শ্ৰীকরনন্দীকে। এরাই বাঙলায় মহাভারতের প্রথম অনুবাদক! সতেরো শতকে পাচ্ছি মৃগলুব্ধ প্রভৃতি রচয়িতা দ্বিজ রতিদেবকে ও লক্ষ্মণ দ্বিগ্বিজয়ের কবি দ্বিজ ভবানীনাথকে। আর আঠারো শতকে পাই সারদা-মঙ্গল প্রণেতা মুক্তারাম সেন, মার্কণ্ডেয় চণ্ডী মাহাত্ম্য লেখক ব্রজলাল সেন (ইনি মুক্তারামের ভাই), কালিকামঙ্গল রচক নিধিরাম আচার্য ও গোবিন্দ দাস, মনসার ভাসান প্রণেতা রামজীবন বিদ্যাভূষণ, মৃগলুব্ধ সংবাদ রচক রামরাজা, গোকুল মঙ্গল লেখক ভক্তরাম দাস, সত্যনারায়ণ পাঁচালী রচক ফকির চাঁদ প্রভৃতি ছাড়াও শঙ্কর দাস, শঙ্কর ভট্ট, বলরামদেব, রামতনু আচার্য, সদানন্দ ভট্ট প্রভৃতিকে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে আঠারো শতক থেকে বাঙালি হিন্দুরা প্রণয়োপাখ্যান রচনা শুরু করেন। এবং চন্দ্রাবলী রচয়িতা দ্বিজ পশুপতি ব্যতীত সবাই চট্টগ্রামবাসী। কাজেই এক্ষেত্রে পথিকৃতের গৌরব এঁদেরই। আজ অবধি আমরা আঠারো শতকের রামজীবন দাসের শশিচন্দ্রের উপাখ্যান, সুশীল মিশ্রের রূপবতী রূপবান উপাখ্যান, রাণীরাম দাসের শীত-বসন্ত, গোপীনাথ দাসের মনোহর মধুমালতী এবং উনিশ শতকের কবি মহেশচন্দ্র দাস চৌধুরীর সয়ফুল মুলুক জরুখভান পেয়েছি।
.
০৬.
চট্টগ্রামে প্রাপ্ত হিন্দুকবির পদগুলোর বৰ্হিরূপ বৈষ্ণব পদাবলীর মতো হলেও অনেক পদেই বৈষ্ণবীয় ভাব-সত্যের অভাব লক্ষণীয়। এমনকি ভণিতাগুলোও অনেক ক্ষেত্রে মহাজন পদাবলী সুলভ নয়, বরং মুসলিম রচিত পদের মতোই। এ-ও হয়তো আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার ফল। মধ্যযুগে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা বাঙলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার সর্বাঞ্চলিক বিকাশের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এজন্যে চণ্ডী মঙ্গল ও ধর্ম মঙ্গলের উদ্ভব ও বিকাশ কেবল রাঢ় অঞ্চলেই নিবদ্ধ দেখি। আবার পূর্ববঙ্গেই যেন মনসা কাহিনীর জনপ্রিয়তা ছিল সর্বাধিক। বৈষ্ণব সাহিত্যের উদ্ভব এবং বিকাশও সীমিত দেখি পশ্চিমবঙ্গে এবং আধুনিক চট্টগ্রাম বিভাগে (সিলেট ব্যতীত) বাউল সম্প্রদায় চিরকালই অনুপস্থিত। এখানে সত্যপীরের প্রভাবও ছিল সামান্য।
এমনকি বহুকাল ধরে মুসলমানদের বাঙলা সাহিত্য চর্চাও বিশেষ করে নিবদ্ধ ছিল চট্টগ্রামে ও রোসাঙ্গে। তেমনি দোভাষী রীতির ও পুঁথিসাহিত্যের উন্মেষ ও বিকাশ এবং কবিওয়ালাদের আবির্ভাব সীমিত ছিল পশ্চিমবঙ্গের এখানকার প্রেসিডেন্সী বিভাগে। আবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গেই বিশেষ চর্চা হয়েছিল লৌকিক উপদেবতা ও পীরকাহিনীর, এবং গাথা-গীতিকা রচিত হয়েছে বিশেষ করে ময়মনসিংহে ও চট্টগ্রামে।
অতএব, মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যের একটা সর্ববঙ্গীয় চরিত্র ও রূপের অনুধ্যানে যতই আমরা আনন্দিত হতে চাই এবং অখণ্ডতা ও ঐক্যবোধের আগ্রহে যতই কেন সামগ্রিক রূপ-কল্পনাকে প্রশ্রয় দিই, ভৌগোলিক দূরত্ব যে বিভিন্ন অঞ্চলের বাঙলাভাষীদের পারস্পরিক মানসযোগ রক্ষার অন্তরায় ছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না।