রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের গাঞি পদবী
বন্দ্যঘটি, বাড়র (বাড়ব); বটব্যাল, বড়াল (বোড়া); কুশারী (কুশো); মাসচটক (মাসদহ); কুসুমকুলী (কুসম ও কুলী); ঘোষাল, ঘোষলী (ঘোষল); সেয়ক (সেউর); বসুয়ারী (বসুয়া); করাল (কৌড়ি); দীর্ঘাঙ্গী (দীঘড়া); গড়গড়ি (গড়গড়ে); কুলভী (কুলভ); পারিহাল (পারিহা); কেশরকুনী (কেশরকোণা); মুখটি, মুকুটি (মুকুটি); ডিংসাই (ডিংসা); সাহারিক (সাহুড়া); রায়ী (রায়গ্রাম); পর্কটি, পাকড়াশি (পাকুর); পালধী (পালতী); চাটুতি, চট্ট (চাটতি); সিমলাই (সিমলে); অম্বুলী (আমূল); ভূরীগ্রামী (ভুরসুট); পলসায়ী (পলশা-পলসোনা?); মূল- গ্রামী (মূলগ্রাম); গুড় (গুড়া); হড় (হড়); পুষলী, পুষিলাল (পোষলা); তৈলবাটী (তিলাড়া); পোড়ারী (পোড়াবাড়ি); পীতমুণ্ডী (পীতমূড়া); গাঙ্গুরি, গাঙ্গুলী (গাগুর); কুন্দ (কুন্দ, কুদো); সিদ্ধল (সিধলা); নন্দী (নন্দীগ্রাম); বালী (বালীগ্রাম); সিয়ারী (সিয়ারা); পারী (পালী- গ্রাম); নায়ী, নায়ারী (নায়); দায়ী (দায়া); কাঞ্জিলাল (কাঞ্জি); পিপলাই (পিপ্পল); শিম্বলাল (শিমুলি); কাঞ্জারি (কাঞ্জিকুড়া); বাপুলী (বাপুলা); পূতিতুণ্ড, পূতিতুণ্ডি (পাতুণ্ড? পুতুণ্ডা?); চোটখণ্ডী (চোৎখণ্ড); মহিন্তা (মহতা); পূর্বগ্রামী (পূর্বগ্রাম)। আকাশ, কোঁয়ারী, ভট্টশালী, পুংসিক, ষাটক বা সাণ্ডেশ্বরী, ঘন্টা বা ঘাটাল, দীঘল বা দীঘারী প্রভৃতির মূল গ্রামনাম পাওয়া যায় না। উপরে উল্লিখিত গাঞি- পদবী ও গ্রামনামের কিছু কিছু তারতম্যও দেখা যায়। ভট্টশালী ভুরসুট থেকে এসে থাকতে পারে। এই গ্রামের নামগুলি মূলতঃ অস্ট্রিক বা দেশজ শব্দ ছিল, পরে সংস্কৃত শব্দে শুদ্ধিকরণ করা হয়, অথবা এগুলি সংস্কৃতেরই অপভ্রংশ কিনা তা নিঃসন্দেহে বলা যায় না। বন্ধনীচিহ্নের মধ্যে গ্রামের নামগলি দেওয়া হয়েছে।
বেড়ি—বোড়ো? পিপ্পল—পিপলে?
.
বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের গাঞি পদবী
বাকচি, লাহিড়ী, চম্পটি, কালিন্দি, শহরি, নন্দনাবাসী, বিশি, মৎস্যাসি, তোড়ক, বেলড়ী, বিশ্বগ্রামী, বেতগ্রামী, খড়খড়ি, তাড়য়াল, ভাদড়, লাউড়ী, আতর্থী, ঝম্পটি, রাই, রত্নাবলী, ওশ্ৰুধী, গোচণ্ড, কাচড়ী, সিংবহাল, সরিয়াল, ক্ষত্রগ্রামী, শূল, দধিয়াল, পুতী, নন্দগ্রামী, পিপলী, খর্জুরী, গোশালাক্ষী, গোগ্রামী, নিঘটী, বললাৎকটা, কুঞ্জ, ভোগ্ৰামী, মৈত্র, ভাদুড়ী, করঞ্জ, বলষষ্টিক, মধুগ্রামী, রানীহরি, মৌহালী, বীজকুঞ্জ, সহগ্রামী, বিষোৎকট, পারীস্বাম, মঠগ্রামী, মধ্যগ্রামী, গঙ্গাগ্রামী, আথর্বী, বেলগ্রাম, সূচী, শিঙ, দিয়ার, পিপড়ী, দধি, শৃঙ্গী, মেদড়ী, উখরী, ধকড়ী, বাড়, আলস্য, শতক, নৈগ্রামী, কল্যাণী, টটরী, পুন্ড্র- বর্ধনী, কলাপী, পশুবটী, নিখটি, সমুদ্রক, শীতলী, সান্যাল, ভীম, ভট্টশালী, কামকালী, কুড়মুড়ি, ভাড়িয়াল, যমরুখী, শীতলী, ভালড়ী, দেবলী, বাৎস্যগ্রামী, নিদ্রালী, কুর্কটী, পৌণ্ড্রবর্ধন, বেড়েগ্রামী, শ্রোকবটী, অক্ষগ্রামী, ঘোষগ্রামী, কালীগ্রামী, কালীপুর, তন্ত্রকেলী, নাগাশূর, শিব-তটা, বৈশালী।
লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে কিছু কিছু, নাম রাঢ়ী গাঞিপদবী থেকে অভিন্ন ছিল না। বহু গ্রামনাম উভয়ক্ষেত্রে একই। গ্রামগুলিকে সর্ব- ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বরেন্দ্রভূমিতে অনুসন্ধান করা হয়তো যুক্তিযুক্ত হবে না।
চম্পটি কি চম্পাহিটি। শিহরি কি বর্তমানের সিউরী? ভাদড় এবং ভাতার চিন্ত্যনীয়। ভাদ্র থেকে ভাদড় হয়ে ভাতার গ্রামনাম হয়ে থাকতে পারে। অবশ্য যুদ্ধে বিপর্যস্ত রাজার ঐ স্থানে ভাত-আহার জনপ্রবাদ থেকেও ভাতার গ্রামনাম এসে থাকতে পারে। তুলনীয়: রাজা- ভাতখাওয়া। গোগ্রাম কি বর্তমানের গোগাঁ? বেলড়ী-বেলমুড়ি? পিপলী কি পিপলে? শিঙ-সিঙ্গী? বেড়েগ্রামী-বেলগাঁ?
.
কয়েকটি কায়স্থ পদবী
ঘোষ, বসু, মিত্র, দত্ত, দে, বিশ্বাস, কর, করণ, গুহ, দেব, নন্দী, পাল, নাগ, চন্দ, চন্দ্র, সিংহ, রায়, চৌধুরী, সরকার, মজুমদার, হাজরা, আঢ্য, আদিত্য, সামন্ত, আইচ, ইন্দ্র, উকিল, হাতী, কারকুন, কীর্ত্তি, কুণ্ডু, খাঁ, খিল, খেস, গণ, গুই, গুণ্ড, দণ্ড, দস্তিদার, দাঁ, দাম, দেউপাত্র, ধনু, ধুরন্ধর, নন্দ, নাথ, নায়ক, চাকি, চাঁই, চাপ, পঙ্গুল, পানি, পুই, পুরকাইত, পুরকায়স্থ, পোদ, প্রধান, বকশি, বন্ধু, বাগ, বাহাদুর, বিন্দু, বিষ্ণু, ব্রহ্ম, ভঞ্জ, ভদ্র, হুই, ভূতি, ভোঁস, মণ্ডল, মল্লিক, মাহান্তি, মিশ্র, মুন্সী, মুস্তাফি, যশ, রক্ষিত, রাজ, রাউত, রাহুত, রদ্র, লোদ, শক্তি, সর, সাই, শাঞি, শিকদার, শীল, শূর, শ্যাম, সমাজদার, সাধ্য, হেশ, হোম, সোম, হোড় মুহুরী ইত্যাদি।
এই পদবীগুলির মধ্যে অনেকগুলি আবার অন্যান্য বর্ণহিন্দু, জাতির মধ্যেও আছে।
.
কয়েকটি বৈদ্য পদবী
সেন. দাস, দাশ, গুপ্ত, সেনগুপ্ত, দাশগুপ্ত, কর, মল্লিক, রায়, চৌধুরী, সরকার, মজুমদার, ইন্দ্র, ওঝা, কবিরাজ, কানুনগো, কুণ্ডু, খাস্তগীর, গুপ্ত- ভায়া, গোস্বামী, ঠাকুর, দত্ত, দত্তগুপ্ত, দেব, ধর, দোবে, নন্দী, নাগ, নিয়োগী, বরাট, বেদ, রক্ষিত, রাজ, সোম, পাল, পাড়ে ইত্যাদি।
এই তালিকার প্রত্যেকটি পদবী অন্যান্য বর্ণহিন্দু জাতির মধ্যেও আছে।
.
অন্যান্য অগ্রসর বর্ণহিন্দুজাতির মধ্যে প্রচলিত কিছু পদবী
অধিকারী, আটা, আঢ্য, আশ, আইচ, আদক, উদ্গাতা, কয়াল, কাঞ্জি, কাঁটাল, কামিলা, কুণ্ডু, কুইতি, কোলে, খাটুয়া, গণ, গোঁ, গই, গুণ, চাঁই, জানা, ঢোল, ঢ্যাং, তারণ, দাঁ, তা, দানা, দাস, দাক্ষিত, দীক্ষিত, ধার, ধাড়া, নন্দী, পাল, নাগ, নাথ, নায়ক, নায়েক, কুমার, কোঙার, কোনার, নিয়োগী, পই, পবি, পতি, পরামাণিক, পাঁজা, পাঞ্জা, পান্তি, পালই, পালিত, পোন্দার, বন্ধু, বেজ, বেরা, রেজ, রাজ, ভাঁড়, ভুই, মল্ল, মণ্ডল, মাজি, মাঝি, মান্না, মাইতি, মাকড়, রুদ্র, সাঁতরা, সাধুখাঁ ইত্যাদি।
.
পদবী-সংবাদ
* অধিকারী পাওয়া যাবে ব্রাহ্মণ, বৈষ্ণব, মাহিষ্য, সঙ্গোপ, কর্মকার, মালাকার প্রভৃতি বর্ণহিন্দুর মধ্যে। মালী সবিতৃ নমঃশূদ্র প্রভৃতির মধ্যেও।
* মালাকার জাতি বর্ণহিন্দু, তপশীলভুক্ত নয়। মালাকার পদবী পাওয়া যাবে মালাকার জাতি ছাড়াও নমঃশূদ্র মালী রাজবংশীদের মধ্যে।
* আঢ্য কায়স্থ ও সবর্ণবণিক পদবী। আবার নমঃশূদ্রের মধ্যেও আছে।
* উকিল ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, মাহিষ্য, সঙ্গোপ।
* ওঝা শুধুই ব্রাহ্মণ নয়। বৈদ্য, মাহিষ্য, কর্মকার, কৈবর্ত্ত, নমঃশূদ্রও।
* কর বাইশটি জাতির পদবী।
* কবিরাজ পদবী আছে ব্রাহ্মণ বৈদ্য কর্মকার কৈবর্ত্ত মাহিষ্য সঙ্গোপ শাঁখারি ডোম নমঃশূদ্র প্রভৃতির মধ্যেও।
* কুণ্ডু কায়স্থ বৈদ্য ছাড়াও আরো সাতাশটি জাতির পদবী।
* গঙ্গোপাধ্যায় পাওয়া যাবে যোগীদের মধ্যে।
* সেন, সোম, দত্ত, দে, কর, গুহ কায়স্থ, উগ্ৰক্ষত্রিয়।
* গোস্বামী ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, বৈষ্ণব, মাহিষ্য, সঙ্গোপ, মালী, যোগী, বৈশ্যকপালী, পৌন্ড্র, নমঃশূদ্র।
* ঘটক ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, সন্দোপ, যোগী, নমঃশূদ্র।
* ঠাকুর ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, কর্মকার, যাদব, পাটনী, যোগী, নমঃশূদ্র।
* তরফদার কায়স্থ, কৈবর্ত্ত, মাহিষ্য, সঙ্গোপ, নমঃশূদ্র।
* তাঁতী পদবী তন্তুবায়দেরই নয়, পৌন্ড্র ও যোগী জাতির।
* বিশ্বাস কায়স্থ ছাড়াও তিরিশটি জাতির পদবী।
* ভাদুড়ি কৈবর্ত্ত এবং যোগীদের মধ্যেও আছে।
* মাজি ও মাঝি কায়স্থ এবং অন্যান্য বত্রিশটি জাতির মধ্যে আছে।
* পুরকায়স্থ জাতিতে ব্রাহ্মণ বা কায়স্থ বা বৈদ্য হতে পারেন, আবার সঙ্গোপ, মাহিষ্য, সাহুবণিক, যোগী, মালী, নমঃশূদ্রও।
* বাকচি ব্রাহ্মণ, কৈবৰ্ত্ত, যোগী, নমঃশূদ্রে।
* সান্যাল কর্মকার, ব্রাহ্মণ, যোগী, সবিতৃ।
* সেন চব্বিশটি জাতির পদবী।
* সোম আটটি জাতির মধ্যে পাওয়া যাবে।
* সিংহ তিরিশটি জাতির পদবী।
উপরের তথ্যাদির অনেকগুলি খগেন্দ্রনাথ ভৌমিকের ‘পদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস’ (১৩৮৯) থেকে গৃহীত।
.
ঋণস্বীকৃতি
মহেশ্বর মিশ্রের কুলপঞ্জিকা, এড়ু মিশ্রের কুলার্ণব, বাচস্পতি মিশ্রের কুলরাম, ধ্রবানন্দ মিশ্রের মহাবংশাবলী, সর্বানন্দ মিশ্রের কুলতত্ত্বার্ণব, হরি মিশ্রের সারাবলী, নুলো পঞ্চাননের গোষ্ঠীকথা। এবং বারেন্দ্র কুলপঞ্জিকা, বৈদিক কুলমঞ্জরী, বৈদিক কুলদীপিকা।
বাঙালীর ইতিহাস: নীহাররঞ্জন রায়
শিলালেখ-তাম্ৰশাসনাদির প্রসঙ্গ: ডঃ দীনেশচন্দ্র সরকার
ধম্মপদ-পরিচয়: প্রবোধচন্দ্র সেন।
তত্ত্বকথা: চিন্তাহরণ চক্রবর্তী
লৌকিক শব্দকোষ: ডঃ কামিনীকুমার রায়
বুদ্ধপ্রসঙ্গ: মহেশচন্দ্র ঘোষ
পুথিপত্রের আঙিনায় সমাজের আলপনা: চিত্রা দেব
প্রাচীন বাংলা ও বাঙালী: শ্ৰীসুকুমার সেন
বাঙলার সামাজিক ইতিহাস: অতুল সুর
বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়: ঐ
D. D. Kosambi: Myth and Reality
The Culture and Civilization of Ancient India.
An Introduction to the Study of Indian History.
Exasperating Essays
The Atharva-Veda: Tr. by W. D. Whitney
R C. Hazra: Studies in the Puranic Records on Hindu Rites and Customs. (Dacca 1940)
J. F. Fleet: Inscriptions of the Early Gupta Kings
and their Successors. 1888 ed.
W. W. Hunter: Annals of Rural Bengal.
Manusmriti: ed. Ganganath Jha.
H. H. Risley: Tribes and Castes of Bengal.
The Origin of Brahmin Gotras: Journal of the Royal Asiatic Society, Bombay, 1950
Lss O’Malley : Indian Caste Customs, Vikas.
U. N. Ghosal: Contributions to the History of the Hindu Revenue System. 1929
G. P. Malalasekara: Dictionary of Pali Proper names.
Calcutta: Myths and History: S. N. Mukherjee
Romila Thapar: Past and Prejudice.
R. C. Mazumdar: Corporate Life in Ancient India.
Dr. A. K. Sur: History & Culture of Bengal.
Dynamics and Synthesis in Hindu Culture.