নয়
ভারতী ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া শুধু কহিল,পারবেন না? তাই ত!
তাহার কণ্ঠস্বরে একটুখানি বিস্ময়ের আভাস ব্যতীত আর কিছুই ছিল না, কিন্তু এই কি জবাব? এই কি সে তাহার কাছে আশা করিয়াছিল? হঠাৎ যেন মার খাইয়া অপূর্বর তন্দ্রা ছুটিয়া গেল।
ভারতী কহিল, তাহলে একটা খবর দিয়ে ত ওকে হাসপাতালেই পাঠাতে হয়। তাহার কথার মধ্যে শ্লেষও ছিল না, ঝাঁজও ছিল না, কিন্তু লজ্জায় অপূর্বর মাথা হেঁট হইল। লজ্জা শুধু তাহার না-পারার জন্য নয়, যে পারে তাহাকেই পারিতে বলার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতের মধ্যে লুকাইয়া আরও প্রচ্ছন্ন যে দাবী ছিল, ভারতীর শান্ত প্রত্যাখ্যানে সে যখন কঠিন তিরস্কারের আকারে ফিরিয়া আসিয়া তাহাকে বাজিল, তখন আনতমুখে বসিয়া অত্যন্ত অনুশোচনার সহিত তাহাকে আর একবার মনে করিতে হইল, এই মেয়েটিকে সে যথার্থই চিনে নাই। দুঃখ দুশ্চিন্তা কোথাও কিছু ছিল না,—ছিল যেন কেবল কত দীপ, কত আলো জ্বালা;—হঠাৎ কে যেন সমস্ত এক ফুঁয়ে নিবাইয়া দিয়া অসমাপ্ত নাটকের মাঝখানে যবনিকা টানিয়া দিল। ভয়ানক অন্ধকারে রহিল শুধু সে আর তাহার অপরিত্যাজ্য মরণোন্মুখ অচেতন তেওয়ারী।
ভারতী বলিল, বেলা থাকতে থাকতেই কিছু করা চাই। বলেন ত আমি যাবার পথে হাসপাতালে একটা টেরিফোঁ করে দিয়ে যেতে পারি। তারা গাড়ি এনে তুলে নিয়ে যাবে।
অপূর্ব তাহার আচ্ছন্ন ভাব জোর করিয়া কাটাইয়া মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু আপনি যে বললেন সেখানে গেলে কেউ বাঁচে না?
ভারতী কহিল, কেউ বাঁচে না এ কথা ত বলিনি।
অপূর্ব অত্যন্ত মলিনমুখে বলিল, তাহলে বেশী লোকেই ত মরে যায়?
ভারতী মাথা নাড়িয়া বলিল, তা যায়। এই জন্যই জ্ঞান থাকতে কেউ সেখানে কিছুতে যেতে চায় না।
অপূর্ব চুপ করিয়া ক্ষণকাল বসিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, তেওয়ারীর কি কিচ্ছু জ্ঞান নেই?
ভারতী কহিল, কিছু আছে বৈ কি। সব সময়ে না থাকলেও মাঝে মাঝে সমস্তই টের পায়।
এই সময়ে তেওয়ারী সহসা কি-একপ্রকার আর্তনাদ করিয়া উঠিতে অপূর্ব এমনি চমকিয়া উঠিল যে, ভারতী তাহা স্পষ্ট দেখিতে পাইল। সে কাছে আসিয়া রোগীর মুখের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়া সস্নেহে জিজ্ঞাসা করিল, কি চাই তেওয়ারী?
তেওয়ারী ঠোঁট নাড়িয়া যাহা বলিল, অপূর্ব তাহার কিছুই বুঝিল না, কিন্তু ভারতী সাবধানে তাহাকে পাশ ফিরাইয়া দিয়া ঘটি হইতে একটুখানি জল তাহার মুখে দিয়া কানে কানে কহিল, তোমার বাবু এসেছেন যে!
প্রত্যুত্তরে তেওয়ারী অব্যক্ত ধ্বনি করিল, ডান হাতটা একবার তুলিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু নাড়িতে পারিল না। পরক্ষণেই দেখা গেল তাহার নিমীলিত চোখের কোণ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িতেছে। অপূর্বর নিজের দুই চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইয়া উঠিল, তাড়াতাড়ি কোঁচার খুঁট দিয়া তাহা সে মুছিয়া ফেলিল, কিন্তু থামাইতে পারিল না,—বারে বারেই সেই দুটি আর্দ্র চক্ষু প্লাবিত করিয়া অজস্র ধারায় ঝরিয়া পড়িবার চেষ্টা করিতে লাগিল। মিনিট দুই-তিন কেহ কোন কথা কহিল না। সমস্ত ঘরখানি দুঃখ ও শোকের ঘন-মেঘে যেন থমথম করিতে লাগিল। কথা কহিল প্রথমে ভারতী। সে একটুখানি সরিয়া আসিয়া চুপি চুপি বলিল, কি আর করা যাবে, হাসপাতালেই পাঠিয়ে দিন।
অপূর্ব চোখের উপর হইতে তখনও আবরণ সরাইতে পারিল না, কিন্তু মাথা নাড়িয়া জানাইল না।
ভারতী তেমনি আস্তে আস্তে কহিল, সেই ভাল। আমি এখন তাহলে চললুম। যদি সময় পাই কাল একবার আসবো।
তখনও অপূর্ব চোখ খুলিতে পারিল না, স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। যাইবার পূর্বে ভারতী বলিল, সবই আছে, কেবল মোমবাতি ফুরিয়ে গেছে, আমি নীচে থেকে এক বাণ্ডিল কিনে দিয়ে যাচ্চি, এই বলিয়া সে নিঃশব্দে দ্বার খুলিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল। মিনিট-কয়েক পরে বাতি লইয়া যখন ফিরিয়া আসিল, তখন কতকটা পরিমাণে বোধ হয় আপনাকে অপূর্ব সামলাইয়া লইতে পারিয়াছিল। চোখ মোছা শেষ হইয়াছে, কিন্তু ভেজা পাতার নীচে সে-দুটি রাঙ্গা হইয়া আছে। ভারতী ঘরে ঢুকিতেই সে আর একদিকে মুখ ফিরাইল। হাতের মোড়কটি কাছে রাখিয়া দিয়া কি যেন সে একবার বলিতে চাহিল, কিন্তু আর একজন যখন কথা না কহিয়া মুখ ফিরাইয়া লইল, তখন সেও আর প্রশ্ন না করিয়া পলকমাত্র নিঃশব্দে থাকিয়া প্রস্থানের জন্য দ্বার খুলিতেই, অপূর্ব অকস্মাৎ বলিয়া উঠিল, তেওয়ারী যদি জল খেতে চায়?
ভারতী ফিরিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, জল দেবেন।
অপূর্ব কহিল, আর যদি পাশ ফিরে শুতে চায়?
ভারতী বলিল, পাশ ফিরিয়ে শুইয়ে দেবেন।
বলা ত সহজ। আমি শোব কোথায় শুনি? তাহার কণ্ঠস্বরে ক্রোধ চাপা রহিল না, কহিল, বিছানা ত রইল পড়ে ওপরের ঘরে!
ভারতী কি মনে করিল তাহার মুখ দেখিয়া বুঝা গেল না। একমুহূর্ত স্থির থাকিয়া তেমনি শান্ত-মৃদুকণ্ঠে কহিল, আর একটা বিছানা ত আপনার খাটের উপরে আছে, তাতে ত অনায়াসে শুতে পারবেন।
অপূর্ব কহিল, আপনি ত বলবেনই ও-কথা। আর আমার খাবার বন্দোবস্ত কি-রকম হবে?
ভারতী চুপ করিয়া রহিল, কিন্তু এই অসঙ্গত ও অত্যন্ত খাপছাড়া প্রশ্নে গোপন হাসির আবেগে তাহার চোখের পাতা-দুটি যেন কাঁপিতে লাগিল। খানিক পরে পরম গাম্ভীর্যের সহিত কহিল, আপনার শোওয়া এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করার ভার কি আমার উপরে আছে?
তাই কি আমি বলচি?
এইমাত্র ত বললেন। এবং ভাল করে নয়, রাগ করে।
অপূর্ব ইহার আর উত্তর খুঁজিয়া পাইল না। তাহার মলিন বিপন্ন-মুখের প্রতি চাহিয়া ভারতী ধীরে ধীরে কহিল, আপনার বলা উচিত ছিল, দয়া করে আমার এই-সব বিলি-ব্যবস্থা আপনি করে দিন।
অপূর্ব কোন দিকে না চাহিয়া কহিল, তা বলা আর শক্ত কি?
ভারতী কহিল, বেশ ত, তাই বলুন না!
তাই ত বলচি, বলিয়া অপূর্ব মুখ ভারী করিয়া আর একদিকে চোখ ফিরাইয়া রহিল।
ভারতী জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কখনো কি কারও রোগে সেবা করেন নি?
না।
আর কখনো বিদেশেও আসেন নি?
না। মা আমাকে কোথাও যেতে দেন না।
তবে, এবারে যে বড় আপনাকে ছেড়ে দিলেন?
অপূর্ব চুপ করিয়া রহিল। কেমন করিয়া এবং কি কারণে যে তাহার বিদেশে আসায় মা সম্মত হইয়াছিলেন এ কথা সে পরের কাছে বলিতে চাহিল না। ভারতী কহিল, এতবড় চাকরি,—না ছেড়ে দিলেই বা চলবে কেন? কিন্তু তিনি সঙ্গে এলেন না কেন?
তাহার এই প্রকার তীক্ষ্ণ মন্তব্য প্রকাশে অপূর্ব ক্ষুণ্ণ হইয়া বলিল, আমার মাকে আপনি দেখেন নি, নইলে এ কথা বলতে পারতেন না। অনেক দুঃখেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু বিধবা মানুষ, এই ম্লেচ্ছদেশে তিনি নিজে আসবেন কেমন করে?
ভারতী একমুহূর্ত স্থির থাকিয়া বলিল, ম্লেচ্ছদের প্রতি আপনাদের ভয়ানক ঘৃণা। কিন্তু রোগ ত শুধু গরীবের জন্য সৃষ্টি হয়নি, আপনারও হতে পারতো। এখনো ত হতে পারে,—মা কি তাহলে আসেন না?
অপূর্বর মুখ ফ্যাকাশে হইয়া গেল, কহিল, এমন করে ভয় দেখালে আমি কি করে একলা থাকবো?
ভারতী কহিল, ভয় না দেখালেও আপনি একলা থাকতে পারবেন না। আপনি অত্যন্ত ভীতু মানুষ।
অপূর্ব প্রতিবাদ করিতে সাহস পাইল না, চুপ করিয়া বসিয়া রহিল।
ভারতী হঠাৎ বলিয়া উঠিল, আচ্ছা, একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেসা করি আমি। আমার হাতে জল খেয়ে তেওয়ারীর ত জাত গেছে, ভাল হয়ে সে কি করবে?
অপূর্ব ইহার শাস্ত্রোক্ত বিধি জানিত না, একটু চিন্তা করিয়া কহিল, সে ত আর সজ্ঞানে খায়নি, মরণাপন্ন ব্যারামে খেয়েচে, না খেলে হয়ত মরে যেত। এতে বোধ হয় জাত যায় না, একটা প্রায়শ্চিত্ত করলেই হতে পারে।
ভারতী ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া বলিল, হুঁ। তার খরচ বোধ হয় আপনাকেই দিতে হবে,—নইলে, আপনি বা তার হাতে খাবেন কি করে?
অপূর্ব তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া কহিল, আমিই দেব বৈ কি, নিশ্চয় দেব। ভগবান করুন সে শীঘ্র ভাল হয়ে উঠুক!
ভারতী বলিল, আর আমিই শুশ্রূষা করে তাকে ভাল করে তুলি, না?
তাহার শান্ত কঠিন কণ্ঠস্বর অপূর্ব লক্ষ্যই করিল না, কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ হইয়া উত্তর দিল, সে আপনার দয়া। তেওয়ারী বাঁচুক, কিন্তু আপনিই ত তার প্রাণ দিলেন।
ভারতী একটুখানি হাসিল। কহিল, ম্লেচ্ছতে প্রাণ দিলে দোষ নেই, মুখে জল দিলেই তার প্রায়শ্চিত্ত চাই, না? এই বলিয়া সে পুনরায় একটু হাসিয়া বলিল, আচ্ছা, এখন আমি চললাম। কাল যদি সময় পাই ত একবার দেখে যাবো। এই কথা বলিয়া সে যাইতে উদ্যত হইয়া হঠাৎ ফিরিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, আর যদি আসতে না পারি ত তেওয়ারী ভাল হলে তাকে বলবেন, আপনি না এসে পড়লে আমি যেতাম না, কিন্তু ম্লেচ্ছদেরও একটা সমাজ আছে, আপনার সঙ্গে একঘরে রাত্রি কাটালে তারাও ভাল বলে না। কাল সকালে আপনার পিয়ন এলে তলওয়ারকরবাবুকে খবর দেবেন। তিনি পাকা লোক, সমস্ত ব্যবস্থাই করে দিতে পারবেন। আচ্ছা, নমস্কার।
অপূর্ব কহিল, পাশ ফিরিয়ে দিলে ওর লাগবে না?
ভারতী বলিল, না।
রাত্রে যদি বিছানা বদলে দেবার দরকার হয়? কি করে দেব?
ভারতী কহিল, সাবধানে দেবেন। আমি মেয়েমানুষ হয়ে যদি পেরে থাকি আপনি পারবেন না?
অপূর্ব শঙ্কিতমুখে স্থির হইয়া রহিল। ভারতী যাইবার জন্য দ্বার খুলিতেই অপূর্ব সভয়ে বলিয়া উঠিল, আর যদি হঠাৎ বসে? যদি কাঁদে?
ভারতী এ-সকল প্রশ্নের আর কোন জবাব দিবার চেষ্টা না করিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া সাবধানে দ্বার বন্ধ করিয়া দিয়া চলিয়া গেল। তাহার মৃদু পদশব্দ কাঠের সিঁড়ির উপরে যতক্ষণ শুনা গেল ততক্ষণ পর্যন্ত অপূর্ব কাঠের মূর্তির মত বসিয়া রহিল, কিন্তু শব্দ থামিবার সঙ্গে সঙ্গেই যেন তাহার চোখের উপরে কোথা হইতে একটা কালো জাল নামিয়া আসিয়া সমস্ত দেহ কি করিয়া যে উঠিল সে জীবনে কখনো অনুভব করে নাই। ভয়ে ছুটিয়া গিয়া বারান্দার কবাট খুলিয়া ফেলিয়া নীচে চাহিয়া দেখিল ভারতী দ্রুতপদে রাস্তায় চলিয়াছে। মিস্ জোসেফ নামটা সে মুখ দিয়া উচ্চারণ করিতেই পারিল না, উচ্চকণ্ঠে ডাক দিল, ভারতী!
ভারতী মাথা তুলিয়া চাহিতে অপূর্ব দুই হাত জোড় করিয়া কহিল, একবার আসুন—মুখ দিয়া আর তাহার কথা বাহির হইল না। ভারতী দ্বিরুক্তি না করিয়া ফিরিল। মিনিট-দুই পরে দ্বার খুলিয়া ঘরে ঢুকিয়া দেখিল অপূর্ব নাই, তেওয়ারী একাকী পড়িয়া আছে।
আগাইয়া আসিয়া উঁকি মারিয়া দেখিল বারান্দায় সে নাই—কোথাও নাই। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, স্নানের ঘরের কবাট খোলা। কিন্তু মিনিট পাঁচ-ছয় অপেক্ষা করিয়াও যখন কেহ আসিল না, তখন সে সন্দিগ্ধচিত্তে দরজার ভিতরে গলা বাড়াইয়া যাহা দেখিতে পাইল তাহাতে ভয়ের আর সীমা রহিল না। অপূর্ব মেঝের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া, দুপুরবেলা যাহা কিছু খাইয়াছিল সমস্ত বমি করিয়াছে, তাহার চোখ মুদিত এবং সর্বাঙ্গ ঘামে ভাসিয়া যাইতেছে। কাছে গিয়া ডাকিল, অপূর্ববাবু!
প্রথম ডাকেই অপূর্ব চোখ মেলিয়া চাহিল, কিন্তু পরক্ষণেই আবার চোখ বুজিয়া তেমনি স্থির হইয়া রহিল। ভারতী মুহূর্তকালমাত্র দ্বিধা করিল, তাহার পরেই সে অপূর্বর কাছে বসিয়া মাথায় হাত দিয়া আস্তে আস্তে বলিল, উঠে বসতে হবে যে। মাথায় মুখে জল না দিলে ত শরীর শোধরাবে না অপূর্ববাবু!
অপূর্ব উঠিয়া বসিলে সে হাত ধরিয়া তাহাকে কলের কাছে আনিয়া জল খুলিয়া দিলে সে হাত-মুখ ধুইয়া ফেলিল। তখন ধীরে ধীরে তাহাকে তুলিয়া আনিয়া খাটের উপরে শোয়াইয়া দিয়া ভারতী গামছার অভাবে নিজের আঁচল দিয়া তাহার হাত ও পায়ের জল মুছাইয়া দিল এবং একটা হাতপাখা খুঁজিয়া আনিয়া বাতাস করিতে করিতে কহিল, এইবার একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন, আপনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমি যাবো না।
অপূর্ব লজ্জিত মৃদুকণ্ঠে কহিল, কিন্তু আপনার যে এখনো খাওয়া হয়নি।
ভারতী বলিল, খেতে আর আপনি দিলেন কৈ? আপনি ঘুমোন।
ঘুমিয়ে পড়লে ত আপনি চলে যাবেন না?
না, আপনার ঘুম না ভাঙ্গা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
অপূর্ব খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া সহসা জিজ্ঞাসা করিল, আচ্ছা, আপনাকে মিস্ ভারতী বলে ডাকলে কি আপনি রাগ করবেন?
নিশ্চয় করব। অথচ শুধু ভারতী বলে ডাকলে করব না।
কিন্তু অন্য সকলের সামনে?
ভারতী একটু হাসিয়া কহিল, হলই বা অন্য সকলের সামনে। কিন্তু চুপ করে একটু ঘুমোন দিকি,—আমার ঢের কাজ আছে।
অপূর্ব বলিল, ঘুমোতে আমার ভয় করে আপনি পাছে ফাঁকি দিয়ে চলে যান।
কিন্তু জেগে থাকলেও যদি যাই, আপনি আটকাবেন কি করে?
অপূর্ব চুপ করিয়া চাহিয়া রহিল। ভারতী কহিল, আমাদের ম্লেচ্ছসমাজে কি সুনাম দুর্নাম বলে জিনিস নেই? আমাকে কি তার ভয় করে চলতে হয় না?
অপূর্বর বুদ্ধি ঠিক প্রকৃতিস্থ ছিল না, প্রত্যুত্তরে সে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করিয়া বসিল। কহিল, আমার মা এখানে নেই, আমি রোগে পড়ে গেলে তখন আপনি কি করবেন? তখন ত আপনাকেই থাকতে হবে।
ভারতী কহিল, আমাকেই থাকতে হবে? আপনার বন্ধু তলওয়ারকরবাবুদের খবর দিলে হবে না?
অপূর্ব সজোরে মাথা নাড়িয়া বলিয়া উঠিল, না, তা কিছুতেই হবে না। হয় আমার মা, না হয় আপনি,— একজনকে দেখতে না পেলে আমি কখনো বাঁচব না। কাল যদি আমার বসন্ত হয়, এ কথা যেন আপনি কিছুতেই ভুলে যাবেন না। তাহার অনুরোধের শেষ দিকটা কি যে একরকম শুনাইল, ভারতী হঠাৎ আপনাকে যেন বিস্মৃত হইয়া গেল। বিছানার একপ্রান্তে বসিয়া পড়িয়া সে অপূর্বর গায়ের উপর একটা হাত রাখিয়া রুদ্ধকণ্ঠে বলিয়া উঠিল,—না না, ভুলব না, ভুলব না! এ কি কখনো আমি ভুলতে পারি? কিন্তু কথাটা উচ্চারণ করিয়াই সে নিজের ভুল বুঝিতে পারিয়া চক্ষের পলকে উঠিয়া দাঁড়াইল। জোর করিয়া একটু হাসিয়া কহিল, কিন্তু ভাল হয়েও ত বিপদ কম ঘটবে না অপূর্ববাবু! ঘটা করে আবার ত প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।
কিন্তু ভয় নেই, তার দরকার হবে না। আচ্ছা, চুপ করে একটু ঘুমোন; বাস্তবিক, আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।
কি কাজ?
ভারতী কহিল, কি কাজ! খাওয়া ত দূরে থাক, সারাদিন স্নান পর্যন্ত করবার সময় পাইনি।
কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় স্নান করলে অসুখ করবে না?
ভারতী বলিল, করতেও পারে, অসম্ভব নয়। কিন্তু স্নানের ঘরে যে কাণ্ড করে রেখেছেন তা পরিষ্কার করার পরে না নেয়ে কি কারু উপায় আছে নাকি? তারপরে দুটো খেতেও হবে ত?
অপূর্ব অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া কহিল, কিন্তু সে-সব আমি সাফ করে ফেলবো,—আপনি যাবেন না। এই বলিয়া সে তাড়াতাড়ি উঠিতে যাইতেছিল। ভারতী রাগ করিয়া কহিল, আর বাহাদুরির দরকার নেই, একটু ঘুমোবার চেষ্টা করুন। কিন্তু এত বড় ঠুনকো জিনিসটিকে যে মা কোন্ প্রাণে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন আমি তাই শুধু ভাবি! সত্যি বলচি, উঠবেন না যেন। তিনি নেই,—কিন্তু এখানে আমার কথা না শুনলে ভারী অন্যায় হবে বলে দিচ্চি। এই বলিয়া সে কৃত্রিম ক্রোধের স্বরে শাসনের হুকুম জারি করিয়া দিয়া দ্রুতপদে প্রস্থান করিল।
উদ্বিগ্ন, শ্রান্ত ও একান্ত নির্জীবের ন্যায় অপূর্ব কখন যে ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল সে জানিতেও পারে নাই, তাহার ঘুম ভাঙ্গিল ভারতীর ডাকে। চোখ মুছিয়া বিছানায় উঠিয়া বসিয়া সম্মুখের ঘড়িতে চাহিয়া দেখিল রাত্রি বারোটা বাজিয়া গেছে। ভারতী পাশে দাঁড়াইয়া। অপূর্বর প্রথম দৃষ্টি পড়িল তাহার চুলের আয়তন ও দীর্ঘতার প্রতি। সদ্য-স্নান-সিক্ত বিপুল কেশভার ভিজিয়া যেমন নিবিড় কালো হইয়াছে, তেমনি ঝুলিয়া প্রায় মাটিতে পড়িয়াছে। স্নিগ্ধ সাবানের গন্ধে ঘরের সমস্ত রুদ্ধ বায়ু হঠাৎ যেন পুলকিত হইয়া উঠিয়াছে। পরনে একখানি কালপাড়ের সুতার শাড়ী, —গায়ে জামা না থাকায় বাহুর অনেকখানি দেখা যাইতেছে। ভারতীর এ যেন আর এক নূতন মূর্তি, অপূর্ব পূর্বে কখনো দেখে নাই। তাহার মুখ দিয়া প্রথমেই বাহির হইল, এত ভিজে চুল শুকোবে কি করে?
ভারতী কহিল, শুকোবে না। কিন্তু সে জন্যে ভাবতে হবে না, আপনি আসুন দিকি আমার সঙ্গে।
তেওয়ারী কেমন আছে?
ভাল আছে। অন্তত, আজ রাত্রির মত আপনাকে ভাবতে হবে না। আসুন।
তাহার সঙ্গে সঙ্গে স্নানের ঘরে আসিয়া দেখিল ছোট একটি টুকরিতে কতকগুলি ফলমূল, একটা বঁটি, একটা থালা, একটা গেলাস— ভারতী দেখাইয়া কহিল, এর বেশী করা ত চলবে না। কলের জলে সমস্ত ধুয়ে ফেলুন,—বঁটি, থালা, গেলাস সব। গেলাসে করে জল নিন, নিয়ে ও-ঘরে আসুন, আমি আসন পেতে রেখেছি।
অপূর্ব জিজ্ঞাসা করিল, এ-সকল আপনি কখন আনলেন?
ভারতী বলিল, আপনি ঘুমোলে। কাছেই একটা ফলের দোকান আছে, দূরে যেতে হয়নি। আর টুকরিটা ত আপনাদেরই। এই বলিয়া সে অন্যত্র চলিয়া গেল, শুধু সতর্ক করিয়া দিয়া গেল, বঁটি ধুইতে গিয়া যেন হাত না কাটে।
খানিক পরে আসনে বসিয়া অপূর্ব ফল কাটিতেছিল, এবং ভারতী অদূরে বসিয়া হাসিতেছিল। অপূর্ব কহিল, আপনি হাসুন ক্ষতি নেই। পুরুষ মানুষে বঁটিতে কাটতে পারে না সবাই জানে। কিন্তু আপনি আমার খাবার জন্যে যে যত্ন করেছেন সেজন্যে আপনাকে সহস্র ধন্যবাদ। মা ছাড়া এমন আর কেউ করতেন না।
তাহার শেষ কথাটা ভারতী কানেই তুলিল না। আগের কথার উত্তরে কহিল, হাসি কি সাধে অপূর্ববাবু! পুরুষ মানুষে বঁটিতে কাটতে পারে না সবাই জানে সত্যি, কিন্তু, তাই বলে এমনটি কি সবাই জানে? তেওয়ারী ভাল হয়ে গেলে মাকে আমি নিশ্চয় চিঠি লিখে দেব, হয় তিনি আসুন, না হয় ছেলেকে তাঁর ফিরিয়ে নিয়ে যান। এ মানুষকে বাইরে ছেড়ে রাখা চলবে না।
অপূর্ব কহিল, মা তাঁর ছেলেকে ভাল করেই জানেন। কিন্তু, দেখুন, আমি না হয়ে আমার দাদাদের কেউ হলে আপনার এত কথা আজ চলত না। আপনাকে দিয়েই তাঁরা সব কাজ করিয়ে নিতেন।
ভারতী বুঝিতে পারিল না। অপূর্ব বলিল, দাদারা ছোঁন না, খান না এমন জিনিসই নেই। মুরগি এবং হোটেলের ডিনার না হলে ত তাঁদের খাওয়াই হয় না।
ভারতী আশ্চর্য হইয়া কহিল, বলেন কি?
অপূর্ব কহিল, ঠিক তাই। বাবা ত অর্ধেক ক্রীশ্চান ছিলেন বললেই হয়। মাকে কি এই নিয়ে কম দুঃখ পেতে হয়েছে!
ভারতী উৎসুক হইয়া কহিল, সত্যি নাকি? কিন্তু মা বুঝি ভয়ানক হিন্দু?
অপূর্ব বলিল, ভয়ানক আর কি, হিন্দুঘরের মেয়ের যথার্থ যা হওয়া উচিত, তাই। মায়ের কথা বলিতে বলিতে তাহার কণ্ঠস্বর করুণ এবং স্নিগ্ধ হইয়া উঠিল, বলিল, বাড়িতে দুটি বউ, তবু মাকে আমার নিজে রেঁধে খেতে হয়। কিন্তু এমনি মা যে কখখনো কারু ওপর জোর করেন না, কখখনো কাউকে এর জন্যে অনুযোগ করেন না। বলেন, আমিও ত নিজের আচার-বিচার ত্যাগ করে আমার স্বামীর মতে মত দিতে পারিনি, এখন, ওরাও যদি আমার মতে সায় দিতে না পারে ত নালিশ করা উচিত নয়। আমার বুদ্ধি এবং আমার সংস্কার মেনেই যে বউব্যাটাদের চলতে হবে তার কি মানে আছে?
ভারতী ভক্তি ও শ্রদ্ধায় অবনত হইয়া কহিল, মা সেকেলে মানুষ, কিন্তু ধৈর্য ত খুব বেশি।
অপূর্ব উদ্দীপ্ত হইয়া বলিল, ধৈর্য? মায়ের ধৈর্যের কি সীমা আছে নাকি? আপনি তাঁকে দেখেন নি, কিন্তু দেখলে একেবারে আশ্চর্য হয়ে যাবেন বলে দিচ্চি।
ভারতী প্রসন্ন মৌনমুখে একদৃষ্টে চাহিয়া রহিল, অপূর্ব ফলের খোসা ছাড়ানো বন্ধ রাখিয়া বলিতে লাগিল, ধরলে, সমস্ত জীবনই মা আমার দুঃখ পেয়ে আসছেন, এবং সমস্ত জীবনই স্বামী-পুত্রদের ম্লেচ্ছাচার বাড়ির মধ্যে নিঃশব্দে সহ্য করে আসছেন। তাঁর একটি মাত্র ভরসা আমি। অসুখে-বিসুখে কেবল আমার হাতেই দুটো হবিষ্য সিদ্ধ তিনি মুখে দেন।
ভারতী কহিল, এখন ত তাঁর কষ্ট হতে পারে।
অপূর্ব বলিল, পারেই ত। হয়ত হচ্চেও। তাইত আমাকে তিনি প্রথমে ছেড়ে দিতে চাননি। কিন্তু, আমিও ত চিরকাল ঘরে বসে থাকতে পারিনে! কেবল তাঁর একটি আশা আমার বউ এলে আর তাঁকে রেঁধে খেতে হবে না।
ভারতী একটুখানি হাসিয়া কহিল, তাঁর সেই আশাটি কেন পূর্ণ করেই এলেন না? সেই ত উচিত ছিল!
অপূর্ব তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া বলিয়া উঠিল—ছিলই ত। মেয়ে নিজে পছন্দ করে মা যখন সমস্ত ঠিক করছিলেন তখনি আমাকে তাড়াতাড়ি চলে আসতে হল, সময় হল না। কিন্তু বলে এলাম, মা, যখনি চিঠি লিখবে তখনি ফিরে এসে তোমার আদেশ পালন করব।
ভারতী বলিল, তাই ত উচিত।
অপূর্ব মাতৃস্নেহে বিগলিত হইয়া কহিল, উচিত নয়? বারব্রত করবে, বিচার-আচার জানবে, ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের ঘরের মেয়ে হবে,—মাকে কখনো দুঃখ দেবে না,—সেই ত আমি চাই। কাজ কি আমার গান-বাজনা-জানা কলেজে-পড়া বিদুষী মেয়ে?
ভারতী বলিল, দরকার কি!
অপূর্ব নিজেই যে একদিন ইহার বিরোধী ছিল এবং বৌদিদির স্বপক্ষে লড়াই করিয়া মাকে রাগ করিয়া বলিয়াছিল—ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের ঘর হইতে যা হউক একটা মেয়ে ধরিয়া আনিয়া ল্যাঠা চুকাইয়া দিতে, সে-কথা আজ সে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হইল। বলিতে লাগিল, দেখুন আপনি আমাদের জাতও নয়, সমাজেরও নয়, জলটুকু পর্যন্ত নেওয়া যায় না, ছোঁয়াছুঁয়ি হলে কাপড়খানি অবধি ছেড়ে ফেলতে হয় এত তফাত, তবু আপনি যা বোঝেন আমার দাদারা কিংবা বৌদিদিরা তা বুঝতে চান না।
যার যা ধর্ম তাই ত তার মেনে চলা চাই? একবাড়ি লোকের মধ্যে থেকেও যে মা আমার একলা, এর চেয়ে দুর্ভাগ্য কি আর আছে? তাই ভগবানের কাছে আমি শুধু এই প্রার্থনা করি, আমার কোন আচরণে আমার মা যেন না কোনদিন ব্যথা পান। বলিতে বলিতে তাহার গলা ভারী হইয়া অশ্রুভারে দুই চক্ষু টলটল করিতে লাগিল।
এই সময়ে ঘুমন্ত তেওয়ারী কি একটা শব্দ করিতে ভারতী তাড়াতাড়ি উঠিয়া চলিয়া গেল। অপূর্ব হাতের উলটা পিঠে চোখ মুছিয়া ফেলিয়া পুনরায় ফল বানাইতে প্রবৃত্ত হইল। মাকে সে অতিশয় ভালবাসিত, এবং বাড়িতে থাকিতে সেই মাকে খুশী রাখিতে সে মাথার টিকি হইতে একাদশীর দিনে ভাতের বদলে লুচি খাওয়া অবধি সবই পালন করিয়া চলিত। বস্তুতঃ, ব্রাহ্মণ সন্তানের আচারভ্রষ্টতাকে সে নিন্দাই করিত, কিন্তু প্রবাসে আসিয়া আচার-বিচারের প্রতি তাহার এরূপ প্রগাঢ় অনুরাগ বোধ হয় তাহার জননীও সন্দেহ করিতে পারিতেন না। আসল কথা এই যে, আজ তাহার দেহমন ভয়ে ও ভাবনায় নিরতিশয় বিকল হইয়াছিল, মাকে কাছে পাইবার একটা অন্ধ আকুলতায় ভিতরে ভিতরে তাহার কুজ্ঝটিকার সৃষ্টি করিতেছিল, সেখানে সমস্ত ভাবই যে পরিমাণ হারাইয়া বিকৃত আতিশয্যে রূপান্তরিত হইয়া উঠিতেছিল এ খবর অন্তর্যামীর অগোচর রহিল না, কিন্তু ভারতীর বুকের মধ্যেটা অপমানের বেদনায় একেবারে টনটন করিতে লাগিল।
সে খানিক পরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, অপূর্ব কোনমতে ফল-কাটা শেষ করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। কহিল, বসে আছেন, খাননি?
অপূর্ব বলিল, না, আপনার জন্য বসে আছি।
কিসের জন্য?
আপনি খাবেন না?
না। দরকার হলে আমার আলাদা আছে।
অপূর্ব ফলের থালাটা হাত দিয়া একটুখানি ঠেলিয়া দিয়া বলিল, বাঃ—তা কি কখন হয়? আপনি সারাদিন খাননি, আর—
তাহার কথাটা তখনও শেষ হয় নাই, একটা অত্যন্ত শুষ্ক চাপা কণ্ঠস্বরে জবাব আসিল, আঃ—আপনি ভারী জ্বালাতন করেন। ক্ষিদে থাকে খান, না হয় জানালা দিয়ে ফেলে দিন। এই বলিয়া সে মুহূর্ত অপেক্ষা না করিয়া ও-ঘরে চলিয়া গেল। বস্তুতঃ, মুহূর্তমাত্রই তাহার মুখের চেহারা অপূর্ব দেখিতে পাইয়াছিল, কিন্তু সেই মুহূর্তকালই তাহার বুকে মরণকাল পর্যন্ত ছাপ মারিয়া দিল। এ মুখ সে আর ভুলিল না। সেই আসার দিন হইতে অনেকবার দেখা হইয়াছে; বিবাদে, সৌহৃদ্যে, শত্রুতায়, বন্ধুত্বে, সম্পদে ও বিপদে কতবারই ত এই মেয়েটিকে সে দেখিয়াছে, কিন্তু, সে-দেখার সহিত এ-দেখার সাদৃশ্য নাই। এ যেন আর কেহ।
ভারতী চলিয়া গেল, ফলের পাত্র তেমনি পড়িয়া রহিল এবং তেমনি নির্বাক নিস্পন্দ কাঠের মত অপূর্ব বসিয়া রহিল। কিসে যে কি হইল সে যেন তাহার উপলব্ধির অতীত।
ঘণ্টা-খানেক পরে সে এ ঘরে আসিয়া দেখিল তেওয়ারীর শিয়রের কাছে একটা মাদুর পাতিয়া ভারতী বাহুতে মাথা রাখিয়া ঘুমাইতেছে। সে যেমন নিঃশব্দে আসিয়াছিল তেমনি নিঃশব্দে ফিরিয়া গিয়া তাহার খাটে শুইয়া পড়িল, এবং শ্রান্ত চক্ষু ঘুমে মুদিত হইতে তিলার্ধ বিলম্ব হইল না। এই ঘুম যখন ভাঙ্গিল তখন ভোর হইয়াছে।
ভারতী কহিল, আমি চললুম।
অপূর্ব ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিল, কিন্তু ভাল করিয়া চেতনা হইবার পূর্বেই দেখিল, সে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেছে।