পত্র-৬
১৫.০৫.৮৪
মুহম্মদপুর
সকাল
একটা কাজের কথা জানাই। আমার সমস্ত কিছু সম্পর্কে তুমি তোমার সবচে’ অকপট ধারনা লিখে জানাও
যেমন আমার স্বপ্ন, কাজ, স্বভাব, জীবন যাপন, সামাজিক আচরন, সংসার ও তোমার প্রতি দায়িত্ববোধ। তোমাকে অকপট স্বীকারোক্তি করতে হবে।
মানচিত্রের(১৪) ফর্মাটা কি নিয়ে গেছ? পুরোটা নিয়ে এসেছি। এই তাজা আনন্দটা তোমাকে দিতে পারলাম কৈ! জানি না এখন বইটার ব্যাপারে তোমার আগের মতো আগ্রহ আছে কিনা!
পাশে ইসহাক(১৫)। স্বপ্ন মিলাচ্ছি। কাজও মিলছে। কেমন জানি খারাপ লাগে। উজ্জ্বলতায় এতো প্রতারনা! এতো অপচয়! তবু যাবো একবার। দেখতে যাবো। তোমারও খুব ভালো লাগে উজ্জ্বলতা। আমি টের পাই। যাবো, আমি একবার যাবো। একবার ওই ঠুনকো কাচের দেয়ালে করাঘাত কোরে বলবো : আমাকে আর এক গ্লাস মদ দাও।
ওখানে কি ভয়ংকর ভাঙন তুমি জানো না। অবশ্য আমার এই ধারনার সাথে তুমি একমত না-ও হতে পারো।
দ্বিধা হলো মধ্যবিত্তের প্রধানতম সম্পদ। আর এই সম্পদটির কারনে সে না-পারে নিচের মানুষের সাথে যেতে না-পারে উপরে উঠতে।
দেশে পুঁজিবাদ বিকশিত হচ্ছে। আজকাল যে কোনো কাজ বিক্রি কোরে সবাই উপরে উঠতে চাইছে। সবারই বাড়ি গাড়ি, উজ্জ্বলতা চাই। চাওয়ার এই লড়াই খুব দ্রুত তুঙ্গে উঠতে চলেছে। আর সে সময়টি অত্যন্ত নিকটে। এখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। নিজেকে পরিষ্কার প্রশ্ন কোরে জেনে নিতে হবে কি কি চাই মন? এবং তা স্পষ্ট কোরে উচ্চারন করতে হবে। স্বপ্ন মিলাতে হবে। দুজনকেই।
চলো স্বপ্ন মিলাই।
এসো কাজগুলো মিলাই।
একটু ভাবি,
দুজনে একটু অকপট হয়ে ভাবি।
চলো স্বপ্ন মিলাই—
আগে তো শরীর
শরীরে বসত করে মনরূপ
পাখি শরীর মিলাই চলো,
দেখি, মেলে কিনা শরীরের স্বাদ।
মন তো স্নায়ু
মন একটি স্নায়বিক প্রক্রিয়ার নাম
সেখানে বসত করে স্বপ্ন—
চলো স্বপ্ন মিলাই ॥
রোদ
—
১৪. মানচিত্র— মানুষের মানচিত্র। রুদ্রের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ।
১৫. ইসহাক— কথাসাহিত্যিক ইসহাক খান। রুদ্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।