পত্র-৪
২৬.১.৮৩
জাহাঙ্গীরনগর বিঃ
সকাল(৭)
আজ সকালে আরো চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। বন্দীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপরও হাত পড়বে। দীর্ঘ অনেক দিনে এবার
পত্রগুচ্ছ। ৮৮১
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলো একত্রিত হয়ে অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে, সামরিক সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বিরোধিতা করতে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে যাচ্ছে।
ঠিক বুঝতে পারছি না ২৯ তারিখ আসতে পারবো কি-না! সাংস্কৃতিক জোট-এর জরুরী সব দায়িত্বগুলো পড়েছে আমার উপর। দিন রাত ছুটতে হচ্ছে। আবার যাতে হুট কোরে ধরা না পড়ি তার জন্যে যথেষ্ট সাবধানেও থাকতে হচ্ছে। কাছে পয়সা কড়িও নেই।
‘মানচিত্রে’র” জন্যে অন্যভাবে চেষ্টা করছি, এখনো বুঝতে পারছি না শেষমেশ কি হয়।
আচ্ছা, ২৯ তারিখ যদি না আসতে পারি? খুব কষ্ট পাবে? খারাপ লাগবে খুব? সামনে রফিক ভাই(৯) পান্ডুলিপি বানাচ্ছে। আর আমি লিখছি তোমাকে। কাল সকালে ঢাকা ফিরবো। তোমার কাছ থেকে আসার পর মাত্র এক সন্ধায় ঘন্টা তিনেকের জন্যে বাসায় যেতে পেরেছি। এভাবেই যাচ্ছে।
হ্যাঁ। সরাসরি রাজনীতি তো অনেক দিন থেকেই করছি। তবে সে রাজনীতির ক্ষেত্র হলো সাহিত্য। আমার মাধ্যমে, আমার শাখায় আমি রাজনীতি করছি। দীর্ঘ দিনের লালিত বিশ্বাসের চর্চা এখন আরো তীক্ষ্ণ হয়েছে। আরো পরিপক্ক আর স্থিত হয়েছে। আজ মনে হয় ভুল হয়নি। ছ’বছর আগে আমরা যা ভেবেছি আজ তাই-ই ভাবছে অনেকে—। লেখক বলতে আজ আর লোকে গগন-বিহারী দ্বিপদ প্রানী বোঝে না। একজন লেখকের ভূমিকা আজ অনেক দায়িত্বপূর্ন। অনেক বেশি পষ্ট, ইতিবাচক আমাদের অধিকাংশ রাজনীতিকেরা বড়ো বেশি ফাঁপা, বড়ো বেশি আপোসমুখি। আমাদের প্রায় সব বুদ্ধিজীবী মেরুদন্ডহীন, বিভ্রান্ত। আমাদের অধিকাংশ লেখক ডোবার মতো— পচা জল, স্রোতহীন, শ্যাওলা ঢাকা।
মনে হয় ভুল করিনি। আমাদের জল-মাটি থেকেই জন্ম নেবে আমাদের রাজনীতি, আমাদের সাহিত্য, সঙ্গীত। এই নদী, চর, অরন্য আর শস্যের মাঠ থেকে, সেই মাঠের মানুষ থেকে জন্ম নেবে আমাদের ভাষা। আমাদের স্বপ্ন আর স্মৃতির ভাষা। ভালোবাসার ভাষা।
যদি না যেতে পারি, কষ্ট পেও না। লক্ষ্মী থেকো। আদোর।
রুদ্র
—
৭. সকাল— তসলিমা নাসরিন। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তসলিমাকে ‘সকাল’ নামে চিঠি লিখতেন।
৮. মানচিত্র— মানুষের মানচিত্র। রুদ্রের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। সব্যসাচী প্রকাশনী থেকে ১৯৮৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়।
৯. রফিক ভাই— কবি মোহাম্মদ রফিক।