পত্র-২
ঢাকা
৩. ভাদ্র. ৮৫
বীথি(৪)
পরপর খান কয়েক চিঠি পেয়েছি তোর। কিন্তু ঠিক নির্ঝঞ্ঝাট হয়ে বসতে পারিনি এ- কদিন। ঢাকার সব খবর সাইফুলের(৫) কাছে শুনেছিস নিশ্চয়ই। আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিন্তু সাবসিডিয়ারির বাকি নেই বেশী। তোর পরীক্ষার ফল জানতে পারলাম না। কি হয়েছে— উদ্বিগ্নে আছি খুব।
জীবন সম্পর্কে তোর এতো হতাশ ধারনা কেন? কারো জীবনই কখনো ধোয়া মাজা তুলসি পাতাটির মতো হয় না। জীবনের নিয়মই এরকম। ভালো এবং মন্দে তা মেশানো। মানুষ নষ্ট হয়, অপবিত্র হয় মনে— দেহে নয়। দেহটা হচ্ছে নৌকোর মতো, পচা. নষ্ট. ঘোলা জলের ভিতর দিয়ে তাকে ভাসতে হয় কিন্তু সে ওইসব থেকে রক্ষা করে তার যাত্রীকে অর্থাৎ তার মনকে। নৌকোয় পচা পানি লেগেছে বোলে যাত্রীর গায়েও পচা পানি লাগে না। আর একটু ভালো কোরে তাকিয়ে দ্যাখ আমরা আসলে কেউ-ই কাউকে বুঝতে পারি না। মানুষ নিজেকেই বোঝে না, বুঝতে পারে না। কাজেই অন্যেরা বুঝলো না বোলে দুঃখ কোরে লাভ কি! মানুষ তো একা। একাই তাকে তার সমস্ত বোঝা বইতে হয়। প্রিয়জনরা বা স্বজনরা শুধু এক ভালোবাসার না- বোঝা ভাষা নিয়ে উৎকণ্ঠিত হয়— নিজের কাছে তারাও তো একা মানুষ। হৃদয়ের হালটাকে শক্ত কোরে ধ’রে রাখ। ব্যর্থতা আর দুঃখ তো জীবনেই আসে। জীবন মানে তো সবকিছু। শুধু সুখ তো আর জীবন না। তোদের ব্যাপারটা নিয়ে আমি চিন্তা করেছি অনেক, কিন্তু কিছু কিনারা কোরে উঠতে পারছি না। বুঝতে পারছি না ঠিক কোনটা ভালো হবে। কোনটা শুভ হবে। কোনো কিছুতেই আমার আপত্তির কোনো কারন থাকতে পারে না। কারন খুব নির্মম হলেও প্রত্যেকেই তার নিজের জীবনকে বহন করে, বহন করতে সে বাধ্য। আর তাড়াহুড়োর তো কিছু নেই— নিজের ব্যাপারটা ভালো কোরে ভেবে দ্যাখ। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া কোরে দ্যাখ।
চিঠি লিখে জানাস। আমি ভালো আছি। শুভেচ্ছান্তে—
দাদা
৪. শরিফুন হাসান (বীথি)— রুদ্রের বোন। ভাইবোনদের ভেতর রুদ্রের পরই তিনি।
৫. সাইফুল— মোঃ সাইফুল্লাহ। রুদ্রের ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে তৃতীয়।