পণ্য ও বাঙলা
বাঙলাদেশি পণ্য বাঙলা ভাষাকে সহ্য করে না। আমাদের ‘শিল্পপতি’রা নিম্নমানের পণ্য ও উচ্চমানের ইংরেজি নামের জন্যে বিখ্যাত। বদনা থেকে নখপালিশ যা-ই তাঁরা বানান, তারই নাম দেন ইংরেজিতে। যে ছুন্নু-পাউডার তাঁরা তৈরি করেন, তা ধনীদের প্রাসাদে যায় না, যায় গরিব গ্রামে বস্তিতে; তবুও ওগুলোর নাম ইংরেজিতে। আমাদের ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা জনসাধারণের রুচি নষ্ট ক’রে চলেছেন সব সময়; তাঁরা ক্রেতাদের মনে এমন এক অসুস্থবোধ সঞ্চার করে দিয়েছেন যে ইংরেজি নামের পণ্যমাত্রই উৎকৃষ্ট। পণ্যদ্রব্যের মধ্যে প্রসাধনসামগ্রী প্রায় সর্বত্রগামী, এবং এগুলোর অধিকাংশের নামই ইংরেজিতে : ‘আমুর, অ্যালেগ্রো, প্রিন্সেস, নিউহ্যাভেন, এমেকস্, লুক, হানিডিউ, পেপস, সিনড্রেলা, মুনড্রপ, লাভ, গ্যাকোটাচ, সি-বোঁ, ফ্লোরা ইত্যাদি। বাঙলা নাম পাওয়া যায় শুধু আয়ুর্বেদীয় পণ্যে : ‘গন্ধরাজ, লক্ষীবিলাস, নিদ্রাকুসুম, জবাকুসুম, অনামিকা আলতা, হিমকবরী’। বিস্কুট টফিশ্রেণীর নাম ইংরেজিতে : ‘ব্যানানা ক্রিম, রোলিও, পাইনএপেল, বোনালিম, মিমি’। পাটকল-তাঁতকল সংস্থার উৎপাদিত কার্পেট-শাল প্রভৃতির নাম ইংরেজিতে : “ইনটিমেট, এলিট, ডেকর, অ্যারিস্টোক্র্যাট, নোভাটেকস’। ওষুধের কারখানাগুলো বাঙলা নাম ভাবতেই পারে না। টেলিফোন যন্ত্রটি খুব শক্তিশালী, এবং এটি এখন বাঙলাদেশেই উৎপাদিত হয়; তবুও এর সংখ্যাগুলো ইংরেজিতে। আমাদের পণ্যজগতের দিকে তাকালে বোঝা যায় যে আমাদের ব্যবসায়ীরা জনসাধারণকে শুধু অর্থগতভাবে শোষণ করছে না, সঙ্গে সঙ্গে বিকৃত ক’রে চলছে তাদের মানসিক জগত।