পটলা সমগ্র ১
পটলা সমগ্র ২

পটলার সঙ্গীত সাধনা

পটলার সঙ্গীত সাধনা

ইদানীং পটলা আমাদের কাছে একজন বিশেষ ব্যক্তি হয়ে উঠেছে। অবশ্য গুণপনার অভাব ওর নেই। আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের পঞ্চজনের মধ্যে ওকেই ভগবানও সব থেকে বেশি ভালোবাসেন। দেখতেও বেশ সুন্দর ছিমছাম চেহারা, মাথার চুলগুলোকে ইদানীং একটু বাবরির স্টাইলে বাড়িয়ে তুলেছে তাতে ওকে দেখে শিল্পী-টিল্লী মনে হয়। আর গুণও আছে। কবিতা লিখতে ওস্তাদ।

স্কুলের গেটের ধারে আধমরা কামিনীগাছটাকে নিয়ে দেড় ডজন কবিতা ফুটিয়েছে, বাজপড়া তালগাছের জন্য একবার দু’পাতা জুড়ে হাহাকার করেছিল, সেবার বাংলার মাস্টারমশাইকে নিয়ে একটা বাইশপদী কবিতা লিখে—থার্ডমাস্টারের হাতে নাক কেটে রক্তপাতও ঘটেছিল তার।

অবশ্য পটলা বলে, ক-কবিতার জন্যে শ-শহিদও হতে পারি।

রক্তপাত তো…তু… তু—

আমিই পাদপূরণ করে দিই—তুচ্ছ ব্যাপার ।

পটলা অভিনয়ও করে সুন্দর, তবে সংলাপ-টংলাপগুলো থাকলে মুস্কিল। দিনটা কখন আইসে যাবে কে জানে। তাই কাটা সৈনিক নীরব সভাসদ ইত্যাদি করে থাকে দারুণ। সেবার দূতের পার্ট করতে গিয়ে এমন গিয়ার মেরেছিল যে রাজামশাইও ঘায়েল। সেই থেকে নীরব ভূমিকাগুলো ওর বাঁধা ।

ইদানীং পটলার চলেছে সঙ্গীত সাধনা। ভোর থেকে উঠে বার-বাড়িতে বসে তা-না-না-না করে চিৎকার করে। অবশ্য কালোয়াতি গানে ওই জিব আটকাবার কোনো ব্যাপার নেই। সাদা কথা তা-না-না-তুম্ না-না, গা-ধা ইত্যাদিতে ব্রেক ফেল করার মত কিছু নেই। ভট্টাচার্য পাড়ার ওস্তাদ ভীম ভট্টাচার্যের কাছে তালিম নিচ্ছে।

হোঁৎকা বলে—পটলা গান শিখবো, ওস্তাদ হইবো। মাথা খারাপ হইয়া গেছে গিয়া ওডার। আমি জানাই—সেদিন স্কুলের ফাংশানে কেমন গাইল দেখেছিস? আহা-

পটলা গান এক-আধটু গাইতে পারে। ওদের বাড়িতেও গানের চর্চা আছে। সেসব রাগপ্রধান না হয়, ভজন দু’চারটে, রবীন্দ্রসঙ্গীতও থাকে।

কিন্তু এবার পটলা নাকি বন্দেজি গাইয়ে হয়ে উঠবে। ভীম ভট্টাচার্য কালোয়াৎ ওকে এখানের তালিম দেওয়া শেষ করে বেনারসে নিয়ে যাবে কোনো বড় ওস্তাদের কাছে। খোদ সরকার থেকে গান শেখার জন্য মাস মাস আড়াইশো টাকা বৃত্তির ব্যবস্থাও নাকি করে দেবে ওই ওস্তাদ।

ভীম ভটচায এদিগরের একটি নাম। দশাসই বিরাট চেহারা, তাই আসল নামটা চাপা পড়ে গিয়ে ওই ভীম নামটাই বহাল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে জমিদার বাড়ির হলঘরে কালোয়াতি গানের আসর বসে, ভীম-এর হুঙ্কার শোনা যায় বাইরে থেকে।

কে জানে আজ তেমনি কোথাও আসর বসেছে বোধহয়। অবশ্য সেখানে আমাদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু পটলাকে দরকার—তিন-চারদিন পরই ওর পিসির বাড়িতে বেড়াতে যাব। আমের সময়—আম-লিচুর বাগান আছে ওর পিসির, আমাদেরও বার বার করে যেতে বলেছে।

কিন্তু পটলার দেখা নেই। সব ব্যবস্থা কখন করা যাবে তাই ভাবছি। তাছাড়া পটলাকেও এখান থেকে কিছুদিন সরে যেতে হবে তার নিরাপত্তার জন্য।

বন্ধু হয়ে তাই পটলাকে বাঁচাবার জন্যই ওকে নিয়ে চলে যাব আমরা। কারণ সন্ধ্যা না হলে পটলার বেরুবার উপায় নেই ইদানীং ।

হোঁৎকা নুন ঝালটা আঙুলে লাগিয়ে চুষছে, চানাচুরগুলো ফুরিয়ে গেছে আগেই, হঠাৎ ফটিক খবরটা নিয়ে আসে-বড় তরফে পটলাকে আটকেছে ভীম ভটচায।

অর্থাৎ আজও ভীম ভটচায ওকে ওস্তাদ গাইয়ে করে তোলার জন্য বড় তরফের কালোয়াতি গানের আসরে নিয়ে গেছে। হোঁৎকা বলে—ওটারে শ্যাষ করবে ওই ভীমটা কয়ে দিলাম, যা চেল্লায়—কানের পর্দা আগেই বার্স্ট কইরা কালা হইবো। তারপর সা কইরা রাম চেল্লান চিল্লাইতে গিয়া লাংস খান তিন টুকরা হইয়া তোগোর পটলা এক্কেবারে পটল ‘প্লাক করবো।

হঃ—হোঁৎকার কথায় চমকে উঠি-বলিস কি? পটলা মরে যাবে?

ফটিক বলে–যা দেখে এলাম আজই কিছু না হয়ে যায়। সপ্তরথীতে ঘিরে ধরেছে ওরে। ও নাকি ধামার গাইবে–পাখোয়াজ-এর শব্দ তো নয় মেঘের গর্জন। পটলারে সত্যি‍ই বিপদে ফেলেছে ওরা ।

পটলার উপর এমন আক্রমণ হতে দেওয়া ঠিক হবে না। তাই গদাইও বলে—চল তো, দেখিগে।

আমি জানাই-কিন্তু ঢুকতে দেবে কি হলঘরে ?

ফটিক জানায়–ঢুকতেই হবে। না হলে একটা পথ করে নেব। চল। টাকপড়া-দাঁতনড়া চাল্সেধরা সব মোটা সরু সিঁটকে লোকগুলো হাজির হয়েছে। বুনোট করা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ওদিকে বসে ন’তরফের গির্দা বাবু। বিরাট তাকিয়ার মত মোটা — বড়কত্তা। ধরে নাড়াচাড়া করতে হয়, ওপাশে কপিল ভটচায-লগির মত লম্বা আর টিকটিকির মত দেহ, উনি ত গানটান। ওই শীর্ণ দেহ থেকে যে এমন বাজখাঁই আওয়াজ বের হয় তা ভাবা যায় না।

আরও অনেকে আছে। নতুন আমদানি হয়েছে শহরের ধানকল মালিক হরদেও লালা। গোলাব জল ছিটানো হচ্ছে। আর মাঝে সমাসীন ভীম ওস্তাদ। লাল টকটকে চোখ—বিরাট হাঁড়ির মত মুখ, ইয়া গর্দান। পরেছে কলকাতার বেনারসী ঢং-এর চিকন পাঞ্জাবি। যেন ডাকাতসর্দার তরোয়াল ফেলে এসে বসেছে ওই বেশে। আর দুপাশে দুটো জহর তানপুরা-গোদামতো পাখোয়াজ আর একদিকে নেংটি ইঁদুরের মত অসহায় অবস্থায় বসে আছে পটলা । যেন একপাল দানব একটা দেবশিশুকে চুরি করে নিয়ে গিয়ে নুন-টুন দিয়ে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবে আর কি!

আমরাও গিয়ে হাজির হয়েছি। ভিতরে ঢোকার উপায় নেই। হোঁৎকা-গদাই ওদিকের বারান্দায় উঠে উঁকি-ঝুঁকি মারছে। তানপুরায় রিনি রিনি শব্দ ওঠে।

আমিও ব্যাপারটা দেখার জন্য ছটফট করছি। ওদিকে পথ নেই, তাই ফটিক আর আমি বাইরে থেকে জানলা দিয়ে কিছু দেখার চেষ্টা করছি। ফটিক-এর কাঁধে উঠে জানলা দিয়ে উঁকি মারা মাত্র যেন একটা বোমা ফেটে পড়ল সগর্জনে। আর লাল দুটো চোখ – বিরাট মালসার মত মুখগহ্বর থেকে নাদ বের হয়—এ্যাও—তা ও–ও—

যেন বিরাট একটা রাক্ষস হাউমাউ কাউ করে এবার তেড়ে আসছে, ঘপ্ করে ধরেই গপ্ করে মুখে পুরে চিবিয়ে হাড়গোড় গুঁড়ো করে দেবে।

ওই প্রচণ্ড গর্জনে হাতের মুঠি খুলে যায় আর হড়কে পড়েছি রাস্তায়। ফটিকও ওই বিকট ব্যাপার দেখে দৌড়োচ্ছে।

ওদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। চোর চোর।

এক কণ্ঠের চিৎকার হাজার কণ্ঠে যেন ছড়িয়ে পড়েছে। বড়বাবু বিরাট দেহ নিয়ে তাকিয়ায় পড়ে পড়ে গর্জন করে—আমার বন্দুক—অ্যাই বন্দুক লাও ।

বারান্দায় হলঘরেও হৈ চৈ পড়ে যায়। বৈকালে ডাকাত ঢুকেছে এখানে। দৌড়াদৌড়ি, হাঁকাহাঁকি চলেছে। কে হুকুম দেয়— পাকড়ো।

কিন্তু কে পাকড়াবে, দারোয়ান রাম সিং একটা ঘরে ঢুকে চিৎকার করে—পাকড়ো ডাক্কু। বোমা মারেগা—হুঁশিয়ার।

আমরা তখন ভাঙাবাড়ির এদিক ওদিক দিয়ে ফিরে এসেছি আমাদের পার্মানেন্ট রকে। হোঁৎকা-গদাইও এসে বলে—দিলি তো ব্যাটাদের গান শেষ করে। ভীম ভটচায বোধহয় চিনে ফেলেছে।

গর্জে উঠি—তবু পটলাটা পালিয়ে এল না এই মৌকায় ?

‘ওই যে আসছে বোধহয়।’ গদাই বলে ওঠে—ইদানীং পটলার আসার খবরটা আমরা আগেই পেয়ে থাকি। সারাপাড়ার কাক তাকে ঘিরে কলরব করে কা-কা-কা ।

দু-একটা ডাকাবুকো গুণ্ডাগোছের কাক আবার ছোঁ মেরে নেমে এসে ওর মাথাতেই টোক দেবার চেষ্টা করে। এখানের কাকের জগতে পটলা ইদানীং সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। বের হবার উপায় নাই ৷

দু’একবার ঠোক্করও দেবার চেষ্টা করে। এখানে কাকের জগতে পটলা ইদানীং সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। বের হবার উপায় নাই।

দু’একবার ঠোক্করও খেয়েছে। তবু মাথার বাবরি চুল থাকার জন্য সে আক্রমণ তেমন প্রাণঘাতী হয়নি, কিন্তু তার কাকবাহিনীই তাকে বিব্রত করে তোলে। আর এর জন্য দায়ী পটলাই—আর ওই সঙ্গীতসাধনা।

কোন পঞ্জিকায় বিজ্ঞাপন দেখে পটলা কলকাতা থেকে আজব পুস্তক একখানা আনিয়েছিল। তাতে নানা কিছু অদ্ভুত সব ব্যাপার আছে। ওতেই পড়েছিল শকুনের ডিম গোবরে তিন দিন ডুবিয়ে রাখার পর হীরাকষ-এর জলে ধুয়ে পঞ্চমী তিথিতে মুখে পুরে রাখলে নাকি অদৃশ্য হওয়া যায়। তুমি সবাইকে দেখতে পাবে—কিন্তু কেউ তোমাকে দেখতে পাবে না। আমরাও সন্ধান করেছিলাম সকলে, যদি শকুনের ডিম পাওয়া যায়। তাহলে অঙ্কের ক্লাসে নিরাপদ থাকা যাবে। আর চৌধুরীদের আমবাগানে আম-লিচুর অস্তিত্বও থাকবে না। কেউ দেখতে পাবে না—আমরা অদৃশ্য হয়ে সব শেষ করে দেব। না হয় খেলার মাঠে পকেটে করে ডিম নিয়ে যাব, পায়ে বল পেলেই টপ করে ডিমটা মুখে পুরে অদৃশ্য হয়ে সিধে গোলে ঢুকে গিয়ে আবার দৃশ্যমান হব ।

কিন্তু শকুনগুলো হাড়-পাজি—ওরা কোনো পাহাড়ে গিয়ে ডিম পেড়ে আসে পাছে আমরা পেয়ে গিয়ে কাজ হাসিল করি, তাই ওই ডিম না পেয়ে ওই পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হয় ।

কিন্তু ওই বই-এ লেখা ছিল কোকিলের ডিম-এর কথা। ওই কোকিলের ডিম সংগ্রহ করে চুন দিয়ে কুসুমটা মাখিয়ে গলায় প্রলেপ দিলে গলা দিয়ে নাকি কোকিলের মত স্বর বের হবে। পটলা কিছুদিন থেকে ওদের বাড়ির রাখাল ছেলেটাকে নিয়ে কোকিলের ডিমের সন্ধান করেছে, কোকিলের নিজের বাসায় ডিম থাকে না, কোকিল কাকের বাসাতেই ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়, সুতরাং পাড়ার আমগাছে, জামগাছে দত্তদের বাগানের তাবৎ গাছে কাকের বাসা ভেঙে কোকিলের ডিমের সন্ধান করছে পটলা। কিন্তু ‘অরিজিন্যাল’ কোকিলের ডিম একটাও পায়নি, ভয় আছে ভুল করে যদি কাকের ডিম-এর ওই ওষুধ দিয়ে গলায় মাখায়—তাহলে কাকের মত কা-কা কর্কশ শব্দ বের হবে গলা দিয়ে।

তাই ভরসা করে পটলা ওই ওষুধ লাগাতে পারেনি, কিন্তু তামাম কাকগুলো ওকে চিনে ফেলেছে, তাই পথেঘাটে বের হবা-মাত্র তারাও দলবেঁধে ঠোকরাতে আসে। স্কুলে গিয়েও রক্ষে নেই, কাকগুলো ডালে ডালে যেন ওর জন্য ওৎ পেতে থাকছে ইদানীং।

পটলা কোনরকমে মাথা বাঁচিয়ে এসে খবর দেয় আমাদের—ভীম ওস্তাদ তোদের চিনে ফেলেছে। সবে সপাট তান ধরেছিল—আর চোরের দলে মিশে তোদের জানালা ভাঙা দেখে তানটাই ছুটে গেল, সমে ফিরতে পারেনি। তাই বলেছে—ধরে পুঁতে ফেলবে কালীসায়রের কাদায় তোদের দুটোকেই ।

তাই নাকি রে। ঘাবড়ে যাই! ভীম ওস্তাদকে বিশ্বাস নেই। ও সব পারে। এর আগে কোনো শাগরেদের তিনটে দাঁত এক চড়ে উড়িয়ে দিয়েছিল সা ঠিকমতো লাগাতে পারেনি বলে।

কাকগুলোর একটা সাঁ করে নেমে একেবারে পটলার মাথাটা ট্যানজেন্টের ভঙ্গিতে ঠোকরাবার চেষ্টা করে উড়ে গেল। পটলা সামলে নিয়ে বলে-ব-বড় তরফের গির্দা বাবু ও দেখেছে তোদের দারোয়ান নাকি পেলেই ধরে নে যাবে!

গদাই বলে—পটলার জন্যেই এসব। তাই বলছি পটলা দিনকতক তোর পিসিমার ওখানেই যাই। চেঞ্জও হবে আর এ্যাই -ধা –

কাকটা আবার ধেয়ে এসেছে, এবার পটলার মাথাতে বেশ মোক্ষম ঠোক্কর মেরেছে। পটলা আর্তনাদ করে বলে—তাই বল—কাক অবধি পিছু লেগেছে।

আমাদের পিছনে লেগেছে ওই ভীম ওস্তাদ আর গির্দাবাবু। অমন গানের গুঁতোয় আছড়ে পড়ে হাত না ছড়েছে। এবার পিঠে ফোস্কা না পড়ে। বাড়িতে জানতে পারলে রেহাই নেই । তাই পলায়নই শ্রেয়। বলি—তাই চল। আম এখন ঠিক পেকেছে।

পটলা বলে—ওস্তাদ যদি রেগে যায়।

হোঁৎকা বলে—তর ওস্তাদের বন্দোবস্ত আমিই করুম। ওর লোক তাড়ানো চেল্লা-মেল্লি থামাইমু, কয়ে দিলাম। এহন চল তালে কালই।

পাঁচজন রওনা হয়েছি। মাইল পাঁচেক হেঁটে গিয়ে বাস ধরতে হবে। সেখান থেকে সদর শহরে ট্রেন ধরে তিন-চারটে ইস্টিশন পার হলে তবে পিসিমার বাড়ি।

বাস-এ উঠে মনে হল এবার যেন মুক্ত পুরুষই হয়ে গেছি। ভীম ওস্তাদ নেই—গির্দাবাবুরও ভয় নেই। স্কুলের ছুটি আর পটলাও বেঁচেছে। দিনভোর কাক তাড়াতে হচ্ছে না।

ইস্টিশানে নেমে বেশ নিরাপদেই পায়চারি করছে পটলা প্লাটফর্মে। এখানের কাকগুলো জানে না যে ওদের অনেক বংশধরকে ডিম অবস্থাতেই নিকেশ করেছে পটলা, কোকিলকণ্ঠ হবার জন্য।

তবু পটলা বাবরি চুল নেড়ে হাত ঘুরিয়ে প্লাটফর্মের বেঞ্চে বসে সুর ভাঁজছে—সৈয়া—ভু একবার আ যা—ওরে সেঁ-ই-য়া-আ-আ-আ-

ধমকে ওঠে হোঁৎকা–ফের ওই স্বরবর্ণ ব্যনন্ বর্ণ লইয়া চেল্লাবি, ত-তর গল্লা মটকাই দিমু। ব্যাটা—ওই গানের গুঁতোয় দেশত্যাগী হইলাম—এখনও গান! এ্যাঁ! পটলা চুপসে গেছে। গদাইও সায় দেয়-ঠিক বলেছিস। হোঁৎকা এবার জজের মতো শাস্তির বিধান দেয় পটলাকে—-অষ্টআনা পয়সা ছাড়–চিনাবাদাম কিনবার লাগবো, অই বাদামওলা।

পটলা কিছু বলার আগেই হোঁৎকা এক ঠোঙা বাদাম আর গোটা চারেক বাদাম তৎসহ নুন-লঙ্কা ফাউ হস্তগত করে উদাসভঙ্গিতে পটলাকে দেখিয়ে বলে—ওই বাবুর কাছে ল পয়সাটা। ধর-

দু-চারটে করে বাদাম হাতে ধরিয়ে হোঁৎকা পুরো ঠোঙাটাই দখল নিয়েছে। এমন সময় দেখা যায় প্লাটফর্মে কর্মব্যস্ততা নেমেছে। বাঁকের মাথায় ট্রেনটা ধোঁয়া উড়িয়ে স্টেশনের দিকে আসছে।

ভগবানপুর ওর পিসিমার গাঁয়ের নাম। ওই নামেই স্টেশন। পথের দু’ধারে আমবাগানের লিচু গাছের সবুজ পাতাগুলোর উপর কে যেন সিন্দুর ছিটিয়ে দিয়েছে। গাছে জাল টাঙানো। বাদুড়ের ভয়ে টিন বেঁধে রেখেছে দড়ি দিয়ে, দড়ি টেনে টিনটাকে ডালে ঘা মেরে শব্দ তুলে পাখি তাড়ানো হয় ৷

পিসিমাদের বাড়ি পৌঁছে যেতে সাড়া পড়ে। নদীর ধারে চকমিলানো বাড়ি। সামনে নাটমন্দির। বেশ সঙ্গতিসম্পন্ন গৃহস্থই বলা যায়। পিসেমশাই—পিসতুতো ভাই বোনরাও এসে পড়ে। পিসিমাও খুশি হয় আমাদের দেখে—এসেছিস, খুব খুশি হয়েছি।

পটলার পিসেমশাইও বেশ শৌখিন লোক। ফর্সা নাদুস-নুদুস চেহারা। জমিদার-জমিদার ভাবটা আছে আর মেজাজও তেমনি। বাইরের ঘরে তানপুরা-পাখোয়াজ-হারমোনিয়াম- তবলাও রয়েছে। পিসেমশাই বলেন পটলাকে। —শুনেছি ভালো ক্ল্যাসিকাল ভজন গাস। ভালোই হল, রাসু ওস্তাদকে এবার একহাত দেখিয়ে দিতে হবে। পিসিমাও বলেন—কি ছাই গায় রাসু। যেন বমি করছে। পটলের গান তো শোননি যেন কোকিলের মত সুর ফোটে ওর গলায় ।

পরক্ষণে পিসিমা নিজের পিতৃকুলের প্রশংসা শুরু করেন ফলাও করে—হবে না? বড়দা কেমন ওস্তাদ ছিল জানো তো? কেমন বংশ দেখতে হবে। সুর ওখানের মাটিতে রয়ে গেছে। পিসেমশাই বলেন—তাই তো বলছি, পটলা দুচারদিন জিরো, তারপর রাসুর দ্যামাক ছুটিয়ে দিতে হবে। ও বলে কিনা আমি পাখোয়াজের বোল তুলতে পারি না? তালে ছোট ! এবার দেখিয়ে দেব তাদের।

আমি গদাই-এর দিকে চাইলাম। ভাবনায় পড়েছে গদাই, পটলার মুখ যেন চিমসে মেরে গেছে। অভ্যাসমত মাথায় হাত বুলিয়ে একবার শূন্যপানে চেয়ে কাকদের পজিশনগুলো দেখে নেয়, পরক্ষণেই খেয়াল হয় এখানের কাকগুলো ওকে চেনেনি। তবু মনে হয় ওই রাসু ওস্তাদের সঙ্গে পাল্লা দেবার ব্যাপারটা তার ভালো লাগেনি। পিসিমা বলেন—ওসব এখন থাক। তেতেপুড়ে এল বাছারা। নেয়ে খেয়ে ঘুমোক।

খাওয়াটা সত্যিই অপূর্ব। অনেকদিন পর শান্তিতে খেতে বসেছে তারা। পিসেমশাইও আমুদে লোক—সার বেঁধে বড় বারান্দায় খেতে বসেছেন। হোঁৎকা আর গদাই যেন পাল্লা দিয়ে খেয়ে চলেছে।

পিসেমশাই বলেন- মাছ নাও হে! নদীর টাটকা পাবদা আর ইলিশ।

পাতের উপর নধর সাইজের পাবদা মাছ গোটাদুয়েক তখনও রয়েছে। ইলিশের পেটি দাগা একত্রে ইয়া গাবদা সাইজের টুকরোগুলো যেন রসে টস টস করে।

হোঁৎকা বলে, নিমু।

আর রকমারি পাকা আমও রয়েছে বালতিতে ভেজানো। বোম্বাই-ল্যাংড়া—পেয়ারাফুলি —ভবানী রানীপসন্দ। সঙ্গে ঘরের গরুর দুধ।

পিসেমশাই বলেন—ও বেলায় লিচুগুলো দিও মনুর মা। আর রাত্রে করবে ক্ষীর আর আম, সঙ্গে গলদাচিংড়ির তরকারি আর লুচি, ব্যস।

হোঁৎকা খাওয়া দাওয়ার পর সটান মেঝেতে টানটান হয়ে শুয়ে বলে–হঃ খাইলাম বটে। তাই তো কইছিলাম, পটলা চল পিসিমার বাড়ি। কদিন এমনি খাওয়ান খাইলই–দেকস্ চেনা যাইব না ।

গদাই বলে—খাবি আর কদিন। কালই শোনলাম রাসু না ফাসু ওস্তাদ কে আসছে। তার সাথে পাল্লা দিতে হবে পটলাকে। কী হবে কেসটা বুঝছিস? স্রেফ কিচাইন হয়ে যাবে। আমিও বলি–কী আর হবে? রাসু জিতে যাবে। আমাদেরও কাট মারতে হবে। হেরে গেলে আর এমন যুতের খ্যাট জুটবে র‍্যা? তখন পালানো ছাড়া পথ থাকবে না।

ভাবনার কথা। হোঁৎকা চিৎ হয়ে পড়েছিল। সে গর্জে ওঠে—রাসুকে আইতে দে তখন দ্যাখা যাইব। এহন শো দিন, নিদ্রা আইতেছে আমার।

বিকালে পটলার পিসতুতো ভাই মহীন ওদের বাগানে নিয়ে যায়। সারবন্দি কলমের আমগাছে ডালপাতা দেখা যায় না। আম ঝুলছে। কোনোটা পেকে হলুদ হয়েছে। কোনোটা লাল টকটকে নানা সাইজের আম। বাগানের একটা কুঁড়ে ঘরে গাদা বন্দি আমে আঁশশেওড়া পাতা চাপা দিয়ে রেখে ঝুড়ি বোঝাই করে চট দিয়ে মুখ সেলাই করা হচ্ছে। গাড়িবন্দি করে ওরা ট্রেনে, না হয় ট্রাকে চালান দেবে। বাতাসে পাকা আমের মিষ্টি গন্ধ।

ছায়াঘন আমবাগানে বসে আমই খাওয়া গেল। হোঁৎকা বলে—দুচার দিন থাকলি গায়ে গত্তি লাগবো গদা।

অবশ্য সেটার অভাব গদাই-এর নেই। ভীমের গদার মত গোল চেহারা ওর। পটলা বলে—তাতো থাকতাম রে। ওই রাসু ওস্তাদ-

ফটিক বলে—ওই ওস্তাদগুলোর জন্যেই পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

ভীমের ভয়ে গাঁ ছাড়লাম, তা এখানে এসে সেই ওস্তাদ! জান কয়লা করে দিল রে।

বাগান থেকে ফিরছি। পটলার পিসতুতো ভাই মহীনও রয়েছে। সন্ধ্যায় বেশ জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে নদীর ধারের চাতালে।

কিন্তু বাড়ি ফিরেই চমকে উঠলাম। বৈঠকখানায় বেশ কিছু লোকের ভিড় করে বাজখাঁই গলার হুঙ্কার শোনা যায়। মহীন বলে—গদাই রে! রাসু ওস্তাদ এসে গেছে। গণ্ডেপিণ্ডে গিলবে আর চিৎকারের চোটে বাড়ি ফাটিয়ে দেবে।

—রাসু ওস্তাদ! আমরাও ঘাবড়ে গেছি। পটলাও মিন মিন করে। এমন সময় পিসেমশাই-এর হাঁক শোনা যায়—তোমরা এসেছ, এসো এসো।

পায়ে পায়ে ভিতরে গেলাম। পিসেমশাই পরিচয় করিয়ে দেন—ওই পটল আমার আত্মীয়। আপনাকে ওর কথাই বলছিলাম। সুন্দর গায়। ওখানের ভীম ভট্টাচার্য কণ্ঠসুধাকরের ছাত্র।

বিকট জালার মত দেহটা কলকাতার পাঞ্জাবির পেটটা মৈনাকের মত ঠেলে উঠেছে। হঠাৎ সিংহনাদ বের হয়—ভীম! উতো তাম্বাকু সাজতো ওস্তাদের। ফর্দ খাঁ সাহেবের নোকর ছিল। আর সাক্‌সাৎ চেলা হামি। হায় হায়। বেটা সব গলদ শিখালো তোকে। ফর্দু খাঁয়ের গানা—আহা!

—ক্যা বাবুজি !

তারপরেই হুলো বেড়ালের ল্যাজ-এর গোঁফ জোড়াটাকে উত্তর দক্ষিণে তখন আন্দোলিত করে কুলোর মত হাতের চেটো আসমানে তুলে, দুই হুলো বেড়ালের ক্লাইমেক্স ঝগড়ার মুখে যেমন ম্যাঁওতে করে গমক ছাড়ে, তেমনি কটা আওয়াজ বের করতে ঘরশুদ্ধ সকলে যেন রসে টইটম্বুর হয়ে ফেটে পড়ে—আহা! ক্যা বাৎ! লা জবাব ওস্তাদ !

এই হবে পটলার প্রতিপক্ষ। আমরা ঘরে এসে বসেছি। আড্ডার মানসিকতাও নেই । পটলা বলে—ও তো ভীম ওস্তাদের ডবল রে ।

ফটিক বলে ওঠে—না! দিব্যি ভাবছিলাম খেয়ে-দেয়ে শান্তিতে দুদিন থাকব। তাও হল না । আবার ফিরে যেতেই হবে।

পটলা বলে—কাকগুলো আবার ঠোকরাবে। গান যা হল তাতে বুঝছি এখন প-প্ৰাণ বাঁচানো দায়।

আদরে কিছুটা ভাটা পড়েছে বুঝলাম। একসঙ্গে খেতে বসেছি রাতের বেলায়। বিরাট বারান্দায় আসন পড়েছে। পিসিমাও তদারক করছেন। তপস্বী মানুষ তাই সকলের সঙ্গে একাসনে বসেন না ।

বিরাট খাগড়াই বগিথালার থাকবন্দি ঘৃতপক্ক লুচি, এক বাটি সোনামুগের সোনাবরণ ডাল, ওদিকে ভাজাভুজি, জামবাটিতে ঘনাবর্ত দুধ, সন্দেশ গোটাচারেক ইয়া সাইজের। আর একটা প্লাস্টিকের বালতিতে বোঁটাকাটা সরেশ আম ভেজানো। ওস্তাদজির জন্য মাংসও রয়েছে।

তার পরিমাণ প্রায় কিলোখানেক হবে। উনি আহারে বসেই ডালের বাটিতে আঙুল ডুবিয়ে পরখ করে দেখে গলায় হুঙ্কার ছাড়লেন—ঘিউ কমতি কাহে মুখারজি?

ডালে ঘি কম হলে উনি নাকি সেবাই করতে পারেন না। এক বাটি ঘি আনা হল, উনি সেবাপর্ব শুরু করলেন। বলেন—ওস্তাদ বোলা গানা তানাকউব এসব মেহনত-এর কম বেটা। খানে হোগা! নেহিতো দম্ আয়েগা ক্যায়সে। হ্যাঁ লুচি বোলাও।

দিস্তে দেড়েক লুচি, ওই জামবাটির মাল সব খালাস করে এবার দুধ সন্দেশ আমের বালতি নিয়ে বসেছেন ।

পিসিমা বলেন—তোরা খাচ্ছিস না কেন? খা—। হাত পা পেটে সেঁধিয়ে গেছে ওই খাবার বহর দেখে।

কোনরকমে খেয়ে উঠলাম। আহারে সেই তৃপ্তি শান্তি আর নেই।

পিসেমশাই বলেন—কাল বিকালে তাহলে একটু আসর বসানো যাক ওস্তাদজি।

রাসু ওস্তাদও ঘাড় নাড়ে—হ্যাঁ। পরশু বহরমপুরে বড়া আসর আছে। কাল ছাড়া টাইম হোবে না।

পটলা মিইয়ে গেছে। হোঁৎকা বলে—তরা শুইয়া পড়। আমি আইতেছি। জোর খাওয়া হই গেল, দুডো হজমের বড়ি লাগবো। আইতেছি।

পটলার ঘুম আসে না। ও বলে—কা-কাল সকালেই চলে যাই। ওই ওস্তাদের সঙ্গে সমানে গান গাইতে হবে ওরে বাবা ।

গদাই বলে—তবে গান গান করে পাগল হইছিলি কেন? কী শিখেছিস ভীমটার কাছে? পটলা জানায়—ন-নেভার গান গাইবো। এই ন-নাক ক-কান মলছি ।

হোঁৎকার দেখা নেই ।

হলঘরের ওপাশের ঘরে ওস্তাদ শয়ন করেছেন। অবাক হয়ে দেখি হোঁৎকা ওই রাসু ওস্তাদের সঙ্গে রীতিমত ভাব জমিয়ে তার তালগাছের মত গোদা গোদা পা দুটো টিপছে, আর পাহাড়ের মত পড়ে আছে রাসু! হুঙ্কার ছাড়ে–জোরসে–আউর জোরসে দাবাও বেটা। হাঁ-থোড়া পানি তো পিলাও!

বশংবদ চাকরের মত হোঁৎকা খাবার জল এনে দেয় গ্লাসে। গর্জে ওঠে রাসু-উল্লু, গ্লাস ক্যা হোগা! সোরাই লাও ।

অর্থাৎ গ্লাসে নয় পুরো কুঁজোটা তুলে বিশাল মুখগহ্বরে ঢক ঢক করে এক কুঁজো জল শেষ করে শূন্য কুঁজোটা ওর হাতে ফেরত দিয়ে বলে, দাবাও !

আবার দলাই-মলাই শুরু হয়।

দেখেশুনে পটলা বলে—দ্-দেখছিস হোঁৎকা ক্যামন ম-মীরজাফর। ওই ওস্তাদকেই খুশি করছে। ও ছ-ছাড়বে আমাকে?

আমরাও হোঁৎকার এই বিশ্বাসঘাতকতায় অবাক হই। গদাই বলে—ওই-ই বোধহয় গান শিখবে ওস্তাদের কাছে। পটলা গর্জায়–হ জাহান্নামে যাক। ক্-কালই আমি চলে যাব । স্-সিওর !

ও চলে গেলে কোনো সুবাদে আর থাকব এখানে। এমন আম লিচু মাছ দুধ ছেড়ে গ্রামেই ফিরতে হবে ওই ভীম ওস্তাদ আর গির্দাবাবুর পাল্লার মধ্যে।

হোঁৎকা ফিরে এসে বলে—শুইয়া পড় ।

আমরাও ওর সঙ্গে ননকোঅপারেশন করে কথাই বললাম না ।

কোথায় গভীর বনে হারিয়ে গেছে। বন কাঁপিয়ে গর্জন উঠছে। থরথর কাঁপছে চারিদিক। একটা বাঘ গর্জাচ্ছে আর সেই হুঙ্কারটা এবার সামনে এসে পড়েছে! চিৎকার করার চেষ্টা করি—দমবন্ধ হয়ে আসে। ধড়মড়িয়ে উঠে দেখি তখনও সকাল হয়নি, ভোর হয়েছে। আর ওই সিংহনাদ উঠছে ওদিকের ঘরে। পটলা, ফটিক জেগে উঠেছে। রাসু ওস্তাদ গলা সাধছে। যেন একপাল হুলো বেড়াল ঘরের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধিয়েছে। মাঝে মেঘ গর্জনের শব্দ ওঠে।

পটল বলে—ওই গ-গান ।

হোঁৎকা উঠে বসে ওই সিংহনাদ শুনে অবাক হয়ে বলে—হালায় এহনও চেল্লায় এত জোরে? এ্যাঁ ।

….রাসু ওস্তাদ যেন পুরুষ-সিংহ।

সকালে গলা সাধার পর্ব শেষ করে এবার প্রাতরাশ নিয়ে বসেছে। গরম লুচি গণ্ডা পাঁচেক। গোটা আটেক ডিম—হাফ ডজন সন্দেশ আর দুই মগ চা ।

এরপর তিনি নাকি সকালের রাগ ‘বিলাসখানি তোড়ি’ শোনাবেন। এরপর বিকালে বসবে আসল গানের আসর। হোঁৎকা গজগজ করছে। এদিকে আমাদেরও বেরুবার পথ নেই। আটকে গেছি। পটলা একবার বাড়ি যাবার কথা বলতে পিসেমশাই অবাক হন।

—সেকি! গান-টান হোক। এখন তো ছুটি—রাসু ওস্তাদও কাল রাত্রেই আবার ফিরে এসে এখানে কদিন থাকবে। কিছু আসলি জিনিস ওর কাছ থেকে নিয়ে নে পটল।

—দেখলি ক্যামন রেওয়াজি গলা! মেঘরাগ যা গায়-

পিসিমা আড়ালে বলেন—বাড়িতে তিষ্ঠোন দায় হয় বাবা। যা চিৎকার করে। গোয়ালে গরুগুলো ওই হাঁকাড়িতে ঘাবড়ে গিয়ে দুধ কমিয়ে দেয়। সেবার ওর গানের গুঁতোয় দুটো ধলাই ভয়ে পালাল। আজ তো গুপীনাথকে ডাক্তারের কাছে পাঠালাম। ওর কানের পর্দা বোধহয় ফেটে গেছে, খুব বেদনা হচ্ছে। তোর পিসেমশাইকে ওর নামে কিছু বললে– লঙ্কাকাণ্ড বেধে যাবে। চুপচাপ থাক—খা—দা ভালো। তা নয় একি গান রে বাবা। ওসব গান শিখিস নে পটল।

পটল এবার ওই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়। কিন্তু পথ কই। বাইরের ঘরে তখন আবার চিৎকার শুরু হয়েছে। বিকট মুখখানা শূন্যে তুলে কুকুরের কান্নার মত তীব্রস্বরে এবার সকালের রাগিণী ধরেছে রাসু ওস্তাদ—ওরই নাম নাকি বিলাসখানি টৌড়ি।

হঠাৎ রাসু ওস্তাদের বিরাট দেহটা মুচড়ে ওঠে। বারকতক মুখ বিকৃত করে চাপা যন্ত্রণাটা সামাল দিয়ে আবার পুরোদমে একটা হুঙ্কার তান ছেড়েছে—এরপর হবে বজ্রতান – বাজ পড়ার গুরু গুরু তার শব্দ !

কিন্তু পেটের ভিতরটা পাক দিয়ে ওঠে। সেই তান আর শেষ করতে হল না। মনে হয় কাণ্ডটা এখানেই ঘটে যাবে। তানপুরা ফেলে লাফ দিয়ে উঠে কানে পৈতেটা জড়াতে জড়াতে চিৎকার করে ওস্তাদ – পানি! পানি দেও !

হোঁৎকা রেডি ছিল, ওস্তাদের জন্য জলভর্তি গাড়ুটা এগিয়ে দিতে সেটা নিয়ে বিশাল দেহ সমেত টলতে টলতে হাতির মত দৌড়ল রাসু ওস্তাদ পায়খানার দিকে। পায়খানার দরজাটা আড়-ভেজানো মত ছিল, তাড়াতাড়ি ঢুকে গিয়ে বিশাল পেটটা আটকে গেছে, ছাড়ানো যায় না। ওদিকে অবস্থা তখন সাংঘাতিক। টানাটানি করতে একটা পাল্লাই ছিঁড়ে পড়ল, সেদিকে খেয়াল নেই—ওস্তাদ পায়খানায় সেঁধিয়ে গেছেন।

…গান-আসর রইল পড়ে। খাওয়া-দাওয়া করার মত অবস্থাও নেই ওস্তাদের। বিরাট দশাসই চেহারা—বার-পাঁচেক ওই পায়খানায় যাতায়াত করে একেবারে ঘটোৎকচের মত হয়ে পড়েছে। ভূষণ ডাক্তারও এসে কিসব বড়ি-টড়ি দিয়ে বলেন—দু’তিনটে করে একত্রে খান! ডোজ একটু বেশি লাগবে। কী খেয়েছিলেন কাল?

চিঁ চিঁ করছে রাসু ওস্তাদ। সেই বজ্রকণ্ঠ কোথায় মিলিয়ে গেছে। মিহি গলায় জানায়—কুছ জ্যাদা তো খাইনি। মামুলি খানা !

…লোকজন এসে গেছে। গানের আসর বসাবার মত অবস্থা নেই। ওস্তাদ ঝিমিয়ে নেতিয়ে পড়েছে। সকলে তার কুশল সংবাদ নিয়েই ব্যস্ত। ওদের ভাবনার সময়, পিসেমশাইও ঘাবড়ে গেছেন। গান আর হল না। আমরা সকলে প্রাণপণে ওস্তাদজির সেবা করে চলেছি। হোঁৎকা গোড় দাবাচ্ছে, পটলা পাখা নিয়ে জোর জোর হাওয়া করছে। আমিও ওই ভলেন্টিয়ার বাহিনীতে যোগ দিয়ে রাসু ওস্তাদের গুণমুগ্ধদের ভিড় সামলাচ্ছি। রাসু মুখুজ্যের ভালো নাম রসময় মুখোপাধ্যায়। আগে পশ্চিমে থেকেছে বহুকাল, কুস্তি লড়েছে সর্বাঙ্গে মাটি মেখে আর ছোলা বাদাম খেয়ে গলার স্বর নিয়েও কুস্তি করেছে। মুখে হিন্দি বুলি ছোটে। কিন্তু একদিনের পটকানিতে এখন চিঁ চিঁ করছে। —ওরে আর বাঁচব না রে। ওরে বাবা!

খাঁটি দেশজ মাতৃভাষা বের হচ্ছে !

বৈকালের দিকে একটু সামলাতে পারে। তবে খুবই দুর্বল—এমন সময় মহীনের সঙ্গে আলখাল্লাধারী বাঁকা পাকানো লাঠি হাতে লোকটাকে ঢুকতে দেখে চাইলাম। একমুখ দাড়ি, সাদা পাকা দাড়িগুলো যা ওর চেহারায় একটা সৌম্য ভাব এনেছে। গলায় ফটিকের মালা। সকলেই ওর দিকে চাইল। মহীন বলে—হাজিপুরের পীরবাবা, মহাপুরুষ। এদিকে এসেছিলেন নিয়ে এলাম। এর জলপড়ায় নাকি সব রোগ সেরে যায়।

পীরবাবা চারিদিকে চেয়ে দেখছেন। রাসু ওস্তাদ চিঁ চিঁ করে।

–সুস্থ করে দাও বাবা। কাল সদরে মস্ত আসর, গাইতে পারলে দক্ষিণা কিছু মিলবে। নামযশ হবে।

পীরবাবা হুঙ্কার ছাড়েন—জিন-পীর-হুম্ দো-মামদোর নজর পড়েছে তোর উপর। চমকে ওঠে রাসু—হুমদো-মামদোর নজর পড়লে আর যে বাঁচব না বাবা। কী হবে ?

পীরবাবা বলেন—মৎ ঘাবড়াও বেটা। আজ রাতটা একটু হুঁশিয়ার থাকবি। খবরদার—ওদের চটাস্ নে। তোর ওপর ওদের খুব রাগ। আমি গণ্ডি কেটে দিলাম—জলপড়া দিচ্ছি, মাথায় দিয়ে খেয়ে নিবি, ব্যস সব ঠিক হয়ে যাবে। ওরা বহুৎ খারাপ আছে—তবে আমি আছি। ভয় নাই ।

রাসু ওস্তাদ মিইয়ে গেছে ভিজে পাঁপড়ের মত। আর হাঁকডাক নেই। পীরবাবা চলে গেলেন মন্তর-টন্তর পড়ে। আর মহীন এক ঘটি জল এনেছিল সেটাও পড়ে দিয়ে গেলেন। সকলেই ওর দিকে চাইল। রাসু ওস্তাদ জলপড়া মুখে দিয়ে মুখটা বিকৃত করে বলে—এত গন্ধ—ঝাঁঝ কিসের রে?

মহীন বলে ওঠে—মন্তরের তেজ ওস্তাদজি! তাই জলও অমনি ঝাঁঝাল হয়ে উঠেছে। গায়ে জল ছিটিয়ে দিতে একটা বোট্‌কা গন্ধ ওঠে।

রাসু ওস্তাদ বলে—আজ রাতটা তোরা এখানেই থাক বাবা! শুনলি তো পীরবাবার কথা ! মামদো-হুম্‌দো ওরা সব পারে।

হোঁৎকা বলে—আমরা তো আছি ওস্তাদজি, ঘাবড়ান ক্যান। মামদো-হুমদোর কাৎ করি দেবানে। আপনি আমাগোর মাথার মণি, আপনার ক্ষতি করতি দিমু না। হক্কলে তৈরি থাকস। বুঝলি।

আমরা ভলেনটিয়ার বাহিনীও তৈরি। পিসেমশাই বলেন—ওসব পীরবারা-ফীরবাবার কথা ছাড়ুন ওস্তাদজি। এই তো সুস্থ হয়ে উঠেছেন। হঠাৎ পেটটা খারাপ হয়েছিল ওষুধপত্র খেতে ঠিক হয়ে গেছে। তাহলে রাতে একটু বার্লি—

রাসু গর্জে ওঠে—ওসব খাই না। ক্ষুধাও পেয়েছে চিড়া দই ইত্যাদিই খাব। অবশ্য ওর খাওয়ার ব্যাপারে খ্যাতি আছে। পিসিমাও অবাক হন।

—সারাদিন দাস্ত হল, আবার এক গামলা চিঁড়ে এক হাঁড়ি দই খাবে, ফের রাতে যদি কিছু হয় !

কিন্তু রাসুই বলে ওঠে—কুছ হোবে না আমার। ওর চেয়ে বেশি খেয়েছিলাম সেদিন। বহুৎ জোর ক্ষুধা লেগেছে, আনুন। ল্যাংড়া আম ভি দেবেন।

ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে বসে ফুল ফর্মে আবার ওই এক গামলা ফলার মেখে কপাকপ গিলছে। আমরাও ঘাবড়ে গেছি। মহীন ইতিমধ্যে আমাদের দলে মিশে গেছে। মহীন বলে—কিৎসু হয়নি ওর।

হোঁৎকা চুপ করে থাকে। পটলা বলে—ও কাল গান গেয়ে ফিরে এসে আবার এখানেই থাকবে। এমন যতে খ্যাঁট ছেড়ে যাবে? আবার যদি গাইতে হয় আমাকে? কালই চলে যাই –কি বল !

পটলা ওকে ঝেড়ে-পুড়ে উঠে ওইভাবে বসে খেতে দেখে ঘাবড়ে গেছে। গদাই ধমকে ওঠে-বেচারি খাচ্ছে আর তোরা নজর দিচ্ছিস ! খাক্ !

…রাত্রি নেমেছে। রাসু ওস্তাদ আহার সমাধা করে এবার তামাক টানছে। পিসেমশাইও খুশি। যা হোক সেরে উঠেছে ওস্তাদজি, তাঁর ভাবনা গেছে। পিসেমশাই বলেন—তাহলে সদর থেকে কাল রাতের ট্রেনেই ফিরছেন। কদিন এখানে থেকে সুস্থ হয়ে যাবেন। পটল উনি ফিরে এলেই আসর বসানো যাবে। আমি বাইরের দু-চার জনকে খবর দিচ্ছি।

অর্থাৎ একবার ফাড়া কাটলেও রক্ষে নেই। আবার চক্রান্ত শুরু হচ্ছে। পটলা জবাব দিল না। মিন মিন করে। রাসু ওস্তাদ বলে ওঠে—হ্যাঁ। তাই হবে। ভীম ব্যাটা ক্যা শিখায়া দেখাঙ্গে। পুরা ‘সা’ লাগানে কা তমীজ নেই—ওস্তাদ বন গিয়া !

য্যাসান গুরু—ত্যাইসান চেলাই হবো মুখারজি বাবু!

আবার সুস্থ হয়ে উঠেই লম্বা লম্বা বাত শুরু করেছে। হোঁৎকা ওর পা টিপছিল। অন্য পা দিয়ে যেন একটা লাথি মেরে ছিটকে ফেলে দেবার মত ভঙ্গিতে গর্জন করে রাসু ওস্তাদ—জোরসে দাবাও। উল্লু কাহিকা।

রাত হয়ে গেছে। পিসেমশাইও পীরবাবার কথাটা শুনেছেন। তাই বলেন—ওরাও হলঘরে এদিকেই শোবে আজ। একটু সজাগ থাকবেন ওস্তাদজি।

রাসুরও মনে পড়ে পীরবাবার কথা। মামদো-হুমদোগুলো বেজায় পাজি। তাই একটু ঘাবড়ে গেলেও বলে সে—ফালতু বাত নিয়ে ঘাবড়ে যাবেন না। বলছেন–বাছারা শোবে ওখানে, ঠিক আছে।

ঘুমিয়ে পড়েছি হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়, জানলা দিয়ে লম্বা একটা হাত মত ঢুকেছে ঘরের মধ্যে। নড়ছে লগার মত হাতটা ঘরের মেজেতে। বিরাট দেহ নিয়ে রাসু ওস্তাদ ছোটখাটো রোলারের মত গড়াগড়ি খাচ্ছে আর চিৎকার করে-ওরে বাবারে। ওরে

কে যেন হাঁড়ির মধ্য থেকে বের করা গম্ভীর খোনা খোনা স্বরে শাসায়—তোঁর গানের চোটে সামনের তেঁতুল গাছের বাসা ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তাই গলা টিপে শেষ করব আজ ।

…খট খট শব্দ ওঠে, যেন হাড় কঙ্কালের দুটো হাত ওকে ধরার চেষ্টা করছে। একটা ঝন্ ঝন্ গোঁ গোঁ শব্দ ওঠে। রাসু ওস্তাদ বলে—আর এখানে গান গাইব না। ওস্তাদের দিব্যি, মা কালীর দিব্যি !

— এ্যাও !…

ভূত-প্রেত কিনা—তাই ঠাকুর দেবতার নাম শুনে গর্জে ওঠে। শোঁ শোঁ ঝড় বইছে। বিচিত্র কাণ্ড দেখে খাটের তলায় ঢুকে ঠক ঠক করে কাঁপছি—ওদিকে রাসুর বিশাল দেহটা গড়াগড়ি খেতে খেতে একটা অস্ফুট আর্তনাদ করে একেবারে থেমে গেল।

পিসেমশাই, ওদিক থেকে গবু চাকর–মহীনও এসে পড়েছে হ্যারিকেন নিয়ে। ওদের দেখে খাটের তলাকার নিরাপদ আশ্রয় থেকে বের হলাম। পিসেমশাই বলেন—জল আন—পাখা কর। মুখে চোখে জল দে ওস্তাদের।

কোনরকমে একটু সুস্থ হতেই রাসু ওস্তাদ চোখ দুটো ছানাবড়ার মত করে এদিক ওদিক চেয়ে বলে—বাঁচান মুখারজি বাবু। একসাথে মামদো-হুমদো সব এসেছিল। ইয়া লম্বা হাত-হাড়-এর মত শক্ত! বলে কিনা—গলা টিপে শেষ করে দেবে, পাকড়ে ছিল প্রায় ! উঃ—মা কালী রক্ষা করেছেন। এখানে আর থাকবো না বাবুজি। বলেছে—ফিন দেখলে এবার জানসে খতম করে দেবে। অফ্ বাপ্! পানি—থোড়া পানি ।

এক ঘটি জল নিয়ে কোঁও কোঁও করে গিলে বিকট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসল । মহীন পীরবাবার জলপড়া ছিটিয়ে দেয় সর্বাঙ্গে। এর জামা কাপড়ও ভিজে গেছে সেই পুণ্য নীরে। ঝাঁঝাল তীব্র গন্ধ ওঠে।

রাসু ওস্তাদ রাতটা জেগেই বসে থাকে। ভয়ে যেন কাঁপছে সে। আমরাও ঠায় বসে আছি ওকে পাহারা দিয়ে যাতে আর মামদো-হুমদো না আসে।

…..ভোরেই ফার্স্ট ট্রেন। রাসু ওস্তাদ বলে—এই ট্রেনেই চলে যাব মুখারজি বাবু । আয় বাপ্ মামদো-হুমদোর সেই তর্জন-গর্জনটা মনে পড়তে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় লোকটা।

মহীন, ওদের চাকর গবু, আমরা কজন মিলে ঘিরে নিয়ে চলেছি ওস্তাদকে ইস্টিশানের দিকে। তখনও ঠিক ফর্সা হয়নি। পাখিরা কলরব করছে। এদিকে ওদিকে সাবধানী দৃষ্টি মেলে চলেছে রাসু ওস্তাদ। যেন মামদো-হুমদোরা তাক পেলেই তার ঘাড় মটকাবে এবার।

ট্রেনে উঠে রাসু ওস্তাদ এবার দম ফেলে। এ যাত্রা যেন প্রাণে বেঁচে গেল। বাড়ি ফিরে আসছি। এবার হোঁৎকা বলে—পটলা যুৎ করে চা খাওয়া। তর জন্যে যা করছি ফ্রেন্ডের জন্য তা কেউ করেনি কইলাম ।

ওর দিকে চাইলাম-কেন রে? কি এমন রাজকাজ করলি?

হোঁৎকা জবাব দিল না, মিটি মিটি হাসছে। পকেট থেকে কাগজের মোড়কটা বের করে বলে—এটা কি কদিন?

সাদা পাউডারটার দিকে চেয়ে থাকি। হোঁৎকা বলে ওঠে ম্যাগ্‌সালফ্। জোলাপ কয় এরে। হি-হি হেই রাতে ওস্তাদের জলের কুঁজায় এক খামচা ফেলি। পরদিন দেখলি খেল খান্ ছ-সাতবার পায়খানায় সেই বাছাধন কাৎ! তবুও সাঁঝবেলায় খাতি দেখি মতলবটা করলাম কি রে মহীন !

মহীনের দিকে চাইলাম। সেও ওস্তাদের গানের গুঁতোর অস্থির হয়ে উঠেছিল। তাই ওই পীরবাবা সাজিয়ে এনেছিল তাদের ক্লাবের মদনদাকে। হুম্দো-মামদোর বুদ্ধিটা ওরই। আর রাতের বেলায় বাকি কাজটা সেরেছিল গদাই আর হোঁৎকা। হুম্দো-মামদোর ভূমিকা দুটো তারা দুজন সুন্দর অভিনয় করেছে বাঁশের হাত তৈরি করে।

হোঁৎকা বলে—পিসেমশাইরে কোস না কিছু ।

অবশ্য ব্যাপারটা পিসিমা কিছু শুনেছেন, অনুমানও করেছেন। তাই বাড়ি ঢুকতে বলেন মহীনকে—ঘটিতে কি ছিল? জলপড়া না অন্যকিছু! যা বোট্‌কা বিশ্রী গন্ধ। ওই খাওয়ালি ওস্তাদকে!

হোঁৎকা বলে ওঠে—গাড়োলের পেচ্ছাব পিসিমা। জ্বর-টুর হলে কবরেজ মশাই খেতে দ্যান, ভালো জিনিস। পিসিমা অবাক হয়ে চাইলেন।

-সে কি রে! তাহলে মাম্‌দো-হুম্‌দো এসব

মহীন বলে—ওসব কথা থাক মা। ওই গাঁক-গাঁক আওয়াজে পাড়াশুদ্ধ লোক ক্ষেপে উঠেছিল। পড়াশোনাও করার যো ছিল না। তাই এদের নিয়ে ওস্তাদকে একটু টোটকা দাওয়াই দিলাম। এখন খিদে লেগেছে, খেতে টেতে দাও তো। কাল থেকে যা ধকল চলছে। উঃ!

খেতে বসেছি। হোঁৎকা বলে—দিনকতক যুৎ করি খাই ল পটলা। লাইন কিলিয়ার কইরা দিছি তর। অল কিলিয়ার !

কদিন পর আবার নিশ্চিন্ত মনে এবার খেতে বসেছি। পিসিমাদের গ্রামটা সত্যিই মনোরম। খাবার-দাবার মেলে, ঝামেলা নেই। ভীম ওস্তাদ গির্দাবাবুরা কেউ নেই এখানে। মায় এখানের কাকগুলোও বেশ ভদ্র, পটলাও নিরাপদে মাথা উঁচু করে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবছি দু-চারদিন থেকেই যাব এখানে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *