পটলা সমগ্র ১
পটলা সমগ্র ২

পটলার ম্যাজিক

পটলার ম্যাজিক

মাত্র ন’টাকা? পুরোপুরি দশই দাও। অ নরুমামা।

নরুমামা বলে ডাকি বাসন্তী স্টোর্সের মালিক নরেশ চাকলাদারকে। শীর্ণ পাকানো চেহারা, রস কষ নেই, শরীরে দয়া ধর্ম বলেও কিচ্ছু নেই। নইলে প্রায় নতুন ম্যাচ ক্যারাম বোর্ডের জন্য মাত্র ঐ ন’টাকা দিয়েই হাঁকিয়ে দিল। অথচ ওটাকে পালিশ করে নরুমামা অন্য কোনো খদ্দেরকে নিদেন আশি টাকাতে ঝাড়বে।

হোঁৎকা কাতরস্বরে বলে, – অ মামা ।

নরুমামা টাকাগুলো গুনে দিয়ে বলে—আর এক পয়সাও দেব না, ওতেই দিতে হয় তো দাও, নইলে নিয়ে যাও তোমার কাঠের বোঝা

ক্লাবের সখের ক্যারাম বোর্ডখানাও বেচতে হল শুধুমাত্র দেনা শোধ করে ইজ্জত রক্ষার জন্য, আর ও বলে কিনা কাঠের বোঝা।

জবাব না দিয়ে বের হয়ে এলাম ।

পাওনাদার ঝালমুড়িওয়ালা কেবলরাম। ওর দেনা শোধ করতেই হবে, ও দেশে চলে যাচ্ছে। কেবলরাম তার প্রাপ্য সাতটাকা বুঝে নিয়ে চলে গেল। হোঁৎকা বলে, — রইল গিয়া ওনলি টু রুপিস! উঃ! তারপর আছে মালাই বরফওয়ালার দেনা –

ফটিক বলে, ক্লাব থেকে রেজিগনেশন দেব।

হোঁৎকা বলে,—আইসক্রিম ভেলপুরি খাইছস, দেনা কিলিয়ার কইরা যা গিয়া, নয় তরে ছাড়ুম না ।

তাড়াতাড়ি থামাই ওদের,—এসব করলে চলবে? ক্লাবে চল—ঠান্ডা মাথায় সেখানে গিয়ে আলোচনা করা যাবে।

হোঁৎকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,—ক্লাব? তার চেয়ে ক শ্মশানে চল! ও তো শ্মশানই হইয়া গেছে!

ফটিক নাটক গান নিয়ে থাকে। সে বলে ওঠে অহীন্দ্র চৌধুরীর পোজে—সাজানো বাগান শুকিয়ে গেছে রে! উঃ পটলা কিনা বিটট্রে করল এইভাবে! ঘটি বাটি বন্ধক দিতে হচ্ছে? আর দ্যাখ ও কিনা—

সামনে রাস্তার এমাথা থেকে ওই মাথা অবধি লাল শালুর ব্যানার পড়েছে, সাদা কাপড়ের পট্টি দিয়ে লেখা আছে

“অপূর্ব জাদু প্রদর্শনী—আসুন-দেখুন ধন্য হোন।

জাদুকর প্রফেসার পটল ঘোষ!”

হোঁৎকা বলে,—হালায় ম্যাজিসিয়ান হইছে! হবি হ’ আমাগোর ডুবাইবি ক্যান?

পটলা আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের সেক্রেটারি কাম ক্যাশিয়ার কাম ফাইনান্‌সার। অর্থাৎ এক কথায় কামধেনুই বলা যায়। বাড়ির অবস্থা বেশ ভালোই। বাবা-কাকাদের কয়েকটা চালু কারখানা, আর আছে ঠাকমা, বুড়িকে চাপ দিলেই টাকা বের হয়।

সেই পটলার এখন বাতিক হয়েছে ম্যাজিকের। সে নাকি দ্বিতীয় পি. সি. সরকার হবে আর গুরুও জুটেছে। বুড়ো বসন্তবাবু ইদানীং পটলাকে নিয়ে পড়েছে, তাকে ম্যাজিসিয়ান বানিয়ে দেবে।

পটলাকে দেখেছিলাম কদিন ধরে ওদের বাড়ির একটা ঘরে পর্দা টাঙিয়ে হাত পা নেড়ে তাসের খেলা প্রাকটিস করতে, হাওয়ায় নাকি তাস ধরে ফেলছে ঝপাঝপ্। আর শূন্যে খপ করে টাকাও ধরছে।

হোঁৎকা ওই হাওয়ায় টাকা ধরার ব্যাপারটা দেখে বলে–হেই ম্যাজিক খানই সেরা, পটলা, তবে এইবার ক্লাবের প্রেসিডেন বানামু চল্।

বুড়ো বসন্ত বলে ওঠে,–যাও দিকি ছোকরা। পটলা আর ওইসব বাজে ব্যাপারে নেই। ম্যাজিক সাধনার বস্তু, সেইটাই করতে দাও ।

আমাদের একরকম ভাগিয়ে দিল পটলার গুরু বসন্তবাবু! তারপর থেকে পটলাও আর আসেনি ক্লাবে। দু-তিন দিন পার হয়ে যাবার পরও গেছি ওর সন্ধানে, দেখি পটলা খুবই ব্যস্ত। বসন্ত মজুমদার বলে,—ওকে ডিসটার্ব করবে না! ও এখন হিপনোটিজম শিখছে। মনসংযোগের প্রয়োজন। সামনে ওর শো হবে—এখন ব্যস্ত। অর্থাৎ পটলার আর আমাদের প্রয়োজন নেই।

ক্ষুণ্ণ মনে বের হয়ে আসি। অথচ এই পটলার জন্য পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের কজন সভ্য যা করেছি সে সব ফর্দ দিলে সব মিলিয়ে তা একখান কেন দুতিন খানা গ্রন্থাবলি হয়ে যাবে।

হোঁৎকা বলে দুনিয়াটা বেইমান হইয়া গেল রে? শেষে পটলাও! দুঃখ এদিকে তো হয়েছেই, আর সেই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মত এবার এসে পড়েছে পাওনাদারের দল। এতকাল ঝালমুড়িওয়ালা, মালাইওয়ালা, ভেলপুরিওয়ালা মায় ন্যাপলা কেবিনের চা টোস্ট ওমলেট-এর বিল সব মিটাত পটলাই। তারাও মিন মিন করত পটলার সামনে।

এখন তারা জেনে গেছে, পটলা এখানে আসে না তাই তারাও এবার বেড়াল থেকে নখদন্ত প্রকাশিত এক একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারে পরিণত হয়েছে।

ওরা মাল তো ছাড়ছেই না,—উল্টে তাগাদা দেয়,– বকেয়া পয়সা ফ্যালো। ন্যাপলা কেবিনের মালিক ন্যাপা মাইতি শাসায়, –জামা খুলে নেবো।

মালাইওয়ালাও বলে গেছে, – কুলপি কর দেঙ্গা!

বিষম বিপদেই পড়েছি আমরা। ক্লাবের ব্যান্ড একটা বেচে ওদের দেনা কিছু শোধ করেছি, আজ ম্যাচ বোর্ড ন’টাকায় বেচে দেনামুক্ত হয়ে মাত্র ক্লাব ফান্ডে দু’টাকা সম্বল করে শোকে মুহ্যমান হয়ে ক্লাবের চাটাইয়ে এসে চিৎপাত হয়ে পড়ে আছি।

সামনে ফুটবল খেলা, কোনো প্লেয়ারই আসবে না মাংস রুটি কলা না পেলে।

হোঁৎকা কি ভাবছে। আমি জানাই, ক্লাব তুলে দে।

ফটিক সাড়া দেয় না। গোবরা বলে,—তাই কর। মামার আড়তে বসে কুমড়োই বেচব । হোঁৎকা বলে তার আগে পটলার ম্যাজিকই ভ্যানিশ করুম, হালায় কত গুল দিছে রে ? লাল হ্যান্ডবিলে পটলার ম্যাজিকের কেরামতির ফর্দ দেওয়া হয়েছে। বাক্সের মধ্যে একজনকে বন্দি করে রাখবে কিন্তু তাকে দেখা যাবে দর্শকদের মধ্যে। আবার বাক্সে বন্দি হয়েই দেখা যাবে তখুনি তাকেই।

গোবরা বলে, চল দেখেই আসি ম্যাজিক !

–আমাদের সর্বনাশ হল ওই ম্যাজিকের জন্যে! আবার তাই দেখতে যাবি পয়সা খরচ করে?

গোবরা বলে,-মামার আড়তের দুখান কুমড়ো সরিয়েছি, ওতেই হবে। আর পটলাকে জব্দ করতে হলে ওখানেই যেতে হবে ।

পটলাকে মদত দিচ্ছে কুলেপাড়া ক্লাব। পটলাকে তারা নাকি এবার সেক্রেটারি বানাবে। তারাই স্কুলের ছুটিতে হলটা বলে কয়ে ম্যানেজ করে সেখানে পটলার ম্যাজিক শো করাচ্ছে, আমদানিও হবে তাদের। পটলা নেচে কুঁদেই খালাস।

হল ভর্তি লোকজনের সামনে পটলা ম্যাজিক দেখাবে কি, ম্যাজিক দেখাচ্ছে তো ঐ সিড়িঙ্গে বসন্ত মজুমদার। পটলা জরির পোশাক পরে মাথায় পালকের নীচে ইয়া কাচ সেটা করা পাগড়ি একটা পরে কেবল হাত পা নাড়ছে। কারণ কথা বলতে গেলেই ওর বিপদ। ওর জিবটা আলটাকরায় আটকে যায়। ব্রেক ফেল করে।

তাই ইংরাজিতে ‘লেডিজ এ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ বলার পরই খেই ধরে বসন্ত মজুমদার । দুচারটে খেলাও দেখাচ্ছে। এরপর পটলার খেলা – ম্যাজিক বক্স। তাতে হাত পা বেঁধে একটা ছেলেকে পুরে দিলে পটলা, হাতের জাদুদণ্ড মেড়ে চেড়ে কি মন্তর বলে সিন্দুক বন্ধ করে তালা এঁটে পর্দা টেনে দিল। তারপরই দেখা যায়, সেই ছেলেটাই পরনে সেই গেরুয়া পাঞ্জাবি পায়জামা পরে দর্শকদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে, ফোকাস পড়ে তার উপর। আর এহেন তাজ্জব ঘটনা দেখে চড় চড় হাততালি পড়ে, সিটি বাজে, ছেলেটা চলে যায়, ছেলেটা দেখা যায় বাক্সের মধ্য থেকে সেই আবার বের হচ্ছে।

তাজ্জব ব্যাপার। পটলা মাথা নিচু করে তার এই বিরাট যোগসাধনার কৃতিত্বের ফসল কুড়োচ্ছে হাততালি আর সিটির মধ্যে।

খেলা শেষ, বের হয়ে আসছি। পটলা আমাদের দেখেও যেন দেখেনি ভাব দেখায় । খেদোক্তি করি, – পটলাটা আজ চিনতেই পারল না?

ফটিক বলে,—বড় হলে, নাম করলে তাই হয় রে।

হোঁৎকা গর্জে ওঠে,—ওর থিকা আমিই বড় ম্যাজিসিয়ান। কালই তরে ম্যাজিক দেখামু।

গোবরা কুমড়া বিক্রির পাঁচ টাকা দে। অ্যাডভান্স—সব শোধ কইরা দিমু।

গোবরা টাকাটা দিয়ে বলে,—আর নাই—নট এ সিঙ্গিল ফার্দিং।

হোঁৎকা বলে—লাগবো না কাল ম্যাজিক দেখতে আইবি। হক্কালেই কইয়া দে।

–তুই! তুই আসবি না?

হোঁৎকা বলে,—না। কাল কাম আছে। জরুরি কাম–ম্যাজিকের পরই আমারে ক্লাবেই পাইবি ।

হোঁৎকা টাকা নিয়ে চলে গেল।

গোবরা বলে,—ব্যাটা বাঙাল সটকান দিল নাকি রে?

—কে জানে? ওর ব্যাপার বুঝছি না!

ফটিক নাটকীয়ভাবে বলে,—একে একে নিভিছে দেউটি।

পটলার ম্যাজিক শোর কথা এর মধ্যে পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এক টাকায় এত কাণ্ড – হই চই দেখার লোকের অভাব হয়নি। আজ একেবারে হাউসফুল, গমগম করছে স্কুলের হল। আজ বিশেষ শো। পটলার আমন্ত্রণে হেডমাস্টার মশাই, সব শিক্ষকরা, মায় কাউন্সিলার হলধরবাবু, কেবলরাম, করাতকলওয়ালা, পটলার কাকারা মায় বুড়ি ঠাকুমা অবধি এসেছে। দেখি দূর থেকে তারা ওপাশের ঘরে সেই রাজপুত্তুর সাজা পটলার সঙ্গে কথা বলছে, ফোটোগ্রাফার ফোটো তুলছে ঝকঝকে আলো জ্বেলে।

হলের এক কোণে বসে আছি। পটলা তার সঙ্গে বসন্তবাবুর খেলা শুরু করেছে।

ওদিকে গ্রিন রুম, তারপরই স্কুলের বাগান—পেছনে পাঁচিল অবশ্য আছে, কিন্তু ছেলেরা সহজে গেট এড়িয়ে স্কুল থেকে পালাবার জন্য পাঁচিলের দু’এক জায়গায় ফোঁকর করে রেখেছে।

মাইকে এবার ঘোষিত হয়, ‘পটলচন্দ্র দেখাবেন তাঁর বিশ্বনন্দিত খেলা – ম্যাজিক বক্স ! কঠিন সম্মোহনের খেলা, দর্শকরা যেন গোলমাল না করে মন দিয়ে দেখেন।’

মিউজিক শুরু হয়েছে, স্টেজে বাক্সের মধ্যে বন্দি করে ছেলেটাকে ঢোকানো হচ্ছে, স্বয়ং হেডস্যারই গেছেন বাক্স তালা ঠিক আছে কিনা দেখতে। এবার ছেলেটাকে সিন্দুকে ঢুকিয়ে তালা দেওয়া হল, পর্দা টাঙানো হল।

হল নীরব, ছুঁচ পড়লেও শব্দ শোনা যাবে। পটলার কণ্ঠস্বর শোনা যায়,—এবার দেখবেন ওই বাক্সবন্দি ছেলেটিকেই দর্শকদের স-সামনে-ওয়ান, টু-থ্রি!

মঞ্চের একপাশে ছেলেটার দাঁড়াবার জায়গা নির্দিষ্ট আছে, কালও দেখেছে সবাই, আজও সেখানে ঝপ করে ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠে, কিন্তু চমকে ওঠে পটলা! জায়গাটা শূন্য—গেরুয়া পাঞ্জাবি পরা ছেলেটা সেখানে নেই, কেউ নেই! শূন্যস্থানে আলোটা নিষ্ঠুর ব্যঙ্গের মত পড়েছে।

স্তব্ধ হল—পটলাও ঘামছে। কেউ নেই—ছেলেটাকেও দেখা যায় না।

এবার কে গর্জে ওঠে, – ম্যাজিক না ফ্যাজিক। গুল মারছিস পটলা ?

কে চিৎকার করে ওঠে,– আরশোলা আবার পাখি, পটলা আবার ম্যাজিসিয়ান! ইল্লি—ওঠরে !

পটলার পা দুটো সেঁটে গেছে মঞ্চে! বসন্ত ঘামছে। এ কী হল?

মিউজিক থেমে গেছে। শব্দ ওঠে মড়মড়-মড়াং। চেয়ার ভাঙল একটা—দুখানা। দর্শকরা হইহই করে চলে। তুমুল হট্টগোল।

তারপরই শূন্যে ধেয়ে আসে মঞ্চের উপরে একখানা চেয়ারের পিঠ ভাঙা, পটলার কপালেই সপাটে লেগেছে, ছিটকে পড়ে সে। বসন্ত মজুমদার চিঁচিঁ করছে,—ড্রপ! ড্রপসিন ফেলে দাও। তারপরই হলে সে কী ভয়ানক কাণ্ড, চেয়ার টেয়ার ভেঙে একসা।

ফটিক বলে,–কেটে পড় এখান থেকে।

ক্লাবের ঘরের দিকেই চলেছি। এ সময় ওদিকটা নির্জনই থাকে। একটু বসে জিরানো যাবে। ক্লাবের ঘরে দেখি, বসে আছে হোঁৎকা। আর একটা ছেলে নিবিষ্ট মনে মোগলাই পরটা খাচ্ছে।

হোঁৎকাই খাওয়াচ্ছে ওকে,খা কোনো ভয় নাই। একটু পরেই তোর বাড়ি পৌঁছাইয়া দিমু। আরও দুখানা মোগলাই দিমু তরে। অ্যাই দ্যাখ।

ছেলেটা আধখানা মোগলাই সাবাড় করে ওগুলোর দিকে লুব্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে, – দেবে তো ?

-হ্যাঁ! দিমু। হোঁৎকা আমাদের ঢুকতে দেখে বলে!

কি রে ম্যাজিক কেমন দেখলি? স্রেফ গুলবাজি—হলে তো চেয়ার ভাঙাভাঙি হল, পুলিশ এসেছে।

আমি দেখছি এই ছেলেটাকে। গোগ্রাসে পরোটা খাচ্ছে। এর পরনে গেরুয়া পাঞ্জাবি, পায়জামা, পোশাকটা এর পক্ষে বেমানানই। আরে! এমনি একটা ছেলেকেই তো স্টেজে পটলা বন্দি করে তার ম্যাজিক বাক্সে পুরছিল। সেই ছেলেটা কি?

শুধোই,—একে কোথায় পেলি। একেই তো দেখলাম পটলা বাক্সে বন্দি করল-

হোঁৎকা বলে,এ্যাই তর বুদ্ধি! এই বুদ্ধি লই স্কুলে ফাস্ট হোস? এডা কেন হইব! এডা তো মনা-

ছেলেটা বলে ওঠে,—হি গো। আমার নাম মনা, আর বাক্সে পোরে আমার দাদা ধনাকে। ও থাকে বাক্সে আর আমি থাকি বাইরে। আটআনা পয়সা দিলেই আমি গে এসটেজে দাঁড়াই, ধনা তো তখন বাক্সে পোরা। আমাকেই দেখে—যমজ কি না। দেখতে একইরকম। তাই বাবু একটাকা দিয়ে নিয়ে এল, ডিম পরোটা খেতে দিল, পালিয়ে এলাম। মরুক গে ধনা বাক্সে ঢুকে। —এ্যাঁ। এই বলে হিপনোটিজম-এর ম্যাজিক !

হোঁৎকা বলে,—বুঝছিস! আমি কালই বুইঝা গেছি, ওই যমজ ছোঁড়া দুইটারেই চিনি। তাই পটলার ম্যাজিকের বারোটা বাজাইবার জন্য একডারে লইয়া আসছি গ্রিনরুম থনে। এহন বোঝ মজা !

পরদিন সকালে গিয়ে দেখি, সাংঘাতিক কাণ্ডই ঘটেছে।

চেয়ার ভাঙার ঘায়ে পটলার কপালে আব গজিয়েছে, নেহাৎ পাগড়ি ছিল তাই রক্ষে, কপাল ফাটেনি।

আমাদের ঢুকতে দেখে তার ঠাকুমা বলে ওঠে,—তোরা এসেছিস? পটলাকে দ্যাখ ভাই, কী যে হয় ওর মাঝে মাঝে। মাথায় ভূত চাপে। ভূতটাকে ছাড়াতে পারিস না তোরা? পটলা আজ আমাদের দেখে লেংচে লেংচে এগিয়ে আসে। মুখে করুণ হাসি হেসে বলে, —আয়। ওসব ভক্কিবাজিতে আর নাই রে। ক্লাবে চল।

হোঁৎকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,—ক্লাব তুইলা দেব রে! দেনার দায়ে ক্যারাম বোর্ড, ব্যান্ড সব বেচছি, আর ওসবে নাই ।

ঠাকুমা বলে, সেকি রে! ওসব আবার নতুন করে কেন। আমি ব্যবস্থা করছি। আর শোন অনেকদিন আসিসনি, আজ প্রসাদ না খেয়ে কেউ যাবি না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *