পটলা সমগ্র ১
পটলা সমগ্র ২

পটলার পক্ষীপ্রেম

পটলার পক্ষীপ্রেম

পটলা ইদানীং খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

অবশ্য আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের পটলচন্দ্র মাঝে মাঝে নানা কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কখনও কবিতার চাষ করে, দিনরাত এন্তার কবিতা, উপন্যাস, নাটক লিখতে থাকে দিস্তা দিস্তা কাগজে। কবিতা লেখার জন্যে তো সেবার গঙ্গাতেই ডুরে মরত।

সেবার সাধু হবার জন্য গৃহত্যাগ করে সে এক কাণ্ড বাধাল। কয়েকমাস আগে ফুটবলার হবার সাধনা করতে গিয়ে এইসা ঠ্যাং ভাঙল যে এখনও ঈষৎ নেচে নেচে চলে।

সেবার দেশভ্রমণ করতে গিয়ে কোথায়, থানায় জমা পড়ে গেল ।

পটলার কাজ কারবারই বিচিত্র।

কিন্তু পটলা না হলে আমাদের পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের অবস্থা মা মরা বাছুরের মত অসহায় গোছেরই। আলুকাবলি, ফুচকা, চানাচুর, মালাই বরফ সাফ্ নকুলের দোকানের চা ওমলেটের বিল ওই পটলাই যোগায় ।

সুতরাং ওকে দরকার ।

সামনে ক্লাবের ফিস্ট। ঘটাপত্র আছে। কিন্তু পটলা গায়েব।

পরপর চার পাঁচদিন ওর দেখা নেই। ওদিকে কুলেপাড়া ক্লাব এখানের শিল্ডে রানার্স আপ হয়েই বেশ জোর ভোজ় দিয়েছে।

হোঁৎকা বলে—ক্লাবের প্রেস্টিজ পাংচার হুই গেছে গিয়া, ওগোর রানার্স আপ হই যা ফিস্ট দিছে আর আমরা ‘উইনার্স’ হই কিছুই করলাম না? উঃ—কি দুঃখু তা বুঝবি না তরা? হেই পটলা কি কয়? তগোর ক্যাশিয়ার ?

ফটিক বলে–কদিন আসেনি।

হোঁৎকা বলে ওঠে—ওরে ধইরা আন! আমিও রেজিনেশন দিমু।

হোঁৎকা অবশ্য ঘনঘনই রেেিনশন দেয় অমন ।

আমি বলি—ওসব করে কি হবে? চল পটলাকেই খুঁজে দেখি না ।

অগত্যা চারজনে বিরস বদনে বের হলাম পটলচন্দ্রের বাড়ির দিকে।

পটলারা এই এলাকার বেশ ধনী। ওর বাবা-কাকাদের কি সব ইন্জিনিয়ারিং কারখানা, করাতকল, বড়বাজারে লোহা লক্কড়ের দোকানপত্র আছে। বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে শহরের মধ্যে বাগান, একটা পুকুর, এদিকে বাড়ি। গাড়ি-ট্রাকও আছে। বাগানের একদিকে মন্দির । পটলার ঠাকুমার জন্যে ওই দেবসেবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পটলার খোঁজ করতে চাকরটা বলে—ছোটবাবু বাগানের ওদিকের বাড়িতে আছে। ওখানেই থাকেন পেরায় ।

কাজে এসে দেখি আলাদা একটা বাড়ি একদিকে। নীচের তলায় বাড়ির সরকার, দু’একজন কর্মচারী সপরিবারে থাকে। পুরনো একতলা বাড়িটা মূল বসতবাড়ি থেকে দূরে।

ওই বাড়ির ছাদে টালির ঘর নতুন করা হয়েছে, পটলা ওখানেই বিরাজ করছে।

আমি বলি বাড়ি ছেড়ে এখানে কি করছে রে পটলা ?

সঙ্গীত সাধনা করে, আর সেসব বেদম কালোয়াতী গান। ধরলে আর থামে না, ফটিক বলে।

-সাধন ভজন করে নাকি রে?

হোঁৎকা গর্জে ওঠে—কচু করে, দেহি চল।

উপরে উঠে অবাক হই ‘ক্যাচ-কিচ’–বিচিত্র শব্দ উঠছে। টালির চালের নীচে জাল ঘিরে বেশ খানিকটায় ডজন দুয়েক নধর লাল, সাদা মুরগি নেচে কুঁদে বেড়াচ্ছে। আর পাত্র ভর্তি কিসব খাবার খাচ্ছে।

কোনটা মাথার লাল ঝুঁটি নেড়ে আবার আওয়াজও করে-কক্-ক্রো—

পটলা আমাদের দেখে বলে।

-ত তোরা?

পটলার জিভটা মাঝে মাঝে আলটাকরায় আটকে যায়। তা বলে বলার উপায় নেই, পটলা রেগে ওঠে। তাই বলি পটলার ব্রেক ফেল করেছে।

হোঁৎকা নিবিষ্ট মনে দেখছে ওই মুরগিগুলোকে। বলে সে—এডা করছস কি রে?

পটলা বলে হ্যাঁ। এবার দেখবি পোলট্রির রমরমা ব্যবসা করব। আমাদের দেশ প-প্যাব কাপিটা প্-প্-প্রোটিন খায় খুব কম। মুরগি ফুল অব প্-প-

কথাটা শেষ করি—প্রোটিন।

পটলা বলে–হ্যাঁ। আর দামেও সস্তা। মাংস-ডিম সব মেলে মুরগি থেকে

হোঁৎকা বসে বাংলা পরীক্ষায় নারকেল সম্বন্ধে রচনা লিখেছে। তাই হোঁৎকাও জুড়ে দেয় সেই রচনা লেখার ভঙ্গিতে।

মুরগি দেখতে অতীব সুন্দর, দুইখানা পা। মাথায় লাল ফুল তার। মুরগির ঠ্যাং খাইতে অতীব সুস্বাদু। মাংসও-

পটলা চোখের সামনে তার পালিত প্রিয়জনদের ঠ্যাং, মাংস কেউ খাবার কথা ভাববে তা সইতে পারে না। পটলা বলে—ওসব কথা কইবি না হোঁৎকা ! ওই অবলা জীবদের যে কি করে খায় লোকে জানি না। কত সুন্দর দ্যাখ।

তাই বুদ্ধদেব বলেছেন অহিংসা পরম ধর্ম। হোঁৎকা ধমকে ওঠে—দে থো ফ্যালাইয়া তগোর বুদ্ধুটুদ্ধুর কথা।

এদিকে প্রেস্টিজ পাংচার হই গেছে গিয়া। আমি রেজিকনেশন দিমু। তুই থাক মুরগি লইয়া। পটলা বলে—সব টাকা তো বি-বিজিনেসে ঢালছি রে? পোলট্রি বানাবো তার ট-ট্রয়াল দিচ্ছি।

আমি শুধোই কি হবে এতে?

পটলা আকাশ থেকে পড়ে। ওদিকের টেবিলে কয়েকটা মুরগির বিষ্ঠা মাখা খাতা বই বের

করে বলে।

—দ-দ্যাখ। দ-দারুণ বড় ব্যবসা হয় মু-মুরগি নিয়ে মহারাষ্ট্রে। ফিলমের অশোককুমার-এর নাম শুনিছিস? মস্ত মুরগির ফার্ম ওর। চ-চল্লিশ হাজার মুরগি আছে। ওই শ-শক্তি সামন্ত, ওঁরও বিরাট মুরগির ফার্ম ।

হোঁৎকা বলে—কস্ কি? তয় তুই অশোককুমার হইবি দেহি?

পটলা বলে—তবু দেখিয়ে দেব বাংলাতেও মুরগি ফার্ম করা যায় বিগস্কেলে। বাইশটা মুরগি ডিম দেবে রোজ নিদেন বিশটা করে।

মুরগির ডিমের ওমলেটও খাইনি কদিন।

তাই শুধোই—দিচ্ছে? তাহলে আমাদের ডবল ডিমের ওমলেট হয়ে যাক।

হোঁৎকা তর্ক থামিয়ে ওমলেটের গন্ধ পেয়ে বলে—তা মন্দ না। দেহি তোর ডিম টেস্ কইরা ।

পটলা বলে—এখানে তো বাচ্চা, মোটে সাত সপ্তাহের। ওরা ডিম দেবে আরও পনেরো সপ্তাহ পর।

হতাশ হয় হোঁৎকা—কস্ কি? এখনও চাইর মাস পর? তার চেয়ে ডিম না খাই ওগোর খাই ফ্যালা। সব কিলিয়ার হইব।

পটলা আবার চটে ওঠে—থামবি? এত বিউটিফুল মুরগি ময়ূরের মত। তাদের খেতে পারবি? এত হৃদয়হীন তোরা? ছিঃ, তোদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা হয়। মুখ দেখাতেও ভালো লাগে না ।

পটলা কথাগুলো বলে একটা সাদা নধর মুরগিকে বুকে নিয়ে আদর করতে থাকে। যেন সিদ্ধার্থ আহত তীরবিদ্ধ হাঁস বুকে নিয়েছে গোছের ভাবটা।

হোঁৎকা চটে ওঠে! বলে সে,

—সমীর আমার রেজিকনেশন লই যা। আমি তগোর ক্লাব ছাড়ুম। কয় মুখ দেখতি লজ্জা হয়! দেখস না –

আজ পটলার কাছে এতদিনের বন্ধুরা কেউ নয়। আপন হল কিনা ওই মুরগিগুলো। পটলা ওদিকে মুরগিদের তোয়াজ করছে। নেমে আসি ব্যথিক মনে আমরা। এতদিনের বুকের রক্ত দিয়ে গড়া ক্লাব পটলা ভেঙে দিল। ফিস্টও হবে না ।

বাগানের পথ দিয়ে আসছি। হোঁৎকা কথাও বলে না। মন্দির থেকে হঠাৎ পটলার ঠাকুমাকে বের হতে দেখে প্রণাম করি। হোঁৎকা অবশ্য খুবই ভক্তিমান। প্রণামটা ওই আগে করে ও উদাস কণ্ঠে বলে—চলি ঠাকুমা। আর এ জীবনে দেখা হইব না ।

ঠাকুমাও ভালোবাসেন আমাদের। পটলার রকমারি বিপদে আমরাই বুক দিয়ে পড়ি। তাই হোঁৎকার ওই কথার সুরে বলেন- কেন রে ?

হোঁৎকা বলে—পটলা আমাগর মুখদর্শন করবে না কইছে। তয় আর আসুম ক্যান? কন ? ঠাকমার মনের চাপা রাগটা এবার ফেটে পড়ে। তিনি নিষ্ঠাবতী ধার্মিকা মহিলা। বাড়ির ত্রিসীমানায় মুরগি আনতে দেখে পটলার উপর চটে ছিলেন। চাকরবাকরদের বলেও পবিত্র পরিবেশ থেকে মুরগি দূর করা যায়নি।

আজ আবার এসব শুনে ঠাকমা বলেন,

—ওই ছোঁড়াটার মাথা বিগড়েছে, বামুনের বাড়ি—দেবতাবিগ্রহ রয়েছেন—ও কিনা মুরগির চাষ করছে? মহাপাপ আনছে। পড়াশোনাও গোল্লায় গেছে পটলার।

হোঁৎকা বলে গম্ভীরভাবে—তাই দেহি। স্কুলেও কম যাইতিছে। ওর গায়ে মুরগির গন্ধ লাগে।

ঠাকমা এবার বলেন—ওই পাপগুলোকে দূর করতে পারবি তোরা?

হোঁৎকা যেন বুকে বল পায় ঠাকমার কথায়। মুরগির নেশা ছাড়াতেই হবে এবার। কারণ না হলে পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবই উঠে যাবে। হোঁৎকা বিনীতভাবে বলে-

—কি কইছেন ঠাকুমা? সখ কইরা পুষছে ওগোর !

ঠাকুমা বলে—ঝাঁটা মারি এমন সখের মুখে। পারবি কিনা বল ?

হোঁৎকা বলে–আপনে কইছেন, গুরুজন। দেহি কি করা যায়। তর কিছু হইলে আপনি কিন্তু কিছু কইবেন না। ব্যাপারটা গোপন রাখাই ভালো।

ঠাকুমা গরদের থানের খুঁট থেকে একটা কুড়িটাকার নোট বের করে হোঁৎকাকে দিয়ে বলেন—যা হয় কর বাপু। ওতে মিষ্টি কিনে খাবি তোরা।

হোঁৎকা ব্যবসায়ে পটু। নোটটা হাতিয়ে বলে—মাত্তর কুড়ি ট্যাকা?

অর্থাৎ ওটার যেন এই সংসারে কোনো দামই নেই।

ঠাকমা বলেন—কাজ উদ্ধার কর তখন আরও কিছু দেবো।

হোঁৎকা আপাতত এই নিয়েই খুশি। বলে সে—ঠিক আছে ঠাকুমা। দেহি কি করা যায়। যা বাজার তাতে কুড়ি টাকায় বেশিদিন চলবে না। ঝালমুড়ি-ফুচকা-আলুকাবলির দামও বেড়ে গেছে। ক’দিনের মধ্যে পটলার পোলট্রির ব্যবস্থা কিছু না করতে পারলে মুশকিল হবে। বৈকালে ক্লাবের মাঠে বসে সংগৃহীত চিনেবাদাম ঝালনুন দিয়ে ঈগলের মত একটা একটা দানা গুনে খেতে খেতে বলি—কি ভাবলি হোঁৎকা ?

হোঁৎকা তখনও ভাবছে। গোবরা বলে—দিই একদিন লুটপাট করে রাতের বেলায়। আমি বলি—দারোয়ান আছে ওদের দুটো জানিস তো।

তা জানি। সুতরাং লুটপাট করা চলবে না! এমন সময় ফটিককে ধ্যাড়ধেড়ে ব্রেক বেলহীন সাইকেল হাঁকিয়ে আসতে দেখে চাইলাম। ফটিক বলে—সাংঘাতিক খবর রে? পটলা একেবারে বোবা মেরে গেছে শোকের ঠ্যালায়।

শুধোই-পটলার কি হল রে?

গোবরা শুধোয়—তাহলে ওর ঠাকমা টেঁসেছে নাকি রে? বল জব্বর ভোজই হবে।

হোঁৎকা ধমকে ওঠে—থাম দেহি। হাঁইচা কাইসা বল কি হয়েছে? ফটিক বলে—পটলার জব্বর একখান মুরগি আজ দুপুরে মারা গেছে রে। খায়নি পটলা! একেবারে শোকে পাথর হয়ে গেছে।

চুপ করে ভাবছি বন্ধুর এতবড় শোকে কি বলে সান্ত্বনা দেবো। হঠাৎ হোঁৎকা খুশিতে চিৎকার করে ওঠে।

—ব্যস! জয় মা তারা, পথখান বাতলে দিস মা। জয় বাবা শিব শম্ভু ।

অবাক হই ওর উৎসাহে। বলি,—পটলার এতবড় দুঃখে তুই খুশি হয়েছিস? হোঁৎকা বলে—মোটেই না। ওর দুঃখ ঘুচাইবার পথ পাইছি।

চল গিয়া একবার দেইখা আসি ।

যাওয়াই উচিত।

পটলার পোলট্রির সবচেয়ে সরেশ মুরগিটা মারা গেছে হঠাৎ। পটলা দুপুর থেকে খায়নি, ঠাকমা ছুৎমনি বাঁচিয়ে দূর থেকে ডাকাডাকি করেও পটলাকে সরাতে পারেনি। চাকরবাকররাও হিমশিম খেয়ে গেছে।

এমন সময় আমাদের দেখে ঠাকমা চাইলেন, বলেন-দ্যাখ আবার কি করেছে পটলা ? আপদগুলো সব মরলে বাঁচি!

— পটলা ।

আমাদের ডাক শুনে শোকসন্তপ্ত পটলা চাইল। বলে, তোরা এলি, কিন্তু আমার সর্দার চলে গেল রে।

মনে হয় মুরগির নাম ‘সর্দার’ রেখেছিল। আমি দার্শনিকের মত ভঙ্গিতে বলি—দুঃখ করে কি করবি বল? সর্দার তো আর ফিরবে না।

হোঁৎকা হঠাৎ এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বলে ওঠে। পটলা, এ যে রানীক্ষেত ‘ডিজিজ’ রে। মুরগির মৃত্যুরোগ। খুব ছোঁয়াচে—বাকি মুরগিগুলোর এ রোগ না হলি হয়। হলি অনলি টোয়েনটি ফোর আওয়ারস। ব্যস-সাফ ।

চমকে ওঠে পটলা, তার সাধের মোরগকুল যে এতবড় বিপদে পড়েছে তা ভাবেনি। পটলা বলে,

—তাহলে?

হঠাৎ পটলা হোঁৎকার দুহাত ধরে কাতরস্বরে বলে,—কিছু ব্যবস্থা কর হোঁৎকা। যা লাগে খরচা দেবো।

হোঁৎকা বলে—ঠিক আছে গিয়া। ‘সালফার’। আমার নগুমামায় বিখ্যাত ভেটারানারি ডাক্তার। ওর প্রেসক্রিপশন, ঠাইশা গন্ধকের ধোঁয়া দিতি হবে কুইক।

পটলা বলে—তাই কর ভাই। বাঁচা আমাকে। তৎক্ষণাৎ গোটা পঁচিশ টাকাও দিয়ে দেয় পটলা। হোঁৎকা আমাদের ডিউটিতে রেখে ছুটল ‘সালফার’ আনতে। ধুনুচি-ছোবড়া এসবও আনতে হবে।

ঘণ্টা খানেকের মধ্যে হোঁৎকা রেডি হয়ে এসেছে। ঠাকমাও রয়েছেন দূরে। এ বাড়ির মুরগিদের বাঁচা ভাই।

হোঁৎকা একগাল হেসে বলে—আইয়া যহন পড়ছি তহন আর ‘ভয়’ নাই পটলা । মার ধুনো-

চার পাঁচটা ইয়া সাইজের ধুনুচিতে ছোবড়া দিয়ে এন্তার ধোঁয়া করে একেবারে ঘন অন্ধকার করে দেওয়া হল। কাসছি, কিন্তু হোঁৎকার কথামত কাজ করতে হচ্ছে।

আবছা অন্ধকারে দশ পনেরো মিনিট সব ঢেকে গেল, তারপরই গন্ধকের ছিটে। কোনদিকে দরমার বেড়ায় লেগে আগুন ধরে যায় পটলার নবনির্মিত মিনি পোলট্রিতে।

হইহই ব্যাপার। চিৎকার করছে পটলা।

—মুরগি বাঁচা, না হলে আমি নিজেই অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ দেব ।

দু-তিনজন ধরে আছি পটলাকে। অবশ্য আগুন এমন কিছু নয় কিন্তু আগুন নেভানোর লোক জুটে গেছে তার তুলনায় অনেক বেশি। বাগানের মালি আবার হোস পাইপ লাগিয়েছে।

লাঠি-বাঁশের ঘায়ে পোলট্রির ঘর ধূলিসাৎ, জলের তোড়ে মুরগিও কোথায় বেপাত্তা হয়ে গেছে, দু’একটা আহত আধা ঝলসানো অবস্থায় দেখা গেল মাত্ৰ ।

বাকি ডজন দুয়েক সরেস মুরগি একেবারে হাওয়া হয়ে গেছে রাতের অন্ধকারে, পোলট্রি ঘরও ধূলিসাৎ। কাঠ-টালি বাঁশও ছেতরে পড়েছে।

পটলা তখন শোকে মুহ্যমান। আমরাও ছাই-জলে ভিজে গেছি, কিন্তু বাঁচাতে পারিনি ওর মুরগিকুলকে।

পরের দিনই পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের বাৎসরিক ফিস্ট আর শিল্ড ফাইনালের উৎসব বেশ ঘটা করেই হল। আমাদের আইটেম বেশি ছিল না। তবে যা ছিল সরেস।

চিকেন চাউমিন, চিলি চিকেন আর চিকেন তন্দুরি উইথ স্যালাড। আর রান্না করেছিল নকুল-কাফের নকুলদা নিজে।

মুরগির অভাব হয়নি। ওই ধোঁয়ার অন্ধকারে হোঁৎকা-গোবরা দুজনে গোটা ষোল আঠারো জব্বর মুরগিকে কপ্ কপ্ করে বস্তায় পুরে চালান করেছিল। আমরা শুধু ধোঁয়া দিয়ে জমাট অন্ধকারকে ঘনতর করে রেখেছিলাম। পটলাও এসেছিল ক্লাবের কর্মকর্তা সে। কিন্তু মুরগির শোক তখনও ভুলতে পারেনি বলে মুরগি আর খায়নি। ও দই সন্দেশ খেয়েছিল, তার টাকা অবশ্য এসেছিল ওর ঠাকমার কাছ থেকেই ।

আমাদের এমন নিখুঁত অপারেশনে ওর ঠাকমা খুব খুশি হয়েছিল। পটলার মাথা থেকে পোলট্টি ব্যবসা এখন উবে গেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *