পটলা সমগ্র ১
পটলা সমগ্র ২

পটলার দেবদর্শন

পটলার দেবদর্শন

পটলা সেদিন ক্লাবের মাঠে বসে আগামী দিনের ক্লাবের শিল্ড ফাইনাল নিয়ে বেশ গভীর আলোচনায় বসেছে। আমাদের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ ক্লাবের মধ্যমণি পটলা, বনেদি পরিবারের একমাত্র বংশধর। শহরে তার ঠাকুরমার অনেক বিষয়আশয়। বাবার একটা বড় কারখানা। পটলাই তাদের এই মাঠটা ক্লাবকে দিয়েছে। না হলে এতদিনে এখানে থাকত পটলার বাড়ি।

সবকিছু নিয়ে পটলার জন্য এই পঞ্চপাণ্ডব ক্লাবের এত রমরমা। ওর মাথায় কখন কী আইডিয়া গজগজ করে পটলা নিজেও জানে না। তার থেকেই হয় যত বিপত্তি। আর সেসব ঝামেলা সামলাতে হয় আমাদের ক’জনকে।

ফুটবল সেক্রেটারি হোঁৎকা বলল, “শিল্ড ফাইনালে এবার প্রেস, টিভির লোকজনদেরও আনতে হইব। ক্লাবের পাবলিসিটি চাই।”

পটলা বলল, “তার চেয়ে ভালো গঠনমূলক কাজও তো করতে হবে। সেই কাজের প্রোগ্রামটাই আমি করে ফেলেছি।”

পটলা উত্তেজিত হলে ওর জিভটা মাঝে-মাঝে আলটাকরায় সেট হয়ে যায়। তখন তোতলামি শুরু হয় ।

গোবরা বলল, “কী প্রোগ্রাম ?”

পটলা বলল, “খবরে শুনেছিস তো, এবার বন্যায় অনেক গ্রাম জলে প্লাবিত হয়েছে। কত ঘর-বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। মানুষ বানভাসি হয়েছে। নদীর বাঁধ, রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়েছে। খাবার নেই, জল নেই, আশ্রয় নেই। তাই এই বন্যাত্রাণে আমরাও কাজ করব। করতে হবে। আর তোদেরও এর সঙ্গে থাকতে হবে!” পটলা বেশ আবেগতাড়িত হয়েই কথাগুলো বলে চলল। পটলা আরও বলল, “চল, এখন থেকেই আমাদের কাজে লেগে পড়তে হবে। জামা-কাপড়, চাল, টাকা, সব জোগাড় করতে হবে। আমি ঠাকুরমাকেও বলব, কিছু টাকা দেওয়ার জন্য।”

ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফটিকও প্রস্তাবটা লুফে নিল। সে বলল, “আমি ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে একটা গান লিখে দল করে ত্রাণ সংগ্রহে বেরোব। দেখবি কী রকম সাহায্য পাবি।”

ফটিক ইতিমধ্যে গান লিখে দল তৈরি করে ফেলল। ক্লাবের ছেলেরা এই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সবাই মিলে ফেস্টুন হাতে শহরের পথে-পথে, পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতে ত্রাণের জন্য কাজ শুরু করে দিল।

‘ভিক্ষা দাও গো নগরবাসী

ভিখারি এসেছে দুয়ারে,

যাহা দিবে তাই হাসি মুখে নিব

আর্ত বন্ধু জানাবে প্ৰণাম

যারা ভাসছে আজ অকুল পাথারে।

শেষ পর্যন্ত তাদের গানের গুঁতোয় হোক বা মানুষের ভালোবাসায়, বেশ ভালো ত্ৰাণই জোগাড় করল ওরা। ওদিকে পটলার ঠাকুরমাও বেশ ভালো টাকাই দিলেন।

পটলা বলল, “এবার শীতলপুরে যেতে হবে। ওখানে আস্তানা গেড়ে রিলিফের কাজ শুরু করতে হবে।”

শীতলপুর সম্বন্ধে আমাদের বিশেষ কিছুই জানা ছিল না। পটলার চেনা এখানকার স্কুলের শিক্ষক মদনবাবুর সাহায্যে নৌকো করে ত্রাণের জিনিসপত্র নিয়ে বেশ খানিকটা জল, মাঠ-প্রান্তর পেরিয়ে শীতলপুরের গ্রামে এলাম। সারা গ্রামটাই জলের তলায় রয়েছে। বাড়ি, বিশেষ করে মাটির বাড়িগুলো ভেঙে গিয়েছে। কোথাও ঘরের চালা উপড়ে পড়ে আছে। যেখানে জমি একটু উঁচু, মানুষ সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে। কেউ বা আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে। কোনওরকমে ছেঁড়া চট, বস্তা, প্লাস্টিক টাঙিয়ে মাথার ছাদ বানিয়ে রয়েছে। মানুষ, কুকুর, গোরুর সহাবস্থান ।

মানুষের এই বেদনার ছবি আমাদের মনেও বেদনা জাগাল। অবশ্য যা এনেছি তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তবে পটলা বলল, “আরও জিনিস আসবে কয়েকদিনের মধ্যে।”

পটলা ও তার টিম এখানে এসে মদনবাবুর সব রকম সাহায্যই পেয়েছে। শীতলপুরের এই অঞ্চলে প্রায় সব মাঠ-জমিই মদনবাবুর দখলে। তিনি যেন এই অঞ্চলের জমিদার।

চারদিকে শুধু জল, দূরে বাঁধ। রাস্তায় পড়ে আছে শত শত মানুষ। এদিকে বিশাল মন্দির, মন্দিরের পাশেই একটি যাত্রীনিবাস। সেখানে ভক্তদের জন্য এলাহি থাকার বন্দোবস্ত। কিন্তু এখানে বানভাসি জনতার প্রবেশ নিষেধ ।

আমরা কয়েকজন পটলা, হোঁৎকা, ফটিক, গোবরা, মদনমাস্টারের দু’-একজন লোককে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে থেকে কাজ শুরু করেছি। দিনভর ধকল গিয়েছে, তাই আজ একটু বিশ্রাম নিয়েই কাল থেকে কাজে লেগে পড়তে হবে।

পাশেই মন্দির, সন্ধে থেকেই ভক্ত সমাগম শুরু হল। মন্দিরে আরতির সময় হয়েছে। এখানে দরিদ্র, বানভাসি জনতার কোনও চিহ্নই নেই। ওদিকে সিংহাসনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। পাশে গৌর-নিতাই। সুগন্ধী ধূপ জ্বলছে। মন্দিরে নিত্যদিন নাম-সংকীর্তনের ব্যবস্থাও রয়েছে।

মন্দিরের অধ্যক্ষ ওদিকে বিশেষ আসনে বসে আছেন। বেশ নধর দেহ, চাকচিক্যও রয়েছে চেহারায়। মন্দিরে যারা রয়েছে সবাই চোখ বুজে নাম জপ করছে। তাদের চেহারাও বেশ চিকন। ওদিকে বড়-বড় পাত্রে রাধাকৃষ্ণের উদ্দেশে ভালো মানের প্রসাদ চড়ানো হয়েছে। কোনও পাত্রে বেশ ফোলা ফোলা লুচি-তরকারি, কোনওটায় রসগোল্লা, মিষ্টি, কোনওটায় বেশ প্রমাণ সাইজের ফলমূল।

আরতির পর একজন ভক্ত আমাদের বলল, “মহারাজ আপনাদের এখানে থাকতে বারণ করেছেন।”

দিনভর আমাদের ধকল গিয়েছে। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, খাওয়াদাওয়াও ঠিকমতো হয়নি। আমাদের মধ্যে গোবরা একটু ভোজনবিলাসী। সে এর মধ্যেই সব দেখে এসেছে।

গোবরা বলল, “যা খুশবু উঠেছে প্রসাদের, আর সামলানো যাচ্ছে না। পেটে ইঁদুর দৌড়চ্ছে। চল, ঠাকুরের দয়ায় প্রসাদ ভালোই জুটবে।”

প্রসাদ নেওয়ার জন্য আমরা যখন গেলাম, দেখি দু’-তিনজন মহারাজ সেখানে রয়েছেন। আমাদের দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে আপাদমস্তক জরিপ করে এক মহারাজ বললেন, “এই পবিত্র দেবভূমিতে, এই অচেনা মানুষদের অযথা ভিড় করা ঠিক নয়। তাতে দেবতার শান্তি বিঘ্নিত হয়। ওরা কাল থেকে এখানে যেন ভিড় না করে, তা হলে ওদের এখানে ঠাঁই হবে না । ” মহারাজের কথা শুনে আমরা সবাই চমকে উঠলাম। দেবতার নাম করে এঁদের পাষণ্ডের মত ব্যবহার।

পটলা বলল, “আসলে আমরা এখানে এসেছিলাম ত্রাণের কাজে। পাশে মন্দির দেখে তাই…!”

মহারাজ পটলার কথা কেড়ে নিয়ে বললেন, “তোমরা জিনিসপত্র নিয়ে ওই বাঁধে, না হয় পথের ধারে গিয়ে বিলিয়ে দাও। এখানে বেশি ভিড় কোরো না । ”

এবার হোঁৎকা তার বাঙাল ভাষায় কী যেন বলতে গেল, মহারাজ বললেন, “বেশি কথা বোলো না। যা বললাম, তাই করো। না হলে বিপদ হতে পারে। জয় গুরু, জয় নিতাই, জয় গৌর!”

আমরা দেখলাম, ঠাকুরের নামে নিবেদন করা প্রসাদের পাত্রগুলো আমাদের চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেল। একটা লুচির টুকরোও আমাদের দেওয়ার কথা কেউ ভাবল না ।

আমরা চলে এলাম। হোঁৎকার ব্যাগে শুকনো মুড়ি ছিল, তখন সেটাই আমাদের খাদ্য । বাধ্য হয়েই পেটের জ্বালা মেটাতে লুচি, মালপোয়া সাঁটাতে না পেরে শুকনো মুড়ি চিবোতে-চিবোতে আমাদের আস্তানায় ফিরে এলাম। রাতে একটা চালার ঘরে কম্বল পেতে আমাদের বিছানা।

পটলা বলল, “মন্দিরের ওই মহারাজদের দেখলি? এঁরা রাধাকৃষ্ণের পুজো করেন, এই এঁদের ব্যবহার? যারা অসহায়, বানভাসি মানুষদের সাহায্য করতে এসেছেন, তাদেরকেই বলেন কিনা পাপী? এখানে তাদেরই আসা বারণ?”

গোবরা বলল, “নিজেরা খেয়েদেয়ে সুখে আছেন, আর আমাদের বলেন কি না পাপী, প্রসাদ দেওয়া যাবে না?”

হোঁৎকা বলল, “মহারাজই এক নম্বরের বদমাশ। ভণ্ড গুরু সেজে চ্যালাদের কাছে ভগবান হতে চান.।”

পটলা বলল, “মহারাজকে একটা শিক্ষা দিতে হবে।”

গোবরা বলল, “গ্রামের হাজার-হাজার মানুষ বানভাসি হয়ে উপোসে মরছে, আর নিজেরা মণ্ডা, লুচি খাচ্ছেন!”

এর পর দুঃখ-কষ্টে, মশার কামড়ে আমাদের কয়েকদিন কেটে গেল। আমরা মন্দিরের সেসব তর্ক-বিতর্ক ছেড়ে রিলিফের কাজে লেগে পড়লাম।

ক্রমশ বানের জল নামছে। মানুষও যে যার ঘরে ফিরছে। মানুষ আবার নতুন করে মাথার ছাদ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সারাদিনের ক্লান্তি, পরিশ্রমের পর সেদিন রাতে ঘরে ফিরেছি। সারাদিন ত্রাণের কাজে এদিক-ওদিক থেকে বেশ কিছুটা চাল-ডাল জোগাড় হয়েছে।

ওদিকে মদনবাবুও সদরে গিয়েছেন কী কাজে। অগত্যা আমাদেরই রান্না করে খেতে হবে। সেদিন রাতে আশপাশ থেকে খড়কুটো জোগাড় করে চালে-ডালে একসঙ্গে রান্না করে কোনওরকমে মশার কামড় খেয়ে শুয়ে রাতটা কাটিয়ে দিলাম।

পরের দিন সকালে বেশ দেরিতেই সকলের ঘুম ভাঙল। পাশেই মন্দির, কিন্তু আমাদের সেখানে প্রবেশ নিষেধ। মন্দিরের বাবাজিরা দেবতার পুজো করলেও দরিদ্রনারায়ণ সেবার ধার ধারেন না। ওঁরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। এদিকে আমাদের পেটে ছুঁচো ডন মারতে শুরু করেছে।

পটলা বলল, “সঙ্গে চাল-ডাল তো আছে, কিন্তু এমন জলের রাজ্যে শুকনো কাঠ কোথায় পাওয়া যায়? কাঠ না হলে তো খিচুড়িও বসানো যাচ্ছে না।”

এদিকে খিদেও পেয়েছে জোর। ওদিকে মন্দিরে বাবাজিরা দুপুরের পরমান্ন খেয়ে সুখনিদ্রা দিচ্ছেন। আমাদের মধ্যে হোঁৎকা এসে খবর দিল, “কাঠ আছে, তবে মন্দিরের রান্না করার কাঠ।”

আমরা সকলে খুব সাবধানে মন্দিরে ঢুকে দেখলাম, উপরে কাঠ সংগ্রহ করে রাখা আছে। কিন্তু কিছুতেই লাফিয়েও আমরা সেই কাঠের নাগাল পেলাম না। হঠাৎ দেখি, পটলা একটা লাঠি তুলে ধরে খোঁচাতেই কালি-ঝুলি মাখা বেশ কিছু কাঠ ঝরঝর করে ঝরে পড়ল। গোবরা বলল, “ছেড়ে দে পটলা, এতেই হবে।”

আমরা চারদিকে তখনও সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি। পাছে কেউ ধরা না পড়ে যাই! পটলা দেখল, দু’হাত তোলা গৌরাঙ্গের মুখে-মাথায় কাঠে লেগে থাকা ঝুল-কালি লেপটে গিয়েছে।

এদিক-ওদিক চেয়ে দেখি, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। গোবরা বলল, “মহারাজরা লুচি-মণ্ডা খেয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। চল, আমরা কেটে পড়ি।”

এর পর আমরা রান্নার কাজ শুরু করলাম। হাঁড়িতে খিচুড়ি ফুটছে। ক্ষুধার্ত আমরা এর মধ্যে কলাপাতা পেতে বসে পড়েছি। এমন সময় বাবাজিদের দু’জন এদিকে এসে সেই কাঠগুলো দেখেই গর্জে উঠলেন, “দেবতার ভোগের জন্য কাঠ তোমরা কোথায় পেলে? পবিত্র অশ্বত্থ কাঠ?”

ওঁদের চিৎকারে তখন মঠ থেকে আরও দু’-তিনজন এসে হাজির হলেন। তাতে গর্জনও বেড়ে গেল। এদিকে খিচুড়ি তখন তলায় ধরে গিয়েছে। পোড়া-পোড়া গন্ধ ছড়াচ্ছে, সেদিকে কারও নজর নেই ।

একজন বললেন, “মন্দিরের পাশে এসব অবিচার? এখনই এখান থেকে বেরোও।”

চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে প্রধান মহারাজ এসে হাজির হলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “এ কাঠ পেলে কোথায়? জবাব দাও।”

পটলা বলল, “কাঠের অভাবে রান্না করতে পারিনি। উপোস করে থাকতে হবে। এমন সময় একজন সুন্দর দেখতে তরুণ এসে বলল, ‘কাঠ পাচ্ছ না? চলো, আমি কাঠের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”

মহারাজ বললেন, “সুন্দর দেখতে তরুণ!”

পটলা বলল, “হ্যাঁ, সেই ছেলেটিই তো নিজে এসব কাঠ আমাদের এনে দিয়ে বলল, ‘নাও’ কাঠ, রান্না করো।’ কাঠগুলো রেখে দিয়ে সে ওদিকে চলে গেল। বেশ সুন্দর চেহারা । লম্বা চুল, পরনে ধুতি, গলায় চাদর।”

মহারাজ বললেন, “থামো তুমি। এখানে এমন তরুণ কেউ নেই।”

পটলা বলল, “তা জানি না। তবে ওদিকে চলে গেল…!” পটলা মন্দিরের দিকে হাত তুলে দেখাল।

মহারাজ বললেন, “মন্দিরের দিকে চলে গেল? চলো তো!”

সাধুরা আমাদের নজরবন্দি করে নিয়ে চললেন। ওদিকে কিছু দূরেই নিতাই-গৌরের দু’হাত তোলা মূর্তি। সঙ্গে রাধাকৃষ্ণের মূর্তিও রয়েছে।

আমরাও যেন গভীর বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলাম। দেখি, কাঠের কালি-ঝুলি গৌরাঙ্গের মূর্তির সারা শরীরে, এমনকী মুখেও লেপটে আছে। সেই মূর্তিটার দিকেই আঙুল তুলে পটলা বলল, “ঠিক ওইরকম দেখতে।”

সবাই স্তব্ধ। মহারাজ একবার আমাদের দেখছেন, আর-একবার গৌরাঙ্গের মূর্তির দিকে…. । এদিকে আমাদেরও ভয় করছে। কে জানে, মহারাজ কী বলবেন !

হঠাৎ মহারাজ সেই ঝুলমাখা মূর্তির সামনে সটান গড়িয়ে পড়ে আর্ত কণ্ঠে বললেন, “ওরে, তোরা সাক্ষাৎ ভগবানের দর্শন পেয়েছিস! প্রভু এই অধমকেও দর্শন দাও, দর্শন দাও প্রভু!”

মহারাজ একবার সেই ঝুলমাখা গৌরাঙ্গের পায়ে মাথা ঠেকাচ্ছেন, আর আমাদের বলছেন, “তোরা ভাগ্যবান! তিনি নিজে তোদের সেবা করেছেন। ওরে, আমি তোদের চিনতে পারিনি, অবজ্ঞা করেছি! আমাকে ক্ষমা করো প্রভু! মহা ভুল হয়ে গিয়েছে। জয় নিতাই-গৌর, রাধেশ্যাম।”

ওদিকে অন্য মহারাজরাও ততক্ষণে ছুটে এসেছেন। তাঁরাও মহারাজের ভাবাবেগ দেখে ভগবানের নামে নাচতে শুরু করলেন। আমরা ওঁদের নাচ দেখে হতবাক।

ওদিকে তখন খিচুড়ি পোড়ার গন্ধ বেরোচ্ছে।

মহারাজ সঙ্গীদের বললেন, “ওরে, তোরা দেখছিস কী? বাবাদের সেবার ব্যবস্থা কর। জয়-নিতাই!”

কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করার পরই দেখি, আমাদের সামনে দেবতার সেই পরমান্ন এনেছেন বাবাজিরা। এতদিনের দেখা সেই ফুলো ফুলো লুচি, মণ্ডা, ভালো ছানার রসগোল্লা, সন্দেশ। আমাদের সেবার কোনও ত্রুটি হল না অতিথিবাসের ঘরও খুলে দেওয়া হল।

মহারাজ এবার অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “নাও, এবার তোমরা মঠের অন্নসেবা করো!”

আমাদের থাকার জন্য অতিথিশালা, নরম বিছানা সব ব্যবস্থাই পাকা। পটলা বলল, “তা হলে অসাবধানে গৌরাঙ্গের শরীরে ঝুল-কালি লেগে ভালোই হল!”

হোঁৎকা বলল, “কালই কাইট্যা পড়। নাইলে বাবাজি যদি কেসটা জাইনা ফেলেন, প্রবলেম হইব। রক্ষা নাই।”

আমরা অবশ্য পরের দিনই শীতলপুর থেকে চলে এলাম।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *