পঁচিশে বৈশাখে
আজ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। কলম হাতে নিয়েছি তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব বলেই। কিন্তু তার : আগে দু-একটা কথা সেরে নিই।
সাহিত্য শাস্ত্র নয়, জ্ঞানভাণ্ডার নয়, বিষয়-বিদ্যা তথা অর্থকর বিদ্যাও নয়। সব মানুষের মধ্যে অল্প-বিস্তার রসপিপাসা থাকলেও তারা পরচর্চা করেই তা মিটিয়ে নেয়,–বড়োজোর গান-গল্প কাহিনী মুখে মুখে শুনেই তারা তৃপ্ত থাকে। কাজেই সাহিত্য সবার জন্যে নয়। সাহিত্যানুরাগ আবাল্য অনুশীলন সাপেক্ষ। যারা সচেতনভাবে সাহিত্যরস গ্রহণে উৎসুক নয়, সাহিত্য তাদের জীবনে অপ্রয়োজনীয়। এজন্যে লেখাপড়া-জানা লোক মাত্রেই সাহিত্যপাঠক বা সাহিত্যানুরাগী নয়। এমন শিক্ষিত লোকও আছে, যারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে একটি গ্রন্থও পড়ে নি জীবনে।
সাধারণ মানুষ চলে প্রাণধর্মের তাকিদে। প্রাণীর প্রাণধারণের পক্ষে যা প্রয়োজন, তা পেলেই প্রাণী সন্তুষ্ট। সমাজবদ্ধ সাধারণ মানুষও জীবন ও জীবিকার অবলম্বন পেলেই আর কিছুরই তোয়াক্কা করে না। পশুর জীবন যেমন প্রবৃত্তি ও প্রকৃতিচালিত, সাধারণ মানুষের জীবনও তেমনি নীতি ও নিয়ম নিয়ন্ত্রিত। এ নিয়ন্ত্রণে বিচলন ঘটায় কেবল লিলা। বৈষয়িক জীবনে প্রয়োজন কিংবা সামর্থ্যাতিরিক্ত লিপ্সাই বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় আনে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনে। এই লিপ্সা নিয়ন্ত্রণের জন্যেই মানুষ গড়ে তুলেছে সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্রব্যবস্থা। আর এই নিয়ন্ত্রিত জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও সৌন্দর্য বিধানের জন্যেই মানুষ সৃষ্টি করেছে সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি প্রভৃতি।
এগুলোর মধ্যে সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত ও দর্শন মনুষ্যত্ব ও মানবতা বিকাশের সহায়ক। মনুষ্যত্বের ও মানবতার অনুশীলন ও বিকাশ সাধনের জন্যে এগুলোর চর্চা ছিল প্রত্যেক মানুষের পক্ষেই আবশ্যক। কিন্তু সাধারণ মানুষ সে-প্রয়োজন ও দায়িত্ব স্বীকার করে নি কখনো। তাই সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত কিংবা দর্শন চিরকালই গুটিকয় মানুষের সাধ্য-সাধনায় রয়েছে সীমিত।
সাহিত্য, শিল্প,সঙ্গীত ও দর্শন মানুষের আত্মার উপজীব্য। সাধারণ মানুষ অবশ্য আত্মা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা জানেও না ওটা কী বস্তু। সমাজ-ধর্মের সংস্কারবশেই তারা আত্মার অবিনশ্বরত্ব স্বীকার করে এবং সে-কারণেই পারত্রিক জীবনে আস্থা রাখে। তাই সমাজ-ধর্ম নির্দেশিত পাপ-পুণ্যবোধেই তাদের আত্মতত্ত্ব সীমিত। যারা জীবনের গভীরতর তাৎপর্য-সচেতন, তারা জানে, চেতনাই আত্মা। এবং এ চেতনা পরিশীলন ও পরিচর্যার অপেক্ষা রাখে। কেননা, পরিসুত ও পরিমার্জিত চেতনাতেই মনুষ্যত্ব ও মানবতার উদ্ভব। বলতে গেলে—-সাহিত্য শিল্প, সঙ্গীত ও দর্শন একই সঙ্গে বীজ, বৃক্ষ ও ফল। কেননা সাহিত্যদর্শনাদি যেমন পরিসুতি ও পরিমার্জনার উপকরণ, তেমনি আবার পরিশীলিত চেতনার ফলও বটে। তাই সাহিত্যদর্শনাদি একাধারে আত্মার খাদ্য ও প্রসূন।
মানুষের মধ্যে যে-সব জীবনযাত্রী–বিষয়ে নয়–চেতনার মধ্যেই জীবনকে অনুভব ও উপভোগ করতে প্রয়াসী; সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত ও দর্শন তাদেরই আত্মার খাদ্য। এসব তাদের জীবনের অপরিহার্য অবলম্বন। সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত কিংবা দর্শন চর্চা করে এ ধরনের লোকই শান দেয় তাদের চেতনায়। মনুষ্যত্বের দিগন্তহীন উদার বিস্তারে মানস-পরিভ্রমণ তাদের আনন্দিত করে, আর মানবতাবোধের অসীম অতল সমুদ্রে অবগাহন করে ধন্য হয় তারা।
মনুষ্যত্ব ও মানবতার সাধনা ফলপ্রসূ নয় ব্যবহারিক জীবনে, বরং ক্ষতিকর। এজন্যে লোকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলে এ সাধনা। তাই এ পথ যাত্রীবিরল। তারা পরিহার করে চলে বটে, কিন্তু তাচ্ছিল্য করে না–কেবল বিষয়-লিপ্সাবশে এ পথ গ্রহণে উৎসাহ পায় না–এ-ই যা।
যে-স্বল্পসংখ্যক লোক মানুষের আত্মার খাদ্যরূপে এ ফসল ফলায়, আর যারা এর গ্রাহক, তারা বিষয়ে রিক্ত হলেও যে অন্তরে ঋদ্ধ, তা সাধারণ মানুষও উপলব্ধি করে তাদের অনুভবের সুন্দরতম মুহূর্তে। এজন্যেই তারা হেলা করে বটে, কিন্তু শ্রদ্ধাও রাখে।
এগুলোর মূল্য সম্বন্ধে তাদের অবচেতন মনের স্বীকৃতি রয়েছে বলেই লিলুর বিষয়বুদ্ধি নিয়ে তারা এগিয়ে আসে এগুলোর মূল্যায়নের জন্যে এবং স্বার্থবুদ্ধিবশে বিধিনিষেধ আরোপ করতে চায় এগুলোর উপর। এমনকি ফরমায়েশ করবার ঔদ্ধত্যও প্রকাশ হয়ে পড়ে কখনো কখনো। স্বার্থপরের বিষয়বুদ্ধিপ্রসূত এই নিয়ন্ত্রণ-প্রচেষ্টা সময়ে সময়ে জুলুমের পর্যায়ে নামে। এবং তখনই শুরু হয় মনুষ্যাত্মা, মনুষ্যত্ব ও মানবতার দুর্দিন।
সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত ও দর্শন আত্মার উপজীব্য বলেই যারা চেতনা-গভীর জীবন কামনা করে, এগুলোর স্রষ্টা তাদের আত্মীয়। আত্মার জগতে দেশ-কাল-জাত-ধর্ম নেই। তাই দেশ, কাল, সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র কিংবা জাতীয়তায় চিহ্নিত নয় এ চেতনালোক। এখানে যে কেউ আত্মার খাদ্য যোগায় সে-ই আত্মীয়। যা কিছু এ চেতনার বিকাশবিস্তারের সহায়ক, তা-ই বরণীয়।
সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত ও দর্শনের ক্ষেত্রে মানুষের যা কিছু সার্থক সৃষ্টি তা চেতনা-প্রবণ বিশ্বমানবের সাধারণ সম্পদ, রিথ ও ঐতিহ্য। একক চন্দ্র-সূর্য যেমন সবার এজমালি হয়েও প্রত্যেকের অখণ্ড সম্পদ, এবং দ্বন্দ্ব না করেই প্রত্যেকেই নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজন মতো পেতে পারে এগুলোর প্রসাদ; তেমনি সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত আর দর্শনও দেশ-কাল-জাত-ধর্ম নিরপেক্ষ সর্বমানবিক সম্পদ। কল্যাণ ও সুন্দরের ক্ষেত্রে কোনো মানবতাবাদীই মানে না জাত ও ভূগোল।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীতকার ও দার্শনিক। তাই রবীন্দ্রনাথ চেতনা-প্রবণ মানুষমাত্রেরই আত্মীয়। পাক-ভারতে ইতিপূর্বে মানবাত্মার এত বিচিত্র খাদ্য আর কেউ রচনা করেননি। পৃথিবীর ইতিহাসেও এমন রকমারি ফসলের স্রষ্টা সুদুর্লভ! এত বড়ো মানবতাবাদীও ঘরে-ঘরে জন্মায় না। পৃথিবীর আত্মীয়-সমাজে রবীন্দ্রনাথ আমাদের পরমাত্মীয়। কেননা, যে-ভাষা আমাদের জীবনানুভূতির ও জীবনোপভোগের বাহন, যে-ভাষা আমাদের জীবনস্বরূপ, সেই আত্মার ভাষাতেই আমাদের আত্মার উপজীব্য দিয়ে গেছেন তিনি। এত বড়ো সুযোগ ও সৌভাগ্যকে হেলা করার মতো নির্বোধ হই কী করে! জীবনের সঙ্গে জীবনের যোগ সাধনের যে-দিশা ও দীক্ষা আমরা তাঁর কাছে পেয়েছি, আজকে গরজের সময়ে যদি তা আমাদের পাথেয় করতে পারি, তবেই ঘটবে আমাদের মনের মুক্তি। আর আমাদের চেতনায় পাব মানবতার স্বাদ।
সম্প্রতি জাতির হিতকামী, কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী, রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রভাবের মধ্যে অমঙ্গলের চিহ্ন প্রত্যক্ষ করে শঙ্কিত, আতঙ্কিত কিংবা দুর্ভাবনাগ্রস্ত। রবীন্দ্রসাহিত্য নাকি আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংসী। অন্য কোনো বিদেশী সাহিত্যের কু-প্রভাব কিংবা কুফল সম্বন্ধে কিন্তু চিন্তিত নন তারা। অন্তত তাঁদের কর্মে ও আচরণে এখনো প্রকাশ পায়নি সে-ত্রাস। নইলে ইসলামী রাষ্ট্রের মুমীন নাগরিকের উপর চীন-রাশিয়ার ধনসাম্যবাদী নাস্তিক্য সাহিত্যের প্রভাবের মধ্যে নিশ্চয়ই অমঙ্গল দেখতেন তারা এবং শঙ্কিত হতেন মার্কিনী যৌন ও গোয়েন্দা সাহিত্যের জনপ্রিয়তা দেখে। এ বিষয়ে হিতবুদ্ধিপ্রসূত কোনো অসন্তোষও তাঁদের মুখে প্রকাশ পায় নি কিংবা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা করেছেন বলেও আমাদের জানা নেই।
তাদের এই নিশ্চিন্ত উদারতা দেখে মনে হয়, তাঁরাও বিশ্বাস করেন যে, একাকিত্বে কিংবা স্বাতন্ত্রে মন-বুদ্ধি-আত্মার বিকাশ নেই, এবং বহির্বিশ্বের আলো-বাতাসের লালন না পেলে জ্ঞান প্রজ্ঞা-বোধের উন্মেষ হয় না কিংবা গণসংযোগ ব্যতীত ভাব-চিন্তা-কর্মের প্রসার অসম্ভব। কেননা, মানুষের জীবন পরিবেশ ও পরিবেষ্টনী নির্ভর। সে-পরিবেষ্টনী যার জগৎ-জোড়া, তার জীবনের বিস্তার ও চেতনার গভীরতা নিশ্চয়ই বেশি। তা হলে তাঁদের রবীন্দ্র-সাহিত্য বিরোধিতার কারণ অন্য কিছু। আমরা অন্তর্যামী নই। কাজেই সে-কথা থাক।
কিন্তু আমাদের অন্য প্রশ্নও আছে। স্বধর্মী বলেই যদি ভারতের জাতীয় কবি গালেব-হালি নজরুল পাকিস্তানী মুসলমানদের প্রিয় ও প্রেরণার উৎস হতে পারেন, তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের অমুসলমান নাগরিকরাই বা কেন তাদের স্বধর্মী বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ প্রভৃতির সাহিত্য পড়ার সুযোগ ও অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে! হিন্দু-রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য পড়ে যদি মুসলমানের সংস্কৃতি নষ্ট হয়, তা হলে হিন্দুর সংস্কৃতি নিশ্চয়ই প্রাণ পায়। পাকিস্তানের অমুসলমানেরও যদি সমনাগরিকত্ব স্বীকৃত হয়, তা হলে তাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতিচর্চার অধিকারও মেনে নিতে হবে। সংখ্যাগুরুর স্বার্থে সংখ্যালঘুর অধিকার হরণ নিশ্চয়ই অগণতান্ত্রিক। অতএব শিশু, ছাত্র, মহিলা, সৈনিক, বুনিয়াদী গণতন্ত্রী প্রভৃতির জন্যে যেমন রেডিয়ো-টেলিভিশনে স্বতন্ত্র আসরের ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি শক্তি বৈষ্ণব ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসরও থাকা উচিত। কেননা, সমদর্শিতাই সুবিচারের পরিমাপক।
মহৎচিত্তের ভাব-চিন্তা জ্যোৎস্নার মতোই সুন্দর, স্নিগ্ধ ও প্রীতিপদ। জ্যোৎস্না কখনো ক্ষতিকর হয় না। ও কেবল আলো ও আনন্দ দেয়, স্বস্তি ও শান্তি আনে আর দূর করে ভয় ও বিষাদ। মহৎসৃষ্টিও মানুষের মনের গ্লানি মুছে দিয়ে চিত্তলোকে আশা ও আনন্দ জাগায়, প্রজ্ঞা ও বোধি জন্মায়, আর জগতে ও জীবনে লাবণ্যের প্রলেপ দিয়ে বৃদ্ধি করে জীবন-প্রীতি,–দীক্ষা দেয় মনুষ্যত্বে ও মানবতার মহিমায় চেতনায়। এই কারণেই তো সাহিত্যরস তথা কাব্যরস ব্রহ্মাস্বাদ সহোদর। জীবনে মানুষ ও প্রকৃতির দেয়া দুঃখ-যন্ত্রণার অন্ত নেই। সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত ও দর্শন এসব জীবন-যন্ত্রণা ভুলবার অবলম্বন। তা থেকে বঞ্চিত হলে কী করে বাঁচবে হৃদয়বান চেতনা-প্রবণ মানুষ!
এজন্যেই দেশী লেখক-প্রকাশকের নির্ঘ ও নির্বিঘ্ন তরী বাঞ্ছায় বিদেশী গ্রন্থের আমদানি বন্ধের আমরা বিরোধী। জীবনের আর আর ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি ও ব্যবহারিক অসুবিধা স্বীকার করেও দেশী শিল্প ও সম্পদের আনুকূল্য করব। কিন্তু মনের চাহিদার ক্ষেত্রে দইয়ের সাধ ঘোলে মিটানো অসম্ভব। এখানে রস-পিপাসা মিটাতে অকৃত্রিম রসেরই প্রয়োজন। জৈব চাহিদা আর মানস-প্রয়োজন অভিন্ন নয়। লা মিজারেবল, ওয়ার এ্যান্ড পিস, মাদার, জঁ ত্রিস্তফ কিংবা ঘরে বাইরে পড়ার সাধ আনোয়ারা, মনোয়ারা, সোনাভান পড়ে মিটবে না। তাছাড়া এ যখন আমার শখের ও সাধের পড়া, এখানে বাধ্য করা পীড়নেরই নামান্তর। আমি পড়ি–আমার বৈষয়িক, আর্থিক, জৈবিক ও মানসিক যন্ত্রণা ভুলে থাকবার জন্যে, আর আমার চিত্তের সৌন্দর্য-অন্বেষা ও রসপিপাসা চরিতার্থ করবার জন্যে। আমি পড়ি–আমার আত্মার বিকাশ কামনায়–আমার চেতনার প্রসার বাঞ্ছয়,–আমার মানবিকবোধের উন্নয়ন লক্ষ্যে ও আমার মানবতাবোধের বিস্তার করে।
যাতে আমি আনন্দ পাইনে, তা দিয়ে আমি কী করে সৃষ্টি করব আমার পলাতক মনের আনন্দ-লোক! কাজেই বইয়ের ক্ষেত্রে স্বাদেশিকতা কল্যাণকর নয়। দেশের ভালো বই পড়ব তো নিশ্চয়ই, গর্বও বোধ করব তার জন্যে। সে-বইয়ের যে প্রতিযোগিতার ভয় নেই, তা বলবার অপেক্ষা রাখে না।
রবীন্দ্রনাথের জন্মথিতিতে তাঁর সম্বন্ধে কিছু লিখে আমার অন্তরের শ্রদ্ধা প্রকাশ করব বলেই কলম হাতে নিয়েছিলাম। নানা কথার চাপে মূল বিষয় হারিয়ে গেছে বটে, তবে মূল উদ্দেশ্য হয়তো ব্যর্থ হয় নি। কেননা, রবীন্দ্রসাহিত্য-প্রীতিই এসব বাজে কথা জাগিয়েছে আমার মনে। সবভাষা আমাদের জানা নেই। বিশ্বের সেরা বইগুলো কখনো পড়া হবে না জীবনে। এইসব বই যে-সব মহত্মনের সৃষ্টি, সে-সব মনের ছোঁয়াও মিলবে না কখনো। রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বের সে-সব মহৎ মনের প্রতিনিধি রূপে গ্রহণ করে বঞ্চিত আত্মাকে প্রবোধ দিতে চাই আমরা। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্রষ্টাদের চিত্তদূত-মানবতার দিশারী, আমাদের সামনে এক আলোকবর্তিকা, এক অভয়শরণ, এক পরম সান্ত্বনা। আমার ভাষাতেই তার বাণী শুনতে পাই, তাঁর ভাষাতেই আমার প্রাণ কথা কয়–আমার এ সৌভাগ্যের তুলনা নেই। জয়তু রবীন্দ্রনাথ।