কয়েক দিনের মধ্যেই নলিনাক্ষের সহিত অন্নদাবাবুদের পরিচয় ঘনিষ্ঠ হইয়া আসিল। প্রথমে হেমনলিনী মনে করিয়াছিল, নলিনাক্ষের মতো লোকের কাছে কেবল বড়ো বড়ো আধ্যাত্মিক বিষয়েই বুঝি উপদেশ পাওয়া যাইবে; এমন মানুষের সঙ্গে যে সাধারণ বিষয়ে সহজ লোকের মতো আলাপ চলিতে পারে তাহা মনেও করিতে পারে নাই। অথচ সমস্ত হাস্যালাপের মধ্যে নলিনাক্ষের একটা কেমন দূরত্বও ছিল।
একদিন অন্নদাবাবু ও হেমনলিনীর সঙ্গে নলিনাক্ষের কথাবার্তা চলিতেছিল, এমন সময়ে যোগেন্দ্র কিছু উত্তেজিত হইয়া আসিয়া কহিল, “জান বাবা, আজকাল আমাদিগকে সমাজের লোকে নলিনাক্ষবাবুর চেলা বলিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাই লইয়া এইমাত্র পরেশের সঙ্গে আমার খুব ঝগড়া হইয়া গেছে।”
অন্নদাবাবু একটু হাসিয়া বলিলেন, “ইহাতে আমি তো লজ্জার কথা কিছু দেখি না। যেখানে সকলেই গুরু, কেহই চেলা নয়, সেই দলে মিশিতেই আমার লজ্জাবোধ হয়; সেখানে শিক্ষা দিবার হুড়োমুড়িতে শিক্ষা পাইবার অবকাশ থাকে না।”
নলিনাক্ষ। অন্নদাবাবু, আমিও আপনার দলে; আমরা চেলার দল। যেখানে আমাদের কিছু শিখিবার সম্ভাবনা আছে সেইখানেই আমরা তলপি বহিয়া বেড়াইব।
যোগেন্দ্র অধীর হইয়া কহিল, “না না, কথাটা ভালো নয়। নলিনবাবু, কেহই যে আপনার বন্ধু বা আত্মীয় হইতে পারিবে না, যাহারা আপনার কাছে আসিবে, তাহারাই আপনার চেলা বলিয়া খ্যাত হইয়া যাইবে, এমন বদনামটা হাসিয়া উড়াইয়া দিবার নহে। আপনি কী সব কাণ্ড করেন, ওগুলা ছাড়িয়া দিন।”
নিলনাক্ষ। কী করিয়া থাকি বলুন।
যোগেন্দ্র। ঐ-যে শুনিয়াছি প্রাণায়াম করেন, ভোরের বেলায় সূর্যের দিকে তাকাইয়া থাকেন, খাওয়াদাওয়া লইয়া নানাপ্রকার আচার-বিচার করিতে ছাড়েন না, ইহাতে দশের মধ্যে আপনি খাপছাড়া হইয়া পড়েন।
যোগেন্দ্রের এই রূঢ়বাক্যে ব্যথিত হইয়া হেমনলিনী মাথা নিচু করিল। নলিনাক্ষ হাসিয়া কহিল, “যোগেনবাবু দশের মধ্যে খাপছাড়া হওয়াটা দোষের। কিন্তু তলোয়ারই কী, আর মানুষই কী, তাহার সবটাই কি খাপের মধ্যে থাকে? খাপের ভিতরে তলোয়ারের যে অংশটা থাকিতে বাধ্য সেটাতে সকল তলোয়ারেরই ঐক্য আছে– বাহিরের হাতলটাতে শিল্পীর ইচ্ছা ও নৈপুণ্য-অনুসারে কারিগরি নানা রকমের হইয়া থাকে। মানুষেরও দশের খাপের বাহিরে নিজের বিশেষ কারিগরির একটা জায়গা আছে, সেটাও কি আপনারা বেদখল করিতে চান? আর, আমার কাছে এও আশ্চর্য লাগে, আমি সকলের অগোচরে ঘরে বসিয়া যে-সকল নিরীহ অনুষ্ঠান করিয়া থাকি তাহা লোকের চোখেই বা পড়ে কী করিয়া, আর তাহা লইয়া আলোচনাই বা হয় কেন?”
যোগেন্দ্র। আপনি তা জানেন না বুঝি? যাহারা জগতের উন্নতির ভার সম্পূর্ণ নিজের স্কন্ধে লইয়াছে তাহারা পরের ঘরে কোথায় কী ঘটিতেছে তাহা খুঁজিয়া বাহির করা কর্তব্যের মধ্যেই গণ্য করে। যেটুকু খবর না পায় সেটুকু পূরণ করিয়া লইবার শক্তিও তাহাদের আছে। এ নহিলে বিশ্বের সংশোধনকার্য চলিবে কী করিয়া? তা ছাড়া নলিনবাবু, পাঁচ জনে যাহা না করে তাহা চোখের আড়ালে করিলেও চোখে পড়িয়া যায়, যাহা সকলেই করে তাহাতে কেহ দৃষ্টিপাত করে না। এই দেখুন-না কেন, আপনি ছাদে বসিয়া কী সব কাণ্ড করেন তাহা আমাদের হেমের চোখেও পড়িয়া গেছে– হেম সে কথা বাবাকে বলিতেছিল– অথচ হেম তো আপনার সংশোধনের ভার গ্রহণ করে নাই।
হেমনলিনীর মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল; সে ব্যথিত হইয়া একটা-কী বলিবার উপক্রম করিবামাত্র নলিনাক্ষ কহিল, “আপনি কিছুমাত্র লজ্জা পাইবেন না; ছাদে বেড়াইতে উঠিয়া সকালে-সন্ধ্যায় আপনি যদি আমার আহ্নিককৃত্য দেখিয়া থাকেন, সেজন্য আপনাকে কে দোষী করিবে? আপনার দুটি চক্ষু আছে বলিয়া আপনি লজ্জিত হইবেন না; ও দোষটা আমাদেরও আছে।”
অন্নদা। তা ছাড়া হেম আপনার আহ্নিক সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো আপত্তি প্রকাশ করে নাই। সে শ্রদ্ধাপূর্বক আপনার সাধনপ্রণালী সম্বন্ধে আমাকে প্রশ্ন করিতেছিল।
যোগেন্দ্র। আমি কিন্তু ও-সব কিছু বুঝি না। আমরা সাধারণে সংসারে সহজ রকমে যে ভাবে চলিয়া যাইতেছি তাহাতে কোনো বিশেষ অসুবিধা দেখিতেছি না– গোপনে অদ্ভুত কাণ্ড করিয়া বিশেষ কিছু যে লাভ হয় আমার তাহা মনে হয় না– বরং উহাতে মনের যেন একটা সামঞ্জস্য নষ্ট হইয়া মানুষকে একঝোঁকা করিয়া দেয়। কিন্তু আপনি আমার কথায় রাগ করিবেন না– আমি নিতান্তই সাধারণ মানুষ, পৃথিবীর মধ্যে আমি নেহাত মাঝারি রকম জায়গাটাতেই থাকি; যাঁহারা কোনোপ্রকার উচ্চমঞ্চে চড়িয়া বসেন আমার পক্ষে ঢেলা না মারিয়া তাঁহাদের নাগাল পাইবার কোনো সম্ভাবনা নাই। আমার মতো এমন অসংখ্য লোক আছে, অতএব আপনি যদি সকলকে ছাড়িয়া কোনো অদ্ভুতলোকে উধাও হইয়া যান তবে আপনাকে অসংখ্য ঢেলা খাইতে হইবে।
নলিনাক্ষ। ঢেলা যে নানা রকমের আছে। কোনোটা বা স্পর্শ করে, কোনোটা বা চিহ্নিত করিয়া যায়। যদি কেহ বলে, লোকটা পাগলামি করিতেছে, ছেলেমানুষি করিতেছে, তাহাতে কোনো ক্ষতি করে না; কিন্তু যখন বলে, লোকটা সাধুগিরি-সাধকগিরি করিতেছে, গুরু হইয়া উঠিয়া চেলা-সংগ্রহের চেষ্টায় আছে, তখন সে কথাটা হাসিয়া উড়াইবার চেষ্টা করিতে গেলে যে পরিমাণ হাসির দরকার হয় সে পরিমাণ অপর্যাপ্ত হাসি জোগায় না।
যোগেন্দ্র। কিন্তু আবার বলিতেছি, আমার উপরে রাগ করিবেন না নলিনবাবু। আপনি ছাদে উঠিয়া যাহা খুশি করুন, আমি তাহাতে আপত্তি করিবার কে? আমার বক্তব্য কেবল এই যে, সাধারণের সীমানার মধ্যে নিজেকে ধরিয়া রাখিলে কোনো কথা থাকে না। সকলের যেরকম চলিতেছে আমার তেমনি চলিয়া গেলেই যথেষ্ট; তার বেশি চলিতে গেলেই লোকের ভিড় জমিয়া যায়। তাহারা গালি দিক বা ভক্তি করুক, তাহাতে কিছু আসে যায় না; কিন্তু জীবনটা এইরকম ভিড়ের মধ্যে কাটানো কি আরামের?
নলিনাক্ষ। যোগেন্দ্রবাবু, যান কোথায়? আমাকে আমার ছাদের উপর হইতে একেবারে সর্বসাধারণের শান-বাঁধানো এক তলার মেঝের উপর সবলে হঠাৎ উত্তীর্ণ করিয়া দিয়া পালাইলে চলিবে কেন?
যোগেন্দ্র। আজকের মতো আমার পক্ষে যথেষ্ট হইয়াছে, আর নয়। একটু ঘুরিয়া আসি গে।
যোগেন্দ্র চলিয়া গেলে পর হেমনলিনী মুখ নত করিয়া টেবিল-ঢাকার ঝালরগুলির প্রতি অকারণে উপদ্রব করিতে লাগিল। সে সময়ে অনুসন্ধান করিলে তাহার চক্ষু-পল্লবের প্রান্তে একটা আর্দ্রতার লক্ষণও দেখা যাইত।
হেমনলিনী দিনে দিনে নলিনাক্ষের সহিত আলাপ করিতে করিতে আপনার অন্তরের দৈন্য দেখিতে পাইল এবং নলিনাক্ষের পথ অনুসরণ করিবার জন্য ব্যাকুলভাবে ব্যগ্র হইয়া উঠিল। অত্যন্ত দুঃখের সময় যখন সে অন্তরে-বাহিরে কোনো অবলম্বন খুঁজিয়া পাইতেছিল না, তখনই নলিনাক্ষ বিশ্বকে তাহার সম্মুখে যেন নূতন করিয়া উদ্ঘাটিত করিল। ব্রহ্মচারিণীর মতো একটা নিয়মপালনের জন্য তাহার মন কিছুদিন হইতে উৎসুক ছিল– কারণ, নিয়ম মনের পক্ষে একটা দৃঢ় অবলম্বন; শুধু তাহাই নহে, শোক কেবলমাত্র মনের ভাব-আকারে টিঁকিতে চায় না, সে বাহিরেও একটা কোনো কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে আপনাকে সত্য করিয়া তুলিতে চেষ্টা করে। এ পর্যন্ত হেমনলিনী সেরূপ কিছু করিতে পারে নাই, লোকচক্ষুপাতের সংকোচে বেদনাকে সে অত্যন্ত গোপনে আপনার মনের মধ্যেই পালন করিয়া আসিয়াছে। নলিনাক্ষের সাধনপ্রণালীর অনুসরণ করিয়া আজ যখন সে শুচি আচার ও নিরামিষ আহার গ্রহণ করিল তখন তাহার মন বড়ো তৃপ্তিলাভ করিল। নিজের শয়নঘরের মেজে হইতে মাদুর ও কার্পেট তুলিয়া ফেলিয়া বিছানাটি এক ধারে পর্দার দ্বারা আড়াল করিল; সে ঘরে আর-কোনো জিনিস রাখিল না। সেই মেজে প্রত্যহ হেমনলিনী স্বহস্তে জল ঢালিয়া পরিষ্কার করিত– একটি রেকাবিতে কয়েকটি ফুল থাকিত; স্নানান্তে শুভ্রবস্ত্র পরিয়া সেইখানে মেজের উপরে হেমনলিনী বসিত; সমস্ত মুক্ত বাতায়ন দিয়া ঘরের মধ্যে অবারিত আলোক প্রবেশ করিত এবং সেই আলোকের দ্বারা, আকাশের দ্বারা, বায়ুর দ্বারা সে আপনার অন্তঃকরণকে অভিষিক্ত করিয়া লইত। অন্নদাবাবু সম্পূর্ণভাবে হেমনলিনীর সহিত যোগ দিতে পারিতেন না; কিন্তু নিয়মপালনের দ্বারা হেমনলিনীর মুখে যে-একটি পরিতৃপ্তির দীপ্তি প্রকাশ পাইত তাহা দেখিয়া বৃদ্ধের মন স্নিগ্ধ হইয়া যাইত। এখন হইতে নলিনাক্ষ আসিলে হেমনলিনীর এই ঘরেই মেজের উপরে বসিয়া তাঁহাদের তিন জনের মধ্যে আলোচনা চলিত।
যোগেন্দ্র একেবারে বিদ্রোহী হইয়া উঠিল– “এ-সমস্ত কী হইতেছে? তোমরা যে সকলে মিলিয়া বাড়িটাকে ভয়ংকর পবিত্র করিয়া তুলিলে– আমার মতো লোকের এখানে পা ফেলিবার জায়গা নাই।”
আগে হইলে যোগেন্দ্রের বিদ্রূপে হেমনলিনী অত্যন্ত কুণ্ঠিত হইয়া পড়িত– এখন অন্নদাবাবু যোগেন্দ্রের কথায় মাঝে মাঝে রাগ করিয়া উঠেন, কিন্তু হেমনলিনী নলিনাক্ষের সঙ্গে যোগ দিয়া শান্তস্নিগ্ধভাবে হাস্য করে। এখন সে একটি দ্বিধাহীন নিশ্চিন্ত নির্ভর অবলম্বন করিয়াছে– এ সম্বন্ধে লজ্জা করাকেও সে দুর্বলতা বলিয়া জ্ঞান করে। লোকে তাহার এখনকার সমস্ত আচরণকে অদ্ভুত মনে করিয়া পরিহাস করিতেছে তাহা সে জানিত; কিন্তু নলিনাক্ষের প্রতি তাহার ভক্তি ও বিশ্বাস সমস্ত লোককে আচ্ছন্ন করিয়া উঠিয়াছে– এইজন্য লোকের সম্মুখে সে আর সংকুচিত হইত না।
একদিন হেমনলিনী প্রাতঃস্নানের পর উপাসনা শেষ করিয়া তাহার সেই নিভৃত ঘরটিতে বাতায়নের সম্মুখে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া আছে, এমন সময় হঠাৎ অন্নদাবাবু নলিনাক্ষকে লইয়া সেখানে উপস্থিত হইলেন। হেমনলিনীর হৃদয় তখন পরিপূর্ণ ছিল। সে তৎক্ষণাৎ ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রথমে নলিনাক্ষকে ও পরে তাহার পিতাকে প্রণাম করিয়া পদধূলি গ্রহণ করিল। নলিনাক্ষ সংকুচিত হইয়া উঠিল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “ব্যস্ত হইবেন না নলিনবাবু, হেম আপনার কর্তব্য করিয়াছে।”
অন্যদিন এত সকালে নলিনাক্ষ এখানে আসে না। তাই বিশেষ ঔৎসুক্যের সহিত হেমনলিনী তাহার মুখের দিকে চাহিল। নলিনাক্ষ কহিল, “কাশী হইতে মার খবর পাওয়া গেল, তাঁহার শরীর তেমন ভালো নাই; তাই আজ সন্ধ্যার ট্রেনে কাশীতে যাইব স্থির করিয়াছি। দিনের বেলায় যথাসম্ভব আমার সমস্ত কাজ সারিয়া লইতে হইবে, তাই এখন আপনাদের কাছে বিদায় লইতে আসিয়াছি।”
অন্নদাবাবু কহিলেন, “কী আর বলিব, আপনার মার অসুখ, ভগবান করুন তিনি শীঘ্র সুস্থ হইয়া উঠুন। এই কয়দিনে আমরা আপনার কাছে যে উপকার পাইয়াছি তাহার ঋণ কোনোকালে শোধ করিতে পারিব না।”
নলিনাক্ষ কহিল, “নিশ্চয় জানিবেন, আপনাদের কাছ হইতে আমি অনেক উপকার পাইয়াছি। প্রতিবেশীকে যেমন যত্নসাহায্য করিতে হয় তাহা তো করিয়াইছেন– তা ছাড়া যে-সকল গভীর কথা লইয়া এতদিন আমি একলা মনে মনে আলোচনা করিতেছিলাম, আপনাদের শ্রদ্ধার দ্বারা তাহাকে নূতন তেজ দিয়াছেন– আমার ভাবনা ও সাধনা আপনাদের জীবন অবলম্বন করিয়া আমার পক্ষে আরো দ্বিগুণ আশ্রয়স্থল হইয়া উঠিয়াছে। অন্য মানুষের হৃদয়ের সহযোগিতায় সার্থকতালাভ যে কত সহজ হইয়া উঠিতে পারে, তাহা আমি বেশ বুঝিয়াছি।”
অন্নদা কহিলেন, “আমি আশ্চর্য এই দেখিলাম, আমাদের একটা-কিছুর বড়োই প্রয়োজন হইয়াছিল, কিন্তু সেটা যে কী আমরা জানিতাম না; ঠিক এমন সময়েই কোথা হইতে আপনাকে পাইলাম এবং দেখিলাম আপনাকে নহিলে আমাদের চলিত না। আমরা অত্যন্ত কুনো, লোকজনের কাছে যাতায়াত আমাদের বড়ো বেশি নাই; কোনো সভায় গিয়া বক্তৃতা শুনিবার বাতিক আমাদের একেবারে নাই বলিলেই হয়– যদি বা আমি যাই, কিন্তু হেমকে নড়াইতে পারা বড়ো শক্ত। কিন্তু সেদিন এ কী আশ্চর্য বলুন দেখি– যেমনি যোগেনের কাছে শুনিলাম আপনি বক্তৃতা করিবেন, আমরা দুজনেই কোনো আপত্তি প্রকাশ না করিয়া সেখানে গিয়া উপস্থিত হইলাম– এমন ঘটনা কখনো ঘটে নাই। এ-সব কথা মনে রাখিবেন নলিনবাবু। ইহা হইতে বুঝিবেন, আপনাকে আমাদের নিঃসন্দিগ্ধ প্রয়োজন আছে, নহিলে এমনটি ঘটিতে পারিত না। আমরা আপনার দায়স্বরূপ।”
নলিনাক্ষ। আপনারাও এ কথা মনে রাখিবেন, আপনাদের কাছে ছাড়া আর কাহারো কাছে আমি আমার জীবনের গূঢ়কথা প্রকাশ করি নাই। সত্যকে প্রকাশ করিতে পারাই সত্য সম্বন্ধে চরম শিক্ষা। সেই প্রকাশ করিবার গভীর প্রয়োজন আপনাদের দ্বারাই মিটাইতে পারিয়াছি। অতএব আপনাদিগকে আমার যে কতখানি প্রয়োজন ছিল সে কথাও আপনারা কখনো ভুলিবেন না।
হেমনলিনী কোনো কথা কহে নাই; বাতায়নের ভিতর দিয়া রৌদ্র আসিয়া মেজের উপরে পড়িয়াছিল, তাহারই দিকে তাকাইয়া সে চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। নলিনাক্ষের যখন উঠিবার সময় হইল তখন সে কহিল, “আপনার মা কেমন থাকেন সে খবর আমরা যেন জানিতে পাই।”
নলিনাক্ষ উঠিয়া দাঁড়াইতেই হেমনলিনী পুনর্বার তাহাকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিল।