নুতন গল্প

এক রাজা, তার তিন ছেলে। বড় ছেলে গাঁজা খায়, মেজ ছেলে লাঠি হাতে ঘুরিয়া বেড়ায়, ছোট ছেলে বাপের কাছে বসিয়া রাজ্যের কাজকর্ম দেখে। বড় দুটো ছোটটিকে দেখিতে পারে না।

‘সোনার গাছ রূপোর পাতা, শ্বেত কাকের বাসা তাতে!’ রাজার বড় ইচ্ছা এই গাছ ছেলেরা আনিয়া দেয়। তিন ছেলে কত জায়গায় ঘুরিল। বড় দুটির কি হইল জানা গেল না, ছোটটি ঘুরিয়া ঘুরিয়া এক রাজার বাড়িতে যাইয়া উপস্থিত। সেখানে জন-প্রাণী কিছুই নাই, সব খালি। এক ঘরে একটি মেয়ে ঘুমাইয়া আছে; তার মাথার কাছ রূপোর কাঠি, পায়ের কাছে সোনার কাঠি। সে পায়ের কাঠিটি মাথায় আনিল আর মাথার কাঠিটি পায়ের দিকে লইল, অমনি মেয়েটি জাগিয়া উঠিয়া তাহাকে বলিতে লাগিল, ‘হায়! মানুষের ছেলে তুই এখানে কেন এলি? তোকে এখনি খেয়ে ফেলবে। এ বাড়িতে রাক্ষস থাকে। আমার বাবাকে খেয়েছে, মাকে খেয়েছে, বাড়ির সকলকে খেয়েছে, সেদিন দুটি রাজার ছেলে ‘সোনার গাছ রূপোর পাতা, শ্বেত কাকের বাসা তাতে’ এই গাছ নিতে এসেছিল, তাদেরও খেয়েছে। আমাকে যে কোন খায় নি জানি নে।’ সে বুঝিতে পারিল যে মেয়ে তাহার দুই দাদার কথাই কহিতেছে। তাহার সঙ্গে আলাপ করিয়া কত কথাই জানিয়া লইল। রাক্ষসগুলি সহজে মরিবে না, তবে যদি কেহ ঐ পুকুরের তলায় যে স্ফটিকের স্তম্ভ আছে, সেটাকে এক নিশ্বসে ডুব দিয়া তুলিতে পারে, তারপর তাহাকে ভাঙ্গিয়া তাহার ভিতরে যে ভ্রমরটি আছে, তাহাকে মারিয়া ফেলিতে পারে, তবে ঐগুলি মরিবে। রাক্ষসেরা যত লোককে খাইয়াছে, তাহাদের হাড়গুলি সবই রাখিয়া দিয়াছে। যদি কেহ রাক্ষসগুলি মারিয়া তারপর ঐ হাড়গুলিতে এই সোনার কাঠি এবং রূপোর কাঠি ধোওয়া জল ছড়াইয়া দিতে পারে, তবে ঐ-সকর লোক বাঁচিয়া উঠিবে। রাজার ছেলে এই কথা শুনিয়া একদিন রাক্ষসদের অনুপস্থিতিতে এই-সকল কার্য সাধন করিল। রাক্শসও মারিল, ভাইদেরও বাঁচাইল।

আরো এক গল্প শুনিয়াছি। রাজার মেয়ে মরিয়া গেল, মুনি-ঠাকুর আসিয়া রজার নিকট বলিলেন, ‘রাজা, তোমার মেয়েকে আমি বাঁচাইয়া দিতেছি। আমাকে একটা বড় কড়া দাও, একটা টেবিল দাও, একটা ছুড়ি দাও, আর জল ও আগুন দাও।’ রাজা সকলই দিলেন। মুনি-ঠাকুর সেই মড়াটাকে কড়াতে সিদ্ধ করিয়া তার মাংসগুলি ফেলিয়া দিলেন। পড়ে হাড়গুলি পরিষ্কার করিয়া টেবিলে রাখিয়া তাহাতে মন্ত্রপূর্বক জল ছড়াইয়া দিলেন, আর অমনি যে মেয়ে ছিল সেই মেয়ে হইয়া উঠিল।

এ-সব ত গেল গল্প। সত্যি মড়া বাঁচাইতে দেখিয়াছ? দেখি নাই, কিন্তু শুনিয়াছি। চোরাসান্নিপাত রোগে যাহারা মরে, তাহাদের অনেককে দেশীয় শাস্ত্রীয় কবিরাজেরা বাঁচাইয়াছেন, এরূপ গল্প অনেকের মুখে আমি শুনিয়াছি।

একখানি ইংরেজি কাগজে নিম্নলিখিত গল্পটি পড়িয়াছি-

‘বিলাতের একজন ডাক্তার একটি ছোট কুকুরের গরার শিরা কাটিয়া দিলেন। কুকুরটি দেখিতে দেখিতে রক্ত পড়িয়া মরিয়া গেল। মরিয়া গেলে পর তিন ঘন্টা কাল একটি ঘরে কুকুরটিকে রাখিয়া দেওয়া হইল। কুকুরটি শক্ত হইয়া গেল। তারপর তাহাকে গরম জলে ফেলিয়া ক্রমাগত মাজিয়া দেওয়া হইল। হাত-পাণ্ডলি অনেকক্ষণ নাড়িয়া চাড়িয়া দিলে পর শরীরটা যেন বেশ নরম হইল। তারপর সাহেব একটা রবারের নল দিয়া তাহার পেটে তিন ছটাক রক্ত পুরিয়া দিলেন। একটা নল দিয়া কৃত্রিম নিশ্বাস করান হইতে লাগিল এবং একটা বড় কুকুরের রক্ত ঐ ছোট কুকুরটির গায়ে প্রবেশ করাইয়া দেওয়া হইল। এই-সকল কার্য একবারে হইতে লাগিল। অর্থাৎ একজন সাহেব নিশ্বাস প্রশ্বাস করাইতে লাগিলেন, একজন রক্ত দিতে লাগিলেন আর-একজন তাহার শরীরটা মাজিতে লাগিলেন। ক্রমে কুকুরটি চক্ষু সতেজ হইল, আর কয়েক মুহূর্ত পরে শরীরটা একটু একটু কাঁপিতে লাগিল। তারপর কুকুরটি হাঁপাইতে লাগিল, চক্ষু উজ্জ্বল হইল, শেষে ফিট হইলে যেমন হয়, সেইরূপ করিতে লাগিল। তারপর ক্রমেই শান্ত হইয়া আসিতে লাগির, একটু একটু কোঁকাইতেও লাগিল। প্রথম রক্ত দেওয়ার কুড়ি মিনিটের মধ্যে কুকুরটি উঠিয়া বসিল। শীঘ্রই দাঁড়াইয়া তারপর হাঁটিতে লাগিল। দুই দিনের মধ্যে সে রাস্তায় দৌড়িয়া বেড়াইতে লাগিল।’

‘সাহেবদের গরু বাছুর মারিতে আপত্তি নাই, সুতরাং ডাক্তার মহাশয় একটি বাছুরকেও ঐরূপ করিয়া দেখিলেন। সেও বাঁচিল। আর একটি ছোট কুকুরকে জলে ডুবাইয়া মারিয়া আবার ঐ প্রণালীতে বাঁচাইয়া দিলেন।’

আমরা ছোট-খাট রকমে একপ্রকার মরা জানোয়ার বাঁচাইয়াছি। সে হয়ত পাঠকগণের মধ্যে সকলেই এক-এক বার করিয়া থাকিবেন। মাছিগুলিকে দু-একটা চড় চাপড় মারিলেই তাহারা মরিয়া যাইতে রাজি হয়। একটি মাছিকে ঐরূপ করিয়া তাহাকে সহজেই পুনরায় বাঁচান যাইতে পারে। মাছিটিকে এক হাতে রাখিয়া আর-এক হাত দিয়া তাহার উপর একটি ঘর নির্মাণ করিয়া দাও। ঘরের একটি ছোট দরজা রাখিয়া তাহার মধ্যে দিয়ে খুব ফুঁ দিতে থাক। দেখিবে, শীঘ্রই মাছিটি বাঁচিয়া উঠিবে।

আমাদের দেশের কথা শুনিয়াছি, সর্পঘাতে মরা লোকগুলিকে তিন দিন পরে ওঝা আসিয়া মন্ত্র পড়িয়া বাঁচাইয়া দিতে পারে। সত্য মিথ্যা শপথ করিতে পারি না।

1 Comment
Collapse Comments

খুব ই ই ভাল লাগল এ রখম একটা সাইট পেয়ে।
ধন্যবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *