নীল মানুষের খেলা
বাবা-মা’র সঙ্গে গাড়ি করে বেড়াতে যাচ্ছে হাসি আর খুশি। ওরা দুই বোন যমজ।
এখন বারো বছর বয়েস, কিন্তু হুবহু একরকম দেখতে। একই রকম টানা-টানা চোখ আর কেঁকড়া-কোকড়া চুল। দুজন সমান লম্বা, এক চুলও কম-বেশি নয়। একমাত্র মা ছাড়া কেউ ওদের আলাদা করে চিনতে পারে না, এমনকী বাবাও মাঝে-মাঝে গুলিয়ে ফেলেন।
দুজনে দুরঙের ফ্রক পরে আছে। হাসি হলুদ আর খুশি গোলাপি। দুজনের স্বভাবেও অবশ্য একটা তফাত আছে যা অনেকে টের পায় না।
হাসি যখন-তখন অবাক হয়, যে কোনও নতুন জিনিস দেখলেই চোখ বড় বড় করে তাকায়। আর খুশি ঠোঁট উলটে বলে, এ আর এমন কী!
নামের সঙ্গে ওদের স্বভাব ঠিক মেলে না। হাসি যত না হাসে, তার চেয়ে ভয় পায় বেশি। আর খুশিকে খুশি করা খুব শক্ত।
ছোট-ছোট পাহাড় আর জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। বাবা চালাচ্ছেন গাড়ি, পাশে বসে আছে হলুদ ফ্রক পরা হাসি। আর পিছনের সিটে, মায়ের পাশে গোলাপি ফ্রক পরা খুশি। মা ঘুমিয়ে পড়ছেন মাঝে- মাঝে।
হঠাৎ হাসি চেঁচিয়ে উঠল, বাবা, ও কে? ওই লোকটা কে?
বাবা বললেন, কোথায় কে?
হাসি বলল, ওই যে জঙ্গলের ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। একটা নীল রঙের মানুষ।
বাবা বললেন, ধ্যাৎ! ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলি বুঝি? নীল রঙের মানুষ। আবার হয় না কি?
হাসি বলল, আকাশের মতন নীল।
খুশি বলল, পেনের কালি বেশি পড়ে গেলে যেরকম ধ্যাবড়া হয় সেইরকম নীল।
হাসি বলল, লোকটা প্রকাণ্ড লম্বা!
খুশি বলল, এমন কিছু লম্বা নয়। ছোটকাকার চেয়ে খানিকটা বেশি। ধ্যাডেঙ্গা মতন!
বাবা গাড়িতে ব্রেক কষে বললেন, তোরা কী বলছিস রে?
সত্যি ওইরকম একটা মানুষ দেখেছিস নাকি?
মা-এর মধ্যে জেগে উঠে ভয় পেয়ে বললেন, গাড়ি থামালে কেন? পালাও, পালাও, নির্ঘাৎ ডাকাত।
খুশি বলল, ডাকাত না ছাই! হাতে বন্দুক-টন্দুক কিছু নেই।
বাবা ড্যাসবোর্ড বোর্ড থেকে একটা রিভলভার বার করলেন।
বেশি দূর যেতে হলে তিনি সঙ্গে অস্ত্র রাখেন। তিনি সহজে ভয় পান না!
তিনি বললেন, দিনের বেলায় আবার ডাকাত আসবে নাকি? একবার নীল মানুষটাকে তো দেখতে হয়। মেয়েরা বলছে যখন।
রাস্তাটা কঁকা। অন্য গাড়ি বিশেষ নেই। বাবা গাড়িটাকে ব্যাক করে নিয়ে এলেন অনেকখানি। একটা ফুলভর্তি বড় শিমূল গাছের কাছে আসতেই হাসি বলে উঠল, এইখানে দেখেছি!
বাবা ও মা দুজনেই সেদিকে তাকালেন। তারপর বাবা হো হো করে হেসে উঠলেন।
শিমূল গাছতলায় দাঁড়িয়ে আছে একজন বেঁটে মানুষ, সাড়ে তিনফুটের বেশি নয়। মনে হয় যেন বাচ্চা ছেলে, কিন্তু মুখটা বাচ্ছাদের মতন নয়, গোঁফ আছে। তার গায়ের রং নীল নয় মোটেই, সাধারণ মানুষের মতন।
বাবা বললেন, তোরা বুঝি আমার সঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল জোক করছিলি।
হাসি প্রতিবাদ করে বলে উঠল, না, না, আমি সত্যি দেখেছি এই গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নীল রঙের একটা প্রকাণ্ড লম্বা মানুষ।
গম্ভীরভাবে বলল, লম্বা লোকটা বেঁটে হয়ে গেছে আর গায়ের নীল রং মুছে ফেলেছে।
বাবা গাড়িটাকে আবার স্টার্ট দিলেন। কিন্তু কী আশ্চর্য ব্যাপার, ইঞ্জিন ঋ ঋ শব্দ করে উঠলেও গাড়ি একটুও এগোলো না।
এই সময় গাছতলা থেকে রাস্তার মাঝখানে এসে গুটুলি ফ্যাক-ফ্যাক করে হেসে বলল, গাড়ি যাবে না, যাবে না।
বাবা ভুরু কুঁচকে বললেন, কী হল? গাড়ি চলছে না কেন?
গুটুলি হাততালি দিতে দিতে বলল, যাবে না, যাবে না। আপনারা এখানে নেমে পড়ুন।
বাবা ধমক দিয়ে বললেন, কেন, আমরা এখানে নামব কেন?
গুটুলি ধমকে একটুও ভয় না পেয়ে হেসে বলল, নামুন না!
আপনাদের সঙ্গে একটু গল্প করব!
হাসি বলল, গল্প শুনব, ওর গল্প শুনব।
খুশি বলল, ও আবার কী গল্প বলবে। পচা গল্প?
বাবা আরও জোর ধমক দিয়ে গুটুলিকে বললেন, আমাদের এখন গল্প শোনার সময় নেই। সরে যাও।
গুটুলি বলল, তাহলে আপনাদের গাড়ি পিছু হটবে!
সত্যিই তাই, ম্যাজিকের মতন, গাড়িটা ওর কথার পেছন দিকে চলতে লাগল!
মা পেছন ফিরে তাকিয়েই ওরে বাবারে বলে আর্ত চিৎকার করেই অজ্ঞান।
বাবা দেখলেন, একটা বিশাল লম্বা নীল রঙের মানুষ ঝুঁকে পড়ে গাড়িটা পেছন দিকে টানছে।
হাসি বলল, দৈত্য! দৈত্য!
খুশি বলল, মোটই দৈত্য নয়। একটা ধ্যাঙ্গো লোক!
বাবা ভয় পেলেন না বটে, কিন্তু তার কপালে ঘাম জমে গেল। রিভলভারটা হাতে নিয়ে কী করবেন ভেবে পেলেন না।
গাড়িটা এবার থেমে গেল।
বাবা সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে নেমে দাঁড়িয়ে বললেন, তুমি কে? আমি এক্ষুনি গুলি করব!
নীল মানুষটি হাতের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, আমার নাম রণজয়। আপনি আমার দিকে রিভলভার তুলে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনাদের কোনও ক্ষতি করিনি!
বাবা দারুণ অবাক হয়ে বললেন, তুমি, তুমি বাঙালি?
রণজয় বলল, আপনার বাংলা কথা শুনে উত্তরে বাংলা কথা বললাম, তাতেও বুঝতে পারলেন না?
খুশি ঠোঁট উলটে বলল, অনেক অবাঙালিরাও বাংলা বলতে পারে। আমাদের বাড়ির সামনে যে পানওয়ালা, সে তো বিহারী, সেও সুন্দর বাংলা বলে।
বাবা জিগ্যেস করলেন, তোমার এরকম বিকট চেহারা হল কী করে?
গুটুলি এবার কাছে এগিয়ে এসে চোখ পাকিয়ে বলল, খবরদার, আমার বন্ধুকে বিকট বলবেন না। কোনও-কোনও মানুষ কি লম্বা হয় না? গিনেস বুক অফ রেকর্ডে আছে, পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা লোকটি আট ফুট চার ইঞ্চি!
রণজয় বলল, আমি তার চেয়ে মোটে একটুখানি বেশি। ন-ফুট দুইঞ্চি।
বাবা জিগ্যেস করলেন, তুমি গায়ে এরকম নীল রং মেখেছ কেন? সঙ সেজেছ?
রণজয় তার একটা হাত গাড়ির জানলায় রেখে খুশিকে বলল, তুমি দেখো তো খুকি, এটা পাকা রং, না আমি রং মেখে সঙ সেজেছি?
অতবড় হাতের পাঞ্জাখানা এত কাছে দেখে খুশি অবাক হয়ে বলে উঠল, হি ই-ই! এত বড়? আর সত্যি-সত্যি নীল!
হাসি খিলখিল করে হেসে উঠল। খুশি সহজে অবাক হয় না, আজ সে সত্যিকারের অবাক হয়েছে।
খুশি তার বোনকে বলল, তোরও তো মুখে সহজে হাসি ফোটে না। এখন হাসছিস যে বড়!
হাসি বলল, আমি ভয় পাইনি!
রণজয় খুশিকে বলল, খুকি চিমটি কেটে দ্যাখো না, রং ওঠে কি না!
খুশি তার হাতে একটা রাম চিমটি কেটে বলল, আমাকে খুকি বলবে না। আমি মোটেই খুকি নই, আমার নাম খুশি!
মা এই সময় জ্ঞান ফিরে ধড়মড় করে উঠে বসে বললেন, কী হল? কোথায় গেল? চোখে ভুল দেখেছি!
তারপরেই আবার রণজয়কে দেখতে পেয়ে বলে উঠলেন, ডাকাত! ডাকাত! মেয়ে দুটোকে বাঁচাও! ওগো, তুমি গুলি করে মারছ না কেন?
বাবা রিভলভারটা পকেটে পুরে ফেলেছেন। তিনিও হাসছেন!
রণজয় বলল, বউদি, ভয় পাচ্ছেন কেন? আমি রণজয়। আমি মোটেই ডাকাত নই!
হাসি বলে উঠল, কী মজা! কী মজা! এত বড় একটা লোক মাকে বউদি বলেছে?
মা বললেন, সত্যিই আমাকে বউদি বলে ডাকল নাকি রে?
বাবা বললেন, ওহে রণজয়, তুমি নীল মানুষ হলে কী করে?
রণজয় বলল, একটা অন্য গ্রহে গিয়েছিলাম, তাই গায়ের রংটা বদলে গেল!
খুশি ভুরু তুলে জিগ্যেস করল, অন্য গ্রহে? সত্যি?
হাসি হাসতে-হাসতে বোনকে বলল, তুই আবার অবাক হয়েছিস?
গুটুলি বলল, মোটে একটা গ্রহে যায়নি! অনেকগুলো ঘুরে এসেছে। সেই গল্প শুনতে চাও?
দুই বোন একসঙ্গে বলে উঠল, হ্যাঁ শুনব। হ্যাঁ শুনব!
বাবা বললেন, তা কী করে হবে? আমাদের রাঁচি পৌঁছতে হবে সন্ধের আগে। এর মধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গেছে! বরং ক্যামেরাটা বার কর, নীল মানুষের একটা ছবি তুলে নে!
খুশির কাছে ক্যামেরা। সে নেমে এসে খচাখচ করে দু-তিনটে ছবি তুলে নিল নীল মানুষের। রণজয় বেশ পোজ দিয়ে দাঁড়াল।
গুটুলি বলল, কী স্বার্থপর! আমার ছবি তুলল না।
বাবা বললেন, তাই তো, তাই তো! খুশি ওরও ছবি তোল!
এই সময় দূর থেকে আর একটা জিপ আসছে দেখা গেল। সেদিকে তাকিয়ে রণজয় বলল, হুকুম সিং-এর দল মনে হচ্ছে, গুটুলি লুকিয়ে পড়!
চোখের নিমেষে রণজয় আর গুটুলি ঢুকে গেল জঙ্গলে।
বাবা বললেন, কী ব্যাপার, ওরা পালাল কেন?
জিপটা কাছে এগিয়ে আসছে।
বাবা বললেন, খুশি উঠে পড়। আমরা এগোই।
ওদের গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে একটুখানি যেতে না যেতেই জিপটা খুব জোরে এসে আটকে দিল ওদের রাস্তা। রাইফেল নিয়ে দুটো লোক নেমে পড়ে বলল, বাঁচতে চাও তো থামোয়
বাবা দেখলেন, এদের রাইফেলের সঙ্গে রিভলভার দিয়ে যুদ্ধ করা যাবে না।
তিনি বললেন, তোমরা কী চাও?
একজন রাইফেলধারী বলল, হুকুম সিং-এর হুকুম? এই রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে খাজনা দিতে হবে। সঙ্গে টাকা-কড়ি, গয়নাগাঁটি যা আছে দিয়ে দাও!
বাবা বললেন, তোমরা ডাকাতি করতে এসেছ? জানো, আমি একজন সরকারি অফিসার?
রাইফেলধারী বলল, চুপ! বেশি বকবক করবি না! বাঁচতে চাস তো, যা আছে সব দিয়ে দে। নইলে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।
খুশি বলল, এই, আমার বাবাকে তুই তুই বলছ কেন?
অন্য রাইফেলধারী বলল, বাঃ বাঃ! এই ফুটফুটে দুটোকেও ধরে নিয়ে যাব?
বাবা হতাশভাবে এদিক-ওদিক তাকালেন। লম্বা নীল মানুষটাও ডাকাত দেখে ভয়ে পালাল। কাপুরুষ!
জিপ গাড়ির ড্রাইভার নেমে এসে বলল, কই দেখি গয়না-টয়না কী কী আছে? সঙ্গে খাবারদাবারও আছে নাকি!
ঠিক এই সময় জঙ্গলের ভেতর থেকে দুটো দড়ির ফঁস উড়ে এসে রাইফেলধারী দুজনের গলায় লাগল। তারপর তাতে টান পড়তেই লোক দুটো ছিটকে পড়ে গেল মাটিতে। গলায় ফাঁস লেগে প্রায় দম বন্ধ অবস্থায় তারা গোঁ গোঁ করতে লাগল।
জঙ্গল থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল গুটুলি। রাইফেল দুটো কেড়ে নিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে সেদিকে বলল, এবার ফাঁস আলগা করে দাও! না হলে মরে যাবে।
ফাঁস আলগা হয়ে যেতেই লোক দুটো আস্তে-আস্তে উঠে দাঁড়াল। জিপ গাড়ির ড্রাইভারটা এই কাণ্ড দেখে ভয়ে-ভয়ে পালাবার চেষ্টা করতেই গুটুলি প্রায় শূন্যে লাফিয়ে উঠে তার মুখে একটা লাথি কষাল।
ওইটুকু মানুষ এমন ক্যারাটের প্যাঁচ জানে হাসি তার দেখে খুশি হেসে ফেলল ঝরঝর করে।
এবার নীল মানুষ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লোক দুটোকেজিগ্যেস করল, এই, তোদের সর্দার হুকুম সিং কোথায়?
নীল মানুষের বজ্রের মতন গলার আওয়াজ শুনে ওরা কেঁপে উঠলেও মুখে কিছু বলল না।
নীল মানুষ তখন বাবার দিকে ফিরে বলল, এই হুকুম সিং-এর দলবল এই রাস্তার যাত্রীদের বড় জ্বালাতন করে। কিন্তু সেই লোটা এত ভীতু যে নিজে কখনো আসে না। দেখতে পেলে আচ্ছা করে শিক্ষা দিয়ে দেব!
খুশি বলল, নীল মানুষ, ওরা আমার বাবাকে অপমান করেছে। ওদেরও শিক্ষা দাও তো!
নীল মানুষ হেসে বলল, আমায় কিছু করতে হবে না। গুটুলি দিয়ে দেবে!
সেই লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, এই তোরা তো তিনজন আছিস? একা একা কে গুটুলির সঙ্গে লড়তে পারবি খালি হাতে?
জিপ গাড়ির ড্রাইভারটা একটা লাথি খেয়ে শুয়ে পড়েছে। আর উঠল না। অন্য লোকদুটো বলল, আমরা মাপ চাইছি। আমাদের ছেড়ে দাও। আমাদের দোষ নেই হুকুম সিং পাঠিয়েছে!
নীল মানুষ বলল, যেই ধরা পড়ে গেলি, অমনি মাপ চাইছিস! আমি আর গুটুলি থাকলে এঁদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতিস না? এখন লড়বি না মানে, লড়তেই হবে!
একজনের চুলের মুঠি ধরে উঁচু করে সে ফেলেছিল গুটুলির সামনে। গুটুলি আদর করার মতন তার দুই গালে ছোট-ছোট চড় মারতে লাগল। তারপর একখানা রাম চড় মেরে ফেলে দিল চিৎ করে।
অন্য লোকটি বলল, ঠিক আছে, আমি লড়ব।
সে গুটুলির দিকে একটা ঘুষি ছুঁড়তেই সে ফুড়ুৎ করে সরে গেল। তারপর লোকটা যতই মারতে যায়, গুটুলিকে ছুঁতেই পারে না।
নীল মানুষ হাততালি দিয়ে বলছে, বা বা, লড়ে যাও! লড়ে যাও।
এবার গুটুলি এক লাফে লোটার পেছন দিক দিয়ে ওর ঘাড়ে চড়ে বসল। দুহাতে চেপে ধরল লোকটার চোখ। সে আর কিছুতেই গুটুলিকে ফেলতে পারে না। কঁদো কাঁদো হয়ে বলল, ছেড়ে দাও, আমি হেরে গেছি।
নীল মানুষ বলল, হেরেছ তো? বেশ! এবার ঘোড়া খেলা হবে। তুমি ঘোড়া হও, হাঁটু গেড়ে বসে পড়ো, গুটুলি তোমার পিঠে চাপবে।
লোকটা আর প্রতিবাদ করার সাহস পেল না। গুটুলি তার পিঠে চেপে বলল, এই ঘোড়া, হ্যাট-হ্যাট!
অন্য লোক জুলজুল করে চেয়ে দেখছে!
নীল মানুষ তাকে বলল, কী হে, আমি তোমার পিঠে চাপব নাকি?
সেই লোকটা অমনি নীল মানুষের পায়ের কাছে পড়ে গিয়ে বলল, দয়া করুন। আপনি চাপলে আমি চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাব।
হাসি আর খুশি এত বেশি হাসছে যে থামতেই পারছে না। এ ওর গায়ে চলে পড়ছে।
বাবা একসময় বললেন, যথেষ্ট হয়েছে, এবার আমাদের যেতে হবে নীল মানুষ, তোমাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেব? তুমি আমাদের প্রাণে বাঁচিয়েছ তো বটেই, টাকা কড়িও বাঁচিয়েছ। তা ছাড়া আমার এই মেয়ে দুটি, ওদের নাম হাসি আর খুশি হলেও ওদের আমি একঙ্গে এত হাসতে দেখিনি কখনও।
নীল মানুষ বলল, জঙ্গলে তো আমাদের সময় কাটে না। তাই মাঝে-মাঝে আমরা এরকম খেলা করি।
গুটুলি কাছে এসে বলল, শুধু নীল মানুষকে ধন্যবাদ দিলেন, বা! আমি বুঝি কিছু করিনি? আমার ছবিও তোলা হল না।
বাবা বললেন, নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, তুমিও অনেক কিছু করেছ। ছোট্ট চেহারা হলেও তোমার অনেক শক্তি। খুশি, ওর ছবি তোল।
নীল মানুষ এবার গুটুলিকে তুলে নিল নিজের কাঁধে। গুটুলি দুদিকে পা ঝুলিয়ে বসল। ক্যামেরার দিকে চেয়ে সে গান গেয়ে উঠল ।
আমরা দুটি ভাই
লোককে তাক লাগাই
টাকা-পয়সা কিছু চাই না
শুধু মজা চাই।