২
থাকার জায়গা আহামরি ধরনের হবে এ জাতীয় ধারণা শওকত সাহেবের ছিল না। অজ পাড়াগাঁয়ে রাজপ্রাসাদ থাকার কোনোই কারণ নেই। তবে বজলুর রহমান যিনি এই জায়গার খোঁজ তাঁকে দিয়েছেন, তিনি বার তিনেক উচ্ছ্বসিত গলায় বলেছেন, ‘আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এত সুন্দর বাড়ি যে কল্পনাও করতে পারবেন না।’
শওকত সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, ‘তাজমহল ধরনের বাড়ি?’
‘তাজমহল তো বাড়ি না। তাজমহল হচ্ছে কবরখানা। মমতাজ মহলের কবর। আপনাকে যে বাড়িতে পাঠাচ্ছি সেটা গৌরীপুর মহারাজার বর্ষা-মন্দির।’
‘বর্ষা-মন্দির মানে?’
‘শীতের সময় কাটানোর জন্যে মহারাজার একটা বাড়ি ছিল। সেটার নাম শীত—মন্দির। তেমনি বর্ষাকাল কাটানোর জন্যে একটা বাড়ি ছিল, তার নাম বর্ষা-মন্দির। দোতলা বাড়ি। বৃষ্টির শব্দ যাতে শোনা যায় সে জন্যে বাড়ির ছাদ টিনের। বৃষ্টি দেখার জন্যে বিরাট টানা বারান্দা। উত্তরেও বারান্দা, দক্ষিণেও বারান্দা। উত্তরের বারান্দায় দাঁড়ালে গারো পাহাড় দেখা যায়। দক্ষিণের বারান্দায় দাঁড়ালে দেখবেন—সোহাগী নদী।’
‘কি নদী?’
‘সোহাগী নদী। বর্ষাকালে যাবেন, নদী থাকবে কানায় কানায় ভরা। বৃষ্টির ফোঁটা নদীতে পড়লে কী যে সুন্দর দেখা যায়, তা ঐ বাড়ির বারান্দায় না দাঁড়ালে বুঝবেন না। বাড়িটার চারদিকে কদমের গাছ। বর্ষাকালে কদম ফুলে গাছ ছেয়ে যায়—সে এক দেখার মতো দৃশ্য। বাংলাদেশের কোথাও একসঙ্গে এতগুলো কদমের গাছ দেখবেন না।’
শওকত সাহেব খুব একটা উৎসাহবোধ করলেন না। বজলুর রহমানের কোনো কথায় উৎসাহী হয়ে ওঠা ঠিক না। ভদ্রলোক মাথা খারাপ ধরনের। নিজেকে মহাকবি হিসেবে পরিচয় দেন। শোনা যায় সতের বছর বয়সে ‘বঙ্গ-বন্দনা’ নামে মহাকাব্য লেখা শুরু করেছিলেন। শেষ করেছেন চল্লিশ বছর বয়সে। এখন কারেকশান চলছে। দশ বছর হয়ে গেল, কারেকশান শেষ হয় নি।
মহাকবি বজলুর রহমান—”অদ্ভুত, অসাধারণ, পাগল হয়ে যাবার মতো” বিশেষণ ছাড়া কথা বলতে পারেন না।
একবার গুলশানের এক বাড়িতে বাগান বিলাস গাছ দেখে খুব উত্তেজিত হয়ে ফিরলেন। চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘এই জিনিস না দেখলে জীবন বৃথা। ইন্দ্রপুরীর বাগান বিলাসও এর সামনে দাঁড়াতে পারবে না। লাল রঙের যে ক’টা শেড আছে তার প্রতিটি ঐ গাছের পাতায় আছে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। তাকিয়ে থাকলে বুকে ব্যথা করে। অ্যাবসুলিউট বিউটি সহ্য করা মানুষের পক্ষে খুবই কঠিন। বুঝলেন ভাই সাহেব, গাছটার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হল, পাগল হয়ে যাব।’
‘পাগল তো আছেনই। নতুন করে কি আর হবেন?
‘ঠাট্টা না ভাই। সত্যি বলছি। একদিন আমার সঙ্গে চলুন। আপনার দেখা উচিত।’ শওকত সাহেব মহাকবিকে সঙ্গে নিয়ে একদিন গেলেন। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনি কি নিশ্চিত এই সেই বিখ্যাত ইন্দ্রপুরীর গাছ?’ মহাকবি মাথা চুলকে বললেন, ‘জ্বি, এইটাই সেই বাগান—বিলাস। তবে আজ অবশ্যি সেদিনের মতো লাগছে না। ব্যাপারটা কী বুঝতে পারছি না।’ Something is definitely wrong.
শওকত সাহেব ধরেই নিয়েছেন বর্ষা-মন্দির বাগান-বিলাসের মতোই হবে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনিও মহাকবির মতো বলতে বাধ্য হবেন—Something is definitely wrong. তবে সোহাগী নামের নদী তাকে খানিকটা আকর্ষণ করল। শুধু নামটির কারণে এই নদী একবার দেখে আসা যায়।
মহাকবি বললেন, ‘আপনি গরিবের কথাটা রাখুন। কয়েকটা দিন ঐ বাড়িতে থেকে আসুন। স্বর্গবাসের অভিজ্ঞতা হবে। আপনার লেখা অন্য একটা ডাইমেনশন পেয়ে যাবে। বাড়ি সম্পর্কে যা বলেছি তার ষোল আনা যদি না পান নিজের হাতে আমার কান দু’টা কেটে নেড়ি কুত্তা দিয়ে খাইয়ে দেবেন। আমি কিছুই বলব না।’
‘যদি যাই, খাওয়া-দাওয়া কোথায় করব? বাবুর্চি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে?’
‘কিছুই নিয়ে যেতে হবে না। ময়নাতলা স্কুলের অ্যাসিসটেন্ট হেডমাস্টার সাহেবকে আমি একটা চিঠি দিয়ে দেব। খুবই মাই ডিয়ার লোক। যা করার সেই করবে। এবং যে ক’দিন থাকবেন আপনাকে মাথায় করে রাখবে।’
তিনি ময়নাতলায় মহাকবির ব্যবস্থা মতোই এসেছেন।
মহাকবি তাঁকে ট্রেনে তুলে দিতেও এসেছিলেন। ময়নাতলা জায়গাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বলতে গিয়ে আরেকবার উচ্ছ্বসিত হলেন। তবে ট্রেন ছাড়বার আগ মুহূর্তে লজ্জিত গলায় বললেন, ‘ভাই আপনাকে একটা রং ইনফরমেশন দিয়েছি। নদীটার নাম সোহাগী না। আসলে নদীটার কোনো নাম নেই। সবাই বলে “ছোট গাঙ”। সোহাগী নামটা আমার দেয়া।’
শওকত সাহেব হেসে ফেলে বললেন, ‘কদমের বনও নিশ্চয়ই নেই? আপনার কল্পনা।’
মহাকবি উত্তেজিত গলায় বললেন, ‘আছে। অবশ্যই আছে। নদীর নাম ছাড়া বাকি সব যেমন বলেছি তেমন। যদি এক বিন্দু মিথ্যা হয়, আমার কান দু’টা কেটে কুত্তা দিয়ে খাইয়ে দেবেন। আমি বাকি জীবন ভ্যান গগের মতো কান মাফলার দিয়ে বেঁধে ঘুরে বেড়াব। অনেস্ট। নদীর নামের ব্যাপারে আপনার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছি-ক্ষমা প্রার্থনা করছি। নাম তো বড় না, জিনিসটাই বড়। অসাধারণ নদী, একবার সামনে দাঁড়ালে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছা করে।’
বাড়ির সামনে শওকত সাহেব বিমর্ষ মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। পাগল হয়ে যাবার মতো কিছুই দেখছেন না। অতি পুরাতন জরাজীর্ণ দোতলা ভবন। ছাদ ধসে গেছে কিংবা ভেঙে পড়েছে বলে পরবর্তী সময়ে টিন দেয়া হয়েছে। টানা বারান্দা ঠিকই আছে—তবে রেলিং জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে। বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করা বিপজ্জনক হতে পারে। বর্ষাকাল, বৃষ্টির পানিতে বারান্দা পিচ্ছিল হয়ে আছে।
শওকত সাহেব বললেন, ‘এটাই কি বর্ষা-মন্দির?’
করিম সাহেব অবাক হয়ে বললেন, ‘আপনার কথা কিছু বুঝলাম না স্যার। বর্ষা—মন্দির বলছেন কেন?’
‘বাড়িটা কি গৌরীপুরের মহারাজার?’
‘জ্বি না। আমার দাদাজান সেই আমলে লাখপতি হয়ে বাড়ি বানিয়েছিলেন, তারপর অপঘাতে মারা গেলেন। অবস্থা পড়ে গেল। এই বাড়িটা ছাড়া—এখন আমাদের আর কিছুই নাই। বাড়িটাও হয়েছে বাসের অযোগ্য। আমি নিচের তিনটা ঘরে থাকি। উপরটা তালাবন্ধ থাকে। আপনার জন্যে উপরের একটা ঘর ঠিকঠাক করে রেখেছি।’
‘বাড়ির চারদিকে কি এক সময় কদম গাছ ছিল?’
‘জ্বি না। একটা কদম গাছ বাড়ির সামনে ছিল। তিন বছর আগে গাছের উপর বজ্রপাত হল। চলুন স্যার আপনার ঘরটা দেখিয়ে দেই।’
‘চলুন।’
‘সিঁড়িতে সাবধানে পা ফেলবেন। মাঝে মধ্যে ভাঙা আছে।’
‘বাথরুম আছে তো।’
‘জ্বি আছে। বাথরুম আছে, আপনার ঘরের সাথেই আছে।’
‘খাবার পানি কোথেকে আনেন? নদীর পানি?’
‘জ্বি না। টিউবওয়েল আছে। বজলুর রহমান সাহেব চিঠিতে জানিয়েছেন-আপনাকে পানি ফুটিয়ে দিতে। পানি ফুটিয়ে বোতলে ভরে রেখেছি।’
‘ভালো করেছেন।’
‘স্যার আপনি কি গোসল করবেন? গোসলের পানি গরম করে দেব?’
‘পানি গরম করতে হবে না। ঠাণ্ডা পানিতেই গোসল করব।’
‘খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা স্যার আমার এখানে করেছি। দরিদ্র অবস্থায় যা পারি—সামান্য আয়োজন।’
মোফাজ্জল করিম সাহেব, কিছু মনে করবেন না আপনাকে একটা কথা বলি, আপনি একজন বাবুর্চির ব্যবস্থা করুন। যে আমার জন্যে রান্না করবে। আমি টাকা দিয়ে দেব।’
‘তা কী করে হয়?’
‘তাই হতে হবে। আমি তো বজলুর রহমান সাহেবকে বলেছিলাম আপনাকে এইভাবে চিঠি দিতে। চিঠি দেন নি…’
‘জ্বি না, এইসব কিছু তো লিখেন নাই।’
‘উনি আমাকে বলেছেন, বাবুর্চির ব্যবস্থা হয়েছে, আমি তাই মনে করে এসেছি। নয়ত আসতাম না।’
‘আপনি একজন অতি বিশিষ্ট ব্যক্তি। আপনার সামান্য সেবা করার সুযোগ পাওয়া তো স্যার ভাগ্যের কথা…’
‘ভাই আপনাকে যা করতে বলছি করুন।’
রাতে মোফাজ্জল করিম সাহেব শওকত সাহেবকে খাবার জন্যে ডাকতে এলেন। নিচু গলায় বললেন, ‘বাবুর্চির ব্যবস্থা স্যার কাল-পরশুর মধ্যে করে ফেলব। অজ পাড়াগাঁ জায়গা। বাবুর্চিতো পাওয়া যাবে না। একটা মেয়েটেয়ে জোগাড় করতে হবে। আজ গরিবখানায় সামান্য আয়োজন করেছি।’
শওকত সাহেব বললেন, ‘আপনি একটা কাজ করুন, খাবারটা এখানে পাঠিয়ে দিন।’
‘কিছু বিশিষ্ট লোককে দাওয়াত করেছিলাম স্যার। হেডমাস্টার সাহেব, ময়নাতলা থানার ওসি সাহেবও এসেছেন। ময়নাতলা থানার ওসি সাহেব বিশিষ্ট ভদ্রলোক। সাহিত্য অনুরাগী।’
‘আমি এখন আর নিচে নামব না। আপনি কিছু মনে করবেন না।’
‘স্যার উনারা আগ্রহ নিয়ে এসেছিলেন।’
‘অন্য কোনো একসময় তাঁদের সঙ্গে কথা বলব।’
মোফাজ্জল করিম সাহেব খুবই অপ্রস্তুত মুখ করে নিচে নেমে গেলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উঠে এলেন। শওকত সাহেব বললেন, ‘কী ব্যাপার?’
‘স্যার আপনার বোতলটা এসে পৌঁছেছে। এই যে স্যার বোতল।’
‘টেবিলের উপর রেখে দিন।’
‘আপনার খাবার কি স্যার নিয়ে আসব?’
‘অতিথিরা চলে যাক। তারপর আনবেন। আমি বেশ রাত করে খাই। যদি সম্ভব হয় এক কাপ চা পাঠাবেন।’
‘জ্বি আচ্ছা।’
‘চিনি বেশি করে দিতে বলবেন। আমি চিনি বেশি খাই।’
‘জ্বি আচ্ছা।’
মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথম দর্শনে বাড়িটা যত খারাপ লেগেছিল এখন তা লাগছে না। ভালো লাগছে। শুধু ভালো না। বেশ ভালো লাগছে। তিনি বসে আছেন বারান্দায়। বারান্দায় এই অংশে রেলিং আছে বলে বসে থাকতে কোনো রকম অস্বস্তি বোধ করছেন না। তাঁর সামনে গোল টেবিল। টেবিলের উপর কুরুশ কাঁটার টেবিল ক্লথ। টেবিলের ঠিক মাঝখানে ফুলদানিতে চাঁপা ফুল। মিষ্টি গন্ধ আসছে সেখান থেকে। বৃষ্টি থেমে আকাশ পরিষ্কার হওয়ায় অসংখ্য তারা ফুটেছে। ঢাকার আকাশে তিনি কোনোদিন এত তারা দেখেন নি। আকাশের তারার চেয়েও তাঁকে মুগ্ধ করেছে জোনাকি পোকা। মনে হচ্ছে হাজার হাজার জোনাকি ঝাঁক বেঁধে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে। দৃশ্যটা এত সুন্দর যে মহাকবি বজলুর রহমানের মতো চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছা করে—পাগল হয়ে যাব।
চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় দূরের নদী দেখা যাচ্ছে অস্পষ্টভাবে। চাঁদের আলো ঘোলাটে নয়, পরিষ্কার। এই আলোয় কেমন যেন জল জল ভাব আছে।
সবচে’ যা তাঁকে বিস্মিত করল তা হচ্ছে—নীরবতা। কোনোরকম শব্দ নেই। ঘরে একটা তক্ষক আছে। তক্ষকটা মাঝে মাঝে ডাকছে। শব্দ বলতে এই। তিনি ভেবেছিলেন, যেহেতু বর্ষাকাল—চারদিকে অসংখ্য ব্যাঙ ডাকবে। তা ডাকছে না। এই অঞ্চলে কি ব্যাঙ নেই?
মোফাজ্জল করিম সাহেব হাতে কেরোসিনের টেবিল ল্যাম্প নিয়ে উঠে এসেছেন। ল্যাম্পটা বেশ বড়। কাচের চিমনি ঝকঝকে পরিষ্কার। প্রচুর আলো আসছে।
‘স্যার, ওসি সাহেব আপনার জন্য টেবিল ল্যাম্পটা পাঠিয়েছেন। আপনি নিশ্চয়ই রাতে লেখালেখি করবেন। হারিকেনের আলো কম। টেবিল ল্যাম্প আপনার ঘরে দিয়ে আসি?’
‘জ্বি দিয়ে আসুন।’
‘আপনার চা একবার বানিয়েছিল তিতা হয়ে গেছে। আবার বানাচ্ছে।’
‘ঠিক আছে। কোনো তাড়া নেই। আচ্ছা করিম সাহেব আপনাদের এদিকে ব্যাঙ ডাকে না?’
‘ডাকে তো। ডাকবে না কেন? ব্যাঙের ডাকে ঘুমাতে পারি না এই অবস্থা।’
‘আমি কিন্তু এখন পর্যন্ত শুনি নি।’
‘তাই না-কি। বলেন কী?’
শওকত সাহেব হেসে বললেন, ‘ব্যাঙ না ডাকার জন্যে আপনাকে খুব লজ্জিত বলে মনে হচ্ছে।’
মোফাজ্জল করিম কি বলবেন ভেবে পেলেন না। ব্যাঙ না ডাকায় তার আসলেই খারাপ লাগছে। শহর থেকে এসেছেন—লেখক মানুষ। ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝির ডাক এইসব শুনতে চান।
‘স্যার, একটা হারিকেন কি বাইরে দিয়ে যাব? অন্ধকারে বসে আছেন।’
‘অসুবিধা নেই, অন্ধকার দেখতেই বসেছি। আলো নিয়ে এলে তো আর অন্ধকার দেখা যাবে না। তাই না?’
‘অবশ্যই স্যার। অবশ্যই। আলো থাকলে অন্ধকার কী করে দেখা যাবে?’
.
পুষ্প বলল, ‘বাবা, এখন কি উনাকে খাবার দিয়ে আসবে? এগারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। খাবার গরম করব?’
মোফাজ্জল করিম বিছানায় শুয়ে ছিলেন। সারাদিনের ক্লান্তিতে তাঁর তন্দ্রার মতো এসে গিয়েছে। মেয়ের কথায় উঠে বসলেন।
‘খাবার গরম করব বাবা?’
‘করে ফেল।’
‘তোমার কি শরীর খারাপ করেছে?’
‘না।’
‘মন খারাপ না-কি বাবা?’
করিম সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘মন খারাপ হবে কেন?’
‘ঐ যে ভদ্রলোক আমাদের সঙ্গে খেতে এলেন না। তুমি এত আগ্রহ করে সবাইকে দাওয়াত-টাওয়াত করলে।’
‘লেখক মানুষ, তাঁদের মন-টন অন্য রকম।’
‘লেখক হলেই বুঝি অভদ্র হতে হবে?’
‘এই ধরনের মানুষরা ভদ্রতার ধার ধারেন না। তাঁদের যা ইচ্ছা করেন। কে কী ভাবল এইসব নিয়ে মাথা ঘামান না। এইসব নিয়ে মাথা ঘামাই আমরা—সাধারণ মানুষরা।’
পুষ্প কেরোসিনের চুলায় খাবার গরম করছে। করিম সাহেব মেয়ের পাশে এসে বসেছেন। মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে। সারাদিন একা একা রান্নাবান্না করেছে। গায়ে জ্বর ছিল, জ্বর নিয়েই করতে হয়েছে। অন্য সময় মতির মা সাহায্য করে। গত তিন দিন ধরে মতির মা-ও আসছে না।
‘পুষ্প তোর গায়ে কি জ্বর আছে?’
‘না।’
‘দেখি হাতটা দেখি।’
পুষ্প হাত বাড়িয়ে দিল। করিম সাহেব লক্ষ করলেন—হাত তপ্ত।
‘না বললি কেন? জ্বর আছে তো।’
‘আগুনের কাছে বসে আছি এই জন্যে গা গরম। বাবা, ভদ্রলোক কি খুব রাগী?’
‘আরে দূর। রাগী হবে কেন? কথা কম বলেন। কেউ কথা বেশি বললেও বিরক্ত হন।’
তাহলে তো তোমার উপর খুব বিরক্ত হয়েছেন। তুমি যা কথা বল।’
‘আমি বেশি কথা বলি?’
‘হুঁ। বল। মন ভালো থাকলে অনর্গল কথা বল। এতক্ষণ কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে ছিলে তাই ভাবলাম তোমার মন বোধহয় খারাপ।’
‘আমার মন মোটেই খারাপ না। খুবই ভালো। এতবড় একজন মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন—ভাবতেই কেমন লাগে। গত সপ্তাহে ক্লাস সিক্সের রেপিড রিডারে উনার যে গল্পটা আছে সেটা ছাত্রদের বুঝিয়ে দিলাম।’
‘কোন গল্পটা?’
‘মতিনের সংসার।’
‘গল্পটা বেশি ভালো না।’
‘কি বলিস তুই ভালো না! অসাধারণ গল্প।’
‘আমার কাছে অসাধারণ মনে হয় নি। বাবা, সব কিছু গরম হয়ে গেছে। তুমি ইউনুসকে বল, উপরে নিয়ে যাক।
‘ইউনুস নিয়ে যাবে কি? আমি নিয়ে যাব। এতবড় একজন মানুষের খাবার আমি স্কুলের দপ্তরিকে দিয়ে পাঠাব? কী ভাবিস তুই আমাকে?’
পুষ্প ক্ষীণ স্বরে বলল, ‘বাবা আমি কি তোমার সঙ্গে আসব?’
‘আয়। আসবি না কেন? পরিচয় করিয়ে দিব।’
‘উনি আবার রাগ করবেন না তো?’
‘রাগ করবেন কেন? রাগ, ঘৃণা এইসব হচ্ছে আমাদের সাধারণ মানুষের ব্যাপার। উনারা তো সাধারণ মানুষ না। এই যে সন্ধ্যাবেলায় এসে বারান্দায় বসেছেন—এখনো গিয়ে দেখবি সেই একইভাবে বসে আছেন।’
‘মনে হয় খুব অলস ধরনের মানুষ।’
‘অলস ধরনের মানুষ এইভাবে বসে থাকে না। শুয়ে ঘুমায়।’
‘বাবা, আমি কি এই কাপড়টা পরে যাব না বদলাব?’
‘বদলে ভালো শাড়ি পর। হাত-মুখটা ধুয়ে নে।
‘উনি আবার ভাববেন না তো যে উনার সঙ্গে দেখা করার জন্যে শাড়ি বদলে সেজেগুজে গেছি।’
‘কিছুই ভাববেন না। এই ধরনের মানুষ—কে কি পরল, না পরল, কে সাজল, কে সাজল না এইসব নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান না। তাঁদের অনেক বড় ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ছোট ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করার সময়ই তাঁদের নেই।’
‘কিন্তু বাবা উনি তো ঔপন্যাসিক। ঔপন্যাসিকরা নিশ্চয়ই এইসব ব্যাপার খুব খুঁটিয়ে দেখেন। না দেখলে লিখবেন কি করে?’
‘সেটাও একটা কথা। তাহলে থাক, কাপড় পাল্টানোর দরকার নেই।’
‘না বাবা কাপড় পাল্টেই যাই। আমাকে দশ মিনিট সময় দাও বাবা, গোসল করে ফেলি।’
‘জ্বর গায়ে গোসল করবি?’
‘রান্না-বান্না করেছি। গা কুটকুট করছে।’
‘আবার তো সব ঠাণ্ডা হবে।’
‘আবার গরম করব। বাবা, আরেকটা কথা, আমি কি উনাকে পা ছুঁয়ে সালাম করব?’
‘নিশ্চয়ই করবে।’
শওকত সাহেব বারান্দা ছেড়ে ঘরে ঢুকেছেন।
সুটকেস খুলে দেখছেন রেনু জিনিসপত্র কী দিয়ে দিয়েছে। একগাদা বই থাকবে বলাই বাহুল্য। ঢাকায় বই পড়ার সময় তেমন হয় না। বাইরে এলে বই পড়ে প্রচুর সময় কাটান। রেনু তার নিজের পছন্দের বই একগাদা দিয়ে দেয়। তার মধ্যে মজার মজার কিছু বই থাকে। যেমন এবারের বইগুলোর মধ্যে একটা হল—অষ্টাঙ্গ সংগ্রহ। গ্ৰন্থ পরিচয়ে লেখা—আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মূল তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ। এই বই দেয়ার মানে কি? রেনু কি তাঁকে আয়ুর্বেদে পন্ডিত বানাতে চায়?
তিনি কয়েক পাতা ওল্টালেন। বিচিত্র সব কথাবার্তা বইটিতে লেখা—
“পান খাওয়ার নিয়ম : পূর্বাহ্ণে সুপারি অধিক দিয়া, মধ্যাহ্নে খয়ের অধিক দিয়া ও রাত্রে চুন অধিক দিয়া পান খাইতে হয়। পানের অগ্রভাগ, মূলভাগ ও মধ্যভাগ বাদ দিয়া পান খাইতে হয়। পানের মূলভাগ খাইলে ব্যাধি, মধ্যভাগে আয়ুক্ষয় এবং অগ্রভাগ খাইলে পাপ হয়। পানের প্রথম পিক বিষতুল্য, দ্বিতীয় পিক দুর্জর, তৃতীয় পিক সুধাতুল্য—উহা খাওয়া উচিত।”
‘স্যার আসব?’
শওকত সাহেব তাকিয়ে দেখেন করিম সাহেব তাঁর মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। দু’জনের হাতে দু’টি ট্রে। রাতের খাবার। পেছনে-পেছনে আরেকজন আসছে। তার হাতে পানির জগ, গ্লাস, চিলম্চি।
করিম সাহেব বললেন, ‘স্যার আমার মেয়ে পুষ্প। আমার একটাই মেয়ে। ময়মনসিংহে থাকে। হোস্টেলে থেকে পড়ে। এইবার আই. এ. দেবে। পরীক্ষার ছুটি দিয়েছে। ও ভেবেছিল হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবে। আমি বললাম, মা চলে আয়। একা একা থাকি। সে চলে এসেছে। চলে আসায় খুবই ক্ষতি হয়েছে। ঘর-সংসার সবই এখন তার দেখতে হয়। এখন ভাবছি হোস্টেলে দিয়ে আসব।’
পুষ্প মেঝেতে ট্রে রেখে এগিয়ে এসে পা ছুঁয়ে সালাম করল। শওকত সাহেব খানিকটা বিব্রতবোধ করলেন। কদমবুসি করলে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদের কিছু কথা বলার নিয়ম আছে। তিনি কখনো তা পারেন না।
পুষ্প বলল, ‘স্যার আপনার শরীর কেমন?’
মেয়েও বাবার মতোই তাঁকে স্যার ডাকছে। প্রশ্ন করেছে বোকার মতো। তিনি যদি এখন—’শরীর ভালো’ না বলে বলেন—’শরীর খুবই খারাপ’ তাহলেই মেয়েটি হকচকিয়ে যাবে। পরের কথাটা কি বলবে ভেবে পাবে না।
তিনি তাকিয়ে আছেন পুষ্পের দিকে।
মেয়েটিকে অস্বাভাবিক রকমের স্নিগ্ধ লাগছে। স্নান করার পরপর ক্ষণস্থায়ী যে স্নিগ্ধতা চোখে-মুখে ছড়িয়ে থাকে সেই স্নিগ্ধতা। মেয়েটি কি এখানে আসার আগে স্নান করেছে? সম্ভবত করেছে। চুল আর্দ্র ভাব। মেয়েটির গায়ের রং অতিরিক্ত ফর্সা। শুধুমাত্র ফর্সা রঙের কারণে এই মেয়েটির ভালো বিয়ে হবে। মেয়েটার মুখ গোলাকার। মুখটা একটু লম্বাটে হলে ভালো হত। একে কি রূপবতী বলা যাবে? হ্যাঁ যাবে। মেয়েটি রূপবতী তবে আকর্ষণীয়া নয়। রূপবতীদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে কিন্তু কাছে যেতে ইচ্ছে করে না। যারা আকর্ষণীয়া তারা নিজেদের দিকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।
মোফাজ্জল করিম সাহেব বললেন, ‘ওর নাম স্যার আসলে পুষ্প না। ওর ভালো নাম নাজনীন। আমরা ডাকতাম নাজু। একদিন ওর বড় মামা এসে বললেন, ‘নাজু—ফাজু আবার কি রকম নাম। এত সুন্দর মেয়ে—এর নাম হল পুষ্প। সেই থেকে পুষ্প নাম।’
শওকত সাহেব কেন জানি বিরক্তিবোধ করছেন। পিতা এবং কন্যা আগ্রহ নিয়ে তার সামনে বসে আছে। এরা তাঁর কাছ থেকে মুগ্ধ ও বিস্মিত হবার মতো কিছু শুনতে চায়। এমন কিছু যা অন্য দশজন শুনাবে না, তিনিই বলবেন। এক ধরনের অভিনয় করতে হবে। অন্যদের থেকে আলাদা হবার অভিনয়। আশেপাশের মানুষদের চমৎকৃত করতে হবে। পৃথিবীর সব বড় মানুষরাই গ্রহের মতো। তাদের আশেপাশে যারা আসবে তাদেরই উপগ্রহ হয়ে গ্রহের চারপাশে পাক খেতে হবে। কোনো মানে হয় না।
মেয়েটা এসেছে। আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। তাঁকে কিছু একটা বলতে হবে। ইন্টারেস্টিং কিছু। কিছুই মাথায় আসছে না। তিনি একধরনের যন্ত্রণাবোধ করছেন।
তিনি থেমে থেমে বললেন, ‘পুষ্প খুব ভালো নাম। তবে পুষ্প না হয়ে কোনো বিশেষ ফুলের নামে নাম হলে আরো ভালো হত। অনেক আজেবাজে ধরনের ফুলও কিন্তু আছে। যেমন ধুতরা ফুল। বিষাক্ত ফুল। আবার কুমড়া ফুলও ফুল, সেই ফুল আমরা বড়া বানিয়ে খাই।’
পুষ্প তাকিয়ে আছে। একপলকের জন্যেও চোখ সরাচ্ছে না। মেয়েটির চোখে এক ধরনের কাঠিন্য আছে। সতেরো আঠারো বছরের মেয়ের চোখে এ জাতীয় কাঠিন্য তো থাকার কথা না। এদের চোখ হবে হ্রদের জলের মতো। স্বচ্ছ, গভীর এবং আনন্দময়। করিম সাহেব বললেন, ‘স্যার হাতটা ধুয়ে ফেলেন। রাত তো অনেক হয়েছে। আপনার নিশ্চয় ক্ষিধে লেগেছে।’
শওকত সাহেব বললেন, ‘আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি রাতে খাব না।’
‘সে কি!’
‘শরীর ভালো লাগছে না।’
‘ভালো না লাগলেও চারটা খাওয়া দরকার। রাতে না খেলে শরীরের এক ছটাক রক্ত চলে যায়।’
‘রক্ত চলে গেলেও কিছু করার নেই। আমার যা ভালো লাগে না আমি কখনোই তা করি না।’
‘কিছুই খাবেন না স্যার?’
‘না।’
পুষ্প মৃদুস্বরে বলল, ‘একগ্লাস দুধ দিয়ে যাই?’
‘না—দুধ আমি এমনিতেই খাই না। রাতে যদি ক্ষিধে লাগে আমার সঙ্গে বিস্কিট আছে। ঐ খেয়ে পানি খেয়ে নেব। আমার সম্পর্কে আর কিছুই চিন্তা করতে হবে না।
করিম সাহেব বললেন, ‘খাবারটা ঢাকা দিয়ে রেখে যাব?’
‘না। ভাত-তরকারি পাশে নিয়ে ঘুমুতে ভালো লাগবে না।’
করিম সাহেব মেয়ের দিকে তাকালেন। বেচারী মুখ কালো করে ফেলেছে। আহা কত আগ্রহ নিয়ে সে রান্না-বান্না করেছে। নিচে ফিরে গিয়ে নিশ্চয়ই কাঁদবে।
করিম সাহেব বললেন, ‘আর কিছু না খান। এক টুকরা ভাজা মাছ কি খাবেন? ডুবা তেলে ভাজা।’
‘ডুবা তেলেই ভাজা হোক আর ভাসা তেলেই ভাজা হোক, আমি খাব না। আমার একেবারেই ইচ্ছে করছে না।’
পিতা এবং কন্যা বের হয়ে গেল।
দু’জন অসম্ভব মন খারাপ করেছে। ঘর থেকে বেরুবার আগে পুষ্প একপলকের জন্যে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল শওকত সাহেবের দিকে। এবারের চোখের দৃষ্টি আগের মতো নয়। সম্পূর্ণ অন্য রকম। চোখের মণিতে হ্রদের জলে আকাশের ছায়া—যে আকাশে মেঘের পরে মেঘ জমেছে।
.
শোবার ঘরটা শওকত সাহেবের খুব পছন্দ হয়েছে। হলঘরের মতো বিরাট ঘর। দু’পাশেই জানালা। জানালা দুটিও বিশাল। একসঙ্গে অনেকখানি আকাশ দেখা যায়। কালো রঙের প্রাচীন খাট। খাটে বিছানো চাদর থেকে ন্যাপথলিনের গন্ধ আসছে। খাটের পাশের টেবিলে কেরোসিনের টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। টেবিল ল্যাম্পের এই আলোতেও এক ধরনের রহস্য আছে। বাতাসের সঙ্গে আলো কাঁপছে। সেই সঙ্গে কাঁপছে দেয়ালের ছায়া। মশা নেই বলেই বোধহয় মশারি নেই। কতদিন পর তিনি মশারি ছাড়া ঘুমুচ্ছেন। নিজেকে কেমন যেন মুক্ত মানুষ বলে মনে হচ্ছে।
অষ্টাঙ্গ সংগ্রহ তাঁর হাতে। ঘুমুবার আগে আরো কয়েকটা পাতা ওল্টানো যাক। বইটিতে ঘুমুবার নিয়মকানুনও দেয়া আছে।
আটবার শ্বাস নিতে যেই সময় লাগে সেই সময় পর্যন্ত চিৎ হইয়া তাহার দ্বিগুণ সময় ডান পার্শ্বে, তাহার চারগুণ সময় বাম পার্শ্বে শয়ন করিয়া তারপর যেইভাবে শুইয়া আরাম পাওয়া যায় সেইভাবে শুইতে হয়। নাভির বাম দিকে অগ্নি অবস্থান করে। সুতরাং বাম পার্শ্বে শয়ন করা উচিত….
তিনি ঠিক বই-এর মতো নিয়মে শোবার চেষ্টা করলেন। যদিও খুব ভালোমতোই জানেন—যেভাবেই শোয়া হোক রাত কাটবে নির্ঘুম। এখন পর্যন্ত নতুন জায়গায় প্রথম রাতে তিনি কখনো ঘুমুতে পারেন নি। নির্ঘুম রাত কাটাতে তাঁর খারাপ লাগে না। বরং বলা চলে ভালো লাগে। ভাববার সময় পাওয়া যায়। আজকাল কোনো কিছুর জন্যেই সময় বের করা যায় না। একান্ত ভাববার জন্যে যে সময় সব মানুষের দরকার সেই সময় কি আমরা দিতে পারি? কর্মক্লান্তি দিনের শেষে লম্বা ঘুম, আবার ব্যস্ত দিনের শুরু।
জেগে থাকার এক ধরনের গোপন ইচ্ছা ছিল বলেই বোধহয় অল্প সময়ের ভেতর ঘুমে তাঁর চোখ জড়িয়ে এল। ঘুমিয়ে তিনি বিচিত্র একটি স্বপ্ন দেখলেন।
এই ঘরেই খাটে তিনি শুয়ে আছেন। তাঁর মন কি কারণে অসম্ভব খারাপ। বুকের ভেতর একধরনের কষ্ট হচ্ছে। এমন সময় দরজা খুলে গেল। হারিকেন হাতে ঢুকলো পুষ্প। পুষ্পকে কেমন বউ-বউ দেখাচ্ছে। তিনি খানিকটা হকচকিয়ে গেছেন। এই গভীর রাতে মেয়েটি তাঁর ঘরে কেন? পুষ্প হারিকেন টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল, ‘তুমি এখনো ঘুমাও নি।’
তিনি অসম্ভব চমকে উঠলেন। মেয়েটি তাঁকে তুমি-তুমি করে বলছে কেন?
পুষ্প খুব সহজ ভঙ্গিতে খাটে পা ঝুলিয়ে বসল। অভিমানী গলায় বলল, ‘আচ্ছা শোন, তুমি এত ভুল কথা বল কেন?’
তিনি মনের বিস্ময় চাপা দিয়ে বললেন, ‘ভুল কথা কি বললাম?’
‘ধুতরা ফুল বুঝি বিষাক্ত? মোটেই বিষাক্ত নয়। ধুতরার ফল বিষাক্ত—বুঝলেন জনাব?’
‘বুঝলেন জনাব’ বলে পুষ্প খুব হাসছে। খুব পা নাড়াচ্ছে। কে? এই মেয়েটা কে? হচ্ছে কি এসব?
তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। সবে ভোর হয়েছে। গাছে-গাছে অসংখ্য পাখি ডাকছে।
আপনাদের ওয়েবসাইটে সমস্যা হয়েছে।আগে এত বানান ভুল ছিল না,এখন সমানে ভুল।এমনকি কিছু শব্দ বিকৃত।আগে পড়া না থাকলে সমস্যা হয়তো বুঝতে।আর সব থেকে বড় সমস্যা হয়েছে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অপশন এ ।এখানে ভুল তথ্য দেওয়া।যেই উপন্যাস পড়ছি ঐটার অংশ দেওয়া নাই। অন্য কোনো এর অংশ জুড়ে দেওয়া।আগে যদি না পড়তাম তাহলে বিপদে পড়তাম।মনে করতাম উপন্যাস বাজে।নতুন কোনো পাঠক তাই ভাববে
হ্যাঁ, বানান ভুল থেকে রেহাই নেই। তবে আমাদের মনে হয় ভুল আগের দিকে দেয়া বইতে বেশি আছে, এখন কম হওয়ার কথা। আসলে আগে যেসব সোর্স থেকে কাজ হত, সেগুলোতে ছাপার অস্পষ্টতা বেশি ছিল, ফলে আমাদেরও ভুল বেশি হত। যেগুলোর ছাপা ভাল, সেসবে ভুল কম হয়। আর আমরা নতুন সিস্টেমে বই দেয়ার চেষ্টা করছি। এতে ওই নেক্সট প্রিভিয়াসের ঝামেলাটা কম হবে আশা করি। পুরানো সব বইও আশা করি এই ফরম্যাটে আনতে পারব। ধন্যবাদ।