১৭
অনাদিবাবুকে দেখতাম ভোর সাড়ে-চারটায় উঠে বাগানে যেতেন। দেখতাম অথবা শুনতামও বলা যায়। আমি তো জীবনে সূর্যোদয়ই দেখেছি কয়েকবারমাত্র। বস্তুত চড়া লাল রং আমার সহ্য হয়না বলেই ভোরের সূর্য আমি পছন্দ করিনা, ঘুম ভেঙে চোখ খুলে তাকাই সেই তখন, যখন ভোরের লাল সূর্য বেশ হলদেটে হয়ে এসেছে। এবং শেষ বিকেলেও আমি সাধারণত অফিসে বা চায়ের দোকানে বন্দী থাকি বলে—গাঢ় সূর্যাস্তও আমার জীবনে খুব বেশি দেখা হয়ে ওঠেনি। আমার দিন কাটে ফ্যাকাসে ঝাপসা রঙের মধ্যে। কিন্তু রিটায়ার্ড উকিল অনাদি সেনগুপ্ত গত পঞ্চাশ বছর ধরে নাকি ভোর সাড়ে-চারটার সময় ঘুম ভেঙে বাইরে আসেন।
বছর দুয়েক আগে আমি কিছুদিন বর্ধমানে ছিলাম। আমাদের বাড়ির পাশেই অনাদিবাবুর বাড়ি, আমার শোবার ঘরের পিছনেই তাঁর বাগান। প্রত্যেক দিন ব্ৰাহ্ম মুহূর্তের আগে বাগানে অনাদিবাবুর গান ও নাচে আমার ঘুম ভাঙে। অনাদিবাবু যখন বাগানে আসেন, তখন তাঁর হাতে জ্বলের ঝারি ও খুরপি, পরনে হাফপ্যান্ট ও পায়ে ঘুঙুর। গলায় রামপ্রসাদী গান, গানের সঙ্গে তাল ঠোকেন ঘুঙুর বাজিয়ে। এক-একদিন ঘুম ভেঙে, তখনও সূর্য ওঠেনি, শিয়রের জানালা দিয়ে আমি তাকিয়ে দেখেছি, বাগানের প্রত্যেকটি ফুলগাছের পাশে ঘুরে-ঘুরে অনাদিবাবু নেচে-নেচে গান করছেন, আমায় দে মা পাগল করে, ব্রহ্মময়ী—। তখন হয়তো কোন স্বপ্ন দেখতে-দেখতে আমার ঘুম ভেঙেছে সেই অপ্রাকৃত আলোয়। অনাদিবাবুর অস্তিত্বও আমার কাছে অপ্রাকৃত মনে হয়, কিছুক্ষণ দুর্বোধ্যতার বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আবার আমি বিছানায় পাশ ফিরে ভাঙা ঘুম মেরামত করার চেষ্টা করেছি।
অনাদিবাবু কিন্তু পাগল বা বাতিকগ্রস্ত নন। গান বা নাচের সঙ্গে গাছপালার ফলন বৃদ্ধির কোন সম্পর্ক আছে—এরকম বিশ্বাসও তাঁর নেই। আসলে তাঁর খুব সাপের ভয়, বাগানে যদি সাপ থাকে এই আশঙ্কায় তাঁর গান ও নাচ—শব্দ পেলেই নাকি সাপ দূরে চলে যায়। এবং ওঁর ঘুঙুর পরার খবর ওঁর বাড়ির বাইরে আমি ছাড়া আর তো কেউ জানেনা। বাগানের সম্পূর্ণ পরিচর্যা সেরে সাতটা আন্দাজ তিনি আমার জানলার পাশে এসে গলা খাকারি দিয়ে ডাকতেন, ‘কী, ঘুম ভাঙল? ইয়ংম্যানের পক্ষে এত ঘুম—আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ—এই হচ্ছে গিয়ে…।’ তখন আমি গভীর ঘুমে মগ্ন এবং সকালের ঘুম একডাকে ভাঙেনা।
অনাদিবাবুকে আমার গোড়ার দিকে বেশ ভালোই লাগত। রিটায়ার্ড লোকেরা সাধারণত একটু বেশি কথা বলেন, এবং উনিও সুযোগ পেলেই আমাকে ধরে রাজ্যের কথা শোনাতেন, কিন্তু ওঁর কথা শুনতে প্রথম-প্রথম আমার মোটেই খারাপ লাগতনা। লোকটির পুষ্পপ্রীতি ছিল অসাধারণ। স্বাস্থ্যবাতিক কিংবা অন্যকিছুর জন্যই ভোরে ওঠা নয়, শুধুই বাগানের জন্য। শুধু সকাল নয়, সারাদিনই প্রায় বাগানে কাটে তাঁর। এবং রিটায়ার করার বহু আগে থেকেই এই শখ। বেশ বড় বাগান, অনেক ফুল ফোটে— যদিও অনাদিবাবু ফুল বিক্রিটিক্রি করার কথা ভাবেননা, ফুলের আর কোনই প্রয়োজন নেই। তিনি ফুলগুলোকে নিষ্কামভাবে ভালোবাসেন। নতুন গোলাপের চারা লাগাবার পর ওর ধৈর্য ডারুইনকেও হাব মানায়। যতক্ষণ-না সেই গাছে ফুল ফুটছে—তিনি একাগ্রভাবে সেদিকে চেয়ে থাকেন। সকালবেলা যেদিন এসে বলেন, ‘জানেন এত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলামনা’—তখন ওঁর দীর্ঘশ্বাস ও করুণ মুখচোখে ফুটে ওঠে পুত্রশোক, কিন্তু আসলে মারা গেছে একটা চন্দ্রমল্লিকার চারা। মফস্বল আদালতের উকিল ছিলেন, জীবন কেটেছে নোংরা আদালতঘরে, চোর জোচ্চোর আর বদমাসদের সঙ্গে, তবু কী করে ওঁর এমন সৌন্দর্যবোধ রয়ে গেছে ভেবে আমি আশ্চর্য হতাম। উনি আমাকে বিভোর হয়ে বলতেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ান পপি যখন প্রথম ফোটে—ফুলের ভেতরটায় তাকিয়ে দেখবেন, কী নরম রং, ওরকম রং আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দেখবেননা!… ঐ ক্যামেলিয়াটা আজ ফুটল, দেখুন, দেখুন, যেন ঠিক রাজকন্যার মতন তাকিয়ে আছে।… ওটা কী ফুল বলুন তো? চিনতে পারলেননা? কাঞ্চন! ওকি, আপনি অতসীও চেনেননা? অবশ্য এরকম ডবলঅতসী আমিও আগে দেখিনি! ওটা? ওটা বিদেশি ফুল—ওর নাম নাসটেসিয়ান। আহা, এই বেলফুলগুলো দেখুন, বড় অভিমানী ওরা, একটু যত্নের ত্রুটি হলেই, কিন্তু কী রূপ, আহা, চক্ষু সাৰ্থক!’
ফুল সম্পর্কে আমার অবশ্য তেমন কোন ঔৎসুক্য নেই। কিন্তু ফুল সম্পর্কে অনাদিবাবুর ওরকম আন্তরিক ভালোবাসা দেখতে আমার ভালোই লাগত। তাছাড়া, আমার শিয়রের জানলা দিয়ে যখন তাঁর বাগানের নানান ফুলের সম্মিলিত সুগন্ধ ভেসে আসত— তখন আমি বিনাপয়সায় আনন্দ উপভোগের স্বাদ পেতাম। অনাদিবাবুর তেমনকিছু শিক্ষাদীক্ষা ছিলনা, কথা বলে দেখেছি, শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে ওর কোন জ্ঞানই নেই। বেশির ভাগ লোকই যেরকম হয়, ইস্কুল-কলেজে পড়েছেন ডিগ্রি নেবার জন্য, বাকি জীবনটা খরচ করেছেন জীবিকার জন্য, এর বাইরে আর-কিছু নেই—তবু এই অপ্রয়োজনীয় পুষ্পপ্রীতি ওঁর মধ্যে এল কী করে? তবে কি ওঁর ভিতরে কোন আলাদা সৌন্দর্যবোধ আছে—যা শিক্ষা কিংবা প্রেরণার অপেক্ষা রাখেনা? কিন্তু এই সৌন্দর্যবোধটাই বা কী করে একতরফা হয়। অনাদিবাবুর বাড়িতে গিয়ে কিন্তু আমি খুবই দমে গেছি!
অনাদিবাবুর বাগান ঝকমকে তকতকে সাজানো, কোথাও একটু অনাবশ্যক আগাছা বা ময়লা নেই, ছবির মতন। কিন্তু ওর বাড়িটা যাচ্ছেতাই। অনাদিবাবুর তিন ছেলে—দুই মেয়ে, বড় ছেলে অসবর্ণ বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। খুব একটা অভাবের সংসার নয় কিন্তু বাকি ছেলেমেয়েগুলোর বিশ্রী জামাকাপড়, সারা বাড়িটা অগোছালো ছন্নছাড়া। বারান্দায় বসার জায়গা, কয়েকখানা বাজে ক্যালেন্ডার ঝুলছে, কাপড়ের ওপর সুচের শেলাই-করা পুকুরপাড়ে তালগাছের একটা বিকট ছবি বাঁধানো। অনাদিবাবু স্ত্রীকে ডাকলেন ‘গোবিন্দর মা’ ব’লে, বললেন, ‘আমাদের ইয়েকে চা দাও এক কাপ–আবার চোদ্দঘণ্টা লাগিয়ো না!’-চা নিয়ে এল একটি চোদ্দ-পনেরো বছরের মেয়ে, যথারীতি কাপের কানাগুলো ভাঙা। মেয়েটি বলল, ‘বাবা, তোমাকেও চা দেব?’ অনাদিবাবু খেঁকিয়ে উঠে বললেন, ‘দিবি না তো কী! আবার জিজ্ঞেস করার কী আছে।’ মেয়েটি চলে যাচ্ছিল, অনাদিবাবু আবার ডেকে বললেন, ‘এই ভুণ্টি (বেশ দেখতে মেয়েটিকে, অথচ তার নাম ভুণ্টি) তুই আবার ব্যাকা সিঁথি করেছিস! ইস্কুলে গিয়ে এইসব বিবিয়ানা শিখছিস—ছাড়িয়ে দেব—।’ মেয়েটি থতমত খেয়ে বলল, ‘কই না তো! দিদি তো চুল বেঁধে দিয়েছে!’ আমি তাকিয়ে মেয়েটির চেহারায় কোন বিবিয়ানার চিহ্ন দেখতে পেলামনা। ঐটুকু মেয়ের রঙিন ফ্রক পরাই উচিত ছিল, বেণী দুলিয়ে ছোটাছুটি করলেই ওকে মানাত বেশি, কিন্তু সেসব বোধহয় ওর বাবার পছন্দ নয়, মেয়েটি একটা সাদা রঙের (সুতরাং আধময়লা) শাড়ি-পরা, মাথার চুল পাট করে আঁচড়ানো, আজকালকার মেয়েদের ধরনে সিঁথিটা বুঝি একটু বাঁপাশে। বাবার সামনে ভয়ে মেয়েটির মুখ আড়ষ্ট। অনাদিবাবু ফের বললেন, ‘দিদি? দিদি তো সিনেমা দেখে ওসব শিখছে! দাঁড়া আজ আসুক হারামজাদী!’ বলেই অনাদিবাবু ফড়াৎ করে সিকনি ঝেড়ে চেয়ারের গায়েই হাত মুছলেন। ঘেন্নায় আমার গা বমি-বমি করছিল, কোনক্রমে বিদায় নিয়ে ওর ফুলবাগানে মধ্য দিয়ে আমি ফিরে এলাম।
এ কী ধরনের সৌন্দর্যবোধ? ভাষায় রুচিজ্ঞান নেই, আচার-ব্যবহার অসুন্দর, অথচ ফুলের সৌন্দর্যকে ভালোবাসার কী যুক্তি? এখনো কানে ভাসে অনাদিবাবুর কথা : সব সাদাফুলই কিন্তু একরকম সাদা নয় বুঝলেন, রজনীগন্ধা আর গন্ধরাজ —এ-দুটো হাতে নিয়ে দেখুন, দুটো দুরকম সাদা। পপি ফুলের ভেতরে তাকিয়ে দেখবেন, আহা কী নরম রং!— এই অনাদিবাবুকেই দূর থেকে চিৎকার করতে শুনেছি : এই লেটো (ছেলের নাম) আবার রেডিও খুলেছিস! দিনরাত খালি গান—বাজনা—হারামজাদা ছেলে, জুতিয়ে তোমার—। দুর্বোধ্য মানুষ!
এরকম মানুষ আমি আরও অনেক দেখেছি। সেজো মাসিমাকে দেখেছি, গল্প—উপন্যাস পড়ার কী দারুণ নেশা। রোজ লাইব্রেরি থেকে বই আনা চাই-ই। শিকার কী অ্যাডভেঞ্চার তাঁর ভালো লাগেনা, তাঁর চাই শুধু প্রেমের কাহিনী। এবং সে—প্রেমও ব্যর্থ হলে চলবেনা। প্রায়ই আমাকে বলতেন, ‘দূর, দূর, এ-কী বই এনেছিস! একেবারে বাজে বই। শেষ পর্যন্ত ছেলেটা-মেয়েটার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল!’—সেই সেজো মাসিমাকেই দেখেছি, কোথাও চেনাশুনো কেউ প্রেম করে বিয়ে করলেই তিনি রেগে আগুন হয়ে যেতেন! বলতেন, ‘ছি ছি, বাবা-মার কথা একবার ভাবল না, ছি ছি।’ আমার মামাতো ভাই এম-এ পড়ার সময় ক্লাসের একটি মেয়েকে বিয়ে করল বলে মাসিমা সে-বিয়েতে নেমন্তন্নই খেতে গেলেননা!–এরও না হয় মানে বুঝি, কিন্তু শশাঙ্কবাবুর চরিত্রর কী মানে হয়?
শশাঙ্কবাবু একজন প্রৌঢ় শিক্ষক, আমাদের প্রতিবেশী। জোয়ান দশাসই চেহারা, শিক্ষক হবার বদলে মিলিটারি অফিসার হলেই তাঁকে মানাত। সকালে—দুপুরে মাস্টারি, তারপরও টিউশানি—দিনরাত অর্থোপার্জনের নেশায় কাটছে। কিন্তু ওঁরও একটা অদ্ভুত নেশা আছে। বাড়ি ফেরার পথে তিনি প্রায়ই একটা কুকুরছানা কিংবা বিড়ালছানা নিয়ে আসেন। রাস্তার পাশে যদি দেখেন কোন অসহায় বিড়ালছানা কিংবা কুকুরছানা মিউ-মিউ বা কেঁউ-কেঁউ করছে, তিনি জলকাদা—মাখা অবস্থাতেও তাকে বুকে তুলে আনবেন। এই দুর্মূল্যের দিনেও খেয়ে ওঠার পর তিনি আট-দশটা কুকুরকে রুটি ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খাওয়ান। অনেকে বাড়ির বেড়াল পার করার জন্য শশাঙ্কবাবুর বাড়ির সামনে ছেড়ে দিয়ে আসে। ওঁর পাশের বাড়ির ভদ্রলোক শস্তায় পেয়ে চারটি মুরগি কিনেছিলেন একবার, প্রত্যেক সপ্তাহে একটি করে খাবেন—এই মতলবে। তার মধ্যে দুটো মুরগি সকালবেলা শশাঙ্কবাবুর পায়ের কাছে ঘোরাঘুরি করতে লাগল। তিনি তখন মুড়ি খাচ্ছিলেন, দুটো মুড়ি ছড়িয়ে দিলেন ওদের জন্য। সেগুলো মুহূর্তে শেষ করে মুরগি দুটো আবার মুখ তুলে চাইল। শশাঙ্কবাবু হাসতে-হাসতে ছেলেমেয়েদের ডেকে বললেন, দ্যাখ, মুরগিদুটো আমার কীরকম পোষা হয়ে গেল, হাত থেকে নিয়ে মুড়ি খাচ্ছে!—তারপরই শশাঙ্কবাবু চলে গেলেন তাঁর প্রতিবেশীর কাছে, ও মুরগিদুটো মারা চলবেনা। অনেক ঝুলোঝুলি করে তিনি সে-দুটোকে কিনে নিলেন, সে-দুটো বাড়িতেই থেকে গেল। ছাগলের বাচ্চা কোলে নিয়ে শশাঙ্কবাবুকে ছুটির দিনে মর্নিংওয়াক করতেও আমি দেখেছি। পিছনে চলেছে কুকুরের পাল।
শশাঙ্কবাবুকে কি দয়ালু লোক বলব? ইস্কুলে ছাত্ররা ওঁর নাম দিয়েছে যমরাজ। ছেলেরা ওঁকে যমের মতোই ভয় করে এবং ওঁর হাতের থাপ্পড় খায়নি -এমন ছেলে একটিও নেই। ঐ বিশাল পুরুষের হাতের থাপ্পড় যে কী ভয়াবহ তাও অনুমান করা যায়। শুনেছি ঐ ইস্কুলের ভোজপুরী দারোয়ানকে কী যেন কারণে তিনি একবার চড় কষিয়েছিলেন, সে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং পরে চাকরি ছেড়ে দেয়।
আমি শশাঙ্কবাবুর ছাত্র ছিলামনা, কিন্তু ওঁর নিষ্ঠুরতার কিছু কিছু কথা জানি। এক রবিবার সকালে আমি কোন কারণে ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম। কথাবার্তা বলছি, এমন সময় একটা বাচ্চা ভিখারি মেয়ে ভিক্ষা চাইতে ওঁর বারান্দায় এসে দাঁড়াল। কথা থামিয়ে শশাঙ্কবাবু ক্রুদ্ধ চোখে মেয়েটার দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘একেবারে বারান্দার ওপর উঠে এসেছে? অ্যাঁ? যত রাজ্যের অজাত—কুজাত ছোটলোক—একেবারে ঘরের মধ্যে, সাহস বেড়ে গেছে, না?’ বলতে—বলতেই উঠে গিয়ে শশাঙ্কবাবু সেই ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মেয়েটির কান ধরে মুচড়ে দিলেন। ঐ বিশাল পুরুষের হাত এবং রোগা-পাতলা মেয়েটির কান, মেয়েটা তীব্রভাবে কেঁদে উঠল আর সঙ্গে-সঙ্গে তার কানের গোড়া থেকে রক্ত পড়তে লাগল। শশাঙ্কবাবু বললেন, ‘দূর হ!’ শশাঙ্কবাবুর ঘরে-বারান্দায় কুকুর-বেড়াল—ছাগল মুরগি যথেষ্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার পাশেই পড়ল মেয়েটির কয়েক ফোঁটা রক্ত। আমি আবার গাঢ় লাল রং দেখতে পারিনা—-তাড়াতাড়ি চলে এলাম সেখান থেকে।
একদিন রাত্রে বাড়ি ফিরে শুনলাম, শশাঙ্কবাবুর ছোট ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছেলেটা যখন খেতে বসেছিল, একটা কুকুর বাচ্চা এসে একেবারে ওর ভাতের থালায় মুখ দেয়। রাগের চোটে ছেলেটা, মোটে এগারো বছর বয়েস, গেলাশ ছুঁড়ে মারে কুকুরটার দিকে। কুকুরটার ঠ্যাং খোঁড়া হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে সমস্ত পোষা জন্তু-জানোয়ারের একবার খবর নেওয়া শশাঙ্কবাবুর অভ্যেস। সেদিন ফিরে ঐ ব্যাপার দেখে তিনি ছেলেকে তুলে প্রবল আছাড় দিয়েছেন। ছেলেটা সেই থেকে রক্তবমি করছে, বাঁচবে কি না সন্দেহ। কী বলব একে? দয়া?