নীললোহিতের অন্তরঙ্গ – ১৩

১৩

মা জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁরে, কাল শান্তাদের বাড়িতে গিয়েছিলি?

আমি বই হাতে, অন্যমনস্ক, তবু সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ পেয়েই বুঝেছিলাম মা আসছেন আমার ঘরে এবং এসে এই প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করবেন। মা তারপর আবার জিজ্ঞেস করলেন, কী বলল শান্তা?

বইয়ের সে-পাতার একেবারে শেষ লাইনে এসে চোখ থমকে আছে, সুতরাং সেই লাইনটা না-পড়ে উত্তর দেওয়া যায়না। শেষ করে, বইটা মুড়ে রেখে চোখ তুলে উত্তর দিলাম, শান্তামাসির সঙ্গে দেখাই হলনা। বড়ো মেসো আর শান্তামাসি টালিগঞ্জ গেছেন শুনলাম, বাড়িতে আর কেউই নেই। ছোটকু বাথরুমে ছিল, আর নবনীতাকে দেখলাম তার প্রাইভেট টিউটর পড়াচ্ছে—তখন ওর সঙ্গে কথা বলা যায়না। তাই আমি বেশিক্ষণ না-দাঁড়িয়ে চলে এলাম। আমার একটা কাজ ছিল।

—শান্তার শাশুড়ি ছিলনা?

—দেখলাম না তো!

—আজ তাহলে একবার যাস—

ততক্ষণে আমি আবার বইটা খুলেছি, পরের পাতার প্রথম লাইনে চোখ নিবদ্ধ, উত্তর দিলাম, হ্যাঁ, দেখি যদি পারি তো একবার যাব আজ আবার—

—শান্তার টেলিফোনটা খারাপ—আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে পারছিনা, তুই একটু জিজ্ঞেস করে আসিস আজ, ওর কী মত সেই বুঝে—

—যাব, যাব, বলছি তো সময় পেলে আজ যাব—

আজ যে যাব তা বহুক্ষণ আগে থেকেই আমি ঠিক করে রেখেছি, সিঁড়িতে মার পায়ের শব্দ পেয়েই—যত কাজই থাক আজ যাব। কেননা, কাল আমি সত্যিই যাইনি। ওটা মিথ্যে কথা। শান্তামাসির মেয়ে নবনীতার সঙ্গে আমাদের পাশের বাড়ির দেবনাথের বিয়ের সম্বন্ধ মা প্রায় ঠিকঠাক করে ফেলেছেন। দেবনাথের বাবার চিনির কল আছে, দেবনাথ নিজেও জার্মানি থেকে ও ব্যাপারে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে, বেশ লম্বা-চওড়া চেহারা তার। খুবই সুপাত্র যাকে বলে। এ-বিয়ে হলে শান্তামাসিও আনন্দে আটখানা হবে, আমারও আনন্দের কারণ আছে, স্যাকারিন দিয়ে চা খেয়ে-খেয়ে জিভ তেতো হয়ে গেল, এ-বিয়ে হলে নবনীতার শ্বশুরবাড়ি গেলে নিশ্চয়ই চিনি দেওয়া চা খাওয়া যাবে সবসময়। ও-বাড়িতে নিশ্চয়ই প্রত্যেকদিন প্রতিবারের চা-তেই চিনি থাকে।

সেদিন সন্ধেবেলা সব কাজ ফেলে শান্তামাসির বাড়িতে গেলাম। শান্তামাসি বাড়ি ছিলেন, সবাই বাড়ি ছিলেন, শান্তামাসি এই সম্বন্ধের কথা শুনে খুব খুশি -নবনীতাকে আমি বিয়ের কথা বলে রাগালাম। আমার আগের দিন না আসায় কোন ক্ষতি হয়নি, মায়ের কাছে আমার মিথ্যে কথা বলাটা ধরা পড়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। লাখ কথা না হলে বিয়ে হয়না, মা-মাসিতে এখন এত কথা হবে যে আগের দিন আমি গিয়েছিলাম কী যাইনি—সে প্রসঙ্গই উঠবেনা। কিন্তু আমার মিথ্যে কথায় একটু খুঁত রয়ে গেল।

শান্তামাসির বাড়িতে এর আগে গিয়েছিলাম মাস দুয়েক আগে, সেদিন ঘরভর্তি সবাই বসে গল্প করছিল, এমনসময় ঝি এসে নবনীতাকে বলল, দিদিমণি তোমার মাস্টারমশাই এসেছেন! আড্ডার মাঝপথে নবনীতাকে উঠে যেতে হল, শুনলাম পরীক্ষার আগের চারমাস ওকে ওদের কলেজের একজন অধ্যাপক বাড়িতে পড়াচ্ছেন—নবনীতা বরাবরই ইংরেজিতে একটু কাঁচা। সেদিন উঁকি মেরে দেখেছিলাম, আমারই বয়েসী অ্যাংরি ইয়ংম্যান টাইপের এক ছোকরা ওর সেই অধ্যাপক।

সুতরাং, মায়ের কাছে মিথ্যে কথা বলবার সময়, পরিবেশ ফোটাতে আমার বিশেষ অসুবিধে হয়নি। শান্তামাসির ভাসুরের ক্যান্সার হয়েছে, তাঁকে দেখতে প্রায়ই ওঁরা টালিগঞ্জে যান। সুতরাং শান্তামাসির টালিগঞ্জে যাওয়ার কথা শুনলে মা অবিশ্বাস করবেননা। ছোটকুর স্বভাব অফিস থেকে ফিরেই ঘণ্টাখানেক বাথরুমে কাটানো—দিনে তিন-চারবার চান করা ওর বাতিক। আর সন্ধেবেলা নবনীতার অধ্যাপক তো পড়াতে রোজই আসে। শান্তামাসির শাশুড়িও প্রায় রোজ বিকেলেই মহানির্বাণ মঠে কথকতা শুনতে যান। সুতরাং বইয়ের দিকে মনোযোগ দেবার অছিলায় আমি চট করে মিথ্যে কথাটা বানিয়েছিলাম। তবু একটা খুঁত রয়ে গেল। পরের দিন শান্তামাসির বাড়িতে গিয়ে কথায়-কথায় জানতে পারা গেল, দিন পনেরো আগে নবনীতার সেই অধ্যাপককে নাকি ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নবীন অধ্যাপকটি উগ্র আধুনিক এবং উদ্ধত, বাড়ির সবার সামনে সিগারেট খায়, এমনকী স্বয়ং শান্তামাসির বর অর্থাৎ আমার জবরদস্ত বড়োমেসোর কাছে সে নাকি দেশলাই চেয়েছে—এই অপরাধে তার চাকরি গেছে। শান্তামাসি আমায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি বুড়োসুড়ো ধীরস্থির আর কোন অধ্যাপককে জোগাড় করে দিতে পারি কিনা। মায়ের কাছে আমার মিথ্যে কথাটায় এই একটা খুঁত থেকে গেল— নবনীতা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ছে। তা যাকগে, আসল কাজটা তো ঠিকঠাকই হচ্ছে—সামান্য একটা মিথ্যে কথায় কী আসে যায়!

কিন্তু মায়ের কাছে ঐ মিথ্যে কথাটা আমি কেন বললাম? যদি বলতাম, না মা, কাল শান্তামাসিদের বাড়িতে যেতে পারিনি, আজ যাব—তাহলে কী এমন ক্ষতি হতো? মা দু-তিনদিন ধরেই যেতে বলছিলেন, আমি রোজই যাব-যাব করে পাশ কাটাচ্ছিলাম, সুতরাং তিনদিনের দিন ঐ মিথ্যে কথা এবং চতুর্থ দিনের দিন সত্যিই যাওয়া। কিন্তু তৃতীয় দিনেও ঐ মিথ্যেটা না বলাই তো আমার উচিত ছিল। তবু কেন?

—তারপর ইন্দ্রনাথ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।

—তাই নাকি? তারপর?

—প্ল্যাটফর্মে বিশেষ লোকজন নেই, কয়েকটা ছোকরা একদিকে জটলা করছিল—তাদের চেহারাও বিশেষ সুবিধের নয়—ইন্দ্রনাথের ঐ অতবড়ো জোয়ান শরীর আমার পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়— মাথায় জল ছেটানো দরকার—অথচ ওকে ফেলে রেখে যেতে পারছিনা।

–কেন, তাতে কী হবে?

—ইন্দ্রনাথের পকেটে চার হাজার টাকা ছিল, ও আমাকে আগেই বলেছিল -সুতরাং ওকে একা ফেলে যাওয়া, আর সেই ছোকরাগুলোর রকমসকম….

—তখন কী করলি?

—ইন্দ্রনাথের ওপর চোখ রেখে একটু দূরে ঘোরাঘুরি করে অতিকষ্টে একটা কুলিকে দেখতে পেলাম, ছোটো স্টেশন তো…কুলিটাকে দিয়ে জল আনালাম এক বালতি…তারপর পৌনে দুঘণ্টা বসে থাকার পর পরের ট্রেন যখন এল…

ইন্দ্রনাথ এবং আমার—দুজনের বন্ধু এমন একজনকে ঘটনাটা শোনাচ্ছিলাম। ঘটনাটি সবই সত্যি। ইন্দ্রনাথের একদিন সত্যিই খুব শরীর খারাপ হয়েছিল এবং অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল রাত্রিবেলার প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু বলার সময় কেন যে একটু বদলে গেল—কিছুই বুঝিনা। ইন্দ্রনাথ বলেছিল ওর পকেটে দেড় হাজার টাকা আছে। দেড় হাজার টাকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবু সেটাকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা বলার ইচ্ছে আমার কেন হল, আমি নিজেই জানিনা। পরের ট্রেন এসেছিল আধঘণ্টা বাদে–আমি সেটাকে বাড়িয়ে করলাম পৌনে দুঘণ্টা। কেন? এমনকী আধঘণ্টার বদলে একঘণ্টা কী দুঘণ্টাও নয়, পৌনে দুঘণ্টা। ঘটনাটাকে বেশি গুরত্ব দেবার জন্য এই মিথ্যের অবতারণা? পকেটে দেড় হাজার টাকা নিয়ে নির্জন প্ল্যাটফর্মে এক বন্ধুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাই তো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা—তাকে আরও বাড়িয়ে আমার লাভ কী? তাহলে কী, সবসময় যা ঘটে— তারই পুনরুক্তি করতে একঘেয়ে লাগে বলেই এইসব নির্দোষ মিথ্যে বলতে সাধ হয়?

—রতনটা একেবারে বাজে ছেলে। কোন কথা দিয়ে কথা রাখেনা—বড়োবউদি বললেন।

—অফিসেও কেউ ওকে গ্রাহ্য করেনা শুনেছি। মুখেই শুধু লম্বাচওড়া কথা, কাজের বেলা কিছুনা—এবার ছোটোবউদি।

পারিবারিক মহলে আমার মামাতো ভাই রতনের খুব নিন্দে হচ্ছিল। আমার ঠিক সহ্য হচ্ছিলনা। রতনকে আমার খুব ভালো লাগে, চমৎকার দিলখোলা মানুষ, সরলভাবে হা-হা করে হাসে, কী চমৎকার গান গায়। রতনের দায়িত্বজ্ঞান একটু কম, সময়ের ঠিক রাখে না, কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনা—কিন্তু একই মানুষ ভালো গান গাইবে, আবার সময়েরও ঠিক রাখার আদর্শ দায়িত্বপালন হবে—এতটা আশা করা যায়না। রতনের আমি ভক্ত। সুতরাং আমি প্রাণপণে বউদিদের নিন্দের প্রতিবাদ করতে লাগলাম। কিন্তু বউদিরা ওসব গানটানের দিকেই যাচ্ছেনা। শুধু ঐ দায়িত্বজ্ঞানটার ওপরই সব জোর। তখন আমি বললাম, রতনের দায়িত্বজ্ঞান নেই কে বলল? গতবছর সেই যে আমরা পুরী গেলাম— রতনই তো আমাদের বাড়ি ঠিক করে দিল!

বড়োবউদি বললেন, রতন বাড়ি ঠিক করে দিয়েছে? আমি বিশ্বাস করিনা। আমি বললাম, সত্যিই! রতনের কথাতেই তো আমরা দীঘা না গিয়ে পুরী গেলাম। রতন বাড়ি ঠিক করে দেবে বলেছিল—আমিও প্রথমটায় ঠিক বিশ্বাস করিনি—কিন্তু রতন ওর এক বন্ধুকে চিঠি লিখে রেখেছিল— স্বর্গদ্বারে চমৎকার বাড়ি—ভাড়া লাগলনা —এমনকী পৌঁছে দেখলাম আমাদের জন্য খাবারদাবার রেডি। রতনের অফিসের ম্যানেজারের বাড়ি—

— সত্যি বলছ?

রতনের নিন্দে থামাবার জন্য রতনের দায়িত্বজ্ঞানের এই কাহিনীটা বলার প্রেরণা আমার ভেতর থেকেই কে যেন আমায় দিয়ে দিল। ঘটনার কাঠামোটা তো সত্যিই। আমরা ঠিকই পুরী গিয়েছিলাম, রতন ছিল আমাদের সঙ্গে—ঠিক করেছিলাম কোন হোটেলে থাকব। কিন্তু স্টেশনেই রতনের অফিসের ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা হল—তিনি কলকাতায় ফিরছেন সপরিবারে। তিনিই উৎসাহিত হয়ে বললেন, স্বর্গদ্বারে একটা বাড়ি তিনি অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে দুমাসের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশেষ কারণে একমাসের পরই তিনি ফিরে যাচ্ছেন—সুতরাং সেই বাড়িতে আমরা অনায়াসে একমাস থাকতে পারি। বাকি অংশটা রং চড়ানো হলেও রতনের জন্যই তো আমরা বাড়িটা পেয়েছিলাম।

ছোটোবউদি বললেন, সত্যি, রতন পুরীতে বাড়ি জোগাড় করে দিতে পারে নাকি—আমার দাদা বউদি পুরী যাবেন বলেছিলেন— তা হলে রতনকে বলতে হবে তো!

আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সর্বনাশ, এদিকটা তো আমি ভেবে দেখিনি! আজ বিকেলেই রতনের কাছে ছুটতে হবে। রতনের প্রশংসা করতে গিয়ে আমিই তার বিপদের কারণ ঘটালাম।

এইসব অকারণ মিথ্যে অকারণেই অনেকসময় ধরা পড়ে যায়। প্রথম ঘটনায় আবার ফিরে আসি। শান্তামাসির বাড়ির টেলিফোন আবার ঠিক হয়ে গেল, আমার আর দায়িত্ব রইল না কিছুই। নবনীতার বিয়ে আমার মায়ের উদ্যোগেই প্রায় ঠিকঠাক। এমন সময় একদিন মা ট্যাক্সিতে আসতে-আসতে দেখলেন, কলেজের রাস্তায় নবনীতা আরও দুটি মেয়ে এবং তিনটি ছেলের সঙ্গে খুব হাসিগল্প করছে। এতে মনে করার কিছু নেই—আজকালকার কলেজের মেয়েরা বাইরে ছেলেদের সঙ্গে মিশবে, গল্প করবে—এ তো স্বাভাবিক। মা বাড়ি ফিরে হাসতে-হাসতেই বললেন, নবনীকে রাস্তায় দেখলাম, খুব বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছে, আমি আর ডাকিনি! তারপর মা শান্তামাসিকে ফোন করলেন—একথা সেকথা সাতকাহনের পর মা জিজ্ঞেস করলেন, নবনীতা বাড়ি ফিরেছে কিনা। ফিরেছে শুনে মা টেলিফোনেই ফিসফিসিয়ে বললেন, দ্যাখ শান্তা, নবনীকে যখন মাস্টার এসে পড়ায়—তখন তোরা সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে যাসনা! আজকালকার ছেলেমেয়ে —যতই ভালো হোক…নবনী’ অবশ্য সোনার টুকরো মেয়ে কিন্তু বলা তো যায় না—কখন কী বিপদ হয়ে যায়—খবরের কাগজে যা এক-একখানা মাঝে-মাঝে বেরোয়।

—শান্তামাসি অবাক হয়ে বললেন, নবনীকে তো এখন আর কেউ পড়ায়না।

–কেন, এই যে নীলু দেখে এল গত সোমবার?

—গত সোমবার? অসম্ভব!

—হ্যাঁ, নীলু নিজের চোখে দেখে এসেছে—সেই মাস্টার নবনীকে পড়াচ্ছে, তোরা তখন টালিগঞ্জে গিয়েছিলি—

তারপর কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। আবার সেই দৃশ্য, আমি আমার ঘরে, হাতে বই, আমার সামনে রাশিয়া, আমেরিকার মতন দুই বিশাল শক্তি, মা আর মাসিমা। ‘শান্তামাসি : নীলু, তুই নিজের চোখে দেখেছিলি? মা : তুই না দেখে থাকলে শুধু-শুধু কেন মিথ্যে কথা বললি? আমি আর কী উত্তর দেব? কোন যুক্তি নেই, কোন উদ্দেশ্য নেই—আমি যে এমনিই বলেছিলাম—সেকথা তো ওঁদের বলা যায়না! সুতরাং বোকার মতন ফ্যালফ্যাল করে হাসতে-হাসতে বললাম, কী যে হয়েছ তোমরা, একটু ইয়ার্কিও বোঝনা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *