১২
ছেলেবেলায় মা বলতেন, অচেনা জলে কখনও স্নান করিসনি। জলের আবার চেনা-অচেনা কী, সব জলই তো সমান। আসলে, মা হয়তো বলতেন, অচেনা পুকুরে। পুকুর বা পুষ্করিণী কথাটা কী যে-জায়গার মধ্যে জল থাকে সীমাবদ্ধ আয়তনের নাম, না সেই জলটুকুরই নাম, আমি ঠিক জানিনা। তবে, কোন অচেনা জায়গায় গিয়ে পুকুরে স্নান করতে, কোন রোগের ভয়ে নয়, বা সাঁতার জ্ঞানের অভাবে নয়—আমি পূর্ববাংলার নদীনালার দেশ থেকে প্রায় সাঁতারে এসেছি কলকাতা—সুতরাং ডুবে মরার ভয় নেই, কিন্তু তবু যে-কোন অজানা পুকুরে স্নান করতে, বিশেষত যদি আকারে একটু বড়ো এবং জলের রং কালো হয়, আমার ভয়-ভয় করে। মনে হয় পুকুরের ঠিক মাঝখানে কোন অজ্ঞাত চরিত্রের অতিকায় প্রাণী লুকিয়ে আছে। সেই জন্তুর চেহারাটা কল্পনা করতে পারিনা বলেই ভয়ে আরও গা ছমছম করে। জানা শত্রুর চেয়ে অজানা শত্রু হাজারগুণ ভয়াবহ।
কোন মানুষকে একবার অপয়া বলে ঘোষণা করলে যেমন আর সে অপবাদ কখনও ঘোচেনা, যে-কোন অঘটনের জন্য কোন-না-কোন সূত্রে সেই লোকটি দায়ী হয়ে যায়, সেইরকম পুকুর সম্বন্ধেও একবার ‘রাক্ষুসে’ বা ‘সর্বনেশে’ নাম রটে গেলে, সে কলঙ্ক আর মুছে ফেলার কোন উপায় নেই। এমন কোন দিঘি বা পুষ্করিণী নেই, যেখানে দু-একটা মানুষ বা বাচ্চা ডুবে মরেনি, মানুষ তো কতরকমভাবেই মরে, পুকুরে ডুবে মরার মধ্যে এমন আশ্চর্য কী আছে, তবু পাড়ার কোন প্রাজ্ঞ পিসিমা যদি উচ্চারণ করে ফেলেন ‘ও পুকুরটা রাক্কুসে, প্রত্যেক বছর একটা করে মানুষ নেয়—’ তাহলে তৎক্ষণাৎ সে কথা রটে যাবে, এবং স্থান পেয়ে যাবে ইতিহাসে। উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কের পুকুর সম্পর্কে আমরা ছেলেবেলায় গুজব শুনেছি, ওর মধ্যে কী একটা অদ্ভুত প্রাণী আছে, যা প্রতিবছর দুটো করে বাচ্চা ছেলে খায়। একবার নাকি কুড়ি হাত লম্বা একটা বিকট জন্তু জল থেকে উঠে এসে লোকজনকে তাড়া করে আবার জলে নেমে যায়। অবশ্য, সে-জন্তু আমরা দেখিনি, দেখেছে এমন লোকের সঙ্গেও দেখা হয়নি, কিন্তু প্রতি বছর এখনও দুটো করে ছেলে মরছে ঠিকই।
যাইহোক, আমাদের আগের বাড়িতে একটা বেশ বড়ো পুকুর ছিল। অবশ্য পুকুরটা ঠিক বাড়িতে নয়, এবং বাড়িটাও আমাদের নয়। করপোরেশনের এলাকা একটু ছাড়িয়ে, কোন ধনী জমিদারের একদা যে প্রমোদ-বাগানবাড়ি ছিল, এখন দৈন্যদশায় সেটাতে অনেকগুলি ফ্ল্যাট বানানো, তারই একটাতে আমরা ছিলাম। বাড়ির পাশে একটা শ্রীহীন বাগান, সেখানে দু-একটা দুর্লভজাতীয় ফুলগাছের সঙ্গে অজস্র আগাছার ঝোপ, তার ওপাশে পুকুর—একদা চারদিক পাঁচিল ঘেরা ছিল নিশ্চিত, এখন দূরের রাস্তার গাড়োয়ান গাড়ি থামিয়ে বলদজোড়াকে এ-পুকুর থেকে জল খাইয়ে নিয়ে যায়।
সারা গ্রীষ্মকালটা ওখানে স্নান করতাম। জল বেশ হাল্কা ও ঠাণ্ডা, তাছাড়া শ্যাওলা ছিলনা, একবার সাঁতার কেটে এপার-ওপার হয়ে এলে শরীর ঝরঝরে হয়ে যেত।
সেই পুকুরটা সম্পর্কে হঠাৎ একবার অপয়া বা সর্বনেশে বদনাম রটে গেল। একাট চোদ্দ-পনেরো বছরের ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ফেলে পুকুরের মাঝখান থেকে একডুবে মাটি তুলতে গিয়েছিল। যখন ভেসে উঠল, হাতে মাটি নেই, কিন্তু কপাল ও নাক জুড়ে অনেকখানি কাটা, ছেলেটা কোনমতে পাড়ে সাঁতরে এসে অতখানি রক্তক্ষরণের পর অবশ হয়ে পড়ল। নিশ্চয়ই কোন ইঁটের টুকরো বা গজাল বা পাথরে লেগে—কিন্তু লোকে অন্যরকম সন্দেহ করল। বিশেষত, ত্রিলোচনবাবু, যিনি প্রত্যেকদিন ঐ পুকুরের একগলা জলে দাঁড়িয়ে গঙ্গাস্নানের স্তব পড়তেন, ঈষৎ গম্ভীরভাবে বললেন, এ-পুকুরটায় দোষ আছে হে। আমি অনেকদিন থেকেই লক্ষ্য করছি! কুমীর বা কচ্ছপ না-ওরা লুকোতে পারেনা, জানান দেয়ই। ওসব আগেকার দিনের জমিদারদের ব্যাপার—কত লোককে মেরে হয়তো পুঁতে রেখেছিল এই পুকুরেই। নইলে, সেদিন একটা মরা শালিক ভাসছিল কেন? পুকুরে কেউ কখনও মরা পাখি দেখেছে এর আগে?
ত্রিলোচনবাবুর বলার ভঙ্গি এমন, যে, শুনলেই বিশ্বাস করতে মন চায় বিশেষত শেষের কথাটা। সত্যিই কয়েকদিন আগে পুকুরে একটা মরা শালিক ভাসছিল। কীরকম যেন শুকনো ধরনের মরা, শরীরে কোন আঘাত নেই, অর্থাৎ কেউ উড়ন্ত পাখিটাকে মারেনি। তাহলে কি আপনিই মরে পড়েছিল? আজ পর্যন্ত, কোন স্বাভাবিকভাবে মৃত পাখি আমি দেখিনি। প্রেমেন্দ্র মিত্রের সেই গল্প ‘চড়ুই পাখিরা কোথায় যায়?’ বহুবার ভেবেছি। বাড়িতে কত চড়ুই পাখি, ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধে, অথচ একটা মরা চড়ুই, স্বাভাবিকভাবে হার্ট ফেল করে বার্ধক্যে মরা, কোনদিন বাড়িতে দেখিনি। মরার আগে সব পাখিরাই কোন এক অনির্দিষ্ট দেশে চলে যায় মরতে।
এরপর ঐ পুকুরে স্নানার্থীদের সংখ্যা যত কমতে লাগল, তত বাড়তে লাগল গুজব। কে নাকি, দুপুরে একলা ঘাটে গিয়ে দেখেছে জলের মাঝখান থেকে অসংখ্য বুড়বুড়ি উঠছে। আরেকজন সত্যিই দেখেছে একটা কোন বিশাল প্রাণী জলের মধ্যে থেকে দাপাদাপি করছে। অসম সাহসিনী মাদ্রাজী বউ এসব শোনা সত্ত্বেও হাসতে-হাসতে সাঁতরে পুকুর পার হতে গিয়ে পায়ে ক্র্যাম্প ধরে—এবং তার ধারণা কেউ তার পা টেনে ধরেছিল।
আমাদের নিচের ফ্ল্যাটে থাকত তপন, পোর্ট কমিশনে কাজ করে, ক্রিকেট খেলা চেহারা, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও মুর্গীর মাংস রান্না ওর জীবনের এই দুটিমাত্র নেশা, একদিন আমাকে ডেকে বলল, কী আপনি যে আর পুকুরে স্নান করতে আসেননা, আপনিও ভয় পেলেন নাকি? স্বীকার করতে লজ্জা হল, তবু সত্যিই আমি ভয় পেয়েছিলাম। পুকুরটা আমার কাছে আবার কী রকম অচেনা হয়ে গেছে। পুরোনো কালো জল, সারাদিন আজকাল আর স্নানার্থীদের দাপাদাপি থাকে না বলে শান্ত ও গম্ভীর, দেখলেই আমার কীরকম রহস্যময় যেন মনে হয়। আমাদের বারান্দা থেকে দূরে পুকুরটা একটু-একটু দেখা যায়। একদিন পড়ন্ত বিকেলে সেদিকে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলাম। কিছুই দেখিনি, তবু চমকে উঠেছিলাম। কিছু একটা দেখব এই প্রত্যাশা, অথবা অযৌক্তিক অলৌকিকের প্রতি আমার গোপন বিশ্বাস জন্মানোর লজ্জাতেই চমকে উঠেছিলাম হয়তো।
কাঁধে তোয়ালে, ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে তপন আমাকে বলল, আসুন, নেমে আসুন।
আমি বললাম, না, এখন বর্ষা নেমে গেছে, ঐজন্যই আর পুকুরে যেতে ইচ্ছে হয় না আর কী।
যাঃ, এ আর কী এমন বর্ষা। আসুন, নেমে আসুন। আমি তো রয়েছি, ভয় কী!
শেষের কথাটাই আমার আত্মাভিমানে আঘাত দিল। যেতে হল। পুকুরে যাবার পথে তপন সদ্যদেখা কী যেন একটা সিনেমার গল্প বলতে লাগল আমায়, জলে নেমেও সেই গল্প, কখন যে আমরা পুকুরটাকে ভুলে থেকে স্নান সেরে উঠে এলাম খেয়ালই নেই। এইরকম পরপর তিনদিন গেলাম, নির্দোষ, সরল জল, কোথাও কোন রহস্য নেই, আমরা দুজন যুবক স্নান সেরে আসি। যদিও আমরা দুজনেই হয়তো মনে-মনে লজ্জিত হয়ে ছিলাম একটা ব্যাপারে, আগে একবার অন্তত পুকুরটা সাঁতরে পার হয়ে আসতাম, এখন মাঝখান পর্যন্তও যাইনা।
এরপর কয়েকদিন যাইনি, তিনদিন প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি, স্নান না-করে বিছানায় শুয়ে-শুয়ে খিচুড়ি খাবার দিন। হঠাৎ শুনতে পেলাম, তিনদিন ধরে তপন বাড়ি নেই। বাড়ির লোক কিছুই জানেনা কোথায় গেছে। মেঘ সরে গিয়ে চতুর্থ দিনের রোদে আমরা তপনের জন্য সত্যিই ব্যস্ত হয়ে উঠলাম। এরকম না বলে-কয়ে সে তো কোথাও যাবেনা। ত্রিলোচনবাবু বললেন, পুলিশে খবর দাও হে, আর পুকুরে জাল ফেলো!
পুলিশে খবর দেওয়া হল, কিন্তু পুকুরে জাল ফেলতে হলনা। তার আগেই তপনের মৃতদেহ ভেসে উঠল। জলে ফুলে বীভৎস চেহারা। সেই প্ৰথম আমি মৃতদেহ দেখলাম, যাকে আমি জীবন্ত অবস্থায় চিনতাম। আমাদের পরিবারে তখনও কোন মৃত্যু আসেনি। পুলিশ খুব পুলিশী কায়দায় জিজ্ঞেসবাদ করতে লাগল সকলকে, প্রথমেই ত্রিলোচনবাবুকে, আমরা সবাই বিষম অস্বস্তিতে রইলাম! এ কী ধরনের মৃত্যু তপনের, যাতে ওর সম্পর্কে শোক করার বদলে আমাদের নিজেদের সম্বন্ধেই উদবিগ্ন হতে হচ্ছে। অবশ্য, বেশিক্ষণ এরকম রইল না, তপনের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল সকালে, বিকালের দিকে তপনের বউদি বুকশেলফের পিছন থেকে চিঠিটা খুঁজে পেলেন। চিঠিটায় তিনদিন আগের তারিখ দেওয়া, বোধহয় ঝড়ে উড়ে পড়ে গিয়েছিল টেবিল থেকে। সেই মামুলি এবং অতি প্রয়োজনীয় চিঠি, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়…’। আমরা সকলে নিশ্চিন্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ তপনের সম্বন্ধে সত্যিকারের দুঃখিত হতে শুরু করলাম। যদিও তপনের রুচির প্রশংসা করতে পারিনি আমি, মরতে হলে কত ভদ্ৰ উপায় আছে, ঘুমের ওষুধ, তার বদলে অমন বিশ্রীভাবে ডুবে মরা! তাছাড়া ডুবলই বা কী করে, অমন ভালো সাঁতার জানত!
যাইহোক, এরপর পুকুরটা সম্বন্ধে বদনাম কেটে যাওয়া উচিত ছিল, কারণ ওর মৃত্যুর জন্য জলের কোন দোষ নেই। তাছাড়া, জলের মধ্যের অদেখা জন্তু তো আর ওকে দিয়ে চিঠি লেখায়নি! কিন্তু পুকুরটা হয়ে গেল সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। কেউ আর ওর ধারও মাড়ায়না, সাঁতার জানা সত্ত্বেও তপন ডুবে মরল কী করে, এ রহস্যই সকলকে ভয় দেখায়।
অথচ, খুব সহজ। হয় তপন গলায় ভারী কিছু বেঁধে নিয়েছিল, তিনদিন পর সেটা ছিঁড়ে যেতে মৃতদেহ ভেসে ওঠে। অথবা…অথবা, আর-একটা কথা আমার বারবার মনে হতে লাগল, হয়তো তপন ঝোঁকের মাথায় পুকুরের মাঝখানে ডুব দিয়ে দেখতে গিয়েছিল—কেন সেই ছেলেটার নাক ও কপাল কেটেছিল— তারপর মনে ভয় থাকার জন্যই হয়তো দম আটকে যায়, কিংবা কিছুতে জামা—কাপড় জড়িয়ে…কী জানি। আমার এই দ্বিতীয় সন্দেহটার কথা দু-একজনকে বলতেই তারা তৎক্ষণাৎ মেনে নিল এবং এটাই মুখে-মুখে ছড়িয়ে গেল যে, পুকুরের মাঝখানে একটা ভয়ংকর কিছু আছে-তপন সেটাই ডুব দিয়ে দেখতে গিয়ে মারা যায়। উল্টে আমিই তখন প্রতিবাদ করে বলি, তাহলে তপন চিঠি লিখল কেন? কেউ সে কথা শোনেনা। পুকুরটা সম্পর্কে চরম দুর্নাম ছড়াবার জন্য দায়ী হলাম আমিই।
তপনের মৃত্যু আমাকে সাহসী করে দিয়েছিল। পুকুরটা সম্বন্ধে সব কুসংস্কারই তখন অবিশ্বাস করতে শুরু করেছি। অতদিনের পুকুর—ওর মধ্যে আবার জন্তুজানোয়ার কী থাকবে? থাকলে কেউ-না-কেউ দেখতই। বড়জোর মাঝখানে কোন বাঁশ বা পাথরের টুকরো পোঁতা আছে। আমার ইচ্ছে হত এক—একবার, আমিও খুব খারাপ সাঁতার জানিনা, সাবধানে একবার ওখানে ডুব দিয়ে দেখে আসি, ওখানে কী আছে, তারপর লোকের ভুল ভেঙে দি।
তার বদলে আমরা ও-বাড়ি ছেড়ে দিলাম। আমিই উদ্যোগী হয়ে খুব তাড়াতাড়ি খোঁজাখুঁজি করে, অমন খোলামেলা বাড়ি ছেড়ে চলে এলাম আবার করপোরেশন এলাকার মধ্যে। বাড়ির লোক অবাক হয়ে গিয়েছিল আমার ব্যস্ততা দেখে, কিন্তু আমি সত্যিই ওখানে থাকতে চাইনি আর। জলের রহস্য জানতে আমার আর ইচ্ছে হয়না। এখন করপোরেশনের কলের ছিরছিরে জলই আমার ভালো লাগে।
ও-বাড়িতে শেষ ক’দিন আমার ইচ্ছে হতো পুকুরে স্নান করতে। মা দিতেননা কিছুতেই। অথচ, কুসংস্কার মেনে একটা নিরীহ পুকুরে স্নান না-করার কী মানে হয়। আমি মাঝে-মাঝে সন্ধেবেলা পুকুরপাড়ে যেতাম। বাঁধানো ঘাটের ওপর বসে সিগারেট ধরাতাম। পুকুরের যেখানটায় তপনের দেহটা ভেসে উঠেছিল সেদিকে তাকালে কীরকম বিশ্রী উদাসীন লাগত। হঠাৎ একদিন কান্নার শব্দ। দেখি ঘাটের পাশে মাঠের ঘাসে বসে একটি যুবতী মেয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তখন সন্ধের আবছা অন্ধকার। মেয়েটি বোধহয় আমাকে দেখতে পায়নি। আমি তৎক্ষণাৎ সে-জায়গা ছেড়ে উঠে এলাম, মেয়েটির মুখ দেখার চেষ্টাও না-করে।
নিছক ভদ্রতাবোধে চলে আসিনি। ভয়ে! ভয় হয়েছিল, মেয়েটিকে যদি কোন কারণে চিনতে পেরে যাই, যদি হঠাৎ মনে পড়ে তপনের মৃত্যুর সঙ্গে ওর কোন সম্পর্ক—তা হলেই তো মহামুশকিল। পুকুরের জলের রহস্যের বদলে চোখের জলের রহস্য নিয়ে তখন আমাকে আবার মগ্ন হতে হবে। তাছাড়া মেয়েটি যদি বলে, আপনি বিশ্বাস করেন, পুকুরের মাঝখানে কী আছে—এটা জানার জন্যই শুধু তপন মরেছে? আপনি একবার ডুব দিয়ে দেখে আসুন না! সৰ্বনাশ, এই রহস্য কিংবা রহস্য উন্মোচন করতে আমাকে কতদূর জটিলতায় চলে যেতে হবে ভাবতেই আমার ভয় হয়েছিল।
তারপরই ও-বাড়ি থেকে চলে আসি। এখন জলের আর কোন চেনা-অচেনা নেই। কোন রহস্য নেই। কল দিয়ে কেঁচো বা সাপ বেরুলেও এখন আর নতুন বিস্ময়ের কিছু থাকবেনা। সরু জলের ধারায় আমার স্নান করার সময় পুরো শরীরটাও ভেজে না—কিন্তু তাতেও দুঃখ নেই তবু তো আমাকে কোন জলের রহস্য ভেদ করতে হবেনা।