নীলমানুষ ও ছোট্ট বন্ধু
কেন যে মা ওকে জন্ম থেকেই গুটুলি বলে ডাকতো? সেই নামটাই ওর কাল হলো।
গুটুলির বয়েস বাড়লেও তার শরীরটা আর বাড়ে না। তার যখন সাত বছর বয়েস তখন তাকে দেখাতো চার বছরের ছেলের মতন। দশ বছর বয়েসে দেখাতো সাত বছরের ছেলের মতন। চোদ্দ বছর বয়েসে তাকে সবাই মনে করতো দশ বছরের ছেলে। তারপর যখন তার কুড়ি বছর বয়েস হলে গেল তখনও তার চেহারা দশ বছরের ছেলের মতই রয়ে গেল। সবাই বললো, গুটুলি আর বাড়বে না। তার চেহারা ওইখানেই থেমে থাকবে।
গুটুলির বুদ্ধি কিন্তু ঠিকই বেড়েছে। এমনকি কুড়ি বছর বয়েসের সাধারণ ছেলেদের চেয়েও তার বুদ্ধি অনেক বেশি। সে মুখে মুখে শক্ত অঙ্ক কষে দিতে পারে। মানুষের মুখ দেখেই গুটুলি বলে দিতে পারে সে সত্যি কথা বলছে না মিথ্যে কথা। সে সাঁতার জানে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্যাডেল করে সাইকেল চালাতে পারে। ইংরিজি কাগজ পড়ে খেলার খবর বুঝতে পারে, তবু কেউ তাকে পুরোপুরি মানুষ হিসেবে স্বীকার করে নিতে চায় না।
তার একটা ভালো নামও আছে, তার পুরো নাম পরেশচন্দ্র মাইতি। কিন্তু নামটা কেউ মনে রাখে না। লোকেরা তাকে গুটুলি, গুটগুটে, গুলগুলিয়া এই সব যা ইচ্ছে নামে ডাকে। পাড়ার ছেলেরা যখন তখন চাঁটি মারে তার মাথায়। ইস্কুলে উঁচু ক্লাসে ওঠার পর অন্য ছেলেরা তাকে এমন জ্বালাতন—পোড়াতন করতো যে সে ইস্কুলে পড়াই ছেড়ে দিল।
এমনকি গুটুলির ছোট ভাই বীরেশ, যার বয়েস ষোলো বছর, সেও তাকে দাদা বলে মানতে চায় না। যখন তখন হুকুম করে।
গ্রামের ছেলেদের অত্যাচারে গুটুলি এক এক সময়ে কেঁদে ফেললেও কেউ তাকে দয়া করে না, সবাই হাসতে শুরু করে তখন। কাঁদলে নাকি তার চেহারাটা আরও মজার দেখায়। সবাই তাকে আরও কাঁদাবার চেষ্টা করে।
এখন আর গুটুলি কাঁদে না। মনে মনে সকলের ওপর তার বিষম রাগ। গায়ের জোরে পারবে না জেনেও এক একদিন সে বড়সড় কোনো ছেলের দিকে রাগ করে তেড়ে যায়, পেটে ঘুষি মারে। তাতেও সবাই হাসতে হাসতে বলে, বামন ক্ষেপেছে! বামন ক্ষেপেছে! তারপর দু’তিন জন গুটুলিকে চ্যাংদোলা করে তুলে জলে ফেলে দেয়।
গুটুলি একা একা কোনো জায়গায় বসে মনে মনে বলে, একদিন সব প্রতিশোধ নোবো! একটা কোনো মন্ত্র পেয়ে আমার এমন গায়ের জোর হয়ে যাবে যে সবাই আমার কাছে মাথা নিচু করে থাকবে। তখন সবাই বুঝবে!
গুটুলিকে খুব ভালোবাসে তার মা। গুটুলিকে কেউ মারধোর করলে বা খোঁচালে মা তাড়াতাড়ি এসে তাকে ঘরে নিয়ে যায়। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, নারে লক্ষ্মীসোনা, কাঁদিস না! তুই একদিন ঠিক বড় হয়ে উঠবি। চেহারায় না হোস গুণে বড় হবি অন্যদের থেকে। তখন আর কোনো দুঃখ থাকবে না!
গুটুলির যখন একুশ বছর বয়েস, তখন মাত্র দু’দিনের অসুখে ভুগে তার মায়ের মৃত্যু হলো। ছোটবেলা থেকেই গুটুলি তার বাবাকে দেখেনি। পৃথিবীতে তাকে ভালোবাসার আর কেউ রইল না।
গুটুলি অঙ্ক আর হিসেবপত্তর ভালো জানে বলে পাশের গ্রামের একটা মুদিখানায় চাকরি পেল। এই কাজে তো গায়ের জোর লাগে না, বসে বসে জিনিস—পত্র মাপা আর ঠিকঠাক দামের হিসেবপত্তর বুঝে নেওয়া। প্রথম প্রথম নতুন লোকেরা তাকে ছেলেমানুষ ভেবে ঠকাবার চেষ্টা করতো, কিন্তু সর্ষের তেলের কিলো আঠারো টাকা হলে দেড়শো গ্রামের দাম কত হয় তা গুটুলি এক মুহূর্তে বলে দিতে পারে। দু’টাকা বাষষ্টি পয়সার জিনিস কিনলে কুড়ি টাকার নোটে কত ফেরত দিতে হবে তা গুনতে তার একটুও ভুল হয় না।
দোকানের মালিক গুটুলির কাজে খুশিই ছিল। ওই দোকান ঘরেই গুটুলি রাত্তিরে শোয়, মালিকের বাড়ি থেকে তার জন্য দু’বেলা খাবার আসে।
এই রকম ভাবে কয়েক মাস বেশ চলছিল। কিন্তু এই সুখও গুটুলির ভাগ্যে বেশিদিন সইলো না।
একদিন দোকানের মালিক জিনিপত্র কিনতে শহরে গেছে। গুটুলি একাই দোকান চালাচ্ছে। সন্ধেবেলা দামোদর নামে একটা লম্বা মতন লোক এসে গুটুলিকে হাতছানি দিয়ে দোকানের বাইরে ডেকে বললো, এই বিটলে পাঁচটা টাকা রোজগার করতে চাস?
গুটুলি বললো, আমার নাম বিটলে নয়। আমি কারুর টাকাও চাই না!
দামোদর বললো, ও ভুল হয়েছে, তোর নাম গুটলে তাই না?
গুটুলি বললো, আমার নাম পরেশচন্দ্র মাইতি।
দামোদর বললো, ভাগ! এইটুকু চেহারার অতবড় নাম? যা বলছি তাই শোন! খবর পেয়েছি, আজ আর তোর ওই দোকানের মালিক শহর থেকে ফিরবে না। মাঝরাত্তিরে তুই দোকানের দরজা ভেতর থেকে খুলে দিবি। সে জন্য তুই পাঁচ চাকা পাবি।
গুটুলি মানুষ দেখলেই চিনতে পারে, সেইজন্য সে আগে থেকেই জানে যে ওই দামোদর একটা চোর কিংবা ডাকাত। ওর হাত থেকে বাঁচবার একটা উপায় করতে হবে।
সে বললো, দরজার অনেক উঁচুতে তালা। সেখানে আমার হাত যায় না। আমি কী করে দরজা খুলবো?
দামোদর বললো, মালিক না থাকলে তালা লাগায় হারাধন। তারপর চাবি থাকে তোর কাছে। সে খবর আমরা রাখি। তুই হারাধনকে বলবি তোর হিসি পেয়েছে, বাইরে যেতে হবে। ওকে চাবি দিয়ে বলবি তালা খুলে দিতে। তারপর আমরা যা করবার করবো!
গুটুলি বললো, তারপর মালিক এসে যখন আমাকে জিজ্ঞেস করবে যে তালা খোলার চাবি দিল কে?
দামোদর বললো, আমরা তোর হাত—পা বেঁধে রেখে যাবো। তা হলে তার নামে দোষ পড়বে না। সব দোষ পড়বে হারাধনের নামে, বুঝলি? মনে থাকে যেন। ঠিক রাত্তির সাড়ে বারোটায়।
গুটুল আর কিছু না বলে দোকানে ফিরে এলো। হারাধন নামে যে একজন দোকানে কাজ করে, সে বোকা—সোকা মানুষ। সেও এই দোকানে শোয়। মালিকের বাড়ি থেকে সে—ই গুটুলির জন্য খাবার এনে দেয়।
সেদিন খাওয়া—দাওয়ার পর গুটুলি বললো, হারাধনদা, আজ রাত্তিরটা খুব সাবধানে থেকো। সারা রাত কিছুতেই দরজা খুলবে না। কেউ এসে দরজায় খুটখাট করলেই আমরা দু’জনে মিলে খুব চ্যাঁচাবো, যাতে পাড়ার লোক ছুটে আসে। দু’জনকেই জেগে থাকতে হবে।
এই কথা বললো বটে, কিন্তু একটু পরেই ঘুমে টেনে এল গুটুলির চোখ। সে কিছু বুঝবার আগেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়লো।
গুটুলির ঘুম ভাঙলো অনেক লোকের গোলমালে। ধড়মড় করে উঠে বসেই সে দেখলো সকাল হয়ে গেছে। দোকান একেবারে ফাঁকা, সব কিছু চুরি হয়ে গেছে। এক পাশে পড়ে আছে হারাধন, তার হাত—পা—মুখ বাঁধা। দোকানের সামনে অনেক লোক ভিড় করে আছে।
গুটুলির খাবারের মধ্যে যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তা সে নিজেই বুঝতে পারেনি। হারাধনকে যতটা বোকা—সোকা সে ভেবেছিল, ততটা সে নয়। মানুষ চেনা অত সহজ নয়।
গুটুলির কথা কেউ বিশ্বাস করলো না! সবাই ভাবলো, গুটুলিই চোরদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দরজা খুলে দিয়েছে। দোকানের মালিক ফিরে এসে ধপাধপ করে মারতে লাগলো তাকে। কেউ বললো পুলিশে দাও! কেউ বললো, বেঁটের গাঁটে গাঁটে শয়তানি বুদ্ধি!
শেষ পর্যন্ত পুলিশে দেওয়া হলো না বটে কিন্তু দোকানের মালিক তাড়িয়ে দিল তাকে গ্রাম থেকে।
গ্রামের বাইরে একটা তালগাছের নিচে দাঁড়িয়ে গুটুলি প্রতিজ্ঞা করলো, একদিন সে ফিরে এসে প্রতিশোধ নেবে। ওই দামোদর, হারাধন, দোকানের মালিক কারুকে ছাড়বে না!
দুই
মনের দুঃখে বনে চলে গেল গুটুলি।
তা বনে যাওয়াও কি সোজা? জনমানবহীন সেরকম ঘন জঙ্গলও তো আজকাল বেশি নেই। নিজের গ্রাম আর পাশের দু’তিনখানা গ্রাম ছাড়া আর কোথাও কখনো সে যায়নি। তবু গুটুলি ঠিক করেছিল সে আর কোনোদিন নিজের গ্রামে ফিরে যাবে না। মানুষের হাতে অপমান আর অত্যাচার সহ্য করার চেয়ে বনে গিয়ে বাঘ—সিংহের পেটে যাওয়া ভালো।
গ্রামের বাইরে মাঠের শেষে যেখানে আকাশ এসে মিশেছে সেই দিকে হাঁটতে শুরু করে দিল সে। একটার পর একটা মাঠ পেরিয়ে যায় তবু আকাশ কাছে আসে না।
মাঠ পেরিয়ে গ্রাম আসে, কিন্তু গুটুলি কোনো গ্রামে ঢোকে না। সে আর কোনো মানুষকে বিশ্বাস করে না। তার চেহারা ছোট, তার গায়ে জোর নেই বলে কেউ তাকে গ্রাহ্য করে না। কিন্তু তার বুদ্ধি আছে।
বনে গিয়ে গুটুলি তপস্যা করবে। আগেকার দিনে মুনি—ঋষিরা তপস্যার জোরে দেবতাদের কাছ থেকে কত রকমের বর পেয়েছে। একালেও বা সেরকম হবে না কেন? গুটুলি এমন কঠোর তপস্যা করবে যে কোনো না কোনো দেবতাকে আসতেই হবে। সে লম্বা হবার বর চাইবে।
ঠিক মতন খাওয়া নেই, ঘুম নেই, বিশ্রাম নেই—গুটুলি হাঁটতেই লাগলো। সে পরে ছিল একটা খালি হাফ প্যান্ট আর কলার দেওয়া নীল গেঞ্জি। প্যান্ট ছিঁড়ে গেল ফালাফালা হয়ে, ধুলো কাদা মেখে গেঞ্জিটা এমন হলো যে রং চেনাই যায় না। খুব তেষ্টা পেলে সে নদীর জল খায়, খিদে পেলে কবে সে ভালো ভালো খাবার খেয়েছে সে সব কথা চিন্তা করতে করতে তেঁতুল গাছের পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খায়।
এইভাবে কতদিন কেটে গেল কে জানে। এক সময় গুটুলি একটা জঙ্গল দেখতে পেল। প্রথমে জঙ্গলটা পাতলা পাতলা, এখানে ওখানে কয়েকটা করে গাছ। কাছাকাছি কিছু লোকের বাড়ি—ঘরও আছে কিন্তু যতই সে ভেতরে ঢুকতে লাগলো ততই জঙ্গলটা খুব গভীর। গুটুলি আরও ভেতরে যেতে চায়, যেখানে কোনো মানুষজন যায় না। দিনের বেলা জঙ্গলে প্রায় কোনো সাড়া—শব্দ থাকে না। সন্ধের পরই জঙ্গল যেন জেগে ওঠে। ডাকতে থাকে অসংখ্য ঝিঁঝি—পোকা। শুকনো পাতার ওপর খসখস, সরসর শব্দ হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে মাঝে দেখা যায় আলোর ফুটকি, সেগুলি জোনাকি না বাঘ—ভাল্লুকের চোখ তা বোঝার উপায় নেই।
গুটুলি খুব একটা ভয় পেল না। সে তো জানেই বনে অনেক বিপদ আছে। কিন্তু বনে অপমান নেই।
অন্ধকারের মধ্যে আন্দাজ আন্দাজে একটা গাছ খুঁজে নিয়ে গুটুলি সেই গাছ বেয়ে উঠে গেল ওপরের একটা মোটা ডালে। তারপর সেখানে বসে রইলো। প্রথম রাতটা এই ভাবে কাটুক, তারপর কাল সকালের আলোয় বনটা ভালো করে দেখে নিতে হবে। একটা নিরাপদ থাকার জায়গা পাওয়া যাবেই। খিদেয় তার পেট জ্বলে যাচ্ছে, কিন্তু গুটুলি ভাবলো জঙ্গলে কত রকমের ফলের গাছ থাকে, কাল দিনের বেলা কিছু জুটে যাবেই।
মাঝে মাঝে গাছের তলায় কী সব জন্তু যেন দৌড়ে যাচ্ছে। খরগোশ, হরিণ কিংবা চিতাবাঘও হতে পারে। একবার ধপ ধপ শব্দ করে কী যেন হেঁটে গেল। হাতি নাকি? আওয়াজটা ঠিক মানুষের হাঁটার মতন। কিন্তু মানুষ হাঁটলে তো অত জোরে শব্দ হয় না!
একবার গুটুলির উরুর ওপর কী যেন একটা ঠাণ্ডা লাগলো। তারপর ফোঁস ফোঁস শব্দ। নিশ্চয়ই সাপ। গুটুলি জানে সাপকে বিরক্ত না করলে সাপ সহজে কামড়ায় না। সে নিশ্বাস বন্ধ করে বসে রইলো। সাপটা চলে গেল তার গায়ের ওপর দিয়ে।
রাত শেষ হয়ে যেই ভোরের আলো ফুটলো, অমনি বদলে গেল সব কিছু। দিনের আলোয় বনের মধ্যে একটুও ভয় থাকে না। কতরকম ফুল ফুটেছে, কত পাখি ডাকছে। পাখিগুলো যে এদিক থেকে ওদিক উড়ে যাচ্ছে তার মধ্যেই যেন কত আনন্দ।
গুটুলি গাছ থেকে নেমে জঙ্গলের মধ্যে অনেকটা জায়গা ঘুরে দেখলো। এক জায়গায় অনেকগুলো জাম গাছ। সেই সব গাছ একেবারে কালোজামে ভরে আছে। সেই কালোজাম খেয়েই পেট ভরিয়ে ফেললো সে। তারপরেই দেখলো আর কয়েকটা বাতাবি লেবুর গাছ। গুটুলি ভাবলো, থাক, ওগুলো বিকেলে খাওয়া যাবে।
এই জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট পাহাড়ও আছে। এক জায়গায় পাশাপাশি দুটো ছোট ছোট টিলা, নরম ঘাসে ঢাকা। একটা টিলার গায়ে একটা গুহার মতন রয়েছে। ওখানে অনায়াসে রাত্তিরে থাকা যাবে। জায়গাটা গুটুলির বেশ পছন্দ হলো।
এইবার আসল কাজ করতে হবে। একটা গাছের তলায় সে বসলো গুছিয়ে। সামনেই অন্য টিলাটার মাথায় সূর্য উঠেছে। হাওয়া দিচ্ছে মিষ্টি মিষ্টি। জ্ঞান হবার পর থেকে গুটুলির এত ভালো আর কোনো দিন লাগেনি।
হাতজোড় করে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো, হে ঠাকুর দেখা দাও! আমি মন্ত্র জানি না। কী করে তপস্যা করতে হয় তা জানি না। তবু একবার দেখা দাও! আমি বেশি কিছু চাইবো না, শুধু একটাই জিনিস চাইবো…
এই কথাগুলোই সে বলতে লাগলো বারবার। এক সময় তার চোখ বুজে এলো। তবু কথাগুলো বলে যেতে লাগলো ঠিকই।
হঠাৎ একসময় কে যেন প্রচণ্ড গর্জনে বলে উঠলো, এই!
ভয়ে একেবারে কেঁপে উঠলো গুটুলি। কে চ্যাঁচালো। মানুষেরই গলার মতন, কিন্তু মানুষের গলা কি এত জোর হতে পারে? ঠিক যেন বাজ পড়লো আকাশ থেকে।
গুটুলি দেখলো তার সামনে একটা মানুষের ছায়া। আরও মুখ তুলে দেখলো, টিলার মাথায় প্রকাণ্ড বড় একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক যেন আকাশ থেকে নেমেছে। মানুষটির গায়ের রং একেবারে ঘন নীল।
তা হলে গুটুলির ডাক শুনে এত তাড়াতাড়ি স্বর্গ থেকে নেমে এলো কোনো দেবতা! কিন্তু দেখলে যেন দেবতার বদলে দৈত্য বলেই মনে হয়। খালি গা, বুকে বড় বড় লোম, মালকোঁচা মেরে ধুতি পরা।
সেই প্রকাণ্ড মানুষটি কয়েকটা লাফ দিয়ে চলে এলো একেবারে গুটুলির সামনে। মাথাটা নুইয়ে গুটুলির দিকে অবাকভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কীরে, তুই এইটুকুনি বাচ্চা ছেলে। একা একা এই জঙ্গলে কী করছিস?
গুটুলি বললো, আমি বাচ্চা ছেলে নই, আমার বয়েস একুশ বছর। প্রভু, আমি আপনার দয়া চাইতেই এখানে এসেছি!
প্রকাণ্ড লোকটি বললো, আমার কাছ থেকে দয়া চাইতে এসেছিস? তুই কী করে জানলি আমি এখানে থাকি?
—প্রভু, আমি যে জানি, মন দিয়ে ডাকলে দেবতারা আকাশ থেকে নেমে আসেন।
দৈত্যাটা বাতাস কাঁপিয়ে হা—হা করে হেসে উঠলো। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে বললো, আমি প্রভু টভু কেউ নই। আমি তোদেরই মতন একজন মানুষ। আমার নাম রণজয়।
গুটুলি তবু হাত—জোড় করে বললো, কেন আমার সঙ্গে ছলনা করছেন প্রভু? আমি জানি আপনি আকাশ থেকে এসেছেন। আগে তো কখনো আমি দেবতা দেখিনি। আপনার গায়ের রং নীল, রামায়ণ বইতে আমি শ্রীরামচন্দ্রের গায়ের রংও নীল দেখেছি। ক্যালেন্ডারে শ্রীকৃষ্ণের গায়ের রং নীল থাকে। প্রভু, আমি শুধু আপনার কাছে একটা বর চাইবো।
লোকে যেমন পুতুল নিয়ে আদর করে সেই রকম ভাবে প্রকাণ্ড লোকটি এক হাতে গুটুলিকে তুলে নিয়ে এলো মুখের কাছে। তারপর বললো, এবারে তোকে যদি এক কামড়ে খেয়ে ফেলি?
গুটুলি বললো, যদি ইচ্ছে হয় তো তাই করুন। বর না পেলে আমি এমনিই তো আর ফিরে যাবো না ঠিক করেছি!
প্রকাণ্ড মানুষটি বললো, আশ্চর্য! সবাই আমায় দেখলে ভয়ে পালায়। এত কাছাকাছি এলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আর এই ছোট্ট মানুষটা একটুও ভয় পাচ্ছে না। তুই কী বর চাইতে এসেছিস এই জঙ্গলে!
গুটুলি বললো, প্রভু, আপনি শুধু আমাকে লম্বা হবার বর দিন। একুশ বছরের ছেলেরা যত বড় হয়। তার চেয়েও বেশি লম্বা করে দিন!
মোষের মতন ফোঁস শব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীল মানুষটি বললো, হায়রে, লম্বা হবার যে কী দুঃখ তা তো তুই জানিস না! আমার কাহিনী শুনবি? আমার নাম রণজয়। আমারও বয়েস এখন একুশ। অনেকদিন আগে আকাশ থেকে একটা গোল জিনিস খসে পড়েছিল, সেটা ছোঁয়ার ফলেই আমার এই অবস্থা। তারপর থেকেই আমার গায়ের রং নীল হয়ে যায়, আর আমার শরীরটা বাড়তে থাকে। বেড়ে বেড়ে এতখানি হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রায় ডবল। আরও কত লম্বা হবো কে জানে! এই চেহারার জন্য আমি মানুষের সামনে যেতে পারি না। আমার বাবা—মাও আমায় চিনতে পারে না! ওঃ, লম্বা হবার কী কষ্ট তুই কি বুঝবি!
লম্বা নীল মানুষ ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।
আর তাই দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো গুটুলি।
কান্না থামিয়ে নীল মানুষ বললো, এ কী হাসছিস কেন?
গুটুলি বললো, হাসবো কেন? কী অদ্ভুত মিল আমাদের দু’জনের। আমি বেঁটে বলে সবাই আমায় অত্যাচার করে, তাই আমি সব কিছু ছেড়ে জঙ্গলে চলে এসেছি। আর আপনি লম্বা বলে আপনার এত দুঃখ, আপনাকে দেখলে লোকে ভয় পায়। আপনি মানুষের কাছে যেতে ইচ্ছে করলেও যেতে পারেন না।
—ঠিক বলেছিস। তুই খুব ভালো ছেলে রে। তুই এই জঙ্গলে থাকবি আমার কাছে?
—জঙ্গল ছাড়া আর তো কোনো জায়গায় আমার থাকার জায়গা নেই।
—সেই ভালো, আজ থেকে আমরা দু’জনে বন্ধু হলাম। গুটুলি বললো, আমি যা পারিনি তুমি তা পারবে। তুমি যা পারোনি আমি তা পারবো! এতদিন আমার একজনও বন্ধু ছিল না। জঙ্গলে দেবতা খুঁজতে এসে পেয়ে গেলুম বন্ধু।
তিন
কয়েকদিন পরে জঙ্গল থেকে আবার বেরিয়ে এলো গুটুলি।
এখন সে পরে আছে সন্ন্যাসীদের মতন গেরুয়া কাপড়, মাথায় পাগড়ি, এক হাতে একটা কমণ্ডুল আর অন্য হাতে ত্রিশূল। জঙ্গলের মধ্যে অনেক কালের একটা ভাঙা শিব মন্দির আছে, সেইখানে এই সব জিনিস পেয়েছে।
মাঠ—ঘাট পেরিয়ে সে একটা বড় গ্রামে ঢুকলো। এখন তার মুখ চোখের চেহারাটাই অন্য রকম। সে আর মানুষজনদের ভয় পায় না। সন্ন্যাসী দেখলে গ্রামের মানুষ এখনো বেশ খাতির করে, তা সে সন্ন্যাসী বেঁটে হোক বা লম্বা হোক, রোগা কিংবা মোটা যাই হোক।
বোম ভোলানাথ! জয় শংকর। এই সব বলতে বলতে গুটুলি সেই গ্রামের শ্মশানঘাটে একটা গাছতলায় গিয়ে বসলো।
সেই শ্মশানে আগে থেকেই আর একজন সাধু ছিল। তার বেশ শক্ত—সমর্থ চেহারা, মুখ ভর্তি দাড়ি, মাথায় জটা, চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে। তার সামনে বসে আছে, দু’তিনজন ভক্ত!
বড় সাধু খানিকক্ষণ এই বাচ্চা সাধুকে আড়চোখে দেখলো। তারপর এক সময় হুঙ্কার দিয়ে বললো, অ্যাই, তুই আমার জায়গায় কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলি রে? তুই কার চ্যালা?
গুটুলি একটুও ভয় না পেয়ে বেশ তেজের সঙ্গে বললো, আমি বোম ভোলানাথের চ্যালা!
বড় সাধু বললো, হুঁঃ! নাক টিপলে দুধ বেরোয়, এর মধ্যে ভেক ধরেছিস? ভালো চাস তো এদিকে আয় আমার পা টিপে দে!
গুটুলি গম্ভীর ভাবে বললো, আমি তোমার থেকে বয়েসে বড়! একবার বলেছো বলেছো আর দ্বিতীয়বার ওরকম কথা বলো না!
বড় সাধু বললো, অ্যাঁ! কী বললি?
গুটুলি বললো, কানে ভালো শুনতে পাও না বুঝি। বললুম যে আমি তোমার থেকে বয়েসে অনেক বড়। আমার নাম দীর্ঘাচার্য। আমার বয়স তিনশো তিন বছর।
গুটুলির উচ্চতা মোটে সাড়ে তিন ফুট, আর তাকে দেখতে দশ বছরের মতন। তার মুখে এই কথা শুনে বড় সাধুর সামনে বসে থাকা ভক্ত ক’জন ফিক ফিক করে হাসতে লাগলো।
বড় সাধু রেগে গিয়ে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু এই সময় এক দল লোক হৈ হৈ করে একটা মড়া নিয়ে এলো। তার পেছনে পেছনে আর এক দল লোক এলো কাঁদতে কাঁদতে। সুতরাং দুই সাধুতে তখন আর কোনো কথা হলো না।
গুটুলি চোখ বুজে ব্যোম শংকর, ব্যোম ভোলানাথ বলতে লাগলো আবার।
গ্রামে রটে গেল যে শ্মশানে একটা বাচ্চা সাধু এসেছে, সে বড় সাধুর মুখে মুখে কথা বলে।
অনেকে দেখতে এলো এই নতুন সাধুকে। কিন্তু গুটুলি সেই যে চোখ বুজেছে, আর চোখও খোলে না, কারুর সঙ্গে কথাও বলে না। তা দেখে লোকের ভক্তি বেড়ে গেল। কেউ বললো, সাধুর মুখ দিয়ে জ্যোতি বেরুচ্ছে। কেউ বললো, হ্যাঁ, দেখলেই বোঝা যায়, এ সাধুর বয়েস তিনশো বছরের বেশি!
সন্ধের পর শ্মশান খালি হয়ে গেল। ভূতের ভয়ে রাত্তিরের দিকে এদিকে কেউ আসে না। অন্ধকার হয়ে যাবার পর বড় সাধু কাঠকুটো দিয়ে আগুন জ্বাললো। গুটুলি তখনো চক্ষু বুজে আছে।
বড় সাধু তার কাছে বললো, আর ভড়ং করতে হবে না। এইবার বল দেখি, তুই কে? বাড়ি থেকে বাপ—মার ওপর রাগ করে পালিয়ে এসেছিস, তাই না?
গুটুলি বললো, আমার বাবা—মা কেউ নেই। তিনশো তিন বছর আগে আমার জন্ম। একশো বছর অন্তর অন্তর আমার চেহারা ছোট হয়ে যায়, আবার বাড়ে। আবার ছোট হয়, আবার বাড়ে। এবারে বুঝলে?
বড় সাধু বললো, আমার কাছেও বুজরুকি, অ্যাঁ?
বলেই সে গুটুলির ঘাড় ধরে মাটি থেকে টেনে তুললো। তারপর বললো, আমি আসলে কে জানিস? আমার নাম রঘু সরদার। আমার নাম শুনলে পঞ্চাশটা গ্রামের লোক এখনো কাঁপে। শোন, আমার সেবা—যত্ন করলে এখানে থাকতে পারবি। নইলে তোর টুঁটি টিপে নদীর জলে ফেলে দেবো।
গুটুলি বললো, ঠিক আছে, তোমার সেবা—যত্ন করবো। যত চাও! আগে নদীতে স্নান সেরে আসি, কিছু খেয়ে—টেয়ে নিই। তবে একটা কথা বলে রাখি। কারুর চেহারা ছোট হলেই তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখাতে নেই!
বড় সাধু ছেড়ে দিতেই গুটুলি নদীর ধারে নেমে গেল। তারপর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গান ধরলো, ‘কে বিদেশী মন—উদাসী বাঁশের বাঁশী বাজায় বনে!’
রাত ঘোর হবার পর সেখানে এসে হাজির হলো নীল মানুষ। গুটুলির গান শুনে নদীর ধারে পৌঁছে বললো, কি বন্ধু? সব ঠিকঠাক আছে তো?
গুটুলি বললো, বন্ধু, আমাকে তোমার কাঁধে তুলে নাও!
নীল মানুষ ঝুঁকে পড়ে গুটুলিকে তুলে নিল কাঁধে। গুটুলি দুদিকে পা ঝুলিয়ে বসলো। তারপর বললো এবারে চলো তো বন্ধু যেখানে আগুন জ্বলছে!
বড় সাধু ধুনির আগুনে হাঁড়ি চড়িয়ে ভাত রান্না করছিল, মাটির ওপর ধপ ধপ করে আওয়াজ হতে সে চমকে মুখ তুলে তাকালো।
গুটুলি বললো, এই যে সাধুজী, পা টেপাবে বলেছিলে, কই পা বার করো!
ধুনির আগুনের অস্পষ্ট আলোয় বড় সাধুর প্রথমে মনে হলো বাচ্চা সাধুটা যেন তালগাছের মতো লম্বা হয়ে গেছে। তারপর সে দেখলো কলাগাছের মতন দুটো পা, তাতে আবার নীল রং!
বড় সাধু আঁৎকে চেঁচিয়ে উঠলো, ওরে বাবারে! ব্রহ্মদৈত্য এসেছে রে! মরে গেলাম রে!
তাই শুনে নীল মানুষ হাসি চাপতে পারলো না। তার হাসিতে গম—গম করে উঠলো জায়গাটা।
বড় সাধু উঠে এক লাফ মেরে দৌড়লো অন্ধকারের মধ্যে আর চিৎকার করতে লাগলো বাঁচাও! বাঁচাও! ভূত, ব্রহ্মদৈত্য!
নীল মানুষ লম্বা হাত বাড়িয়ে খপ করে তাকে ধরে ফেলে বললো, যাচ্ছো কোথায়?
গুটুলি বললো, তোমার সেবা করতে এসেছি, তুমি ভয় পেয়ে চলে যাচ্ছো?
দু’রকম গলার আওয়াজ শুনে বড় সাধু আরও ভয় পেয়ে বলতে লাগলো, মরে গেলাম! মরে গেলাম! মরে গেলাম!
গুটুলি নীল মানুষের গা বেয়ে সরসর করে নেমে এলো নিচে। তারপর ধমক দিয়ে বললো, আঃ, বড্ড চ্যাঁচাচ্ছো! এবারে চুপ করো! নইলে সত্যি গলা টিপে দেবো!
চিৎকার থামিয়ে বড় সাধু একবার গুটুলিকে আর একবার নীল মানুষকে দেখতে লাগলো। তার মুখখানা হাঁ হয়ে গেছে।
নীল মানুষ বললো, তুমি সাধু—মানুষ হয়ে এত ভয় পাচ্ছো কেন? তোমাদের তো ভূত—প্রেত দেখেও ভয় পাবার কথা নয়!
বড় সাধু হাত জোড় করে বললো, আমায় ক্ষমা করে দাও! আমায় তোমরা প্রাণে মেরো না! আমি আসল সাধু নই। আমার নাম রঘু সরদার।
গুটুলি বললো, তুমি সাধু নও! তোমার আসল নাম রঘু সরদার, তার মানে তুমি কিসের সরদার?
রঘু সরদার বললো, আগে আমার ডাকাত দল ছিল। কিছুদিন হলো পুলিশের চোখে ধুলো দেবার জন্য আমি সাধু সেজে আছি!
গুটুলি বললো, প্রথমেই যে এরকম একজনকে পেয়ে যাবো তা আশাই করিনি! বন্ধু, এবারে একে নিয়ে কি করা যায় বলো তো!
নীল মানুষ বললো, ওর হাড়গোড় ভেঙে ‘দ’ করে দিতে পারি। কিংবা ওর পা দুটো গাছের ডালে বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিতে পারি। কিংবা ওকে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে বাঘের সামনে ফেলে দিতে পারি। কিংবা ওকে ক্ষমাও করে দিতে পারি! তুমি কোনটা চাও?
রঘু সরদার নীল মানুষের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বললো, ওগো ব্রহ্মদৈত্য, আমায় ক্ষমা করে দাও! আমি আর কোনো দিন চুরি—ডাকাতি করবো না!
নীল মানুষ বললো, আমার পায়ে ধরলে হবে না। আমার বন্ধুর পায়ে ধরতে হবে!
রঘু সরদার তক্ষুণি পেছন ফিরে গুটুলির পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আর বলতে লাগলো, ক্ষমা করে দাও, ক্ষমা করে দাও!
গুটুলি খানিকটা সরে গিয়ে বললো, আঃ আজ বড্ড আনন্দ হলো। এর আগে কেউ আমার কাছে ক্ষমা চায়নি। ওহে রঘু সরদার, ওঠো, তোমায় ক্ষমা করে দিলুম।
নীল মানুষ বললো, সে—ই ভালো! কী সুন্দর ভাতের গন্ধ আসছে! কোথায় যেন ভাত রান্না হচ্ছে।
ধুনির আগুনে রঘু সরদারের চাপানো হাঁড়িতে ভাত ফুটছে। সেইদিকে তাকিয়ে গুটুলি বললো, সত্যি কতদিন ভাত খাইনি। ফল—টল খেতে খেতে মুখে অরুচি ধরে গেছে। ওহে রঘু সরদার, তোমায় যে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, তার বদলে আমাদের ভাত খাওয়াও!
রঘু সরদার বললো, নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই! ভাত, আলু সেদ্ধ, ডিম সেদ্ধ, কাঁচা লঙ্কা…ঘিও আছে। তোমার এই ব্রহ্মদৈত্য কি ঘি খায়?
নীল মানুষ হাসতে হাসতে বললো, আমি সব খাই! আগে মানুষের মাংস খেতাম, এখন শুধু সেটা ছেড়ে দিয়েছি।
রঘু সরদার রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। গুটুলি নীল মানুষ পাশাপাশি বসলো আগুনের ধারে।
গুটুলি রঘু সরদারকে বললো, আমরা দুই বন্ধু প্রতিজ্ঞা করেছি, তোমাদের মতন বদমাস লোকদের ক্ষমা চাওয়াবো। তুমি হলে এক নম্বর!